জ্বর গায়ে ঘুম নেই আমার । রাত তখন ১১ টা। মা অনেকবার দেখে গেলো। কিন্তু এতক্ষনে মা ঘুমায় নি। কারন আমি অসুস্থ বলে।
এমনভাবতে ভাবতে হঠাৎ দরজার কটকট শব্দ হলো। আমি দরজার দিকে তাকাতেই দেখি মা আমাকে আবার দেখতে এসেছে।
কাছে এসেই আমার পাশে বসেই হাত দিয়ে মাথা হাতিয়ে দিতে দিতে….
– কি খোকা ঘুম আসতেছে না ?
– না মা।
– ঠিক হয়ে যাবে সব। ডাক্তার কাকা বলেছে।
– মা আমার খুব খারাপ লাগতেছে।
– আচ্ছা আমি হাত বুলিয়ে দেই। তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর?
– ঘুম তো আসে না মা।
– তুই চোখ বন্ধ করে থাক। আমি হাত বুলিয়ে দেই।( মায়ের হাতে মনে হয় অদ্ভুত যাদু আছে। হঠাৎ আমি কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি বুঝিনি।
হঠাৎ মাঝরাতে আবার ঘুম ভাঙলো আমার। তখন উপর দিকে তাকিয়ে দেখি মা মাথা ঝুকাচ্ছে।
আমি হতবম্ব হয়ে তরিমরি করে উঠে বসলাম। মা চমকে গিয়ে …..
– কি হয়েছে খোকা। উঠে গেলি যে। শরীর বেশি খারাপ।
– না মা। তুমি এখনো ঘুমাও নি কেন?
– আমি ঘুমালে তোর শরীর যদি রাতে বেশী খারাপ হয় , জ্বর যদি বেড়ে যায় রাতে।
– আমি তো সেই কখন ঘুমিয়ে গেছি। তো তুমি ঘুমালে পারতে।
– তোর এমন অবস্থায় রেখে। ঘুম হবে না আমার।
– তা বলে তোমার শরীর খারাপ হবে তো। যাও ঘুমাও?
– না খোকা। তুই ঘুমিয়ে থাক। তুই ঘুমালে আমি শান্তি পাই। তোর কষ্ট কম হয় ঘুমালে। ঘুমা তো তুই!
(আমি শুয়ে পড়লাম আবার ও। শুয়ে উপরের দিকে মাকে দেখছি। কিছুক্ষণ পর….)
– মা বলোতো। সবার মা কি এমনই তার সন্তানদের আদর করে?
– এ আবার কেমন প্রশ্ন। পৃথিবীতে সবার বাবা মা ই তাদের সন্তানদের ভালোবাসে। বাবা মায়ের কাছে সন্তানই হলো তাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
( মা এমন কথা বলাতেই জ্বর চোখে পানি চলে আসলো আমার।
মা তখন আমার মাথার একপাশে হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে মাথা হাতিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ আমার চোখের গরম পানি তার হাতে পড়াতেই।
মা নিচেরদিকে তাকিয়ে বলে….)- কি খোকা কাঁদিস কেন?
– মা আমি কত বড় হয়ে গেছি। কিন্তু তুমি এখন ও সেই ছোটবেলার মতোই ভালোবাসো, আদর করো।
– ওরে পাগলা এই কথা!
– না তোমার কত কষ্ট হচ্ছে। তুমি সারারাত জেগে আমাকে সেবা করছো। এটা পৃথিবীর আর কেউ করবে না তুমি ছাড়া।
– সন্তানের জন্য মা যা কিছু করে তাতে মায়ের কোন কষ্ট হয় না । তুই ঘুমা তো।
– মা!
– কি?
– আমার কপালে একটা চুমা দাও।
– কেন রে! আচ্ছা দেই… ……. ঘুমা এখন?
( মা একটা চুমা দিলো। আমি মার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা।
পরে আবার ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি সকাল ৮.৪৯ বেজে গেছে। হঠাৎ মা আসলো।
– কি ঘুম ভাঙলো তোর ?( মা হাতে এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসেছে)
– এই নে দুধ খেয়ে নে?( মার যেন আমাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো লেগেই আছে। বাবাকেও মনে হয় গুছিয়ে দিয়ে অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এখন আবার আমাকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
আবার যখন রুম এ আসলাম তখন দেখি আমার সব খাবার বিছানাতে। তারপর মা নিজের হাতে খাইয়ে দিলো ।
আমার তো বিছানা থেকে আর উঠতেই হলো না। সকালের সব খাবার বিছানাতেই খেতে হলো আমাকে।)
(এভাবেই বয়ে চলছে আমার মায়ের ভালোবাসা আমার আর আমার বাবার বুকে।
এই অফুরন্ত ভালোবাসার ঋণ সারাজীবনেও পরিশোধিত হবে না।
————-পৃথিবীতে সবচেয়ে শান্তির স্থান হলো মায়ের আচল তলের ছায়া।
সেই ছায়ায় রয়েছে স্নেহ, মায়া মমতা, বুক ভরা ভালোবাসা যার পুর্ণতা আমরা অনুভব করেও এর শেষ খুজে পাবো না।
মা নামের এই মানুষটি তার সন্তানকে যতটুকু সেবা ভালোবাসা প্রয়োজন তার থেকে কখনও কম নয় অতিরিক্ত বেশী দিয়ে থাকেন।