– কি রে মে পছন্দ হইছে? (আম্মু)
– হ্যা আম্মু হইছে (বাধ্য হয়ে বললাম। কিন্তু আমি এখনো মেয়ের ছবিই দেখি নাই)
– তাহলে তাড়াতাড়ি চলে আয়। আমরা আর সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না।
– ঠিক আছে আমি বাড়ি আসছি।
– বাড়ি আসবি কেন? তোর সাইফুল চাচার বাসায় আয়। আমরা সবাই তোর চাচার বাসায় আছি।
– কেন? ওখানে কেন?
– মেয়ের বাড়ি রংপুরে। তাই আমরা সবাই রংপুরে তোর চাচার বাসায় আছি। তুই আজই চলে আয়। কালকেই আমারা মেয়ে দেখতে যাব।
– কালকেই!!!
– হুম
– তা আমাকেও কি যেতে হবে?
– গাধা,,তোর হবু বউকে তুই দেখবি না?
– আচ্ছা। আমি আসতেছি।
ফোনটা কেটে দিলাম। আমার কোন ইচ্ছে নেই বিয়ে করার। কিন্তু বাড়ির সবাই যেভাবে চেপে ধরেছে রাজি না হয়ে আর উপায় নাই। তারপরও বিয়ে ভাঙার একটা প্লান করেছি। কিন্তু মনে হয়না তা সফল হবে। বাসে বসে আছি। আমার কাছে জার্নি একদম ভাল লাগে না। তবুও প্রতি মাসেই এই জার্নি করা লাগে।
– excuse me ভাইয়া এটা আমার সিট। একটা মেয়ে বললো। জালানার পাশের সিটটা ছেড়ে দিলাম। বাস চলতে শুরু করলো। একটু পরে মেয়েটা আমাকে বললো
– আপনার নাম কি ভাইয়া?
– আল আমিন। আপনার নাম?
– জান্নাতুল ফেরদৌসী
– বাহ। ভাল নাম। কি করেন আপনি?
– পড়তেছি। আপনি?
– আমি পড়ি না।
– কেন?
– ভাল লাগে না তাই। আপনি কিসে পড়েন?
– অনার্স ৩য় বর্ষ।
– ভাল।
– আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
– রংপুরে।
– বেড়াতে যাচ্ছেন?
– না কিছুদিনের মধ্যে আমার বিয়ে। তাই মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।
কি আজব মেয়েরে বাবা। আমার বিয়ের কথা শুনে চুপে চুপে হাসতেছে। এতে হাসার কি আছে? লাইফে প্রথম বার বিয়ে করছি। এটা শুনে যদি কেউ হাসে তাহলে কান্না করা ছাড়া কোন উপায় নাই।
– আপনি কই যাচ্ছেন?
– আমিও রংপুরে যাচ্ছি।
– ও তাই। আপনার বাসা রংপুরে?
– নাহ। মামার বাসা।
– বেড়াতে যাচ্ছেন?
– না। আসলে আমারও কিছুদিনের মধ্যে বিয়ে। তাই যাচ্ছি।
– ও
– তো আপনি মেয়ে দেখেছেন?
– নাহ। দেখতেই তো যাচ্ছি।
– না মানে ছবি দেখেন নি?
– না দেখি নি।
– কেন?
– আসলে আমি বিয়েটা করতে চাচ্ছিলাম না। বাধ্য হয়ে করতেছি।
– ও!! মেয়ের নাম জানেন?
– নাহ
– ওমা যার সাথে আপনার বিয়ে হচ্ছে তার নামও জানেন না??
– কেমনে জানবো? কেউ কি বলছে আমাকে যে তোর বউয়ের নাম ওমুক। এ কথা শুনে মেয়েটি হাসলো।
-আচ্ছে আপনি বিয়ে করতে চাচ্ছেন না কেন?
– ভাল লাগে না বিয়ে করতে।
– কিইই। কয়টা বিয়ে করছেন যে অরুচি ধরে গেছে?
– আর তা না। আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই নাই।
– হুম। আমার কথা বাদ দিন। আপনার কথা বলুন। ছেলে দেখেছেন?
– সরাসরি দেখি নি। ছবি দেখেছি।
– ছেলে পছন্দ হইছে?
– হা মোটামুটি।
এভাবে মেয়েটার সাথে অনেক কথা হলো। মেয়েটাকে পুরো অন্যরকম মনে হলো। এখনকার মেয়েরা অপরিচিত ছেলেদের সাথে কথাই বলে না। আমি নিজেই ফেসবুকে মেয়েদের সাথে কথা বলতে গিয়ে কত ব্লক খাইছি তার হিসাব নাই। আর এই মেয়ে আমার সাথে অনারগল কথা বলেই চলছে। তার ফেসবুক আইডিও দিল। মেয়েটাকে অনেক ভাল লাগলো আমার। দেখতেও অনেক সুন্দর। ধুর কি সব বাজে বলছি। একটা মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি আর বাসে আর একটা মেয়েকে পছন্দ করছি। তাও আবার বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়ে । রংপুরে পৌছে মেয়েটাকে আর দেখতে পেলাম না। অটো নিয়ে চাচার বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে দেখলাম এখানে বিয়ে বাড়ির মতো হৈ চৈ শুরু হইছে। আমি যাওয়া মাত্রই আমাকে যেভাবে সবাই ঘিরে ধরলো মনে হচ্ছে আজই আমার বিয়ে। সন্ধ্যার সময় রুমে বসে আছি। একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো
– হ্যালো কোন কথা বলছে না।
– হ্যালো!!!
– হ্যালো আল আমিন বলছেন?
– জ্বি বলছে। কে আপনি?
– আমি মেঘলা
– কোন মেঘলা? এ নামে তো আমি কাউকে চিনি না।
– আপনার সাথে যার বিয়ে ঠিক হইছে। আমি সে।
– ও। জ্বি বলুন কি বলবেন
– (একটু চুপ থেকে) আপনার কি আমাকে পছন্দ হইছে।
– এখনো তো আমি আপনাকে দেখিনি। কি করে বলবো?
চুপ করে আছে। কোন কথা নাই। এক সময় ফোন কেটে গেলো। রাতের দিকে কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করলো। কাকে যেন মিস করছি। বাসে আসা মেয়েটার কথা মনে পড়ছে। নাহ এসময় বিয়ে করলে জীবনটাই মাটি হয়ে যাবে। যে করেই হোক বিয়েটা আটকাতে হবে। আম্মুর সাথে কথা বলতে হবে। কিন্তু আম্মু খুব ব্যস্ত। আমার সাথে কথা বলার টাইম নাই। তাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকলাম।
– আম্মু তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– হুম বল
– আমি কালকে মেয়ে দেখতে যেতে পারবো না।
– কেন?
– আমি এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।
– কেন? সমস্যা কি?
– আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।
– সেটা আগে বলিস নি কেন?
– আরে আমি তো কালকেই মেয়েটাকে পছন্দ করলাম।
– ঠিক আছে আপাতত কালকে মেয়ে দেখতে যাই। এসব পরে দেখা যাবে। মেয়ের বাসায় বসে আছি। মেয়েটি আমার সামনেই বসে আছে। কিন্তু একবারও আমি মেয়েটার দিকে তাকাই নি। মাথা নিচু করে আছি। আম্মু বললো
-এই একবার মেয়েটাকে দেখ না। একেবারে পরির মতো দেখতে।
– আমার পছন্দ হয় নি
– আরে আগে তো মেয়েটাকে দেখ এমন সময় মেয়েটির দুলাভাই বললো
-ওদেরকে একটু একা কথা বলতে দেওয়া দরকার।
সবাই তার কথায় একমত হলো। মেয়েটা উঠে চলে গেলো। আমিও বাধ্য হয়ে পিছুপিছু গেলাম। এখনো মুখ দেখি নি। একটা ঘরে ঢুকে আমি প্রথম মেয়েটাকে দেখলাম। দেখেই তো আমার চোখ আকাশে উঠে গেলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এ তো সেই বাসের মেয়েটা। তাহলে কি এর সাথেই আমার বিয়ে হচ্ছে।
– তু তুমি মানে আপনি?
– হ্যাঁ আমি।
– কিন্তু কি করে সম্ভব?
– আসলে বাসে আমি আপনাকে পরিচয় দেই নি।
– কেন? (খানিকটা রেগে)
– লজ্জা লাগছিলো তাই। আর নিজের হবু ইয়ের সাথে একটু মজা করতে চাইছিলাম।
– হুম!! অচেনা একটা মানুষের সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগে না। আর নিজের পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে?
– ওমা অচেনা হবে কেন। আমি তো আপনার ছবি দেখছি তাই আপনার সাথে কথা বলছি। অন্য কেউ থাকলে কথা বলতাম না।
– কিন্তু বাসে আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনার নাম জান্নাতুল ফেরদৌসি। ফোনে বলেছেন মেঘলা। কোনটা আসল নাম?
– বলবো না। যে ছেলে নিজের হবু ইয়ের নাম জানে না তাকে আমি বলতে যাব কেন?
– ও তারমানে আপনি ইচ্ছে করেই আমাকে মিথ্যা নাম বলেছেন?
– জ্বি না। দুইটাই আমার নাম। জান্নাতুল ফেরদৌসি মেঘলা।
– ইসস কেন যে তোমার…মানে আপনার ছবি দেখলাম না। এখন কি হবে বলো তো?
– কি আবার হবে বিয়ে হবে। (লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে)
– কিন্তু আমি তো আম্মুকে বলেছি আমার মেয়ে পছন্দ হয় নি।
– ওহ (মন খারাপ করে)
– আরে তোমার জন্যই তো বলেছি মেয়ে পছন্দ হয় নি।
– মানে?
– মানে হচ্ছে বাসে জান্নাতুল ফেসদৌসিকে আমার পছন্দ হইছিলো। তাই মেঘলাকে বিয়ে করতে চাই নি।
– হাহাহাহাহাহাহা।
– এখন তো দুজনকেই পছন্দ হইছে কাকে বিয়ে করি?
– যেকোন একজনকে বিয়ে করলেই হবে।
তার সাথে আর কথা বলার সময় পাইলাম না। এক সপ্তাহ পর আমাদের বিয়ে ঠিক হলো। এক সপ্তাহ পরঃ রাত ১১টা ১০ মিনিট। ছাদে দাঁড়িয়ে আমি সিগারেট টানছি। না না আমি সিগারেট খাই না। খুব ভাল ছেলে আমি। আসলে মেঘলার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আজ আমাদের ইয়ের রাত…মানে ইয়ের রাত। বুঝেনই তো। এটা আমার জীবনের প্রথম ইয়ের রাত তাই খুব টেনশন হচ্ছে। বন্ধুদের কাছে শুনেছি সিগারেট নাকি সব টেনশন দূর করে দেয়। কিন্তু বন্ধুদের থিউরি আজ ভুল প্রমানিত হচ্ছে। টেনশন দূর না হয়ে আরো বাড়তেছে।
– কি রে তুই এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে কি করিস?
– (সিগারেট লুকিয়ে) কিছু না আম্মু এমনেই দাঁড়িয়ে আছি।
– তাড়াতাড়ি ঘরে যা। বউমা একাই বসে আছে।
– আচ্ছা ঠিঠিক আছে।
ছাদ থেকে সোজা আমার ঘরের সামনে আসলাম। এবার টেনশন দিগুন হয়ে গেছে। দরজার সামনে দশ মিনিট পায়াচারি করলাম। হঠাৎ ঘরের দরজা খুলে গেলো। মেঘলা রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি ব্যাপার আপনি ঘরে ঢুকবেন না আমি দরজা লাগিয়ে দিব?
– ইয়ে দরজা লাগিয়ে দাও মানে দিন।আবার সেই লাগি লুক দিল। আমি কিছু না বলে ঘরে ঢুকে গেলাম। এবার একটু সাহস নিয়ে বললাম
– আই লাভ ইউ
– কি বললেন?
– কিছু না।
– আমি শুনেছি কি বলেছেন। এভাবে বলে হবে না। ভালভাবে প্রপোজ করুন।
– এখন?
– হুম
– কালকে করি?
– নাহ এখনই করতে হবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধরো।
– না পারবো না।
– তাহলে আমিও প্রপোজ করতে পারবো না।
– আচ্ছা ধরলাম
– ছোটবেলায় শাশুড়ি আম্মা তোমাকে হরলিক্স খাওয়ায় নি?
– কেন?
– তোমাকে শক্ত করে ধরতে বলেছে, স্পর্শ করতে বলিনি।
– আচ্ছা ধরলাম।
– আচ্ছা
– কি আচ্ছা? করেন প্রপোজ।
– হুম করছি তো। মেঘলা
– হুম
– মেঘলা
– হুম
– আমি…
– হুম
– তো…তো…তোমাকে…
– হুম
– তোমাকে…
– তারপর?
– তোমাকে…
– তোমাকে কি?
– আমি একটূ পানি খাবো, একটূ পানি দাও মেঘলা হাত ছেড়ে দিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে গেলো। আমিও গিয়ে শুইলাম। এরপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।