” আমাদের সম্পর্কটি আর ঠিকঠাক যাচ্ছে না অরুফ! অরুফ অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু হঠাৎ অহনার কথা শুনে ও ওর চোখটি অহনার দিকে ফিরিয়ে বললো, ” কি ঠিকঠাক যাচ্ছে নাহ? ”
” কিছুই আর আগের মতো ঠিকঠাক যাচ্ছে না। আমি কেন জানি এখন তোমায় আগের মতো আর বুঝতে পারি না। আমার এখন তোমার সাথে দেখা করতে। কথা বলতেও কেমন আলসেমো লাগে। মাঝে মাঝে ইচ্ছাও হয় না। আমাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকে এই যে এতগুলো দিন সবকিছু খুব গুছানো, সুন্দর, ভালোবাসাময় ছিল। তার বিপরীতে এখন আমার কাছে সবকিছু কেমন নিরস, অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে এখন আমরা ক্রমশ দুজন থেকে দুজন দূরে সরে যাচ্ছি। ” অরুফ কথাগুলো শুনে বেশ অবাক হয়। হতভম্ব হয়ে বলে, ” হুট করে তোমার এমন মনে হচ্ছে কেন? ”
” জানি না। আমার মনে হচ্ছে অরুফ আমাদের সম্পর্কের মাঝে এখন একটা ব্রেক দেওয়া উচিত। ”
” অরুফ এবার বেশ অন্যরকম হয়ে যায়। গলাটা কেমন শুকিয়ে যায়। তারপর বললো, ” ব্রেক? ব্রেক চাইছো? এই আমাদের এতদিনকার সম্পর্কের মধ্যে? তুমি জানো অহনা তোমাকে ছাড়া আমি একটি দিন, একটি মুহুর্তও ভালো থাকতে পারবো না। সুস্থ থাকতে পারবো নাহ। তবুও এমন কথা বলছো? আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছো? ”
অহনা অনেকটা সময় নিশ্চুপ হয়ে রইলো। তারপর বললো, ” দেখো অরুফ আমি জানি না, আমি যা করতে চাইছি তা ঠিক কি না। কিন্তু আমাদের এই সম্পর্কটি আরও দীর্ঘ হোক তা আর আমার ইচ্ছা হচ্ছে না। এই সম্পর্কটি নিয়ে, এতটা দায়বদ্ধতা নিয়ে আমার আর থাকতে ইচ্ছা করছে না। আমি নিজেকে অনেক বুঝার চেষ্টা করেছি। সবকিছু নিয়ে অনেক ভেবেছি। কিন্তু আমি আর এই সম্পর্কটি নিয়ে আগানোর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না অরুফ। একজন মানুষ একটি সম্পর্কে জড়ায় ভালো থাকার জন্য। দুজন একসাথে গুটি-শুটি হয়ে থেকে ঠিক শেষ দিনটি অবধি অনেক অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু কেন জানি না, এই সম্পর্কটি নিয়ে আমি আর নতুন করে কোন স্বপ্ন দেখতে পারছি না। ভালো থাকতে পারছি না। আর যে সম্পর্কটি থেকে একজন মানুষের ইচ্ছা চলে যায়। তখন সেই সম্পর্কটি আর জোর করে টিকিয়ে রাখা যায় না। ”
” আচ্ছা তুমি আমাকে বলো, কি করলে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে? তুমি যা বলবে আমি এখন থেকে তা ই করবো কথা দিলাম। ”
” অরুফ ভেঙে পড়ছো কেন? দেখ আমি চাইলেই তোমাকে কিছু না বলেই দূরে সরে যেতে পারতাম। তোমাকে এভয়ড করে দূরে সরিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু দেখ আমি কিন্তু তা করি নি। আমার মনের ভিতরে এই মুহুর্তে চলা সবগুলো কথাই তোমাকে বলেছি। আমি আর এই দায়বদ্ধতাটা নিয়ে থাকতে পারছি না বলেই। তোমাকে কথাগুলো বলার প্রয়োজন বলেই কথাগুলো ডিরেক্ট বললাম। আমি এখন যাই অরুফ!
” আচ্ছা আমি কি কিছু করেছি? ”
” না। ”
” তবে কেন এত বড় একটা স্বিদ্দান্ত নিলে?”
” তোমাকে আমি সবটাই বলেছি। ভালো থেকো! “, কথাটি বলেই অহনা চলে যায়। আর এক মুহুর্তও দাঁড়িয়ে থাকে না। নিষ্পলক চোখে অরুফ তাকিয়ে থাকে খুব প্রিয় মানুষটির কোন কারণ না বলে এমনি করে একা চলে যাওয়ার দিকে।
দীর্ঘ দেড় বছর পর…
আবারও দুজন পাশাপাশি একসাথে। অরুফ তাকিয়ে অহনার দিকে বললো, ” কেমন আছো? ”
” হুম ভালো। তুমি? ”
” আলহামদুলিল্লাহ। এই এতগুলো দিন পর হঠাৎ গতকাল ফোন দিয়ে বললে দেখা করা যাবে কি না। আমার সাথে কি বিশেষ কোন প্রয়োজন আছে?”
” নাহ। এমনিতেই। হঠাৎ তোমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করছিল তাই। ”
” তো রিশাদ ভাইয়া কেমন আছে? ”
” জানি না। ”
” কেন? ”
” ওর সাথে থাকা আমার সম্পর্কটি আর নেই। ”
” হঠাৎ? ”
” হুম। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াটা আর ঠিকঠাক যাচ্ছিল নাহ। ”
” ওহ! ”
” সত্যি বলতে এই কয়দিনে আমি বুঝতে পেরেছি তোমার মতো পরিপূর্ণ কেউ আমার জীবনে আর কখনো আসবে না। অরুফ চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
” আচ্ছা, তুমি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো? ” অরুফ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থা থেকে চোখটি অহনার দিকে ফিরিয়ে বললো, ” কি? ”
” আমাদের সম্পর্কটি যেখানে থেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে আবার নতুন করে শুরু করবে? ”
” অহনা, আমি একটি সম্পর্কের মধ্যে আছি। ” অহনা কিছুটা বিব্রত হয়ে যায়। তারপর বলে, ” কার সাথে? ”
” তুমি চিনবে নাহ! ” অহনা মুখে কিছুটা হাসির রেশ টেনে এনে বললো, ” ওহ। তো কেমন আছো তোমরা? ”
” হুম ভালো। ”
” ওর নাম কি? ”
” সুপ্তা! ”
” ওহ! ”
” তুমি যেখানটায় আমাকে দুমড়েমুচড়ে খুব একা করে রেখে গিয়েছিলে। নিসঃঙ্গ করে রেখেছিল। তখন আমার খুব করুণ অবস্থায় ও পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল আমার। খুব যত্ন নিত। খেয়াল রাখতো। আর একটি সময় পর আমরা দুজন ই উপলদ্ধি করলাম আমরা দুজনকে ছাড়া দুজন খুব বিষণ্ণ। একলা একা। একটা সুগন্ধ ছাড়া বিকুলের মতো। ”
” খুব ভালোবাসো ও কে তাই না? ”
” সে তো বাসি ই। না ভালোবেসে আর উপায় কোথায়? আমার এতটা পাশে থেকে ও যতটা করেছে তার বিনিময়ে এইটুকু কি আর ওর প্রাপ্তি নয়? ”
” হুম। আচ্ছা আমাকে তোমার মনে পড়ে? নাকি ভুলে ফেলেছ? ”
” তোমাকে আমি কখনো জোর করে মনে আনি নি। নিজ থেকেই ঠিক প্রথম পরিচয়ে তুমি আমার মনে এসেছ! আর যে নিজ থেকে আসে। তাকে শতে চেষ্টা করলেও তাড়িয়ে দেওয়া যায় নাহ। চাওয়া, না চাওয়াতেও সে ঠিক যেমন ছিল ঠিক তেমন ই থাকে। শুধু বুঝা যায় না। বা আমরা বুঝানোর চেষ্টা করি নাহ। ”
” একসাথে দুজন মানুষকে নিয়ে আছো? ” ” মিথ্যা বলবো না। হুম, যা ছিল মনে কখনো তা থাকুক। আর যা এখন আছে তা নিয়েই মন থাকুক। ” অরুফ কথাটি বলেই অহনার দিকে তাকালো।অহনা অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। চোখ চোখ পড়ার ভয়ে। ” আচ্ছা অহনা আমি যাই তবে। সুপ্তাও আমাকে ডেকেছে। পরে কখনো আবার হয়ত কথা হবে, দেখা হবে। ভালো থেকো। ” অরুফ সোজা পথ ধরে চলতে থাকে। পিছন থেকে অহনা ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ অহনার চোখে অরুফ ঝাপসা হয়ে যায়। সেই চোখ আরও ঝাপসা থেকে ঝাপসা হয়ে যায়।