বিয়ে করেছি মাস কয়েক হচ্ছে৷ বউ মাশাল্লাহ যথেষ্ট সুন্দরী৷ যাকে বলে গোটা গ্রাম বাছা৷ কিন্তু এই এত মাসে এখনো পর্যন্ত আমার বউ এর মধ্যে বউ এর কোন লক্ষণ ই দেখতে পাচ্ছিনা। বন্ধু বান্ধব পাড়া প্রতিবেশিদের কাছে যতটুকু শুনেছি তা ছয়ে নয়ে মিলিয়ে বুঝতে পারছি আমার বউ এখনো আসলে আমার বউ হয়ে উঠতে পারেনি। এই নিয়ে আমি খুব ই দুশ্চিন্তায় থাকি দিন রাত। চিন্তা করা যায়? এখন পর্যন্ত বউ আমার কখনোই ঝগড়া করেনি। এমনকি রাগ করে কোনদিন একটা কাঁচের গ্লাস ও ভাঙেনি। কতবার আমি মন থেকে চেয়েছি আমার বউ রাগ করে একটা কাচের গ্লাস ভাঙুক।
রাতে ইয়ে করতে চাইলেই হন হন করে ইয়ে করতে দিয়ে দেয়। কখনোই প্যাঁ পুঁ করেনি৷ অথচ বন্ধুদের মুখে শুনেছি ওদের বউ নাকি সপ্তাহে মাত্র একবার ইয়ে করতে দেয়৷ ঝন্টু কে তো নাকি এখনো টাচ ই করতে দেয়নি। ইয়েতো দূরের কথা। সন্ধ্যার মাগরিবের আযান দিলেই বউ আমার মশারি টাঙিয়ে ফেলে, কোনদিন একবারের জন্যেও ডেকে বলেনি ” এই ব্যাটা, মশারি টাঙা।”
বিয়ের আজ এতগুলো মাস কোনদিন এখন পর্যন্ত সকালে ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে বাজারের থলে আর একটা দুই মাইল সমান লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েও বলেনি ” যাও এক্ষুণি বাজার করিয়ে নিয়ে আসো”৷ অথচ আমার এক বন্ধু কাচা বাজার করতে করতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে এখন সে নিজেই কাচা বাজারের দোকান দিয়ে ফেলেছে।
আমার মনে দিন দিন কেবল কষ্ট বাড়তেই লাগল। কেন আমার বউ আর চারটে বউ এর মতন হবেনা? কি অন্যায় করেছিলাম? সারাজীবন লুংগি কাচ মেরে পড়ালেখা করে, বিসিএস পাশ করে একটা দারুণ চাকরী নিয়ে বিশ লক্ষ টাকা দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করেছি। কিসের ঘাটতি ছিল আমার যে আমার বউ আর চারটা বউ এর মতন হবেনা! কোনদিন একটা ক্রাশ ও তো খাইনি এই ভেবে যে পড়ালেখা করে মানুষের মতন মানুষ হয়ে একটা লক্ষী, সুন্দরী, স্বাস্থ্যবান, সুস্থ্য বউ পাওয়ার জন্যে৷
বন্ধুরা ডেইলি তাদের বউ কে নিয়ে কত আমোদ-প্রমোদ করে। ঝন্টুকে নাকি প্রত্যেকদিন ওর বউ ঝাটা দিয়ে পেটায়, বিল্টুর বউ নাকি প্রত্যেক রাতে বিল্টুকে লাথি মেরে ফ্লোরে ঘুমাতে দেয়। এসব বলে ওরা কত আনন্দ পায়! আর আমি শালার কিছুই বলতে পারিনা। হা হয়ে ক্যাবলার মতন বসে থাকি। সেদিন নামকরা এক বউ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলাম। দশটা বিয়ে করে ইতিমধ্যে তিনি হয়ে উঠেছে পিএইচডি অব ওয়াইফ। আমার বউ এর সব ঘটনা খুলে বলতেই উনি খুব চিন্তার সাথে বললেন ” কেইসটা খুব ই জটিল”। সাধারণত স্বাভাবিক বউদের কিছু সিম্পটম্প থাকে। এই যেমন-
১. হুটহাট যখন তখন ইয়ে করতে না দেয়া।
২. অযথা ঝগড়া বাধিয়ে দেয়া।
৩. লাত্থি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেয়া। কিংবা ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয়া।
৪. সকাল হতেই কানের কাছে প্যান প্যান করে আরম্ভ করে দেয়া ” এই উঠো, এই উঠো, বাজারে যাও”
৫. মশারি টাঙানো নিয়ে চুড়ান্ত বেয়াদবি করা। ইত্যাদি।
এরপর উনি যা বললেন তা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেল। বললেন ” আপনার বউ কোনদিন ই আপনার বউ হতে পারবেনা, কারণ বউ হওয়ার কোন লক্ষণ আপনার বউ এর কাছে নেই। আর এর কোন ট্রিটমেন্ট ও আমার কাছে নেই। সবটা মিরাকল এর উপর ছেড়ে দিন।” সবটা মিরাকল এর উপর ই ছেড়ে দিলাম। খুব ই হতাশ মনে বাড়ি ফিরে যেতে লাগলাম। মন খুব খারাপ হয়ে গেল। কান্না পেতে লাগল আমার। কি পাপ করেছিলাম কে জানে।
খুব ক্লান্ত হয়ে ঘরে ঢুকার জন্যে কলিং বেল টিপার আগেই দরজার ওপাড় থেকে ঝনঝনাত করে কিছু একটা ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনলাম। কলিং বেল টিপলাম। ঝনঝন শব্দ ক্রমশ বাড়তেই লাগল। বাড়তেই লাগল। দু মিনিট তিন মিনিট। এরপর দরজা খুলল ভেতর থেকে। আমার সামনে যে আমার বউ দাঁড়িয়ে আছে আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা এখনো। চোখ দুইটা কচলে স্পষ্ট আবার দেখতে পেলাম, না সত্যি সত্যি আমার বউ দাঁড়িয়ে আছে।
ওর হাতে আমাদের সবজি কাটার বটি। পুরা ঘরের ফ্লোরে অসংখ্য গ্লাসের টুকরা ছড়ানো ছিটানো। মশারি টাঙানো নেই৷ আমার বউ ক্রমশ রাগে ফুলছে আর ফুলছে। ঠিক সেই মুহূর্তে এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলল ” দোস্ত, আজ রাতটা কি কোনরকম তোর বাসায় থাকা যাবে, আমার বউ আমাকে বটি নিয়ে দৌড়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে রে! গোটা ঘর এর জিনিসপত্র ভেঙেচুড়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। ”
আমি বন্ধুর কথার জবাবে আমার বউ এর দিকে তাকিয়ে ভীত হয়ে জবাব দিলাম ” দোস্ত, আমার বউ ও তো দেখি বটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গোটা ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার করে রেখেছে। মশারিও টাঙায়নি। “বন্ধু জোরে বলল ” দোস্ত, জানে বাঁচতে চাইলে এক্ষুণি বের হয়ে আয়, দৌড়া। দৌড়া। কালবৈশাখি শুরু হয়েছে তোর জীবনে।” আমি আর কথা না বাড়িয়ে দৌড় দিলাম। জোরে দৌড়। যাকে বলে লুংগি কোমড়ের উপরে তুলে দৌড়।
আমাদের বিয়ের অনেক বছর পার হয়ে গেছে। আজ এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল। বিকেলবেলা অনেক অনুরোধ করে বউ এর কাছে পারমিশান নিয়ে বন্ধুর বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলাম। একটু মাল মশলা খেয়ে পিনিক ধরে যাওয়ায় দেরী হয়ে গেল ফিরতে। দরজার কলিং বেল টিপতেই একটু আগে আমার বউ আমাকে ফোন করে বলল ” ফিরতে দেরী হওয়ায় আজকের রাতটা আমাকে দরজার সামনেই কাটাতে হবে। ”
ওহহ হ্যা, বলতে ভুলেই গেছি৷ এখন রোজ আমি মশারি টাঙায়। কিন্তু ঘুমানোর জন্যে জায়গা হয় ফ্লোরে। আমার বউ বাচ্চার জামাকাপড়, হাড়ি-পাতিল সব আমি ধুই। সকালবেলা ঘর ঝাড়ু দিই। বাজার করি। মাঝেমধ্যে ভাত টাত ও রান্না করি৷ প্রতি সপ্তাহে পাঁচ ডজন গ্লাস লাগে আমার বউ এর, ভাঙার জন্যে। তাই আমি একটা সিরামিকের দোকান দিয়ে দিয়েছি, চাকরি ছেড়ে। হুট করে কি থেকে যে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝলাম না। আমি আমার আগের সেই বউ না হতে পারা বউটাকে খুব মিস করি। খুব।)