ভালোবাসার শক্তি

ভালোবাসার শক্তি

একবার নয় দুবার নয়, এই নিয়ে ৪৭ বার ফোন দিলাম গার্লফ্রেন্ডকে। ফোন দিচ্ছি আর চিংড়ি মাছের মত ছটফট করছি তবু ও আর ফোন রিসিভ করে না। অল্পকিছুক্ষণ পর গার্লফ্রেন্ড ফোন ব্যাক করতেই পৃথিবীর সমস্ত আবেগ, উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা কন্ঠস্বরে ঢেলে দিয়ে বললাম, “সর্বনাশ হয়ে গেছে সাদিয়া, আমার যে সর্বনাশ হয়ে গেল।” “সাঈদ, কী হয়েছে বলো?” “সর্বনাশ হয়েছে গো, সর্বনাশ।” সাদিয়া এবার ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত রেগে ধমক দিয়ে বললো, “আরে কী হয়েছে বলবা তো?”

আমি এবার চোখে বর্ষা ঋতু এনে অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “বাবা তার বন্ধুর একমাত্র মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। সামনের শুক্রবার আমাদের বিয়ে।” সাদিয়া এবার যাত্রাপালার নায়িকার মত গলা কাঁপায়ে টেনে টেনে বললো, “না না না, এ হতে পারে না। এত বড় অবিচার স্রষ্টা কিছুতেই করতে পারেনা।” আমি আকুতি-কাকুতি-মিনতি করে বললাম, “সাদিয়া, প্লিজ কিছু একটা করো। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তোমাকে না পেলে আমি গলায় দড়ি দিয়ে মরবো কিন্তু।” তারপর দুজনই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম।

আমি এবার কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, “দেখো না সাদিয়া তোমার বয়সী মেয়ে নিশাত মজুমদার এভারেস্ট জয় করলো, তোমার মত মেয়ে সায়নী দাস ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরে পার হলো, তোমার থেকেও কম বয়সী মেয়ে শারমিন বিশ্বের সেরা সাহসীর এওয়ার্ড পেল আর তুমি আমার জন্য একটা কিছু করতে পারবা না? সাদিয়া যেন কিছুক্ষণের জন্য নীরব নিথর আর গ্রানাইটের মত শক্ত পাথর হয়ে গেল।

আমি তখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। চোখের পানিতে গায়ের টি-শার্ট ভিজে স্রোতধারা এবার চলছে আমার অন্দরমহলের দিকে। আমি সাদিয়াকে হাতজোড় করে রিকুয়েস্ট করলাম, “প্লিজ, তুমি আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাও। আমাকে তোমার আপন করে নাও প্লিজ।” পরদিন সাদিয়া বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাসায় আসলো। আমি আব্বুর সাথে পরিচয় করায় দিলাম। “আব্বু আব্বু, এর নাম সাদিয়া। আমার ফ্রেন্ড। আব্বু, এ অনেক ভালো একটা মেয়ে।”

এরপর আমি সাদিয়াকে আশ্বস্ত করলাম, “আমার আব্বু পৃথিবীর সেরা আব্বু। দেখবা উনি আমাদের সম্বন্ধটা না মেনে থাকতেই পারবেনা।” “আর হ্যাঁ, তোমরা তাহলে গল্প করো। আমি চা নিয়ে আসি ক্যামন!” চা বানানোর সময় হঠাৎ সাদিয়ার বজ্রধ্বনি শুনতে পেলাম, “চৌধূরী সাহেব, আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু ছোট লোক নই। আজকে আপনি যতটা অপমান করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন তার থেকেও বেশি সম্মান দিয়ে একদিন এই বাড়িতে ডেকে আনবেন।”

দৌড়ে এসে দেখি সাদিয়া হন হন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি সম্মুখ দিকে হাতটা প্রশস্ত করে বললাম, “না সাদিয়া না, তুমি যেও না প্লিজ।” তারপর ওকে অনেকবার বলেছি, “সাদিয়া, প্লিজ কিছু একটা করো। চলো, আমরা পালিয়ে যাই।”  সাদিয়া শুধু এটুকুই বলেছে,”আমি অন্য মেয়ের মত অত ভীরু কানারী (কাপুরুষ এর বিপরীত শব্দ) নই যে তোমাকে নিয়ে রাতের আধারে পালিয়ে যাবো। সাঈদ, তুমি শুধু আমার উপর ভরসা রেখো।”

পরেরদিন থেকে আব্বু আমাকে ঘরে বন্দী করে রেখে দিলেন। আমিও খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলাম। হাতের কাছে যা পাই, তাই ছুড়ে মারি, ভেঙ্গে ফেলি। তারপর এল ভয়াবহ সেই শুক্রবার। আমাকে কারে করে বিয়ে করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাড়িতে মৃদু সুরে গান বাজছে। আর আমার হৃদয়ে বাজছে বেদনার সুর। হঠাৎ করে আমার কারের সামনে এসে দাড়ালো কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাস। সাথে সাথে ভো ভো শব্দ তুলে হাজির হলো আরও ১০টা মোটরসাইকেল।

কারের দরজা লাত্থি মেরে ভেঙ্গে সাদিয়া আমাকে বের করে নিয়ে আসলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “আমি জানতাম তুমি আসবে। আমার মন বলেছিল তুমি না এসে থাকতে পারবে না।” তখন ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড বাজছে রু রু রু রু রু আর একবার প্রমাণিত হলো ভালোবাসার শক্তির কাছে সকল অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটে। আমাদের বিয়ের নয় মাস চলছে আর আমার ছয় মাস। ওহ নো, আমার না; সাদিয়ার ছয় মাস চলছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত