রোজ রাতে আমার স্বামী আমাকে পাশে রেখেই মাইসার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতো।আর আমি খাটের অন্য পাশে ফিরে নীরবে চোখের জল ফেলতাম।
আমি মিলা(ছদ্মনাম)।গ্রামের সহজ সরল একটা মেয়ে।রাহাতের মা ও আমার মা দুসম্পর্কের খালাতো বোন।আমি আর রাহাত যখন ছোট ছিলাম তখন রাহাতের মা আমার মাকে বলে ছিলেন,আমাকে উনার ছেলের বউ বানাবেন।বছর খানেক আগে রাহাতের মা অসুস্থ হয়ে পরেন।রিপোর্টে উনার ক্যান্সার ধরা পরে।এরপরে খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে আমার আর রাহাতের বিয়ে হয়ে যাই।রাহাত ওর মাকে নিয়ে ঢাকায় থাকে।বিয়ের পরেরদিন আমাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়।আমার শাশুড়ির রাহাত ছাড়া কোন সন্তান ছিলো না।এত বড় বাসায় শুধু আমরা তিনজন মানুষ থাকতাম। বিয়ের রাতে রাহাত বলেছিলো,
– মায়ের অনুরোধে আপনাকে বিয়ে করেছি।আমার কোন মত ছিলো না এই বিয়েতে।আমি শুধু মাইসাকে ভালোবাসি।ওর জায়গায় আর কাউকে বসাতে পারবো না।এই বাড়ীতে বউ হিসেবে এসেছেন যখন এখানেই থাকেন।কিন্তু এরচেয়ে বেশী কিছু আমার কাছে আশা করবেন না।মা যতোদিন বেঁচে আছে আমরা মায়ের সামনে স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করে যাবো।যাতে মা কিছু বুঝতে না পারে।কিন্তু রুমের ভিতর আমরা আলাদা থাকবো।পরে অাপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
আমার শাশুড়ি ক্যান্সারে আক্রান্ত।মাত্র তিন মাস সময় দিয়েছেন ডাক্তার।মরার আগে ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে চেয়ে ছিলেন।তাই রাহাত মায়ের কথা রাখতে বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করে।কিন্তু বিয়েতে ওর নিজের কোন মত ছিলো না।
মাইসার সাথে রাহাতের পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক।আমাকে বিয়ে করার পরেও রাহাত মাইসার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলো।প্রায় রাতে রাহাত দেরীতে বাড়ি ফিরতো।যতোক্ষণ বাসায় থাকতো মোবাইলে কথা বলা মেসেজ আদান প্রদানে ব্যস্ত থাকতো।তবুও কিছু বলতাম না।আমি নামে মাত্র স্ত্রী ছিলাম।স্বামীর কোন দায়িত্ব পালন করেনি রাহাত।প্রথম প্রথম আমার খুব খারাপ লাগতো।কিন্তু শেষের দিকে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে বলে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতাম।
আমার শাশুড়ি অনেক পরহেজগার মহিলা ছিলেন।নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন।ক্যান্সার রোগী হয়েও উনি নামাজ বাদ দিতেন না।উনার কাছে অনেক ইসলামিক বই ছিলো।আমি অবসর সময়ে বিভিন্ন ইসলামিক বই গুলো পড়তাম।একদিন তাহাজ্জুদ নামাজের ফযিলত নিয়ে একটা লিখা পড়লাম।
সেখানে লেখা ছিলো- হাদীসে বর্ণিত আছেঃ- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ- আল্লাহ তাআলা রাতে প্রথম আসমানে আসেন, যখন রাতের তিনভাগের একভাগ বাকি থাকে (অন্য এক হাদীসে আছে যখন রাতের তিনভাগের একভাগ অতিবাহিত হয়) এসে বলতে থাকেন, কে আছো; আমার কাছে দোয়া করবে, আমি তার দোয়া কবুল করবো। কে আছো; আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দিবো। কে আছো; আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। এক হাদীসে আছে ফজর পর্যন্ত এভাবে আল্লাহ তাআলা বলতে থাকেন। [বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৬৯৪০, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-১২৬১,আবু দাউদ শরীফ-১১২০, তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-৩৪২০]
তখন থেকে প্রতিদিন রাতে আমি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তাম।অনেক সময় আমি রুমে মাঝ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তাম।আর রাহাত মাইসার সাথে ফোনে কথা বলতো।তবুও ওকে কিছু বলতাম না।তাহাজ্জুদ নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে কান্না করতাম।আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে বলতাম,যেনো আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।নিয়ৎ করে রোজা রাখতাম। রাহাতের দেরী করে বাড়ি ফেরা,ওর আচার আচরণ দেখে আমার শাশুড়ি এক সময় বুঝে ফেলেন, আমাদের মাঝে স্বামী স্ত্রীর কোন সম্পর্ক নেই।একদিন শাশুড়ি আম্মার মাথা আছড়াচ্ছি। উনি আমাকে বলেন,
– মারে তোর জন্য আমার বড় চিন্তা হয়।
– কিসের চিন্তা মা?
– আমার সময় তো ফুরিয়ে আসছে।তোকে সুখী দেখে যেতে পারলাম না।
– এভাবে কেন বলছেন মা?আল্লাহর রহমতে আমি অনেক সুখে আছি।
– তুই না বললেও আমি সব বুঝিরে মা।
আমার ছেলেটা তোকে তোর প্রাপ্য হক দিচ্ছে না।তোর মা যদি এসব জানতে পারে,তোর মাকে আমি কি জবাব দিবো।আমার ছেলের জন্য তোর মা আর আমার এতোদিনের সুসম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে।আমি মরে গেলেও যে শান্তি পাবো না।
– আল্লাহ ভরসা মা।সব ঠিক হয়ে যাবে।আল্লাহ হয়তো আমার কাছ থেকে পরীক্ষা নিচ্ছেন।দেখবেন আল্লাহ একদিন সব ঠিক করে দিবেন। পবিত্র কোরআনে আছে, নিশ্চয় আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দিবেন।
– সূরা তালাক-৭ আমিও একদিন সুখী হব মা।ইনশাল্লাহ্। শাড়ীর আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে শাশুড়ি বললেন,
– আল্লাহ যেনো আমার মেয়েটাকে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল দেন।
– আমিন।
একদিন ওয়াশরুমে আমার শাশুড়ি আছাড় খেয়ে ফ্লোরে পরে যান।কোমরে আঘাত পান।উঠা বসা করার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেন।মলমূত্রত্যাগ সব কিছু বিছানায় করতেন।রাহাত ওর মায়ের সেবা করার জন্য কাজের মেয়ে রাখতে চেয়ে ছিলেন।কিন্তু আমি মানা করে দেই।নিজ হাতে ছোট বাচ্চার মতো শাশুড়িকে লালন পালন করতাম।বিছানায় পায়খানা প্রস্রাব করতেন।নিজ হাতে পরিষ্কার করতাম।আমার হাতে খাবার খেতে চাইতেন।আমি শাশুড়িকে ছোট বাচ্চার মতো নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিতাম।রাতে শাশুড়ির সাথেই ঘুমাতাম।একদিন সকালের নামাজ পড়ে চা বানিয়ে শাশুড়ি আম্মাকে ডাকছি।কিন্তু উনার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে দৌড়ে গিয়ে রাহাতকে ডাক দিলাম।রাহাত শাশুড়িকে দেখে বললো,
– মা বেঁচে নেই।
সেদিন মনে হয়ে ছিলো আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কিছু হারিয়ে ফেলেছে।দু’চোখের পানি অবিরাম ঝরে ছিলো সেদিন।শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর আমি একদম একা হয়ে যাই।এই একটা মাত্র মানুষ ছিলো,যার সাথে আমি বাসায় সারাদিন সময় কাটাতাম।আমার সুখ দুঃখের সাথী ছিলেন।আমার চোখ দেখে সব বুঝতে পারতেন।বিয়ের পর আমাকে এতোটাই আগলিয়ে রেখেছিলেন যে,নিজের মাকে ছেড়ে আসার পরেও মায়ের মমতার অভাববোধ করিনি।সেই মানুষটা আমাকে একা করে ওপারে চলে গেলো।
শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর রাহাত আরও উগ্র হয়ে যায়।বন্ধু বান্ধব নিয়ে বাসায় আড্ডা দিতো।তাস খেলা খেলতো।ফুল ভলিউমে গান বাজাতো বাসায়।আর আমি শাশুড়ির রুমের দরজা বেঁধে কান্না করতাম। একদিন রাহাত রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে আমাকে বললো,
– মা তো আর বেঁচে নেই।চল্লিশ দিন পার হয়ে যাক।আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।আপনি তো আমার আর মাইসা সম্পর্কে সব জানেন।আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে মাইসাকে বিয়ে করতে হবে।ও বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে।
– আমাকে ডিভোর্স যখন দিবেন মাইসাকে বিয়ে করলেন না কেনো? (আমার মুখে এমন কথা শুনে রাহাত চমকে উঠলো।এর আগে রাহাতের সাথে মাইসাকে নিয়ে কোন প্রতিবাদ করিনি।)
– মাইসার কথা মাকে বলে ছিলাম।বাসায়ও এনে ছিলাম।ও আধুনিক টাইপের চলাফেরা করতো।মাইসার চলাফেরা মা পছন্দ করতো না।তাছাড়া আপনার মাকে দেয়া ওয়াদা রাখতে মা আমার অমতে আপনাকে এই বাসায় বউ করে আনেন।
– ঠিক আছে কখন যেতে হবে আমাকে বলবেন।
আমি এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো। শাশুড়ি মায়ের জন্য খুব মন জ্বলছে।উনার রুমে গেলাম।ফার্নিচার গুলোয় ধুলো জমেছে।ফার্নিচার মুছে বিছানার চাদর ঠিক করতে একটা ছোট্ট প্যাকেট ফ্লোরে পরে গেছে।প্যাকেটা খুলে দেখলাম একটা চিঠি ও একটা চাবি।চিঠিটা পড়া শুরু করালাম।
প্রিয় বউমা,
আমার ভালোবাসা নিস।এই চিঠি তুই যখন পড়বি তখন আমি তোর কাছ থেকে অনেক দূরে থাকবো।চিঠিতে
বউমা ডেকেছি বলে অবাক হচ্ছিস?তুই তো আমার সাথে রাগ করতি,তোকে বউমা বলে ডাকতাম না তাই।এবার খুশি তো?তোকে আমি এই ঘরে বউ করে আনলেও মেয়ের চোখে দেখেছি সবসময়।
মারে তুই রোজ রাত জেগে নামাজ পড়তি,কোরআন তেলাওয়াত করতি।আমি দরজায় উঁকি মেরে তোকে দেখতাম।বিশ্বাস কর মা তোর কান্না দেখে আমার বুক ফেটে যেতো।একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কান্না করতি।কখনো মুখ ফুটে আমার ছেলেটার সাথে কোন কথা বলতি না।তোকে পাশে রেখে আমার ছেলে অন্য মেয়ের সাথে ফোনে ব্যস্ত থাকতো।তাও তুই প্রতিবাদ করিসনি।
তোর সুখ আমি দেখে যেতে পারলাম নারে মা।মরেও শান্তি পাবো না।আমি তোর জন্য অনেক দোয়া করছি,
তুই একদিন অনেক সুখী হবি। দেখিস তোর জীবনে কোন দুঃখ থাকবে না।তুই আমাকে বলেছিলি,আল্লাহ হয়তো তোর থেকে পরীক্ষা নিচ্ছে। দেখবি আল্লাহ তোকে এই পরীক্ষায়য় একদিন ভালো ফলাফল দিবেন।তুই যেখানেই থাকিস এই বুড়ি মায়ের দোয়া তোর সাথেই থাকবে। আমার আলমারিতে একটা কাঠের বক্স আছে। বক্সের তালার চাবি চিঠির সাথে যে চাবিটা পেয়েছিস ওটাই।বক্সের জিনিস গুলো তোর বিপদে আপদে কাজে লাগবে। ভালো থাকিস মা।পারলে আমার ছেলেটাকে ক্ষমা করে দিস।
ইতি,
তোর অভাগিনী মা।
এক নিঃশ্বাসে চিঠিটা পড়ে কান্না শুরু করলাম।হঠাৎ মনে পড়লো কিছুদিন আগে আমার শাশুড়ি আমার কাছ থেকে একটা খাতা আর কলম চেয়েছিলেন।বুঝতে বাকী রইলো না উনি খাতা কলম কেনো খুঁজেছিলেন সেদিন। অালমারি খুলে বক্সটা হাতে নিলাম।চাবিটা দিয়ে তালা খুলে দেখলাম আমার শাশুড়ির সব সোনার গয়না বক্সটিতে।এসব দেখে অঝর ধারায় কান্না ভেঙে পরলাম। মনে মনে বলতে লাগলাম,
– আমি তো এসব চাইনি মা।আমার শুধু তোমার ছেলেটাকে চেয়ে ছিলাম।তোমার ছেলেটা আমাকে দিনের পর দিন অবহেলা করছে।তুমিও আমাকে একা করে চলে গেলে।আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো। মায়ের মৃত্যুর ৩০ দিন পার হয়ে গেছে।আর মাত্র ১০ দিন বাকী।রাহাত আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।আমি দিন গুনছি। রাহাত আজকাল প্রায় অন্যমনস্ক থাকে।বাইরেও বের হয় না।রাতে মাইসার সাথে কথাও বলে না।খাওয়া দাওয়া ঠিকভাবে করে না।একদিন রাতে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
– আপনার কি শরীর খারাপ।আজকাল মনমরা হয়ে থাকেন।অফিসেও যান না।
– আমার কোন ব্যাপারে আপনি মাথা না ঘামালে খুশি হবো।আর আপনি মায়ের রুমে শুতে পারেন না?ঐ রুমটা তো খালি পরে আছে।আমার সামনে আসবেন না আপনি।
পরেরদিন সকালে আমার কাপড় চোপড় সব নিয়ে শাশুড়ির রুমে শিফট হয়ে যাই।ডাইনিং খাবার দিয়ে শাশুড়ির রুমে এসে বসে থাকতাম।রাহাতের সামনে যেতাম না। একদিন সন্ধ্যায় আমি কোরঅান পড়ছি।কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দিলাম।দরজা খুলে দিয়ে আমি আবারও শাশুড়ির রুমে এসে কোরঅান পড়া শুরু করলাম।হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ আমার পা ধরে রেখেছে।রাহাত আমার পা ধরে কাঁদছে।
– কি হয়েছে আপনার?আপনি কাঁদছেন কেনো?
– আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি আপনার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।আল্লাহ আমাকে শাস্তিও দিয়েছে।
– আগে আমার পা ছাড়ুন।কি হয়েছে বলেন আমাকে।
– আমার চাকরি চলে গেছে মিলা।
অফিসের একটা ফাইলে আমি বিরাট ভুল করে ফেলেছি।অনেক বড় ডিল হাতছাড়া হয়ে গেছে।প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা মতো লস হয়ে গেছে।বস আমাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে।মাত্র এক মাসের মধ্য পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরণ না দিলে আমার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করবে বলেছে।আমি কি করবো মিলা?
– আমি তো আছি আপনার পাশে।আপনি একটু বসুন,আমি আসছি। শাশুড়ির অালমারি খুলে গয়নার বক্সটি নিলাম।আমার বিয়ের গয়না গুলোও নিয়ে রাহাতের হাতে দিলাম।
রাহাত বললো,
– এগুলো কি?
– এখানে কিছু গয়না আছে।এগুলো বিক্রি করে যা টাকা পাবেন আপনার বসের ঋণ পরিশোধ করুন।
– এতো গয়না আপনি কোথায় পেলেন?
– মা দিয়েছে। ছিঃ ছিঃ আপনি আমাকে এভাবে ছোট করবেন না। আমি এসব নিতে পারবো না।
– না করবেন না প্লিজ।মা এগুলো আমাকে আমার বিপদ আপদের জন্য দিয়েছেন।এখন আপনি বিপদে পড়েছেন।আপনার বিপদ মানেই তো আমার বিপদ। রাহাত আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
– প্লিজ মিলা আমাকে ক্ষমা করে দিন।মাইসার জন্য আপনাকে অনেক অবহেলা করেছি।আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে ওকে বিয়ে করার কথা ছিলো।কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার পর মাইসা বলেছে,ওর বাবা নাকি ওকে বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দিবে না।যার জন্য আমি আপনাকে অবহেলা করলাম,সেই আমার বিপদে পাশে না দাঁড়িয়ে চাকরির অজুহাত দেখিয়ে চলে গেলো।
– হুম আমারও সময় ফুরিয়ে এসেছে।আর দুই দিন পর মায়ের মৃত্যুর চল্লিশ দিন পূরণ হবে।আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে পারবেন। রাহাত ওর দু’হাত দিয়ে আমার মুখটা ধরে বললো,
– এই খারাপ মানুষটাকে ছেড়ে না গেলে হয় না?
– আমি তো আপনাকে কখনও ছাড়তে চাইনি। আপনি আমাকে ছেড়ে দিবেন বলেছেন বারবার।
– প্লিজ আর এসব বলো না।এই খারাপ মানুষটাকে ভালো হওয়ার একটু সুযোগ দাও।
এটা বলেই রাহাত আমার কপালে একটা চুমু দিলো। শাশুড়ির কথা খুব মনে পড়ছে আজ।ওপারে যদি চিঠির উত্তর পাঠানো যেতো তাহলে আমি লিখতাম, “মাগো কেমন আছো তুমি? জানো মা,তোমার ছেলে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে।তুমি যদি আজ বেঁচে থাকতে আমাদের এভাবে দেখে কতোই না খুশি হতে।
মাগো তোমার ছেলে আমাকে অবহেলা করতো বলে,তুমি কতো চিন্তা করতে।আমি তোমাকে বলে ছিলাম,আল্লাহ আমাকে একদিন সুখী করবেই। দেখলে মা,আল্লাহ তোমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।আল্লাহর কাছে কিছুর অভাব নেই মা।মন থেকে চাইলে আল্লাহ তার বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। মাগো তোমার দোয়া আমার মাথার উপর আছে।মায়ের দোয়া সন্তানের মাথার উপর থাকলে আল্লাহ যেকোন বিপদ থেকে উদ্ধার করবেই।
ইতি,
তোমার মেয়ে মিলা।
অতঃপর এক সোনালি সন্ধ্যায় শুরু হলো রাহাত আর মিলার নতুন করে পথ চলা।