“ওগো শুনছো?” মিষ্টি সুরে ডাকটা দিতেই মিরাজ আড়চোখে একবার আমাকে দেখে নিলো, তারপর আমার উপর সন্দেহের দৃষ্টি ফেলে প্রশ্ন করলো,
-কী চাইছো সেটা বলো। শপিং নাকি ঘুরতে যাবে?” আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,
-বাহ! কিছু চাওয়া ছাড়া বুঝি আমি ডাকি না?” ও এবার টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা তুলে নিয়ে পানিটুকু খেয়ে আমার সামনে এসে বলল,
-দেখো নিমি, ব্যাপার সেটা না। এত মধুর স্বরে তুমি ডাকো না। হঠাৎ কী হলো?” আমি বেশ বিরক্তি নিয়েই বললাম,
-খুব জ্বালাই তোমাকে তাই না?” ও বলল,
-হুম। ভীষণ জ্বালাও। কবে যে মুক্তি পাবো কে জানে। আমার জীবনটা তেজপাতার মতো লাগে।”
কথাটা আমার কোথায় যেন লাগল। একটা অদ্ভুত শূন্যতা এসে ভর করলো মনে। আজ বাপের বাড়ি যাব বলে ব্যাগ পর্যন্ত রেডি করেছি ওকে না বলে। ভেবেছিলাম যাবার বেলায় একটু মজা করে কথা বলি, ওকে জ্বালাই। কিন্তু ও যে এতদিন জ্বলেছে তা বুঝিনি। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ওকে প্রশ্ন করলাম,
-মুক্তি চাচ্ছো?” ও অফিসের ব্যাগ রেডি করতে-করতে উত্তর দিলো,
-হুম। সেটা হলে তো বেঁচে যেতাম।”
এই কথাটাতেও বড়োসড়ো একটা ধাক্কা খেলাম। মনে হলো ও সত্যিই মুক্তি চায়। তারপর ও অফিসে যেতেই আমি বাসার গেটে তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। মিরাজের কাছে বাসার আরেকটা চাবি আছে। তাই চিন্তার কিছু নেই। সিদ্ধান্ত নিলাম বাবার বাড়িতে যাব না। মনে হলো এই সংসার জীবন থেকে কিছুদিনের জন্য ছুটি নিতে হবে আমার। একটু দূরে থাকতে হবে এসব থেকে।
রিতা নামের এক বান্ধবী বহুদিন যাবৎ ওর বাসায় যেতে বলে। কখনো যাওয়া হয়নি। তবে আজ যাব বলে ঠিক করে বাসে উঠে পড়লাম। পরদিন সকাল সাতটা মিরাজ আমার সামনে বসে আছে। একদিনে বেচারা বুড়ো হয়ে গিয়েছে চিন্তায়-চিন্তায়। চুলগুলো এলোমেলো, চোখে করুণ দৃষ্টি। আমি কিছু বলার আগেই ও খপ করে আমার হাতটা ধরে বলল,
-কত কষ্ট করে তোমার বান্ধবীর ঠিকানা পেয়েছি জানো? আমি জানতাম না যে তুমি আমার কথাতে এত কষ্ট পাবে। আমি মজা করে বলেছিলাম। একটা দিনে আমি বুঝেছি তুমি ছাড়া সংসার আর আমি কোনোটাই চলবে না। বাসায় চলো। আমি যথারীতি মুখ ভার করে বললাম,
-যাব না।” ও বলল,
-প্লিজ নিমি। তুমি যদি চাও যে আমার ওজন অর্ধেক হয়ে যাক তোমার অভাবে তবে জিদ করে বসে থাকো। আর যদি চাও আমি বেঁচে থাকি তো চলো। ভুল করেছি, ক্ষমা চাইছি।” আমি চুপ করে গেলাম। আমিও ওকে কষ্ট দিতে চাই না। একটুও না। হঠাৎ দুষ্টুমি করার ভুত চাপলো মাথায়। খুব মিষ্টি গলায় বললাম,
-ওগো শুনছো? মিরাজ উত্তর না দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,” আজীবন শুনতে চাই।