ব্যক্তিগত সম্পদ

ব্যক্তিগত সম্পদ

বরের সাথে আমার তীব্র ঝগড়া চলছে। অবশ্য সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর আমি ননস্টপ ঝাড়ি দিতেছি। এটাকে ঝগড়া বলে কি না তা আমি জানি না। আমি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম-

__”তুমি কী করে পারলে এইটা করতে?” সে মলিন মুখে বলল-
__”বিশ্বাস করো হয়ে গেছে, ইচ্ছে করে করিনি। কান ধরে বলছি আর জীবনেও হবে না সোনাবউ।” আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম-

__”আমি ভাবতেই পারছি না আমার স্বামী এমন একটা কাজ করতে পারে।”
__”স্যরি সোনাবউ।”
__”চুপ করো, এসব আদুরে নামে ডাকবা না আমাকে।”
__”কান ধরে উঠবোস করবো?”
__”চুপ একদম! তুমি তো জানোই যে আমি এসব পছন্দ করি না। আমার স্বামী কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে এটা তো আমি ভাবতেই পারি না।”
__”বলছি তো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।” আমি রাগে কেঁদেই ফেললাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম-

__”প্রমিস করেছিলাম কখনও রাগ করে বাপেরবাড়ি যাবো না তাই এখনো দাঁড়িয়ে আছি।”
__”প্লিজ এসব বলো না! এমনিতেই আমি মরমে মরে যাচ্ছি।”

আমি বেশ শব্দ করেই কাঁদতে শুরু করলাম। সে অসহায় চোখে আসামির মতো দাঁড়িয়ে রইল। তার ভেতরটাতে কী হচ্ছে তা আমি জানি না। তবে আমার ভেতরটা জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। যাকে সবটা উজাড় করে ভালোবাসি সে আমাকে এমন করে কষ্ট দেবে ভাবতেই পারিনি। আমি কখনও ভাবিনি আর দশটা ছেলের মতো আমার স্বামী হবে। তার মধ্যে ভিন্নতা ছিল বলেই তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। বিয়ে নিয়ে কম ঝড় যায়নি আমাদের জীবনে। প্রেমের বিয়েতে পরিবারকে মানানো যে কতটা কঠিণ তা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। আর সেই মানুষটা আজ….। রাগে ক্ষোভে দুঃখে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। হঠাৎ রুমের ভেতরে ওর বন্ধু অঙ্কুর ঢুকলো। সে আমাকে এমন করে কাঁদতে দেখে হয়তো হতভম্ব হয়ে গেল। অবাক চোখে তাকিয়ে সে বলল-

__”কী হয়েছে বৌরানী? কাঁদছো কেন? স্যরি বিনাঅনুমতিতে প্রবেশের জন্য।” আমি তার কথায় কর্ণপাত না করে কেঁদেই চলেছি। কোনো ভাবেই আমি কাঁন্না থামাতে পারছি না। সীমান্তও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না যে, সে কী বলবে! অঙ্কুর তার দিকে তাকিয়ে বলল-

__”তুই তো বল কী হয়েছে? এমন করে বৌরানী কাঁদছে কেন?” সীমান্ত কিছু না বলে মূর্তির মতো দাঁড়িয়েই রইল। এমন অপরাধ সে করেছে যে, মুখে বলতে তার লজ্জা করছে। অঙ্কুর আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল-

__”প্লিজ বৌরানী বলো! টেনশন হচ্ছে তো!” তার মুখ দেখেও মনে হচ্ছে তার টেনশন হচ্ছে। আমি কাঁন্না থামিয়ে বললাম-

__”আমি বলতে পারব না। যা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি কখনও তাই হয়েছে। যে এসব করেছে তার থেকেই শোনো।”
আমি আবার কাঁন্না জুড়ে দিলাম। সীমান্ত করুণ চোখে অঙ্কুরের দিকে তাকালো। বুঝতে পারছি সে বলতে পারবে না। শেষে এসে অবশেষে আমাকেই বলতে হবে। আমি কাঁন্না থামিয়ে বললাম-

__”তোমার আলাভোলা বন্ধু একটা মেয়ের পোস্টে লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছে।”

আমার কথা শুনে অঙ্কুর থ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ল। তারপর অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

__”বৌরানী তুমি এই সামান্য কারণে এমন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছো?” আমি ঝাঁজালো স্বরে বললাম-
__”এটাকে তোমার সামান্য কারণ মনে হচ্ছে? ‘লাভ’ মানে কী জানো তুমি?”
__”ভালোবাসা।”
__”রিয়্যাক্ট মানে কী?”
__”প্রতিক্রিয়া।”
__”তাহলে লাভ রিয়্যাক্ট দেয়া মানে হলো ভালোবাসার প্রতিক্রিয়া দেয়া। ওরে আল্লাহ গো”

আমি কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়লাম। এর আগে আমি নিজেও লাভ রিয়্যাক্ট এর মিনিং খতিয়ে দেখিনি। খতিয়ে দেখে তো এখন আরও শেষ হয়ে যাচ্ছি। মেঝেতে আমায় বসতে দেখে অঙ্কুর বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। সীমান্ত ধীর পায়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল-

__”সোনাবউ তুমি এমন করে কাঁদলে আমার কেমন লাগে বলো?”
আমি ঝাঁজালো স্বরে বললাম-
__”ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েকে লাভ রিয়্যাক্ট দেবার সময় এসব মনে ছিল না?”
__”মেয়েটার কথাগুলো বাস্তব ছিল তাই লাভ রিয়্যাক্ট দিয়ে ফেলেছি। যদি জানতাম তুমি এটা অপছন্দ করো তাহলে আমি কখনোই এটা করতাম না। স্যরি।”

__”আমার পছন্দ অপছন্দ তোমার জানা উচিত ছিল।”
__”তুমি তো কখনও এসব নিষেধ করোনি, তাহলে জানবো কী করে?”
__”আগে তো লাভ রিয়্যাক্ট এর মিনিং খতিয়ে দেখিনি। তাই তো বলি লাভ রিয়্যাক্ট নিয়ে ব্রেকআপ কেন হয়।” আমি আবার কাঁন্না জুড়ে দিলাম। সীমান্ত অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল-
__”বলছি তো আর জীবনেও এমন হবে না, এই কান ধরে বলছি।”
__”তুমি ঘরে বউ রেখে। ওরে আল্লাহ গো!”

আমি কেঁদেই চলেছি। অঙ্কুর সীমান্তকে টেনে নিয়ে আমার থেকে একটু দূরে দাঁড়াল। ব্যাপারটা সন্দেহজনক মনে হলো তাই কাঁন্না থামিয়ে ওদের দিকে মনোযোগ দিলাম। অঙ্কুর তাকে আস্তে করে বলল-

__”তা কাকে লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছেন জনাব?” সীমান্ত ঝাঁজালো স্বরে বলল-
__”এঞ্জেলা অনামিকাকে।”
__”ওহ গড!”
__”এখন বুঝতে পারছিস তো যে, তুই আমার কী সর্বনাশ করেছিস? কল করে বললি রিয়্যাক্ট দিতে। এখন সামলা তুই।”

__”বৌরানীকে তো লজ্জায় বলতেও পারব না যে, ওটা আমার ফেইক আইডি। আর এখন বললে তো সে বিশ্বাসও করবে না।”
__”সব দোষ তোর। কী দরকার ছিল মেয়ের নামের আইডি খোলার? কী মরতে যে তোর কথা শুনে লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছি তা আল্লাহই জানেন!”

__”টেনশন নিস না, আমি বৌরানীকে পটিয়ে ফেলছি।”
__”এই এই তুই আমার বউকে পটাবি কেন?”
__”আরেহ বাবাহ পটিয়ে তাকে বুঝাব যে ওটা আসলে আমার আইডি। তুই শান্ত হ ভাই! তোর বউ তোরই থাকবে।”
__”কিচ্ছু বুঝানোর জন্য পটাতে হবে না। আমার বউ রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। একটু পরেই সে নরমাল হয়ে যাবে।”
__”আচ্ছা পটালাম না।”

ওমাগো! ওদের কথা শুনে তো আমি সাত আসমান থেকে পড়লাম। এঞ্জেলা অনামিকা তাহলে অঙ্কুর? তাহলে এসব করার জন্যই সে আমাকে কল করে বলেছে যে, সীমান্ত লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছে! আচ্ছা তাকেও মজা দেখাচ্ছি, সাধ মেটাচ্ছি মেয়ে সাজার। আজ বান্দর ছেলেটার জন্য আমি আমার আলাভোলা বরকে কত কী বলেছি! এখন সেজন্য কাঁন্না পাচ্ছে। আবার কাঁন্না শুরু করব হঠাৎ অঙ্কুর আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে সীমান্তকে বলল-

__”তুই আসলেই বড়সড় একটা অপরাধ করেছিস। ঠিকই তো, ঘরে বৌরানীকে রেখে এসব করে তুই ঠিক করিসনি। বৌরানী কত কষ্ট পেয়েছে দেখ!” সীমান্ত রেগে উঠে বলল-

__”এসব করে মানে? এই এই তুই কী বুঝাতে চাইছিস?”
__”লাভ রিয়্যাক্ট বুঝাতে চেয়েছি। বউকে সামলা এখন।”
__”কী এক বিপদে পড়েছি আল্লাহ্!” আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে অঙ্কুরকে বললাম-
__”তুমিই বলো, ঐ মেয়েটা কী আমার চেয়েও সুন্দর?” অঙ্কুর না সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে বলল-
__”একদম না। আমার বৌরানীর চেয়ে সে বেশি সুন্দর হতেই পারে না।” আমি কাঁন্না থামিয়ে অবাক হবার ভান করে বললাম-

__”তুমি জানলে কীকরে? তুমি কী তাকে দেখেছো?” সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল-
__”না তো।”
__”না দেখেই বলছো কীকরে?”
__”আমার ধারণা আমার বৌরানীর চেয়ে সে বেশি সুন্দর হতেই পারে না।” মনে মনে বললাম এঞ্জেলা অনামিকা তো তুমি দেবরজী। মেয়ে হলেই না, কে বেশি সুন্দর সেই প্রশ্ন আসতো। বললাম-

__”ধারণা?”
__”না না, ধারণা না। এটা আমার বিশ্বাস।” আমি রেগে উঠে বললাম-
__”পাম দিচ্ছো কেন? আমি তোমার বৌরানী, গার্লফ্রেন্ড নই।”
__”এই না না, বিশ্বাস করো একদম পাম দিচ্ছি না।”
__”এতক্ষণ ধরে পাম দেয়ার পরে বলছো পাম দিচ্ছি না?”

এবার অঙ্কুর আমার দিকে আসামির মতো তাকিয়ে রইল। দুই বন্ধু পাশাপাশি আসামির মতো দাঁড়িয়ে আছে। দৃশ্যটা আসলেই মর্মান্তিক। আমি আবার কাঁন্না জুড়ে দেবো ঠিক তখনই আমার ফোন বেজে উঠল, ফোন রিসিভ করছি কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। কী এক জ্বালা! ফোন বেজে চলেছে তো চলেইছে। হঠাৎ আমি চমকে উঠে চোখ মেলে দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি। আর আমার কানের পাশে এলার্ম বাজছে। আমি তো মেঝেতে বসে ছিলাম, বিছানায় কখন এলাম?

ঘড়িতে ছয়টা বাজে, জানালার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ভোর হয়ে গিয়েছে। পাশে তাকিয়ে দেখলাম সীমান্ত ঘুমাচ্ছে। স্বপ্নের কথা মনে পড়ল। আল্লাহ গো কী সাংঘাতিক স্বপ্ন দেখেছি! ভাগ্যিস একজনের স্বপ্ন আরেকজন দেখতে পায় না! সে যদি এসব দেখতে পেতো তাহলে তো আমি লজ্জায় মরেই যেতাম। মনে মনে আমার হাসিও পাচ্ছে, এমন তুচ্ছ একটা ব্যাপার নিয়ে এমন সাইক্লোন বয়ে দিয়েছি ভেবে। ফেসবুকে কিছু মেয়েদের এমন আচরণ দেখে দেখে আমিও স্বপ্নে লাভ রিয়্যাক্ট দেখা শুরু করেছি। ছিঃ ছিঃ কিন্তু স্বপ্নের ভেতরে অঙ্কুর ঢুকলো কেন? বান্দরটা স্বপ্নে এসেও গিরিঙ্গি লাগিয়েছে।

হঠাৎ অনেকদিন আগের একটা কথা মনে পড়ল। তখন আমাদের নতুন রিলেশন, পাঁচ ছয় মাস হবে। এখন আমি নিঃশ্বাস ফেললে সীমান্ত বুঝতে পারে যে, আমার শ্বাসে তার নাম আছে কি না নেই। আর তখন এটাই বুঝার চেষ্টা চলছিল। পাঁচ ছয় মাসেই সে আমার সব বৈশিষ্ট্য জেনে গিয়েছিল। সেসময় সীমান্তর পেছনে অনেক মেয়েই ঘুরঘুর করতো। অবশ্য এটা অস্বাভাবিক ব্যাপার না। একজন সুদর্শন অবিবাহিত পুরুষের পেছনে মেয়েরা ঘুরবে সেটাই স্বাভাবিক। আর সেই পুরুষ যদি মেয়েদের দিকে ফিরেও না তাকায় তবে তো মেয়েদের আকর্ষণ ডাবল। মেয়েরা এমন ধরণের ছেলে পছন্দ করে। যদিও এই ঘুরঘুর ব্যাপারটা আমার জীবনে কখনোই আসেনি। তার পেছনে মেয়েদের এই ঘুরঘুর ঘটিত সব কিছুই সে আমাকে বলতো। মনে মনে আমার মেয়েগুলোর উপরে খুব রাগ হতো। তবে তা আমি প্রকাশ করতাম না, এমনকি তাকে টের পেতেও দিতাম না। বেশ হাসিমুখেই তার কথা শুনতাম। একদিন আমি হাসিমুখেই তাকে বললাম-

__”তোমার পেছনে মেয়েরা ঘুরঘুর করলে আমার রাগ হয়, খুব রাগ হয়।” সে বিশাল রকমের হতবাক হয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। কারণ সে আমার বৈশিষ্ট্যতে এমন জেলাস দেখেনি কখনও। সে বলল-

__”কিহ? তুমি তো কখনও কাউকে জেলাস করো না। আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আর ইউ সিরিয়াস?” সে হয়তো ভেবেছিল আমি ফান করে এসব বলছি। আমি সেদিন কথাটা ফান হিসেবেই চালিয়ে দিতে পারতাম কিন্তু দিইনি। কেন জানি আমার লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছেই করেনি। বললাম-

__”হ্যাঁ আমি সিরিয়াস। আমি চাই না কোনো মেয়ে আমার প্রেমিকের আশেপাশে ঘুরঘুর করুক, তাকে প্রোপজ করুক, তাকে ভালোবাসুক, এমনকি তার দিকে তাকাক। যেটা আমার সেটা শুধুই আমার। আমি কখনও অন্যের জিনিসের দিকে তাকাই না, তাই আমার জিনিসের দিকে কেউ তাকাক তা আমি চাই না।”

সে যেন বড়সড় ধাক্কা খেলো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, সে এসব আশা করেনি আমার থেকে। সে ভাবতেই পারেনি যে, তার পছন্দের মেয়েটার বৈশিষ্ট্য আর পাঁচটা মেয়ের বৈশিষ্ট্যর সাথে মিলে যাক। আমার এই সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। পৃথিবী ধ্বসে যাক, সব কিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার মন ঐ সাধারণ বৈশিষ্ট্যতেই অটল, আমি চাই না কোনো মেয়ে তার আশপাশ দিয়ে হাটুক।
সেদিন সে আর কিছু বলেনি। হয়তো সে বুঝে গিয়েছিল যে, বলেও কোনো লাভ নেই।

আমাদের বিয়ের পরেও আমি বদলাইনি। সে আমার ছবি দেখলেও আমার রাগ হয়। এমনকি তার ফোনের হোমস্ক্রীণে আমার যে ছবিটা আছে সেটা দেখেও আমার রাগ হয়। মনে হয় আমার সত্ত্বা ছাড়া সীমান্ত আর কারও নয়। এসব অবশ্য সে জানে। কারণ আমি সবটাই প্রকাশ করি তার কাছে। সে আর অবাক হয় না। সে মনে করে সে একটা আস্ত পাগলিকে বিয়ে করেছে। আর তার প্রার্থনা এই পাগলিটা যেন কখনও সুস্থ না হয়। কারণ সে খুব করে রিয়্যালাইজড করেছিল যে, মেয়েরা স্বামীর ভাগ দিতে একদম অক্ষম। আর সেই অক্ষমতা তার সোনাবউয়েরও আছে। এই অক্ষমতার জন্য আমি একদম লজ্জিত নই।

নারী হয়ে কিছু নারী বৈশিষ্ট্য আমাকে বহন করতেই হবে। আমি দ্বিধাহীন ভাবে মরণ অব্দি এটা বহন করবো। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, স্বামীরাও কিন্তু স্ত্রীর ভাগ দেয় না। এই কথাটা কখনও মুখে মুখে রটেনি। মেয়েরা স্বামীর ভাগ দিতে না পারলেও মেয়েদের সতীন নিয়ে সংসার করার ইতিহাস আছে। যদিও সেটা নিতান্তই নিরুপায় হয়ে। রাজা বাদশাদের একাধিক রাণী বা বেগম থাকতো। আর সেই রাণীরা ছিল কোনো না কোনো রাজার মেয়ে। অথচ তারাও সতীন নিয়ে সংসার করেছে। সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সমাজেও নারীরা সতীন নিয়ে সংসার করেছে।

কলিজা ছিদ্র করে তারা বাধ্য হয়েছে স্বামীকে ভাগ বাটোয়ারা করতে। কিন্তু কোনো পুরুষের জীবনে এমন ইতিহাস নেই। ধর্ম আর সমাজ তো পুরুষদেরই সৃষ্টি তাই তারা সুকৌশলে নিজেদের সুবিধা করে নিয়েছে। এসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার মাথাব্যথা শুধুই আমার নিজের মানুষটাকে নিয়ে। সে আমার, শুধুই আমার, একান্তই আমার সম্পদ। এই সম্পদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কোনো ওয়ারিশ নেই। সেখানে ভাগ বাটোয়ারার প্রশ্নই আসে না। আমি ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম-

__”স্যরি সোনা, স্বপ্নে আমি তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি। স্বপ্নে তো আসলে মানুষের হাত নেই। তুমি শত নারীকে লাভ রিয়্যাক্ট দিলেও আমি বাস্তবিক ভাবে কখনও রিয়্যাক্ট করবো না কারণ আমার চেয়ে ভালো কেউ তোমায় চেনে না। তোমার সাতখুন আমি মাফ করে দেবো কিন্তু তোমার আশেপাশে কোনো মেয়ে ঘুরঘুর করবে এটা আমি এহকাল পরকাল এবং কোনো কালেই মানবো না। এই ব্যাপারে একফোঁটাও ছাড় নেই। তোমায় ভালোবাসবো শুধুই আমি, আর কেউ নয়।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত