অদৃশ্য শাসন

অদৃশ্য শাসন

এই ব্যাদব ছেলে? চোখ নাই তোমার? বাবা মা শিক্ষা দেই নি?
আয়ান কিছুটা অপরাধী হয়েই তাকিয়ে আছে,
আয়ানঃ না মানে, আমি দুঃখিত, আর আপনিও হটাৎ করে বের হয়ে গেছেন, বুঝতে পারিনি। সরি।
নিশিঃ দিবো এক থাপ্পড় বেশি কথা বললে।
আয়ান আর কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে গেলো।

আইরিনঃ নিশি তুই শুধু ছেলেটাকে এভাবে অপমান করলি, দোষ তোর ও ছিল,
নিশিঃ তুই আমার বান্ধবী হয়ে ঐ অপরিচিত ছেলের দিক হয়ে কথা বলছিস?
আইরিনঃ কথা টা ঐ ছেলের দিক হয়ে না, যেটা সত্যি ওটাই বলছি।
নিশিঃ তুই ছেলেদের চিনিস না? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই পিছনে পরে যায়।
আইরিনঃ আমি সব ছেলের কথা জানি না, তবে সে ছেলে খারাপ না। পাশের ক্লাশের বৃষ্টি আপুকে চিনিস?
নিশিঃ হ্যাঁ, চিনি। আপুটা অনেক ভালো।
আইরিনঃ ঐ আপুর সাথেই ছেলেটা পড়ে, মেয়েদের সাথে ছেলেটা খুব কম কথা বলে, বৃষ্টি আপুর সাথেই শুধু কথা বলে,

তাকে বড় বোন ভাবে, আপু বলছিল, ভাই থাকলে এই রকম থাকতে হবে।
নিশিঃ কিন্তু, ছেলেটাকে দেখে তো খ্যাত খ্যাত লাগে।
আইরিনঃ শুধু ওপর দেখে কি সব কিছু বিচার করা যায়?
নিশিঃ কি জানি, আমার তো ছেলে দেখলেই মাইর দিতে ইচ্ছা করে।
আইরিনঃ এটা তো তোর ছোট থেকেই স্বভাব, আল্লাহ্‌ যেন তোকে একটা জল্লাদ স্বামী দেয়।
নিশিঃ হ্যাঁ ঐ দুয়ায় কর, চল এখন যায়, ক্লাশ শুরু হয়ে যাবে।
আইরিনঃ হ্যাঁ চল যায়।


ক্লাস শেষ করে নিশি দাঁড়িয়ে আছে, আইরিন বলল, কিরে বাড়ী যাবি না?
নিশিঃ তুই যা, আমি একটু পর আসছি।

নিশিঃ বৃষ্টি আপু, ক্লাশ শেষ?
বৃষ্টিঃ হ্যাঁ, তোমার শেষ হয় নি?
নিশিঃ হ্যাঁ অনেক আগেই, এখন কি বাড়ী যাবেন?
বৃষ্টিঃ হ্যাঁ যাবো,
নিশিঃ একাই যাবেন?
বৃষ্টিঃ হ্যাঁ কেন বলতো?
নিশিঃ না মানে, আপনার সাথে একটা ছেলে পড়ে নাম আয়ান, সে নাই?

বৃষ্টিঃ না তার আম্মু নাকি হটাৎ করে অসুস্থু হয়ে গেছে তাই সে আগেই চলে গেছে।
নিশিঃ আজ সকালে ছেলেটার সাথে আমার ধাক্কা লাগে, আর আমি তাকে খারাপ ছেলে ভেবে অনেক অপমান করি।
বৃষ্টিঃ এটা তুমি ঠিক করো নি, এজন্য ছেলেটার এতো মন খারাপ ছিল, ও খুব ভালো ছেলে, আমাকে অনেক সম্মান করে,

সে কারো সাথেই বেয়াদবি করে না।
নিশিঃ জি আমার ভুল হয়ে গেছে, তার সাথে আবার দেখা হলে আমি মাফ চেয়ে নিবো।
বৃষ্টিঃ খুব ভালো কথা, আচ্ছা থাকো, আমার বাসের সময় হয়ে গেছে, আমি যায়। একদিন আসো আমাদের বাসাই
নিশিঃ আচ্ছা আপু, আসবো।

নিশি অপেক্ষা করছে, কখন আয়ান আসবে।
নিশি দেখলও, বৃষ্টি আপু ইউনিভার্সিটিতে আসলো,
নিশিঃ আপু! বৃষ্টি আপু, কেমন আছেন? আয়ান আসে নি?
বৃষ্টিঃ না এখনও আসেনি, সে পরের বাসে আসছে।

একটা ক্লাশ করার পর দেখলো, আয়ান নিচে দাঁড়িয়ে আছে, নিশি নিচে গেলো।
নিশিঃএই আয়ান!

আয়ান পিছনে ফিরে তাকালো
আয়ানঃ জি আমাকে বলছেন?
নিশিঃ এখানে আর কি কোন আয়ান আছে? এতো দেরি করে কেন?
আয়ানঃ কেন আজ আমি আবার কি করলাম?
নিশিঃ আজ কিছু করেন নি, আর সেদিনের ব্যাবহারের জন্য আমি দুঃখিত।
আয়ানঃ ঠিক আছে, তবে সামনের মানুষকে কিছু বলার আগে ভেবে নিয়েন ওভাবে আপনাকে কেউ অপমান করলে কেমন লাগবে?

তার পর সরির কতটুকু মূল্য থাকে?
নিশিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আমার ভুল হয়ে গেছে বললাম তো। চলেন গিয়ে কিছু খায়।
আয়ানঃ সরি মাফ করবেন, আমার ক্লাশ আছে।

নিশির মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো, এভাবে অপমান হয়ে গেলো সে।
নিশি মনে মনে বলল, দাড়াও দেখচ্ছি মজা।

দুপুরে ক্লাশ শেষ হবার পর নিশি দেখলও, বৃষ্টি আপু আর আয়ান একসাথে নিচে নেমে আসছে, নিশি দাঁড়িয়ে আছে।
নিশিঃ বৃষ্টি আপু কোথায় যাচ্ছেন?
বৃষ্টিঃ এই তো হোটেলে যাচ্ছি খেতে তুমি আসবা?
নিশি মনে মনে তো এটাই চাচ্ছিলো,
নিশিঃ ঠিক আছে আপু চলেন।

নিশিঃ আপু আপনার সাথের এই ভালো ছেলেটা কিন্তু আমাকে আজ অপমান করেছে।
আয়ান চুপ করে শুধু শুনছে।
বৃষ্টিঃ কেন আয়ান কি বলেছে?
নিশিঃ সকালে আমি তাকে বললাম চলেন কিছু খেয়ে আসি, সে গেলো না, এটা কি ঠিক করেছে সে বলেন?
বৃষ্টিঃ অহ, বাদ দাও, আর এখনও সে আমাদের সাথে যাবে না, এখানে তার এক আত্মীয়র বাসা আছে, সে সেখানেই যাবে।
নিশিঃ এতো কিপটে হলে কিন্তু বউ থাকবে না, দুইটা মেয়েকে খাওয়াতে হবে বলে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন?
এতক্ষণ পর আয়ান কথা বলল,
আয়ানঃ আপনি আমার বউ নাকি যে আপনাকে খাওয়াতে হবে?
নিশিঃ আমার বয়েই গেছে আপনার বউ হতে, আমার বর হবে যে সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
আয়ানঃ হ্যাঁ, সার্কাসের জোকারের দিকেও সবাই তাকিয়ে থাকে।
নিশিঃ দেখেন একটু বেশি হয়ে গেলো কিন্তু,
বৃষ্টিঃ এই তোমরা থামো তো।

একটু পর বৃষ্টি আর নিশি অটো থেকে নেমে গেলো।
বৃষ্টিঃ আয়ান তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো।
আয়ানঃ জি আপু আসবো।

কয়েক দিন পরের ঘটনা!
আয়ান ক্লাশে বসে আছে, নিশি আসলো হাতে একটা মিষ্টির প্যাকেট!
আয়ান ভাবলো, নিশির কি বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো নাকি? মেয়েরাই ভালো, পড়ছে আর সাথে বিয়েও হয়ে যাচ্ছে, আমাদের কপাল খারাপ,

কবে পড়া শেষ হবে আর কবে চাকুরী হবে আর কবে বিয়ে?
নিশিঃ বৃষ্টি আপু! মিষ্টি খান, আমার ব্যাংকে চাকুরী হয়েছে, এই শহরেই।
বৃষ্টিঃ অহ খুব ভালো দাও মিষ্টি।
নিশিঃ এই যে আয়ান সাহেব আপনিও নেন, এতো কি ভাবছেন? প্রেমিকার কথা নাকি?
আয়ানঃ না ভাবছি, আপনার যখন চাকুরী হয়ে গেলো, তখন একটা বেকার ছেলে দেখে বিয়ে করে নিলেন তো পারেন, তাহলে একটা ছেলের দুঃখ দূর হবে।
নিশিঃ আমার বয়ে গেছে, কতো ছেলে আমার পিছনে ঘুরে আপনি জানেন?
আয়ানঃ সস্তা পণ্যের কাস্টমার বেশি।
বৃষ্টিঃ এই তোমারা আবার শুরু করে দিলা?
নিশিঃ আমি তো কিছু বলি নি, আপনার এই ভালো ভাইটাই তো আমাকে বার বার অপমান করছে।
বৃষ্টিঃ আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দাও, ক্লাশের সময় হয়ে এসছে, আয়ান চলো।
আয়ানঃ মিষ্টি দিলে যে সাথে পানিও দিতে হয় সেটাও কেউ জানে না।
নিশিঃ পানি কেনো, বলেন যে হাত ধুয়ে দিচ্ছি।
আয়ানঃ আমিতো অতো সস্তা না যে যে কেউ আমার হাত ধরার সুযোগ পাবে।

নিশিতো রাগে শুধু ফুলছে, পারলে আয়ানকে খেয়ে নিবে।
বৃষ্টিঃ এই আয়ান, চলো তো। নিশি তুমিও ক্লাশে যাও।

ক্লাশে নিশি চুপ করে বসে আছে, আইরিন জিজ্ঞেস করলো? কি হয়েছে রে মন খারাপ কেন?
নিশিঃ আর বলিস না, আব্বু বলেছে আমার জন্য নাকি ছেলে খুজছে আমার বিয়ে দিবে, আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।
আইরিনঃ সেটা আংকেল কে বল,
নিশিঃ তিনি শুনবে না, এজন্য আমি বলে দিয়েছি, যে আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করি।
আইরিনঃ তারপর,
নিশিঃ তারপর আর কি আব্বু বলল ছেলেকে নিয়ে আসো বাসাই আমি কথা বলবো। কিন্তু এখন ছেলে কয় পাবো? আর আমার তো কোন ছেলে ফ্রেন্ড ও নাই।
আইরিনঃ এখন কি করবি?
নিশিঃ ওটাই ভাবছি, কাকে নিয়ে যাবো?
আইরিনঃ তোকে একটা বুদ্ধি দিতে পারি,
নিশিঃ কি বল,
আইরিনঃ তুই যেভাবে হোক, আয়ান কে রাজী করে তোর বাবার কাছে নিয়ে যা।
নিশিঃ আর কারো নাম পাইলি না? ঐ শয়তান টার নামি পাইলি?
আইরিনঃ দেখ, তুই কি আর অন্য কোন ছেলে চিনিস? আর আয়ান এখন পড়াশুনা করে তার মানে তোর বাবা যদিও

আয়ান কে পছন্দ করে তাহলেও ২ বছর আগে বিয়ে দিবে না, তার মধ্যেই তুই বলে দিবি যে তোর সাথে আর আয়ানের সম্পর্ক নাই।
নিশিঃ তুই খুব একটা খারাপ কথা বলিস নি, আর যেহেতু আয়ানও আমাকে পছন্দ করে না, তার মানে সে সুযোগ নিবে না।

কিন্তু ঐ ছেলেকে রাজী কে করাবে?
আইরিনঃ তুই করাবি, তোর দরকার।
নিশিঃ মাথা খারাপ? আমি?
আইরিনঃ তাহলে চল, বৃষ্টি আপুকে সব বলি, সে আয়ান কে বললে নিশ্চয় আয়ান রাজী হয়ে যাবে।

নিশিঃ এই বৃষ্টি আপু ব্যাস্ত আছেন নাকি? একটু জরুরী কথা ছিল।
বৃষ্টিঃ না বলো,
নিশিঃ আমি একটা বিপদে পড়ে গেছি,

তারপর নিশি সব খুলে বলল,
বৃষ্টিঃ সব বুঝলাম, কিন্তু এখন বোলো আমি কি করতে পারি?
নিশিঃ আপু আপনি যে ভাবে হোক, আয়ান কে রাজী করান।
বৃষ্টিঃ দেখি আমি কি করতে পারি।

বৃষ্টি আয়ান কে ডেকে বলল, আয়ান শোন নিশি একটা বিপদে পড়ে গেছে, আর তোমাকে একটু সাহায্য করতে হবে।
আয়ানঃ কি সমস্যা?
বৃষ্টিঃ নিশির আব্বু নিশির বিয়ে দিতে চাই, কিন্তু নিশি করতে চাই না, এজন্য সে বলেছে যে সে একজনকে ভালো বাসে,

এখন তার আব্বু সেই ছেলে কে দেখতে চেয়েছে, তোমাকে সেই ছেলে হয়ে তারদের বাসাই যেতে হবে।
আয়ানঃ মাথা খারাপ? আমি, তাও আবার নিশির প্রেমিক? এতো পাগল আমি হয়ে যায় নি।
বৃষ্টিঃ তুমি তো সত্যি সত্যি হয়ে যাচ্ছ না, একটু অভিনয় করতে হবে।
আয়ানঃ যদি নিশির আব্বু আমাকে পছন্দ করে ফেলে।
নিশিঃ আয়নাতে নিজেকে দেখেছেন? আপনাকে আমার আব্বু আমার জন্য জিবনেও পছন্দ করবে না।
আয়ানঃ দেখছেন বৃষ্টি আপু, কিভাবে অপমান করছে, ঠিক আছে চ্যালেঞ্জ থাকলো যদি নিশির আব্বু রাজী হয়ে যায় তবে কি হবে?
নিশিঃ তাহলে আপনি যা বলবেন আমি শুনবো।
আয়ানঃ দেখেন কিন্তু।
নিশিঃ হ্যাঁ, আই আইরিন আর বৃষ্টি আপু আপনারা সাক্ষী থাকেন।
আয়ানঃ ঠিক আছে আমি যাবো, বলেন কবে যেতে হবে?
নিশিঃ কাল বিকেলে আমাদের বাসাই আসেন।

পরদিন আয়ান বিকেলে নিশিদের বাড়ী গেলো,
ভালোই বড় বাড়ী বানিয়েছে, বাড়ীর সামনে গেটের পাশে নিশির আব্বুর পরিচয় লিখা আছে,

পড়ে আয়ান বুঝলও তিনি একজন প্রাক্তন ব্যাংক কর্মকর্তা। এজন্যই নিশির ব্যাংকে চাকুরী হয়েছে।
আয়ান কলিংবেল বাজাতেই একটা পিচ্চি মেয়ে এসে দরজা খুলে বলল কাকে চান?
আয়ান বলল, নিশি আছে? আমি তার সাথে পড়াশুনা করি, একটু ডেকে দিবেন? বলেন আয়ান এসেছে।
মেয়েটি বলল, দাঁড়ান, আমি আপু কে ডেকে দিচ্ছি।

একটু পর নিশি আসলো, দেখে বলল, আসো ভিতরে, এতো দেরি কেন?
আয়ান একটু চমকে গেলো, আপনি থেকে তুমি? ঘড়ি দেখলও, মাত্র ৪ মিনিট দেরি, তাতেই ম্যাডামের মন খারাপ?
ভাগ্য ভালো যে এই মেয়ে সত্যি আমার প্রেমিকা না।

আয়ান বসে আছে, সামনে নিশি বসে আছে, নিশি দাঁড়িয়ে গেলো, বলল আয়ান আমার আব্বু আসছে একটু সাবধানে কথা বলো।
আয়ান দাঁড়িয়ে সালাম দিলো,
নিশির আব্বু রফিক সাহেব বলল, কি ব্যাপার বিয়ে করতে এসেছ নাকি একেবারে পাঞ্জাবী পরে এসেছ?
আয়ানঃ আমার বাবা বলে, যখন খুব মূল্যবান মানুষের সাথে দেখা করতে হয় তখন তাকে সম্মান জানাতে হয় আর

পাঞ্জাবী এর জন্য সব থেকে সম্মানী পোশাক। আমি তো কোন অফিস বা কলেজে আসি নি, যে আমাকে ইউনিফরম পরে আসতে হবে।
রফিক সাহেবঃ বুঝলাম, বসো! বোলো কি খাবা? চা নাকি কফি?
আয়ানঃ আমি চা পছন্দ করি।
রফিক সাহেবঃ এই শিলা, চা আর নাস্তা নিয়ে আয়। আচ্ছা তুমি কি করো?
আয়ানঃ আমি পড়াশুনা করি, সাথে ব্যাবসা।
রফিক সাহেবঃ কি ব্যাবসা?
আয়ানঃতেমন কিছু না, ছোট, নিজের খরচটা চলে যায়।
রফিক সাহেবঃ তুমি জানো আমি কি করি?
আয়ানঃ এখন কি করেন বলতে পারবো না, তবে আগে ব্যাংকে কর্মকর্তা ছিলেন।
রফিক সাহেবঃ তোমাকে নিশি বলেছে?
আয়ানঃ জি না, বাসাই আসার সময় গেটের পাশে লিখা ছিল।

রফিক সাহেব ভাবল ছেলে বুদ্ধিমান আছে।
রফিক সাহেবঃ আচ্ছা আমার মেয়ে ব্যাংকে চাকুরী করে অনেক বাড়ী থেকে তার প্রস্তাব আসছে,

তাদের ছেড়ে আমি কেন তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো। তুমি আমাকে ৩ টা কারণ দেখাও।
আয়ানঃ ১। তারা আপনার মেয়েকে দেখে না, তার ভালো চাকুরী দেখে আসছে, কোন কারণ বশত যদি আপনার মেয়ের চাকুরী চলে যায় তবে
আপনার মেয়ে তাদের কাছে বোঝা হয়ে যাবে, কিন্তু আপনার মেয়ের ব্যাবহার দিয়েই

আমাদের সম্পর্ক তাই এখানে চাকুরী থাক বা না থাক এটা কিছু যায় আসে না।
রিজিকের মালিক আল্লাহ্‌, আর তাকে খাওয়ানোর ক্ষমতা আমার আছে।
২/ আপনার মেয়ে অনেক বদ মেজাজি, অপরচিত কোন ছেলে বিয়ে করলে প্রায় দিন তার সাথে ঝগড়া হবে,

কিন্তু আমি নিশিকে চিনি, তাই আমি জানি তাকে কিভাবে শান্ত করা যায়।
৩/ একজন অপরিচিত ছেলে বিয়ে করলে, নিশি শুধুই তার দায়িত্ব থাকবে, কিন্তু আমার কাছে দায়িত্বর চাইতেও অনেক বেশি,

কারণ নিশি সবাই কে ছেড়ে শুধুই আমাকে তার জীবন সঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছে।
রফিক সাহেবঃ তোমার কথাই যুক্তি আছে। কিন্তু সবাই কি বলবে? যে রফিক তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে একটা বেকার ছেলের সাথে দিলো?
আয়ানঃ সেটা আপনার ব্যাপার, একজন বাবা হিসাবে আপনার দায়িত্ব একটা ভালো ছেলে খুঁজে আপনি আপনার মেয়ের বিয়ে দিবেন।
রফিক সাহেবঃ আচ্ছা তোমাদের সম্পর্ক কতো দিনের?
আয়ানঃ আপনি হয়তো ভুল শুনেছেন, আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নাই,

আপনার মেয়ে আমাকে পছন্দ করে আর আমি সেই ভালবাসাকে সম্মান করি।
মদ্ধবিত্ত ঘরের ছেলে আমি, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য নিজেকে সময় দিতে পারি না, আর কাউকে ভালোবাসার সময় কোথায় পাবো?

মদ্ধবিত্ত ঘরের ছেলেদের অনেক দায়িত্ব থাকে।
সম্পর্ক করলে তো তাকে নিয়ে ঘুরতে হবে, তার সব আবদার পূরণ করতে হবে, বিয়ের আগে এসব ভালো লাগে না,

আর আমাদের গ্রামের সমাজের চোখেও এসব ভালো না, যেহেতু সমাজে চলতে হয় তাই নিজেকে একটু সমাজের নিয়মেই চালাতে হয়।
রফিক সাহেবঃ তুমি গ্রাম বেশি পছন্দ করো?
আয়ানঃ জি হ্যাঁ, শহর আমার ভালো লাগে না, গ্রামের শান্ত পরিবেশ আমার বেশি ভালো লাগে।
রফিক সাহেবঃ আচ্ছা তোমাকে আর আমার মেয়েকে দেখছি ২ জন ২ মেরুর মানুষ, আমার মেয়ে তোমাকে কিভাবে পছন্দ করলো বলতো?
আয়ানঃ সেটা আপনার মেয়ে ভালো বলতে পারবে। সৃষ্টিকর্তা তো আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছে,

সে আমাদের সাথে মিলে যাক না হলে না হোক।
রফিক সাহেবঃ এটা বাবা, তুমি ঠিক বলেছো।
আয়ানঃ কেন আংকেল, এতক্ষণ কি সব ভুল বললাম?

রফিক সাহেব ভাবল, এখন তো সেই ফাঁদে পড়ে গেছে, কি বলবে।
রফিক সাহেবঃ না, ঠিক বলেছ, ঠিক আছে আমি তোমার কথাই খুশি হয়েছি। আচ্ছা আমি ভেবে তোমাকে আমার সিদ্ধান্ত জানাবো।
আয়ানঃ জি, আংকেল! আসসালামু… দুয়া করবেন আমার জন্য।
রফিক সাহেবঃ ঠিক আছে বাবা…

আয়ান চলে যাবার পর নিশি আসলো, বাবা, আয়ান কি চলে গেছে? কেমন লাগলো তোমার?
রফিক সাহেবঃ ছেলেকে তো ভালোই মনে হল, তবে আগে ভালো করে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিবো।

নিশি ভাবল, সত্যি আব্বু কি আয়ানকে পছন্দ করে নিবে নাকি? তাহলে তো আমি চ্যালেঞ্জে হেরে যাবো, অবশ্য আব্বু পছন্দ করলে ভালো,
২-৩ বছর আর বিয়ের ঝামেলা থাকবে না, বন্ধুদের নিয়ে অনেক আনন্দ করতে পারবো।

রফিক সাহেবঃ আসস্লামু… সালাম ভাই, আমি রফিক।
সালাম সাহেবঃ আরে রফিক স্যার কেমন আছেন, অনেক দিন পর।
রফিক সাহেবঃ একটু দরকারে ফোন দিয়েছি, একটা ছেলের ব্যাপারে খোঁজ খবর দিন তো। ছেলের নাম আয়ান,

বাবার নাম রায়হান কবির, আপনার এলাকাই বাড়ী।
সালাম সাহেবঃ স্যার, কোন বিয়ের ব্যাপার নাকি?
রফিক সাহেবঃ হ্যাঁ, আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে, ছেলের সব খোঁজ খবর যেন পাই।
সালাম সাহেবঃ স্যার! আপনি চিন্তা করবেন না, কালকের মধ্যেই সব খোঁজ খবর দিয়ে দিবো।
রফিক সাহেবঃ ঠিক আছে, রাখি, ভালো থাকবেন।
সালাম সাহেবঃ আসসাল্মু…। স্যার।

সালাম সাহেবঃ আসসাল্মু…। স্যার।
রফিক সাহেবঃ অলাইকুম… সালাম, কি খবর বলেন।
সালাম সাহেবঃ স্যার! খবরতো ভালোই, ছেলে খুব ভালো, মসজিদের ইমাম থেকে স্কুলের স্যার সবাই তার সুনাম করছে। আর তার পরিবার ও ভালো।
রফিক সাহেবঃ তাহলে আপনি কি বলছেন? বিয়ে দিয়ে দিবো? কিন্তু ছেলেতো এখনও চাকুরী করে নি।
সালাম সাহেবঃ স্যার সে তো বেকার না, আর পড়া শেষ করলেতো চাকুরী করবে, আর সে কিন্তু রোজকার খুব একটা খারাপ করে না,

আপনার মেয়ে অনেক সুখী থাকবে। আর তার ওপর তো স্যার আপনি আছেন।
রফিক সাহেবঃ তা অবশ্য ঠিক বলেছো শেষে তো আমি আছি। তো বোলো কবে আসবো?
সালাম সাহেবঃ স্যার, আপনি কাল চলে আসেন, দেরি করার দরকার নাই।
রফিক সাহেবঃ ঠিক আছে কাল আসছি।


পরের দিন রফিক সাহেব গাড়ী নিয়ে আয়ানদের বাসাই গেলো। বাইরে থেকে সালাম সাহেব ডাক দিলো।
সালাম সাহেবঃ রায়হান ভাই আছেন?
রায়হান সাহেবঃ জি বলেন, সালাম ভাই কি খবর?
সালাম সাহেবঃ রায়হান ভাই, একটা জরুরী কথা ছিল, ইনি হলেন আমাদের স্যার রফিক সাহেব,

ইনার মেয়ে আপনার ছেলের সাথে পড়াশুনা করে, ইনি এসেছে আপনার সাথে কথা বলতে।
রায়হান সাহেবঃ আমার ছেলেকি কিছু অন্যায় করেছে নাকি?
রফিক সাহেবঃ আরে না! আপনার ছেলেকে আমাদের জামাই বানাবো। যদি আপনি রাজী থাকেন।
রায়হান সাহেবঃ আচ্ছা আগে বাসাই আসেন।
সালাম সাহেবঃ স্যার আগে ব্যাংকের বড় অফিসার ছিলেন, এখন নিজের কিছু ব্যাবসা আছে, নিশি ম্যাডাম ও ব্যাংকে চাকুরী করে।
রায়হান সাহেবঃ কিন্তু ভাই, আমার ছেলেতো কোন কিছু করে না,
সালাম সাহেবঃ ভাই, আপনার ছেলে কি করে আমরা সব জানি, এখন বলেন আপনি রাজী নাকি?
রায়হান সাহেবঃ আমার ছেলে রাজী থাকলে আমারাও রাজী।
রফিক সাহেবঃ আপনার ছেলে রাজী আছে, আমার সাথে তার আগেই কথা হয়েছিলো। আর এই দেখেন এটা আমার মেয়ের ছবি।
রায়হান সাহেবঃ জি অনেক সুন্দর। কিন্তু ভাই আমরা গরীব মানুষ আপনার মেয়েকি পারবে আমাদের সাথে মানিয়ে নিতে?
রফিক সাহেবঃ আমার মেয়েই তো আপনার ছেলেকে পছন্দ করেছে, আমি তো জোর করে দিচ্ছি না।
রায়হান সাহেবঃ তাহলে আমাদের বউ কবে ঘরে আসবে?
সালাম সাহেবঃ স্যার আমি বলি কি শুভ কাজে আর দেরি করার দরকার নাই, আপনি সামনে সপ্তাহেই বিয়ে দিয়ে দিন।
রফিক সাহেবঃ ঠিক আছে তাই হোক। তবে ভাই একটা কথা, মেয়ে যেহেতু শহরে চাকুরী করে তার সাথে পড়াশুনা এজন্য

সে ভাই আপনার বাড়ীতে বেশি থাকতে পারবে না, তাকে ওখানেই থাকতে হবে।
রায়হান সাহেবঃ এটা নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না, আপনার মেয়ের যেখানে সুবিধা হবে সেখানেই থাকবে, শুধু তারা সুখে থাকলেই হবে,

বাবা মা হিসাবে আমাদের তো এটাই চাওয়া যে ছেলে মেয়ে সুখে শান্তিতে থাক।
রফিক সাহেবঃ সেটা ঠিক কথা, ছেলে মেয়ে সুখে থাকলেই বাবা মা সুখী। তাহলে সামনে সপ্তাহেই বিয়ের কথা পাকা থাকলো,

কি বোলো নিশির আম্মু?
নিশির আম্মুঃ আমি আর কি বলবো? সব তো ঠিক করেই দিলা। তবে এক সপ্তাহ একটু কম সময় হয়ে যাচ্ছে না?
রফিক সাহেবঃ সেটা ম্যানেজ করে নিবো। তাহলে ঐ কথাই থাকলো ভাই, সামনে মাসের ৫ তারিখ বৃহস্পতিবার।
রায়হান সাহেবঃ ঠিক আছে ভাই।
।।
।।
এদিকে আয়ান আর নিশির বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো কিন্তু অন্য দিকে ?
।।
।।
বৃষ্টিঃ নিশি কি হল? রেজাল্ট কি? তোমার আব্বু কি রাজী হয়েছে?
আয়ানঃ হ্যাঁ ম্যাডাম বলেন।
নিশিঃহ্যাঁ হয়েছে, আমি শর্তে হেরে গেছি। বলেন আমাকে কি করতে হবে?
আয়ানঃ বেশি কিছু না, আপনাকে বোরখা পরতে হবে।
নিশিঃ মাথা খারাপ? ঐ সব বাজে জিনিস আমি পরতে পারবো না, অন্য কিছু বলেন।

আর আপনি আমার সত্যি সত্যি স্বামী হবেন না যে আপনার কথা শুনতেই হবে।

আয়ানঃ আমাকে দেখে কি আপনাকে পাগল মনে হয়, যে আমি আপনার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করবো?
নিশিঃ ঐ ছেলে? এতো ভাব নাও কেন? তোমার মধ্যে আছে কি যে তোমাকে আমি বিয়ে করতে যাবো?

যদি ১০০ তা ছেলে আমার পিছনে পড়ে থাকে তবে তুমি সেই ১০১ নাম্বার।
আয়ানঃ ওরা তোমাকে না, তোমার এই শরীরকে ভালোবাসে, যেটা তুমি সবাইকে দেখিয়ে চলো।
নিশিঃ সেটা আমার ব্যাপার, আপনি আমার উপকার করেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।

তবে কেউ আমার ব্যাক্তিগত জীবনের বিষয়ে কথা বলবে আমি সেটা পছন্দ করি না।
বৃষ্টিঃ এই তোমারা থামো তো, তোমারা ২ জনেই এক।
আয়ানঃ আপু আমি চলে গেলাম, থাকেন।
বৃষ্টিঃ কোথায় যাচ্ছো? ক্লাশ করবা না?
আয়ানঃ না, পারলে এই মেয়ের আর মুখ দেখবো না।
নিশিঃ দেখলেন আপু? কি ব্যাদব ছেলে এটা? কতো বড় কথা বলে গেলো। আপনি ঐ ছেলে থাকলে আর আমাকে ডাকবেন না।
।।
।।
এই বলে ২ জন দুই দিকে চলে গেলো, বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে… সে কোন দিকে যাবে?

বাড়ী যেতেই আয়ানের মাথাই বাজ পড়লো। তার কারণ, ১০ দিন পর নিশির সাথে তার বিয়ে। তার আব্বু কি বকলেও তাকে বেশি কিছু বলল না।
কিন্তু আয়ান কি করবে সেটাই বুঝতে পারছে না, এখন তো এভাবে সত্যি বলা যাচ্ছে না, আর ঐ মেয়েকে বউ বানানো কোন ভাবেই সম্ভব না।
সে বৃষ্টি আপুকে ফোন করে।
আয়ানঃ আপু অনেক বড় সমস্যাই পড়ে গেছি, আজকে নাকি নিশির আব্বু আমাদের বাড়ী এসে আমার সাথে নিশির বিয়ে ঠিক করে দিয়েছে,

এখন আমি কি করবো?
বৃষ্টিঃ সমস্যা তো আসলেই বড়।
আয়ানঃ হ্যাঁ, আপু, অনেক বড়, অন্যের উপকার করতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলাম। কি করবো আপু?
বৃষ্টিঃ বিয়ে করে নাও।
আয়ানঃ মাথা নষ্ট? ঐ আধ পাগলি, বদ মেজাজি মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? এর থেকে সারা জীবন একা থাকা অনেক ভালো।
বৃষ্টিঃ আচ্ছা আমি ভেবে দেখছি কি করা যায়, একটু অপেক্ষা করো আমি তোমাকে জানাচ্ছি।
।।
বৃষ্টি নিশি কে ফোন করলো কিন্তু সে ফোন ধরলো না।। কারণ তাদের বাড়ীতেও তখন ঝড় চলছিল।
ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরতেই নিশির আম্মু বলল, মিষ্টি খাও তোমার তো আজ অনেক খুশির দিন?
নিশি বলল, কি খুশি?
আম্মু, আয়ানের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সামনে মাসের ৫ তারিখে তোমাদের বিয়ে।
নিশিঃ কি? আমি কি বলেছি যে আমি এখুনি বিয়ে করবো?
আম্মুঃ সেটা আমি কি জানি? তোমার বাবাকে বোলো, আর তোমার পছন্দের ছেলে সমস্যা কোথায়?
আর তোমার আব্বু আয়ানের আব্বু কে বলে দিয়েছে, তুমি এখানেই বেশি থাকবা, আর তাতে আয়ানের আব্বু রাজী,

তাহলে তোমার আর তো কোন সমস্যা হবার কথা না।
।।
নিশি তার ঘরে চলে গেলো, বাথরুমে গিয়ে সে অনেক কাঁদল, কারণ নিজের ফাঁদে এখন সে নিজেই ফেঁসে গেছে।
যে ছেলেকে সে এক মুহূর্ত সহ্য করতে পারে না, তাকে নিয়ে কিভাবে সারা জীবন কাটাবো? বাথরুম থেকে বের হয়ে

সে বৃষ্টি আপুকে ফোন দেবার জন্য ফোন দেখলও ৩ টা মিস কল।
সে বৃষ্টি আপুকে কল দিলো, দিয়ে সে কাঁদতে শুরু করলো।
বৃষ্টি বলল, আমি সব জানি, একটু আগে আয়ান আমাকে ফোন করেছিলো। আমি ও ভাবছি কি করা যায়।
একটা কাজ করো আজ বিকেলে আমার সাথে দেখা করো, আমি আয়ান কেও ডেকে নি, দেখি কি করতে পারি।
।।
বিকেলে আয়ান বৃষ্টি আর নিশি বসে আছে এক পুকুর পাড়ে। সবাই চুপ, কে কি বলবে?
বৃষ্টিঃ তোমারা কি এভাবে চুপ হয়ে থাকবা কিছু বোলো, তোমরা বিয়ে করে নাও এটাই আমার ঠিক মনে হচ্ছে।
আয়ানঃ এটা সম্ভব না।
নিশিঃ আমিও রাজী না।
বৃষ্টিঃ আয়ান তুমি কিছু খাবার কিনে নিয়ে আসো তো, যাও।
আয়ানঃ ঠিক আছে আপু যাচ্ছি।
বৃষ্টিঃ আয়ান কে কেন পাঠালাম জানো? যেন তোমার সাথে একা কথা বলতে পারি, এখন বোলো কেন আয়ান কে বিয়ে করবে না?

আয়ান কি খারাপ ছেলে?
নিশিঃ আপু, ছেলেটা সব সময় আমার পিছনে লেগে থাকে তাকে আমি কিভাবে সারা জীবন সহ্য করবো? যাকে দেখতেও ইচ্ছা করে না।
বৃষ্টিঃ দেখো, তোমরা ঝগড়া করো এটা সত্যি। কিন্তু আয়ান কি তোমার সাথে কোন দিন খারাপ ব্যাবহার করেছে?

কোন দিন শুনেছ যে সে কোন মেয়েকে বিরক্ত করেছে, সে কি খারাপ ছেলে তুমি বোলো?
নিশিঃ না সে খারাপ ছেলে না, কিন্তু আমি তাকে সহ্য করতে পারি না।
বৃষ্টিঃ একবার ভেবে দেখো, এখন তোমার আব্বুকে সত্যি বললে তিনি অনেক কষ্ট পাবে,

বিয়ে তো তোমার দিবে সাথে তোমার ওপর ওনার যে ভরসা আছে সেটা উঠে যাবে। তাই বলছি তুমি আয়ান বিয়ে করে নাও।
।।
আয়ানঃ আপু এই যে আপনাদের খাবার।
বৃষ্টিঃ আয়ান, দেখো ভাই, তুমি আমাকে বোনের মতো ভাবো, তাই আমি একটা কথা বলছি মন দিয়ে শোন।

সব সময় তুমি যেটা চাইবা সেটা হবে সেটা কিন্তু না, কিছুটা ভাগ্য মনে করে মেনে নিতে হয়। তুমি এই বিয়েতে রাজী হয়ে যাও।
আয়ানঃ কিন্তু আপু, নিশি কারো কথা শুনে না, সব সময় নিজের মতে চলে, আর সে মোটেও আমার টাইপের না, আমি গ্রাম ভালোবাসি, সে শহর।

আমি নদী ভালোবাসি সে ভালোবাসে শহরের উচু শপিং মল।
বৃষ্টিঃ এজন্যই তো বলছি কিছুটা ভাগ্য মনে করে মেনে নাও, আর বিয়ের পর সবাই পাল্টে যায়,

সেও পাল্টে যাবে, দেখবা সেও তোমার কথা শুনবে, সেও বোরখা পরবে, কিন্তু এর জন্য সময় দিতে হবে,

আর তুমি সব সময় তার পিছনে লেগে থাকো সেটা নিজেকে বদলাতে হবে।
আয়ানঃকিন্তু?
বৃষ্টিঃ কোন কিন্তু না, এখন যদি তোমার আব্বু আম্মুকে সত্যি বোলো, তবে তারা অনেক কষ্ট পাবে, আর তোমাকেও আর তারা বিশ্বাস করবে না।

আর তোমার যদি অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে হয় তবে সে যে তোমার সব কথা শুনবে সেটার কি গ্যারান্টি?
আয়ানঃ আমি কি করবো? কিছুই তো বুঝছি না।
বৃষ্টিঃ তোমরা বিয়ে করে নাও। আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে। নিজেদের একটু সময় দাও।

আজ নিশি আর আয়ানের বিয়ে হয়ে গেলো, কিন্তু নিশি যে আয়ানদের বাড়ী পছন্দ করে নি, এটা আর কেও না বুঝুক আয়ান ঠিক বুঝে গেছে।
আয়ান নিশি কে বলল, আজকের দিন নিজেকে একটু মানিয়ে নেন।
নিশিঃ এতো মানুষ কিসের, আমার এসব ভালো লাগে না, তাড়াতাড়ি সবাই কে যেতে বলেন।
আয়ানঃ দেখেন, চাইলেই তো সবাইকে যেতে বলতে পারি না, তারপর ও দেখছি কি করা যায়।
নিশিঃ আমি কিছু জানি না, এখুনি।
আয়ানঃ ৫ মিনিট আমি দেখছি।
নিশিঃ ঠিক আছে।

আয়ান তার এক ভাবিকে বলল, ভাবি, নিশির শরীর খারাপ করছে, তাকে একটু একা রাখতে পারলে ভালো হতো।
ভাবিঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি সবাইকে বাইরে যেতে বলছি।

কিছুক্ষণ পর সবাই বাইরে চলে গেলো। নিশি আয়ানের ঘরে গেলো, ফুল দিয়ে ভালো করেই সাজিয়েছে।

কিন্তু ঘরে তো এসি নাই, এতো গরমে কিভাবে সে থাকবে?

নিশিঃ আপানার ঘরে এসি নাই?
আয়ানঃ মনে মনে বলল, চোখ নাই দেখতে পান না?
নিশিঃ কি হল?
আয়ানঃ দেখতেই তো পাচ্ছেন যে নাই।
নিশিঃ আমি এতো গরমে কিভাবে থাকবো?
আয়ানঃ আমি তো ১ বছর আগে জানতাম না যে আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে, জানলে হয়তো চেষ্টা করতাম।
নিশিঃ আমি এসি ছাড়া ঘুমাতে পারি না।
আয়ানঃ সামনে তো শীত চলে আসছে, সামনে বছর লাগিয়ে দিবো।
নিশিঃ আমি আব্বুকে বলি কালকে লাগিয়ে দিতে?
আয়ানঃ দেখেন, বৃষ্টি আপু বলেছে আপনাকে কিছু না বলতে তাই আপনাকে কিছু বলছি না, তার মানে এই না যে আপনি যা ইচ্ছা তাই করবেন।

এক দিনেই সব পরিবর্তন করার চেষ্টা করিয়েন না।
নিশি আর কিছু বলল না, মন খারাপ করে বসে থাকল।

রাত ১২ টা হটাৎ কারেন্ট চলে গেলো।
আয়ান ভাবল হ্যাঁ, এটারই কমতি ছিল।
নিশির ঘুম ভেঙ্গে গেলো,
নিশিঃ কি ব্যাপার কারেন্ট নাই? আপনাদের এখানে কি প্রতিদিন কারেন্ট যায়?
আয়ানঃ না যায় না, তবে যখন সময় খারাপ যায় তখন সাদা কাপড়েও রং উঠে যায়।
নিশিঃ আমি অতো বুঝি না, আমার অনেক গরম লাগছে।
আয়ানঃ চলেন বাইরে যায়।
নিশিঃ এতো রাতে বাইরে যাবো? তাও বিয়ের রাতে?
আয়ানঃ আপনি আপনার ড্রেস পাল্টে নেন। আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি।
।।
নিশি আর আয়ান বাইরে গেলো, কিন্তু দুঃখের বিষয় তখন বাইরে ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার।

আয়ান মনে মনে ভাবল চাঁদনী রাতও হয়তো আজ লুকিয়ে গেছে, সবাই আয়ানকে আজ একা ফেলে চলে গেছে।
নিশিঃ আমার খুব ভয় করছে।
আয়ানঃ আমার হাত ধরতে পারেন। কেউ দেখবে না।
নিশিঃ আমার তো সব থেকে বেশি আপনাকেই ভয় করছে। যদি একা পেয়ে আমার সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেন?
আয়ানঃ অহ, হ্যালো ম্যাডাম একটু বাস্তবে ফিরে আসেন। আপনি আমার বউ, আর এসব কথা আরেকবার বললে কিন্তু একা রেখে চলে যাবো।
নিশিঃ আরে আমি তো মজা করছিলাম, রাগ করেন কেন?
।।
রাত ৩ টার সময় কারেন্ট আসে,
আয়ানঃ চলেন কারেন্ট চলে এসেছে।
নিশিঃ আর একটু থাকি না, দেখেন কি সুন্দর চাঁদ উঠছে। এতো সুন্দর জায়গা তো শহরে পাওয়া যায় না। আপনার কি ঘুম আসছে?
আয়ানঃ না ঠিক আছে, থাকেন।
।।
যায় হোক এভাবে আয়ান আর নিশির সময় কাটতে লাগলো, যদিও তাদের মধ্যে যে ঝগড়া হয় না সেটা কিন্তু না, তবে অনেক কম।
নিশি বেশীর ভাগ সময় তার বাবার বাড়িতেই থাকে। আর আয়ান ও চেষ্টা করছে কিভাবে নিশির সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেদের সব দূরত্ব মিটাতে পারবে।
নিশিও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, কিছুটা রাগ কমেছে।
বিয়ের ৪ মাস পার হয়ে গেছে… ইউনিভার্সিটি থেকে আয়ান ফিরছে, শহরে কিছু কাজ থাকার জন্য প্রায় রাত হয়ে গেছে, তার ওপর ঠাণ্ডা পড়েছে অনেক।
আয়ান ভাবল যায় শ্বশুর বাড়ী যায়, নিশিকেও ৪ দিন থেকে দেখতে পাই নি। হাজার হলেও বউ, না দেখলে বুকের এক পাশটা কেমন জানি করে, হয়তো একেই ভালোবাসা বলে।
কিন্তু নিশিদের বাড়ী গিয়ে দেখলও নিশি বাড়ীতে নাই। সে নাকি কোন পার্টিতে গেছে, যায় হোক সমস্যা নাই, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি।
।।
টিভি দেখতে দেখতে আয়ান কখন ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারিনি,
হটাৎ দরজার আওয়াজে আয়ানের ঘুম ভাঙ্গল নিশি এসেছে, আয়ান ঘড়ি দেখলও রাত ১ টা বাজে, এটা সত্যি খুব খারাপ কথা।
।।
নিশিঃ তুমি কখন আসলা?
আয়ানঃ সন্ধাই,এতো দেরি কেন?
নিশিঃ আমি কি পিচ্চি মেয়ে নাকি যে সন্ধাই বাড়ী ফিরে আসবো?
আয়ানঃ একটা ভদ্র বাড়ীর মেয়ে তো রাত ১ টা পর্যন্ত বাসার বাইরে থাকে না।
নিশিঃ তো কি বলতে চাও আমি অভদ্র?
আয়ানঃ আমি কি বলবো? সেটা তো তোমার ব্যাবহারে বলছে, আর এসব কি ড্রেস? তুমি ভুলে যেও না যে তুমি কারো বউ।
নিশিঃ বউ হয়েছি তো কি কারো গোলাম নাকি? যা বলবা সব শুনতে হবে? নিজের টাকাই কিনেছি, কারো বাপের টাকাই না।
আয়ানঃ তুমি এভাবে কথা বলছ কেন? তুমি কি ড্রিংকস করেছো?
নিশিঃ হ্যাঁ করেছি, তোমার কোন সমস্যা?
।।
আয়ান ঠাশ করে নিশির একটা গালে কষে থাপ্পড় মেরে দিলো।

নিশিঃ তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমাকে চড় মারলা? আমার বাবা কোন দিন আমার গায়ে হাত তোলে নি।
আয়ানঃ এজন্য তো তুমি এতো বড় ব্যাদব হয়েছো। তোমার বাবা তোমাকে এতো বড় অফিসার বানিয়েছে,

কিন্তু স্বামীর সাথে কিভাবে আচারন করতে হবে সেটাই তোমার বাপ তোমাকে শিখায় নি।
নিশিঃ কি এতো বড় কথা? বেরিয়ে যাও তুমি আমার বাড়ী থেকে।
।।
আয়ান আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।
আয়ান হাঁটছে, আয়ানের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো, নিশিকে চড় সে মেরেছে কিন্তু বেশি কষ্ট মনে হয় সে বেশি পেয়েছে।
কিন্তু কি করবে সে? আয়ান যে কিনা আজ পর্যন্ত একটা সিগারেট মুখে দেই নি, তার বউ মদ খেয়ে রাত ১ টাই বাড়ী ফিরছে।
আয়ান ভাবল, আর কতো ভাগ্যের কাছে পরীক্ষা দিতে হবে? তাকে তো বউ হিসাবে চাই নি,

কিন্তু যখন মেনে নিয়ে বুকে আগলে রাখতে চাচ্ছি তখনই আবার নতুন সমস্যা।
আয়ান দেখলও রাত ২ বাজে, এই সময় বাস পাওয়া যাবে না, আর পাওয়া গেলেও সে বাড়ীতে গিয়ে কি বলবে?

কিন্তু এতো ঠাণ্ডাই সে রাতে কোথায় থাকবে?
যায় হোক, সে ঘুরে ফিরে রাত পার করলো।
সকালের বাসে বাড়ী গেলো,
।।
তারপর কয়েক দিন তাদের মধ্যে কোন কথা নাই, আয়ান ভাবল কি মুখে সে নিশিকে ফোন দিবে?
বাসার বাইরে একজন মদ্ধবয়স্ক মানুষ এসে বলল, আয়ান সাহেব বাড়ীতে আছেন?
আয়ানঃ জি বলেন, আমি আয়ান।
সেই মানুষঃ জি আমাকে নিশি ম্যাডাম পাঠিয়েছে, এই প্যাকেট টা দিয়ে,
আয়ান খুশিতে সেই প্যাকেট খুলল কিন্তু প্যাকেট খুলে যা দেখলও এতে তার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। এতো ডিভোর্সের কাগজ।
আয়ানের মুখে কোন ভাষা নাই, নিশি কিভাবে পারলো এই কাজ করতে?
আয়ান ভাবল, একটুও কি বুঝলও না আমি তাকে কতো ভালোবাসি? একটুও বুঝলও না তার জন্য আমি নিজেকে কতো পাল্টে ফেলেছি।।
যায় হোক বেশি কিছু ভাবার দরকার নাই, সে যখন পাঠিয়েছে তখন আমার সই করতে কি সমস্যা?
জীবনে অনেক সই করেছি, কিন্তু আজ কেমন জানি হাত কাঁপছে, হয় তো আরেক টু ভাবনার দরকার তবে ভেবে আর কি হবে?

সম্পর্ক যখন মন থেকেই মুছে গেছে তখন আর কাগজে রেখে লাভ কি?
আয়ান সই করে দিলো…
।।
আয়ানের সই করা কয়েক দিন হয়ে গেলো, এতো দিনে বাসার সবাই জেনে গেছে কথা টা, আয়ানের আম্মু নিশিকে ফোন দিলেও তার নাম্বার টা বন্ধ পেলো।
ইউনিভার্সিটি গিয়ে জানতে পারলো নিশি নাকি ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে নিয়েছে, বাকিটা আয়ান বুঝে গেলো।
আয়ান ও ভাগ্য মনে করে নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করতে লাগলো।

৩ বছর পর, আয়ানের একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকুরী হল, আয়ান ঢাকা গেলো ট্রেনিং করতে, ৩ মাসের ট্রেনিং।
সে অফিস করা শুরু করলো, কয়েক দিন পর সে একটা মেয়ে দেখলো, কি সুন্দর বোরখা পরে আছে, কতো পর্দা শীল মেয়ে।
সে একজন কে জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু পাশের জন বলল, আয়ান ভাই ঐ দিকে নজর দিয়েন না, চাকুরী থাকবে না,
ওনারা আমাদের স্যার এরও সিনিয়ার।
আর ঐ ম্যাডাম ছেলেদের সাথে খুব কম কথা বলে, নাম জানি না, তবে শুনেছি নাকি খুব ধার্মিক মেয়ে।
।।
আয়ান ভাবল আমি কি অন্যায় করেছিলাম যে আমার কপালে এই রকম বউ জুটল?
যায়হোক, সে কাজে মন দিলো, রেজাল্ট ভালো না হলে চাকুরী থাকবে না।
।।
একদিন আয়ান আর তার কিছু সহ কর্মী সবাই গল্প করেছে।
একজন জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ভাই বিয়ে করবেন না?
আয়ানঃ না ভাই, বাধ দেন ওসব কথা।
সহ কর্মীঃ ভাই, ভাবি কে এখনও এতো ভালবাসেন?
আয়ানঃ বউ কে তো ভালো বাসতেই হবে।

পিছন থেকে নিশি সব শুনছিল, সেও কয়েক দিন আগে আয়ান কে দেখতে পাই, যদিও সে রাগ করে তার সাথে দেখা করে নি।
নিশি ভাবল, ভালোবাসা না ছাই, এতো ভালোবাসেন তো আমাকে ডিভোর্স দিলা কেন?
যাক ঐ ব্যাদব ছেলের কথা না ভাবাই ভালো।
নিশি আবার নিজেকে জিজ্ঞেস করলো, যদি তাকে কিছু মনে নাই বা করতাম, তবে কেন নিজেকে তার পছন্দ মতো সাজিয়েছি, কেন বোরখা পরলাম,
কেনই বা এখনও তার মতো চলি, কেনই বা সন্ধার আগেই বাসা ফিরে যায়?
এই ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায়, আয়ান কি ডিভোর্স টা না দিলে পারতো না?

আমি না হয় অন্যায় করেছিলাম, আরও ২ টা চড় মেরে নিতো… কিন্তু ডিভোর্স?

একদিন অফিসের মিটিং এ আয়ান দেখতে পেলো সেই বোরখা পরা মেয়েকে, আজকে তাদের কিছু পরীক্ষা হবে,

আর এতেই বুঝা যাবে কে কতো নাম্বার পেয়েছে।
আজকের প্রধান ম্যাডাম সেই বোরখা পরা মেয়েটা।
পরীক্ষা শেষ করে সবাই চলে গেলো, কিন্তু আয়ান এখনও বসে আছে, সেই বোরখা পরা মেয়েটা তার সামনে বসলো।
কি ব্যাপার আয়ান সাহেব, এতো দেরি কেন? ভালো করে ট্রেনিং করেন নি নাকি?
গলা টা কেমন জানি চেনা চেনা মনে হল, কিন্তু ম্যাডাম এর দিকে তো তাকানো যাবে না। যদি ফেইল করিয়ে দেয়?
আয়ানঃ না,ম্যাডাম সব ঠিক আছে, একটু ভালো করে লিখার চেষ্টা করছি, আর সময় তো আছে।
বোরখা পরা মেয়েঃ তাড়াতাড়ি করেন, বাসায় বউ অপেক্ষা করছে তো।
আয়ানঃ ম্যাডাম, আমার বউ নাই,
বোরখা পরা মেয়েঃ কেন বিয়ে করেন নি?
আয়ানঃ করেছিলাম ম্যাডাম, কিন্তু কপাল খারাপ ছিল, কিছু দিন পর ডিভোর্স হয়ে যায়।
বোরখা পরা মেয়েঃ কেন মেয়ে কি খারাপ ছিল?
আয়ানঃ না, ম্যাডাম মেয়ে অনেক ভালো ছিল, শুধু একটু বেশি রাগী, একদিন ঝগড়া করতে গিয়ে আমি তাকে এক চড় মারি,

এ জন্য সে আমাকে ডিভোর্সের কাগজ পাঠিয়ে দেই।
বোরখা পরা মেয়েঃ তার মানে ডিভোর্সের কাগজ আপনি পাঠান নি?
আয়ানঃ না ম্যাডাম, আমিতো আমার বউ কে অনেক ভালবাসতাম। এ কথা আমি কখনও সপ্নেও ভাবতে পারি না।
বোরখা পরা মেয়েঃ তো সে এখন কোথায় আছে জানেন না?
আয়ানঃ না ম্যাডাম, ডিভোর্স হবার পর, তার নাম্বার বন্ধ করে দেই, ইউনিভার্সিটি গিয়ে জানতে পারি সে ওখান থেকে চলে গেছে,
তার বাবা, মানে আমার শ্বশুরকে ফোন করি কিন্তু তিনি বলে নিশি মানে আমার বউ নাকি আমার সাথে আর কথা বলবে না,
তিনি বলে নিশি নাকি বিদেশ চলে গেছে। আমি আর কি বলবো? ভাগ্য মনে করে চুপ হয়ে যায়। একাই তো যুদ্ধে লড়াই করা যায় না।
বোরখা পরা মেয়েঃ আচ্ছা আপনার খাতাটা দিয়ে দিন, আমি নাম্বার যোগ করে দিবো, আমার কিছু কাজ আছে আমাকে যেতে হবে।
আয়ানঃম্যাডাম, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, তবে আমার ট্রান্সফার টা যেন আমার এলাকাই হয়। একটু দেখেবেন, আমি গ্রাম অনেক বেশি ভালোবাসি।
বোরখা পরা মেয়েঃ আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো।
।।
নিশি (বোরখা পরা মেয়ে) ঘর থেকে বেরিয়ে তার বাবা কে ফোন দিলো,
নিশিঃ বাবা, আমাকে একটা সত্যি কথা বলবা?
বাবাঃ কি বল?
নিশিঃ আয়ান কি সত্যি আমাকে ডিভোর্সের কাগজ নিজে পাঠিয়েছিলো নাকি অন্য কেউ ছিল?
বাবাঃ কি বলিস? সেই তো পাঠিয়েছিলো?
নিশিঃ কার হাতে পাঠিয়েছিলো, নাম বোলো।
বাবাঃ না মানে, মনে নাই সে কে ছিল?
নিশিঃ বাবা তুমি মিথ্যা বোলো না, প্লিজ বোলো, তুমি কি আয়ান কে ডিভোর্সের কাগজ পাঠিয়েছিলে?
বাবাঃ না মানে।
নিশিঃ বাবা, সত্যি বলবা।
বাবাঃ হ্যাঁ, আমি পাঠিয়েছিলাম। কারণ সে তোর গায়ে হাত তুলেছিল।
নিশিঃ বাবা তুমি আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিতে পারলে? তুমি এই কাজ টা নাও করতে পারতে…।
।।
এই বলে নিশি ফোন কেটে কাঁদতে লাগলো… বাবার কথা শুনে আয়ানের ওপর রাগ করে সে কি না জীবনে ভুল করেছে……

পরের দিন আয়ান অফিসে কাজ করছে, আর এক সপ্তাহ, এর পর তার ট্রান্সফার হয়ে যাবে।
হটাৎ একজন বলল, আয়ান স্যার! আপনাকে বড় ম্যাডাম ডেকেছে।
আয়ানের বুকটা একটু ধুক করে উঠলো, পরীক্ষা খারাপ হয় নি তো?
একজন বলল, কি ব্যাপার ভাই, খবর কি ভালো নাকি খারাপ?
আয়ান বলল, ভালো বলে তো মনে হচ্ছে না, দেখি ম্যাডাম কি বলে।
.
আয়ানঃ আমি ভেতরে আসতে পারি ম্যাডাম?
নিশিঃ হ্যাঁ আসেন।
আয়ানঃ ম্যাডাম, আমি কি পরীক্ষা খারাপ করেছি?
নিশিঃ না আপনার দোষ নাই, হয়তো ভাগ্যের দোষ।
.
আয়ান মনে মনে ভাবলো, এই ভাগ্যই তো আমার বউকে আমার বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে…
আয়ানঃ ম্যাডাম, আমি কি পরীক্ষাই ফেল করেছি?
নিশিঃ না ফেল করেন নি, তবে আপনার ট্রান্সফার টা আমি আপনার এলাকাই করতে পারছি না,
আমি স্যার কে বললাম যে স্যার আয়ানকে তার এলাকাই দিয়ে দেন, স্যার বলল, আয়ান কি আপনার কেউ হয়?
এখন আপনি তো আমার স্বামী হোন না যে বলবো আয়ান আমার স্বামী।
.
আয়ানঃ তাহলে কি আমার কাজ হবে না?
নিশিঃ একটা পথ আছে। আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।
আয়ানঃ ম্যাডাম, আপনি বলেন, আমি সব করবো।
নিশিঃ আপনি আমার সত্যি সত্যি স্বামী হয়ে যান, তাহলে আপনার ট্রান্সফার আমি আপনার এলাকাই করে দিবো।

তবে হ্যাঁ আমারও কিন্তু আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো।
.
আয়ানঃ ম্যাডাম! আপনার মতো মেয়ে যে আমাকে আপনার যোগ্য মনে করেছেন, এটা আমার সৌভাগ্য,

তবে আমি আমার বউকে খুব বেশি ভালোবাসি, তাকে ছাড়া আমি কাউকে আমার মনের ভাগ দিতে পারবো না।
.
নিশিঃ আপনার কি মনে হয় যে সে আবার ফিরে আসবে?
আয়ানঃ না, সে আসবে না, কারণ সে খুব জেদি মেয়ে, কিন্তু তারপর ও তার সৃতি নিয়েই আমি সারা জীবন পার করতে রাজী আছি।
নিশিঃ আমি কিন্তু দেখতে খুব সুন্দরী, আগে আমাকে একবার দেখেন।
আয়ানঃ না ম্যাডাম, আপনার যেখানে ইচ্ছা আমার ট্রান্সফার করে দিন, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
.
এই বলে আয়ান ঘর থেকে বের হয়ে যেতে চাইছিল, কিন্তু নিশি তার হাতটা ধরে বলল, পাগল ছেলে নিজের বউ কেউ চিনতে পারে না।

এই বলে নিশি তার বোরখার মুখ খুলে দিলো। আয়ান চমকে গিয়ে বলল, নিশি তুমি? তুমি না বিদেশে চলে গেছো?
.
নিশিঃ না, আমি বিদেশে যায় নি, আর ডিভোর্সের কাগজ আমি পাঠাই নি, সেটা আব্বু পাঠিয়েছিলো। আর আমাকে বলেছিল সেটা নাকি তুমি পাঠিয়েছিলে।

সাথে এটাও বলল, তুমি নাকি আমার মতো খারাপ মেয়ের মুখ দেখেতে চাও না, জানো আমি কতো কেঁদেছিলাম?

তুমি আমাকে ছেড়ে যাবার পর বুঝতাম, তোমার শাসনের কি মূল্য ছিল? তুমি আমার জীবনের কতোটা অংশের সাথে মিশে ছিলে?
.
এরপর থেকে আমি ঢাকাই চলে আসি, আর নিজেকে ঠিক তোমার পছন্দের মেয়ে হিসাবে তৈরি করি।
জানো আমি সন্ধার পর কোথাও বের হয় না…। আর তুমি না চেয়েছিলা যে আমি বোরখা পরি? অফিসে জিজ্ঞেস করো, কেউ আমার চেহারা দেখেনি?

তুমি পাশে না থাকলেও ঠিক তোমার শাসনের মধ্যে আমি ছিলাম।
এখন বলো, আমি তোমার যোগ্য নাকি যোগ্য না?
.
আয়ান কিছু বলছে না, সে কাঁদছে, কি বলবে?
নিশিঃ বলো, এখন আমাকে বিয়ে করবে না?
.
আয়ানঃ এক টুকরো কাগজ কখনও একটা সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না, না পারে ভাঙতে, আমি তোমার ছিলাম,

তোমার আছি আর সারা জীবন তোমার ই থাকবো।
.
নিশিঃ আমি অতো কথা বুঝি না, এখন চলো।
আয়ানঃ কোথায়?
নিশিঃ কাজী অফিস।
আয়ানঃ আর আমার বদলী?
নিশিঃ সেটা হয়ে গেছে, সাথে আমিও বলে দিয়েছি আমিও চলে যাবো, তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না, তুমি যেখানে থাকবা,

আমিও সেখানে। আর একটা কথা, আমি এবার শ্বশুর বাড়িতেই থাকবো।
আয়ানঃ তাহলে কাজী অফিস না গিয়ে চলো বাড়ী যায়, সবাই খুব খুশী হবে।
.
দুই দিন পর!
আজ আবার নিশি আর আয়ানের বাসর রাত।
আয়ানঃ সরি, দেরি করার জন্য।
নিশিঃ কান ধরো!
আয়ানঃ কি? তুমি না শান্ত হয়ে গেছো?
নিশিঃ আমি শান্ত হয়ে গেছি, এটা ঠিক কথা, কিন্তু তার মানে এই না যে আমার স্বামী যা ইচ্ছা তাই করবে,

আম্মু তো খুব সুনাম করে আমার ছেলে খুব ভালো, সন্ধার পর বাড়ীর বাইরে থাকে না, তো এখন কি?
.
আয়ানঃ আরে কাজ করছিলাম না, কাল থেকে দেখো, আর দেরি হবে না প্রমিস
নিশিঃ ওকে! আচ্ছা এতো তাড়াহুড়ো করে এসি টা না লাগালেই কি হতো না?
আয়ানঃ তুমি গরমে থাকতে পারো না যে।
নিশিঃ আর বাবা-মা? তাদের ও তো কষ্ট হয়।
আয়ানঃ আমার কাছে অতো টাকা ছিল না, এমনি এটাই ধার করে নিয়েছি।
.
নিশিঃ চলো, বাইরে যায়।
আয়ানঃ এতো রাতে?
নিশিঃ কেন আমাদের প্রথম বাসর রাতের কথা মনে নাই?
আয়ানঃ আরে সেবার তো কারেন্ট ছিল না।
নিশিঃ তো কি হয়েছে? সে বার কারেন্ট ছিল না, ভালবাসাও ছিল না। এবার কারেন্ট আছে ভালবাসাও আছে, দেখো কতো সুন্দর চাঁদনী রাত।

প্লিজ চলো না, এভাবে তোমাকে যে ফিরে পাবো কোন দিন ভাবিনি, প্লিজ চলো। এই মুহূর্ত টাকে আমি হারাতে চাই না।
.
আয়ানঃ ঠিক আছে চলো। তবে ঐ দরজা দিয়ে গেলে সবাই জেনে যাবে, বারান্দা দিয়ে চলো।
নিশিঃ ঠিক আছে চলো।
আয়ানঃ কি দিন আসলো, নিজের বাড়ীতে চোরের মতো বের হতে হচ্ছে।
নিশিঃ বউয়ের জন্য এতটুকু করবা না?
আয়ানঃ করছি তো।
.
নিশিঃ আচ্ছা এতো দূরে কেন হাঁটছো? পাশে আসো না।
আয়ানঃ মানুষ দেখলে কি ভাব্বে?
নিশিঃ আজব ছেলে তুমি? একটু রোমান্টিক ও হতে পারো না, দেখো আজ আকাশে কতো সুন্দর চাঁদনী।
.
আয়ানঃ কিন্তু আমার আকাশের চাঁদনী তো তুমি, ঐ চাঁদ তো কতো যাবে আর আসবে? তোমাকে আমি কতো দিন পর পেয়েছি।
নিশিঃ এই চাঁদনী আর তোমার আকাশ থেকে মুছে যাবে না। এই জানো, আমি না এখন সব রান্না পারি।
আয়ানঃ তাই?
নিশিঃ আর ৭ রকম বিরয়ানী রান্না করা শিখেছি, কাল রান্না করে দিবো।
.
আয়ানঃ খাইয়ে মেরে ফেলবে নাকি?
নিশিঃ ছি, কি বলো এসব! কতো শুকিয়ে গেছো তুমি। এতো দিন না হয় কেউ ছিল না, আজ থেকে আমি আছি। একটা কথা বলবো, রাগ করবা না তো?
আয়ানঃ কি বলো?
.
নিশিঃ আমি তো তোমার আপন জন তাই না?
আয়ানঃ এটা আবার কেমন কথা? অবশ্যই আমার বুকের কলিজা হচ্ছো তুমি।
নিশিঃ তাহলে তো তোমার মা-বাবা আমার ও মা-বাবা।
আয়ানঃ অবশ্যই।
নিশিঃ তাহলে আমার বেতনের টাকা দিয়ে আমি একটা বাবা-মার জন্য এসি কিনে দেই?

আমার টাকা, বাবার না, আর আমি এখানে কোন টাকার ক্ষমতা দেখাচ্ছি না,

আসলে আমারা এই গরমে এসিতে থাকবো, আর বাবা মা কষ্ট করবে, এটা ঠিক না।
.
আয়ান কিছু বলছে না, তার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে,
নিশিঃ তুমি কিছু বলো না কেন? ও মা, তোমার চোখে পানি, আমি কি তোমাকে কোন কষ্ট দিলাম। প্লিজ আমাক মাফ করে দাও,

আমার এই উদ্দেশ্য ছিলো না।
আয়ানঃ না, না, দুঃখ দিবা কেন? ভাবছি তুমি কতো নিজেকে পাল্টে ফেলেছো, অথচ আমি তোমাকে না জেনে কতো খারাপ ভেবেছি।
.
নিশিঃ দেখো, ভুল আমার বেশি ছিল। ওসব কথা বাদ দাও। তোমার বউ তোমার বুকে। আর আমার ভালো স্বামী, আমি কাছে পেয়ে গেছি।

আমি অনেক খুশী।
আয়ানঃ ঠিক আছে কালকে এসি কিনতে যাবো।
নিশিঃ সত্যি? i love uuuuu…
আয়ানঃ i hate uu….
নিশিঃ কি এতো বড় কথা? দেখাচ্ছি মজা…
আয়ানঃ এই পাগলী, এতো রাতে চেঁচামেচি করো না।
নিশিঃ I love u বলো।
আয়ানঃ আজব মেয়ে তো তুমি, ওকে I love u my sweetheart.
নিশিঃ হয়েছে, আর ঢং করতে হবে না, এখন চলো বাড়ী। সব আদর কি এখানেই করবা নাকি কিছু বাড়ীর জন্য বাকি রাখবা?
আয়ানঃ চলো যায়।
নিশিঃ হ্যাঁ চলো।

…………………………………… সমাপ্ত………………………………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত