মা যখন প্রথম আবীর কে বললো,মিলির বিয়েতে যাওয়ার কথা,প্রথমে রাজি হচ্ছিল না ও।পরে মা অনেক করে অনুরোধ করায় আবীর যেতে রাজী হলো। তাছাড়া এখন ওর মাস্টার্স এর এক্সাম শেষ। হাতে অফুরন্ত সময়।তাই মনে হলো মামাতো বোনের বিয়ে টা খেয়েই আসা যাক।ওর মায়েরও যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।কিন্তু কিছুদিন থেকেই তার শরীর টা ভাল যাচ্ছে না।তাই আর যেতে পারলেন না।
আবীর ট্রেনের টিকিট কেটে রওনা হয়ে গেল। অনেকদিন বাদে মফস্বলে পা দিয়ে আবীরের বেশ লাগছিল।তার উপর মামা মামী এতদিন বাদে আবীর কে পেয়ে দারুণ খুশি হয়ে উঠলেন।আর বিয়ে বাড়ি তে প্রচুর লোকজনের আনাগোনা। তাদের অনেকেই আবীরের ই বয়সী।তাই ও বেশ বুঝতে পারলো এই কয়েকটা দিন ওর বেশ কাটবে।
মামাতো খালাতো ভাই বোন মিলে তা প্রায় জনা বিশেকের একটা দল হয়ে গেল।ওদের বেশিরভাগের সাথেই তেমন একটা যাওয়া আসা হয় না।প্রথম প্রথম একটু দূরত্ব থাকলেও অচিরেই সবার সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেল। মিলির ছোট বোন বেলী।কলেজে পড়ে।তার কাছে আবীর ভাই মানে একটা বিস্ময়ের নাম।ঢাকায় থাকে,এত্ত এত্ত পড়াশোনা করেছে,দেখতেও খুব সুন্দর। ও শুধু আবীরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।আর কি ভাবে আবীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে তার চেষ্টা করে।
সবার সাথে দিনগুলি ভালই কাটছিল। এর ভেতর মিলির গায়ে হলুদের দিন প্রথম একটা ধাক্কা খেলো আবীর।মিলির এক বান্ধবী যুথি কে দেখে।সবার ভেতর থেকেও মেয়ে টা যেন একটু চুপচাপ। তেমন হইচই করে না,বেশি কথা বলে না।তবে অনেক গুণের।মিলি কে নিজের হাতে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো যুথি।হলুদের অনুষ্ঠানে একটা গানের জলসার মত হলো।সেটার ও প্রধান আয়োজক ছিল যুথি।সে নিজেও খুব সুন্দর গান করে।আবীর শহুরে ছেলে হলেও মফস্বলের এই মেয়ে টার ভেতর একটা ঝকঝকে স্মার্টনেস দেখতে পেলো।যেটায় কোন বাহুল্য নেই।অথচ একটা বেশ স্নিগ্ধ ব্যপার আছে।ও অনেকক্ষণ থেকেই চেষ্টা করছিল যুথির সাথে একটু কথা বলার।আর বিষয় টা বেলীর চোখ এড়ালো না।কারণ বেলী তো আবীরকে চোখে চোখেই রাখে।ওর মেজাজ খুব বিগড়ে গেল।অকারণে কয়েকবার যুথির সাথে খারাপ ব্যবহার ও করে ফেললো।
গায়ে হলুদের পরদিন বিকালবেলা অনেকে মিলে নদীর ধারে বেড়াতে বের হলো।মিলি অনেক বলে কয়ে যুথি কেও নিয়ে এলো।এর পেছনে অবশ্য আবীরের ই হাত ছিল।আবীর একটু আভাস দিয়েছে মিলি কে।বেলী ও সাথে ছিল।ও ইচ্ছা করে করে যুথি কে এমন এমন কথা শুনাচ্ছিল যাতে আবীরের সামনে যুথিকে লজ্জায় ফেলতে পারে।এরপর যখন বললো–যুথি’পা তোমার হবু হুজুর বর কবে আসবে?আবীর শুনে বেশ অবাক হলো।আর বেলীর প্রশ্ন শুনে যুথিও একটু হকচকিয়ে গেলেও সামলে নিয়ে বললো–তার ব্যপারে তোর এত আগ্রহ কেন,বেলী?তার যখন সময় হবে,আসবে।
আবীর খবর নিয়ে জানলো,যুথির বড় ভাই তাবলীগ করে।হুজুর টাইপ।আর তার ই কোন বন্ধুর সাথে যুথির বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।মিলির বিয়ে হয়ে গেল এর ভেতর।পরদিন বউভাত।আর তারপর দিন ই চলে আসবে আবীর।এই কয়েকদিনে যুথি বেশ বুঝতে পেরেছে,ওকে একটু আলাদা নজরে দেখছে আবীর।এই তো বিয়ের দিন,নানা রকম অযুহাতে যুথির পাশে পাশেই থাকছিল ও।তাছাড়া টুকরো টুকরো কথায় ও যুথিকে নানা রকম আভাস দিচ্ছিলো।
এইতো সেদিন যখন গানের কলি খেলা হচ্ছিল তখন ও যুথি খেয়াল করেছে,ওকে উদ্দেশ্য করেই আবীর গান গাচ্ছিল।আবার বিয়ের দিন ও কি খাচ্ছে না খাচ্ছে সেই খেয়াল নিচ্ছিল বারবার। আর সবাই চলে যাবার পর একটু নিরিবিলি হলে ওর কানের কাছে মুখ এনে তো বলেই দিলো,তোমার এত্ত যত্ন করলাম আমাকে তো কিছুই দিলে না?!ও যখন জানতে চাইলো কি দেবে;একটা ফাজিল টাইপ হাসি দিয়ে বললো,সেটা না হয় তোলা রইলো। সময় এলে চেয়ে নেবো!
অনেক ভেবে চিন্তে আবীর যেদিন চলে আসবে,তার আগের রাতে যুথির হাতে একটা চিঠি গুজে দিয়ে এলো।তাতে লেখা ছিল,যুথি চাইলে আবীর পারিবারিক ভাবে বিয়ের কথা বলবে।যদিও আবীর এখন তেমন কিছু করে না,কিন্তু তাদের পারিবারিক অবস্থা ভাল।যুথি কে সে সচ্ছলতার সাথেই রাখতে পারবে।
আবীর যে ঘরটায় ছিল,তার বাইরের জানালায় টোকা দিলো কেউ।তখন অনেক রাত।বউভাতের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমুচ্ছে।আবীর ও ঘুমিয়ে পড়েছিল।জানালা খুলে দেখলো, একটা চাদরে মুখ ঢেকে যুথি দাঁড়িয়ে আছে।ও তাড়াতাড়ি দরজা খুললো।যুথি ঘরে ঢুকেই ওকে বললো,আমার ভাই এসব শুনলে আমাকে মেরে ফেলবে।কিন্তু আমি অই লোক কে বিয়ে করতে পারবো না।আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন?
প্রথমে কি বলবে ভেবে পেলো না আবীর।ওর ঘরেও ওর আরো দুই তিন জন কাজিন ঘুমাচ্ছে।এরপর হুট করেই কি যেন ভাবলো।ব্যাগের ভেতর টুকিটাকি যা হাতের কাছে পেলো গুছিয়ে নিয়ে যুথির হাত ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো।যুথি কাপতে কাপতেই হাত টা ধরলো।বেরয়ে পড়লো দুজন।আবীর যখন বললো–একটা অচেনা ছেলের সাথে এভাবে চলে যেতে ভয় করছে না,তোমার?অন্ধকারে ও যেন হাসতে দেখলো যুথিকে।যুথি বললো–আপনাকে ভয় পাবো?ভাল বেসে ফেলেছি যে!আবীর আস্তে করে যুথির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো–ভালবাসলে তুমি করে বলতে হয়,ম্যাডাম।বুঝলে?আর হ্যা এখন কিন্তু আমার সেই পাওনা টা চাই।এই বলে ঠোঁট বাড়ালে যুথি কপট কিল দিতে দিতে বললো–আপ্নি একটা অসভ্য!!