দুই মেরু

দুই মেরু

ডেটিংয়ের প্রথম দিনে নীরা জিজ্ঞেস করলো “আমরা বিয়ে করছি কবে?” নীরার প্রশ্নে সুমিত নিশ্চুপ।সে তো শুধু প্রেম করতে চায় বিয়ে নয়।প্রেম একটি মধুর বন্ধন এবং বিয়ে প্যারার আবরণ। তাছাড়া নীরাকে বিয়ে করলে বাকি চারটা গার্লফ্রেন্ডের কি হবে?তাদের কে ভালবাসবে?কে বাবু সোনা জানু পাখি বলে ডাকবে? অবশেষে সকল দিক বিশ্লেষণ করে সুমিত এই সিদ্ধান্তে আসলো, বালিকার সাথে রিলেশন কন্টিনিউ করা সম্ভব না।যেভাবে হোক ব্রেকয়াপ করে ফেলতে হবে। এদিকে নীরা জবাব না পেয়ে আবারও জিজ্ঞাসা করলো “তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?” সুমিত হতাশার সাথে জবাব দিলো “দেখো জানু আসলে এই বিষয় না।বিষয় হচ্ছে মাত্র তো আমাদের প্রথম দিন।আগে দুজন দুজনকে চিনি।পরিচিত হই।তারপর না হয় ভাবা যাবে।”

– ভাবাভাবির কিছু নাই।তুমি আমাকে বিয়ে করবা কি না সেটা বলো?
– ঠিক শিওর জানিনা।
– ও আচ্ছা।তো প্রেম করতে আসছো কেন?
– প্রেম করতে আসছি কেন?হি হি হি।আমি সেটাও জানিনা।[বোকা বোকা চেহারা করে]
– আজ রিলেশনের প্রথম দিন।তাই আমি ঝগড়া করতে চাচ্ছি না।তবে হ্যা, ভালো যখন একবার বেসে ফেলেছি এত সহজে ছাড়বোও না।

– এই ভালবাসা থাকবে কয়দিন?
– থাকবে কয়দিন মানে?
– রাস্তা ঘাটে খুঁজো অনেক প্রেমিকা পেয়ে যাবা।যাদের ভালবাসা সময়ের সাথে মিলিয়ে গেছে।
– আমাকে অন্যসব মেয়ের সাথে তুলনা করবা না।
– ওকে।বাট আই থিংক আমাদের ব্রেকয়াপ করে ফেলা উচিত।
– হোয়াট দা হেল।সাত মাস তেরো দিন পেছন ঘুরে মনে ভালবাসা জাগিয়ে এখন বলছো ব্রেকয়াপের কথা।
– হুম।
– ব্রেকয়াপ তো তুমি পাবা না।তবে একটু উল্টাপাল্টা করলে নীরা কি জিনিস বুঝিয়ে দিবো চান্দু।
– ইউ থ্রেট মি?
– নো।আই উইল ম্যারি ইউ।
– কখনোই সম্ভব না।এন্ড ব্রেকয়াপ।

বলে সুমিত উঠে চলে গেলো।নীরা অবাক হয়ে সুমিতের দিকে চেয়ে রইলো।সে জীবনে অনেক অদ্ভুত মানুষ দেখেছে।কিন্তু এরকম অদ্ভুত মানুষ এই প্রথম। অপরদিকে সুমিত মনে মনে ভাবছে “সে জীবনে অনেক ভুল মানুষের সাথে প্রেম করেছে।কিন্তু এরকম ভুল মানুষ এই প্রথম।” তবে দেখার বিষয় তাদের মিল আদৌ সম্ভব কি না? অফিসে ঢুকে সুমিতের মাথা গরম হয়ে গেলো।নীরা তাঁর ডেক্সে বসে আছে।

– আপনি এখানে?
– বাহ্!তুমি থেকে আপনি হয়ে গেলাম।গিরগিটির উচিত তোমার কাছে কিছু শেখা।
– অফিসে ঢুকার অনুমতি দিছে কে?
– হি হি হি।তোমার বস্ আমার বাবার ছোটখাটো বন্ধু।
– মানে?
– বুঝবেন না।এগুলা শিল্পপতিদের কারবার।
– ওপ্স।আমি কি রিজাইন করবো?নাকি চাকরি আগে থেকে চলে গেছে?
– ও মা।ভয় পাচ্ছো কেন?তোমার চাকরি যায়নি।আর ছাড়তেও হবে।আমি তো জাস্ট তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাই এসেছি।

