ওজনের দিক দিয়ে আমি আমার বরের চাইতে ২০ কেজি বেশি ছিলাম। মানে আমার বর ছিল ৫৫ কেজি আর আমি ছিলাম ৭৫ । এই নিয়ে আমার বরের মাথাব্যথা না থাকলে কি হবে আমাদের প্রতিবেশী দের মাথাব্যথা ছিল প্রচুর। ওনারা তোবআমাদের নামও দিয়ে দিয়েছিলেন। আমার বর কে পাতলু আর আমাকে মোটু। বিয়েটা হয়ে যায় হঠাৎ করে। তাই আগে ভাগে বা কয়েক দিন ধরে যে দেখাদেখি হবে তেমন সুযোগ টা পায়নি আমার বাবা মা। দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে আমরা ২ জন বিয়ের পিড়িতে জায়গা পাই।
বিয়ের দিনের কথাঃ ক্যামেরা ম্যান আমাদের যখন ছবি তুলছিল মানে আমার আর আমার বর আশিকের। তখন পাশে থাকা গেষ্ট, এমন কি ক্যামেরা ম্যান নিজেও মুচকি মুচকি হাসছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম উনি কি জন্য হাসছেন কিন্তু কিছু করার ছিল না। যেহেতু নতুন বউ তাই উঠেও আসতে পারছিলাম না। তবে আশিক ব্যাপার টা হয়তো বুঝতে পেরেছিল তাই ওর একটা ইমপোরটেন্ট কল এসেছে বলে আমার পাশ থেকে উঠে যায়।
যেটা আশিকের মুখ থেকে আমি বাসর রাতে শুনেছিলাম। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় ছোট থেকেই অতিরিক্ত আদর পেয়েছিলাম। আর খাওয়ার অভ্যাস টা ছোট থেকেই তৈরী হয়েছিল বলে বড় হয়েও অভ্যাস টাকে বদলাতে পারিনি। বান্ধুবীরা আমার এই অতিরিক্ত খাওয়া দেখে নাম দিয়েছিল জলহস্তী। আর অতিরিক্ত মোটার জন্য নাম দিয়েছিল ভেটকি। মাঝে মাঝে আমার কাজিনরা আমায় বলতো,
–ভাগ্য গুনে যদি একখান চিকনায় বর জোটে তোর কপালে আর তুই যদি তোর বরের উপ্রে পড়িস, তাইলে তোর বর ত শেষ হা হা হা। আমি তখন চুপ করে থাকতাম আর রুমে এসে দরজা আটকে কান্না করতাম। একবার এক্সামের সময় আমি বসেছিলাম সিটের ডান দিকে আর ভেতরের দিকে বসেছিল একটা ছেলে। তো ২ ঘন্টা পড়ে ছেলেটা আমায় ডেকে বলে,
–এই যে খালাম্মা, একটু সাইড দেন তো। আমি তার দিকে তাকিয়ে, কেনো?? ছেলেটা একটা আঙ্গুল দেখিয়ে বলে, যাবো,
–আমাকে কি আপনার খালাম্মা লাগে??
ছেলেটার হয়তো জোরে চাপ দিছিল, তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলেছিল, আপু, প্লিজ ভুল হয়ে গিয়েছে।যাইতে দেন পরে কথা বলছি। আপু বলাতে আর ছেলেটার চেহারা দেখে মায়া করে যেতে দিয়েছিলাম। আমার বিয়ের ৬ মাস পড়ে রমজান মাস চলে আসে।
তো সারাদিন শুধু বেডের উপর শুয়ে থাকা ছাড়া আমার আপাতত কোন কাজ ছিল না। কিন্তু ইফতারের আগে, সকলের প্লেটে ইফতার রেডি করে আমার প্লেটে ওদের চায়তে ২গুন ইফতার নিয়ে আধা ঘন্টা আগে থেকেই বসে বসে খাবার গুলোর দিকে চেয়ে থাকতাম। শাশুড়ি আম্মা আমার মুচকি মুচকি হাসতেন। একবার এক বিয়ে বাড়ির অনুষ্টানে গিয়েছিলাম আশিকের সাথে।
বিয়ে বাড়িতে আমাদেরকে পাশাপাশি দেখে সবাই হাসছিল।একজন তো বলেই দিল, ভাই মাল ডা পাইছেন ১ পিস। আশিক রেগে যায়। কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ওর হাত ধরে বলেছিলাম, কিছু না বলতে। বাসায় এসে ঐদিন অনেক কান্না করেছিলাম। আশিক আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন কিছুতেই আমি থামছিলাম না। কারণ এগুলো শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। একদিন পণ করলাম আমি ডায়েট কন্ট্রোল করবো।আর সেটা যেভাবেই হোক। ৭ দিনে শুধু ২ টো রুটি আর শসা ছাড়া কিচ্ছু খেতাম না। আশিক আমায় অনেক বার বারন করছে এমন পাগলামি করতে কিন্তু আমি এক কথার মানুষ, চিকন আমাকে হতেই হবে। আমার জিদের কাছে আশিকও হেরে গিয়ে আর কিছু বলতো না। একদিন রাতে,
অর্ধেক রাতে উঠে ছটফট করতে থাকি খিদের জ্বালায়। শেষমেষ সহ্য করতে না পেরে উঠে পড়ি বেড থেকে। খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি কিছু নেই। সব শেষ। ফ্রিজ খুলে দেখি সেখানেও কিছু নেই। আশ্বর্য! তখন না দেখলাম আম্মাকে বিরিয়ানি রাখতে ফ্রিজে তো কই গেল?আমি রাগে দুঃখে কান্না করে দেই। হঠাৎ পাশ থেকে বিরিয়ানীর গন্ধ পেয়ে মাথা উঁচু করে দেখি আশিক প্লেটে বিরিয়ানী নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
—কি হলো খাবে না? তাড়াতাড়ি করে আশিকের হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে খেতে শুরু করি। আশিক আমার খাওয়া দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে,
–কেনো নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো?? আমি চোখ তুলে, ওরা যে ওগুলো বলে।
–তুমি ওদের খাও, পড়ো নাকি আমার??
–কিন্তু,
কোন কথা না। আমি আমার এই গুলুমুলু বউ কে নিয়েই হ্যাপি। আর কিছু চায় না। চোখে জল চলে আসে আমার। আশিক ওর বুকেতে আমায় জড়িয়ে নিয়ে বলে,, মোটু বউ আমার।