প্রকাশ্য প্রেমের গল্প

প্রকাশ্য প্রেমের গল্প

বড্ড বেশি মায়াবী মুখটা ইচ্ছা করে সারাদিন দেখি। ওর হাসিটা যেন বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য। প্রেমে পরতে ইচ্ছা করে হাজারবার। ওর নাম মানে আমার ভালবাসার মানুষটার নাম মণি। ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালই লাগে। মাঝে মাঝে মণিও আমার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। ও আমার থেকে পাঁচ ফুট দূরে বসে আছে। ইচ্ছা করছে ওর পাশে গিয়ে বসি। কিন্তু ওদের বাড়িতে এসে পাশে বসাটা ঠিক হবে না।

-ঐ তুই কি দেখস সাজিদ? আমি নড়েচড়ে বসলাম। ট্রে তে করে নাস্তা এনেছেন মণির বড় বোন মিতু।
-না আপু কিছু না। টিভি দেখছি।
-টিভির দিকেই তাকিয়ে নাস্তা করো।
-জ্বী।

ওনি জানে আমি মণিকে পছন্দ করি। আমি মণির আশে পাশে গেলেই ওনি কোথা থেকে যেন এসে পরে। ইচ্ছা করে ওনাকে গুম করে ফেলি। ওনার জন্যই এ পর্যন্ত আমি মণিকে কিছুই বলতে পারলাম না।

-কিরে খা।
-খাচ্ছি তো।
-মণি তুই ভিতরে যা। পড়তে বস। মণি মিতু আপুর কথাটা শুনে মুখটা মলিন করে চলে গেল। ও চলে যাওয়াতে আমারো ভাল লাগছে না।
-আপু আমি যাই।
-কেন কেন??
-পড়া আছে তো।
-আচ্ছা তাহলে যা। ভাল করে পড়িস। ডানে বামে যাওয়া ভালো না।

কথাটা কেমন যেন রহস্যময় মনে হলো। কিন্তু রহস্যটা না বুঝার ভান ধরে চলে আসলাম। কারন কথা বললেই ওনি প্যাচ ধরবে। মাথায় সারাক্ষণ মণির কথা। ওকে ছাড়া কিছুই মাথায় আসে না। কিন্তু ওকে বলার আগে আমি চাই আপুকে বুঝাতে। যাতে ওনি কোন সমস্যা না করে। তাই গ্যাস দিয়ে ফুলাতে হবে ওনাকে।

দুঃখিত। পরিচয় পর্বটা দিতে ভুলে গেছি। মণি আমার থেকে দুই বছরের ছোট। ও এবার দশম শ্রেণীতে পড়ে। আর আমি দ্বাদশ শ্রেণী তে। আর আমার দুশমন মানে মিতু আপু পড়ে অনার্স প্রথম বর্ষে। আমরা একই এলাকায় থাকি। মণিদের সাথে আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা আছে। সেই সুবাদে আসা যাওয়া হয় আর কি। এখন মণিদের বাসায় যাচ্ছি। গেইটে গিয়েই দেখি মণির সাথে আপু বসে আছে। হাতের সাদা গোলাপটা ফেলে দিলাম রাস্তায়। আর সাথে সাথেই একটা ছাগল এসে ফুল টা খেয়ে ফেলল। আমার ভালবাসা কি তাইলে ছাগলের খাদ্যাংশে পরিণত হচ্ছে??? এসব এসব ভাবতে ভাবতেই ওদের সামনে গেলাম।

-হাই আপু।
-কিরে তুই আজ এত সাত সকালে?
-আসলাম। কেন সমস্যা আছে নাকি?
-না। মণি যা তো চা নিয়ে আয়। কথাটা শুনে আমি বলে উঠলাম….
-না না। আমি চা খাবো না।
-ঐ তোর জন্য কে চা আনবে রে? চা আমার জন্য আনতে বলেছি। মণি মন খারাপ করে চলে গেল। আর আমি লজ্জায় আর কিছু বলার সাহস পেলাম নাহ। তারপর ওনি বলে উঠলো…

–কিরে কই নাকি মেলা হচ্ছে? যাবি না?
-আমিও শুনছি। ঐ বাজারের পাশের মাঠে।
-আমাকে নিয়ে যাবি ভাই?? প্লিজ। কথাটা শুনে ভাবলাম মণির সাথে সময় কাটানোর একটাই সুযোগ। তাই বললাম…
-নিয়ে যাবো কিন্তু শর্ত আছে।
-কি শর্ত বল।
-তুমি খুব ভাল করেই জানো আমি মণিকে পছন্দ করি।
-তো কি?
-ওর সাথে লাইনটা ঠিক করে দিতে হবে।
-মাইর কয় প্রকার এবং কি কি জানো??
-এটা পুরান ডায়লগ। নতুন কিছু বলো। কথাটা শুনে মিতু আপু আমাকে মারতে আসতেই আমি দৌড় দিয়ে একটু দূরে গিয়ে বললাম…

-তোমাকে আইসক্রিম খাওয়াবো, মেলা থেকে অনেক কিছু কিনে দিবো, কেএফসি তে নিয়ে খাওয়াবো। প্লিজ আপু ঠিক করে দাও।
-তোরে কুইট্টালবাম।

কথাটা শুনে আমি ভাবছি এই অফারগুলো মণিরে করলেই পারতাম। ও একটু ইম্প্রেস হইতো। আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম। বিকালে আম্মু এসে ঘুম থেকে উঠিয়ে বলছে যে মিতু আপু নাকি আমাদের বাসায় এসেছে। শুনে তো আমার মাথা স্তব্ধ হয়ে গেছে। বিচার দিলে তো আমি শেষ। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে ওনার সামনে গেলাম।

-আপু আপনি হঠাত??
-মেলায় যাবো। রেডি হয়ে আয়। প্রশান্তিমুলক উত্তর শুনে শান্ত হলাম।কিন্তু মণিতো আসেনি। এটা দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো।
-আপু মণি যাবে না?
-নাহ। ওকে নিবো না।
-তাহলে আপনারও যাওয়ার দরকার নাই। বাসায় গিয়ে মুড়ি খান।
-কি বললি? যাবি না?
-শুনলেনই তো।
-আচ্ছা। মণি এসে পর। মেলায় যাবো না।

-এখানে আবার মণিকে কই পাইলেন?? এটা বলেই পিছনে তাকিয়ে দেখলাম মণি দাঁড়িয়ে আছে। আজ অনেক সুন্দর লাগছে মণিকে। ক্রাশ খেলাম।
-কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল বাসায় যাবো। বাসায় যাওয়ার কথা শুনে মেয়েটা মুখ গোমরা করে চলে যাচ্ছে। তারপর আমি ওদের কে আটকিয়ে বললাম…
-আপু আমিতো মজা করছিলাম। মেলায় যাবো তো।
-না থাক।
-থাকবে কেন? একটু অপেক্ষা করেন আসছি।

এভাবেই কাটলো অনেকদিন। আমি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। মণি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে।মণি এখন ফোন ব্যবহার করে। তাই মণির সাথে আমার প্রায়ই ফোনে কথা হয়। কারন কয়েক মাস আগে মিতু আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। তবুও আমার মনের কথা মণিকে এখনো বলার সাহস পাচ্ছি না।

মণির সাথে দেখা করবো। কাল রাতে ওকে আমি মেসেজে ‘কাল দেখা করতে পারবে?’ লিখে পাঠিয়েছি। তারপর ও বলল দেখা করবে। আল্লাহ জানে কি হয়। অনেক্ষন একটা বেঞ্চে বসে আছি। পার্কের বেঞ্চগুলো দুমুখো। মানে দুই পাশেই বসা যায় হেলান দিয়ে। মণি আসছে না এখনো। একটু পর দেখলাম একজন বোরকা পরা মহিলা এসে আমি যে বেঞ্চে বসে আছি সেটাতেই বসলো। কিন্তু বিপরীত পাশে। আর কোন বেঞ্চও খালি নেই। একটু পর দেখলাম মণি আসছে। মহিলাটাকে উঠে যেতেও বলতে পারছি না। তাই ভাবলাম পার্কে সবাই যার যার মতোই থাকে। তাই মণিকে আমার পাশেই বসতে বললাম।

-এত লেইট কেন?(আমি)
-আপু বাসায় আসছে তো তাই।। অপেক্ষা করতে কতো কষ্ট বুঝতে পারছো?
-বুঝলাম না।
-না কিছু না। বলো কি বলবা?
-অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি বলতে। হয়ত তুমি বুঝতেও পারছো আমি কি বলতে চাই।
-না আমি বুঝি না। বুঝিয়ে বলো।
-আসলে তুমি তো জানো আমি তোমাকে..
-কি??
-ভালবাসি।

মণি মিষ্টি একটা হাসি দিলো আর লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকালো।ওর হাসিটা সম্মতিসূচক ইঙ্গিত করলো।তারপর আমি ওর পাশে আরেকটু কাছাকাছি বসলাম। মণি চুপ করে আছে। আমি কিছু না বলে আস্তে করে ওর হাতটা ধরে ফেললাম। আর সাথে সাথেই পিছন থেকে ওই বোরকা পরা মহিলা আমার কলার চেপে ধরলো।

-এই কি? আপনি আমার কলার ধরলেন কেন? সাথেই সাথেই মহিলাটা বোরকার মুখোশটা খুললো। কিন্তু মুখটা দেখে আমার হাত পা বরফ হয়ে গেলো।
-মিতু আপু আপনি এখানে??(আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম।)
-আমার বোনের হাত ধরছিলি কেন?(মিতু আপু)
-কই নাতো। মণি আমি তোমার হাত ধরেছি???
-হুম। আপু ও আমাকে ভালবাসি বলছে।(মণি)মণি আমাকে এত বড় প্রব্লেমে ফেলতে পারলো?? ও মিতু আপুকে নিয়ে আমার সাথে মজা করলো?

-কিরে তুই আমার বোনকে এসব কেন বলছিস?

আমি উত্তর দিলাম না। নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।তারপর মিতু আপু মণির হাতটা ধরে আমার হাতে দিয়ে দিলো। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আপুর দিকে। তারপর বলল…

-আমার বোনটাকে দেখে রাখিস। আমি তো চলে গেছি অন্যের বাড়িতে। মণির লজ্জাবতী মুখটা দেখে আপু বলল…
-আমি যাই। আর বিরক্ত করবো না তোদের।হিহিহি।আমি কিছুই বললাম না। আসলে সব কিছু কেমন যেন রহস্যঘন লাগছে। আমার মস্তিষ্কে কিছুই ঢুকছে না।আপু চলে যাওয়ার পর মণি বলল…

-আপু আমাকে অনেক আগে থেকেই হেল্প করছে। তোমার সাথে কথা বলতে ফোন আপুই কিনে দিয়ে ছিলো। কিন্তু তোমাকে বুঝতে দেয়নি। কথাটা শুনে আমি কি বলবো বুঝতেই পারছিনা। আমি শুধু একটু হাসলাম। তারপর মণি আস্তে করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এখন বুঝলাম মণিকে আমার জড়িয়ে ধরতে হবে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত