১. ভার্সিটিতে ডুকতেই কেমন একটা কানাঘুষা শোনাগেলো । তবে এর মূল বিষয়বস্তু আমি সেটাবুঝতে পারিনি।
কিছুটা ভিতরে যেতেই বুঝতেপারলাম। এর তাদের কথাটা ছিল এমন যে, “ঐআতেলটা করবে মৃন্ময়ীকে প্রোপজ।
যে কিনা মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে হাটুকাপে।” আর এর অর্থ এতক্ষণ না বুঝলেও এখনবুঝতে পারছি।
এত কিছু ঘটার পেছনে হাত এ বজ্জাত শাকিলটার। ওকে কেউ বিশ্বাস না করলেও আমিবিশ্বাস করি নিজের থেকে বেশি।
ওকে বারবার নিষেধের সত্বেও যে ও এমন একটা কান্ড ঘটাবে আমি বুঝতে পারিনি। আর ওরে যে এখন কিছুবলবো তারও উপায় নেই।
কারন ও এখন কোথায় আছে হয়তো নিজেও জানেনা। যাক শেষমেষ মৃন্ময়ীর দেখা মিললো আমাদের সবচে পছন্দের জায়গাই।
সারা ভার্সিটিতে এই একটা সবচেয়ে শান্ত পরিবেশ। তবে আজ জায়গা শান্ত হলেও মৃন্ময়ী অনেক রেগে আছে ওকেদেখে বোঝাই যাচ্ছে।
আমি ওর কাছে যেয়েপাশে কিছুক্ষণ বসতে হঠাৎ সজোরে একটা চড়দিয়ে গটগট করে বের হয়ে গেলো। কারনটাহয়তো আমি যেটা জানি সেটাই।
তবে এটা যে সত্যনয় সেটা হয়তো মৃন্ময়ীর এখনো জানা হয়নি।তবে আমি জানি ওকে আমি কেন কারোর পক্ষেইবোঝানে সম্ভব নয়।
তাই আমি অগত্যা ক্লাশে রওনা দিলাম।..
২- আজকের সারাদিনের ঘটনা এখনো মাথার ভিতর ঘোরপাক দিচ্ছে। তার আরো একটা কারন সমাধান নিজেও এখনো হাজির হয়নি।
আমার জানা মতে কথাটা প্রপোজ পর্যন্ত রটার কথা নয়। কেবল আমি শাকিলকে মৃন্ময়ীর পছন্দের কথা বলেছিলাম।
যাক শেষমেষ শাকিলের দেখা মিললো।
‘ দোস্তসরি’ কেন? ‘সারাদিন তোকে এত প্যারায় ফেললাম বলে’।
হুম বুঝলাম, তবে আমি তোকে পছন্দের কথা বলেছিলাম তবে এখানে প্রোপজ আসলোকি করে?
শাকিল এবার ভয় কাটিয়ে বললো ” আসলে হয়েছে কি বলতো। আমিই এই কথা বলেছি। আমি যানি তুই বলতে পারবিনা কখনো সাহস করে ভাবিকে।
তাই এমন বুদ্বি। তা এখন বল ভাবী কি বললো। “তোর ভাবী কে? আর তোর ভাবী কি বললো আমি কি করে জানবো।
” মানে কি, মৃন্ময়ী ভাবীর কথা বলছি। ” মৃন্ময়ী তোর কেমন ভাবী, আর কোন ভাইয়ের বউ? ”
আরে তোর বউ মানেতো আমার ভাবি, তুই এখন ভালোবাসিস, এর পর বিয়ে করবা তথনতো ভাবিই হবে নাকি?” বাবা তোরচিন্তা শক্তি এত ফাস্ট।
” মানে কি? তুই ভাবীকে প্রপোজ করিসনি? ভাবী না করে দিয়েছে? ” নারে ভাই, ওকে কিছুই বলা হয়নি।
তার আগেই হাতগালের স্পর্শ দিয়ে চলে গেছে।
” what! মানে আমার সব প্লান মাটি। তুই এখনি ভাবির নাম্বারটা দে। এখনি কথা বলবো। ” না থাক , মেয়েটার মনটা অনেক খারাপ।
অনেক রেগে আছে। আর আমি নিজেও ওভাবে প্রস্তুত নই। ” আচ্ছা বুঝলাম, তবে বলতো মেয়েটার জন্য এত কিছু করিস কেন? ”
আচ্ছা তুইবল মেয়েটার আমি ছাড়া কে বা আছে। ” হুম রে,ভাই তুই মানুষ না অন্য কিছু।” নারে ভাই ওতটা নয়, আমি মানুষই।
আর এখন খেয়ে ঘুমাতে হবে। কারন সকালে টিউশনি আর ক্লাশ রয়েছে। ” চল ভাই”..
৩- মৃন্ময়ীকে অনেক আগে থেকেই পছন্দকরি। কুন্তু কখনো সাহস করে বলা হয়নি। হঠাৎ কালকে শাকিলকে এটা শেয়ার করলাম।
আর এইসুযেগে আমার সাহস জোগাতে সারা ভার্সিটিতে। ওকে বল বন্ধু নয় আমার ভাই, পারলে আমার জান দিবে।
আমি বুঝনা ওর মতো ধনীর দুলালি কেবল আমার মত মধ্যবিত্ত ছেলের বন্ধু হলো কেমনে। আমার প্রয়োজনটা আমার থেকে ও যেন বেশি জানে।
সময়ের আগেই পুরা হয়ে যায়। আমি না নিতে চাইলে সেটা দেওয়ার রাস্তা খুজে বেরো করে। .
৪ -পরদিন যখন ভার্সিটিতে গেলাম মৃন্ময়ীকে আমাদের পরিচিত জায়গায় পেলাম না। তাকে পাওয়া গেলো ক্লাশে একটু অবাকই হলাম।
আমাকে ছাড়াযে কখনো ক্লাশে ডোকে না সে কিনা আজ ক্লাশ করছে। ক্লাশ শেষে অপেক্ষা করতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর ও আসলো।
তবে কারো মুখে কথা নেই।। মৃন্ময়ী বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কথা বলতে আরম্ভ করলো, ” আকাশ আমি তোর বড় বোঝা তাইনা।
সত্যিই এতিমরা সবার বোঝা। বাবা ছোট থাকতে মারা গেলো । মাও এতিমখানায় রেখে অন্যের ঘর সাজাতে চলে গেলো ।
এক সময় এতিমখানায়ও বোঝা হয়ে গেলাম। তবে আল্লাহ্ সবার সাহায্য করেন। আমার জন্যও তুই হয়ে গেলি সাহায্যর হাতিয়ার।
জানিস কখনো নিজেকে এতিম মনে করিনি। তবে আমি এতিম সেটা আবার বুঝে আসলো । আমি যে বোঝা সবার।
তবে সত্যি বলছি বন্ধু ছাড়া তোকে আর কিছুই ভাবিনি। সমস্যা নেই আমি নিজের ব্যবস্থানিজে করে নিতে পারবো। হয়তো একটু বেশিকষ্ট হয়ে যাবে।
তবে পারবো। কারন আজকেরপর থেকে নিজের ছায়াটাই হারিয়ে যাবে। তোকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই।।
তবে তোর প্রতি এই অনুভূতি যদি আসে তবে ফিরে আসবো।আর আমার খোজ না নিলে খুশি হবো। ” মৃন্ময়ী আসলে আমি খুব সরি।
কালকের ঘটনাটা – – – আমি আরকিছু বলতে পারলামনা। তার আগেই মৃন্ময়ী কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো।
নিজেকে আজ যতটা অপরাধী লাগছে এতটা আর কখনো লাগেনি। কারন আমি আমার আপন মানুষটার কষ্টের কারনটা যে আমি।
তবে কষ্ট লাগছে এই ভেবে যে সত্যটা ওকে বলতে পারলামনা। – – মৃন্ময়ী সত্যিই এতিম। তবে সেটা আমি মনে করতে দেইনি।
ওর সাথে আমিপরিচিত সাত বছর বয়স থেকে। জন্মের পর ওর বাবা মারা যান। মা নিজের ভবিষ্যত ভেবে ওকে রেখে যান এতিমখানায়।
তবে সেখানে ও ১০ম শ্রেনি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পায়। এরপর ওর গন্তব্য যেন ভাসমান। ওর সাথে আমার পরিচয় প্রাইমারী থেকে।
পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় নানা রকম সহযোগিতা পেতাম। তবে সেটা কখনো বাজে ভাবে খরচ হয়নি।
আর এটাই মৃন্ময়ীর জন্য একটা রাস্তা হয়ে গেলো। আর আমারটা আমার পরিবার থেকে ব্যবস্থা হতো।
তখনকার মতো ব্যবস্হা হলেও কয়েকমাস পর টাকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো। আর এই পরিস্থিতিতে দুইজনই টিউশনি শুরু করলাম।
এইচ এস সি শেষে বিপত্তি ঘটলো ।জীবনের কঠিনতম যুদ্ধের সময়। ভার্সিটি যুদ্ধ।আমার ব্যবস্হা হলেও মৃন্ময়ীর ব্যবস্হা তখনো হয়নি।
মৃন্ময়ী আজকের ন্যায় কথাটা সেদিনও বলেছিলো- আমার মত এতিমের এত পড়ে কি হবে। তুই বরং পড়। মা বাবার স্বপ্ন পূরন কর।
তবে সে কথা গুলো আমার কাছে একেকটা আঘাতছিলো। দিশেহারা হয়ে যাওয়ার অবস্হা। আর সেইসময় সাহায্য হিসেবে হাত বাড়িয়ে দেয় শাকিল।
ওরসাথে তখন তেমন একটা পরিচয় নেই।। তবে ক্লাশমেট আর বোর্ড পরিক্ষায় আমার পিছে থাকায় মোটামুটি পরিচয়। মাঝে মাঝে কথা হতো।
ও আমার চিন্তার কারন জানতে চাইলেও বলতাম না। শেষমেশ ওর জোরাজুরিতে ওকে সব বলি। আর এরপর বাকিটাও ব্যবস্হা করে।
আর সেই থেকে তিনজন একসাথে পথচলা। এমনকি ভাগ্যের জোরে এইভার্সিটিতে চান্স। তবে মৃন্ময়ীকে পছন্দ করি৬বছর।
তবে আজকের এমন ঘটনার কথা চিন্তা করে কখনো বলা হয়নি। আর সেটাই হলো আজ। ..
৫- ৬টা বছর যেন ওর সাথে অন্তরঙ্গ ভাবে মিশেগেছি । আমি জানিনা আজ ও যা বললো তা ও মানবে কিনা। তবে আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
কারন আমি ৬টাবছর ওর সাথে থেকে বুঝেছি আমি কতটা প্রয়োজনীয় ওর জন্য। ও কখনো ওর প্রয়োজন জানায়নি সংকোচে।
তার পক্ষে একা টিকে থাকা কতটা কষ্টকর আমি জানি। ও যে জেদি ওএখন অনেক চেষ্টা করবে।
তবে ওর সাথে কথাবলতে না পারলে আমারই দম বন্ধ হয়ে আসবে।আর তাছাড়া আমাদের পড়াশোনা শেষ হতে এখনো ৬মাস বাকি।
এর আগে ও কোন ভালো জবও পাবেনা।- – আজ একমাস হতে চললো ও ওর জেদকেধরে রেখেছে আমার সাথে একটা কথাও বলেনি।
আমি বললেও এড়িয়ে চলে। এই ১মাসে অনেকজায়গায় কাজের সন্ধান করেছে। কিন্তু কোনব্যবস্থা হয়নি।
তাই আমি শাকিলকে বললাম আমাদের গ্রাজুয়েশনের পরের চাকরিটা মৃন্ময়ীকে এখনিদিয়ে দিতে।শাকিল দেখছি বললো।
তবে আমি জানিসে একটা ব্যবস্হা করবে।- – আজ ৩দিন পর আবার মৃন্ময়ীকে দেখলাম।অনেক হাসাখুশি। ওর চাকরিটা হয়ে গেছে।
শাকিল সব ব্যবস্হা করেছে।এই চাকরিটা আমরা ৩জনই করবো।তবে সেটা পড়াশোনা শেষে করার কথা ছিলো।
শাকিল ওর বাবাকে অনেক আগেই বলে ব্যবস্হাকরে রেখেছে। আর মৃন্ময়ীর প্রয়োজনীয়তার জন্য ওকে এখনি দিয়ে দিলো।
মৃন্ময়ীর হাতে মিষ্টির প্যাকেট। সবাইকে হাসিমুখে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আমার সামনে এসে একটা মিষ্টি এগিয়ে দিলো।
আমার জানাসত্বেও বললাম কেন? ও ওর চাকরিটার কথা বললো।আমি মিষ্টি নিয়ে অভিনন্দন জানালাম। ও ধন্যবাদ বলেচলে গেলো।
ওকে এই ছয় মাসের ছুটির ব্যবস্হাও করা হয়েছে।..
৬- দেখতে দেখতে আমাদের পরীক্ষা গুলোশেষ হয়ে গেলো। এর মাঝে মৃন্ময়ীর সাথে কোন কথা হয়নি। আমিও বলতে চেষ্টা করেও পারিনি।
তবে দূর থেকে হলেও ওর খোজ নিয়েছি। ভার্সিটি নেই তাই মৃন্ময়ীর সাথেও দেখা হবেনা। এইজন্য মনটা একটু খারাপ।
শাকিল ব্যাপারটা বুঝে গেছে। ও বললো কালকেই ও ওর আব্বুরসাথে কথা বলে দূতো আমাদের জয়েনের ব্যবস্হা করবে।
আমি শাকিলকে জড়িয়ে কেদেই দিলাম। শাকিল বলে উঠল ” ঐ আমাকে কি মনে করিস হিম, তুই আমার বন্ধু না তুই আমার ভাই। ”
তাকিয়ে দেখি ওর চোখেও পানি। সত্যিই শাকিল আমার মায়ের পেটেরভাই না হলেও কোন অংশে কম না। মৃন্ময়ী ১সপ্তাহ অফিসে জয়েন করেছে।
শাকিল বললোকাল থেকে আমরাও অফিসে জয়েন করবো। ।আমার মধ্য কেমন একটা অনুভূতি কাজ করছে । সকালসকাল ঘুম থেকে উঠে গোছাচ্ছি ।
আজ ৮ দিন পরমৃন্ময়ীকে দেখবো। অফিস যেন এক রাজকীয় ব্যাপার। এই অফিসে আজ থেকে শাকিল হেড আর আমি, মৃন্ময়ী ওর সহকারী।
বর্তমান শাকিলের বাবা অন্য একটা ব্যবসায় ব্যস্ত।। অফিসে ঢোকার আগে একবার দেখা নিলাম ভিতরটা। সবাই দাড়িয়ে রয়েছেমৃন্ময়ী সবার সামনে।
সবাই অভ্যর্থনার জন্য দাড়িয়ে। কারন আজ থেকে শাকিল অফিসের বস এবং মালিকের ছেলে।..
৭- আমরা ঢোকার পর মৃন্ময়ী যেন একটা বড়সড়ধাক্কা খেলো। সবাই শাকিলকে ফুল দিতে আসছে।আর শালা আমাকে এগিয়ে দিচ্ছে।
মৃন্ময়ী এখনো দাড়িয়ে। এবার শাকিল মৃন্ময়ীর দিকে এগিয়ে গেলো। আমি আটকানোর চেষ্টা করলাম।তবে সেটা কাজে দিলোনা।
“আমাকে অভিনন্দন জানাবেন না মিস মৃন্ময়ী ” শাকিল দুষ্টুমি করে বললো । মৃন্ময়ী ফুল গুলো এগিয়ে দিয়ে বললো ‘ সরি স্যার অভিনন্দন।’
” দাড়ান, আকাশ এইদিকে এই ” আমি এগিয়ে গেলাম। ” জ্বী মিসমৃন্ময়ী এবার ফুল গুলো উনার হাতে দিন। ”
মৃন্ময়ীফুল গুলো এগিয়ে আমাকেও অভিনন্দন জানালো।আমিও ভদ্রতার খাতিরে ধন্যবাদ জানালাম। ..
৮- শাকিল সবার সাথে পরিচয় পর্ব সমাপ্ত করলো।আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো ওর ভাই হিসাবে।এরপর আমাকে আমার ডেস্ক দেখিয়ে দেওয়া হলো।
আমার আর মৃন্ময়ীর আসন সামনা সামনি। আর শাকিল আমাদের পাশের রুমে।
উপর উপর অস্বস্তি বোধ করলেও মৃন্ময়ী সামনে থাকায় অন্য রকমভালো লাগা কাজ করছে। আমি মাঝে মাঝে শাকিলের দিখে তাকাচ্ছি।
আর ও দেখে হাসছে।এর মাঝে মৃন্ময়ীর সাথে চোখাচোখি হয়েছে।তবে ও কেমন একটা অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে ছিলো।
– – ১মাস হয়ে গেছে চাকরির। তবে অফিসিয়াল কথা বাদে কোন কথায় হয়নি। তবে অফিসিয়াল সব কাজে আমার কাছেই আসতে হয়।
কারন শাকিল সব কাজে আমার কাছেই পাঠায়। আর অফিসের কাজ হওয়া নাও করতে পারেনা। এতে আমার কেমন একটা ভালো লাগা অনুভূতি কাজ করে।
অফিসিয়াল কথা বাদেও অনেক সময় কথা বলার চেষ্টা করি তবে ও এড়িয়ে যায়। আমি জানি এমন করলেও ও এই চাকরিটা ছাড়বেনা ।
কারন ও এই রকম সুযোগ সুবিধা আর কোথাও পাবেনা। আর তাছাড়া ১বছর আগে ও চাকরি ছাড়তে পারবেনা। এটা ওর চাকরির সময়ের শর্ত।
তবুও আমি রিস্ক নিতে চাইনা। এদিকে শাকিল আমাকে প্রপোজ এর জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে আমি সাহস করে বলতে পারছিনা।..
