ভালবাসার বিবর্তন

ভালবাসার বিবর্তন

-আচ্ছা তোর কাছে ভালবাসা মানে কি??
-আমার কাছে ভালবাসা মানে যেটা আমি করি।
-ফ্লার্ট করা মানে ভালবাসা??
-হুম। সেটাই।
-একদিন বুঝবি!!
-কি বুঝবো??
-যখন সত্যি সত্যি কাউকে ভালবেসে হারাবি তখন বুঝবি।
-হাহাহা
-সাজিদ এখনো প্রপোজ করেছে??
-আরে নাহ তবে আমি ইংগিত দিচ্ছি যাতে প্রপোজ করে।
-তুই পারিস ও বটে।

কথাটা শুনে হাসছে মেয়েটা। যে মেয়েটা হাসছে তার নাম ইলমা। ভীষণ সুন্দরী মেয়ে। রাস্তা দিয়ে হাটলে ছেলেরা পিছু নিবে। মানুষের সাথে প্রেম করে হঠাৎ করে ব্রেক আপ করে দেওয়া এখন তার অভ্যাসে রুপ নিয়েছে। সাজিদ ও তাদের মধ্যে একজন ভুক্তভোগী হতে যাচ্ছে।কিভাবে পা দিলো ওর ফাঁদে শুনুন তাহলে একটা ছেলে অফিসে যাবার জন্য বাসের অপেক্ষা করছে। ছেলেটার চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। ছেলেটার এক হাতে একটা ল্যাপটপ ব্যাগ আরেক হাতে ঘড়িতে বার বার সময় দেখছে। বুঝাই যাচ্ছে খুব দেরী হয়ে যাওয়াতে ছেলেটা এরকম করছে। ইলমাও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো। সাথে ওর বান্ধবী নিপা। হঠাৎ বান্ধবী বলল…

-দোস্ত ছেলেটাকে দেখ। খুব স্মার্ট না। ইলমা ওর বান্ধবীর দিকে একটু বিরক্তিকর ভাবে তাকিয়ে বলল…
-চশমা পরে ছেলেটা। আবার মোটা ফ্রেমের। এরকম ক্ষ্যাত টাইপের ছেলে তোর ভাল লাগে??
-আরে চশমা পরা ছেলেদের আমার খুব ভাল লাগে। আল্লাহ আমার কপালে যাতে এরকম একটা ছেলে দেয়।
-ছেলের সাথে কথা বল তাহলে।
-ধুর। আমার দ্বারা এসব হয় না। লজ্জা লাগে।

-তাহলে আমি যাই কথা বলতে???
-কি ভাবছিস?? এটাকেও পটিয়ে ফেলবি?? শোন। এসব ছেলেরা খুব সহজে প্রেমে পরে না।
-ওকে। তাহলে তুই একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাক।
-কি করবি??
-দূর থেকেই দেখ।
-আচ্ছা। ইলমা একটু পর ছেলেটার সামনে গিয়ে বলল….

-ভাইয়া আপনাকে একটা কথা বলি। একটু হেল্প করতে পারবেন প্লিজ.?
-কি হেল্প??
-ভাইয়া আসলে আমার বাসা থেকে টাকা আনতে ভুলে গেছি। এখন যদি আবার টাকা আনতে বাসায় যাই তাহলে খুব দেরী হয়ে যাবে।
-ওহ। ছেলেটা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ইলমা পিছনে নিপার দিকে তাকালো। নিপা ওর অবস্থা দেখে হাসছে। ওর হাসি দেখে ইলমার মাথাগরম হয়ে গেলো। তারপর ওই ছেলেটাকে বলল….

-যদি একটু হেল্প করতেন। বিশ্বাস করেন আপনি আমাকে আপনার নাম্বার দিয়ে যান। আমি টাকাটা ফিরিয়ে দিবো। বিলিভ মি।

সুন্দরী রমণীদের কথা রাখতে হয়। তাই ছেলেটার বেলায় ও এর ব্যতিক্রম কিছুই হলো না। পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে দিতে ছেলেটার যতটা হাত কাঁপছিলো মেয়েটার বেলায় একটুও কাঁপেনি। এমন ভাবে টাকাটা নিলো যেন এটা মেয়েটার অধিকার। ওহ আরেক কথা মেয়েটা ছেলেটার ফোন নাম্বারটাও রেখে দিলো। কারণ মেয়েটার আসল উদ্দেশ্য ছেলেটার সাথে প্রেম করবে, টাকা নেওয়া নয়। রাতে ইলমা তার দুইটা প্রেমিকের সাথে কথা শেষ করে বাস স্ট্যান্ডের ছেলেটার নাম্বারে কল দিলো। দুবার রিং হলো কিন্তু ধরলো না। ইলমা আবার কল দিলো তারপর রিসিভ করলো। ফোনেই ঝাড়ি দিয়ে বলল…

-আজব। তোমার সমস্যাটা কি? কত বার কল দিছি দেখছো?? কি করছিলা এতক্ষণ তুমি??
-কে বলছেন??
-আমাকে চিনো না?? আরে এটা আমার নতুন নাম্বার।
-আপনার নতুন নাম্বার বুঝলাম। কিন্তু আপনি কে??
-তোমার প্রেমিকা। তোমার জান,কলিজা, সব।
-দুঃখিত। রঙ নাম্বার। রাখছি।

-এই এই রাখবেন না। সরি সরি।
-হুম। এখন বলুন। কে আপনি??
-আরে আমি ইলমা।
-কোন ইলমা??
-আরে যাকে আজ আপনি টাকা দিয়েছেন বাস স্ট্যান্ডে।
-ওহ। আমার এই নাম্বারে বিকাশ একাউন্ট আছে। টাকাটা পাঠিয়ে দিবেন।
-আপনি তো আজব মানুষ!!
-কেন??
-আপনি আমাকে হেল্প করেছেন ভাল কথা। টাকাটা নিয়েছি আপনার থেকে ধার হিসেবে। এভাবে টাকা চাইতে হয়?? ফর্মালিটির জন্য একটু জিজ্ঞাসা করবেন তো কেমন আছি, কোথায় থাকি, এসব।

-কেমন আছেন??
-ভাল। আপনি??
-ভাল।

-আপনার নামটা কি??
-সাজিদ।
-ওহ। কোথায় থাকেন??
-ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ।
-আমিও তো শুক্রাবাদেই থাকি।
-তাহলে তো ভালই হলো।
-আচ্ছা টাকাটা বিকাশ করে না দিয়ে দেখা করতেই তো পারি আমরা। তাই না??
-দেখা করবেন??
-হুম।

-কোথায়??
-ধানমন্ডি লেইকে।
-আচ্ছা শুক্রবার দেখা হবে।
-ওয়েট ওয়েট। শুক্রবার কেন?? কাল দেখা করি??
-আপনি হয়তো জানেন আমি একটা জব করি।
-ওহ। তাহলে শুক্রবার দেখা হচ্ছে??
-হুম। আর টাকাটা মনে করে নিয়ে আসবেন।
-ওই মিয়া। মাত্র পাঁচশ টাকা নিছি।
-হুম। মাত্র পাঁচশ টাকা নিয়ে আসবেন মনে করে।

ইলমা ফোন কেটে দিলো। এত কিপটা মানুষ হয়। সব কিছুর প্রতিশোধ তুলতেই হবে ওর। ইলমা অনেক্ষণ যাবত পার্কে অপেক্ষা করছে সাজিদের জন্য। ছেলেটা আসার পর ইলমা পাঁচশ টাকা হাতে দিয়ে বলল…

-আপনার সাথে আমার কোন দেনাপাওনা নেই।
-হুম। ধন্যবাদ।
-চলেন কোথাও বসি।
-আচ্ছা চলেন।

ইলমা আর সাজিদ একটা জায়গায় বসলো। কিন্তু ইলমার মনে হচ্ছে তাকে কেউ একজন পিছন থেকে ফলো করছে। পিছনে তাকিয়ে ভাল করে দেখলো লোক টাকে। আরে এটা তো সেই বিরক্তিকর ছেলেটা। নাম জাহিদ। ইলমা জাহিদের সাথে দু মাস প্রেম করেছিলো। প্রায় এক বছর আগের ঘটনা। কিন্তু জাহিদ ওকে এখনো পিছু নেয়। বিরক্ত করে। তাই ইলমা ছেলেটার সামনে থেকে পালিয়ে বেড়ায়। ছেলেটাকে দেখার পর ইলমার কপালে নাকে ঘাম হচ্ছে। সাজিদ ইলমার দিকে তাকিয়ে বলল…

-এখানে বসতে বলে চুপ করে আছেন যে??
-চলুন আজ উঠি।
-আচ্ছা চলুন।

ইলমা তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে আসে। রাতে ইলমা বারান্দায় বসে আছে। এমন সময় সাজিদ কল দিলো ইলমাকে। ইলমার ঠোটের কোণে একটা প্রতারণাময় হাসি। হয়ত ও মনে মনে বলছে…

-সাজিদ তুমি আমার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছো!!! ইলমা কলটা রিসিভ করলো। তারপর বলল…
-কি ব্যাপার?? আজ মহারাজ নিজ থেকে কল দিলো যে??
-না আসলে প্রতিদিন আপনিই তো কল দিতেন। তাই ভাবলাম আজ আমিই দেই। আর আপনি যেরকম মেয়ে আমি যদি কল না দিতাম তাহলে কাল নিশ্চয়ই আমাকে কল দিয়ে বলতেন “টাকা পেয়ে ভুলে গেলেন??? ইলমা কথাটা শুনে হিহি করে হেসে উঠলো। তারপর সাজিদ আবার বলল…

-আমি কি কিছু ভুল বললাম??
-না না। ঠিকই বলেছেন।
-কেমন আছেন??
-এই তো ভাল। আপনার খবর কি???

এভাবেই চলতে থাকলো তাদের কথোপকথন। প্রতিদিন একে অপরকে কল দেওয়া টেক্সট করাটা চলতেই থাকলো। আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে দুজন। ইলমার এত বিএফকে সময় দিতে গিয়ে সাজিদকে তেমন একটা সময় দিতে পারেনা ইলমা। যখন ইলমার ফোন ওয়েটিং থাকে তখন সাজিদকে মিথ্যা অজুহাত দিয়ে কথা ঘুরিয়ে দিতো। আর সাজিদ সেটাই বিশ্বাস করে মনের মধ্যে ভালবাসার ঘর বানানো শুরু করলো। আর ইলমার কথা আর কি বলবো!! সাজিদের সাথে ভালবাসা নিয়ে মধুর মধুর বাণী শুনাতো, প্রেমের পবিত্রতা সম্পর্কে জ্ঞান দিতো। আর এগুলো শুনেই সাজিদের মনে ওর প্রতি ভালবাসা বেড়ে যেত। অনেক তো হলো। ইলমা সাজিদকে বিভিন্ন ইংগিতে বুঝাতে চাচ্ছে যে সে সাজিদকে ভালবেসে ফেলেছে। এখন শুধু অপেক্ষা সাজিদ কবে ওকে প্রপোজ করবে। ইলমা আর নিপা হাঁটছে এক সাথে।ইলমাকে ওর তিন নাম্বার বিএফ বার বার কল দিচ্ছে।কিন্তু ইলমা রিসিভ করছে না। নিপা সেটা দেখে বলল…

-কিরে ফোন রিসিভ কর!
-আরে এটা সারাদিনই কথা বলতে চায়। তাই ভাবছি নাম্বারটা ব্লক লিস্টে ফেলে দিবো।
-ঐ চাশমিশ পোলার খবর কি?
-কার কথা বলছিস??
-সাজিদ না কি যেন নাম।

-ওহ। হ্যা। আর বলিস না। ওকে এত ভাবে বুঝাচ্ছি যে আমাকে আই লাভ ইউ বলতে কিন্তু বলছেই না। তাই ভাবছি আমিই প্রপোজ করবো।
-ধ্যাত। তুই পারবি না।
-ওকে তাহলে এখনি হয়ে যাক।
-আচ্ছা। ইলমা ফোনটা নিয়ে সাজিদকে কল দিলো। সাজিদ রিসিভ করে বলল…
-তোমার কথাই ভাবছিলাম। তুমি তো আমাকে কল দিতে বারণ করেছিলে তাই দেইনি।
-ওহ তাই??
-হুম। তুমি কোথায় এখন??
-আমি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। আসলে আমার শরীরটা খুব খারাপ।
-কেন কি হয়েছে??
-জানি না। তবে মনে হচ্ছে খুব বড় কিছু। কিন্তু আমি তোমাকে এখন এই মুহুর্তে একটা কথা বলতে চাই!

-হুম বলো।
-আই লাভ ইউ সাজিদ।
-তুমিও আমায় ভালবাসো??
-হুম। তুমি তো কিছুই বলোনি তাই আমিই বললাম।
-আমিও তোমায় অনেক ভালবাসি। আর আজীবন বাসবো।
-আচ্ছা পরে কল দিবো। এখন রাখছি। ফোনটা রেখেই ইলমা হাসতে শুরু করলো আর বলল…
-নিপা ছেলেটা আমার প্রতি অনেক আগেই দুর্বল।

কিন্তু একটা কথা হলো আমি এ পর্যন্ত যতগুলো ছেলের সাথে কথা বলেছি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেয়ার করে সাজিদ। ওকে আমি যেটা বলবো সেটাই করবে। আমি ওর সাথে কথা বলতে কেন জানি বিরক্ত হই না। মন খারাপ থাকলে ওর সাথেই কথা বলি।

-শেষ পর্যন্ত এই ছেলের প্রেমেই পরলি মনে হচ্ছে।
-ধ্যাত।

ইলমার সাথে রিলেশন চলতে থাকলো সাজিদের। সাজিদ ইলমাকে নিজের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চায় কিন্তু ইলমা আস্তে আস্তে কেমন যেন পালটে যাচ্ছে। কারণ সাজিদের অতিরিক্ত ভালবাসা তার সহ্য হচ্ছে না। ইলমার সব কিছুতে সাজিদ মতামত দিতে চায় কারণ সাজিদের কাছে ভালবাসার মানে সুখ দুঃখের সাথী হয়ে এগিয়ে চলা। হয়ত এটা বুঝার ক্ষমতা নেই। এক দিন সাজিদ পার্কে গিয়ে দেখলো ইলমা কার যেন হাত ধরে বসে আছে। সাজিদ ওকে কিছু না বলে বাসায় চলে যায়। তারপর ইলমাকে রাতে কল দিলো।

-ইলমা তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো??
-হুম করো।
-তুমি আমাকে ভালবাসো না??
-হুম বাসি তো। সন্দেহ আছে কোনো??
-আজ পার্কে দেখলাম একটা ছেলের সাথে তুমি হাত ধরে বসে আছো। ওটা কি তোমার বন্ধু??
-মা. মা. মানে?
-আজ পার্কে আমি তোমাকে দেখেছি।
-দেখেই যখন ফেলেছো তাহলে বলেই ফেলি।ওটা আমার বিএফ। আসলে আমি তোমার সাথে মজা করতে চেয়েছি। তুমি খুবই ভাল একটা ছেলে। আসলে আমি তোমাকে ভালবাসি না।
-কেন করলে এরকম??
-আসলে আমি জানি না কেন করলাম তবে সরি। তুমি খুব ভাল কাউকে পাবে। আমাকে নিয়ে কষ্ট পেয়ো না। ভাল থেকো।

এটা বলেই ইলমা ফোনটা রেখে দিলো। সাজিদ এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা এটা কি হলো। কখনো ইলমার প্রতি তার সন্দেহ কাজ করেনি। ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েটিং এ থাকার কারণ গুলোও অজানা ছিলো কিন্তু এখন সবই ওর কাছে পরিষ্কার। সবার জন্য ভালবাসা না। ভালবাসাকে যারা সম্মান করে তাদের জন্য ভালবাসা। ইলমার জন্য ভালবাসা ঘৃণায় পরিণত হতে যাবে এক সময়। এটা হওয়ার ছিলো।

সাজিদের সাথে ব্রেক আপ হওয়ার পর ইলমার কিছুই ভাল লাগছে না। আগে যখনি মন খারাপ হতো তখন ইলমা সাজিদের সাথে কথা হতো কিন্তু এখন পারছে না ওকে কল দিতে। আচ্ছা ওকে ইলমা এত মিস করছে কেন?? এটা কি ভালবাসা?? হতেও পারে। ইলমার মস্তিষ্কে কেবল সাজিদের কথাই আসছে। রাতে ঘুমানোর সময় কেন জানি সাজিদের সাথে একটা বার কথা বলতে ইচ্ছা করছে। সাজিদের ফোনটা বাজছে। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো খুব পরিচিত একটা নাম্বার। ইলমার নাম্বার এটা। কিন্তু ও কল দিলো কেন?? অনিচ্ছাসত্ত্বেও কল রিসিভ করে বলল..

-কেন কল দিছো??
-একটা কথা বলবো।
-অফিসের কাজ বাকি আছে। যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
-তোমাকে তো আগেও কল দিতাম অফিস টাইমে। কখনো তো এরকম বলোনি।
-তখন সেটা অন্যকেউ ছিলো আমার কাছে, তুমি না।
-একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো??
-হুম
-তুমি আমাকে মিস করো না??
-আর কিছু বলবেন??
-একটু ভাল করে কথা বলো।

সাজিদ ফোন রেখে দিলো। ইলমা আবার কল দিতে চেয়েও কেন জানি কল দিলো না। এদিকে ওর সব গুলো প্রেমিকের নাম্বার কেন জানি ব্লকলিস্টে ফেলে দিলো। ইলমার এরকম পরিবর্তন ওর নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছে। আচ্ছা এটার কারণকি সাজিদ?? ইলমা আজ সাজিদের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাজিদ অফিস থেকে বের হয়ে দেখলো ইলমা দাঁড়িয়ে। তারপর সাজিদ ওকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলো আর এমন সময় ইলমা আসলো সাজিদের সামনে। তারপর সাজিদকে বলল…

-একটু সময় দিতে পারবে??
-বলো।
-চলো একটু পার্কে যাই।
-আমার সময় নেই এত।
-প্লিজ।
-আচ্ছা তবে বেশিক্ষণ না। ইলমা আর সাজিদ হাটছে পাশাপাশি। ইলমা একটু পর বলল…
-আমাকে একটা বার মাফ করা যায় না??

-আবার শুরু করেছো ফ্লার্ট করা?? ইলমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। তারপর আবার কাঁপাকন্ঠে বলল…
-বিশ্বাস করো সাজিদ। আমি বদলে গেছি। প্লিজ আমাকে একটা বার সুযোগ দাও।
-কেন জানি মনে হচ্ছে নতুন করে তোমাকে ভালবাসতে পারবো না।তাই শুধুশুধু বাদ দাও। আমি ভাল আছি।
-আমি ভাল নেই। আমাকে তোমার ভালবাসতে হবে না। আমিই ভালবাসবো তোমাকে। অনেক ভালবাসবো। প্লিজ। একটা সুযোগ।
-আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি।। ইলমাকে রেখে সাজিদ চলে যাচ্ছিলো আর তখনি ইলমা সাজিদকে পিছন থেকে জাপটে ধরে বলল…

-সত্যিই তোমাকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছি।আজীবন বাসবো। সাজিদ ইলমার হাতটা ছাড়িয়ে “হুম” বলে চলে গেল। আচ্ছা তাহলে কি সাজিদ ইলমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে?? থাক। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। ইলমা সাজিদের মনে নতুন ভালবাসার উদ্ভব ঘটাবে। রাতে ইলমা সাজিদকে কল দিলো..

-হ্যালো। কি করছো??
-কাজ করছি।
-সাজিদ এসব কাজ এখন বাদ দাও। আমার সাথে কথা বলো এখন।
-দেখো এরকম আহ্লাদ এখন আর আমার ভাল লাগেনা। আমার কাজ আছে। আর শুনো আমি এখন থেকে এরকমি থাকবো। তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ভালবাসো নয়ত নাই। বাই। রাখছি।

-শুনো!
-আবার কি??
-খেয়েছো??
-হুম।
-আমি খেয়েছি কি না জানতে চাইবে না??
-প্রয়োজনবোধ করছি না।
-তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরো।
-হুম রাখছি।

এভাবেই চলতে থাকলো ভালবাসা। ইলমার কাছে এখন ওদের ভালবাসা এক পাক্ষিক মনে হয়। কারণ সাজিদ বদলে গেছে। এখন আর ইলমাকে সময় দিতে চায় না। সব সময় বলে কাজের চাপ। কিন্তু আগে তো এরকম ছিলো না। এই সাজিদ ওর সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতো। অথচ এখন ওর সাথে এমন ব্যবহার করে মনে হয় চিনেই না। ইলমা অবহেলা সহ্য করে করতে না পেরে প্রতিদিন রাতে কান্না করে বালিশ ভিজাচ্ছে। হয়ত এটাই ওর ভাগ্যে ছিলো। এভাবে পাপের শাস্তি পেতে হবে এটা কখনোই ও ভাবতে পারেনি।

আজকাল সাজিদ ইলমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। সাজিদ এতটা পরিবর্তন হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। যেই সাজিদ ওর সাথে কথা বলার জন্য সব কিছু ফেলে কথা বলতো সেই সাজিদের কাছে ইলমার এখন কোন দামই নেই। ইলমা কল দিলে সাজিদ বলে বন্ধুদের সাথে আছি নয়ত বাড়িতে আছে। ইলমা যদি এসব নিয়ে কিছু বলে তাহলে সাজিদ ওর অতীত নিয়ে অনেক কিছু বলে। আচ্ছা অনেক মানুষ অনেক ভুল করে কি অতীত ভুলে ভাল হতে পারে না?? তাহলে কেন সাজিদ বুঝে না। ইলমা সাজিদের অপমান সহ্য করতে পারে কিন্তু অবহেলা করতে পারে না। এটা সব কিছুর চেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।

আজ দুদিন হলো ইলমাকে সাজিদ কল দেয় না। ইলমা দিলেও বেশি একটা কথা বলতে চায় না। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে গান শুনিয়েই কাটিয়ে দেয় সময় গুলো। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। অনেকটা হাসি নিয়ে তাকালো ফোনের স্ক্রিনে। কিন্তু ও বোকা হয়ে গেল। নিপার কলটা রিসিভ করে বলল…

-হ্যা নিপা বল।
-দুদিন যাবত ভার্সিটি আসিস না যে??
-এমনি ভাল লাগে না রে
-সাজিদ কিছু বলেছে??
-কিছু বললেও খারাপ লাগতো না। কিন্তু অবহেলা করলে খারাপ লাগে।

-আমি ওর সাথে কথা বলবো।
-না থাক। ও আমার থেকে মুক্তি চায়।
-মানে?? কেন?? ও তো জানে এখন তুই ওকে ভালিবাসিস।
-ও বাসে না।
-ফোনটা রাখ তাড়াতাড়ি। সাজিদ কল দিছে। ইলমা সাজিদের কলটা রিসিভ করে বলল..
-কেমন আছো তুমি??
-আমার কথা বাদ দাও।তুমি বেশ ভাল আছো বুঝাই যাচ্ছে।
-মানে?? তুমি দুদিন আমার সাথে যোগাযোগ করোনি ভাল থাকবো কি করে??
-বাদ দাও তো। ফেইক ইমোশন দেখাইও না।
-কি বলছো এসব??

-এখন কোন ছেলের সাথে কথা বলছিলে??
-নিপা কল দিছিলো।
-হাহাহা। মিথ্যাটা আর কতো বলবে??
-তুমি চাইলে নিপাকে জিজ্ঞাসা করতে পারো।
-ওটা তো তোমার বান্ধবীই। রাখছি। এরকম বাজে টাইপের মেয়ের সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই।
-এটা তোমার অনেক দিন যাবত নেই সাজিদ।
-হুম। আর কখনো যোগাযোগ করবা না আমার সাথে। অন্য ছেলেদের সাথে প্রেম করো। বাই।

ইলমা কিছুই বললো না। মাঝে মাঝে নীরব থেকে অনেক কিছু বুঝানো যায় তবে সেটা বুঝার ক্ষমতা থাকতে হয় যেটা সাজিদের নেই। ইলমা চোখের জল ফেলছে না। মুচকি হাসছে। কারণ কষ্ট পেতে পেতে এখন আর তেমন কষ্ট হয় না ওর। এখন শুধু বেঁচে থাকার ইচ্ছা। ভালবাসা ছাড়া বাঁচা যায় না। তবে ইলমা বাঁচতে চায়। ভালবাসা ছাড়াই বাঁচতে চায়।ভালবাসারো বিবর্তন হয়। বিবর্তন হয়ে ঘৃণায় রুপান্তরিত হয়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত