গার্লস স্কুলের পেছনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি । দেয়ালে হেলান দিয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছি আর আয়েশ করে ধোয়া ছাড়ছি । হঠাৎ ধুপ করে শব্দ হলো, তাকিয়ে দেখি গার্লস স্কুলের একটা মেয়ে ব্যাগ কাধে আমার দিকে তাকিয়ে । আমি রীতিমত অবাক হয়ে গেছি কারণ যে দেয়াল টপকে বের হয়েছে সেটা প্রায় সাত ফুট । মেয়ে হয়ে এতো উচু দেয়াল টপকানো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার !
আরো বেশি অবাক হলাম যখন মেয়েটা কাছে এসে বললো, “সিগারেট হবে একটা ?” সিগারেটের কথা শুনে আমি চোখ বড় করে মেয়েটার দিকে তাকালাম । আর মনে মনে হিসাব করতে লাগলাম । মেয়েটা যদি এইবার স্কুলের সবচেয়ে সিনিয়রও হয় তাও ক্লাস টেনে । এইটুকু পিচ্চি মেয়ে আমার কাছে সিগারেট চাইছে ! মেয়েটার তুড়ি বাজানোতে আমার ঘোর কাটলো । বললো, “ওই হ্যালো !! হাবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন ? হিসাব করায় মগ্ন থাকায় অপ্রস্তুত ছিলাম । কোনরকমে তোতলিয়ে বললাম, “দেখছিলাম আরকি ।”
– খুব ভালো করেছেন । এখন একটা সিগারেট দিন ?
আবার সিগারেট চাইছে । এতো ছোট একটা মেয়েকে সিগারেট দেওয়ার পক্ষে আমি না । অবাক ভাবটা লুকিয়ে বিরক্তির ভান করে বললাম, “সিগারেট নেই ।”
– আপনি তো বেশ কিপ্টা । বেনসনের প্যাকেট নিয়ে ঘুরছেন আর একটা দিতেই হাত কাপে ?
– তুমি কিভাবে জানলে এটা বেনসনের প্যাকেট ?
– জানি বলেই বলতে পারছি । আপনি আমাকে সিগারেট দিবেন কি না ?
– আচ্ছা ঠিক আছে । দিতে পারি কিন্তু একটা শর্তে ।
মেয়েটা চোখের ভ্রু নাচিয়ে বললো, “কি শর্ত ?” গলা খাকারি দিয়ে বললাম, “তুমি কিভাবে জানলে এটা বেনসনের প্যাকেট ?”
– আমি চেইন স্মোকার না হলেও মাঝে মাঝে খাই তাই জানি ।
– কিন্তু তুমি সিগারেট খাও কেন ?
– প্যারা থাকলে খাই । এখন আপনি দয়া করে সিগারেট দিয়ে ধন্য করুন ।
কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি যেন কোন ছেলের সাথে কথা বলছি । আমি মেয়েটাকে ভালো করে লক্ষ্য করতে লাগলাম । মেয়েটা সুন্দরী তবে বেশি লম্বা মনে হচ্ছে । পাঁচ ফুট পাঁচ/ছয় ইঞ্চি হবে হয়তো । মেয়েলী সাজ গোজের মধ্যে শুধু কাজল ছাড়া আর কিছু দেয়নি । চুল বেণী করে রেখেছে দুইপাশে । বা হাতে ছেলেদের মতো বড় ঘড়ি । আসলে মেয়েটাকে দেখে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে ! মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি । আমি অনেকক্ষন ধরেই পরখ করছিলাম । মেয়েটা বলে ওঠলো, “একটা সিগারেট চাইছি তাই এমন করছেন ?” আমি আবারো অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । তাড়াতাড়ি বলে ওঠলাম, “আরে না না । আমি খুব অবাক হয়েছি তোমার সিগারেট চাওয়ায় । তাই একটু পরখ করছিলাম ।”
– একি ! আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন যে ?
– তো কি করে বলবো ?
– প্রথম দেখাতেই তুমি ? আপনি করে বলেন । আমি জোরে শব্দ করে হেসে ওঠলাম । বললাম, “তুমি আমার ছোট ভাইয়ের সমান হবে হয়তো । বোন থাকলে ছোট বোন হতো ।”
– ওহহ আচ্ছা । এখন সিগারেট দিন ।
এতবার সিগারেট চাওয়ায় বিরক্ত হয়ে অগত্যা প্যাকেটটা মেয়েটার হাতে দিলাম । জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার নাম কি ?” সে যেন এই প্রশ্নের জন্যই অপেক্ষা করছিলো । ঝটপট বলে ওঠলো, “আমি লাবণ্য বিনতে আহাদ । আমার আপুর নাম মেঘ ।” মেঘের নাম শুনে আমি চমকে উঠলাম । বুঝতে পারলাম মেয়েটাকে কেন চেনা লাগছিলো । আমার চোখে ভয় নেমে এলো । অনুনয়ের সুরে বললাম, “বইনরে তোর পায়ে ধরি । মেঘকে কিছু বলিস না প্লিজ । ও জানতে পারলে আমার জীবনটা শেষ করে দিবে ।” লাবণ্য একটু নরম হয়ে বললো, “ঠিক আছে বলবো না । তবে এবার আমার কিছু শর্ত আছে ।”
– বলো বলো । কি শর্ত ? আমি সব মানতে রাজি !
– আমি এখন প্রেম করবো । আপনি কিছু বলতে পারবেন না ।
– তুমি যতো ইচ্ছা প্রেম করো । আমি কিছু বলবো কেন ?
লাবণ্য রহস্যময় হাসি হেসে বললো, “সেটা সময় হলে টের পাবেন । যাই হোক । আপনি পাহারা দিবেন, আর যা খেতে চাইবো তাই এনে দিতে হবে । কিছু করার নেই, পড়েছি গ্যারাকলে । মুখ বেজার করে বললাম, “ঠিক আছে ।” লাবণ্য ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কাকে যেন কল করলো ! হয়তো তার প্রেমিককে !!
– হ্যালো, এসপি পার্কে চলে আসো তাড়াতাড়ি ।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললো, “আরে না আমি একাই । তুমি চলে আসো তো তাড়াতাড়ি !” লাবণ্য আমাকে আইসক্রিম আনতে পাঠালো । আইসক্রিম নিয়ে ফিরে এসে দেখি লাবণ্য, আমার ছোটভাই রাইয়ানের হাত ধরে বসে আছে । রাইয়ান মাথা নিচু করলো । লাবণ্য ওঠে আমার হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে বললো, “ভাইয়া, আপনি দূরে গিয়ে দাড়ান ।” আমি অবাক হয়ে বললাম, “কেন ? দূরে কেন ?”
– আপনার জন্য রাইয়ান আমার হাত ধরতে লজ্জা পাচ্ছে ।
কথাটা শুনে আমি দুঃখিত চোখে রাইয়ানের দিকে তাকালাম, রাইয়ান আগের মতো মাথা নিচু করে বসে আছে । আমি সামনের দিকে হাটা শুরু করতেই লাবণ্য পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললো, “ভাইয়া ! একটু ভালো মতো নজর রাখবেন কিন্তু । আপনার বাবা নাকি এ রাস্তা দিয়েই আসা-যাওয়া করে ।” আমি ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, আচ্ছা ।