ব্যস্ততার কারণে তেমন একটা ফেসবুকে সময় দিতে পারছি না। বন্ধুর কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ নিতে ফেসবুকে ঢুকেছিলাম।
কাজ শেষে তাড়াতাড়ি ডাটা কানেকশন অফ করতে যাচ্ছিলাম, যেন “আস্থা ” পাগলির চোখে না পড়ি। কিন্তু কথায় আছে যেখানে
বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। আমারও তাই ই হলো। সবেমাত্র ডাটা কানেকশন বাটনে চাপ দিতে যাব তখনই টং শব্দে ম্যাসেঞ্জার
আর্তনাদ করে উঠলো। চোখ বুলিয়েই দেখি আস্থা ম্যাসেজ করেছে। এদিকে ফোনের চার্জের অবস্থাটাও বেগতিক 12% এ নেমে এসেছে,
তাই অগত্যা ফোনকে চার্জে ঢুকিয়েই আস্থার ম্যাসেজ সীন করতে হলো। চ্যাট বক্সের ওপাশ থেকে রাগন্বিত হয়ে ম্যাসেজ লিখেছে,
– ঐ একটা দিমু কানের নিচে।
.
– কেন কেন?
.
– তোমার খোঁজখবর নাই ক্যান?
.
– নাহ্ মানে একটু ব্যস্ত ছিলাম আরকি..
.
-গুষ্টি কিলাই তোমার ব্যস্ততার।
.
আমি কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে বললাম,
– হেই হুতুমপেঁচী চলো দেখা করি।
.
– এই মিয়া তুমি তো চরম ধান্ধাবাজ।
.
– কেন শুনি???? তোমার সাথে এতোদিনের পরিচয়, কিন্তু তুমি না দিলে তোমার নাম্বার, না দিলে তোমার একটা ছবি।
.
-অই মিয়া চুপ। ধান্ধা বাজি বন্ধ করো।
.
– তুমি একটা সেলফিস।
.
– ওকে বাই।
.
– আচ্ছা বাই।
.
কথা হচ্ছিল আস্থার সাথে। মেয়েটার সাথে পরিচয় ফেসবুকে। ফেসবুকেই গড়ে উঠেছে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের বয়স প্রায় দেড় বছর।
কিন্তু এখনও তাকে দেখিনি কিংবা তার কন্ঠ পর্যন্ত শোনা হয়নি। শুধু বন্ধুত্ব বললে ভুল হবে, তাকে পছন্দ করিও বটে।
সেও যে আমাকে পছন্দ করে, তার প্রমাণ সময় অসময়ের খুনসুটি গুলো। এরপর থেকে শুরু আজ সেই পরিচয় এই পর্যন্ত এসে ভিড়েছি।
জানি না এতটুকু সময়ের মধ্যে ওকে ভালবেসে ফেলেছি কিনা, কিন্তু ওকে যে খুব মিস করি কিংবা পছন্দ করি এটা একদম ঠিক।
•
দুইদিন পরে দেখি ও নিজেই আমাকে মেসেজ দিছেঃ
-কবে, কখন, কোথায় দেখা করবা???
.
– তুমি বলো কোথায় আসবা?
.
-বিকেল ৫টায় বিনোদিয়া পার্কে আসতে পারবা…???
.
–ওখানে তো সব জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকে।
.
– আরে বুদ্ধু তুমি কি একাএকা যাচ্ছো নাকি, আমি আছি না। হিহিহি…
.
–ওরে বাব্বা, তাই নাকি ???
.
–হু, আসার সময় হিমুর মত একটা হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে আসবা, আর আমি রূপার মতো নীল শাড়ি পড়বো।
.
–কিন্তু আমার তো হলুদ পাঞ্জাবি নাই।
.
— ঘোড়ার ডিম আছে? থাকলে সেটা পড়ে আসো।
.
— আহা রাগো কেন? না থাকলে কিভাবে পড়বো।
.
— আমি কিছু জানিনা, পড়তে বলেছি তাই পড়বা।
.
–আমার পছন্দ হয়, লাল পড়ে আসি???
.
–আরে গাধা, তুমি কি এখনও ছোট আছ যে লাল পড়বা, মেজাজটাই খারাপ করে দেয়।
.
— আচ্ছা ওকে ওকে। তুমি কি পড়ে আসবে? তোমাকে তোকে দেখিনি, চিনবো কিভাবে???
.
–চেনা লাগবে না। ওকে বাই।
.
–ধুর মিয়া।
•
এই বলে অফলাইনে চলে গেল। মেজাজটা যদিও বিগরে যাচ্ছিল তবুও কিছু করার ছিল না।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা হলুদ পাঞ্জাবির ব্যবস্থা করলাম।
পরদিন বিকালে পাঞ্জাবি পড়ে, স্বপ্নকন্যার জন্য বের হলাম, যাওয়ার সময় প্রাণপ্রিয় বন্ধু সবুজকে ফোন দিয়ে বললাম,
বিপদে পরলে উদ্ধার করে আনিস।
.
এক গুচ্ছ গোলাপ হাতে নিয়ে একটা বেঞ্চে বসে রইলাম, কিন্তু সেই গুন্ডীর আসার কোন খবর নাই।
মেজাজ এমনিতেই খারাপ তারপর বল্লো না কি পড়ে আসবে। মনে মনে ভাবতে লাগলাম হিন্দি ফিল্মের নায়কের মতো করে ওকে প্রপোজ করবো।
অনেকক্ষণ যাবত ওখানে বসে থাকার পরও ওখানে কোনও মেয়েকে দেখতে না পেয়ে ভাবলাম এই সুযোগে একটা সিগারেট ধরানো যাক।
পাশেই একটা টং দোকান থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরাতে যাচ্ছিলাম।
হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা হাত আমার কাঁধ ছুঁয়েছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েই টাসকি খেলাম।
নীল শাড়িতে মোড়া একটা অপ্সরী আমার পাশে দাড়িয়ে আছে। আমি একটানা ৩০ সেকেন্ড হা করে চেয়ে রইলাম।
মেয়েটা আমার দৃষ্টি ভঙ্গ করে দিয়ে বললো, ” কি ব্যপার লালনের প্রতিবেশী সিগারেট কি একাএকাই খাবেন? নাকি আমাকেও দেবেন? ”
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে ইনিই সেই আস্থা গুন্ডী। আমি তড়িঘড়ি করে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে
আমতা আমতা করে বললাম, ” নাহ্ মানে একটু….”
– থাক, আর সাধু সাজতে হবে না। চলো ওখানে গিয়ে বসি।
.
আমরা একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। দেরি না করে হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপগুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে বললাম,
Will you marry me???
আস্থা আমার দিকে খানিকক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে চোখ বড় বড় করে বললো,
– আজব তো, এসব কি? তোমাকে কি এসব ফালতু কাজের জন্যই এখানে ডেকেছি?
হঠাৎই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি লজ্জ্বিত কন্ঠে বললাম, ” তায়লে কি আমি চলে যাব? ”
মেয়েটা বললো, ” হুম, যেতে পারো। ”
আমি মন খারাপ করে চলে আসছিলাম। খেয়াল করলাম একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। আমি হাত ইশারা করে হাই দিলাম।
মেয়েটাও হাই দিলো। পরক্ষণেই খেয়াল করলাম আস্থা আমার পিঠের উপরে দুমদুম করে কিল ঘুষি মারা শুরু করে দিয়েছে।
আমি বললাম, ” মারছো কেন? ”
আস্থা আমার পাঞ্জাবির কলার ধরে বললো, ” শালা তুই মেয়েদের দিকে তাকালি কেন? ”
আমি আস্থার হাত ধরে বললাম, ” বাহ্ রে, আমার বুঝি প্রেম করতে ইচ্ছে করে না?”
আস্থা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, ” আমার হাত ছেড়ে দিয়ে এখান থেকে ভাগ। ”
আমি হাত ছেড়ে দিয়ে রেগেমেগে চলে আসছিলাম। আস্থা পিছন থেকে চেঁচিয়ে বললো,
“ভালোবাসি”
.
আমি বললাম,
” কাকে?”
.
আস্থা বললো,
“আমার ওই কাঠবিড়ালিটা।”
.
আমি বললাম,
“আমিও ”
.
আস্থা বললো,
” আমিও কি? ”
.
আমি বললাম,
” ভালোবাসি ”
.
আস্থা বললো,
” কাকে? ”
.
আমি বললাম,
“আমার ওই হুতুমপেঁচীকে।