৯- শাকিল ফাইনালি বলে দিলো আগামী পরশু ওর জন্মদিন। সেখানে কেবল আমি, শাকিল আর মৃন্ময়ী থাকবো।
আর ঐ দিনই আমার প্রপোজ করতে হবে। নাহলে আমার সাথে আর বন্ধুত্ব রাখবেনা। এখন দোটানায় পড়ে আছি।
না পারছি বলতে, না পারছি শাকিলেরর কথা মানতে। তবে আমাকে যে ভাবেই হোক সাহস করে বলতে হবে।
এতে মৃন্ময়ী কি মনে করবে জানিনা তবে আমি কেবল আমার মনের সুপ্ত কথাগুলো ব্যক্ত করবো।
আমার অনুভূতি প্রকাশ করবো, আমার সত্যটা বলবো। এতে যদি মৃন্ময়ী আমাকে ভুল বোঝে তবুও আমার কোন কষ্ট নেই।
কারন যে আমার নয়।। সে কখনোই আমার হবেনা।অতএব পরশু ফাইনালি বলে দিবো।..
১০- সন্ধ্যাই শাকিলের পার্টি। তবে সময় যতো এগেচ্ছো আমার মধ্যে ভয় কাজ করছে। সারাদিন রিয়ার্সেল এই কেটে গেলো।
তবে গুছিয়ে বলার মতো কোন কথায় মনপূত হলোনা। শাকিল এরমাঝে দুইবার ফোন দিয়ে স্মরণ করিয়েছে।
সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছি তখন যেভাবেই হোক বলতে হবে এই এই চিন্তা নিয়ে রেডিহলাম।
সন্ধ্যার কিছু পরেই শাকিলের দেওয়া ঠিকানায় পৌছালাম। যেয়ে দেখি এলাহি কান্ড। তবে এটাভেবে পাচ্ছিনা ৩জন মানুষের জন্য এত আয়োজন কেন।
ভিতরে শাকিল বসে আছে।আমি-“হ্যাপি বার্থডে দোস্ত”আমি ওর দিতে ফুলগুলো এগিয়ে দিলাম।শাকিল- ধন্যবাদ দোস্ত।আমি – মৃন্ময়ী আসেনি?
শাকিল -বাবা তোর দেখি তর সইছেনা।আমি- না মানে দেখছিনাতো, তাই বললাম।শাকিল – বুঝি বুঝি। ও আসছে ফোন দিয়েছিলাম ।
আমাদের কথা শেষ হয়নি। তার আগেই শাকিল পিছে ইশারা দিলো। আমি পিছে তাকাতেই চোখ ধাধা ধরে গেলো।
মৃন্ময়ী একটা মিষ্টি কালারের শাড়িপড়েছে। চোখে কাজল,খোলা চুল, সাথে চুলে একগুচ্ছে গোলাপ। আমি যেন মৃন্ময়ীতে বিভোর।
শাকিলের ধাক্কায় ঘোর কাটলো মৃন্ময়ী আমাদের সামনে। আমি নড়েচড়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম। মৃন্ময়ী শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুল এগিয়ে দিলো শাকিলের দিকে।
শাকিলও সাদরে গ্রহনে করলো। এরপর আমরা একটি টেবিলে বসলাম।কিছুক্ষণ কথার পর শাকিল টয়লেটের নাম করে বেরিয়ে গেলো ।
আর আমাকে ইশারা দিয়ে গেলো। তবে এখনো সাহস করে বলতে পারবোনা হয়তো। কিছুক্ষণ নিরবতা শেষে কথাবললাম..
আমি – মৃন্ময়ী কেমন আছিস?
মৃন্ময়ী- ভালো, তুই কেমন আছিস?
আমি- ভালো, জানিস ঐ দিন সত্যিই আমি কিছু জানতামনা।সবকিছু করেছিল শাকিল। সত্যিই সরি।
মৃন্ময়ী- ইটস ওকে।
আমি- তবে সত্যি।
মৃন্ময়ী- কি সত্যি?
আমি- সত্যি এই যে আমি তোকে পছন্দ করি। মানে ভালোওবাসি। তবে কখনো বলতে সাহস পায়নি।
আমি তোকে চাই, খুব করে চাই, সারা জীবনের সাথী হিসেবে। আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে জীবনের শেষ পর্যস্ত চাই যেমনটা ছিলি এই ৬টাবছর।
তুই হবি আমার তুমি। আমাদের ছোট একটা পরিবারের সদস্য।কথা শেষে পিনপতন নিরবতা। কি উত্তর হবে যানিনা।
তবে আমি মৃন্ময়ীর মুখের দিকে তাকাতে পারবোনা। তাই নিচের দিকেই তাকিয়ে। হঠাৎ সামনে হাসির শব্দে নজর গেলো।
সামনে শাকিল মৃন্ময়ী হাসছে। তবে এ হাসির কারন আমার অজানা।
মৃন্ময়ী – এই শাকিল স্টপ।।
শাকিল – দাড়া আমি আগে একটু হেসে নিই।। এমনপ্রোপজ আমি কখনো শুনিনি।
আর এই গাধা খালুহাতে কেউ প্রোপজ করে। বলে আবার হাসতেআরম্ভ করলো।
শাকিল – কিরে অবাক হচ্ছিস। এসব কিছুই আমাদের কারসাজি। আমি জানি তুুই আজ বলবি । কারন তোর সামনে যে আমি শর্ত জুড়ে দিয়েছি।
আর এই ঘটনাআমি আর মৃন্ময়ী মিলেই ঘটিয়েছি। প্রপোজতো তোর সেদিনই করার কথা ছিলো তবে ভয়ে করতে পারিসনি।
চড় মেরেছিলো, চলেগেছিলো সবই রাগ করে। ও ভেবেছিল তুই ওর হাতটা ধরবি। তবে তুই তাও ধরিসনি। আমি ওকে আবার বুঝিয়েছি।
আর বাকি সবকিছুই তুই জানিস।
–আমি বোকা এটা জানতাম।তবে এতটা বোকা সেটা জানতামনা।।
মৃন্ময়ী- হুম হতে পারি যদি তুই সারাজীবন আমারসাথে থাকিস। কারন তুই ছাড়া যে আমি সত্যিই এতিম।
আমি – আবার ঐ কথা।
মৃন্ময়ী- আরে বাবা আর বলছিনাতো।
– – দাওদাও বলে আমার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। আমি শাকিলের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালাম। শাকিল আমার কোটের দিকে ইশারা দিলো।
পকেটে হাত দিতেই দেখি রিং এর বক্স। শাকিল হাসছে। আমি উঠে দাড়িয়ে শাকিলকে জড়িয়ে কেদে দিলাম।
আমি -শালা তুই আমিকে এতটা বুঝিস কেন।
শাকিল – কারন তুইযে আমার ভাই। আরে যা মেয়েটা হাত বাড়ায়ে বসে থাকলো।আমি শাকিলকে ছেড়ে দিয়ে মৃন্ময়ীর সামনে গেলাম।
এবার মৃন্ময়ী ঐ ভাবেই হাত বাড়িয়ে উঠে দাড়ালো। আমি মৃন্ময়ীর দিকে রিংটা বাড়িয়ে দিলাম।মৃন্ময়ী হাতটা আরো প্রশস্ত করলো।
আমি রিংটাওর আঙুলে পড়িয়ে দিতেই মৃন্ময়ী আমাকে জড়িয়ে নিলো। পিছন থেকে শাকিল বলে উঠলো”ওই শালা আমি আছি ওই খেয়াল আছে।”
মৃন্ময়ীলজ্জায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। শাকিল পিঠে মৃদু চড় দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।
আর আমি মৃন্ময়ীকে পরম মমতায় বাহুডোরে আবদ্ধ করলাম।