পাশ থেকে সুমিতের দুই নম্বর গার্লফ্রেন্ড এসে জিজ্ঞাসা করলো “মেয়েটা কে?তোমার সাথে এভাবে বিহেভ করছে কেন?” নীরা মিষ্টি হেসে জবাব দিলো “তোমার নাম স্নিগ্ধা না?তুমি অফিসে কি করছো?তোমাকে তো চাকরি থেকে বের করে দিয়েছে।” স্নিগ্ধা ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বস্ এর কেবিনের দিকে হাঁটা দিলো। সুমিত ব্যপাতটা বুঝতে পেরে বললো “আপনি স্নিগ্ধার চাকরি নীরা কথার মাঝে বললো “খেয়ে দিয়েছি।খুব বাবু সোনা চলতো না?অবশ্য এরজন্য তোমাকে কিছু বলবো না।পাস্ট তো?মাফ করে দিয়েছি।কিন্তু ফিউচারে এরকম কিছু হলে নীরা কি তা টের পাইয়ে ছেড়ে দিবো।”

– হোয়াট?স্নিগ্ধার কথা আপনি কিভাবে জানলা?[চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে]
– শুধু স্নিগ্ধা না।অর্পা নেহা ফারিয়া সবগুলার কথাই জানি।
– বাট কিভাবে?
– হি হি হি।ফেসবুক আইডি হ্যাক করলে আরও কতকিছু জানা যায়।
– আপনি আমার…
– কি ভাবছো?একটা মেয়েকে ভালবাসি বলিয়ে কিছুদিন প্রেম করে ছেড়ে দিবা?আমি নীরা সেই কাতারের না ভালবাসি যখন বলেছি ভালবাসা উশুল করে ছাড়বো।
– মাফ চাই প্লিজ।আমি জানতাম না এরকম বিপদে পড়বো।
– ওই শালা বিপদে তুই পড়ছিস না আমি?

যখন কাউকে ভালবাসার পর জানা যায় তাঁর চারটা গার্লফ্রেন্ড আছে তখন কেমন লাগে জানিস?কষ্ট পাওয়ার ভয়ে যখন সব ছেলেকে না বলে শেষ বেলায় রিলেশনে জড়িয়ে প্রথম ডেটে ছেলে ব্রেকয়াপ দিয়ে দেয় তখন কি ফিল হয় বুঝিস?বলতে আসছিস বিপদের কথা।

– সরি।
– রাখ তোর সরি।মেয়েদের সাথে প্রেম করা তোর ফ্যাশন না?দেখি এই শহরে আর কে তোর সাথে প্রেম করে।
– আমি আপনার সাথে প্রেম করতে রাজি আছি কিন্তু বিয়ে করতে পারবো না।
– বিয়ে করতে পারবি না?যাহ্ তোকে আগে বিয়েই করবো।পরে বাদবাকি চিন্তা।

যাইহোক মন দিয়ে কাজ কর।আমি ওদিকে গিয়ে ম্যানেজ করি। নীরা রেগেমেগে বের হয়ে গেলো।অফিসের সবাই এতক্ষণ রঙলীলা দেখে মুহূর্তে এমন ভাব করতে লাগলো যেন কিছুই জানে না। এদিকে সুমিত দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। নীরাকে যতটা নরম ভেবেছিলো মেয়েটা তার চেয়েও কঠোর। কিন্তু এখন কি হবে?

সর্বদিকের সমীকরণ তো এটাই নির্দেশ করছে, খুব তাড়াতাড়ি সুমিতকে বিয়ের প্যারাময় জীবন পালন করতে হবে। সুমিত যা ভেবেছিলো তাই ঘটেছে। নীরা ওর পরিবার সহ সুমিতদের বাসায় বসে আছে।সাথে মনে হচ্ছে কাজিও আছে। সুমিতকে দেখতে পেয়ে নীরা বললো “আংকেল ওইযে আপনার লম্পট ছেলে আসছে।ওকে আগে বকা দেন।ও আমার জীবন পুরো তছনছ করে দিছে।” সুমিতের বাবা গম্ভীর সুরে বললেন “তুই বিগড়ে গেছিস জানতাম।কিন্তু এটা বিগড়েছিস ভাবতেও পারছি না।” নেহার বাবা পাশ থেকে বললেন “আহা বাদ দেন বেয়াই সাহেব।ছোট মানুষ।এই বয়সে দু’একটু ভুল করবেই।”
সুমিত মাথা চুলকে জিজ্ঞাসা করলো “কিন্তু আমি কি করছি?”

সুমিতের বাবা বললেন “মেয়েটার সাথে তিন বছর প্রেম করে অবশেষে ভাললাগে না বলে ব্রেকয়াপ করে দিলি।আবার বলছিস কি করছিস?তোর ভাগ্য ভালো যে মেয়েটা নিজের ক্ষতি না করে দুই পরিবারকে জানিয়েছে।না হলে কি ঘটে যেতো কল্পনা করতে পারছিস?” সুমিত অবাক হয়ে বলতে গেলো “আব্বু কথার মাঝে সুমিতের বাবা বললেন “চুপ থাক।তোর কোন কথাই আমি শুনবো না।নীরাকে বৌমা হিসাবে আমার প্রচন্ড ভাললাগছে।তাই আজ এই মুহূর্তে তোদের বিয়ে হবে।” নীরার বাবা বললেন “দেখো বাবা, ছোট থেকে মেয়েটাকে খুব আদর করে বড় করেছি।কখনও চোখে পানি আসতে দেইনি।কিন্তু তুমি কেন ওর সাথে এরকম করেছো বুঝতে পারছি না।আমার মেয়ে রূপে গুণে কোনদিন থেকে কম নয়।তুমি দয়াকরে মেয়েটাকে কষ্ট দিও না।”

সুমিত কথা বলার কোন সুযোগ না পেয়ে নিজের কাছে নিজে বললো “এক দিনের প্রেমে কষ্ট কিভাবে সম্ভব?”
অপরদিকে নীরা এবং সুমিত দুজনের মা বিয়ের যাবতীয় শপিং করে পৌছালেন।সুমিত তাদের হাতে সরঞ্চাম দেখে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে অবস্থা। কিন্তু নীরা তার আগে বললো “আমরা একটু আলাদা কথা বলি?” সবাই নীরার কথায় সম্মতি জানালেন। তবে সুমিত যেতে নারাজ। অবশ্য নীরা বা কম কিসে? সে টেনে সুমিতকে অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে বললো “কেমন দিলাম?” সুমিত মুখ বাকিয়ে জবাব দিলো “মোটেও ভালো হলো না।”

– জানি।
– বাট হ্যা জোর করে সব পাওয়া যায় ভালবাসা না।
– যদি বলি তুমি আমাকে ভালবাসবে।
– না।
– ওকে।তাহলে আদায় করে নিবো।
– কিভাবে?
– যতদিন মন থেকে ভালো না বাসবা ততদিনে কাছে ভিড়তে দিবো না।
– এ আবার কেমন শর্ত?
– বুঝবা না।এনিওয়ে তোমার একটা বিষয় অনেক বেশি ভাললাগছে।
– কি?

– এতগুলা প্রেম করছো অথচ আজ পর্যন্ত কাউকে টাচ করনি।
– প্রেম একটা মধুর সম্পর্ক।সেই সম্পর্কে শারিরীক চাহিদা ঢুকে গেলে আর মধুর থাকে না।
– হয়তো এরজন্য কাউকে মন থেকে ভালবাসতে পারোনি।দুনিয়া মানে কি না জানিনা তবে এটাই সত্যি “চাওয়া পাওয়া আবেগ চাহিদা সব মিলিয়ে প্রকৃত ভালবাসার সৃষ্টি।”
– আমি মানি না।
– মানতে হবে না।একটা ডোজ দিলে বুঝে যাবা।

সুমিত শেষ বাক্যটি বুঝতে পারলো না।অপরদিকে নীরা টিপ টিপ পায়ে সুমিতের দিকে এগোতে থাকলো।চোখে মুখে দুষ্টুমির ছাপ। একপর্যায়ে সুমিত দেয়ালের সাথে ঠেকে গেলো।নীরা তখন সুমিতের পায়ের ওপর উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করলো।

মুহূর্তে সুমিতের নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।বুকের হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।সুমিত বুঝতে পারছে এটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু মনের আবেগের কাছে হেরে গিয়ে ছাড়তেও মন চাচ্ছে না। অবশেষে এরকমটা টানা দুই মিনিট চলার পর নীরা নিজে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। এবং সুমিত থ মেরে দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে রইলো।ডোজের ব্যাপারটা এবার ক্লিয়ার হয়েছে।সাথে এটাও মনে হচ্ছে “মেয়েটা যেভাবে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে তাতে এই মেয়েকে ভালো না বেসে থাকা সম্ভব নয়।কিন্তু সে প্রতিদিন এরকম মধুর স্পর্শ দিবে তো?যাইহোক একটু পরে বিয়ে।তারপরই বাসর রাত।তখন না হয় জিজ্ঞেস করে নেওয়া যাবে।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত