অনুরক্তি

অনুরক্তি

“আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে তো?” কথাটি শোনার পর মুখটা নিচু করে নিলাম। শান্ত পরিবেশের এক চিলতে বাতাস আমার গায়ে এসে পড়ল। আমি বোকা বোকা দৃষ্টিতে প্রহরার দিকে তাকালাম। ওর তনয়া মৃদ চাহনি আমাকে ভাবিয়ে তুলল আবার। ওর চাহনির মিশ্রন আমাকে মনে করিয়ে দেয় ওর বলা কথাগুলো। “যখন শরতের মেঘগুলো এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে উড়ে যায়। তখন খুব ইচ্ছে করে পাখি হতে। পাখি হয়ে মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে আমিও উড়বো। উড়ে চলা মেঘের দলকে আমি হারিয়ে দেবো। বসবো ইউক্যালিপটাস গাছেন উঁচু ডালটাতে। কেবল তুমি আমাকে ভালোবেসে পাশে রেখো আবির।” প্রহরার সাথে দেখা করার পর আমার হাত শক্ত করে ধরে নানা কল্পনাবিলাসী কথা বলতো ও। আমি কেবল ওর কথাশুনে হাসতাম। আর ও আমার উত্তরহীন হাসি দেখে নাক টেনে দিত।

“কি হল, চুপ করে আছো কেনো? বলো, আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?” আমি আবারো চুপ হয়ে যায়। অনুধাবন করি নিজের রাগ আর ভালোবাসার মধ্যে বিশাল যুদ্ধের হাতাহাতি। সংদহিত মনের বিদারুন অবস্থায় আমি ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। জানিনা কেন এমন করলাম। আজকাল আমার অনেক কিছুতেই অকারন রয়েছে। আমি অকারনেই নিজের সাথে কথা বলি। যখন বিকেলের রোদ খোলা সমুদ্রের প্রাঙ্গনে এসে পড়ে। তখন দেখতে বেশ চমৎকার লাগে। যখন সূর্যটা অস্তি যায়। আমি সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। লাল সূর্যটা একসময় তলিয়ে যায় চোখের জাদুর আচ্ছাদনে জলের গভীরে। আমি তখন জানতে চাই আচ্ছা যখন সূর্য ডুবে যায় তখন সমুদ্রও কি তার সৌন্দর্য হারায়। নাকি রাতের প্রহরে চাঁদকে তার বুকে আলিঙ্গন করে সূর্যকে ভুলে থাকে?

বেশ খানিকটা পর দরজা খুললাম। সেখানে প্রহরা নেই। তারমানে চলে গেছে। গলাটা ধক করে উঠল। আসলে প্রহরা হল আমার বউ। সাত মাস হয়েছে আমি ওকে বিয়ে করেছি। আর এই বাড়িতে আমি আর ও ছাড়া কেউ থাকে না। ছোট থেকেই অবহেলায় বড় হয়েছি আমি। যখন দশ বছর বয়স হয় আমার অসুস্থ মাকে বাবা রেখে কোথায় যেন চলে যায়। স্কুল থেকে বাড়িতে এসে দেখি মা কাঁদছে নিরবে। মা আমাকে দেখে ডাক দেয় তার কাঁছে। আমি দরজার কাছ থেকে মায়ের কাছে যায়। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে “বাবা শোন,জীবনের রং কি তুই জানিস? জীবনে দুটো রং একটা সাদা আরেকটা কালো। সবসময় সাদা রং টা বেছে নিবি।

কারন সাদা রং এর মাঝেই তুই সবকিছু খুজে পাবি। ” সেদিন বুঝিনি মায়ের কথাগুলো। সেদিন কেবল বারবার বলেছিলাম “মা তুমি কাঁদছো কেন?” বলেছিলাম আর মায়ের চোখের পানি মুছে দিচ্ছিলাম। তার ক দিন পরেই মা মারা যায়। ছোট চাচার ঘরে খুব কষ্ট করেই বড় হয়েছি। চাচির অবহেলা আর মুখ গোমড়াতে সকাল হত। বকুনি আর মারের দাগ নিয়ে রাত শুরু হত। পড়াশোনা করেছি প্রায় না খেয়েই। তারপর চলে আসি শহরে। সেদিন থেকেই একা আমি। তাই সবসময় চুপচাপ থাকি। রাগ অভিমান বাড়তো আমার নিজের মনকে নিয়ে। বারবার প্রশ্ন করতাম কেন হয় আমার সাথে। কিন্তু উত্তর পেতাম না।

“ভাইয়া আপু কিন্তু খুব কান্না করছে?” ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছি। ফোনটা বাজছে তখন থেকেই। কিন্তু ফোন ধরার একদমই ইচ্ছে ছিল না। শেষে এক প্রকার বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। তখনি প্রিয়তি বলে কথাটা। আমি বললাম “কাঁদুক, কাঁদলে মন ভালো থাকে?” প্রিয়তি চুপ হয়ে যায়। আমি ফোনটা কানে ধরেই থাকি। সন্ধ্যা রাতের আকাশের দিকে তাকাই আমি। রাতের আকাশে মেঘগুলো উড়ে চলেছে। উড়ে চলা মেঘগুলোকে দেখে আমার ইচ্ছে করে বৃষ্টি হতে। ইচ্ছে করে আমিও পাখির মত উড়ে চলি মেঘেদের সাথে। সেই বৃষ্টির সাদা রংকে আকড়ে ধরে ঝরে পড়বো কারো মনের আকাঙ্খা হয়ে। প্রিয়তি বলে “আচ্ছা ভাইয়া, আপনিও কি তাহলে কাঁদেন? ছেলেরা কাঁদে না। ছেলেরা শক্ত হয়। ছেলেরা হয় নিস্বঙ্গতার মাঝে সঙ্গির বাসনে ভালোবাসার উপসনা করতে। ছেলেরা হয় নিদারুন মনের। ছেলেরা কাঁদে না, কাঁদে মেয়েরা। মেয়েরা কাঁদে ভালোবাসায়। মেয়েরা কাঁদে ব্যর্থতায়। মেয়েরা কাঁদে খুশিতে। তবে আপু কিন্তু আপনার জন্যই কাঁদছে। মানে আপনাকে ভালোবেসেই কাঁদছে। চলে আসুন। ওর কান্না আমার একদমই ভালো লাগছে না।

ফোনটা কেটে দিল প্রিয়তি। জানি প্রহরা কাঁদবে। কাঁদারই কথা। কিছু মানুষ আছে যারা ভালোবাসায় কারো জন্য কাঁদে। আবার কিছু মানুষ ভালোবাসায় বিরক্ত হয়ে কাঁদে। পৃথিবীর সব মানুষকে যদি ১০০ দিয়ো ভাগ করা হয়। তবে তার মধ্যে ৭০ ভাগ মানুষ ভালোবাসার জন্য কাঁদে। এর মধ্যে ৫ ভাগ লোক কাঁদে খুশিতে। আর বাকি ২৫ ভাগ মানুষ কাঁদে রাগে,দুঃখে,অপমানে আর কষ্টে। যেমন কাঁদত আমার মা। বড় হয়ে বুঝেছিলাম। মায়ের বলা সেই কথাগুলো। মা কেনো সাদা রং বেঁছে নিতে বলেছিল। আসলে সাদা রং ব্যবহার করা হয় মনের বাসনা প্রকাশে। সাদা রংকে তুলনা করা হয় মনের রং হিসাবে।যার মন সাদা সেই প্রকৃত ভালো মানুষ। আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট ভালো মানুষ হল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। উনিও কাঁদতেন। তার উম্মতের জন্যই কাঁদতেন। তিনি কাঁদতেন আল্লাহর ভয়ে। জাহান্নামের শাস্তির ভয়ে কাঁদতেন।

প্রহরাকে আমি ভালোবাসি। আমার থেকে ও আরো বেশি ভালোবাসে আমাকে। ওকে ফিরিয়ে আনা দরকার। রাস্তা দিয়ে আনমনা হয়ে হাটছি। মনটা ভালো নেই। প্রিয় মানুষটার সাথে রাগা রাগি হলে এমনিতেও মনে অ শান্তি কাজ করে। আসলে অফিসে একটু ঝামেলা হয়েছিল তাই এমনি তেই মন খারাপ ছিল, তার ওপরে প্রহরা ডাল রান্না করেছে, ভুলেই হবে হয়তবা, লবনের জায়গায় চিনি দিয়ে দিয়েছিল। একে তো মন ভাল নেই তার ওপরে আবার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে বসলাম। মুরগীর মাংস, চিংড়ি মাছ, কই মাছ, করলা ভাজি, আর ডাল টেবিলে সাজানো রয়েছে। ভাবলাম মন ভালো নেই ক্ষুধা লাগলেও খেতে ইচ্ছে করছিলো না তাই একটু করলা ভাজি আর ডাল নিলাম। মুখে দিতেই বুঝলাম একটায় লবন, আর একটা চিনি। মেজাজ টা গেলো বিগড়ে, খাবার প্লেট টা ফেলে ভেঙ্গে দিলাম। আর ওর সাথে না নয় তা বলে…

শ্বশুর বাড়ির সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজালাম। দরজাটা খোলার কোনো আলামত পেলাম না। ঠিক কিছু সময় পর প্রিয়তি এসে দরজা খুলে দিলো। আমার দিকে না তাকিয়ে মুচকি হাসল।তারপর বলল “আপনাদের ভালোবাসা দেখে মাঝে মাঝে আমার খুব রাগ হয়। এত ভালোবাসা কোথা থেকে পান আপনারা? উফফ” আমি কিছুই বললাম না। কেবল মুচকি হাসলাম। প্রিয়তা ভেতরে চলে যেতে লাগল আমি বললাম “তোমার আপু কই?” প্রিয়তা হাসি হাসি মুখে বলে “সে আবার কই থাকবে, ছাদে যান পাবেন। সেই যে এসে ছাদে যেয়ে কান্না করছে নিচে একবারো আসেনি।”

আমি ছাদে আসলাম। ছাদের মাঝখানে ছাতার ছাউনি দিয়ে একটি গোল টেবিল রাখা। সেখানে দুইটা চেয়ার। একটাতে প্রহরা বসে আছে। মাথাটা নিচু করে কাঁদছে। আমি আস্তে হেঁটে ওর সামনের চেয়ারে যেয়ে বসলাম। আমাকে দেখেই মুখটা অন্যদিকে ঘুরালো। আমি ওর দিকে তাকালাম। ওর কান্না ভরা চোখ আর মুখ দেখে মনে পড়ে গেল পুরোনো কিছু কথা।

এই আবাসিক এলাকাতে এসেছি তিন বছর হল। প্রতিদিনের রুটিন মাফিক কাজ করা আর বাড়িতে আসা। সময় পেলে এলাকার মধ্যে একটি খোলা মাঠ আছে সেখানে যেয়ে বসা। প্রায়শই আমি সেখানে যায়। এখানে সব বয়েসের লোকেরা আসে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা বেশি। এনারা এখানে আসে, দৌড়াদৌড়ি করে, ফুটবল খেলে। আমি বসার জায়গাতে বসে সেসব দেখি। একদিন বসে আছি ঠিক তখনি শুনতে পেলাম “আপনি কি সবসময় চুপ থাকেন?”

আমি কথাটা শুনে পাশে তাকাই। ২০ বা ২১ বয়সের একটি মেয়ে হবে দাঁড়িয়ে আছে। কানে হেড ফোন গোজা। তাই ভাবলাম হয়ত ফোনে কথা বলছে। কিন্তু পরক্ষনেই বলল “আপনাকেই বলছি। আপনি কি সবসময় চুপচাপ থাকেন?” আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। হুট করে এমন ভাবে কোনো মেয়ে এসে কথা বলাতে নিজেকে কেমন অন্যরকম লাগছে। নিজের সবকিছু একবার দেখে নিলাম। তারপর বললাম

– কেন?
– না মানে আপনাকে আমি রোজ দেখি কারো সাথে কথা বলেন না। এখানে আসেন। চুপচাপ থাকেন। আপনি তো রফিক আংকেলের বাড়ির পাশের বাড়িটাতেই তো থাকেন তাই না?
– হুমম।
– এখন বলুন আপনি কি সবমময় চুপচাপ থাকেন?
– হয়ত।
– শুনুন মি. চুপচাপ থাকা মানুষগুলো কিন্তু বেশ ভয়ংকর রকমের হয়।
– কি রকম?
– এই যেমন ধরুন চুপচাপ স্বভাবের লোকেরা খিটখিটে হয়, চুরি ডাকাতি করে।

খুনও করে থাকে। আর যারা বেশি কথা বলে তাদের মনটা ফ্রেশ থাকে। যেমন আমি। সবার সাথে আমার পরিচয়। প্রহরা নামে আমাকে সবাই চেনে। আজ থেকে আপনিও চিনবেন। আর অনেক বেশি কথা বলবেন।

আমি মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। দেখতে আর দশটা সুন্দরী মেয়েদের মত না হলেও মুখটাতে এত মায়া যা সেরা একশজন সুন্দরীকেও হার মানাবে। চোখ দুটো বিড়ালের চোখের ন্যায় আশুরিক। পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ্রগ্রস্ত কাঠগোলাপ ফুলে পড়ার মহরাতে বিস্তৃতি প্রকৃতির সাথে সহিত সঙ্গত। অধনা মায়াবী একটি তনয়া। যে কেউ এক দেখাতে মেয়েটার মুখ পানে চেয়ে কবিতার লাইন লিখে ফেলতে পারবে গোছালো কিংবা অগাছালো হয়ে। উসকো কিংবা খুসকো হয়ে।

তারপর থেকে মেয়েটার সাথে রোজ সন্ধ্যায় আমার দেখা হতে থাকে। এই খোলা মাঠের পায়চারি রাস্তার কিণারে বসে তিনটে দোকান। একটা হল সিরাজ চাচার চায়ের দোকান, একটা হল গফুর ভাইয়ের বাদামের দোকান আর আরেকটা মোহন দাদুর আলুর চপ, পিয়াজু ভাজা, মাংসের চপ এর দোকান। প্রতি সন্ধ্যাতে কমবেশি অনেক মানুষ বেড়াতে আসে এখানে। আমিও আসি আর মাথে থাকে প্রহরা। এভাবেই দুজনার পরিচয়। কেটে যায় সাত মাস। বুঝতে পারি একসময় প্রহরাকে ছাড়া জীবনের বাকি সময়টা কাটানো একদমই বেকার হবে। তাই সেদিন বিকেলে কয়েকগাছি ফুল দিয়ে বলেছিলাম “জানিনা এমন কোনো সংবিধান আছে নাকি। জানিনা কোনো আইন প্রণীত হয়েছে। তবে আমি একটি সংবিধান প্রনয়ন করতে চাই। আমি একটি আইন জারি করতে চাই। যেখানে থাকবে ৪০২ ধারা মোতাবেক তোমাকে ভালো না বাসার ফাঁসির শাস্তি।”

প্রহরা কিছুই বলে না। কেবল অবাক চোখে আমার দিকে বেশ খানিক্ষন তাকিয়ে ছিল। তারপর হুট করে দৌড়ে চলে যায়। এরপর তিনদিন সে আমার সাথে দেখা করেনি। একদিন হুট করে এসে বলে “আমিও একটি আইন জারি করতে চাই তোমার সংবিধানে। যেখানে থাকবে আমাকে ছেড়ে গেলে তোমার যাবৎজীবন জেইল।” আমি মুচকি হেসে বলি “তোমার মনের জেল খানাতে আমি সবসময় থাকতে চাই। তুমি সেখানে হবে সাব ইনস্পেক্টর আর আমি হবো কয়েদি।” প্রহরা কিছুই বলল না। কেবল আমার হাতটি শক্ত করে ধরে বলেছিল “জানো, যখন বৃষ্টি হয় আমার না নীরব,শান্ত ফুল হতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে কলা পাতা হয়। ইচ্ছে করে বাবুই পাখি হতে। ঝুম ঝুমিয়ে যখন বৃষ্টি নামবে তখন তোমাকে সাথে নিয়ে ফুল হয়ে ভিজবো। ঝিরি ঝিরি বাতাসে কলা পাতা হয়ে নেঁচে উঠব। বাবুই পাখি হয়ে বুনন কৌশলে বাধিত বাসায় বসে দুজনে বৃষ্টি দেখবো আর গল্প করবো। থাকবে তো সবসময় পাশে?”

আমি কিছুই বলি নি। কেবল ডান হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম শক্ত করে। সেদিন সন্ধ্যার সময় ছিল বেশ মনোমুগ্ধকর। পরে জেনেছিলাম এই তিনদিন ও বাড়ির সবাইকে রাজি করিয়েছিল আমার ব্যাপারে। তারপর ওর সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়। “কি করতে এসেছো? আমাকে তো তাঁড়িয়ে দিয়েছিলে।” প্রহরার ডাকে স্তব্ভিত ফিরে এল। প্রহরার দিকে তাকালাম। চোখের পানি গাল বেঁয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে। আমি ওর হাতটা ধরলাম। তারপর বললাম..

– রাগ করে অনেক কিছুই বলেছি। তাই বলে চলে আসবে?
– তুমিই তো বলেছিলে এখন চোখের সামনে থেকে চলে যেতে।
– তাই বলে কি চলে আসবে? রাগ করে বলেছিলাম।
– হুমম।
– আচ্ছা শোনো না…অনেকেই বলে তাদের বউ নাকি খুব পচাঁ। কিন্তু আমার বউটা কত্ত লক্ষী আমার সব কথা শোনে, আমার ওপরে একটুও রাগ করেনা, শুধু অনেক গুলো ভালবাসে আমাকে তাইনা?
– হুম আমার বরটাও বুঝি কম? আমার বর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বর, আচ্ছা তুমি আমার লাইফে আরও আগে আসোনি কেন বলো তো?

– আমি আগে আসলে। তোমার একটা বয়ফ্রেন্ডও বুঝি চান্স পেতো তোমার পাশে থাকার?
– তাই না? আমি বিয়ের আগে তোমার সাথে ছাড়া কারো সাথে প্রেম করিনি।
– জানি তো

দুজনেই চুপ হয়ে যায়। ছাদের চারপাশে গোল লাল,নীল হলুদ, সাদা,বেগুনি রং এর ল্যাম বল গুলো নিজেদের মত করেই জ্বলছে। হালকা বাতাস বইছে প্রকৃতির মাঝে। আমি একটু দুষ্টুমি করেই বললাম

– তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য একটা হ্যান্ডসাম বয়ফ্রেন্ড খুজে দিতে পারি। তাছাড়া সমস্যা কোথায়?তুমিও রিলেশান করো আমিও একটি মেয়ের সাথে করি। প্রহরা আমার দিকে ফ্যাকাসে দৃষ্টিতে তাকাল। কেদেই দিলো আবার। আমি ওর হাত ধরে বললাম “রাগ করোনা লক্ষীটা আমি কখনো তোমাকে ছাড়া আর কাউকে আমার ভালবাসা দিবোনা।”

– তুমি একটা পঁচা বর।
– সেটা তো তোমারি।
– তুমি একটা বান্দর বর।
– সেটাও তোমার।
– খালি কষ্ট দাও আমাকে।
– শুধু তোমাকেই তো দিই।
– খালি কাঁদাও আমাকে।
– সেটাও তোমাকে।

তোমাকে আমি কাঁদায়,কষ্ট দিই সেটা সীমিত সময়ের জন্য। তবে তোমাকে ভালোবাসি আমি,বড্ড ভালোবাসি আর সেটা সারাজীবনের জন্য। আর বড় কথা কষ্ট তো কেবল কাছের মানুষেরাই দিয়ে থাকে। আচ্ছা যাও, আর কাঁদাবো না,কষ্টও দিবো না। প্রহরা আর কিছু বলল না। কেবল আমাকে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত