ফিরে আসার গল্প

ফিরে আসার গল্প

‘আমি এই হারাম সম্পর্ক রাখতে চাই না তুবা। সুজনের কথায় আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মানে? কি হারাম? ‘আমাদের এই সম্পর্ক টা হারাম। আমরা দুজনে যা করছি তা হারাম। আল্লাহ আমাদের জীবন সঙ্গী আগেই ঠিক করে রেখেছেন। আমি এই হারাম থেকে বেরিয়ে যেতে চাই। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ দুই বছরের সম্পর্ক সুজন। নতুন কাউকে পছন্দ হয়েছে? এসব না বলে সাহস থাকলে মাথা উচু করে বলো।

সুজন মুচকি হেসে বললো, ‘তুবা তুমি এখনো অবুঝ। আমার কথা যেদিন বুঝতে পারবে সেদিন আমাকে আর ভুল বুঝবে না। আসি। এই বলে সুজন আর পেছনে তাকালো না। আমি ঠায় দাড়িয়ে রইলাম নিজের জায়গায়। কি হয়ে গেল আমার সাথে? কি বললো সুজন? সুজন আর আমি মেডিকেল পড়ছি। আমরা দুজনই যথেষ্ট আধুনিক। সুজন খুব সুন্দর গান গাইতো। কলেজ ক্যাম্পাসে ওর গান শুনেই প্রেমে পরি। তারপর প্রপোজ করি ওকে ব্যাস সেই থেকে শুরু। আমরা দুই বছর প্রেম করেছি। মেডিকেল শেষ হলেই বিয়ে করবো ভেবেছিলাম কিন্তু সুজন আস্তে আস্তে বদলে যেতে লাগলো। গান ছেড়ে দিলো, দাড়ি রাখলো, নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত সালাত পড়া শুরু করলো, আমার সাথে কথা বলা একদম ছেড়ে দিলো। আর আজ বলেই দিলো প্রেম নাকি হারাম। যতোসব!

আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিলো সুজনের প্রতি। ছেড়ে যাওয়া কি এতোই সোজা? প্রচুর কান্না আসছে আমার। চোখের পানিতে দুনিয়া অন্ধকার দেখছি। কয়েকজন বন্ধু বান্ধবী দের সুজনকে বোঝানোর দ্বায়িত্ব দিলাম। কিন্তু না সুজন নাছোড়বান্দা। সে সম্পর্ক রাখবে না। তাদেরও এক কথা বললো।

নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। ভীষণ একাকি লাগছে। হয়তো আমি ডিপ্রেশনে চলে গেছি। আমাকে ডিপ্রেশন থেকে বের করার জন্য আমার কাছের বন্ধু বান্ধবীরা মিলে অন্য আরেকটা ছেলের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু আমি সুজনকে ভুলতে পারছি না। সুজনকে দিনে একশো বার ফোন দিচ্ছি। কিন্তু সুজন কোন রেসপন্স করছে না। এক সময় নাম্বার বন্ধ পেলাম। আমার সব আশা শেষ। আমার মনে হচ্ছে আমি মরে যাবো।

রাত প্রায় দুটো। চোখে ঘুম নেই। গান শুনছি আর সুজনের কথা মনে করছি। হঠাৎ আমার কেন জানি মনে হলো প্রেম কি সত্যি হারাম? প্রশ্নটার উত্তর খোজা দরকার। বিছানা থেকে ল্যাপটপটা হাতে নিলাম। ল্যাপটপে সার্চ করলাম। আমার চোখ খুলে গেল। আসলেই কি করছিলাম আমি। প্রেম আর ব্যাভিচার একই বিষয়। প্রেম করা কবিরা গুনাহ। আমার জন্য আমার বাবা-মা জাহান্নামে যাবে। আমি জাহান্নামে যাবো। জাহান্নামের শাস্তি র বর্ণনা গা শিউরে উঠার মতো৷ মনে মনে সত্যি সুজনকে ধন্যবাদ দিচ্ছি লাম। কি পাপ করছিলাম আমি৷ পাপ থেকে বাচলাম।

এরপর থেকে আমার জীবনে এক পরিবর্তন এলে। আমি নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেললাম। পর্দা করা সালাত আদায় করা, বাবা-মায়ের সাথে ভাল ব্যবহার করা। পুরো পাল্টে দিলাম নিজেকে। বাবা-মাও আমার এই পাল্টে যাওয়া দেখে খুশি হলেন। নিজেকে এখন আর একা মনে হয় না আলহামদুলিল্লাহ।

মেডিকেল শেষ করেছি। সুজনের সাথে কথা হয় না প্রায় দুই বছর। এই তিন বছর কস্ট হয়নি একদম। আগের থেকে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ। সোফায় বসে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ। কলিং বেলের আওয়াজ শুনলে আমি আমার ঘরে চলে যাই। বাবা বাসায় থাকলে উনি গেট খুলে দেন। আর বাসায় না থাকলে অপরিচিত কেউ হলে দারোয়ান গেট থেকে বলে দেন। আর পরিচিত রা সবাই মাশাআল্লাহ দ্বীনদার। তাই অপ্রয়োজনে গায়রে মারহাম বাসায় আসে না। আজ বাবা বাসায় ছিলেন তাই তিনি দরজা খুললেন। ‘আসসালামু আলাইকুম সালাম সাহেব? ‘অলাইকুম আসসালাম। জ্বী বলুন। ‘আমি রফিক আলম। সুজনের বাবা। আপনার সাথে কথা বলতে পারি?

সুজন নাম টা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। সত্যি সুজনের বাবা? সুজনের কথা বাড়ির সবাই জানতো তাই সুজনের নাম শুনে বাবা রফিক সাহেব কে চিনতে পারলেন। ‘সালাম সাহেব একটা আর্জি ছিলো যে? রফিক সাহেব হাসি মুখে বললেন ‘জ্বী বলুন কি আর্জি। বাবা বললেন।

‘আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে আপনার মেয়েকে মা করে নিয়ে যেতে চাই। আমি আমার ঘরের দরজার আড়াল থেকে সব শুনছিলাম। ‘সুজন ভাল ছেলে জানি। আমাদের মত আছে। কিন্তু মেয়ের মত যে শুনতে হবে রফিক সাহেব। রফিক সাহেব এক গাল হেসে বললেন,’নিশ্চয়ই। বাবা বসার ঘর থেকে উঠে আমার ঘরে আসলেন। আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ‘মা তুমি তো সব শুনেছো। তোমার মতামত কি? আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, ‘বাবা আপনি যা ভাল মনে করেন। বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে রফিক সাহেব কে বললেন, ‘মেয়ের মত আছে আপনারা বিয়ের তারিখ দিন।

আজ আমাদের বিয়ের চার বছর এক সন্তানের মা আমি। নিজের সন্তান কে দ্বীনদার হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমি হেদায়েত পেয়েছি সাথে পেয়েছি সুজনকে। আজ যদি আমরা হারাম সম্পর্কে থাকতাম তখন হয়তো এক নাও হতে পারতাম। কিন্তু হারাম থেকে বেরি হালাল পথে একে অপরকে পেয়েছি। আসলেই আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। হালালে সুখ আর হারামে দুঃখ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত