বিয়ে

বিয়ে

গত বিশ বছরের কর্মজীবনে এমনটা কখনো হয়েছে বলে রহিমা বানুর মনে পড়ে না। আজ এ বাড়ির পরিস্থিতি খুব বেশি অস্বাভবিক। ব্যাপারটা তাকে কেউ বলে দেই নি, তবে সবার হাবেভাবে ঠিকই বোঝা যাচ্ছে। বাড়ির কর্তা শাফকাত খান একজন শান্তশিষ্ঠ লোক। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন এক দেড় মাস হলো। গত বিশ বছরে তার দৈনন্দিন নিয়ম-কানুনে কোন বিশেষ বৈচিত্র্য ছিল বলে রহিমা বানুর মনে পড়ে না। অথচ এই লোকটা আজ সকাল থেকে না খেয়ে অস্থিরভাবে পায়চারী করছেন। গেস্ট রুমে এপাশ থেকে ওপাশ অস্থিরভাবে হেঁটে চলেছেন। মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে একটু বিশ্রাম করে- মোবাইল ফোনটাকে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখেন- আবার হাঁটতে শুরু করেন।

রহিমা বানু লম্বা করে দুবার শ্বাস নিলেন। তারপর গেস্ট রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন। মৃদুস্বরে বলে উঠলেন, “স্যার?”
শাফকাত সাহেব কোন সাড়া দিলেন না। আগের মতই হাঁটতে থাকলেন। গলার স্বর চড়ালো রহিমা বানু। আবার ডাকলেন, “স্যার?”
শাফকাত সাহেব এবার শুনতে পেলেন। তিনি জায়গায় দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালেন। স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন, “কিছু বলবে?”
“স্যার, খাইবেন না? দুপুরবেলা ত শেষ হই আইতেসে। ভাতগুলান তো নষ্ট হই যাইবো।।”
“আমি আপাতত খাব না। খিদা নেই। তুমি ভাত ফ্রিজে রেখে দিও। নষ্ট করে লাভ নেই।”
রহিমা বানু মাথা কাত করে সায় দিয়ে বেরিয়ে যায়। শাফকাত সাহেব সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে টেবিলের উপর রাখা মোবাইলের দিকে একবার তাকান। কোন ফোনকল আসে নি। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বাইরে এসে দাঁড়ান।

এপ্রিল মাসের দু তারিখ আজ। বাংলায় চৈত্র শেষ হবার খুব একটা দেরি নেই। অথচ ঝড়-বৃষ্টির নাম গন্ধটাও নেই। ঝকঝকে আকাশ নীলে ছেয়ে রয়েছে। সেখানে মেঘের অস্তিত্ব নেই। অসহ্য গরমে মাঝেমধ্যে অবশ্য কিছুটা সময় বাতাসের আগমন টের পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে স্বস্তি নামক ব্যাপারটা থাকে না। উল্টো গরম বাতাসে শরীরে ফোস্কা পড়বার উপক্রম হয়। বাড়ির এ মাথা থেকে ও মাথা একবার দেখে নিলেন শাফকাত সাহেব। দারোয়ান কালাম মেইন গেটের সামনে বসে বসে ঝিমুচ্ছে। শাফকাত সাহেবের খুব ইচ্ছে হলো, ধমকে ঘুমটা ভাঙিয়ে দিতে। কিন্তু তিনি কাজটি করলেন না। দোতলা থেকে ধমকে উঠলেও সে শুনতে পাবে বলে মনে হয় না।

দোতলা এই আলিশান বাড়িটা শাফকাত সাহেবের চাকরি জীবনের আট বছরের মাথায় বানানো। চার কাঠা জমির উপর দোতলা বাড়িটা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সামনে বিশাল বাগান আর ছোট সুইমিংপুল। বাড়ির ঠিক সামনে ছোট একটা ফোয়ারা আছে। মাঝেমধ্যে কিছু সময়ের জন্যে তা ছেড়ে দেয়া হয়। বাগানের পরিচর্যার জন্যে অস্থায়ী একজন মালী আছেন। প্রতি সকালে তার কাজ গাছগুলোর যত্ন নেয়া। মালি যে সময়টায় বাগানে আসে, শাফকাত সাহেব সে সময় বাগানে পায়চারী করেন। তীক্ষ্ণ চোখে মালির কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। সুইমিংপুলের পানি প্রতি তিন মাসে পরিবর্তন করা হয়, লোক ডেকে পরিষ্কার করানো হয়।
বাড়ি বানাবার ক্ষেত্রেও শাফকাত সাহেব কম যান নি। বাড়ি করেছেন রীতিমত সেরা ইঞ্জিনিয়ার ডেকে এনে। ডেকোরেশনেই খরচ করেছেন লাখ লাখ টাকা। আর এসব কিছুই তিনি করেছেন ধাপে ধাপে, অনেকদিন সময় নিয়ে। বাড়িটা তার স্বপ্ন ছিল। এর জন্যে তাকে অনেক কিছু ছাড়ও দিতে হয়েছিল। বিয়ে করেছিলেন পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে, কনের সাথে তার বয়সের পার্থক্য ছিল কম করে হলেও পনেরো বছর। অবশ্য স্ত্রী জাহানারার সাথে সুখের দাম্পত্যজীবন তিনি উপভোগ করতে পারেন নি। তাদের একমাত্র মেয়ে রিনা হবার মাত্র তিন বছরের মাথায় জাহানারা মারা যান। লিউকোমিয়া ধরা পড়বার ছ’মাসের মাথায় তার মৃত্যু ঘটে। এর সাথেই তাদের সাড়ে চার বছরের দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

জাহানারার মৃত্যুর পর সবাই তাকে দ্বিতীয় বিয়ের পরামর্শ দেয়। তার জন্যে পাত্রী দেখার কম চেষ্টাও হয় নি। শাফকাত সাহেব এসব থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন সবসময়। মেয়েকে মানুষ করেছেন। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি পেরিয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলো দিন কয়েক হলো। আপাতত ভাল দেখে একুটা বিয়ে দিয়ে দিতে পারলেই তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচেন। অবশ্য বিয়ের ব্যাপারটা পুরোটাই রিনার বড় খালা রাহেলা বেগম দেখছেন। বিপদে আপদে এই মহিলা গত বিশ বছর ধরে তাদের পাশে আছেন। শাফকাত সাহেব তার প্রতি চরম কৃতজ্ঞ। ভদ্রমহিলা অবশ্য পাত্রের খোঁজ পেয়েছেন। সেই পাত্র দেখে গিয়েছে কদিন হলো। পাত্রীও তাদের পছন্দ হয়েছে। বিয়ের তারিখ ঠিকঠাক করবার জন্যে আজ ফোন করবার কথা।
প্রচন্ড শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো শাফকাত খানের। আকাশটা কালো হয়ে এসেছে। বৃষ্টি নামবে কিছু সময়ের মধ্যে। ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। শাফকাত সাহেব দারোয়ানের দিকে তাকালেন। লোকটা ঢ্যাব ঢ্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শাফকাত সাহেব দ্রুত ঘরের ভেতর ঢুকলেন।

***
রিনার ঘরটা অন্ধকার হয়ে আছে। টেবিলের উপর একটা ছোট ল্যাম্প জ্বলছে। রিনা গভীর মনোযোগ দিয়ে কোন একটা বই পড়ছে। শাফকাত সাহেবের খুব ইচ্ছে হলো রিনার সাথে কিছু সময় গল্প করতে। কিন্তু তিনি রিনার মনযোগ ভাঙ্গার সাহস পেলেন না। তিনি পা টিপে সামনে এগোলেন। অবশ্য বেশি এগোতে পারলেন না। তার আগেই রিনা তাকে ডেকে বসলো, “বাবা?”
শাফকাত সাহেব পিছনে ফিরে তাকালেন। রিনা তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। বইটা হাতে নিয়ে ঠায় পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রিনা আবার বলে উঠলো, “বাবা, কিছু বলতে এসেছিলে?”

“ইয়ে না, মানে-” আমতা আমতা করতে লাগলেন শাফকাত সাহেব।
“বাবা ভেতরে এসো। গল্প করি।”
শাফকাত সাহেব কিছু বললেন না। রিনার পেছন পেছন ঘরে ঢুকে বসলেন। রিনা তার হাত ধরে ঠিক তার সামনে বসে পড়লো। বাবার হাতের তালুতে হাত রেখে রিনা বলল, “বাবা, তুমি কি কোন বিষয়ে দুশ্চিন্তিত?”
ভ্রু কুচকালেন শাফকাত খান। “কেন তোর এমনটা মনে হলো?”
“বিষয়টা ঠিক মনে হবার মত না,” থামলো রিনা। “বাবা আমি তোমাকে চিনি। ছোট থেকে দেখে এসেছি। এ নিয়ে ভাবাভাবির কিছু নেই। তুমি চিন্তিত।”
শাফকাত সাহেব মাথা নিচু করলেন। কিছু বললেন না। রিনা মুচকি হাসি দিলো। তারপর আবার বললো, “কেন চিন্তিত তা কি বলব?”
শাফকাত সাহেব মাথা তুললেন। “বল।”
“তুমি চিন্তিত, কেন তারা বিয়ের তারিখের ব্যাপারটা এখনো জানায়নি- এই নিয়ে। ঠিক না?”
শাফকাত সাহেব সায় দেন। “হুম।”
“বাবা,” হাতের তালু চেপে ধরে রিনা। “আমি ওদের মানা করে দিয়েছি।”
শাফকাত সাহেব চোখ বড় করে ফেললেন। “মানা করে দিয়েছি মানে!”
“ঠিক মানা করি নি,” চোখ টিপে দেয় রিনা। “কিছু শর্ত দিয়েছি। যদি সেগুলো মানতে পারে, তবে বিয়ে হবে। তবে মানবে বলে মনে হয় না।”

শাফকাত সাহেব যেন একটা ধাক্কা খেলেন। মেয়ের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইলেন। রিনা তার কাঁধে হাত রাখলো। “বাবা, তুমি বিশ্রাম করো। এ নিয়ে ভেবো না। শরীর খারাপ করবে।”

শাফকাত সাহেব প্রতিবাদ করলেন না। যন্ত্রের মত উঠে দাঁড়ালেন। গেস্ট রুমে চলে গেলেন দ্রুত পায়ে। সেখানে ঢুকেই দেখতে পেলেন মোবাইলটা বেজে চলেছে। শাফকাত সাহেব মোবাইলটা হাতে নিলেন। যন্ত্রের মত রিসিভ করে কানে ঠেকালেন। মিনমিনিয়ে বলে উঠলেন, “হ্যালো, আপা?”

“তোমার মেয়ে কি করেছে শুনেছো?”

শাফকাত সাহেব কিছু বলেন না। চুপ করে শুনতে থাকেন। ব্যাপারটা যে বাস্তবে ঘটে যাচ্ছে তিনি বুঝতে পারছেন না। রাহেলা বেগম অবশ্য থামলেন না। কথা চালিয়ে গেলেন। “এমন বিয়ের প্রস্তাব কেউ ফিরিয়ে দেয়? ছেলে ইউ এস এ তে পিএইইচডি করছে। ওখানে স্যাটেল হবে। রিনারও একটা ক্যারিয়ার হয়ে যেতো। এমন প্রস্তাব কেউ ফিরিয়ে দেয়, তুমিই বলো? যতসব উন্মাদ এই ছেলেপেলেগুলা। মাথা খাটাতে শিখে নি-”

শাফকাত সাহেব কোন উত্তর দিলেন না। শুধু শুনে গেলেন। একসময় কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন তিনি। কথাগুলো কোথায় যেন মিলিয়ে যেতে লাগলো। মনে কেবল প্রশ্ন এলো, রিনা এটা কেন করলো?
****

বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার কাচগুলো ঘোলাটে হয়ে আসছে। শাফকাত সাহেব বসে আছেন অন্ধকারে। বারান্দার মিষ্টি হলুদ আলো অবশ্য ঢুকছে। ঘোলাটে কাচের মধ্যি দিয়ে সে আলো ঘোলাটে একটা আভা তৈরি করছে। শাফকাত সাহেব বারান্দার বৃষ্টি দেখছেন। ব্যাপারটা যে তাকে খুব টানছে এমনটা নয়। তিনি ভাবছেন। অনর্থক অনেক ভাবনা তার মাঝে ঢুকে যাচ্ছে। হাতে ঠান্ডা একটা স্পর্শ টের পেলেন শাফকাত সাহেব। রিনা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। শাফকাত সাহেব ফিরে তাকালেন। মৃদু আলোতে দেখতে পেলেন রিনা হাসছে। হাসিমুখেই সে বলে উঠলো, “বসবো?”

“বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবার সময় আমার অনুমতি চেয়েছিলি?”
“প্রস্তাব তো ফিরিয়ে দেই নি-”
শাফকাত সাহেব রিনার দিকে ফিরলেন। পাশের সোফা ইঙ্গিত করে বললেন, “বস।”
রিনা তার পাশে বসলো। শাফকাত সাহেব তার দিকে ফিরে বসলেন। “এবার বল তো, কি করেছিস। সত্যি বলবি।”
রিনা চোখ বড় বড় করে তার বাবার দিকে তাকায়। “তার আগে তোমায় কিছু প্রশ্ন করব। উত্তর দিবে।”
লম্বা একটা দম ছাড়ে শাফকাত সাহেব। “কর।”
“বাবা, মা ছেড়ে যাবার কত বছর হয়েছে?”
শাফকাত সাহেব ভাবলেন। “বিশ বছর।”

“এই বিশ বছরে তোমার কখনো একা মনে হয় নি? মনে হয় নি পাশে যদি কেউ থাকতো তবে ভালো হতো?”
শাফকাত সাহেব কিছু বলেন না।। উত্তর করেন না। যদিও তিনি প্রতিটি উত্তর জানেন, প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করেন, তবুও কখনো কাউকে বুঝতে দেন না। গত বিশ বছরে প্রতি মুহূর্তে তাকে একাকিত্ব বিষয়টি যন্ত্রণা দিয়েছে, কখনো কখনো মনে হয়েছে পাশে কেউ থাকলে একদম খারাপ হতো না। কিন্তু রিনার কথা ভেবে কাউকে আনার সাহস পান নি। নতুন একজন মানুষ রিনাকে কিভাবে গ্রহণ করবে তা তার চিন্তার বিষয় ছিল সবসময়।

রিনা আবার বলে উঠলো, “বাবা, তুমি তোমার জীবনকে আরো সুন্দরভাবে সাজাতে পারতে।। আমার কথা চিন্তা করে অনেক কিছু বিসর্জন দিয়েছো। অনেক কষ্ট একা মেনে নিয়েছো। আমি যদি তোমায় ছেড়ে দূরে চলে যাই, তুমি থাকতে পারবে?”
শাফকাত খান ঠায় বসে রইলেন। তিনি ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছেন। ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।। কিন্তু রিনাও যে তা ভাবতে পারে, তিনি তা ভেবে দেখেন নি। তিনি স্থিরভাবে রিনার দিকে চেয়ে রইলেন। রিনার চোখ তখন টলমল করছে। হলুদ আলোয় তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ শাফকাত সাহেব বুঝতে পারলেন, তিনি বুড়ো হয়ে গিয়েছেন, তার ছোট মেয়েটাও বড় হয়ে গিয়েছে। ছোট রিনা আজ বুঝতে শিখেছে তার বাবাই তার মা, তার জগত।

রিনা শাফকাত সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। “ওরা চায়, ছেলে বিদেশেই থেকে যাক। বিদেশেই ক্যারিয়ার গড়ুক। কিন্তু আমি তো তোমায় ছাড়তে পারব না বাবা। তোমাকে না দেখে থাকতে পারব না।”

বাইরে বৃষ্টির প্রকোপ বেড়েছে। শাফকাত সাহেব রিনার মাথা কাঁধে শক্ত করে জড়িয়ে নিলেন। তারপর হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। সেই কান্না কেউ শুনতে পেলো না। বৃষ্টির শব্দের সাথে মিশে হারিয়ে গেলো।

কলিংবেলটা অনেকটা সময় ধরে বেজে চলছে। রহিমা বানু দরজা খুলে দিলেন। তারপর গেস্ট রুমের দরজার সামনে এলেন। “আন্টি?”
রিনা চোখ মুছলো। ধাতস্থ হলো কিছুটা সময় নিয়ে। তারপর বললো, “খালা, বলো।”
“আন্নের কাছে একটা পুলা আসছে। ভিজ্জা একাকার অবস্থা। ঢুকতে কইলাম, ঢুকব না।”
রিনা চোখ মুছে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। কিন্তু যা দেখতে পেলো তার জন্যে সে নিজেও প্রস্তুত ছিলো না। দরজার ওপাশে যে দাঁড়িয়ে আছেন সে তার কথিত পাত্র। রিনা এগোতেই ছেলেটা গুটিসুটি হয়ে গেলো।
“আমি শাহেদ-”
রিনা হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলো। “আপনি এই অবস্থায় কেন?”
“চিনতে পেরেছেন? সেদিন-”
রিনা হাত উঁচিয়ে আবার থামিয়ে দিলো। “চিনতে পেরেছি। কিন্তু আপনার এই অবস্থা কেন?”
“গাড়ি মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে গেলো। ট্যাক্সি-সিএনজি-রিক্সা কিছু পেলাম না। তাই-” নিজেকে দেখালো সে। “আসলে ব্যাপারটা খুব প্রয়োজনীয় ছিল। কদিনের মাথায় আবার চলে যাব। তাই এসে পড়লাম। বলেই চলে যাব।”
“ভেতরে এসে বলুন?”
“না, এখানেই বলি।”
“আচ্ছা বলুন। শান্ত হয়ে বলুন।”
ছেলেটা কি যেন ভাবে। আশেপাশে তাকায় কিছুটা সময় উদ্ভ্রান্তের মত। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়। রিনার দিকে ফিরে তাকায়। “রিনা, আমি আপনাকে যাবতীয় শর্ত মেনে বিয়ে করতে রাজি আছি। আমি দেশে ফিরব। অনেক ভেবেচিন্তে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি যদি রাজি থাকেন-”
মুচকি হাসে রিনা। তারপর বলে, “ভেতরে আসুন।”

বাইরে অনেক অন্ধকার। বৃষ্টির তেজ কিছুটা কমে এসেছে। শাফকাত সাহেব বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। গেষ্ট রুমে তখন রিনা বসে আছে শাহেদকে নিয়ে। ওরা কিছুটা সময় একা থাকুক, নিজেদের চিনে নিক- শাফকাত সাহেবের এই ছিল চাওয়া। আকাশের মেঘ সরে যাচ্ছে। তারাগুলো আবার জ্বলতে শুরু করেছে। ঠান্ডা বাতাস তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে কিছু সময় পর পর। আজ নিজেকে অনেক সুখী মনে হচ্ছে শাফকাত সাহেবের। জগতের সবথেকে সুখী মানুষটি দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। বাড়িয়ে দেয়া হাত ভিজে উঠলো বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জলে। এই জল সবাইকে ভিজিয়ে দিক, পবিত্র করুক পুরো পৃথিবীকে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত