একটা মাত্র দিন

একটা মাত্র দিন

এই নিয়ে টানা পঁয়ত্রিশ বার কল দিয়ে না যেতেই কেটে দিলাম। কেন জানি মনে হচ্ছে কল দেওয়াটা ঠিক হবে না। আবার কল দিতেও ইচ্ছা করছে। অনেক দিন হয়ে গেল ওর গলার স্বর শুনতে পারি না। আচ্ছা ও যদি কল রিসিভ না করে?? আর যদি রিসিভ করে বলে…

-কেন কল দিছো??

তাইলে কি বলবো?? অপমানিত হতে কারই বা ইচ্ছা করে? কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে ও আমার কলের জন্য অপেক্ষা করছে। তাই আবারো কল দিলাম। রিং হচ্ছে। আমার হৃদস্পন্দন একেবারে বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে হঠাৎ করে অফ হয়ে যাবে স্পন্দন। আর মাথা ব্যথাটা আজকাল বেড়েই যাচ্ছে। প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে এখনো।

-হ্যালো। কে বলতেছেন??

কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। দুই বছরের পরিচিত নাম্বারটাকে আজ সে চিনতে পারছে না। ঐদিন ও তো ও কল দিছিলো অথচ আজ বলছে…

-কে বলতেছেন?? আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম…
-আমি।
-আমি কে? আমি আবারো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম…
-আমি। ও কিছুক্ষণ পর বলল…
-ওহ হ্যা। বলো। অবশেষে সে স্বীকার করলো সে আমাকে চিনে। কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিলো হয়ত সে অপরিচিত ভেবে ফোনটা রেখে দিবে কিন্তু না। আমি বললাম…

-কেমন আছো??
-ভাল। ও আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না আমি জানতাম। তাই বলা শুরু করলাম…
-তোমার কি একদিন সময় হবে??
-কেন??
-এমনি। দেখা করবো।
-দেখি পরে জানাবো। রাখি। ও আমার সাথে কথা বলতে খুবই বিরক্ত হচ্ছে। আমার ইচ্ছা করছে ওকে বলি…
-আরেকটু কথা বলি??

কিন্তু বলতে পারিনি। ঐ ইগোর জন্য। আমিও রেখে দিলাম ফোন। কথা বলিনি আর। ফোনটা হাত থেকে রেখে আকাশের দিকে তাকালাম। আমাদের কথোপকথন অন্যরকম হতে পারতো যদি সে একবার বলতো…

-সাজিদ এতদিন পর তোমার মনে পরলো আমাকে?? তখন আমি হয়ত অশ্রুসিক্ত চোখে বলতাম…
-আজো একটা শব্দ আমার শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করতে যথেষ্ট আর সেটা হলো দিপা। হয়তো আমার কথা শুনে দিপাও অশ্রুসিক্ত চোখে অভিমান করে বলতে পারতো…
-তুমি আমাকে একটুও ভালবাসোনি।
-কে বলেছে ভালবাসিনি?? আজো ঠিক আগের মতো,হয়ত আগের চেয়েও বেশি ভালবাসি তোমায়। কথাগুলো এভাবে হলে কতটা সুখময় হতো সেটা কেবল আমার অনুভূতি গুলোই বুঝতে পারবে।

-আচ্ছা দিপা আমাকে কি মাফ করা যায় না??

দিপা আমার কথা শুনে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।ও আমাকে একটা দিন সময় দিয়েছে। আমি চাই এই কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যে আমাদের ভাঙ্গা সম্পর্কটা জোড়া লাগাতে পারি। আমি আবারো বললাম…

-প্লিজ। মাফ করে দাও আমাকে।
-খুব ভালবাসো আমাকে??
-হুম। খুব বেশি।

চোখ খুলে গেলো। ঘুম থেকে উঠে চোখে পানি দিলাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।আজকাল ভরদুপুর বেলাও দিপাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। ওর কাছে স্বপ্নে ক্ষমা চাচ্ছি। ক্ষমা চাওয়ার কারণ কি শুনবেন?? সেটা একটু পরেই বলবো আপনাদের। তবে জেনে রাখুন আমি খুব বড় একটা অপরাধ করেছি ওর সাথে। খুব বড় অপরাধ। কলেজে যাওয়ার পথে হঠাৎ বন্ধু কল দিলো। আমি রিসিভ করে বললাম…

-দোস্ত খবর কি তোর??
-ভালই। কিন্তু তোর একটা ব্যাপার ভেবে ভাল লাগছে না।
-আমার আবার কি ব্যাপার??
-দিপা কি তোকে ট্রু লাভ করত না??
-হুম। তুই তো জানোস ও আমাকে খুউউব বেশি ভালবাসত। আর আমি জানি এখনো বাসে।কিন্তু কি হয়েছে বল তো।
আমার বন্ধু কি যেন ভেবে বলল…

-না কিছু না। রাখি এটা বলেই ফোন রেখে দিলো হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করার মানে কি আমি বুঝতেছি না। একটু পর আবার কল আসলো সেই বন্ধুর নাম্বার থেকে।
-হ্যালো।
-আসলে তোকে কথাটা বলা দরকার তাই বলতেছি।
-হুম বল।
-দিপা একটা ছেলের সাথে নতুন করে রিলেশনে জড়াইছে নাকি??
-কে বলল??
-এই তো দেখলাম ছেলেটার সাথে ঘুরছে।

আমি ফোনটা রেখে দিলাম। কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। মাথা ব্যাথাটা এবারো বেড়ে গেল। চোখে কিছুই দেখতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হলো। দিপার সাথে যে ভুল করেছিলাম সেটা বলছি এখন। আসলে ও অন্য একটা ছেলের সাথে রিলেশন করতে চেয়েছিলো আর আমি সেটা জানতে পেরে যাই। আমি বেশ অবাক হয়ে ছিলাম ঐদিন। আমার সাথে রিলেশন চলাকালীন সময়ে দিপা অন্য কারো সাথে রিলেশন করার কথা চিন্তা করতে পারলো কিভাবে?? আর সেই জন্যই আমি ওকে অনেক অপমান করি। আর সেটা দিপা সহ্য করতে পারেনি। এটাই ভুল ছিলো আমার। খুব বড় ভুল। তাই না?? আজ দিপাকে আবারো কল দিলাম। রিসিভ করেনি। একটু পর ও কল ব্যাক করলো। আমি রিসিভ করলাম আর ও বলল…

-কল দিছিলা??
-হুম। তুমি তো বলেছিলা আমাকে একদিন সময় দিবে। কই আর তো কল দিলেনা।
-এমনি দেইনি।
-আসলে বলতে চাচ্ছি যে একটা দিন সময় দিতে পারবে না আমাকে?? একটা দিন মাত্র??
-বললাম তো আমি জানাবো।

দিপা কখনো আমার সাথে এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলেনি। আজ বলল। আমি ওর কথা শুনে খুব অবাক হয়ে গেলাম। এই কয়েকদিনে ও খুব পালটে গেছে। আমি বললাম…

-দিপা তুমি তো আমার সাথে কখনো এভাবে কথা বলোনি। ও হেসে হেসে বলল…
-কিভাবে কথা বলেছি?? আমার কথাটা ওর কাছে হাস্যকর মনে হলো ভেবে কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাই বললাম…

-রাখি। বাই।

ফোন কেটে দেওয়ার পর মনে হচ্ছে ওকে কল দেওয়াটা ঠিক হয়নি। ইগো আমাকে চিড়ে চিড়ে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে নিজের গালে নিজে চড় মারি।কেন যে কল দিলাম ওকে?? ডায়রীটা পড়ার পর আমি বেশ খানিকক্ষণ চুপ ছিলাম।আমি রিফাত। তিন বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। তিন বছরের প্রায়ই প্রতিটা রাতেই দেখি দিপাকে এটা পড়তে। কখনো কারো ডায়রী অনুমতি ছাড়া পড়া ঠিক না। কারণ ডায়রী শুধু একটা খাতা নয়, একটা মানুষের সব অনুভূতিগুলোর মিলনস্থল। কিন্তু আমি ডায়রীটা পড়লাম। খুব জানতে ইচ্ছা হচ্ছিলো কি আছে এটার ভিতর। দিপা ডায়রীটা আমার হাতে দেখে চমকে গেল। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর হাতের কফি মগটা কাঁপছে। আমি টেবিলের উপর ডায়রীটা রেখে ওর সামনে গিয়ে বললাম…

-কফিটা দিবা না??

দিপা আস্তে আস্তে হেঁটে আমাকে এড়িয়ে ডায়রীটার কাছে গেল। কফি মগটা টেবিলে রেখে ডায়রীটা হাতে নিলো। আমি বললাম…

-তারপর কি হয়েছিলো?? ও কিছু না বলে আমার দিকে পিছন করে দাঁড়ালো। তারপর বলল “ও আমাকে এরপর আবার কল দিছিলো। কল দিয়ে বলল…

-দিপা আমাকে কি একটা দিন সময় দিতে পারো না?? আমি ঐদিন ধমক দিয়ে বলেছিলাম..
-কি করবা আমার সাথে দেখা করে?? আমার বিএফ আছে এখন।
-তবুও শুধু একবার। শুধু একবার।
-না। প্লিজ আমাকে আর কখনো বিরক্ত করো না। প্লিজ। সাজিদ ফোন কেটে দিয়েছিলো সেদিন।” কথাটা বলে দিপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আমি তারপর দিপাকে বললাম..

-তুমি অন্য কারো সাথে রিলেশনে আছো জেনেও ও এরকম করেছিলো দেখা করার জন্য। কিন্তু তুমি ওর সাথে মিসবিহেব কেন করেছিলে?? আমি যখন এটা বললাম দেখলাম দিপার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। দিপা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। বলল..

-ও জানে আমি অন্য কাউকে ভালবাসতে পারবো না। সেজন্যই এরকম পাগলামো করতো। আমি অন্য একটা ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু ভালবাসিনি। ও বুঝতে পেরেছিলো আমি ওর থেকে দূরে সরে যাচ্ছি তাই সে আমাকে অনেক কিছু বলেছিলো। যেটা আমি সহ্য করতে পারিনি। আমি বুঝতে পারিনি ও আমাকে আগলে রাখতে এরকম করেছিলো। ও যা বলেছে আমাকে কাছে রাখতে বলেছে আর আমাকে ভালবাসে বলেই বলেছিলো। এটা বলেই ও আমাকে জাপটে ধরলো। কান্না করতে লাগলো খুব। আর বলতে লাগল…

-ওর সাথে কথা বলার পরের দিন ও অসুস্থ হয়ে পরে। হসপিটালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার বলল ওর নাকি ব্রেন টিউমার হইছে। সেখান থেকেই ওকে আর ফিরানো সম্ভব হয়নি। ওকে একটা দিন সময় দেইনি আমি। ও কান্না করেই যাচ্ছে। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি কিন্তু বলতে পারছি না “কান্না করো না।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত