ইউনিভার্সিটি শেষ করে বাসের অপেক্ষা করছি… বাসের উঠে দেখলাম সিট খালি নাই, মনটা খারাপ হয়ে গেলো, ২ ঘণ্টার পথ কি দাঁড়িয়ে যাবো?
পিছন থেকে হেলপার বলল, ভাইয়া আপনি একটু দাঁড়ান, ইনি সামনে নেমে যাবে, আর ঐ আপু টা নাই?
আমি বললাম, না, আপু আজ আসে নি, সে ঢাকাই গেছে…
কিছুক্ষণ পর একজন মহিলা নেমে গেলো, কিন্তু পাশের মেয়েটা থেকে গেলো, ভেবেছিলাম সেও নামবে কিন্তু না,
আর বাসে অন্য কোন সিট ও নাই কি যে করি, যদি মেয়েটা কিছু মনে করে?
অবশ্য এতো ভালো মানুষী দেখালে সামনে ১ ঘণ্টার আগে কোন সিট পাবো না… ভাবলাম বসে যায়।
কিন্তু বসতে গিয়ে বুঝলাম, তিনি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছেন, আমি ক্লান্ত ছিলাম, অতো কিছু ভাবার সময় নাই, চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করলাম।
কিছুক্ষণ পর আমি ফোনটা বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম, কিছুক্ষণ পর ভাবলাম একটু গান শুনি, কিন্তু যখন ব্যাগে হাত দিবো মেয়েটাকে দেখলাম,
সে একটা বই পড়ছে, একটু ভালো করে দেখে বুঝলাম,
একটা ইসলামিক বই, নবিদের কাহিনী পার্ট ২, আমার অবশ্য এই বই পড়া আছে, এখন আমি ৩য় পার্ট পরছি।
যায় হোক, এরপর আমি আর ইয়ারফোন বের করলাম না, একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
।।
কিছুক্ষণ পর একজন অপরিচিত মানুষের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল, তিনি ছিলেন পুলিশ।
আমিঃ জি বলেন, টাকা নিবেন?
পুলিশঃ আমাকে দেখে কি আপনার ঘুষখোর মনে হচ্ছে? আজ মজা দেখাছি, পুলিশকে ঘুষ দেবার কতো মজা?
আমিঃ আমি এতক্ষনে একটু দাঁড় হয়ে বললাম, আপনি পুলিশ?
পুলিশঃ কেন আমাকে দেখে কি হকার মনে হচ্ছে?
আমিঃ মাফ করবেন, আমি ভেবেছিলাম আপনি বাসের ভাড়া নিতে এসেছেন?
পুলিশঃ নাম কি আপনার? কি করেন?বাসা কোথায়?
বুঝলাম, আমি ভুল করে ফেলেছি, যায় হোক আমি আমার সব ঠিকানা দিলাম, কিন্তু সাহেবের তাতেও মন ভরলো না,
এখন আমাকে চেক করবে, তিনি চেক করলো।
পুলিশঃ তোমার বাবা কি করে?
আমিঃ জি পুলিশের চাকুরী করতো, এখন অবসর।
পুলিশঃ তো আগে বলো নি কেন, নাম কি?
।।
আমি নাম বললাম, তার পর আরও কিছু পরিচয়,
পুলিশঃ তোমার আব্বু কি ৪ বছর আগে এই জেলাতেই ছিল?
আমিঃ জি ছিল,
পুলিশঃ আরে আশরাফুল ভাইয়ের ছেলে তুমি?
আমিঃ জি,
পুলিশঃ তোমার আব্বু এখন কেমন আছে?
আমিঃ জি ভালো আছে,
পুলিশঃ তোমার আব্বুর ফোন নাম্বার টা দাও তো, তার ভাইকে আমার সালাম, দিবা, কিছু মনে করো না বাবা,
আমাদের তো সবাইকে চেক করতে হয় তাই তোমাকেও চেক করতে হলো।
আমিঃ না, ঠিক আছে, এটা আপনাকে কর্তব্য।
।।
যায় হোক আমি বসে পড়লাম, এতক্ষনে পাশের মেয়েটা বলল, আপনার বাসা মাষ্টারপাড়া?
আমিঃ জি হ্যাঁ, (বুঝলাম তিনি আমার পুরো ইতিহাস জেনে গেছে) কেন আপনার বাসাও ওখানে নাকি?
মেয়েটাঃ না, আমার বাসা শহরেই রেল স্টেশনের পশ্চিম দিকে, আপনার এলাকাই আমাদের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়র বাসা।
আমিঃ অহহ ভালো কথা
।।
বাসের মধ্যে অপরিচিত মানুষের সাথে আত্মীয়তা পাতানো আমি পছন্দ করি না, কিন্তু তারপরও কেন জানি তার সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা হলো…
আমিঃ আচ্ছা আপনি ইসলামিক বই কি পরতে ভালোবাসেন?
মেয়েটাঃ জি, আর এটা পড়াও আমাদের প্রয়োজন।
আমিঃ জি ঠিক বলেছেন।
মেয়েটাঃ আপনি পড়েন না?
আমিঃ মাঝে মাঝে পড়ি।
মেয়েটাঃ এই বই পড়েছেন?
আমিঃ জি, আমি এর ৩য় পার্ট পরছি। আচ্ছা আপনার নামটা কি জানতে পারি?
মেয়েটাঃ আমার নাম, মোসাঃ আদ্রিতা মেহেজাবিন।
আমিঃ খুব সুন্দর নাম।
আদ্রিতাঃ আপনার পুলিশ দেখে ভয় করে না?
আমিঃ আমার বাবাও একজন পুলিশ তাই ভয় করে না, আর আমি তো কোন দোষ করি নি ভয় কেন করবো?
আদ্রিতাঃ জানেন আমার না খুব ভয় করে, ঐ মানুষটা যখন আপনাকে প্রশ্ন করছিলো তখন আমার পা ভয়ে কাঁপছিল, আচ্ছা আপনি তো এই বই শেষ করেছেন আমাকে কয়েকটা উত্তর দেন তো।
আমিঃ জি বলেন, আমি চেষ্টা করছি।
এরপর আদ্রিতা আমাকে প্রায় ১০ টা প্রশ্ন ধরলো আমি ১ টা ভুল করলাম,
আদ্রিতাঃ ঠিক আছে বুঝলাম, আমি জানেন।
আমিঃ আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু এতো প্রশ্ন চাকুরীর ইন্টারভিও তেও ধরে না।।
আদ্রিতাঃ আমি একটু এই রকমই…। এই বলে হাসতে লাগলো… ইস বোরখার মধ্যে লুকিয়ে থাকা যদি সেই হাঁসি দেখতে পেতাম।
।।
এরপর আদ্রিতা নেমে গেলো… কিন্তু আমার মনটা যেন কোথায় হারিয়ে গেলো।
।।
।
।
আদ্রিতার সাথে দেখা হওয়া ৩ দিন হয়ে গেলো, রাস্তাই তো অনেক মানুষের সাথেই দেখা হয় কিন্তু আদ্রিতাকে কেন জানি ভুলতেই পারছি না।
কিন্তু তার সাথে কিভাবে দেখা করবো? বাস থেকে নামার আগে বলেছিলো যে সে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, ইংরেজি বিভাগে ১ম বর্ষের ছাত্রী।
কি করবো? যাবো তার সাথে দেখা করতে? কিন্তু দেখা করে কি বলবো?
।।
আমি আমার এক বন্ধুকে ফোন করলাম, যে ঐ ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, আমি তাকে বললাম।
রায়হানঃ কিরে শালা, তুই ও ফেঁসে গেছিস?
আমিঃ আরে না, মেয়েটার একটা পায়েল বাসে পড়ে গেছিলো, তাই সেটা ফেরত দিবো।
রায়হানঃ আর মিথ্যা বলতে হবে না, ঠিক আছে সমস্যা নাই তুই কালকে চলে আয়।
।।
পরের দিন আমি সকালেই ইউনিভার্সিটিতে চলে গেলাম…
রায়হানঃ কি ব্যাপার? এতো সকালেই চলে আসলি? ভাবিকে তো দেখতেই হয়…।
আমিঃ তুই আবার শুরু হয়ে গেলি?
রায়হানঃ পায়েল কই দেখি?
।।
আমি পকেট থেকে পায়েলটা বের করে বললাম, এই দেখ পায়েল। পায়েলটা আমি আসার আগে একটা দোকান থেকে কিনেছিলাম…
কিন্তু তাকে কিছু বললাম না।
আমিঃ দেখলি, এখন চল।
রায়হানঃ ঠিক আছে চল।
রায়হান ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই আদ্রিতার খোঁজ বের করে নিলো। আদ্রিতার ক্লাশ চলছে, আমরা একজনকে দিয়ে ডেকে পাঠালাম…
কিছুক্ষণ পর আদ্রিতা এসেই আমাকে বলল, আরে আপনি? কি মনে করে এখানে… কেমন আছেন?
।।
আমি কি বলবো? আমার তো কোন ভাষা নাই, রায়হান পাশ থেকে ধাক্কা দিলো…।
আমিঃ ওহ, মানে সে দিন বাসে মনে হয় আপনার পায়ের পায়েলটা পড়ে গিয়েছিলো…।
দেখলাম, আদ্রিতা আমার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে, যেহেতু আশেপাশে আরও কয়েকজন ছিল…
আদ্রিতা তাকানো দেখে বুঝলাম সে খুশি হয় নি।
আদ্রিতাঃ ওহ, আপনি পেয়েছেন? আমিও খুজছিলাম, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এই নিরা, (আদ্রিতার বান্ধবী) তুই ক্লাশে যা,
আমি একটু পর আসছি। আপনি আমার পায়েল নিয়ে এসেছেন আপনাকে কিছু না খাইয়ে যেতে দিবো না। আপনি আমার সাথে চলেন।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চলেন…
রায়হান আমাকে বলল, আপনারা যান, আমার ক্লাশ আছে…
।।
আমি আর আদ্রিতা একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম।।
আদ্রিতাঃ সত্যি করে বলেন তো কেন এসেছেন? এই পায়েল আমার না, আমি পায়েল পছন্দ করি না, আমি পায়েল পরি না…
ওখানে সবাই আছে সত্যি টা বললে আপনি সবার সামনে অপমানিত হয়ে যেতেন। আমি জানি আপনি খারাপ ছেলে না… সত্যিটা বললে খুশি হবো।
আমিঃ সত্যি আমি জানি না কেন আমি এসেছি… আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো, কিন্তু কিভাবে আসবো বুঝতে পারছিলাম না,
তখন ভাবলাম মেয়েরা পায়েল পছন্দ করে তাই নিয়ে আসলাম…
আদ্রিতাঃ এভাবে কতো মেয়েকে পটিয়েছেন?
আমিঃ একটাও না…। কেউ পটেই না…
আদ্রিতাঃ আপনি কি আমাকে প্রপোজ করছেন?
আমিঃ হয়তো…।
আদ্রিতাঃ এসব করে লাভ নাই… আমি এসব পছন্দ করি না…
আমিঃ জীবনের সব কিছুই কি নিজের পছন্দ মতো হয়?
আদ্রিতাঃ আমি অতো কিছু বুঝি না…। আপনি আমাকে জোর না করলে খুশি হবো…
আমিঃ আমাকে ফ্রেন্ড বানাবেন?
আদ্রিতাঃ ভাবতে হবে…। আপনার ফেসবুক আইডি টা দেন… রিকুয়েস্ট দিলে বুঝবেন আপনাকে আমি ফ্রেন্ড বানাতে রাজী আছি…।
আমিঃ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ…
আদ্রিতাঃ এই নেন আপনার পায়েল, আপনার বউ কে দিয়েন… খুশি হবে।
।।
আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম..
আদ্রিতার সাথে দেখা করা আজ ৬ দিন ১০ ঘণ্টা ১২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড হয়ে গেলো… মেয়েটা আমাকে রিকুয়েস্ট দিলো না,
হয়তো সে আমাকে ফ্রেন্ড বানাবে না…
আর বানাবেই বা কিভাবে? আমি কি তার যোগ্য? কিন্তু না চাইতেও মেয়েটাকে যে আমি ভুলতে পারছি না…
যায় হোক মন খারাপ করে রাতে ঘুমিয়ে গেলাম…
।।
পরদিন সকালে উঠে ফেসবুকে ঢুকেই দেখলাম, একটা মেয়ের রিকুয়েস্ট, আমি তো মহা খুশি, কিন্তু প্রোফাইল চেক করে মন খারাপ হয়ে গেলো,
মেয়েটার বাসা তো ঢাকা দেওয়া আছে কিন্তু আদ্রিতার বাসা তো ঢাকা না।।
কয়েকদিন পর মেয়েটা আমাকে সালাম দিলো… আমি উত্তর দিলাম,
নরমালি কিছু কথা বার্তা হল, নাম কি? বাসা কোথায়? কে কোথায় পড়া শুনা করে… আর শেষে সে প্রশ্ন করলো? আমার কি প্রেমিকা আছে নাকি?
আমি কিছুক্ষণ ভাবার পর বললাম, প্রেমিকা নাই তবে একজনকে ভালো লেগেছিলও কিন্তু তাকে হারিয়ে ফেলেছি…
তারপর দেখলাম আর কোন উত্তর নাই… আমিও বের হয়ে গেলাম…।
।।
কয়েক দিন পরের কথা মেয়েটা বলল, আপনি কি আমাকে ফ্রেন্ড বানাবেন?
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি বোরখা পরেন?
সে মেয়েটা, জি পরি কেন?
আমিঃ তাহলে আপনাকে ফ্রেন্ড বানানো যাবে।।
মেয়েটাঃ কেন, বোরখা না পরলে বুঝি আপনি ফ্রেন্ড বানাবেন না…
আমিঃ সেটা একটু ভাবতে হতো…
।।
যাক এভাবে আরও কয়েক দিন চলে গেলো।। কিন্তু আমার মন আদ্রিতাকে ভুল তে পারলো না।।
একদিন দুপুরে সে মেয়ে আমাকে বলল, আপনি আদ্রিতা নামের কাউকে চিনেন?
আমি চমকে গিয়ে বললাম, হ্যাঁ চিনি।
মেয়েটাঃ কে হয় সে?
আমিঃ কে হয়, এই উত্তরটায় আমার কাছে নাই।
মেয়েটাঃ এটা আবার কেমন কথা?
আমিঃ আমি তাকে ফ্রেন্ড বানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে রাজী হয় নি, মনে হয় আমি তার যোগ্য না…
মেয়েটাঃ গাধা! আমি আদ্রিতা, চিনতে পারেন না…
।।
আমি কিছুটা শক খেলাম, অবশ্য খুশিও অনেক হয়েছি…
আমিঃ তো আপনি আগে মিথ্যা কথা বললেন কেন?
আদ্রিতাঃ একটু পরীক্ষা করছিলাম… আপনাকে ফ্রেন্ড বানানো যায় কি না?
আমিঃ তো কি ফ্রেন্ড বানানো যায়?
আদ্রিতাঃ কয়েকদিন আগেই তো ফ্রেন্ড বানিয়েছি, আপনার মনে নাই?
আমিঃ হ্যাঁ, মনে পড়েছে…
আদ্রিতাঃ আপনার ফোন নাম্বার টা দেন তো।। আর এই নেন, আমার ফোন নাম্বার, আজ থেকে আমারা বেস্ট ফ্রেন্ড,
তবে একটা কথা বেশি ফোন দিবেন না, আমার বাসাতে সমস্যা হবে।
আমিঃ জি আচ্ছা ঠিক আছে…
আদ্রিতাঃ আচ্ছা আজ আসি, অনেক পড়া বাকি আছে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যান।
।।
কয়েক দিন পরের ঘটনা!
আমি বিকেলে বড় ভাইয়াদের সাথে কিছু জরুরী কথা বলছিলাম…
এই সময় ফোনটা বেজে উঠলো,
আমিঃ আসসালামু… কে বলছেন?
আদ্রিতাঃ ওহ সরি ভুল হয়ে চলে গেছে… আপনি তো আমাকে চিনেন না।।
আমিঃ নাম না বললে কিভাবে চিনবো?
আদ্রিতাঃ ও মা, নাম্বার দেখে কি চিনা যায় না?
আমিঃ আপনি কি আমার বউ নাকি যে আপনার নাম্বার মুখস্ত করে রাখবো?
আদ্রিতাঃ আমি আদ্রিতা,
… এই বলার পর ফোন কেটে দিলো।।
আমি কল ব্যাক করলাম, কিন্তু নাম্বার বন্ধ করে দিয়েছে…।
পড়ে বুঝলাম, একটু বেশি মনে হয় বলে দিয়েছি..
ভাবলাম রাতে সরি বলতে হবে…
।।
পাক্কা ১০০০ বার সরি বলিয়ে নিয়েছে পাগলিটা তারপর আমাকে মাফ করেছে…
ভাবছি মেয়েটা যদি সত্যি সত্যি বউ হয় তবে মনে হয় প্রতিদিন রাতে সে আমাকে কান ধরাবে… কারণ সারা দিনে যে আমি কতো ভুল করি তার ঠিক নাই।
।।
কয়েকদিন পর আমি আদ্রিতাকে ফোন করলাম, সে বলেছে আমি ১০০ বার ফোন করার পর সে আমাকে ফোন করবে।। সত্যি খুব জ্বালা মেয়েটাকে নিয়ে,
আদ্রিতা ফোন ধরে সালাম দিয়ে বলল, কয় বার ফোন দেওয়া হল?
আমিঃ ১৮ বার, আপনার ফোন করতে হবে না, আমি করবো যখন প্রয়োজন হবে।
আদ্রিতাঃ আপনি কি কালকে আমাদের বাড়ী আসতে পারবেন?
আমিঃ কেন?
আদ্রিতাঃ আমার আব্বু আপনার সাথে কথা বলবে?
আমিঃ আপনার আব্বু আমাকে জামাই বানাবে নাকি?
আদ্রিতাঃ এই বাজে কথা ছাড়া আপনার কোন কথা নাই বুঝি? এসব কথা বলবেন না, আমার এর আগে কোন ছেলে ফ্রেন্ড ছিল না,
তাই আমি আপনার কথা আম্মুকে বলেছি, সেটা আব্বু জানতে পেরে আপনাকে ডেকেছে। আপনি কি কালকে আসতে পারবেন?
আমিঃ ঠিক আছে আসবো, কিন্তু আমি তো আপনাদের বাড়ী চিনি না।
আদ্রিতাঃ আমি আপনাকে রাতে ঠিকানা দিয়ে দিবো। আর আব্বুর সাথে খুব সাবধানে কথা বলবেন, তিনি খুব সিরিয়াস মানুষ।
আমিঃ ঠিক আছে চেষ্টা করবো।
আদ্রিতাঃ ঠিক আছে এখন রাখি।
।।
।
সারা রাত ভালো করে ঘুমাতে পারি নি, জানি না আদ্রিতার আব্বুর সাথে দেখা করে কি বলবো?
সকাল ১০ টার দিকে আদ্রিতা একটা ম্যাসেজ করলো, দেখলাম এখানে সব ঠিকানা আছে, বলল দুপুরের আগেই যেতে।
আমি ১২ টার মধ্যে তাদের বাসার সামনে পৌঁছে গেলাম, আদ্রিতাকে ফোন করলাম, ফোন ধরেই বলল, কয় আপনি?
আমিঃ আমি তো আপনার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি,
আদ্রিতাঃ তো বাসার মধ্যে আসেন, আমি গেট খুলছি।
আমিঃ ঠিক আছে।।
।।
আদ্রিতা আমাকে একটা ঘরে নিয়ে গেলো,
আদ্রিতাঃ আপনি বসে টিভি দেখেন, আব্বু বাইরে গেছে এখুনি চলে আসবে।।
আমিঃ ঠিক আছে।
।।
আমি এই প্রথম আদ্রিতার মুখ দেখতে পেলাম, সত্যি মেয়েটার হাঁসি যেন চাঁদের জস্নাকেও হার মানাবে…
আর ঠোঁটের পাশের তিলটা যেন তার রূপটা আরও হাজার গুনে বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর!
আমি টিভি দেখছি কখন যে আদ্রিতার আব্বু চলে এসেছে বুঝতে পারিনি।
আদ্রিতার আব্বুঃ আসসালামু…।।
আমি একটু চমকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম, অলাইকুম্, কেমন আছেন?
আদ্রিতার আব্বুঃ আলহামদুলিলাহ! আমি আদ্রিতার আব্বু। বাবা তোমার নাম কি?
আমিঃ জি আমার নাম মোঃ ইমরান আহমেদ শান্ত।
আদ্রিতার আব্বুঃ তুমি সত্যি শান্ত তো?
আমি কিছু টা বোকা হয়ে গেলাম, এর কি উত্তর দিবো।
আদ্রিতার আব্বুঃ মজা করলাম, তোমার আব্বু কি করে?
আমিঃ পুলিশের চাকুরী করতো, এখন অবসরে।
আদ্রিতার আব্বুঃ ওহ ভালো, তোমরা কয় ভাই বোন?
আমিঃ আমার শুধু একটা বড় আপু আছে…
।।
এর পর আমাকে আরও কিছু প্রশ্ন করতে শুরু করলো, আর আমি শান্ত ভাবেই উত্তর দিতে লাগলাম।
দুপুরে নামাজ পড়ার পর খাওয়া শেষ করে আমি আসতে চাইলাম, কিন্তু আদ্রিতার আব্বু আসতে দিলো না,
আদ্রিতার আব্বুঃ আরে বাবা, এতো দুপুরে কোথায় যাবা? বিকেলে যেও। তুমি রেস্ট নাও।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
।।
বিকেলে আমি আমার বাড়ী ফিরে আসলাম।
।।
এর কিছু দিন পরের ঘটনা!
আদ্রিতার আব্বু আমাকে ফোন করলো, বাবা আমি আদ্রিতার আব্বু, কেমন আছো?
আমিঃ ভালো, আপনি ভালো আছেন?
আদ্রিতার আব্বুঃ আচ্ছা আমি তো তোমাদের এলাকাই এসেছি, কিছু অফিসের কাজ ছিল।
আমি আর কি বলবো? ভদ্রতার খাতিরে তাকে দুপুরে দাওয়াত দিলাম। আমি বাসাই আম্মুকে বললাম।।
আমিঃ আংকেল! আপনি কিন্তু দুপুরে অবশ্যই আসবেন, আমার আব্বু আপনার সাথে দেখা করতে চাই।
আদ্রিতার আব্বুঃ ঠিক আছে বাবা, সময় পেলে আসবো।
।।
বেলা ৩ টার সময় তিনি আমাদের বাসাই আসলেন। আমরা সবাই না খেয়ে ওনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আমিঃ আসসালামু…।। আংকেল আপনার আসতে কোন সমস্যা হয় নি তো?
আদ্রিতার আব্বুঃ না বাবা সমস্যা হয় নি।
…।
এরপর আমার আব্বু আর আদ্রিতার আব্বুর সাথে অনেক কথা বলল, কিছু আমি শুনেছি কিছু শুনিনি।
তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম, কিন্তু তারপর ও যেন তাদের কথা শেষ হয় না।
তবে শেষে বুঝলাম, আদ্রিতার আব্বু মনে হয় ভালোই খুশি হয়েছে…।
কারণ যাবার সময় তিনি বলে গেলো,
আদ্রিতার আব্বুঃ ভাবী, ঠিক আছে, যত তাড়াতাড়ি পারি আদ্রিতা আর আপনার ভাবীকে নিয়ে আপনাদের বাসাই আসবো,
আপনাদের এলাকা আমার অনেক ভালো লেগেছে।
আমি মনে মনে ভাবলাম, আমার আর আদ্রিতার বন্ধুত্ব কতোটুকু হয়েছে জানি না, তবে আমার আব্বু আর আদ্রিতার
আব্বুর বন্ধুত্ব দেখছি ভালোই হয়ে গেছে…
আদ্রিতার আব্বু যাবার কয়েক দিন পরের ঘটনা।
আমি শহরে কিছু কাজ করছি, আদ্রিতা ফোন দিলো।
আদ্রিতাঃ আসসালামু… স্যার কোথায় আছেন?
আমিঃ এইতো আপনাদের বাড়ীর পাশে।
আদ্রিতাঃ মিথ্যা বাদী।
আমিঃ সত্যি, সকাল থেকে আছি।
আদ্রিতাঃ দুপুরে কোথায় খেয়েছেন?
আমিঃ কোথায় আর খাবো? আমার কি শ্বশুর বাড়ী আছে যে খেয়ে আসবো? পাকা ৯৪ টাকা বিল করে দুপুরে খেয়েছি।
আদ্রিতাঃ আমাদের বাড়ী আসলেন না কেন? আম্মু আপনার পছন্দের বিরয়ানী রান্না করেছিলো।
আমিঃ ওটা কি আমার শ্বশুর বাড়ী যে যখন ইচ্ছা হবে চলে আসবো? আচ্ছা আমার বিরয়ানী পছন্দ, আপনাকে কে বলল, আমি তো আপনাকে বলি নি।
আদ্রিতাঃ আপনি না বললে বুঝি জানতে পারবো না, অ্যান্টি বলেছে…
আমিঃ ওহ তাই বলেন।
আদ্রিতাঃ আচ্ছা যে কারণে ফোন করেছিলাম, আপনাকে আব্বু ডেকেছে। পারলে একবার দেখা করে বাসা যাইয়েন।
আমিঃ কেন?
আদ্রিতাঃ আমি জানি না।
আমিঃ ঠিক আছি ১০ মিনিট পর আসছি।
।।
কিছুক্ষণ পর আমি তাদের বাসা গেলাম, দেখলাম আংকেল বসে আছে, আমি যাওয়াতে চা নাস্তা দিলো।
আংকেলঃ তোমাকে যে দরকারে দেকেছিলাম, আমাদের গ্রামে কিছু জমি জায়গা আছে,
সেটা নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে তাই আমি আর তোমার অ্যান্টি গ্রামের বাড়ী যাবো,
কিন্তু কালকেও আদ্রিতার নাকি পরীক্ষা আছে, কিন্তু তাকে একা কিভাবে রেখে যাবো?
তুমি কাল এসে আদ্রিতাকে তোমাদের বাসা নিয়ে চলে যেও, তারপর ওর যে দিন পরীক্ষা হবে
ওকে নিয়ে এসে পরীক্ষা দিয়ে আবার তোমার বাসা নিয়ে চলে যেও।
আমার তো কোন ছেলে নাই, তোমাকে ছেলে হিসাবে অনেক বিশ্বাস করেই আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি।
আর আমি তোমার আব্বুর সাথে কথা বলেছি, কোন সমস্যা নাই।
আমিঃ ঠিক আছে আপনি নিশ্চিন্তে গ্রামে যান,।। মনে মনে ভাবলাম, মেয়েটাকে বিশ্বাস করে একেবারেই আমার হাত তুলে দিলেই তো হয়।
আংকেলঃ তোমার সাথে আমার মেয়ে থাকলে আমি নিশ্চিন্ত।
আমিঃ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এতটা বিশ্বাস করার জন্য।
।।
পরের দিন আমি আদ্রিতাকে নিয়ে আমাদের এলাকাই নিয়ে আসলাম। দেখলাম সবার চোখেই যে প্রশ্ন মেয়েটা কে?
।।
আমিঃ আদ্রিতা, এটা আমার আম্মু।
আদ্রিতাঃ আসসাল্মু… অ্যান্টি কেমন আছেন?
আম্মুঃ ভালো, তুমি ভালো আছো মা?
আমি মনে মনে ভাবলাম, এতো বড় হয়ে গেলাম আমাকে একদিন বাবা বলে ডাকল না, আর আজ প্রথম দিনেই মা? হায়রে পোড়া কপাল?
আদ্রিতাঃ জি ভালো…।
আম্মুঃ আসো মা, ঘরে আসো, এটা তোমার ঘর। তোমার পরীক্ষা আবার কবে?
আদ্রিতাঃ ২ দিন পর।
আম্মুঃ ঠিক আছে ভালো করে পড়, আর এই শয়তানটা তোমাকে বিরক্ত করলে আমাকে জানাবা।
আদ্রিতা একটু হাঁসি দিয়ে বলল, ঠিক আছে অ্যান্টি।
আমিঃ এই আমি কি আপনাকে কোন দিন বিরক্ত করেছি?
আদ্রিতাঃ ছেলেদের ওপর বিশ্বাস করা যায় না…
আমিঃ ভালো মানুষের দুনিয়া নাই, ঠিক আছে ২ দিন পর আমাকে দরকার পরবে কি না দেখবো।
।।
এরপর আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম…
প্রায় ১ সপ্তাহ আদ্রিতা আমাদের বাসাই ছিল, এর মধ্যে আমার আদ্রিতার মধ্যে আপনি থেকে তুমি হয়ে গেছে…।
শেষের ২ দিন আমরা অনেক ঘুরেছি… সত্যি দিন গুলো অনেক সুন্দর ছিল।
।।
।।
আজ ইউনিভার্সিটির ৪র্থ বছরের শেষ পরীক্ষা দিলাম। সবাই অনেক খুশি হয়তো আমিও, কিন্তু আমার আমার কাজ শেষ হয় নি।
হয়তো এক মাস পর রেজাল্ট হয়ে যাবে।
কিন্তু আমাকে এখন ভালো একটা চাকুরীর ব্যাবস্থা করতে হবে। আমি অবশ্য বেকার না পড়া লিখার পাশাপাশি ব্যাবসা করি,
কিন্তু ঐ ব্যাবসা নিয়ে আর যায় হোক আদ্রিতার আব্বুর কাছে আদ্রিতার হাত চাওয়া যাবে না।
যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। বাস আসলো আমি বাসে উঠলাম,
হটাৎ আদ্রিতার আব্বুর ফোন আসলো।
।।
আমিঃ আসসাল্মু, আঙ্কেল কেমন আছেন?
আদ্রিতার আব্বুঃ ভালো আছি বাবা, তুমি কোথায় আছো?
আমিঃ আমি তো পরীক্ষা শেষ করে বাসে আছি, বাড়ী যাচ্ছি।
আদ্রিতার আব্বুঃ তোমার পরীক্ষা কেমন হলো?
আমিঃ জি, অনেক ভালো।
আদ্রিতার আব্বুঃ একবার আমাদের বাড়ী আসতে পারবা? একটু দরকার ছিল।
আমিঃ কোন সমস্যা নাকি?
আদ্রিতার আব্বুঃ না কোন সমস্যা নাই তুমি চলে আসো।
আমিঃ ঠিক আছে আঙ্কেল, আমি ১ ঘণ্টার মধ্যে আসছি।
।।
বাসাই যাবার পর দেখলাম, আঙ্কেল আমার জন্য বসে আছে।
আমিঃ আসসাল্মু্ আঙ্কেল, কি ব্যাপার বলেন?
আদ্রিতার আব্বুঃ আসলে ঘটনা টা হয়েছে যে কাল আদ্রিতাকে দেখতে কিছু মানুষ এসেছিলো,
আমি তো আদ্রিতার এখন বিয়ে দিতে রাজী না, কিন্তু তারা ছাড়ছে না, আর ছেলেও অনেক বড় ব্যাবসা করে।
যেহেতু ছেলেটা আমার বন্ধুর ছেলে তাই আর বন্ধুকে না বলতে পারলাম না,
সামনে সোমবারেই বিয়ের দিন ঠিক করে ফেললো, এখন হাতে তো এক বারেই সময় নাই।
তোমার নাকি আজ পরীক্ষা ছিল তাই সকালে জানাই নি, এখন আমাদের তো কোন ছেলে নাই আর আদ্রিতা তোমার অনেক ভালো বন্ধু,
এখন আদ্রিতার বিয়ের সব আয়োজন তোমাকেই করতে হবে।
।।
আমি কিছু বলার ভাষা পেলাম না, কোথায় যেন কিছু ভেঙ্গে গেলো, হয়তো কারো স্বপ্ন, কারো আবেগ, কারো অনুভূতি,
কারো সৃতি, কারো ভালোবাসা, এতো কিছু এক সাথে ভাঙ্গলো অনুভব করতে পারলাম অথচ কোন শব্দ শুনতে পেলাম না আজব ব্যাপার!
নিজেকে আরেকটু শক্ত করতে হবে।
আমিঃ জি আঙ্কেল, অনেক ভালো করেছেন, আদ্রিতা বিয়ে তে রাজী তো।
আদ্রিতার আব্বুঃ ও এখন বিয়ে করতে রাজী হচ্ছে না, অনেক বলে তাকে বুঝলাম, তাকে একটু বকেছি।
আমিঃ ও, তো আমাকে কি করতে হবে…
।।
আদ্রিতার আব্বুঃ কাল সকাল থেকে কাজ শুরু করতে হবে,
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না, মন কে কন্ট্রোল করতে পারলেও চোখ দুটো কেন জানি কিছু বলতে চাইছিল।
তাই কেউ কিছু বুঝার আগেই আমি সেখান থেকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমিঃ ঠিক আছে, আঙ্কেল, আমি এখন বাড়ী যায়, কাল সকালে আসবো।
আদ্রিতার আব্বুঃ সে কি বাবা, তোমার জন্য তোমার অ্যান্টি আবার মুরগী রান্না করলো, আর তুমি না খেয়ে চলে যাবা?
আমিঃ আসলে সারা দিন পরীক্ষা দিয়ে অনেক ক্লান্ত, কাল সকালে এসে খেয়ে যাবো।
।।
এই বলার পর আমি বের হয়ে চলে আসলাম, এই প্রথম আমি আদ্রিতাদের বাসা থেকে না খেয়ে বের হলাম,
আসার সময় দেখলাম আদ্রিতা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, আজ কিছু বলার ভাষা নাই…।
বাস স্ট্যান্ডে এসে বাসে উঠলাম, বুঝলাম চোখ দিয়ে হয়তো ২ ফোঁটা অশ্রু বের হচ্ছে, হয়তো এটাকেই ভালোবাসা বলে… জানি না।
তবে কাল থেকে কারো ছেলের দায়িত্ব পালন করতে হবে…।
বাসের হেল্পার কে বললাম, ভাই একটা 7up এনে দেন তো।
হেল্পার ভাই বলল, ভাই, এতো ঠাণ্ডাই 7up খাবেন?
আমি মনে মনে ভাবলাম, ইস বাইরের ঠাণ্ডা সবাই দেখতে পাচ্ছে কিন্তু ভিতরের রক্ত ক্ষরণ টা কেউ একটুও বুঝতে পারছে না…।
আমি বললাম, ভাই ফ্রিজের মধ্যের ঠাণ্ডা 7up টা নিয়ে আসিয়েন…।
দেখলাম সে আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে…। হয়তো সিগারেট খেলে আজ নিশ্চিত ২ প্যাকেট শেষ করে দিতাম…
যায় হোক 7up দিয়েই কাজ চালিয়ে দেই। কষ্ট তো একি।
ঈদের আর কয়েক দিন বাকি আছে, আদ্রিতা আমাকে ফোন করে বাসাই ডাকলো, বলল আঙ্কেল নাকি দেকেছে।
আমি পরের দিন গেলাম, ইফতার তাদের বাসাই করলাম,
দেখলাম আংকেল হাতে করে কিছু ব্যাগ নিয়ে এসে বলল, বাবা দেখো তো তোমার পছন্দ হয় নাকি?
দেখলাম, প্যান্ট, শার্ট, পায়জামা-পাঞ্জাবী।।
আমি বললাম এতো গুলো কার জন্য?
অ্যান্টিঃ তোমার আংকেল এর তো কোন ছেলে নাই তাই সে পারলে তো তোমাকে পুরো দোকান কিনে দিতো, বলো তোমার পছন্দ হয়েছে নাকি?
না হলে এখন চলো মার্কেটে যাবো।
আমিঃ না অ্যান্টি অনেক পছন্দ হয়েছে তবে এতো বেশি কেন যে কোনো একটা হলেই চলে যেতো।
আঙ্কেলঃ সেটা কি হয় নাকি? আমি ব্লেজার এর কাপড় কিনে রেখেছি, তুমি কোথায় বানাবা বলো,
আমিঃ না বলছিলাম কি এগুলো থাক ওটা পরে বানাবো। আর বেকার ছেলে ব্লেজার কিভাবে পরবো?
।।
সে দিন রাতে আমি তাদের বাসাই থাকলাম, তারপর সকালে আসলাম।।
।।
আজ ঈদ!
যায় হোক বরাবরের মতো আমার কোন কাজ নাই, কোন প্লান নাই, নামাজ শেষ করে আমি বাসাই টিভি দেখছি।
আদ্রিতা ফোন করলো।
আদ্রিতাঃ আসসালামু, স্যার! ঈদ মোবারক। সকাল থেকে কোন খবর নাই।
আমিঃ ঈদ মোবারক, কিসের খবর নিবেন?
আদ্রিতাঃ কোথাও বেড়াতে যান নি?
আমিঃ বউ তো নাই কার সাথে ঘুরবো? তাই টিভি দেখছি।
আদ্রিতাঃ ইস, আমার দেবদাস…।
আমিঃ আপনি কি করছেন?
আদ্রিতাঃ আমিও বসে আছি, একটা কাজ করেন দুপুরের মধ্যে আমাদের বাসা চলে আসেন একটু দরকার আছে।
আমিঃ দরকার ছাড়া জীবনে কখনও মনে করলেন না। আর আমার কি শ্বশুরের বাস আছে যে ঈদের দিন আমাকে নিয়ে যাবে?
আদ্রিতাঃ একটা মোটর সাইকেল কিনতে পারেন না? এতো ব্যাবসা করে টাকা কি করেন? প্রেমিকাও তো নাই যে বলবো তার পিছনে খরচ করেন।
আমিঃ মোটর সাইকেল নিয়ে কার সাথে ঘুরবো?
আদ্রিতাঃ আমি অতো কিছু জানি না, দুপুরের মধ্যে আমাদের বাড়ী না আসলে আমি আপনার সাথে কথা বলবো না। আমি বিরয়ানী বানাচ্ছি। বাই।।
আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটা ফোন কেটে দিলো…
এই মেয়েকে নিয়ে পারলাম না, কিন্তু যাবো কিভাবে?
।।
রেডি হয়ে বের হবার সময় আম্মু বলল, কিরে কোথায় জাচ্ছিস?
আমিঃ আম্মু আদ্রিতাদের বাড়ী যাচ্ছি।
আম্মুঃ ভালো কথা এই নে ৫০০ টাকা তাকে আমার পক্ষ থেকে ঈদ বোনাস দিস।
আমিঃ আর আমাকে ঈদ বোনাস দিবা না?
আম্মুঃ তোকে আবার কিসের বোনাস দিবো? খেইয়ে দেইয়ে তোকে এতো বড় করলাম এটাই তোর বোনাস।
ঈদের দিন আর কিছু বললাম না… মন খারাপ করে বের হয়ে গেলাম, এমন না যে আমার কাছে টাকা নাই,
কিন্তু যতই বড় হয় না কেন বাবা মার বোনাস ই অন্য রকম।
।।
রাস্তাই এসে আবার নতুন ঝামেলা, কেউ যাবে না, যদিও আমি জানি বাস পাবো না। তাই অটো রিস্কা তে উঠলাম।
৬-৭ বার চেঞ্জ করার পর আমি শহরে পোঁছালাম।
আদ্রিতাদের বাসা যখন পোঁছালাম, তখন ২ টা বেজে গেছে, দেখলাম সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে,
সাই আরও কয়েক জন মেহমান এসেছে দেখে বুঝলাম,
আমাকে সবার সাথে পরিচয় করে দিলো।
এরপর আমরা এক সাথে দুপুরে খেলাম, অ্যান্টি বলল, বিরয়ানী নাকি আদ্রিতা আমার জন্য বানিয়েছে। দেখে দেখলাম খারাপ না, ভালোই লাগছে।
।।
আমি আদ্রিতাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বললাম, আম্মু দিয়েছে আপনাকে বোনাস।
আদ্রিতাঃ তাই, আমি রাতে ফোন করে অ্যান্টিকে ধন্যবাদ জানাবো।
আমিঃ আর আমাকে জানাবেন না?
আদ্রিতাঃ পিয়নের কাজ হলো, চিঠি বা টাকা তার গন্তব্য স্থানে পোঁছে দেওয়া।। আপনার কাজ শেষ।
আমিঃ ওহ হ্যালো, ম্যাডাম! একটু বেশি হয়ে গেলো না?
আদ্রিতাঃ একটু কেন আমি তো বেশি করেই বলছি, আপনি বুঝতে পারছেন না?
আমিঃ বুঝছি তো…
।।
আদ্রিতার আব্বু আমাকে ডাক দিলো, আমি গেলাম,
আদ্রিতার আব্বুঃ বাবা, এই নাও। (এই বলে তিনি ১০০০ টাকা বের করে দিলো।)
আমিঃ এসবের কি দরকার? আমি কি ছোট হয়ে আছি নাকি?
আদ্রিতার আব্বুঃ বাবা মায়ের কাছে ছেলে মেয়ে সব সময় ছোটই থাকে।। নাও তুমি।
।।
বিকেলে আমি আদ্রিতাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম, আদ্রিতা নাকি কোথায় যাবে বলল?
আদ্রিতাঃ আপনি কি এখন চলে যাবেন?
আমিঃ না, আমার তো বউ আছে তাকে নিয়ে ঘুরবো?
আদ্রিতাঃ তাই, চলেন দেখি, ভাবীর বাসা কোথায়?
আমিঃ আসার সময় ২ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে এখন না গেলে বাসা যেতে রাত লেগে যাবে।
আদ্রিতাঃ তো আমি কার সাথে ঘুরবো?
আমিঃ কেন আপনি না বললেন, বিকেলে আপনার ২ বান্ধবীর সাথে ঘুরতে যাবেন।
আদ্রিতাঃ ওরা একটু আগে বলল আর যেতে পারবে না, একজনের নাকি বাসাই সমস্যা আর আরেকজন তার প্রেমিকের সাথে ঘুরবে।
আমিঃ ভালো তো,
আদ্রিতাঃ আপনি একটু পরে গেলে হয় না? চলেন না একটু নদীর পাড়ে ঘুরতে যায়।
আমি তো মনে মনে অনেক খুশি। একটু ভাব নিয়ে বললাম,
আমিঃ কেন আমি আপনার বর নাকি প্রেমিক?
আদ্রিতাঃ আহ! কতো শখ?
আমিঃ আমার থেকে ভালো ছেলে খুঁজে পাবেন?
আদ্রিতাঃ রাস্তায় অভাব নাই।
আমিঃ একটা বের করেন।।।
বিকেলে ওকে নিয়ে অনেক ঘুরলাম, কিন্তু সব টাকা সে খরচ করলো, আমাকে এক টাকা খরচ করতে দিলো না, সে বলল,
আমি কি আপনার বউ নাকি যে আমার পিছনে খরচ করবেন?
কিছুক্ষণ পর আদ্রিতার আম্মু ফোন করলো, তিনি মনে হয় জিজ্ঞেস করলো, যে আদ্রিতা কোথায়?
আদ্রিতা বলল, আম্মু আমার বান্ধবীদের পায় নি, তাই ইমরানের সাথে একটু ঘুরছি, সন্ধার আগেই বাসা ফিরে আসবো।
।।
সন্ধার আগে আমি তাকে বাসার সামনে রেখে আমি বাড়ীর উদ্দেশে রওনা হলাম, ভাগ্য ভালো যে বাস পেয়ে গেলাম…
।।
পরের দিন আমি সকালেই আদ্রিতাদের বাসা চলে গেলাম, অবশ্য রাতে যে ঠিক কখন ঘুমিয়েছি মনে নাই,
কেমন জানি একটা ঘোরের মধ্যে আছি।
বাসাই গিয়ে দেখি, কিছু মেহমান ও চলে এসেছে, যায় হোক আমি দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম।
আর কিছু না পারি, এসব ব্যাপারে আমি খুব ভালো পারি।
সারা দিন আমি আদ্রিতার সাথে দেখা করি নি, ছোট বাড়ীটা আজ অনেক বড় মনে হচ্ছে।
রাতে সব কাজ শেষ করে আমি ছাদে বসে আছি…।
আজ আকাশ টা অনেক সুন্দর দেখচ্ছে যদিও অনেক ঠাণ্ডা। একদিন আদ্রিতা বলেছিল, সে নাকি রাতের তারা গুলোকে খুব ভালোবাসে,
হয়তো অন্য কোন দিন হলে তাকে ডাকতাম।
।।
কিছুক্ষণ পর কেউ মনে হল আমার পিছনে এসে দাঁড়ালো,
আমি পিছনে ফিরে তাকালাম, দেখি আদ্রিতা।
আদ্রিতাঃ কি ব্যাপার আপনি এতো ঠাণ্ডাই ছাদে কেন?
আমিঃ এমনি রাতের তারা দেখতে এসছি।
আদ্রিতাঃ এই নেন চাঁদর, এত ঠাণ্ডাই বেশি থাকলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
আমিঃ কাল থেকে যখন থাকবেন না তখন কে আমার এতো খোঁজ খবর রাখবে?
আদ্রিতাঃ আচ্ছা আপনি কোন মাটির মানুষ? আমাকে এতো ভালোবাসেন অথচ আমার বিয়েতে খুশি মনে পাগলের মতো সব কাজ করে যাচ্ছেন,
আপনার কি কষ্ট হয় না?
আমিঃ আমি যাকে ভালোবাসি তার থেকে বেশি মূল্যায়ন করি যারা আমাকে ভালোবাসে,
আর তোমার বাবা আমাকে যতটা ভালোবাসে সেটা পৃথিবীর খুব কম মানুষ আমাকে ভালোবাসে, তাই আমি শুধু চেষ্টা করছি নিজের দায়িত্ব
টুকু পালন করতে।
আদ্রিতাঃ আচ্ছা আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না, কিন্তু তারপর ও কেন জানি আমার খুব খারাপ লাগছে, মনে মনে আমিও চাইতাম
যে আপনি আমার স্বামী হন,
কারণ আপনার মতো ভালো স্বামী আর ভালো শ্বশুর বাড়ী আমি মনে হয় না আর কোথাও পাবো?
কিন্তু বাবা যে এভাবে হটাৎ বিয়ে ঠিক করে দিবে বুঝতে পারি নি, আমি অনেক চেষ্টা করেও বিয়ে আটকাতে পারি নি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
আমিঃ না ঠিক আছে… কিছু দিন খারাপ লাগলেও আসতে আসতে ঠিক হয়ে যাবে, আপনি চিন্তা করিয়েন না।
আদ্রিতাঃ আপনি জানেন, আমি কেন এখানে এসেছি?
আমিঃ কেন?
আদ্রিতাঃ আপনি চাইলে আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারেন। আমি রাজী আছি, আমার টাকা পয়সা চাই না, আপনার মতো একজন স্বামী চাই।
আমিঃ সেটা আর এখন সম্ভব না, কাল বিয়ে বাসাই অনেক মেহমান।
আদ্রিতাঃ কেন সম্ভব না, আপনি একা বের হয়ে যান, আমি চলে আসছি।
আমিঃ কথা সেটা না, আপনি আপনার বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। আর আমাকে তিনি সন্তানের মতোই বিশ্বাস করে,
এখন যদি আমি আপনাকে নিয়ে পালিয়ে যায়, মানুষে কি বলবে?
আপনার আব্বুর মান সম্মান একটুও থাকবে না, আর এখানে তো আপনার আব্বুর দোষ নাই, এমন না যে আপনার আব্বু আমাদের সম্পর্ক
জেনে সেটা মেনে নেই নি।
তিনি তো জানেন না, যদি জেনে আপনার বিয়ে অন্য জায়গায় দিতেন তাহলে না হয় পালিয়ে যেতাম, হয় তো আপনি আমার ভাগ্যে নাই।
এটাই মেনে নিতে হবে।
।।
দেখলাম, আদ্রিতা কাঁদছে,
আদ্রিতাঃ সত্যি বলতে আমার ভাষা নাই আমি আপনাকে কি বলবো? আপনার বউ হতে পারলাম না, এটা আমার দুর্ভাগ্য,
কিন্তু আমি যে আপনার মতো মানুষের বন্ধু হতে পেরেছি, এটাই জীবনে অনেক।
আমিঃ ঠিক আছে এখন নিচে চলে যান, বাসাই অনেক মানুষ কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাব্বে।।
।।
আদ্রিতা নিচে চলে গেলো…
কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল, সিঁড়ির ধারে কাউকে দেখলাম, কারণ একজনের ছায়া দেখতে পেলাম…
আল্লাহ্র কাছে দুয়া করলাম, আবার যেন নতুন করে কোন বিপদ না আসে..
সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারি নি, একটাই ভয়, কে ছিল? শত্রুর তো অভাব নাই, কেউ জানলে আদ্রিতাদের মান সম্মান থাকবে না, আর আদ্রিতার আব্বু শুনতে পেলেই বা কি ভাব্বে? না জানি কতো কষ্ট পাবে?
তার সামনে আর মুখ দেখাতে পারবো না…।
বিয়ে হয়ে গেলে আমি আর আদ্রিতার সাথে দেখা করবো না, আর তাদের বাড়িও আসবো না…
আমি চাই না, আমার জন্য ওর জীবনে কোন সমস্যা আসুক।
।।
সকাল বেলা থেকে অনেক মানুষ আসতে শুরু করলো, দেখে তো সব কিছু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে,
হয়তো সেটা কোন মানুষ ছিল না…।
বরযাত্রীও চলে আসলো, ছেলেকে দূর থেকেই দেখলাম, অনেক সুন্দর দেখতে, ভালো মানাবে…
আমার কিন্তু কষ্ট হচ্ছে না, কিন্তু তারপর ও কেন জানি চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো…
আমি একটু সবার আড়ালে যাবার চেষ্টা করতে লাগলাম, কিন্তু সব জায়গাই মানুষ…
আমাকে আদ্রিতার এক চাচা ডেকে বলল, ইমরান! তুমি ঐ দিকে যাও, আমরা সবাইকে খাইয়ে দিচ্ছি। তুমি দেখো আর কতক্ষণ পর রান্না শেষ হবে।
আমরা নাস্তা দিচ্ছি।
আমি চলে গেলাম,…
কিছুক্ষণ পর আমি কিছু শব্দ শুনতে পেলাম, প্রথমে ভাবলাম, এটা হয়তো বিয়ের বাড়ীর মানুষের আওয়াজ।
কিন্তু না পরে বুঝলাম এটা তো চেঁচামেচি হচ্ছে? বাইরে গিয়ে দেখলাম বরযাত্রীর সাথে আমাদের কিছু মানুষের ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে…
আমি দ্রুত গিয়ে থামানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমি কাকে থামাবো?
আমি তো কাউকে চিনতে পারছি না, কে বরের বাড়ীর আর কে কনের বাড়ীর?
ঝগড়া টা কিছুটা এই রকম…………
বর পক্ষঃ আপনাদের কোন মান সম্মান না থাকলে আমাদের আছে…
কনে পক্ষঃ কেন কি এমন পাহাড় ভেঙ্গে পড়লো?
বর পক্ষঃ এসব কি খাবার?
আমি দেখলাম, একটা প্লেটে খাবার ভালো না, আমি বললাম, ওটা হয়তো ভুল করে চলে গেছে আপনাকে আরেকটা চেঞ্জ করে দিচ্ছি।
কনে পক্ষঃ এই নেন…
বর পক্ষঃ(আরেকজন) আমরা কি ফকির নাকি যে চেয়ে খাবার খেতে হবে?
কনে পক্ষঃ বাড়ীতে কি খান নি? এসেই খাবার খাবার করছেন?
বুঝলাম, কথা টা একটু বেশি হয়ে গেলো… বর পক্ষের একজন বলল, এই তোরা সবাই খাবার ছেড়ে উঠে যা…
সেই মানুষের কথা শুনে সবাই টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো…।
পরে জানতে পারলাম সেই মানুষটা ছেলেটার বড় মামা ছিল, যিনি এই বিয়ে ঠিক করেছিলো।
।।
তিনি ছেলের বাবা কে ডাকল, সাথে আদ্রিতার আব্বুকেও…
বর পক্ষঃ ভাই আমারা আমাদের ছেলের বিয়ে দিতে এসেছি, অপমান হতে আসিনি…
আদ্রিতার আব্বুঃ কেন কি হয়েছে ভাই?
বর পক্ষঃ অন্য জন, কি হয়েছে মানে? আপনার মানুষজন আমাদের খাবার নিয়ে খুঁটা দিচ্ছে আমরা নাকি ফকির?
আদ্রিতার আব্বুঃ কে এসব কথা বলেছে?
বর পক্ষঃ আমাদের কি মেয়ের অভাব ছিল নাকি? শুধু ভাইয়ের কথা শুনে আপনার মেয়ে সাথে বিয়ে দিতে রাজী হয়েছি,…
নাতো আপনার মেয়ের কি যোগ্য আছে আমাদের ছেলের সাথে বিয়ে হবার?
।।
পিছন থেকে কে যেন বলল, চিনতে পারি নি… ঠিক আছে তাহলে এই বিয়ে দেবার কোন দরকার নাই… আপনার ছেলেকে দেখে তো গাঁজাখোর মনে হচ্ছে।।
বর পক্ষঃ কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে বলল, কি? আপনার মেয়ে বুঝি ধোয়া তুলসি পাতা, না জানি কতো ছেলের সাথে কতো কি করছে…
ঠিক এই কথা বলার সাথে সাথেই, আদ্রিতার আব্বু ঐ মানুষটা কে একটা চড় মেরে দিলো…
আদ্রিতার আব্বুঃ মুখ সামলে কথা বলবেন…। আপনি বিয়ে করবেন না সেটা আপনার ব্যাপার।।
।।
আমি তো কিছুই বুঝলাম না, কোথায় থেকে কি হয়ে গেলো।। আমি বর পক্ষকে অনেক অনুরোধ করলাম, কিন্তু তারা চলে গেলো…
দেখলাম, আদ্রিতা বারান্দাই দাঁড়িয়ে ছিল, ঘরে চলে গেলো…
।।
..
বরযাত্রী চলে যাবার পর সবার মুখে একটাই কথা আদ্রিতার এখন কি হবে? এখন তাকে কে বিয়ে করবে?
কারণ একটা বিয়েতে ছেলে পক্ষ ঘুরে গেলে মেয়ে পক্ষের মান সম্মানের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়… তাই সবার চিন্তা এখন কি হবে?
আদ্রিতার এক চাচা বলল, ভাই, মেয়েটার কি হবে?
আদ্রিতার আব্বু আমাকে ডাকলো, বাবা! ইমরান, আমার তো কোন ছেলে নাই, তোমাকে কখনও ছেলের থেকে কম ভাবিনি,
তুমি কি আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবা না? আমার মান সম্মানটা বাচাও বাবা…
আমি প্রথমে কিছু বুঝলাম না, আমি জিজ্ঞেস করলাম? আমাকে কি করতে হবে বলেন…
আদ্রিতার আব্বুঃ তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করে নাও…
আমি তো মনে মনে নাচতে শুরু করে দিয়েছি, নিজেকে একটু কন্ট্রোল করে বললাম, কিন্তু আংকেল আমি কি আপনার জামাই হবার যোগ্য?
আদ্রিতার আব্বুঃ অবশ্যই যোগ্য… শুধু তুমি বলো রাজী আছো কি না? আমি তোমার আব্বুর আম্মুর সাথে কথা বলছি।।
আমিঃ ঠিক আছে আংকেল, আপনি যখন বলছেন তখন আর কিভাবে না বলি, কিন্তু আদ্রিতা কি রাজী হবে??
আদ্রিতার আব্বুঃ সেটা আমি দেখছি…
।।
আংকেল আমার আব্বুর কাছে গিয়ে বলল, আব্বু আম্মু যেহেতু নিজ চোখেই সব দেখেলো।।
আম্মুঃ ভাই, আমারা না কোন মুখে বলবো? আর আদ্রিতা যে কি ভালো মেয়ে সেটা আমরা জানি, এমন বউ পাওয়া আমার গাধা ছেলেটার ভাগ্যে জুটবে এটা তার সৌভাগ্য।
।।
ঘণ্টা খানিক পর আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো… আদ্রিতা কিছু বলল না, শুধু মুচকি হাঁসি দিলো, আমি অন্তত এটা দেখে অনেক শান্তি পেলাম যে সে খুশি।
।।
আমরা বিকেলে চলে আসার সময় আংকেল মানে আমার শ্বশুর ডাকলো,
আমিঃ জি আংকেল বলেন,
শ্বশুরঃ এই গাধা এখন কিসের আংকেল? বাবা বলবা…।
আমিঃ এক দিনেই কি চেঞ্জ করা যাবে? আসতে আসতে বলবো।।
শ্বশুরঃ শোন একটা কথা, কাল রাতে তুমি আর আদ্রিতা যে কথা বলেছিলা সেটা আমি দেখেছিলাম।
আমি রাতে ঘরে যাবার সময় দেখলাম, আদ্রিতা ছাদে যাচ্ছে, এখন বাবা হয়ে একটু তো চিন্তা হবে যে মেয়ে কেন এতো রাতে একা ছাদে যাচ্ছে।
। তারপর দেখলাম তোমার কাছে, আমি তোমাকে দেখে চলে আসছিলাম, যে তোমার সাথে হয়তো গল্প করবে,
করুক গল্প বিয়ের পর তো আর তোমরা এভাবে কথা বলার হয়তো সুযোগ পাবা না,
কিন্তু আসার সময় শুনলাম আদ্রিতা বলছিল কষ্টের কথা, তখন আমি থেমে ভাবলাম কথা গুলো শুনি।
কিন্তু আদ্রিতা যখন তোমার সাথে পালিয়ে যেতে চাইলো তখন মনে হল,
যদি সত্যি পালিয়ে যাও তবে আমার তো মান সম্মান থাকবে না, আর যদি আমি জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেই,
তবে আদ্রিতা কি সুখে থকবে? আর তোমার কি হবে? তোমাকেও তো ছেলের থেকে কম কিছু ভাবি না,
কিন্তু বিশ্বাস করো যখন তুমি আমার সম্মানের কথা ভেবে পালাতে রাজী হলা না,
তখন আমি ভাবলাম যদি তুমি আমার সম্মানের কথা ভেবে নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করতে পারো,
তবে আমি কেন তোমার ভালোবাসা তোমার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারি না,
হ্যাঁ এটা সত্যি যে তুমি ভালো ব্যাবসাও করো না বা চাকুরী করো না, কিন্তু তুমি অনেক ভালো ছেলে,
তাই আমার মনে হল আজ যদি এই বিয়ে আমি ভেঙ্গে দেয় তবে হয়তো না চাইতেও আমি ২ টা মানুষের জীবন নষ্ট করে দিবো,
সে ২ টা জীবন আমার কাছে আমার জীবনের চাইতেও বেশি মূল্যবান।
তুমি আমার ছেলে না কিন্তু একটা ছেলের দায়িত্ব ঠিক পালন করেছো… আশা করবো আমার মেয়েটাকে সুখে রাখবা…
।।
আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো… কি বলবো আমি জানি না্ শুধু এতটুকুই বললাম, দুয়া করবেন……
।।
রাতে আদ্রিতা বাসর ঘরে বসে আছে…
আমি ঘরে ঢুকলাম।।
আমিঃ ম্যাডাম! আসসালামু…
আদ্রিতাঃ ইসস, ঢং কতো? ম্যাডাম?
আমিঃ আমার বউ বলতেই পারি…
আদ্রিতাঃ কই আমার গিফট কোথায়?
আমিঃ কিসের গিফট?
আদ্রিতাঃ ওমা, আপনি জানেন না? বাসর রাতে বউ কে গিফট দিতে হয়?
আমিঃ কিন্তু আমি তো কিছু নিয়ে আসি নি…
আদ্রিতাঃ ঠিক আছে তাহলে আমি নিচে শুয়ে যান, বিছানায় আসবেন না, স্বামীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন না, আপনাকে পাশে নিবো না।
আমিঃ ঠিক আছে বলে, একটা বালিশ নিয়ে নিয়ে শুয়ে গেলাম।।
আদ্রিতাঃ ঐ! আমি না হয় এমনি ফাইজলামি করলাম, তাই বলে নিচে শুয়ে যাবেন? আসেন ওপরে… আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে
প্রমিস করেন কাল আমাকে গিফট দিবেন।
আমিঃ ঠিক আছে…
।।
আদ্রিতা শুবার জন্য বালিশ টা সরাতেই একটা প্যাকেট দেখতে পেলো, সেটা খুলে দেখে বলল,
আদ্রিতাঃ এটা কি?
আমিঃ পায়েল!
আদ্রিতাঃ এটা তো মনে হয় সেই ঐ পায়েলটা যেটা ২ বছর আগে আমাকে একবার দিয়েছিলেন…
আমিঃ হ্যাঁ…
আদ্রিতাঃ ওরে শয়তান…। এতো দিন আমার জন্য রেখেছিলা।।
আমিঃ না আমার বউয়ের জন্য, কিন্তু তুমি তো পায়েল পছন্দ করো না।।
আদ্রিতাঃ না করলে কি হলো? তুমি তো পছন্দ করো? তোমার জন্য এতটুকু করতে পারবো না? তাহলে বউ হলাম কি জন্য?
।।
আমি আদ্রিতাকে পায়েল টা পরিয়ে দিলাম…
আদ্রিতাঃ কেমন লাগছে?
আমিঃ পরী…
আদ্রিতাঃ ঢং.! অনেক রাত হয়েছে ঘুমান…
আমিঃ কি? ঘুমাবো?
………………………………………..সমাপ্ত…………………………………..