অন্য আট দশটা মেয়ের মতোই স্বামীর ভাগটা কাউকে দিতে নারাজ ঋতু। শাহেদের সাথে ৬ বছরের দাম্পত্য জীবনে নিজেকে সুখীই ভাবে ঋতু। কিন্তু একটা জায়গাতেই যত কষ্ট ওর, এখনো মা হতে পারছে না ও। মাঝে মাঝে এই আক্ষেপটা যখন মনে চেপে খুব কষ্ট দেয় তখন শাহেদ পাশে থেকে সান্তনা দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে ঋতুর কপাশে চুমু একেঁ বলে, “পাগলী কষ্ট পেওনা, দেখো একদিন আমাদের ঘর আলো করে একটা ফুটফুটে বেবী আসবে। আমার কিন্তু একটা রাজকন্যা চাই, ঠিক তোমার মতো।“ ঋতু তখন স্বামীর বুকে মুখ গুজে বলে তার রাজপুত্র চাই ঠিক যেনো তার স্বামীর মতো।
এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্ক বাধে, শাহেদ ঋতুর কথা মেনে নেয়। কিন্তু আবার নাম রাখা নিয়ে তর্ক বাধায়। ঠোটে ঠোট রেখে চুম্বনের মাধ্য দিয়ে ওদের ঝগড়া থামে। শাহেদের ৯টা ৫টার অফিস , ঋতুর স্বাধের সংসার সবটাই সুন্দর ছিলো । কিন্তু ঋতুর সব সুখ এক রাতেই মিশে গেলো যখন সে দেখতে পেলো তার স্বামী কিচেনে কাজের মেয়েটাকে সুখ দিতে ব্যস্ত। নাহ! ও কোন বিরক্ত করেনি ওদের। চুপ করে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কলিজাটা ছিড়েঁ যাচ্ছে ঋতুর, দম বন্ধ হয়ে আসছে। তার শাহেদ আর তার একার নেই…
ভালোবেসে কাকলীকে বিয়ে করেছে পারভেজ। ৪বছরের প্রেমের পরিনতি বিয়েতে রূপ দেয় ওরা। পারভেজ পুলিশের এসআই হওয়ার আগ পর্যন্ত সব ধরনের মানসিক সাপোর্ট দেয় কাকলী। পারভেজ যখন একজোড়া চামড়ার স্যান্ডেলের অভাবে টয়লেটের স্যন্ডেল পড়ে কাকলীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। তখনো কাকলী পারভেজের হাত ধরে বলেছিলো, “ভালোবাসি তোমাকে”। পুলিশে যোগ দেয়ার দু বছর পরেই কাকলীকে বউ করে আনে পারভেজ। ছাত্রজীবনের সব কষ্টের ফসল যখন পারভেজ ভোগ করতেছিলো তখনি বিধাতা আবার তাকে এক মহা দুঃখের সমুদ্রে ফেললেন।
ডিউটিরত অবস্থায় এক গ্রেনেড বিস্ফরনে গুরুতর আহত হয় সে। প্রানে বেচেঁ গেলেও ডাক্তার বলে দিয়েছে আর কখনো হাটতে পারবে না সে। সরকার থেকে তার পরিবারের ভরন পোষনের সব ধরনের সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হয়। কাকলী ওর হাত ধরে বসে থাকে, গল্প করে, পাশে শুয়ে জরিয়ে ধরে বলে, “ভালোবাসি তোমাকে”। পারভেজ ঘুমায়, এই কষ্টের মাঝেও কাকলীর পরশে স্বর্গের আবেশ আসে। ঘুম ভাঙ্গে তার প্রিয়তমার শিৎকারে। পাশের রুম থেকে ভেসে আসে তার প্রিয়তমার কামার্ত শিৎকার। পুরুষ কন্ঠটি শুনে সে বুঝতে পারে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটি তার প্রিয়তমাকে তার থেকে ভাগ করে নিচ্ছে। পারভেজের শরীরের রক্তগুলো যেনো সব মাথায় চলে যায়। চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে নাকি রক্ত সে বুঝতে পারেনা..
১৫ দিন ধরে বাসায় নেই শান্তা। আগেও এমন রাগ করে বাবার বাসায় যেতো তবে বেশীদিন রাগ করে থাকতো না। দু’চারদিন পরে ফিরে আসতো। রাতুলেওর খুব জেদ, সহজে দমে যাওয়ার ছেলেনা। তিন বছরের সংসার ওদের। দু’জনের মনের মিল আছে বলে মনে হয়না। সপ্তাহে যদি ৭ দিন হয় ওরা আগ বাড়িয়ে আরো একদিন যোগ করে ঝগড়া করে। ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া। তারপর মুখ গোমরা করে দিনের পর দিন বসে থাকা। রাতুল যত জেদিই হোক, বউয়ের গায়ে কখনোই হাত তুলেনি। কিন্তু এবার ঝগড়ার মাঝে শান্তা রাতুলকে তুই বলে সম্মোধন করে বসে। রাতুলও আর ঠিক থাকতে পারেনি, ঠাস করে শান্তার গালে চড়টা বসিয়ে দেয়। পরিবেশ তখনি শান্ত হয়ে যায়, শান্তা ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে বাবার বাড়ি রওনা দিয়ে পরিবেশের নিস্তবতা আরো বাড়িয়ে দেয়। শান্তার বাবা মা ফোন করে রাতুলকে তাদের বাড়িতে যেতে বলে।
অন্যদিকে রাতুলের বাবা মা ও গ্রাম থেকে এটা শুনে রাতুলকে বলে বউকে বুঝিয়ে ঘরে আনতে। কিন্তু রাতুল কারো কথাই মানতে নারাজ। রাতুলের মাথায় এমন ভুত চাপে যে, সে ডিসিশন নেয় শান্তাকে আর আনবেই না ঘরে। বউ ছাড়াই থাকবে। সেদিন অফিস থেকে ফিরার সময় সামনে একটা আবাসিক হোটেল পরে। রাতুল শুনেছে এখানে ভাড়ায় মেয়ে লোক পাওয়া যায়। রাতুল হোটেলে ঢুকে পরে। রাতুলকে যে রুমে পাঠানো হয় সেখানে যেয়ে রাতুল একজন সুন্দরী মেয়েকে দেখে। কিন্তু সুন্দরীকে ভোগ করার চিন্তার বদলে রাতুলের অস্থিরতা বাড়তে থাকে। মেয়েটি এতো সুন্দর হওয়ার পরেও রাতুলের কাছে কুৎছিত মনে হয়। বারবার তার শান্তার কথা মনে পরে। নাহ! রাতুল আর ওখানে একমূহুর্ত থাকতে পারেনা। বাসায় ফিরে একমগ কফি বানায় রাতুল। বেলকনিতে দাড়িয়ে শান্তার ছবি দেখে আর কফি খায় সে। আনমনেই বলে ফেলে, “আই লাভ ইয়ু শান্তা, আমি শুধু তোমার ।
আমার ভাগটা আর কাউকে দিতে পারবো না আমি।“ এখনি শান্তার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করে তার। রাত ১২ টা কি সারে ১২টা হবে, শান্তাদের বাসায় সোফায় বসে আয়েশ করে কফি খাচ্ছে রাতুল। ঘুম ঘুম চোখে শান্তা পাশে বসে আছে। চোখে ঘুম থাকলেও চেহারাতে ভিষন রাগ ফুটে উঠেছে শান্তার। এ এক অন্য রকম রূপ, কফি খেতে খেত আড়চোখে বউয়ের সেই রুপটা দেখে মিট মিট করে হাসছে রাতুল। রাতুল কিছুটা বিতৃষ্ণা নিয়ে বলে উঠলো, “ঘুমের ঘোরে এসব কি বানিয়েছো? চিনিতো একদমই দেওনাই। যাও, চিনি নিয়ে আসো।“ শান্তা আরো বেশী বিতৃষ্ণার সুরে বললো, “খেতে পারলে খান না পারলে দরজা খোলা আছে চলে যান।“
সবকিছু ঠিক থাকলে দুদিন পরেই প্রোমশন পেতে যাচ্ছে অরনী। পড়ালেখায় খুব সিরিয়াস ছিলো অরনী। অর্নাস শেষ করতেই একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব পেয়ে যায় সে। বেকার সজীবকে বেছে নেয় জীবনসঙ্গী হিসেবে। বিয়ের পরে বেশী দিন বেকার থাকেনি সজীব। ছোটকরে একটা ব্যবসা শুরু করে। যদিও তার স্বামীর উপার্জন তার উপার্জনের কাছে সামান্যই বটে। আজ অরনীর কাছে একটা বিশেষ দিন, আজ সে প্রোমশন পেতে যাচ্ছে। প্রোমশনের ব্যাপারটা সজীবকে জানায়নি সারপ্রাইজ দিবে বলে। সে ঠিক করেছে বাসায় ফিরার সময় সজীবের জন্য একটা সুন্দর শার্ট কিনে নেবে।
সুন্দর উপহারের সাথে প্রোমশনের খবরটা সজীব শুনতে পেলে খুব খুশী হবে হয়তো। অফিসে বসে বসে এসবই ভাবতে থাকে অরনী। অফিস আওয়ার প্রায় শেষ হতে চলেছে। কলিগরা আস্তে আস্তে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু অরনী এখনো তার সুখবরটি পায় না। অরনীর হৃদয় অস্থির হয়ে উঠে। সে তার বসের রুমে যায়। বসকে প্রোমশনের কথাটা স্বরন করাতে বস বললো, “দেখো অরনী, কোম্পানী তোমার আর বিথীর কাজ দেখে খুবই সন্তুষ্ট। কিন্তু দুজনকেতো আর একসাথে প্রমোশন দেয়া যায় না। আমাকে বলা হয়েছে আমি যেনো একজনকে চুজ করে দেই। আজ একটু হোটেলে সময় কাটাবো, ঐ ড্রিংস ট্রিংস করবো আর কি। একা একা পান করতে তেমন ইয়ে হয়না বলে বিথীকে বললাম।
তুমি রাজি হলে বিথীকে না করে দেবো। তুমি কিন্তু অনেক হার্ড ওয়ার্ক করেছো, তুমি এটা ডিজার্ব করো।“ অরনী খুব দ্রুতই বসের রুম ত্যাগ করে। অফিসের পরিবেশটা তার কাছে বিষিয়ে উঠেছে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে রিজাইন লেটারটার উপর। বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবে, সজীবের ঐ বিজনেসের উপার্জন দিয়ে ওদের দিব্যি চলে যাবে। ঘরে ফিরে সজীবের বুকে দৌড়ে যায় অরনী। কান্না করতে করতে বলে উঠে, “আমি শুধু তোমার, আর কারো না। সারাজনম শুধু তোমার হয়ে থাকতে চাই।“ অরনীকে কোলে করে শোবার রুমে যায় সজীব। অরনীর চোখ মুছে দিয়ে অরনীর হাতে একটা ব্যাগ তুলে দেয়। অরনী ব্যাগ খুলে দেখে খুব সুন্দর একটা নীল শাড়ি। অরনী শাড়ীটা বুকে জড়িয়ে ধরে, গন্ধ শুকে।
চার দেয়ালে ঘেরা এক বদ্ধ প্রোকোষ্টে হাড়িয়ে যাচ্ছে কেয়া। ক্রমে ক্রমে বিলিন হয়ে যাচ্ছে সে। সহজ ভাবে কিছু কাঁচা টাকার লাভের লোভ দেখিয়েছিলো তার বান্ধবী নিশা। কলেজে পড়ার পাশাপাশি সে লোভের বশে বেছে নেয় এই পথ। মাস ঘুরলেই তার হাতে চলে আসে হাজার হাজার টাকা। ইচ্ছে মতো শপিং, ঘুরাঘুরি করে দিব্যি চলছিলো তার। জীবন টাকে খুব উপভোগ করছিলো কেয়া। কয়েক বছর যেতেই তার নামের আগে পতিতা শব্দ যুক্ত হয়ে যায়। বাবা মা অনেক চেষ্টা ততবির করে বিয়েও দিয়েছিলো তার। কিন্তু যে টাকার নেশায় তাকে পেয়ে বসেছিলো তা সে ছাড়তে পারেনি। ছেড়ে এসেছে স্বামীর ঘর। আবাসিক হোটেল অথবা পতিতালয় সবখানেই সে উপস্থিত। এছাড়া বাহিরের পরিবেশটা তার কাছে অসহ্যকর মনে হতে লাগলো।
প্রতিনিয়ত শত শত পুরুষের কাছে সে ভাগ হতে লাগলো। এখন টাকার নেশা কেটে গেছে তার। সে নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে ব্যাকুল। কিন্তু কোন উপায় নেই। ক্রমে ক্রমে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে। নিজের এক একটা অংশ এক এক জন পুরুষ এসে নিয়ে যাচ্ছে। নিভৃতিতে চোখের জল ফেলে কেয়া। সে আজ নিজেকে ভাগ করে দিতে দিতে ক্লান্ত। সে আর ভাগ হতে চায় না। এখন সে আশায় বুক বাধে, কেউ আসুক যে তার অবশিষ্ট অংশটা যত্ন করে নিবে। আর ভাগ হতে দিবেনা তাকে। কেউ আসেনা এখনো, ক্রমশ সে ভাগ হতে হতে ক্ষুদ্র হচ্ছে। হাড়িয়ে যাচ্ছে….