জোছনা বিলাস

জোছনা বিলাস

সাদিয়া আপন মনেই গান শুনছে ছাদের কোনে বসে। রাত্রি তখন ৮:৩০ বাজে। প্লে লিস্টের মোস্ট ফেভারিট গানটা বাজছে, তাহাসানের “প্রেম তুমি আসবে এভাবে,আবার হারিয়ে যাবে ভাবিনি” এই গানটা সাদিয়ার খুব ভালো লাগে,অনেকটাই তার জীবনের সাথে মিলে যায়।

কিন্তু এমনটা হবার কথা কখনোই ছিলো না।ভাগ্য আজকে তার কাছে অসহায় তাইতো এই গানটা এখন তার জীবনের না বলা কথা গুলি বলে দেয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সাদিয়া,আর মনে মনে চিন্তা করে সেই দিনগুলির কথা।সাইফের সাথে তার সম্পর্কের কথা,যেই সাইফ এমন জোছনা ভরা রাতে তাকে ফোন দিত।চাদের আলোয় দুইজনের ভালোবাসা বিলিয়ে দিত,দুইজন শুধু বলত দেখ আমরা তো অনেক দূরে তবুও চাঁদ কিন্তু সবাইকে জোছনার আলো ছড়াচ্ছে।তাইত তুমি বুঝে নিবে ওই জোছনার আলোয় আমাদের দুইজনের ভালোবাসা মিশে একাকার হয়ে আছে।

আজকে সাইফ কাছে থেকেও যেন অনেক দূরে,আর কখনো ফিরবে কিনা সাদিয়ার জীবনে তাও জানে না।সাইফের দূরে থাকাটা খুব মনে পড়ে সাদিয়ার। এইত সেইদিনের কথা।অজানাই ছিলো সাইফ তার জীবনে।কোন এক জোছনাভরা রাতে সাদিয়ার ফোনে এসএমএস, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ,জোছনা আজকে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে,যতটুকু পারো কিনে রাখো,এমন করে আর কখনো পাবে না।তাই বলে বিল পরিশোধ করিতে ভুলো না,জোছনার মালিক যে আমিই।

সাদিয়া চিন্তা করে একে তো অপরিচিত নাম্বার তার উপর এমন পাগল টাইপের এসএমএস।জোছনা কি শুধুই তার?আবার পাইকারি দরে বিক্রিও করছে,একি কাওরানবাজার এর তরকারি পাইছে নাকি?একটু বিরক্ত নিয়েই রিপ্লাই করে সাদিয়া।এইযে চাঁদ আমার ভ্যাট দিয়ে অনেক আগেই কেনা হয়ে গেছে,এর জন্য কর দেই সরকার কে,আর আপনি হইছেন জোছনার মালিক আজব,কেস করবো কিন্তু আমি।

দুইজনেই ফাজলামি করতে ছিলো,যেমন সাইফের এসএমএস তেমন সাদিয়ার উত্তর।কেউ কারো থেকে কম নয়।অথচ কেউ এখনো জানে না দুই প্রান্তের মানুষ- দুটির আসল পরিচয়। এসএমএস এ প্রায় ১ঘন্টা তর্কের পর
এখন সাদিয়া রেগে গিয়ে কল দেই সাইফের নাম্বারে,এখনো সে জানে না সাইফ ছেলে।কল ধরার পর সাইফকে ইচ্ছা মত দুই-তিন-মিনিট ঝাড়িদেয় সাদিয়া।সাইফ বলে আপনি অবন্তী না?বলে না আমি সাদিয়া,কিন্তু আপনি আমার নাম্বার কই পাইলেন। আর অবন্তী নামে আমার এক ফ্রেন্ড আছে।

সাইফ তখন বলে ০১৯………. এইটা আপনার নাম্বার না?সাদিয়া বলে হুম আমার নাম্বার কিন্তু অবন্তী তো এই নাম্বার ই দিলো।সাদিয়া বলে তবে ওই শাঁকচুন্নি আবার ভুল করছে।ওর আর আমার সিমের লাস্ট একটা ডিজিট আলাদা,যার কারণে ফ্লাক্সি করতে গেলে ভুলে আমায় টাকা দিবে,কাউকে নাম্বার দিতে গেলেও ভুলে আমার টা দেয় জানতাম না।আগে তো শুধু টাকাই দিত ভুলে,এখন জোছনার মালিক দিচ্ছে।সাইফ বলে দেখুন আমি অর কাজিন,আর ভুলেই হয়ত হয়েছে যাক সরি।সাদিয়ার কাছ থেকে সাইফ অবন্তীর নাম্বার টা নেয়,ফোন দিয়ে সব বলে।অবন্তী হাসতে হাসতে শেষ।পরে বলে আচ্ছা কালকে এসো ভাইয়া দুই জোছনার মালিক আর মালকিন কে পরিচয় করিয়ে দিব।

পরের দিন দুইজন হাজির,প্রথমে ঝগড়া দিয়েই শুরু হয়। পরে অবন্তী মিলিয়ে দেয় দুইজনকে।এর পর থেকে নিয়মিত কেয়ারিং শেয়ারিং, গুড মর্নিং,গুড নাইট,মনে হয় ২৪ঘন্টায় তারা একই সাথে থাকতো। দিন গুলি খুব তাড়াতাড়ি ই যাচ্ছিলো,কেউ কাউকে কখনো কষ্ট দেয়নি,কখনো রাগ না অভিমান না দুইজনের একটাই কথা এখন কার প্রতিটা ন্যানো সেকেন্ড তাদের কাছে মূল্যবান।কেনো অযথা ঝগড়া করে তাদের জীবন থেকে কিছুটা সময় নষ্ট করবে?কেউ তো আর কাউকে সারা জীবনের জন্য ছেড়ে যাবে না.দুইজনের মাঝে একটা প্রতিযোগিতা ছিলো,ভালোবাসার প্রতিযোগিতা।কে কার থেকে কত বেশি ভালোবাসতে পারে,কে কার কত কথা রাখতে পারে,কে কত কেয়ার,শেয়ার করতে পারে।

একটা সম্পর্কের মাঝে এমন প্রতিযোগিতা যদি থাকে সেই ভালোবাসায় ফাটল ধরবে না,ইনশাআল্লাহ।দিন গুলি স্বপ্নের মত মনে হতো। এত তাড়াতাড়ি তাদের কাছে দিন গুলি ফুরিয়ে যাচ্ছে মনে হয় সূর্যটাও তাদের ভালোবাসা সহ্য করতে পারে না,তাই এত জলদি জলদি অস্ত যায়।এমনি করে কেটে যায় ১টা বছর।সাদিয়ার বাসায় জানানো হয় সইফের কথা,সাইফ ও জানায়। দুই পরিবারের কথাও হয়।পাকাপাকি হয় বিয়ের দিন ক্ষণ।সাইফ ৫তারিখ সাদিয়াকে বলে বিয়ের শপিং এ ঢাকায় যাবে,ফিরতে লেট হবে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর পার হয়,সাইফের কোন ফোন আসে না।বিকাল বেলা সাইফের নাম্বার থেকে ফোন আসে সাদিয়ার।অপরিচিত একটা কণ্ঠ সাদিয়াকে বলে,এই ফোনের মালিক কি হয় আপনার,সে এক্সিডেন্ট করেছে,বাঁচবে বলে মনে হয়না আপনি জলদি আসুন।সাদিয়ার চিৎকারে তার বাবা মা চলে আসেন।ফোনের অপর প্রান্তের লোকটার সাথে কথা হয় সাদিয়ার বাবার ঠিকানা নিয়ে নেয় সে। সাইফের বাবা-মাকে শত কষ্ট সহ্য করেও খবর জানায় সাদিয়ার বাবা।

পাগলের মত ছুটতে থাকে দুইটি পরিবার,যখন গন্তব্যে পৌছায় তখন আই,সি,ইউ তে সবাই দোয়া করছেন আল্লাহ্ এর কাছে।ডাক্তার বের হয়ে জানায় এক্সিডেন্ট মারাত্মক ছিলো।সুস্থ হলেও হয়ত কোমায় চলে যাবে,তবে চিন্তার কারণ নেই যথেষ্ট কেয়ার পেলে আর সেবায় ও আল্লাহ্ চাইলে যত দ্রুত সম্ভব ভালো হয়ে যাবে। সত্যি সাইফ কোমায় চলে যায়,কিন্তু সাদিয়ার ফ্যামিলি প্রথম কিছুদিন সাইফের সাথে দেখা করতে দিলেও পড়ে আপত্তি জানায়।পরে সাদিয়ার জোড়েই ওই অসুস্থ অবস্থায় বিয়ে হয় সাইফ,আর সাদিয়ার।

সাদিয়ার একটাই ইচ্ছা বিয়ের পর সাইফকে তার সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলবেই।তিনটা মাস রাত দিন এক করে সাইফের সেবা করতে থাকে। তিনটা মাস সব চোখ দিয়ে দেখে গেছে সাইফ,সাদিয়া তাকে কতটা ভালোবাসে।যা হয়ত ৩জনমে ও সাদিয়াকে ভালোবাসলে শোধ হবার নয়। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে কল্পনার ইতি ঘটে সাদিয়ার,দেখে সাইফ তার ঘারে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।সাদিয়া কান্না করে জিজ্ঞেস করে তুমি সুস্থ হয়ে গেছো?আমি তো চিন্তাই করতে পারছিনা।

সাইফ বলে একটু আগে হাতে-পায়ে শক্তি অনুভব করতে পাড়ি,মা সাহায্য করলো ছাদে আসতে। তুমি যে ছাদে আছো এইটা শুনে আর থাকতে পারিনি,অনেক কষ্ট দিয়েছি মাফ করে দিও আমায়। সাদিয়া কান্না করতে শুরু করে,সাইফ আস্তে করে জড়িয়ে ধরে সাদিয়াকে।আর বলে ঐ দেখ জোছনা আজকেও পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে একটু কিনে রেখ। সাইফের কাঁদে মাথা রেখে সাদিয়া জোছনা- বিলাস করে,আর সারাটি জীবন এমন করেই থাকতে চায় পাশাপাশি বসে,দুজনে জোছনা-বিলাস করতে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত