আম্মু- আজ মেয়ে দেখতে যাবো মনে নাই?
আমি- আমি তো বললাম যে বিয়ে করবো না। আগে চাকুরী তারপর বিয়ে।
আম্মু- তোর চাকুরী পেতে পেতে তো আমারা মরে যাবো।
আমি- আর ১ বছর সময় দাও।
আম্মু- না কোন সময় না।
।।
বিকেলে মেয়ে দেখতে গেলাম।
কিন্তু মেয়ে দেখে আমার মাথা নষ্ট। আমি কখনো এটা চাই নি যে আমার বউ কে বিশ্ব সুন্দরী হতে হবে, কিন্তু সমাজে চলার মতো তো হতে হবে।
আমি- আম্মু আমি এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না,
আম্মু- কেন? সুন্দরী না এজন্য? নিজের যোগ্যতা দেখেছো? বেকার ছেলে।
আমি- তো বিয়ে করতে কে বলেছে? তোমারা যদি জোর করো, আমি পালিয়ে যাবো।
।।
পরের দিন আমি রাগ করেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম।
রাগ করেই আমি এবার কাউকেই বলি নি,
পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মেসে উঠলাম। হাতে বেশি টাকা ছিল না, হয়তো এক সপ্তাহ যাবে।
যায় হোক, আমি এভাবেই শুরু করলাম।
বড় ভাই- সব ই তো বুঝলাম, কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি আমি কীভাবে চাকুরীর ব্যবস্থা করবো।
আমি- এখন আপাতত চলার মতো যা পাই।
বড় ভাই- ঠিক আছে আমি দেখছি।
।।
তিন দিন পর, একটা ছোট হোটেলে আমি ম্যানেজারের চাকুরী পেলাম। কিন্তু সময় ফজরের নামাযের পর থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত।সকাল ১০ টা থেকে হোটেলের মালিকের ছেলে হোটেলে থাকতো।
এভাবে কিছু দিন কেটে গেলো, কিন্তু ওনারা যে বেতন দিতো, তাতে চলাচল করা খুব মুশকিল।
।।
কয়েক দিন পরের ঘটনা!
ফুটপাতের সামনে একটা চায়ের দোকানে আমি চা খাচ্ছি, এমন সময়, এক বৃদ্ধ লোক, হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, বাবা, এক গ্লাস পানি হবে?
আমি দ্রুত তাকে পানি দিলাম কারণ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওনার অবস্থা খুব খারাপ।
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আমি বললাম,
আপনার তো শরীর অনেক খারাপ, এই বয়সে কেউ এই রোদে বের হয়? চলেন আমি আপনাকে রেখে আসি।
আমি ওনাকে ওনার বাসার সামনে রেখে আসলাম,
উনি বলল- বাবা, তুমি কি করো?
আমি- কিছুই না, চাকুরী খুঁজছি।
উনি বলল- আমাদের বাড়ীতে চাকুরী করবা? বেশি কিছু না। আমার ছেলে তো বেশির ভাগ দেশের বাইরে থাকে,
আর আমার বউ মা ও ব্যাবসা নিয়ে ব্যাস্ত, তুমি একটু বাড়ীর দেখাশুনা করবা। থাকা খাওয়া আমাদের এখানেই সেটা বাদ দিয়ে আর ৬ হাজার টাকা দিবো।
।।
মনে মনে ভাবলাম, খারাপ না! আপাতত করে দেখি।
আমি- জি আচ্ছা করবো।
।।
পরের দিন আমি সকালে ওনাদের বাসাই গেলাম।
উনি বলল- হ্যাঁ আসো। আচ্ছা তোমার নাম টায় তো জিজ্ঞেস করা হয় নি।
আমি- আমার নাম নিলয়।
উনি- আমাকে দাদা বলবা। এখন এই নাও বাজারের লিস্ট আর টাকা।
আমি- ঠিক আছে দেন।
।।
আমি বাজার করতে বের হলাম।
আমি বাজার শেষ করে বাড়ী ফিরলাম।
তারপর দাদা আমাকে আমার থাকার যায়গা দেখিয়ে দিলো।
আমার থাকার যায়গাটা ঠিক ওনাদের বাড়ীর সামনে, মনে হয় এটা ডাইভারের থাকার যায়গা।
।।
দাদা- তুমি কতো দূর পড়াশুনা করেছো?
এই যা, এখন কি বলবো?
আমি- দাদা, আমি ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছি।
দাদা- আজ তুমি নিজের ঘর গোছাও, বিকেলে আমাকে নিয়ে হাঁটতে যাবা।
আমি- জি দাদা।
দাদা- আর এই নাও ১০০ টাকা!
আমি- কিসের জন্য?
দাদা- রাখো, খরচ করতে হবে না?
বিকেলে আমি দাদা কে নিয়ে হাঁটতে বের হলাম।
।।
আমি- আচ্ছা দাদা, আপনার ছেলে কি করে? মানে দুপুরে কাউকেই দেখলাম না। বাড়ী ফাকা।
দাদা- আমার ছেলে ইমপোর্ট- এক্সপোর্ট এর ব্যাবসা করে। বউ তাকে সাহায্য করে। আর আমাদের এক মাত্র নাতনি
সরমি একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে।
।।
পরের দিন সকালে আমি বারান্দার সামনে ফুল গাছ গুলতে পানি দিচ্ছি, আর আগাছা পরিস্কার করছি, যদিও ওটা আমার কাজ না।
কিন্তু আমি ফুল গাছ ভালোবাসি, নিজের বাড়ীতে বাগান করেছি, তাই এই রকম শুকনো গাছ দেখে, মনে কষ্ট হয়।
।।
উপরের বারান্দা থেকে কেউ মনে হল আমাকে দেখছে, আমি তাকালাম না।
হয়তো মালিকের বউ হবে।
দাদা আমাকে ডাকলো!
আমি- জি দাদা আসছি।
দাদা- এটা আমার নাতনি, সরমি।
সরমি- কি নাম তোমার?
আমি- নিলয়।
সরমি- আমাকে ম্যাডাম বলে ডাকবা,
আমি- জি আচ্ছা।
সরমি- পড়া লিখা কিছু জানো?
আমি- টেন পর্যন্ত পড়েছি।
সরমি- ঠিক আছে, এখন যাও।
।।
বুঝলাম, উনি খুব রুক্ষ স্বভাবের মানুষ। বড় লোকের মেয়েরা হয়তো এই রকম ই হয়।
পরের দিন আমি বড় ম্যাডামের সাথে দেখা করলাম, ওনার কথা বার্তা ভালো লাগলো।
বড় ম্যাডাম- কাজ ছোট হলেও, দায়িত্ব অনেক বেশি, অল্প বয়সের ছেলে তুমি সব পারবা তো?
আমি- আপনারা একটু সাহস দিলেই সব পারবো।
ছোট ম্যাডাম- সাহস দিলেই সব হয় নাকি?
বড় ম্যাডাম- আহ, সরমি। আচ্ছা তুমি বাজার করতে পারো?
দাদা- কালকে সকালে ভালোই বাজার করেছে।
।।
ছোট ম্যাডাম- দাদু, ভালো করে হিসাব নিয়েছো তো? বাইরের মানুষকে এতো তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করতে নাই, বিশেষ করে টাকার ব্যাপারে।
বড় ম্যাডাম- সরমি! বেশি হয়ে যাচ্ছে, তুই ঘরে যা!
বড় ম্যাডাম- তুমি কিছু মনে করো না বাবা! বুঝতেই পারছো, দেশের অবস্থা, তার ওপর তুমি একে বারেই অপরিচিত।
আমি- জি আমি বুঝেছি, আমি কিছু মনে করি নি।
।।
বড় ম্যাডাম- ঠিক আছে, এখন আমার সাথে চলো, তোমাকে কিছু কাজ শিখিয়ে দেয়।
আমি- জি চলেন।
বড় ম্যাডাম- এই টা খাতা, তুমি এখানে সব খরচ লিখে রাখবে।
আমি- জি আচ্ছা! একটা কথা বলবো ম্যাডাম?
বড় ম্যাডাম- হ্যাঁ বলো!
।।
আমি- সকালে দেখলাম, ফুল গাছ গুলো মরে যাচ্ছে, আপনি যদি কিছু ফুল গাছ আর কিছু সার কিনে দেন তবে
আমি কিছু ফুল গাছ লাগাতে পারি, পরিচর্যা আমি করবো।
বড় ম্যাডাম- কথা টা শুনে আমি খুব খুশী হলাম! আগে একজন মালি ছিল, কিন্তু বছর খানেক থেকে
আমাদের ব্যাবসাতে মন্দা দেখা দেয়, এজন্য মালি সহ, আরও কর্মচারীকে আমারা ছুটি দিয়ে দেয়।
তখন থেকে ফুল গাছ গুলোর এই অবস্থা। এই নাও ৫০০০ টাকা! প্রাথমিক ভাবে এটা দিয়েই শুরু করো।
আমি- জি ধন্যবাদ।
কয়েক দিন পরের কথা।
আমি মন দিয়েই সব কাজ শিখছি, যদিও অনেক বড় তা না!
সে দিন হরতাল! তার ওপর কাজের মেয়ে সে দিন বাড়ীতে আসেনি।
সরমি ম্যাডাম- নিলয়!
আমি- জি ম্যাডাম!
সরমি ম্যাডাম- আমার জন্য সামনে রেস্টুরেন্ট থেকে বার্গার নিয়ে আসো তো।
আমি- জি আনছি।
।।
কিন্তু আমি কোন দোকান খুলা পেলাম না,
আমি- ম্যাডাম! সব দোকান বন্ধ।
সরমি ম্যাডাম- কিন্তু আমি কি খাবো এখন? আর আজকেই কাজের মেয়ের ব্যাবস্থা করছি।
আমি- কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলবো?
সরমি ম্যাডাম- কি বলো?
আমি- আমি এখন পরোটা আর ডিম ভেজে দিবো?
সরমি ম্যাডাম- তুমি পারো?
আমি- কিছু টা পারি…
সরমি ম্যাডাম- ঠিক আছে, আর সাথে কফি বানিয়ে দিও।
।।
আমি একটু পর পরোটা আর ডিম ভাজি করে নিয়ে আসলাম।
সরমি ম্যাডাম- এই তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো না, অনেক ক্ষুদা লেগছে।
আমি- এই যে ম্যাডাম।
।।
দাদু- সকালের নাস্তা তো হয়ে গেলো। কিন্তু দুপুরে কি হবে?
সরমি ম্যাডাম- হ্যাঁ। ওটায় তো। দুপুরে কি হবে? দুপুরে আবার পরোটা খেতে হবে নাকি?
আমি- না আমি ব্যাবস্থা করছি।
সরমি ম্যাডাম- কি করবা?
আমি- ফ্রিজে তো গোশত আছে। আমি সেটা ভিজিয়ে দিয়েছি, দুপুরে আলু ভাজি আর গোশত রান্না করি।
সরমি ম্যাডাম- তুমি গোশত রান্না করতে পারো?
আমি- কিছুটা পারি।
দাদু- যায় পারো, ওটাই করো। না খেয়ে তো থাকতে হবে না।
।।
দুপুরে বড় ম্যাডাম আসলো।
বড় ম্যাডাম- দুপুরে রান্নার কি অবস্থা? কিছু খেয়েছিস মা? দাঁড়া আমি এখুনি তাড়াতাড়ি খিচুড়ি রান্না করে দিচ্ছি।
সরমি ম্যাডাম- তোমাকে রান্না করতে হবে না। নিলয় সব রান্না করছে, তুমি ফ্রেস হয়ে ড্রয়িং টেবিলে চলে আসো।
।।
বড় ম্যাডাম রান্না ঘরে আসলো।
বড় ম্যাডাম- নিলয়! পারছো নাকি আমি সাহায্য করবো?
আমি- না ম্যাডাম, আপনি ফ্রেশ হয়ে যান, আমি ১০ মিনিটেই রান্না শেষ করে নিচ্ছি।
।।
১০ মিনিট পর!
সরমি ম্যাডাম- কই হলো? ক্ষুদায় মরে গেলাম।
আমি সব রান্না টেবিলে নিয়ে গেলাম। সবাই খেতে বসলো।
বড় ম্যাডাম- রান্না তো ভালোই হয়েছে, তুমি খেতে বসে যাও।
আমি- না ম্যাডাম, আপনারা খেয়ে নেন। আমি পরে খাচ্ছি।
বড় ম্যাডাম- আরে বসো তো! প্রায় বিকেল হতে যাচ্ছে, সারা দিন তুমি যা কষ্ট করলা।
সরমি ম্যাডাম- হ্যাঁ হ্যাঁ খেয়ে নাও।
আমি- ঠিক আছে।
।।
কয়েক দিন পরের ঘটনা!
তখন বড় ম্যাডাম ও স্যার দেশের বাইরে আছে। আমি রাতে খাবারের জন্য ছোট ম্যাডামকে ডাকতে পাঠালাম। কিন্তু উনি পরে খাবে বলল।
কাজের মেয়ে দাদু কে খাইয়ে বাড়ী চলে গেলো আমি ম্যাডামের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু ম্যাডাম আসলো না। তখন রাত প্রায় ১২ টা।
।।
আমি ম্যাডামের ঘরে গেলাম।
আমি- ম্যাডাম আমি আসতে পারি?
সরমি ম্যাডাম- কি তুমি এখনও ঘুমাতে যাও নি?
আমি- না ম্যাডাম। আপনি খান নি, এজন্য।
সরমি ম্যাডাম- আর বলো না, কাজের সময় কম্পিউটার বিরক্ত করলে কি ভালো লাগে? এদিকে আব্বু বলে গেছে অফিসের
হিসাব টা করে কালকে সবাইকে অফিসে গিয়ে বেতন দিয়ে দিতে। আর এতো রাতে কোন সার্ভিসিং সেন্টার ও খুলা পাওয়া যাবে না।
।।
আমি- আমি কিছু সাহায্য করতে পারি?
সরমি ম্যাডাম- হা হা হা হা…। হাসালা, তুমি! আরে গাধা এটা রান্না না, আমি পারছি না ইউনিভার্সিটি তে পড়ে আর তুমি তো টেন পর্যন্ত পড়েছো।
আমি- আপনি খেতে যান। সমস্যা টা আমাকে বলে যান।
সরমি ম্যাডাম- মাইক্রোসফট এক্সেলে অফিসের সব হিসাব আছে, আর এই খাতায় বাকী হিসাব সব নাম অনুযায়ী একসাথে করতে হবে।
আমি- আচ্ছা আপনি খেতে যান আমি দেখছি।
।।
সরমি ম্যাডাম- কি পারলা।
আমি- হ্যাঁ হয়েছে, এখন শুধু ডাটা গুলো ঠিক করতে হবে। আপনি ঘুমিয়ে যান। সকালে অফিস যেতে হবে। আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি।
সরমি ম্যাডাম- তুমি খাবা না?
আমি- আমি কাজ শেষ করে খেয়ে নিবো। আপনি ঘুমিয়ে যান। আমি ল্যাপটপ নিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছি। আপনি লাইট অফ করে নিন।
সরমি ম্যাডাম- ঠিক আছে।
।।
আমি নীচে ড্রইং টেবিলে গিয়ে কাজ করতে লাগলাম, তিন মাসে এই প্রথম আমি আমার যোগ্যতার কিছু কাজ পেয়েছি,
কিন্তু কাজ শেষ করতে করতে রাত ৩ টা বেজে গেলো।
আমি না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম।
।।
সকালে ম্যাডাম এর ডাকে ঘুম ভাংলো
সরমি ম্যাডাম- নিলয়, তুমি খাও নি কেন?
আমি- কাজ করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি।
সরমি ম্যাডাম- কাজ শেষ হয়েছে?
আমি- হ্যাঁ ম্যাডাম!
সরমি ম্যাডাম সব দেখলো।
।।
সরমি ম্যাডাম- তুমি এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে সব কাজ করলা? আমিও তো পারতাম না।
আমি- আমি এক বছর একটা কম্পিউটারের দোকানে কাজ করেছিলাম, তাই এসব জানি।
সরমি ম্যাডাম- আচ্ছা খুব ভালো। আমি এখন অফিস বের হবো। বিকেলে কথা হবে।
আমি বিকেলে বেলা, বাড়ীর সামনের বাগানে বসে আছি। সরমি ম্যাডাম আসলো,
আমি- ম্যাডাম! সব ঠিক ভাবে কাজ হয়েছে?
সরমি ম্যাডাম- হ্যাঁ হয়েছে! তুমি রেডি হও! আমিও ফ্রেশ হয়ে আছি। ১৫ মিনিট পর আমরা বের হবো।
আমি- কোথায়?
সরমি ম্যাডাম- জাহান্নামে! বের হতে বলছি বের হও।
আমি- জি আচ্ছা।
।।
আমি রেডি হয়ে বসে আছি, কিছুক্ষণ পর ম্যাডাম আসলো!
সরমি ম্যাডাম- তোমার আর ভালো জামা কাপড় নাই?
আমি- মনে মনে বললাম, যেগুলো ছিল বাড়ীতে আছে, আর এখানেই বা কতো বড় কাজ করি?
সরমি ম্যাডাম- কি হলো?
আমি- না মানে…।।
সরমি ম্যাডাম- তোমার রুমে চলো।
আমি- আবার রুমে।
সরমি ম্যাডাম- চলো।
আমি- আমি ম্যাডাম কে রুমে নিয়ে গেলাম।
সরমি ম্যাডাম- রুমের কি অবস্থা করেছো? একটু গুছিয়ে রাখতে পারো না? দেখি তোমার কি কি জামা কাপড় আছে?
আমি- আমি কয়েকটা বের করলাম।
সরমি ম্যাডাম- এই সাদা শার্ট টা পরো। তোমাকে ভালো লাগবে।
আমি- ঠিক আছে, আপনি বাইরে যান। আমি রেডি হয়ে আসছি।
সরমি ম্যাডাম গাড়ী থেকে হ্রন দিচ্ছে। আমি দৌড় দিয়ে বের হলাম।
।।
কিছু দূর যাবার পর!
সরমি ম্যাডাম- বার্গার খাবা?
মনে মনে বললাম, আর কি এই পৃথিবীতে কিছু নাই?
আমি- না মানে, আমি ওসব পছন্দ করি না।
সরমি ম্যাডাম- তো এই বিকেল বেলায় কি খাবা?
আমি- চটপটি/ ফুচকা।
সরমি ম্যাডাম- আচ্ছা চলো।
।।
কিছুক্ষণ পর!
সরমি ম্যাডাম- শোন! এখানে এমন ভাব করবা যেন তুমি আমার ফ্রেন্ড, ঠিক আছে?
আমি- জি আচ্ছা।
সরমি ম্যাডাম- চলো।
।।
এরপর সরমি ম্যাডাম, আমাকে ফুচকা খাওয়ালো, তারপর উনি কফি, আর আমি চা! তারপর আমাকে নিয়ে একটা শপিং সেন্টারে গেলো,
সেখান থেকে আমাকে দুইটা পাঞ্জাবী। আরও কিছু জামা-কাপড় কিনে দিলো।
।।
আমি- ম্যাডাম, এসবের কি দরকার ছিল?
সরমি ম্যাডাম- দরকার আছে বলেই তো কিনে দিলাম।
।।
দুই দিন পর!
সরমি ম্যাডাম- নিলয়! এই নিলয়!
আমি- জি ম্যাডাম!
সরমি ম্যাডাম- কতক্ষণ থেকে খুঁজছি, কয় ছিলা?
আমি- এই তো। দাদুর জন্য ঔষুধ আনতে গেছিলাম।
সরমি ম্যাডাম- এইগুলো নাও।
আমি- কি এসব?
সরমি ম্যাডাম- এই দুইটা বই তুমি মুখস্ত করবা। আর আমি বাবাকে বলেছি, বাড়ীর কম্পিউটার টা এখন থেকে তুমি ব্যাবহার করবা,
তোমার একটু কষ্ট হবে, যে গুলো বুঝতে না পারবা, আমাকে জিজ্ঞেস করবা।
আমি- জি আচ্ছা।
.।।
আমি মনে মনে ভাবলাম, আবার পড়াশুনা?
কয়েক দিন পর স্যার আসলো।
এই প্রথম আমি উনাকে দেখলাম
স্যার- এই সেই ছেলে? নাম যেন কি?
সরমি ম্যাডাম- নিলয়।
স্যার- কতো দূর, পড়াশুনা করেছো?
আমি-টেন।
সরমি ম্যাডাম- তবে বাবা, কাজে অনেক ভালো।
স্যার- হ্যাঁ সেটা তোমার আম্মুর কাছে শুনেছি।
সরমি ম্যাডাম- বাবা, একটা কথা বলবো? ওর বেতন টা বাড়িয়ে দেওয়া যায় না?
স্যার- তোমার আম্মুকে বলে বাড়িয়ে দিবা। আচ্ছা আমাকে অফিসের সব ফাইল গুলো দাও।
আমি- আমি দিয়ে আসছি। সব আমার টেবিলে আছে।
সরমি ম্যাডাম- আচ্ছা দিয়ে আসো।
।।
কয়েক দিনের মধ্যে স্যার ও অনেক খুশী হলো।
স্যার- তুমি অনেক ভালো ছেলে, দুয়া করি, তুমি যেন অনেক উপরে যাও।
আমি- স্যার আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
।।
স্যার বিদেশ যাবার এক সপ্তাহ পর।
সরমি ম্যাডাম- নিলয়! কাজ শেষ হলো?
আমি- তিন দিনের কাজ, এক দিনে করালে কি শেষ হবে? সেই সকাল থেকে বসে কাজ করছি।
সরমি ম্যাডাম- আচ্ছা উঠো।
আমি- কোথায়?
সরমি ম্যাডাম- চলো, একটু বাইরে যায়।
আমি- আর কাজ?
সরমি ম্যাডাম- ওটা রাতে করবা।
আমি- ঠিক আছে চলেন।
।।
এরপর আমাকে বাইরে নিয়ে কিছু যায়গা ঘুরালেন। তারপর আমাকে আবার একটা শপিং সেন্টার ে নিয়ে গেলেন।
সরমি ম্যাডাম- এই কোর্ট টা একটু পরে দেখো তো।
আমি- আমি কোর্ট নিয়ে করবো?
সরমি ম্যাডাম- আরে যেটা বলছি ওটা করো না? এতো প্রশ্ন করো কেন?
আমি- ঠিক আছে।
।।
এরপর কোর্ট কিনে আমারা বাড়ী ফিরে আসলাম।
পরের দিন সকালে আমি (সবজি, মাছ)বাজার করে বাড়ী ফিরছি। দেখালাম সরমি ম্যাডাম এখন ও বসে আছে।
সরমি ম্যাডাম- নিলয় তুমি তাড়াতাড়ি গোসল করে তোমার বিছানাই কাপড় রাখা আছে ওগুলো পড়ে তাড়াতাড়ি নীচে আসো।
আমি- কিন্তু কোথায় যাবো? আপনি অফিস যাবেন না?
সরমি ম্যাডাম- যেটা বলছি ওটা করো।
।।
আমি আর বেশি কিছু না বলে রেডি হয়ে আসলাম।
সরমি ম্যাডাম- আমার সামনে আসো, টাই কই?
আমি- হাতে, আমি টাই পরতে জানি না।
সরমি ম্যাডাম- আমাকে দাও, আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। এই ভাবে পড়তে হয়। এখন চলো।
।।
এরপর ম্যাডাম আমাকে গাড়ীতে করে নিয়ে গেলো।
সরমি ম্যাডাম- এটা আমাদের অফিস।
আমি- তো আমি কেন।
সরমি ম্যাডাম- দেখেতেই পাবা?
আমি- জি আচ্ছা।
এরপর আমি ম্যাডামের অফিস ঘরে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর একজন পিয়ন এসে আমাকে ডাক দিলো।
।।
সরমি ম্যাডাম- আসো নিলয়। আজকে প্রেজেন্টেশন টা নিলয় আপনাদের বুঝিয়ে দিবে। ইনি মিস্টার নিলয়! আমাদের দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাই।
এখন আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করবে, এতো দিন আমাকে বাড়ীতে হেল্প করতো, এখন বাড়ী অফিস সব যায়গায় হেল্প করবে।
।।
আর নিলয়! ইনারা আমাদের অফিসের কর্মচারী! যায়হোক, এবার তুমি শুরু করো।
আমি- কিন্তু, ম্যাডাম!
সরমি ম্যাডাম- ভয় এর কিছু নাই কালকে রাতে তুমি আমাকে যেভাবে বলেছো, এখন ও ঐ ভাবেই বলো।
এরপর আমি ভয় কাটিয়ে বোর্ডে ঐ ভাবেই লিখে সবাইকে বললাম।
এতে সবাই খুশী হয়ে গেলো।
সরমি ম্যাডাম- কি রহামান সাহেব। ঠিক আছে তো?
রহামান সাহেব- অনেক ভালো হয়েছে ম্যাডাম, আজ বুঝতে পারলাম, আপনার বাবা-মা এই অফিসে না থাকলেও আপনারা সেটার অভাব বুঝতে দিবেন না।
।।
এরপর থেকে আমিও অফিস গামী মানুষ হয়ে গেলাম, তবে আমাকে প্রয়োজন ছাড়া অফিস যেতে হতো না। বেশির ভাগ কাজ আমি বাড়িতেই করতাম।
রাতে খাবারের জন্য আমি সরমি ম্যাডামকে ডাকতে গেলাম, ম্যাডাম মন খারাপ করে বসে আছে।
আমি- ম্যাডাম মন খারাপ কেন?
সরমি ম্যাডাম- আব্বুকে তো বললাম যে সব হয়ে যাবে, কিন্তু কীভাবে যে করবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
যদি না করতে পারি তবে সত্যি সত্যি আমরা অনেক বড় বিপদে পড়ে যাবো।
আমি- নিজের ওপর ভরসা রাখেন। চলেন খেতে চলেন।
।।
পরের দিন আমি ম্যাডামের সাথে অফিস গেলাম।
আমি- ম্যাডাম! একটা মিটিং ডাকেন।
সরমি ম্যাডাম- ঠিক আছে।
।।
আমি সবার সাথে কথা বলে তাদের দুইটা শিফটের কথা বললাম, যদিও কেউ সাথে মত দিলো না।
সরমি ম্যাডাম- নিলয়, তুমি যা চাও তাই হবে।
একজন- কিন্তু ম্যাডাম এতো লোক এতো তাড়াতাড়ি কোথায় পাবো? আর এটা অনেক বড় ঝুঁকি নেওয়া হয়ে যাবে।
আমি- এমনিতেই আমরা অনেক বড় ঝুঁকিতে আছি।
সরমি ম্যাডাম- নিলয় সব দায়িত্ব তোমাকে দিলাম। তুমি যা বলবা, সবাই সেটা শুনবে। কি করবা করো।
আমি- ধন্যবাদ! ম্যাডাম।
।।
আমি- ম্যানেজার সাহেব। আপনি পেপারে আজকেই বিজ্ঞাপন দিন। আর শ্রমিকদের সাথে দুপুরের পর আমার কথা বলিয়ে দেন।
।।
দুপুরে আমি শ্রমিকদের ওখানে গেলাম।
আমি সবাইকে একসাথে ডাক দিলাম।
আমি- শ্রমিকদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা আতিক রহামান কেমন মানুষ?
একজন বয়স্ক শ্রমিক- অনেক ভালো মানুষ, আজ ১৫ বছর থেকে সাহেবের এখানে কাজ করছি, যতো দিন সুস্থ থাকবো এখানেই কাজ করে যাবো।
..
আমি- এবার আপনাদের পালা, ওনার জন্য কিছু করা। এই ফ্যাক্টরি, বাড়ী সব হুমকির মুখে ছয় মাসের মধ্যে লোন পরিশোধ না করে সব নিলাম হয়ে যাবে।
তখন আপনারাও চাকুরী হারাবেন।
একজন বয়স্ক শ্রমিক- তো আমরা কি করতে পারি বাবা।
..
আমি- আপনারা শুধু মন দিয়ে কাজ করবেন। আপনারা অভিজ্ঞ, আপনাদের ২ ভাগে ভাগ হতে হবে। এক ভাগ সকালে কাজ করবেন,
আরেক ভাগ দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত। আপনাদের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা আমি করবো। সাথে যারা সকালে কাজ করবে আমি তাদের জন্য
দুপুরের খাবার আর যারা দুপুরের পর থেকে কাজ করবে আমি তাদের জন্য রাতের খাবার এর ব্যাবস্থা করবো। আপনারা যদি পারেন,
আপনাদের যারা পরিচিত তাদের কাজে নিয়ে আসতে পারেন। সামনে সপ্তাহে থেকে আরও নতুন ১৫০০ শ্রমিক কাজ করবে।
একজন বয়স্ক শ্রমিক- ঠিক আছে আমরা করবো।
।।
এরপর থেকে আমি মন দিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। এ লড়াই টা আমাদের অস্তিত্ব বাঁচার লড়াই।
আমি বাড়ীর থেকে অফিসে বেশি থাকি।
।।
সরমি ম্যাডাম- শরীরের কি অবস্থা দেখেছো? বাড়ী যাও রেস্ট করো।
আমি- রেস্ট করবো। আর তো ৪ মাস।
সরমি ম্যাডাম- এতো কষ্ট করছো? শুধু আমাদের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য?
আমি- ম্যাডাম, শুধু আপনার পরিবার কেন হবে? আমি কষ্ট করছি, এক দাদার জন্য যে আমি রাস্তা থেকে নিয়ে এসে বাড়ীতে জায়গা দিয়েছে,
তার জন্য করছি। যে মা, না চিনেও বাড়ীর একজন ছেলেকে ছেলের মতো আদর করে তার জন্য করছি। যে মেয়ের পিছনে হাজার ছেলে ঘুরে,
কিন্তু একটা টেন পর্যন্ত পড়া ছেলেকে নিজের জীবন সঙ্গী করার অঙ্গীকার করছে তার জন্য করছি, যে বাবা তার মান সম্মানের কথা না ভেবে
মেয়ের খুশীর কথা ভাবে, আমি সেই বাবার কথা ভেবে কষ্ট করছি। আর এছাড়া এই ফ্যাক্টরিতে ৩০০০ শ্রমিক আছে তাদের পরিবার আছে।
আমি তাদের জন্য কষ্ট করছি।
।।
সরমি ম্যাডাম কিছু না বলে কাঁদছে।
আমি- ওমা! আপনি কাঁদছেন কেন?
সরমি ম্যাডাম- জানি না। আমি বাড়ী গেলাম, তুমি রাতে বাড়ী এসো।
।।
এভাবে ছয় মাস পার হয়ে গেলো।
আমাদের কাজ ও শেষ হলো। আমারা ৫ লক্ষ পিচের প্রোডাক্ট তৈরি করতে গিয়ে ১ লক্ষ বেশি করে ফেলেছি। ওনারা ওগুলো নিয়ে নিয়েছে।
এজন্য আমাদের মুনাফাও অনেক বেশি হয়েছে।
।।
আমি এই খুশী তে সবাই কে এক মাসের বেতনের সমান সবাইকে বোনাস দিয়েছি।
।।
আমি- স্যার আমি আপনাকে না জানিয়ে একটা কাজ করে ফেলেছি, শ্রমিকদের আমি এক মাসের বেতনের সমান বোনাস দিয়ে দিয়েছি
স্যার- বাবা! কোম্পানির ভার তো, তোমার আর মেয়ের ওপর দিয়েছি, তোমারা ব্যাংকের লোন পরিশোধ করতে পেরেছো এটায় অনেক।
আমি- ব্যাংকে বাকী টাকা জমা করে দিয়েছি।
।।
স্যার পরের দিন অফিস গেলো।
স্যার- কেমন আছেন সবাই।
শ্রমিক- স্যার! আমরা অনেক ভালো আছি।
স্যার- আমি একটা প্রশ্ন করবো আপনারা উত্তর দিবেন। আমার ডান পাশে অফিসের বড় কর্মচারী আছে, আপনারাও উত্তর দিবেন।
আমার পর এই কোম্পানির দায়িত্ব মানে পরিচালক কে হবে? আমি নাম বলছি, আপনারা হাত ওপরে উঠাবেন। ১ আমার মেয়ে সরমি।
নাকি ২ নিলয়।
।।
সবাই নিলয় মানে আমার নাম করে হাত ওপরে উঠালো
স্যার- ঠিক আছে। তাহলে আজ থেকে কোম্পানির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক নিলয় । সাথে আপনারা জেনে খুশী হবেন যে,
খুব তাড়াতাড়ি নিলয় আর আমার এক মাত্র মেয়ে সরমির বিবাহ সম্পূর্ণ হবে।
নিলয় এখানে আসো বাবা, তুমি কিছু বলো।
।।
আমি- আমি নিলয়! একজন খুব সাধারণ ঘরের ছেলে! ছোট থেকে সবার আদরের মাঝেই বড় হয়েছি। ছোট থেকে আমার বাবা-মার শিক্ষা,
যারা তোমাকে ভালোবাসে, তাদের জন্য সব কিছু করো। প্রয়োজনে যদি নিজের ক্ষতি হয়।
।।
খুব সাধারণ ভাবে আমি বড় হয়েছি, আর আমার স্বপ্ন ও অনেক সাধারণ। এতো বড় কোম্পানির মালিক হবার আমার স্বপ্ন ও নাই, আর ইচ্ছা ও নাই।
এই কোম্পানির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে, আপনার মেয়েই থাকুক। আমার কাজ করার জন্য কোন পদ লাগবে না। আমি এখন ভালো আছি,
স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছি, আমাকে চেয়ারের শিকলে না বাধলেই মনে হয় ভালো হবে। আর সরমি ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হলে সেও অফিসে থাকবে,
আর আমিও এতে আমারা এক সাথে অনেক কাজ করতে পারবো।
।।
স্যার- ঠিক আছে তুমি যা বলবা, তাই হবে।
স্যার- বাবা! আল্লাহ্র রহমতে তো সব ভালো ভাবে হয়ে গেলো। এখন যদি বিয়ের দিনটা ঠিক করে ফেলতা, তবে মনে হয় অনেক ভালো হতো।
আমি- ঠিক আছে, আমি গ্রামের বাড়ী যায়। বাবা-মার সাথে কথা বলি।
স্যার- ঠিক আছে যাও।
আমি- স্যার! একটা কথা বলতাম,
স্যার- হ্যাঁ বলো!
আমি- আপনার কোম্পানিতে চাকুরী করার সময় আমি হাত খরচ ছাড়া কোন বেতন ওঠায় নি।
তো আমার পদ অনুযায়ী আমাকে যদি বেতন দিতেন তাহলে ভালো হতো। খালি হাতে তো বাড়ী যাওয়া যায় না।
স্যার- হা হা হা! আরে পাগল তুমি আমার জামায়, তোমার আবার বেতন নিতে হবে? ব্যাংকে যা টাকা আছে,
ওখান থেকে প্রয়োজন মতো যা ইচ্ছা হয় তুলে নিবা।
আমি- সেটা মনে হয় ঠিক হবে না। সব কিছুর একটা নিয়ম থাকা উচিৎ। আপনার আমার যোগ্যতা অনুসারে যেটা ঠিক মনে হয় ওটা দিয়েন।
স্যার- ঠিক আছে, তুমি ৬ মাসের বেতন ৬ লক্ষ টাকা আর সাথে বোনাস ১ লক্ষ টাকা নিয়ে নিও। তবে এর বেশি লাগলে বলবা, লজ্জা পাবা না।
আমি- জি আচ্ছা।
।।
পরের দিন সকালে!
সরমি ম্যাডাম- কি খবর আজ অফিস আসতে এতো দেরি।
আমি- ম্যাডাম একটা মিটিং ছিল। আর কয়েক দিনের জন্য গ্রামের বাড়ী যাবো তো তাই সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম।
এখন আমাকে আমার বেতন দেন।
সরমি ম্যাডাম- সেটা তো তুমি ব্যাংকে গেলেই যা খুশী তুলতে পারবা।
আমি- কাল রাতে সারের সাথে কথা হয়েছে,মাসে ১ লক্ষ টাকা বেতন, সে হিসাবে ৬ মাসের বেতন ৬ লক্ষ টাকা আর সাথে
বোনাস ১ লক্ষ টাকা মোট ৭ লক্ষ টাকা দিন।
সরমি ম্যাডাম- ঠিক আছে, আমি দুপুরে আমি টাকা নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করছি। তো তুমি কি গাড়ী নিয়ে যাবা?
আমি- না! আমি বাসেই চলে যাবো?
সরমি ম্যাডাম- বাসে যাবা?
আমি- কেন অবাক হবার কি আছে? বাসে চড়েই বড় হয়েছি, এখন না হয় কতো প্রকার গাড়ী ব্যাবহার করছি।
সরমি ম্যাডাম- তারপর ও তুমি এখন আতিক গ্রুপের MD তার ওপর হবু জামাই।
আমি- আমি একটা মদ্ধবিত্ত ঘরের ছেলে। আর এভাবেই চলতে বেশি পছন্দ করি।
সরমি ম্যাডাম- ঠিক আছে, আর হ্যাঁ! এখন থেকে ম্যাডাম কথাটা বাদ দাও।
আমি- কেন? আপনি তো অফিসেও আমার ম্যাডাম।
সরমি ম্যাডাম- আরে সেটা ঠিক আছে, কিন্তু কিছু দিন পর তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে, সেটা কি ভুলে গেছো?
আমি- যখন হবে তখন দেখা যাবে।
।।
পরের দিন সকালে আমি গ্রামের বাড়ী পোঁছালাম।
প্রায় ৭ মাস পর বাড়ীতে আসলাম।
।।
অনেক গরম পড়েছে।
আমি- আম্মু, এতো গরমে কীভাবে আছো?
আম্মু- সারা জীবন ই তো এভাবে থাকলাম, কেন ঢাকায় কি গরম নাই?
মনে মনে ভাবলাম, ১ বছর এসির বাতাসেই হয়তো সব ভুলে গেছি,
আমি- এসি লাগিয়ে দেয়?
আম্মু- আমাদের বাড়ীতে কি এসব মানাবে?
আমি- মানাবে না কেন?
আমি- আব্বু, একটা পরিচিত মিস্ত্রি ডাকো, পুরো বাড়িটা ঠিক করতে হবে।
আব্বু- কিন্তু এতো টাকা কোথায় পাবো? আরে ব্যাংকে যে টাকা গুলো আছে ওগুলো তোর আর তোর বোনের ভবিষ্যতের জন্য।
আমি- টাকা আমি দিবো। আমি এখন অনেক টাকা বেতন পায়। ঈদ আর দুই মাস বাকী আছে, এর মধ্যেই বাড়ী ঠিক করতে হবে।
।।
এরপর আমি বাড়ী ঠিক করার জন্য সব লোক জন লাগিয়ে দিলাম, অফিসের এখন তেমন কোন চাপ নাই, আর যে অর্ডার গুলো আছে,
সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।
।।
ফোনটা বাজছে!
আব্বু- নিলয় তোর ফোন এসেছে।
আমি- আসছি…
।।
আমি- হ্যালো!
সরমি ম্যাডাম- কি ব্যাপার! আসবা কবে? প্রায় ১০ দিন হয়ে গেলো।
আমি- একটু বাড়ীর কাজ চলছে। এজন্য দেরি হচ্ছে।
সরমি ম্যাডাম- আঙ্কেল- অ্যান্টির সাথে কথা বলেছো?
আমি- সরাসরি কিছু বলি নি, তবে বলবো।
সরমি ম্যাডাম- ঠিক আছে তাড়াতাড়ি বলো।
আমি- ঠিক আছে।
।।
বাড়ীর ভিতরের কাজ আর ৫ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে গেলো। এসিও লাগানো হয়ে গেলো। কিন্তু লাইন দিলো না, বিদ্যুৎ অফিস থেকে বলল,
লাইন পাল্টাতে হবে এজন্য এক মাস সময় লাগবে।
।।
আমি বাজার থেকে বাড়ী ফিরছি,
বাড়ীর সামনে দেখলাম ৪ টা গাড়ী! আমাদের বাড়ীর পাশে এক বাড়ীতে প্রায় গাড়ী আসে, আমি ভাবলাম হয়তো ওনার গাড়ী হতে পারে।
কিন্তু বাড়ীর ভিতরে গিয়ে দেখলাম, স্যার, সরমি সবাই বসে আছে।
।।
আমি- স্যার! আপনারা?
সরমি ম্যাডাম- আসবো না? কয়েক দিন বলে তোমার কোন খোঁজ নাই?
স্যার- আসলে সরমির মন খারাপ করছে তোমার সাথে দেখা করার জন্য। আর আমি ভাবলাম তাহলে আমরা ও যায়।
আর তোমার বাবার সাথে বিয়ের কথা টাও বলা হয়ে যাবে। তোমার বাবা রাজী আছে।
।।
আমি আর কি বলবো, কিছুই বলার নাই।
আমি আর কি বলবো, কিছুই বলার নাই।
দুপুরে একসাথে সবাই খাবার খাচ্ছি।
স্যার- নিলয় এসি কি নষ্ট নাকি? এতো গরমেও এসি অন করছো না?
আমি- এসি নতুন লাগিয়েছি, কিন্তু ওটার জন্য বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেছি বলেছে আরও এক মাস সময় লাগবে,
এর আগে ওনারা লাইন দিবে না।
স্যার- সরমি, আমার ফোন টা নিয়ে আয় তো মা। দেখি লাইন দিতে কতো সময় লাগে।
।।
এরপর স্যার একটা ফোন করলো।
স্যার- আসস্লামু, ভাই আমি আতিক রহামান বলছি, আতিক গ্রুপের মালিক।
ফোন ভয়েস- জি বলেন।
স্যার- আমার বেয়াইএর গ্রামের বাড়ীতে এসি লাগাবো, আপনার অফিসের লোক বলছে আরও ১ মাস লাগবে, এখন এতো
গরমে আমি আর আমার পরিবার বসে আছি, মেয়ের বিয়ে কি অবশেষে এসির জন্য হবেনা?
ফোন ভয়েস- কোন অফিস, আপনি ঠিকানা দিন আমি বলে দিচ্ছি।
স্যার- নেন, আমার জামাইএর সাথে কথা বলে নেন।
।।
এরপর আমি পুরো ঠিকানা দিলাম, সাথে আরি সাহেবের নাম ও।
ফোন ভয়েস- ঠিক আছে। আতিক ভাইএর মেয়ের যখন বিয়ে কাজটা তো তাড়াতাড়ি করতেই হয়।
।।
আমি- স্যার! কে উনি।
স্যার- বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
।।
আর কি ১৫ মিনিটের মধ্যেই, বাড়ীর সামনে বিদ্যুৎ আফিসের সামনে গাড়ী।
আরি সাহেব- স্যার আপনি বলবেন তো যে আপনি কে? আপনার কাজ আজকেই হয়ে যাবে।
।।
বিকেলে আমি সরমি ম্যাডাম কে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হলাম, আমাদের গ্রামে ছোট্ট একটা নদী আছে। ওর চরে ই হাঁটছি।
সরমি ম্যাডাম- জায়গাটা তো অনেক সুন্দর। কিন্তু অনেক গরম।
আমি- এজন্য আমি বাড়ীতে এসে আগে আপনাদের জন্য বাড়ী ঠিক করছিলাম।
সরমি ম্যাডাম- এসির ব্যাবস্থা তো হয়ে গেলো। এখন বিয়েটা কবে হবে?
আমি- আজকে করবেন?
সরমি ম্যাডাম- সত্যি?
।।
সন্ধায় সরমি ম্যাডামকে নিয়ে বাড়ী আসলাম। তখন এসির কাজ প্রায় শেষ।
কাজ শেষ করে আমি আরি সাহেবের হাতে ৫০০০ টাকা দিলাম।
আরি সাহেব- না না লাগবে না।
আমি- না রাখেন, অনেক কষ্ট করলেন।
।।
রাতেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
তার দুইটা কারণ, এক সরমি ম্যাডামএর ইচ্ছা আর দুই স্যারকে তাড়াতাড়ি ঢাকাই ফিরে যেতে হবে এজন্য।
।।
পরের দিন আমাদের বাসায় সবার দাওয়াতের আয়োজন করা হলো।
।।
দুপুরের সময়!
আমাদের বাড়ীতে অনেক মেহমান এসেছে, আমি তাদের সাথে কথা বলছি। সরমি ম্যাডাম ও আসলো।
সরমি ম্যাডাম- তুমি এতো মিথ্যা বাদি কেন?
আমি- আমি আবার কি করলাম?
সরমি ম্যাডাম- তুমি না কি টেন পর্যন্ত পড়েছো? রাতেও সত্যি টা বললা না?
আমি- টেন পর্যন্ত পড়া জেনেই তো বিয়ে করছেন?
সরমি ম্যাডাম- তাই বলে সত্যিটা বলবা না?
আমি- আপনাকে কে বলল?
সরমি ম্যাডাম- সকালে আম্মুকে বলছিলাম,
।।
তার ভাষায়!
সরমি ম্যাডাম- যে আপনাদের যে একবারেই টাকার অভাব সেটা তো না, তাহলে নিলয়কে কেন পড়ালেন না।
আম্মু- অতো পড়ছিল, আমরা ওর বিয়ের কথা বললাম, অতে রেগে সে ঢাকা চলে গেলো।
সরমি ম্যাডাম- টেনে পড়া ছেলের আবার কিসের বিয়ে?
আম্মু- টেন এ পড়া মানে? কিসের টেনে পড়া?
সরমি ম্যাডাম- আপনার ছেলে টেন পর্যন্ত পড়ে নি?
আম্মু- তোমাকে কে বলেছে এসব? আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তার ওপর সে বলল। LLM করবে। করুক, যখন তার আর ৬ মাস বাকী আছে,
আমরা বললাম চাকুরী যখন করবি করিস, একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দেয়। মেয়ে দেখেই সে বাড়ী ছেড়ে দিলো।
সরমি ম্যাডাম- ওহ! তাই বলেন। আজ আপনার ছেলেকে মজা দেখাচ্ছি, মিথ্যা কথা বলার।
।।
আমি কথা গুলো শুনে হাসতে শুরু করলাম।
সরমি ম্যাডাম- হাসবা না! এখন তো সবাই আছে, রাতে একা পেয়ে মজা দেখাবো। কেমন প্রিয়জনের সাথে মিথ্যা কথা বলা। আচ্ছা LLM পড়া শেষ হয় নি?
আমি- এখন শেষ করবো।
দুই বছর পরের কথা!
।।
সরমি- এই তুমি কবে আসবা বলো তো?
আমি- আরে এখন ও তো ঈদের ৫ দিন সময় আছে। আর ঈদের পরে ঐ দিকে অনেক কাজ, তাই আমি এই দিকের কাজ গুলো শেষ করে নিচ্ছি।
সরমি- ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করছো তো?
আমি- হ্যাঁ। সিমলা কেমন আছে?
সরমি- হ্যাঁ ভালো।
আমি- আচ্ছা ভালো হয়ে থেকো।
।।
সিমলা আমার মেয়ে ২ মাস ওর বয়স। এবার কুরবানি ঈদ নাকি সবাই আমাদের গ্রামের বাড়িতেই করবে।
আর আমার শ্বশুর ও ওখানে আমাদের এলাকাই একটা ফ্যাক্টরি খুলছি।
।।
গত বছর যখন ঈদ করতে বাড়ী গেলাম। দেখলাম কয়েক জন আমার কাছে আসলো চাকুরীর জন্য। তাদের আসা টা খারাপ না,
সবাই আশা করে বাড়ীর পাশে কারো যোগ্যতা থাকলে তার কাছে চাকুরীর, আমিও বেকার ছিলাম, আমিও আশা করেছিলাম,
কিন্তু আমার সময় কেউ সাহায্য করে নি। সবাই বড় হবার পর ভুলে যায়, যে তাদের একটা কর্তব্য থাকে নিজ এলাকার উন্নতি করার,
কিছু বেকার ছেলের চাকুরী দেবার। কিন্তু অনেকেই করে না।
।।
এই নিয়ে আমি আমার জেলার কিছু বড় বড় ব্যাবসায়ি দের সাথে কথা বলি, কিন্তু লাভ হয় না, সবাই নিজের স্বার্থ দেখে,
এতো টাকা পয়সা নিয়ে কি হবে? বুঝি না।
।।
এই প্রস্তাব টা আমি আমার শ্বশুরকে দেয়। ওনার একটাই উত্তর, তোমাকে তো অফিস ছেড়েই দিয়েছি। যেটা ভালো মনে হয় করো।
তবে ব্যাবসা আবেগ নিয়ে না বুদ্ধি দিয়ে হয়।
।।
ওনাকে উত্তরে বলেছিলাম, নিজ মানুষের জন্য যদি একটু আবেগ খাটায় নিশ্চয় সেটা খারাপ কিছু না।
এরপর আমি আমার শ্বশুর কি কিছু বুঝায় যে, প্রথমে আমাদের কিছু বেশি টাকা লাগলেও আমাদের শ্রমিকদের বেতন কম দিতে হবে, ঢাকার চাইতেও।
।।
এরপর ফ্যাক্টরি বানানোর কাজ শুরু হয়ে যায়।
কথা আছে সামনে সপ্তাহেই এর এর কাজ শেষ হয়ে যাবে, তাহলেই আমার স্বপ্ন আমার নতুন ফ্যাক্টরি তৈরি।
তিন দিন পর আমি বাড়ী গেলাম।
আমি বাড়ী যাবার পর, বিকেলে অনেক মানুষ আমাদের বাড়ীর সামনে।
আমি- কি ব্যাপার আম্মু এতো মানুষ কেন?
আম্মু- কেউ এসেছে চাকুরীর জন্য, আর কেউ তোকে এই ভালো কাজের জন্য শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে।
।।
আমি তাদেরকে বললাম, আপনারা বিকেলে আমার ফ্যাক্টরির সামনে যাইয়েন। আমি ওখানেই কথা বলবো।
।।
বিকেল বেলা!
আমি সবার উদ্দেশ্যে কথা বলার জন্য স্টেজে উঠলাম।
।।
আমি- আপনাদের অনেক ধন্যবাদ যে, আপনাদের সবার আন্তরিকতার জন্যই এতো তাড়াতাড়ি এই ফ্যাক্টরি হয়ে গেলো।
আমাদের কাছে অনেক দরখাস্ত এসেছে, কিন্তু এখানে যাদের যোগ্যতা আছে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে। হ্যাঁ তবে অনেকেই চাকুরী পাবেন,
কিন্তু এখন আমাদের এতো লোক প্রয়োজন না। তবে আমি আশাবাদী, আমার মতো অনেকেই যাদের যোগ্যতা আছে তারা
শুধু ঢাকা বা চট্টগ্রাম না নিজ নিজ শহরে ফ্যাক্টরি খুলবে। শুধু নিজে এগিয়ে গেলেই সেটাকে এগিয়ে যাওয়া বলে না।
সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় আসল আগানো। আমার জন্য দুয়া করবেন, আমরা সামনে যেন আরও লোকের চাকুরীর ব্যাবস্থা করতে পারি।
।।
আর এতো কিছু করতে পেরছি, আমার পরিরবারের সাপোর্টের জন্য। আমার শ্বশুর আর আমার বউ সব সময় আমার পাশে থেকেছে,
এজন্যই আমি করতে পেরেছি। আর এই ফ্যাক্টরির নাম এজন্য আমার বউয়ের নামে দিয়েছি।
।।
আমি এই কোম্পানির মালিক না। শুধু একজন দায়িত্বশীল কর্মচারী। আর আপনাদের কেউ সেই দায়িত্ব সহকারে কাজ করতে হবে।
এই ফ্যাক্টরি আমার না, আপনাদের সবার। আশা করবো আমাদের ভরসা টিকিয়ে রাখবেন।
।।
কয়েকদিনের মধ্যেই ফ্যাক্টরির কাজ শুরু হয়ে গেলো।
আমার প্রথম অর্ডারের কাজ ওখানেই করলাম। আর সাফল্য পেলাম।
এরপর আমার দ্বিতীয় ফ্যাক্টরি তৈরি করার কাজ ও শুরু করে দিলাম।
।।
৫ বছর পরের কথা!
আবার ঈদে আমরা বাড়ী যাচ্ছি।
কিন্তু প্রধান রাস্তা থেকে নামার সাথে সাথেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।
রাস্তার দু পাশে অগণিত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভাবলাম কি ব্যাপার আজ কোন মন্ত্রী আসবে নাকি?
আমি ডাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার খবর নাও তো।
ডাইভার- স্যার! আমি জানি, ওনারা আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে।
আমি- আমার জন্য কেন? আবার এতো মানুষ কে চাকুরী দিতে হবে নাকি?
ডাইভার- না স্যার! এরা প্রায় আপনার ফ্যাক্টরিতেই কাজ করে, কাল আমাকে একজন ফোন করেছিলো, আমি বলেছিলাম যে কাল সকালে আসবো।
স্যার, আপনি আমাদের এলাকার জন্য এতো কিছু করেছেন, তো গ্রামের মানুষ আপনার জন্য কিছু করবে না?
।।
সরমি- গাড়ী থেকে নামো, এরা তোমাকে সবাই কতো ভালোবাসে, চলো সামনের রাস্তা আমারা হেঁটেই বাড়ী যায়।
আমি- ঠিক আছে। আচ্ছা তুমি গাড়ী নিয়ে বাড়ী চলে যাও। বলো যে আমারা ১০ মিনিটের মধ্যে বাড়ী চলে আসবো
।।
সিমলা- বাবা! আমরা দাদু বাড়ী চলে এসেছি?
আমি- এই তো মা! ৫ মিনিট হাঁটলেই পোঁছে যাবে।
সিমলা- বাবা! আমাদের গাড়ী থাকতে আমরা কেন হেঁটে যাবো।
একজন বলল- দাদু! তোমাকে হাঁটতে হবে না আমি তোমাকে কোলে নিয়ে নিচ্ছি।
সিমলা- আপনি কে? কেন আপনার কোলে যাবো?
আমি- মা! এভাবে বলতে হয় না, এনারা তোমার দাদুর ভাই, তাই তোমার ও দাদু। যাও কোলে যাও।
সরমি- যাও মা! ওনার কোলে যাও। ইনারা আমাদের আত্মীয়।
।।
পরের দিন বিকেলে আমি একটা অনুষ্ঠানে গেলাম, আমি দর্শকের আসনেই বসলাম! একজন আমাকে দেখে বলল, ভাইয়া। আপনি নিলয় না?
আপনি এখানে কেন স্টেজে চলেন।
আমি- আরে আমি তো এমনি আসলাম। আর স্টেজে এতো গণ্যমান্য ব্যাক্তি আছে। আমি এখানেই থাকি।
।।
কিছুক্ষণ পর এমপি সাহেব আমার নাম ধরে ডাক দিলো, আমি কিছুটা চমকে গিয়েই তাদের ওখানে গেলাম। তারপর উনি বলল,
আজ এখানে আমি প্রধান অতিথি, কারণ আমি এই স্কুলের একটা নতুন বিল্ডিং তৈরি করছি, কিন্তু এটা আমি করছি না, বা আমার টাকাতেও করছি না।
এটা আমার দায়িত্ব, যা আমারা অনেক সময় পালন করি না। এই স্কুলের পুরাতন বিল্ডিং ভেঙ্গে নতুন করার পিছনে যার সব থেকে বড় অবদান
সে হচ্ছে আমাদের সবার পরিচিত আমার আদরের ছোট ভাই। নিলয়।
।।
আমারা বড় হয়ে অনেকে অনেকে বড় চাকুরী করি বা ব্যাবসা করি। ছোটতে আমারা ভাবি, এই করবো সেই করবো। আমার এলাকার এই উন্নতি করবো,
অনেক কিছু কিন্তু যখন আমাদের কাছে টাকা আসে, আমাদের কাছে ক্ষমতা আসে, আমরা সব ভুলে যায়।
।।
কিন্তু আমার ছোট ভাই, এসব ভুলে নি। আজ থেকে ৬ বছর আগে যখন সে আমাকে এই এলাকার কথা বলে আমি তেমন গুরুত্ব দেয় নি।
আমি না কেউ দেয় নি। কিন্তু উনি নিজের পরিশ্রমে নিজ দায়িত্ব নিয়ে সব করেছে, আজ তার ফ্যাক্টরিতে ২ হাজার শ্রমিক কাজ করে।
এতে যেমন নিজ এলাকার উন্নতি হয়েছে তেমন ঢাকার ওপর ও চাপ কমেছে।
।।
একজন এমপি হিসাবে আপনাদের সবার কাছে অনুরধ করছি, আপনাদের ঢাকায় বিভিন্ন ফ্যাক্টরি আছে বা ক্ষমতা আছে,
তারা ঢাকার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকাতেও ফ্যাক্টরি খুলেন। এতে এলাকার মানুষের ও উন্নতি হবে সাথে দেশের ও হবে।
।।
আর আজকের স্কুলের ভিত্তি স্থাপন আমি না আমার ছোট ভাই নিলয় করবে।
।।
আমি আর কি বলবো, আমি তো ভাষা হারিয়ে ফেললাম! সবাই আমাকে কতো ভালোবাসে। আর কতো সম্মান করে।
আর এসব কখনো শুধু টাকা দিয়ে কেনা যাবে না।
।।
বিঃ দ্রঃ উপরের গল্পটা একটা কাল্পনিক গল্প মাত্র! কিন্তু আমি লেখক হিসাবে পাঠকদের কিছু বুঝাতে চেয়েছি। আমারা যখন ছোট থাকি,
তখন আমরা অনেক ভালো কাজ করতে ইচ্ছা করে, যখন আমারা বেকার থাকি তখন বুঝি বেকার দের কতো কষ্ট। সবাই অনেক বড় হতে পারে না,
কিছু মানুষ হতে পারে। আর ঐ সব মানুষ চাইলে আরও কিছু মানুষকে জীবনের সঠিক পথ দেখাতে পারে। কিন্তু কে দেখাবে? কার এতো সময় আছে,
দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে এসব ব্যাপারে আমাদের রাজশাহীর মানুষ সব থেকে স্বার্থপর।
এরা কখন ও চাই না যে আমি যতো বড় হয়েছি, আমার ভাজিতা বা কোন প্রতিবেশী এর চাইতে বড় হোক। দুঃখ জনক হলেও এটা সত্যি।
আমি সব সময় শুনি, আমারদের এলাকার এই মানুষ সচিব, এই মানুষের ঢাকায় ৩ টা বাড়ী আছে! ইনি অনেক বড় ব্যাবসায়, কোটি কোটি টাকার মালিক।
কিন্তু বছর ৩ আগে একবার ওনার গার্মেন্টস থেকে কিছু গরীব মানুষের জন্য শুয়েটার এসেছিলো, এছাড়া উনি এই এলাকার জন্য কিছু করেছে
বলে আমার জানা নাই, অথচ শুনেছি উনি মানুষ হবার সময়, গ্রামের অনেক মানুষ তাদের সাহায্য করতো। যাক এসব কথা বলে হয়তো লাভ হবে না।
কারণ আমার কথা তাদের কানে পোঁছেবে না! চোখে কালো চশমা দেবার সাথে সাথে মনের মধ্যেও কালো চশমা লাগিয়ে দিয়েছে,
তারা নাকি আমাদের এলাকাই শিক্ষিত বেকার ছেলে দেখতে পায় না।
।।
কিছু দিন আগের কথা!
আমাদের হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকের সাথে আমি গল্প করছিলাম। উনি আমাকে একটা কথা শুনালো।
নাম রহামান(কাল্পনিক) এক সময় পি এস সি ডাইরেক্টর ছিলেন। কিছু দিন আগে পেনশানে এসেছে। ওনার বাবাও আমাদের
এলাকার সব থেকে নামি দামী বাক্তি ছিলেন, আল্লাহ্ ওনাকে জান্নাত বাসী করুক।
তো উনি রহামান সাহেব, আমাদের এলাকার মোড় থেকে বাড়ী আসবেন।
তো রিস্কা ওয়ালা বলেছে, কোথায় যাবেন?
রহমান সাহেব- মাস্টার পাড়া!
রিক্সা ওয়ালা- চলেন, ওখানে কি বেড়াতে এসেছেন?
রহমান সাহেব- না আমি, আফজাল রহমানের মেজ ছেলে।
রিক্সা ওয়ালা- ওহ, মাফ করবেন চিনতে পারি নি।
।।
রিক্সা ওয়ালা ওনাকে চিনতে পারলো না, চিনবে কীভাবে যতো দিন চাকুরী ছিল, সরকারী কালো গাড়ীতে বাড়ী এসেছে, আর ওভাবেই চলে গেছে,
।।
ওনারা নাকি আমাদের এলাকাই শিক্ষিত বেকার ছেলে খুঁজে পাই নি।
।।
সবাই এক না! ওনার এক ভাই এই এলাকার মানুষের জন্য অনেক করেছে। উনি ডাক্তার ছিলেন। ছোট বেলায় একবার গেছিলাম ওনার কাছে,
আমি আর আমার আব্বু। আরে রোগী দেখার ফিস কম না নেক, কিন্তু যে বন্ধু সুলভ আচারন করেছে এটাই মন ভরে গেছে।
উনি নাকি আমার বড় চাচার বন্ধু ছিলেন, যাবার সাথে সাথেই, আমার আব্বুকে বলল,
কিরে তুই কেমন আছিস? তুই বদ্রুর ছোট ভাই না? তোর আর ছোট আছে?
আব্বু বলল, আমি সব ছোট।
তোর কয় ছেলে মেয়ে।
আব্বু- ভাই, এই একটাই ছেলে আর একটা মেয়ে।
।।
এই যে এই আন্তরিকতা টায় অনেক। পরের বার যখন টেস্টএর কাগজ নিয়ে গেলাম, ওনার পিয়ন কে বলা মাত্র উনি ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেন…
।।
আজ মরলে টাকা সাথে যাবে না। যাবে মানুষের সাথে করা ব্যাবহার, আল্লাহ্ সবাইকে টাকা দেয় না, আবার যাদের দেয় সেটা কোন পুরষ্কার না
এটা একটা পরীক্ষা।
।।
যাক আবেগের বশে অনেক কথা বলে ফেললাম, কিন্তু মাঝে মাঝে এসব দেখে লজ্জা লাগে যে এটা বলতে আমার বাড়ী রাজশাহী।
…………………………………..সমাপ্ত…………………………………………..