হঠাৎ ফিরে পাওয়া

হঠাৎ ফিরে পাওয়া

সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি মোবাইল কাপতেছে।ভাইব্রেশনে রাখা ছিলো।হাতে নেওয়ার আগেই থেমে গেলো কাপাকাপি।মোবাইলের দিকে তাকাতেই দেখি ২৩ টা মিস কল এসেছে।আজব’তো এমন কে আছে এতোবার মিস কল দেওয়ার।আমার লাইফে তো নেই।তবুও নাম্বার চেক করাতে দেখলাম অজানা নাম্বার।অন্যকিছু না ভেবেই ফোন ব্যাক করলাম। ফোন অপাশ থেকে ধরা মাত্রই আমার নাম জিজ্ঞাসা করলোঃ

-আপনার নামটা কি জানতে পারি?(নীলা)
-হ্যা,অবশ্যই জানতে পারেন,,,,আমার নাম শাওন!(আমি) এরপর কি জেনো হলো ফোনের মাঝেই কাদতে শুরু করলো আর বললোঃ

-আমি নীলা আমাকে চিনতে পেরেছো?
-কোন নীলা,,,আমি বর্তমানে কোনো নীলা নামে কোনো মেয়েকে তো চিনি না,,,তবে আগে চিনতাম,,,ঠিক দু’বছর আগে,,,তাও সে আমাকে কিছু না বলে চলে গেছে অনেক দূরে!
-হ্যা,,,আমি সেই দূরে চলে যাওয়া নীলাই বলছি! আমার চোখদিয়েও অশ্রু ঝরতে শুরু করলো এই কথা শুনে।তখন বললামঃ

-তুমি কেমন আছো,,,আর এতদিন কোথায় ছিলে,,,আমাকে ছাড়া কীভাবে থাকতে পারলে এতদিন (এরকম হাজারো প্রশ্ন করতে থাকলা)! সে উত্তরে বললোঃ

-আমি ইচ্ছে করে করিনি কিছুই,,,আমার বাবা আমাদের সম্পর্কের কথা শুনে দূরে নিয়ে এসেছিলো,,,আমার মোবাইলটাও বাবা নিয়ে গেছিলো,,,আর আমার বিয়েও ঠিক করেছিলো! এরকম অনেক উত্তর দিলো নীলা।আমি তার কথা শেষে বললামঃ

-তুমি আজ কি করে কার মোবাইল দিয়ে মিসড কল দিলে এতগুলো!
-আমার বাবার মোবাইল দিয়েই,,,আমার বাবা তোমার সাথে দেখা করতে চায় এখন,,,তুমি আসতে পারবে নাহ্!
– হ্যা,,,আসতে পারবো,,,ঠিকানা টা দাও আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি!
-ঠিক আছে,,,আমি sms এ ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি,,,তুমি তারাতারি এসো!

এই বলে ফোনটা কেটে দিলো।কিছুক্ষণ পর ঠিকানা টা পাঠিয়ে দিলো।আমি তারাহুরা করে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম সেই ঠিকানার উদ্দেশ্যে।

নীলা হচ্ছে আমার জীবনের প্রথম ও শেষ প্রেম।নীলা আমাকে খুব ভালোবাসতো আর আমিও বাসতাম।আমাদের প্রেমকাহিনী চলছিলো ভালোই।তখন অনার্স ও কমপ্লিট করতে পারিনী।হঠাৎ করেই চলে গেলো আর কোনো দিন কথা বা দেখা হয়নি।আমি যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু নীলাকে আর খুজে পায়নি।আমি ভেবেছিলাম তখন গরীব বলে হয়ত আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।তাছাড়া এই কারণেও কোনো দিন যাওয়া সম্ভব না।কারণ ও আমার সব কিছুতেই খুশি ছিলো। এভাবে চলে গেলো।এজন্য অামি অনেক হতাশায় ভুগতেছিলাম। আর এখন ভালো চাকরী হয়েছে।বড় একটা বাড়ী করেছি আর গাড়ীও আছে।কিন্তু যাকে ভালোবাসি সেই নেই।কিন্তু আজ সকালে তারই ফোন পেলাম। কিছুক্ষণ পর পৌছে গেলাম নীলার বাসায়।গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে একসাথে।ওর বাবা আমাকে দেখে উঠে এসে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো।আমি তাকে শান্ত করে বসালাম সোফায়।বসা মাত্রই বলা শুরু করলোঃ

-বাবা,,,আমি দু’বছর আগে আমার মেয়েকে দূ’রে সরিয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম ওর।ভালোই ছিলো মেয়েটা।কিন্তু কিছুদিন আগে ওর স্বামী একটা কার এক্সিডেন্টে মারা যায়।তারপর মেয়েটা হতাশায় ভুগতে লাগলো।খাওয়া দাওয়া সব বন্ধই করে দিছে।মেয়েটা দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে।না পেরে ওকে দিয়ে তোমাকে ডাকালাম।ও আমাকে বলে ছিলো তুমি ওকে ভালোবাসো।তাই আর কি !

আমি সব শুনে বললামঃ

-হ্যা,,,,আংকেল,,,আমি ওকে আগেও ভালোবাসতাম,এখনো বাসি আর ভবিষ্যতেও বাসবো,,,এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই! ওর বাবা আমার হাতে ধরে বললোঃ

-বাবা তুমি আমার এই অসহায় মেয়েটাকে গ্রহণ করবে কি না জানি না,,,কিন্তু এভাবে থাকলে মেয়েটা একদম মরে যাবে!
-নীলাকে ডাক দিন,,,ওর সাথে কিছু কথা বলবো!

তারপর ডাকতে পাঠালো নীলাকে।আমি ভাবতে লাগলাম ওকে আমাকে গ্রহণ করবে কি না জানি না।কিন্তু আমি ওকে ভালোবাসী আমি যা করবো ওর ভালোর জন্যই করবো! কিছুক্ষণ পর নীলা আসলো।মেয়েটাকে দেখে একটু ভয়ই পেলাম।আগের থেকে কেমন শুকিয়ে গেছে।তখন আমি নীলার বাবাকে বললামঃ

-আংকেল আপনি কি করবেন এ ব্যাপারে জানি না।কিন্তু আমি নীলাকে ভালোবাসী।তাছাড়া আমার বাবা মা কেউ নেই।আপনারাই তাদের সমান।তাই বলছি আমি নীলাকে বিয়ে করতে চায় আপনাদের যদি কোনো আপত্তি না থাকে!

এই কথা শুনে নীলার পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।নীলার বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে আবার কাদতে লাগলো।আমি তার কান্না আবার থামিয়ে দিলাম কোনো রকমে।নীলাও এ কথা শুনে খুব খুশী হলো আর লজ্জাও পেলো। আমাদের বিয়ে হলো ধুমধাম করেই।বাসর ঘরে যাবার পর দেখি নীলা কাদতেছে।আমি জিজ্ঞাসা করাতে বললোঃ

-তুমি আমাকে এতকিছুর পর ও গ্রহণ করবে এটা আমি ভাবিনি,,,আনি ঠিক করে নিয়ে ছিলাম,,,যদি তুমি আমাকে গ্রহণ না করো আমি আত্মহত্যা করবো!

-ছি ছি,,,একথা মুখেও আনবেনা কখনো,,,তোমার বাবার কারণে দূরে চলে গিয়েছিলে আবার তার কারণেই ফিরে এসেছো আমার জীবনে,,,আর তুমি চলে যাওয়ার পড়েও কখনো কোনো মেয়ের দিকে ভালোভাবে তাকাইনি,,,কারণ আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি, বাসবো আর বেসে যাবো,,,তুমি আমার জীবনে প্রথম নারী আর তুমিই ছিলে শেষ!

-তুমি আমাকে এতটা ভালোবাসো এখনো। এই বলা মাত্রই নীলা আমাকে জড়িয়ে ধরলো!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত