ভালোবাসার জন্য ছুটি

ভালোবাসার জন্য ছুটি

মেয়েটির পরনে নীল রঙের শাড়ি আর হাতে হলুদ চুড়ি।এই দেখে একটি ছেলে এসে বলল

-একি আপনি নীল রঙের শাড়ির সাথে হলুদ রঙের চুড়ি কেন পড়েছেন?জানেন না নীল রঙের শাড়ির সাথে সবসময় নীল রঙের চুড়ি পড়তে হয়? মেয়েটি অবাক হয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে।

-এক্সিউজ মি??আপনি কি আমাকে কিছু বলছেন? ছেলেটি আশেপাশে তাকিয়ে বলল
-এখানে নীল শাড়ির সাথে হলুদ চুড়ি পড়া আর কাউকে তো দেখতে পারছি না।
-আমি নীল শাড়ির সাথে কি রঙের চুড়ি পড়বো সেটা কি আপনি ঠিক করে দিবেন?
-হ্যা
-হোয়াট?
-শুনুন নীল হলো অপেক্ষার রঙ।এটাকে যথাযথ সম্মান করতে হয়।
-অপেক্ষার রঙ মানে?
-মানে এই নীল রঙের শাড়ি পড়েই তো রুপা তার হিমুর জন্য অপেক্ষা করতো।
-একটু ভুল বললেন।হিমু রুপার ছিলো না।হিমুরা কারোর ই হয় না।হিমুরা সার্থপর। অনেকটা রাগের স্বরেই কথাটা বলল মেয়েটা। মেয়েটার নাম অধরা।আর আমাদের গল্পের ছেলেটার নাম সূর্য।

-হিমুর প্রতি অনেক রাগ দেখছি।আপনার জীবনে হিমু বলে কেউ ছিলো নিশ্চয়ই?
-সেটা আমার পারসোনাল বিষয়।
-রেস্টুরেন্ট টা খুব সুন্দর।তাইনা? অধরার এখন খেয়াল হলো ছেলেটা তার অনুমতি না নিয়েই তার সামনের চেয়ারটায় বসে পড়েছে।

-আপনি যে এখানে বসেছেন আমার অনুমতি নিয়েছেন?
-ওমা!নেই নি বুঝি?ঠিক আছে এখন নিচ্ছি। সূর্য চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বলল
-আপনার যদি অনুমতি হয় আমি কি এখানে বসতে পারি? বাধ্যগত ছাত্রের মত ওর কথা বলার স্টাইল দেখে হেসে দেয় অধরা।

-জ্বি বসুন।
-তা আপনি কি সিঙ্গেল? রাগী চোখে তাকায় অধরা।
-আরে আরে ভুল বুঝবেন না।আমি বলতে চাইছি আপনার সাথে আর কেউ নেই?কেউ আসবে?
-হ্যা।আসলে বাবা মা আমার জন্য একজন পাত্র ঠিক করেছেন।তার সাথে মিট করার জন্যই এসেছি।
-ওহ আচ্ছা।আপনার নাম জানা হলো না মিস..
-অধরা।
-নাইস নেইম।আমি সূর্য।
-ওহ
-তা কতক্ষণ লাগবে আসতে উনার?
-সেটা জানিনা।
-আচ্ছা তাহলে বরং উনি না আসা পর্যন্ত আমিও আপনার সাথে থাকতে পারি?
-হুম পারেন।

এভাবে কথা বলতে বলতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো কেউই বুঝে নি।বারবার ওয়েটার টা আসছে কিছু অর্ডার করবে কিনা সেটা জানার জন্য। সূর্য নিজের জন্য কিছু অর্ডার করলো। অধরাকে জিজ্ঞেস করাতে বলল

-না।উনি আসুক পড়ে অর্ডার করবো। আরো কিছুক্ষণ যাবার পর অধরার আর সেখানে বসে থাকতে ইচ্ছা করছে না।কিন্তু ওকে দেখতে আসবে যে ছেলেটা তার আসার কোনো খবর নেই। আম্মু খুব কড়া ভাবেই বলে দিয়েছে এই পাত্র যদি ওকে রিজেক্ট করে তাহলে নাকি উনি গলায় ফাঁস দিবেন।

-মিঃসূর্য
-জ্বি বলুন ম্যাম।
-অনেকক্ষণ তো হলো।আপনি আর কতক্ষণ আমার সাথে অপেক্ষা করবেন?আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন।

-আমি আপনার সাথে থাকার জন্য কি অসস্তি হচ্ছে?
-আরে না না।কি যে বলেন?আজকের দিন টা আপনি খুব সুন্দর করে দিলেন।আপনার কথা আমার অনেক দিন মনে থাকবে।
-তারপর নিশ্চয়ই ভুলে যাবেন?
-হ্যা।
-আপনার বাসা থেকে ফোন আসে নি?
-ফোন টা সাথে আনতে ভুলে গেছি।
-ওহ আচ্ছা।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে।চারদিকে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে।এই আলো আধারির পরিবেশ টা অধরার ভীষণ প্রিয়।কিন্তু আজ ওর ভালো লাগছে না।

-উনি বোধহয় আজকে আর আসবেন না।
-হ্যা…কিছু বললেন? অন্যমনস্ক হয়ে ছিলো অধরা।
-বলছিলাম যে উনি বোধহয় আর আসবেন না। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছিলো অধরার।
-আমারো তাই মনে হচ্ছে।চলুন উঠি।
-আরে উঠি কি বলছেন?এতক্ষণ রেস্টুরেন্টে বসে থেকে যদি কিছু অর্ডার না দেন নেক্সট টাইম কিন্তু আপনাকে আর এখানে ঢুকতে দিবে না।

-হাহা ঠিক আছে।ওয়েটার এদিকে একবার আসুন প্লিজ…
-খাবার খাওয়ার সময় কাঁদতে হয় না মিস অধরা। তবুও কান্না থামছে না ওর।কিন্তু খিদেও পেয়েছে ভীষণ। এতক্ষণ সেটা টের না পেলেও এখন বেশ টের পাচ্ছে। রাতে বাসায় ফেরার পর অধরারা বাবা জিজ্ঞেস করলেন

-এতক্ষণ কার সাথে ছিলে? অধরা ওর বাবাকে ভীষণ ভয় পায়।

-আসলে বাবা পুরো কথাটা শেষ করার আগে ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
-তুমি মেয়েটাকে মারছো কেন?(মা)
-মারছি কেন সেটা তোমার মেয়েকেই জিজ্ঞেস করো।(বাবা)
-কি হয়েছে?(মা)
-তুর্জয় ফোন দিয়েছিলো।জানিয়ে দিয়েছে ওর পক্ষে এই বিয়েটা করা সম্ভব না।(বাবা)
-সেকি!কেন?(মা)
-কারণ সে রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে দেখে তোমার মেয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

তাই সে দরজা থেকেই ফেরত চলে এসেছে। বেহায়া নির্লজ্জ মেয়ে।(বাবা) অধরা কিছু না বলে সেখান থেকে দৌড়ে তার রুমে চলে যায়। খাটের উপর ভ্যানিটি ব্যাগ টা ছুড়ে মারলো। আজকে ঐ ছেলেটার জন্যই তার বিয়ে ভেঙে গেল। রাগ হচ্ছে তার।আরেকদিন যদি ছেলেটার সাথে দেখা হয় তাহলে তার খবর আছে। কলিংবেল বেজে উঠলো।রাত প্রায় ১২ টা। অধরার মা কিছুটা বিরক্তই হলো। দরজা খোলার পর দেখলেন হাতে নীল রঙের কাচের চুড়ি নিয়ে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।

-কাকে চাই?আর কে তুমি?
-আন্টি আমি সূর্য।এটা অধরাদের বাসা?
-হ্যা।কিন্তু এত রাতে…আর কে তুমি?
-আমি কেউনা।আজকেই অধরার সাথে আলাপ। অধরা আজকে নীল শাড়ির সাথে হলুদ চুড়ি পড়ে গিয়েছিলো।মে বি ওর কালেকশনে নীল চুড়ি নেই।তাই নীল চুড়ি নিয়ে আসলাম।
-তুমি বাসা চিনলে কীভাবে?
-আসলে ওর ফিরতে দেরী হয়েছিলো।

তাই আমি  ওর পিছন পিছন রিকশা দিয়ে এসেছি।যেন কোনো বিপদ না হয়।আর কালকে আমি রাজশাহী চলে যাচ্ছি।তাই ভাবলাম আজকেই চুড়িগুলো দিয়ে যাই। অধরার মা হতভম্ব হয়ে গেলেন।হতভম্ব ভাব টা কাটার পর উনি চেঁচিয়ে অধরাকে ডাকতে লাগলেন।চেঁচামেচি শুনে অধরা ধর মর করে ছুটে আসলো।

-কি হয়েছে মা?
-এই ছেলেটা কে? অধরা সূর্য কে দেখে আৎকে উঠলো।
-আপনি!এখানে?আমার বাসা চিনলেন কীভাবে?
-আমি আপনার বাসা চিনলাম কীভাবে সেটা আন্টিকে বলেছি।আমি আপনাকে এই চুড়ি গুলো দিতে এসেছি।

এরপর যখন ই নীল শাড়ি পড়বেন সাথে নীল চুড়ি গুলো পড়বেন।নিন ধরুন। অধরা যন্ত্রের মত হাত বাড়িয়ে চুড়িগুলো নিলো। অধরার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।ও অপলক তাকিয়ে আছে সূর্যের দিকে।

-আচ্ছা মিস অধরা আজকে আসি।

সূর্য চলে গেল।অধরা এখনো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।অধরার মা অধরাকে অনেক কথা শুনাচ্ছে। অধরার কানে কিচ্ছু প্রবেশ করছে না। সে অবাক হয়ে ভাবছে “একি!ছেলেটার প্রতি এখন আর রাগ হচ্ছে না কেন?” নিজের লেখা এই গল্পটা মিঃআরাফ তার স্ত্রী মাহি কে শুনাচ্ছিলেন। মাহি জিজ্ঞেস করলো

-তুমি যে বললে ভালোবাসার গল্প লিখবে? এখানে ভালোবাসা কোথায়?
-ভালোবাসা সেটা তো নীল চুড়িতে।
-মানে?
-ছেলেটা সাত বছর ধরে চুড়িগুলো নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো তার ভালোবাসার মানুষকে চুড়ি গুলো দিবে বলে।

কখনো সাহস হয় নি।দুই বছর পর মেয়েটাকে সেই রেস্টুরেন্ট এ দেখতে পেয়ে ছেলেটার মুখে হাসি ফুটেছিলো।শেষ পর্যন্ত সাহস জুগিয়ে এক্কেবারে মেয়েটার বাসায় গিয়ে মেয়েটিকে চুড়িগুলো দিয়ে আসলো সেটা কি ভালোবাসা না?

-তারমানে ছেলেটা মেয়েটাকে আগে থেকেই চিনতো।কিন্তু মেয়েটার সামনে অচেনার ভান ধরেছিলো?

-হ্যা।
-সে নাহয় বুঝলাম।কিন্তু মেয়েটি কি জানতো না যে ছেলেটা তাকে ভালোবাসে?
-না গো।মেয়েটিও আমার মত অন্ধ।আমি যেমন তোমার ভালোবাসা দেখতে পারি না মেয়েটিও তেমনি ছেলেটির ভালোবাসা দেখতে পারেনি।
-কিন্তু এই কথাগুলি তুমি গল্পে লিখো নি কেন?
-কারণ গল্পের ছেলেটি চায় নি এই কথা অন্য কেউ জানুক। মাহি ঠান্ডা গলায় জানতে চাইলো

-সূর্য কে তুমি চিনো?সূর্য যে আমাকে মাঝরাতে চুড়ি দিয়ে গিয়েছিলো তুমি কীভাবে জানো?
-সুর্য আমার বন্ধু। মাহি আকুল কণ্ঠে জানতে চায়
-সূর্য এখন কোথায়?
-বছর চারেক আগে মারা গেছে। মাহি আর কিছু না বলে উঠে চলে যাচ্ছিলো। আরাফ পিছন থেকে জিজ্ঞেস করলো
-মাঝরাতে চুড়ি দিতে আসা কোকড়া চুলের সেই ছেলেটার প্রতি ভালোবাসা না হোক কখনো সহানুভূতি জেগেছিলো মাহি? মাহি বিভ্রান্তকর হাসি হাসলো।যার অর্থ হ্যা অথবা না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত