মাষ্টারের ভালবাসা

মাষ্টারের ভালবাসা

-মাষ্টার তুমি কিন্তু বেশ দুষ্টু হইয়া গেছো। কথাটা শুনে নাহিদ মাষ্টার জ্যোতির হাতটা ধরে টান দিয়ে ওর কাছে আনলো। জ্যোতি লজ্জায় মাষ্টারকে দূরে ঠেলে দিলো। তারপর নাহিদ মাষ্টার বলল…

-এই ভাবে দূরে ঠেইলা দিয়ো না জ্যোতি বানু। তাইলে কিন্তু বেশি দূরে সইরা যামু। জ্যোতি কথাটা শুনে ভ্রু কুচকে বলল…

-সারাদিন তো স্কুলে পোলাপানরে লাঠি দিয়ে ঠ্যাঙ্গাও। বউয়ের ঠ্যাঙ্গানি খাইলে বুঝবা মাইয়া মানুষ কি জিনিস!বিয়াটা তুমি হইতে দাও তারপর দেখা যাইবো কত দূরে যাইতে পারো।

-তোমার আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হইবো না ম্যাডাম। খুব শীঘ্রই আমি তোমারে নিয়া যামু।
-হ। সেইটা তোমারে দেখলেই বুঝি। এখন যাও তো এইখান থাইকা। লোকে মন্দ কইবো।

নাহিদ মাষ্টার। গ্রামের স্কুলের মাষ্টার। ঢাকা শহর থাইকা লেখাপড়া করে আসছে কিন্তু গ্রামের মায়া ছাড়তে পারেনি বলে এই চাকরীটা বেছে নিলো। জ্যোতি হলো ওর প্রেমিকা। জ্যোতি এইচএসসি পাশ করেছে। ঢাকা শহরে পড়ার ওর খুব ইচ্ছা। তাই সে ভাবছে ঢাকা মামার বাড়িতে চলে যাবে। সেখান থেকে অনার্স শেষ করে আসবে। তারপর দিনক্ষণ ঠিক করে মাষ্টারের বাড়িতে উঠবে।

-জ্যোতি তুমি বুঝতাছো না। ঢাকা শহরে চলা এত সোজা না। তুমি ঐখানকার কিছুই চিনো না,জানো না। আর তাছাড়া…

-আর তাছাড়া কি? শুনো মাষ্টার। তোমার যদি এতই আপত্তি থাকে তুমি তাইলে আমারে বিয়া কইরা নিয়া যাও ঢাকা শহরে। আর তুমি তো এত লেখাপড়া কইরা পরের পোলা ঠ্যাঙানোর চাকরী নিছো। শহরে কি চাকরীর অভাব নাকি?

-এই গ্রাম ছাইড়া যাইতে ইচ্ছা করেনা আমার।
-তাইলে তুমি থাকো। আমারে বাধা দেও ক্যান?

আর তুমি তো শিক্ষিত মানুষ। তোমার সাথে শহরে মাইয়া মানুষ কি পড়ে নাই? মেয়ে মানুষ কি শহরে পড়তে যাইতে পারে না?? অন্তত তোমার কাছে এইটা আমি আশা করি নাই মাষ্টার। আমার অনেক স্বপ্ন গুলা তুমি এখনি ভাঙতে চাও! জ্যোতির কথা শুনে নাহিদ চুপ করে আছে। জ্যোতি আর কিছু না বলে হনহন করে চলে গেলো ওর সামনে থেকে। সত্যিই তো। মেয়ে বলে কি ওর লেখাপড়া করতে গ্রামের বাইরে যাওয়ার অধিকার নাই? নাহিদের বিবেক বলছে “জ্যোতির লেখাপড়া করার অবশ্যই দরকার।” কিন্তু ওর মন কেন জানি সাই দিচ্ছে না। জ্যোতি এসে নাহিদের পাশে বসলো। এই জায়গাটা ওদের দুজনেরই পছন্দের জায়গা। জ্যোতি নাহিদের হাতটা ধরে বলল…

-মাষ্টার শহর থাইকা আমার মামাতো ভাই আইছে।আমার আব্বা আম্মা রাজি হইছে আমাকে শহরে পাঠানোর জন্য। আমিও রাজি। এখন তুমি যদি না চাও তাইলে আমি যামু না। কথাটা শুনে নাহিদ জ্যোতির দিকে তাকালো। জ্যোতির মুখে একরকম মন খারাপের ছাপ। নাহিদ কিছু না বলে অন্য দিকে আবার তাকালো। জ্যোতি নাহিদের মুখটা হাত দিয়ে ওর দিকে ঘুরিয়ে দুই হাতে নাহিদের দুই গালে ধরে বলল…

-তুমি চাওনা মানুষ বলুক মাষ্টারের বউ টা শিক্ষিত??
-হ্যা চাই তো। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও। আমার সমস্যা নেই। জ্যোতি একটা উচ্ছল হাসি দিয়ে বলল…
-তুমি মন থাইকা কইছো তো মাষ্টার??

নাহিদ মাথা নেড়ে হ্যা সুচক উত্তর দিলো। জ্যোতি নাহিদরে জড়িয়ে ধরলো। নাহিদের মুখে এক প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু মনে একরাশ চিন্তা হচ্ছে কেন জানি। নাহিদ মাষ্টার ছেলেটাকে দেখে চিনতে পারলো না। একটু কাজে জ্যোতির বাড়ি এসে দেখলো ছেলেটাকে। এর আগে কখনো গ্রামে দেখেনি। তাইলে কে এটা? আর ছেলেটা এভাবে জ্যোতির ঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে কি দেখছে? নাহিদ পিছন থেকে ছেলেটার শার্টের কলার চেপে কষিয়ে এক থাপ্পড় দিলো। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে একটা ধমক দিয়ে বলল…

-হাউ ডেয়ার ইউ? ধমক শুনে জ্যোতি ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে বলল…
-কি হইছে? কি হইছে এইখানে? নাহিদ ছেলেটার কলার না ছেড়েই বলল…
-তুমি ঘরে কি করতেছিলা??
-আমি তো গোসল করে আসলাম মাত্র। তুমি উনার কলার ধইরা রাখছো ক্যান?? ছাড়ো তো।
কথাটা শুনে নাহিদ ছেড়ে দিলো। তারপর বলল…

-কে এইটা?? এই বেটায় তোমার ঘরের এতটুকু বলতেই জ্যোতি বলল…
-এইটা হইলো আমার মামাতো ভাই। শহর থাইকা আসছে। ঐযে তোমারে কইছিলাম না? নাহিদ বলতে গিয়েও থেমে গেলো। কারণ জ্যোতি এই লম্পট ছেলের বাড়িতেই থাকবে। যেই ছেলে এখানেই এমন করে সে শহরে কতটা খারাপ হইতে পারে সে চিন্তা ওর মাথায় ঢুকলো।

-জ্যোতি তুমি যাইতাছো?
-হ। মাষ্টার তুমি কিন্তু মন খারাপ কইরো না। স্কুল ছুটি পাইলেই তুমি যাইবা। শুনছি শহরে অনেক বড় বড় পার্ক আছে। আমার মামাতো ভাই কইছে আমারে ঘুরাইতে নিয়ে যাইব।

-শুনো জ্যোতি। তুমি ঐ পোলার লগে কোথাও যাইবা না। আমি ছুটি পাইলে তোমার ঐখানে গিয়া ঘুরাঘুরি করুম। শহরের মানুষ এত সহজ সরল হয় না। জ্যোতি একবার হাসি নাহিদের বুকে জড়িয়ে ধরলো। নাহিদের চোখ দিয়ে কেন জানি পানি পরছে। জ্যোতি নাহিদের চোখে পানি দেখে কান্না করতে করতে বলল…

-তুমি কান্না করলে কিন্তু আমি যামু না মাষ্টার। তোমারে কষ্ট দিতে আমিও চাইনা।
-নাহ। আমি কাঁদি না। তুমি অনেক লেখাপড়া করবা এটাতো আমার খুশির কথা। আমারে আবার ভুইলা যাইবা না তো??
-নিজেরে ভুইলা যামু তবুও তোমারে ভুলতাম না মাষ্টার। এটা বলেই জ্যোতি খুব কাঁদছে। নাহিদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
-মাষ্টার সাহেব নাকি? কথাটা শুনে নাহিদ পিছন ফিরে তাকিয়ে বলল…

-হুম। কে? লোকটা সিগারেটে টান দিয়ে নাহিদের দিকে ধোয়া ছুড়ে বলল…
-আমি। যাকে চড় মেরেছিলেন!
-ওহ। সরি আমি সেদিনের জন্য।
-হুম। রাতের বেলা এখানে কি করেন?
-এই তো বসে আছি। লোকটা একটা সিগারেট নাহিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল…
-হবে নাকি একটা??

নাহিদ হাতে নিয়ে সিগারেট টা দিয়াশলাই এর একটা কাঠি দিয়ে জ্বালালো। তারপর সেটা ডানে বামে ঘুরাতে লাগলো আর ওর মুখটা গামছা দিয়ে চেপে ধরলো যাতে মুখে নাকে ধোয়া না যায়। ওর কাজ কর্ম দেখে জ্যোতির ভাই বেশ অবাক হলো। তারপর বলল…

-হোয়াট হ্যাপেন্ড?? নাহিদ কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে সিগারেট চারিদিকে আগের মতোই ঘুরাতে লাগলো। যখন সিগারেট শেষ হলো তখন ও গামছা মুখ থেকে সরিয়ে বলল…

-আসলে খুব মশা চারিদিকে। কয়েল তো নেই তাই সিগারেট দিয়ে কাজ চালাইলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। লোকটা ওর কথা শুনে কিছু না বলে উঠে কি জানি গুণগুণ করতে চলে গেলো।
-হ্যালো, মাষ্টার। আমি পৌছাইছি ঠিক মতো।
-এইটা কার নাম্বার?
-আমার মামাতো ভাইয়ের।
-ওহ।
-আচ্ছা মাষ্টার আমি এখন রাখি। পরে কথা হইবো। আমি খুব ক্লান্ত।
-আচ্ছা তুমি কিন্তু আমাকে প্রতিদিন…

এটা বলতেই ফোন রেখে দিলো জ্যোতি। ওকে বলা হলো না প্রতিদিন ওকে কল দিতে হবে। নাহিদ ফোন রেখে আকাশের দিকে তাকালো। জ্যোতি এখন ওর কাছে নেই সেটা ভাবতেই ওর কষ্ট লাগে। এখন আর যখন ইচ্ছা দেখতে পারবে না ওকে। নাহিদ বার বার ভাবছে জ্যোতির যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?? নাহিদ ক্লাসে বোর্ডে যখন লিখতে গেলো তার হাত কাপছে। কিছুই করতে পারছে না কেন জানি। ক্লাস থেকে বের হয়ে গিয়ে স্কুলের মাঠের কোনের বেঞ্চিটাতে গিয়ে বসলো। তারপর পকেট থেকে একটা ফোন বের করল। জ্যোতির সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ওর কাছে তো ফোন নেই। তারপর মনে পরলো জ্যোতির ঐ ভাইয়ের নাম্বারটা। সাথে সাথে সেই নাম্বারে কল দিলো।

–হ্যালো। নাহিদ কাপা গলায় বলল…
-হ্যা হ্যালো। আমি নাহিদ। নাহিদ মাষ্টার। চিনেছেন??
-কাকে চান?
-জ্বী জ্যোতিকে। একটু জ্যোতিকে দেওয়া যাবে? লোকটা চুপ করে আছে। হঠাৎ ফোনের অপর পাশ থেকে জ্যোতির কথা শুনতে পেল। জ্যোতি তার ভাইকে বলছে..
-ভাই মাষ্টার কল দিছিলো আপনার ফোনে? ছেলেটা বলল…
-না। দেয়নি। নাহিদ একটু উত্তেজিত হয়ে লোকটাকে বলল…
-ঐ মিয়া। আপনি ওরে ফোনটা দেন বলতাছি। নাহিদ জোরে জোরে বলতে লাগলো…
-জ্যোতি জ্যোতি।

নাহিদ হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো। ও বুঝতে পারলো ফোনটা ছেলেটার কাছে। ওর ডাক জ্যোতি শুনতে পারবে না। ছেলেটা ফোন রেখে দিলো। এই নিয়ে সাতাত্তর নাম্বার কল দিলো জ্যোতির ভাইয়ের নাম্বারে, কিন্তু রিসিভ করলো না। পকেট থেকে ঠিকানা টা বের করে একবার দেখলো। তারপর একটা সিএনজি নিয়ে জ্যোতির মামার বাড়ির দিকে রওনা করলো। নাহিদের হার্ট পালস বাড়ছে। আজ প্রায় আঠারো দিন পর নাহিদের সাথে জ্যোতির দেখা হবে। কলিং বেল বাজানোর পর একটা ভদ্রলোক দরজা খুললো। লোকটা চশমাটা খুলে সাদা পাঞ্জাবীর কোনা দিয়ে মুছে আবার নাকের উপর বসালো। বলল…

-কে আপনি?
-আমি নাহিদ। নাহিদ মাষ্টার। জগতপুর থেকে আসছি। আপনার বোনের এলাকা থেকে।জ্যোতি আছে?? কথাটা শুনে লোকটা একটু উদ্ভট দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল…
-জ্যোতি বাড়ি যায়নি??
-মা মানে?? ও বাড়ি যাবে কিভাবে?? ও তো আপনাদের এখানেই।

-ও তো এক সপ্তাহ পরেই এখান থেকে আমাদের কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে। আমরা ভাবছি ও চলে গেছে।
নাহিদ লোকটাকে ধমক দিয়ে বলল…

-ওকে আপনারা একলা ছাড়ছেন ক্যান?? ও শহরের কিছুই চিনে না। ওর গলা শুনে একটা মহিলা আর জ্যোতির সেই ভাই আসলো। নাহিদ জ্যোতির সেই ভাইকে দেখেই গলায় চেপে ধরলো। আর বলল…

-জ্যোতি কই বল। ছেলেটা নাহিদকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বলল
-আমি কি করে বলবো। ও আমাদের কাউকে কিছু বলেনি।
-ও তোর জন্য গেছে। নিশ্চয়ই তুই ওর উপর বদনজর দিছিলি। ভদ্রলোক ধমক দিয়ে বলল..
-মুখ সামলে কথা বলো। এটা আমার বাড়ি আর ওর আমার ছেলে। বের হয়ে যাও এখনি।

নাহিদ চুপ করে চলে আসলো। রাস্তা ধরে হাটছে আর জ্যোতিকে খুঁজছে। ওর মনে হচ্ছে ও পাগল হয়ে যাবে। পুরো পৃথিবী যেন ওর পালটে গেছে।

-মাষ্টার তুমি কিন্তু বেশ দুষ্টু হইয়া গেছো। কথাটা শুনে নাহিদ মাষ্টার জ্যোতির হাতটা ধরে টান দিয়ে ওর কাছে আনলো। জ্যোতি লজ্জায় মাষ্টারকে দূরে ঠেলে দিলো। তারপর নাহিদ মাষ্টার বলল…

-এই ভাবে দূরে ঠেইলা দিয়ো না জ্যোতি বানু। তাইলে কিন্তু বেশি দূরে সইরা যামু। জ্যোতি কথাটা শুনে ভ্রু কুচকে বলল…
-সারাদিন তো স্কুলে পোলাপানরে লাঠি দিয়ে ঠ্যাঙ্গাও। বউয়ের ঠ্যাঙ্গানি খাইলে বুঝবা মাইয়া মানুষ কি জিনিস!বিয়াটা তুমি হইতে দাও তারপর দেখা যাইবো কত দূরে যাইতে পারো।
-তোমার আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হইবো না ম্যাডাম। খুব শীঘ্রই আমি তোমারে নিয়া যামু।
-হ। সেইটা তোমারে দেখলেই বুঝি। এখন যাও তো এইখান থাইকা। লোকে মন্দ কইবো।

নাহিদ মাষ্টার। গ্রামের স্কুলের মাষ্টার। ঢাকা শহর থাইকা লেখাপড়া করে আসছে কিন্তু গ্রামের মায়া ছাড়তে পারেনি বলে এই চাকরীটা বেছে নিলো। জ্যোতি হলো ওর প্রেমিকা। জ্যোতি এইচএসসি পাশ করেছে। ঢাকা শহরে পড়ার ওর খুব ইচ্ছা। তাই সে ভাবছে ঢাকা মামার বাড়িতে চলে যাবে। সেখান থেকে অনার্স শেষ করে আসবে। তারপর দিনক্ষণ ঠিক করে মাষ্টারের বাড়িতে উঠবে।

-জ্যোতি তুমি বুঝতাছো না। ঢাকা শহরে চলা এত সোজা না। তুমি ঐখানকার কিছুই চিনো না,জানো না। আর তাছাড়া…

-আর তাছাড়া কি? শুনো মাষ্টার। তোমার যদি এতই আপত্তি থাকে তুমি তাইলে আমারে বিয়া কইরা নিয়া যাও ঢাকা শহরে। আর তুমি তো এত লেখাপড়া কইরা পরের পোলা ঠ্যাঙানোর চাকরী নিছো। শহরে কি চাকরীর অভাব নাকি?

-এই গ্রাম ছাইড়া যাইতে ইচ্ছা করেনা আমার।
-তাইলে তুমি থাকো। আমারে বাধা দেও ক্যান?

আর তুমি তো শিক্ষিত মানুষ। তোমার সাথে শহরে মাইয়া মানুষ কি পড়ে নাই? মেয়ে মানুষ কি শহরে পড়তে যাইতে পারে না?? অন্তত তোমার কাছে এইটা আমি আশা করি নাই মাষ্টার। আমার অনেক স্বপ্ন গুলা তুমি এখনি ভাঙতে চাও! জ্যোতির কথা শুনে নাহিদ চুপ করে আছে। জ্যোতি আর কিছু না বলে হনহন করে চলে গেলো ওর সামনে থেকে। সত্যিই তো। মেয়ে বলে কি ওর লেখাপড়া করতে গ্রামের বাইরে যাওয়ার অধিকার নাই? নাহিদের বিবেক বলছে “জ্যোতির লেখাপড়া করার অবশ্যই দরকার।” কিন্তু ওর মন কেন জানি সাই দিচ্ছে না। জ্যোতি এসে নাহিদের পাশে বসলো। এই জায়গাটা ওদের দুজনেরই পছন্দের জায়গা। জ্যোতি নাহিদের হাতটা ধরে বলল…

-মাষ্টার শহর থাইকা আমার মামাতো ভাই আইছে।আমার আব্বা আম্মা রাজি হইছে আমাকে শহরে পাঠানোর জন্য। আমিও রাজি। এখন তুমি যদি না চাও তাইলে আমি যামু না। কথাটা শুনে নাহিদ জ্যোতির দিকে তাকালো। জ্যোতির মুখে একরকম মন খারাপের ছাপ। নাহিদ কিছু না বলে অন্য দিকে আবার তাকালো। জ্যোতি নাহিদের মুখটা হাত দিয়ে ওর দিকে ঘুরিয়ে দুই হাতে নাহিদের দুই গালে ধরে বলল

-তুমি চাওনা মানুষ বলুক মাষ্টারের বউ টা শিক্ষিত??
-হ্যা চাই তো। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও। আমার সমস্যা নেই। জ্যোতি একটা উচ্ছল হাসি দিয়ে বলল
-তুমি মন থাইকা কইছো তো মাষ্টার??

নাহিদ মাথা নেড়ে হ্যা সুচক উত্তর দিলো। জ্যোতি নাহিদরে জড়িয়ে ধরলো। নাহিদের মুখে এক প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু মনে একরাশ চিন্তা হচ্ছে কেন জানি। নাহিদ মাষ্টার ছেলেটাকে দেখে চিনতে পারলো না। একটু কাজে জ্যোতির বাড়ি এসে দেখলো ছেলেটাকে। এর আগে কখনো গ্রামে দেখেনি। তাইলে কে এটা? আর ছেলেটা এভাবে জ্যোতির ঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে কি দেখছে? নাহিদ পিছন থেকে ছেলেটার শার্টের কলার চেপে কষিয়ে এক থাপ্পড় দিলো। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে একটা ধমক দিয়ে বলল…

-হাউ ডেয়ার ইউ? ধমক শুনে জ্যোতি ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে বলল
-কি হইছে? কি হইছে এইখানে? নাহিদ ছেলেটার কলার না ছেড়েই বলল
-তুমি ঘরে কি করতেছিলা??
-আমি তো গোসল করে আসলাম মাত্র। তুমি উনার কলার ধইরা রাখছো ক্যান?? ছাড়ো তো। কথাটা শুনে নাহিদ ছেড়ে দিলো। তারপর বলল

-কে এইটা?? এই বেটায় তোমার ঘরের এতটুকু বলতেই জ্যোতি বলল
-এইটা হইলো আমার মামাতো ভাই সৈকত। শহর থাইকা আসছে। ঐযে তোমারে কইছিলাম না? নাহিদ বলতে গিয়েও থেমে গেলো। কারণ জ্যোতি এই লম্পট ছেলের বাড়িতেই থাকবে। যেই ছেলে এখানেই এমন করে সে শহরে কতটা খারাপ হইতে পারে সে চিন্তা ওর মাথায় ঢুকলো।

-জ্যোতি তুমি যাইতাছো?
-হ। মাষ্টার তুমি কিন্তু মন খারাপ কইরো না। স্কুল ছুটি পাইলেই তুমি যাইবা। শুনছি শহরে অনেক বড় বড় পার্ক আছে। আমার মামাতো ভাই কইছে আমারে ঘুরাইতে নিয়ে যাইব।

-শুনো জ্যোতি। তুমি ঐ পোলার লগে কোথাও যাইবা না। আমি ছুটি পাইলে তোমার ঐখানে গিয়া ঘুরাঘুরি করুম। শহরের মানুষ এত সহজ সরল হয় না। জ্যোতি একবার হাসি নাহিদের বুকে জড়িয়ে ধরলো। নাহিদের চোখ দিয়ে কেন জানি পানি পরছে। জ্যোতি নাহিদের চোখে পানি দেখে কান্না করতে করতে বলল…

-তুমি কান্না করলে কিন্তু আমি যামু না মাষ্টার। তোমারে কষ্ট দিতে আমিও চাইনা।
-নাহ। আমি কাঁদি না। তুমি অনেক লেখাপড়া করবা এটাতো আমার খুশির কথা। আমারে আবার ভুইলা যাইবা না তো??

-নিজেরে ভুইলা যামু তবুও তোমারে ভুলতাম না মাষ্টার। এটা বলেই জ্যোতি খুব কাঁদছে। নাহিদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
-মাষ্টার সাহেব নাকি? কথাটা শুনে নাহিদ পিছন ফিরে তাকিয়ে বলল…
-হুম। কে? লোকটা সিগারেটে টান দিয়ে নাহিদের দিকে ধোয়া ছুড়ে বলল…
-আমি। যাকে চড় মেরেছিলেন!
-ওহ। সরি আমি সেদিনের জন্য।
-হুম। রাতের বেলা এখানে কি করেন?
-এই তো বসে আছি। লোকটা একটা সিগারেট নাহিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল…
-হবে নাকি একটা??

নাহিদ হাতে নিয়ে সিগারেট টা দিয়াশলাই এর একটা কাঠি দিয়ে জ্বালালো। তারপর সেটা ডানে বামে ঘুরাতে লাগলো আর ওর মুখটা গামছা দিয়ে চেপে ধরলো যাতে মুখে নাকে ধোয়া না যায়। ওর কাজ কর্ম দেখে জ্যোতির ভাই বেশ অবাক হলো। তারপর বলল…

-হোয়াট হ্যাপেন্ড?? নাহিদ কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে সিগারেট চারিদিকে আগের মতোই ঘুরাতে লাগলো। যখন সিগারেট শেষ হলো তখন ও গামছা মুখ থেকে সরিয়ে বলল…

-আসলে খুব মশা চারিদিকে। কয়েল তো নেই তাই সিগারেট দিয়ে কাজ চালাইলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। লোকটা ওর কথা শুনে কিছু না বলে উঠে কি জানি গুণগুণ করতে চলে গেলো।
-হ্যালো, মাষ্টার। আমি পৌছাইছি ঠিক মতো।
-এইটা কার নাম্বার?
-আমার মামাতো ভাইয়ের।
-ওহ।
-আচ্ছা মাষ্টার আমি এখন রাখি। পরে কথা হইবো। আমি খুব ক্লান্ত।
-আচ্ছা তুমি কিন্তু আমাকে প্রতিদিন…

এটা বলতেই ফোন রেখে দিলো জ্যোতি। ওকে বলা হলো না প্রতিদিন ওকে কল দিতে হবে। নাহিদ ফোন রেখে আকাশের দিকে তাকালো। জ্যোতি এখন ওর কাছে নেই সেটা ভাবতেই ওর কষ্ট লাগে। এখন আর যখন ইচ্ছা দেখতে পারবে না ওকে। নাহিদ বার বার ভাবছে জ্যোতির যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?? নাহিদ ক্লাসে বোর্ডে যখন লিখতে গেলো তার হাত কাপছে। কিছুই করতে পারছে না কেন জানি। ক্লাস থেকে বের হয়ে গিয়ে স্কুলের মাঠের কোনের বেঞ্চিটাতে গিয়ে বসলো। তারপর পকেট থেকে একটা ফোন বের করল। জ্যোতির সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ওর কাছে তো ফোন নেই। তারপর মনে পরলো জ্যোতির ঐ ভাইয়ের নাম্বারটা। সাথে সাথে সেই নাম্বারে কল দিলো।

–হ্যালো। নাহিদ কাপা গলায় বলল…
-হ্যা হ্যালো। আমি নাহিদ। নাহিদ মাষ্টার। চিনেছেন??
-কাকে চান?
-জ্বী জ্যোতিকে। একটু জ্যোতিকে দেওয়া যাবে? লোকটা চুপ করে আছে। হঠাৎ ফোনের অপর পাশ থেকে জ্যোতির কথা শুনতে পেল। জ্যোতি তার ভাইকে বলছে..

-ভাই মাষ্টার কল দিছিলো আপনার ফোনে? ছেলেটা বলল…
-না। দেয়নি। নাহিদ একটু উত্তেজিত হয়ে লোকটাকে বলল…
-ঐ মিয়া। আপনি ওরে ফোনটা দেন বলতাছি। নাহিদ জোরে জোরে বলতে লাগলো…
-জ্যোতি জ্যোতি।

নাহিদ হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো। ও বুঝতে পারলো ফোনটা ছেলেটার কাছে। ওর ডাক জ্যোতি শুনতে পারবে না। ছেলেটা ফোন রেখে দিলো। এই নিয়ে সাতাত্তর নাম্বার কল দিলো জ্যোতির ভাইয়ের নাম্বারে, কিন্তু রিসিভ করলো না। পকেট থেকে ঠিকানা টা বের করে একবার দেখলো। তারপর একটা সিএনজি নিয়ে জ্যোতির মামার বাড়ির দিকে রওনা করলো। নাহিদের হার্ট পালস বাড়ছে। আজ প্রায় আঠারো দিন পর নাহিদের সাথে জ্যোতির দেখা হবে। কলিং বেল বাজানোর পর একটা ভদ্রলোক দরজা খুললো। লোকটা চশমাটা খুলে সাদা পাঞ্জাবীর কোনা দিয়ে মুছে আবার নাকের উপর বসালো। বলল…

-কে আপনি?
-আমি নাহিদ। নাহিদ মাষ্টার। জগতপুর থেকে আসছি। আপনার বোনের এলাকা থেকে।জ্যোতি আছে?? কথাটা শুনে লোকটা একটু উদ্ভট দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল…

-জ্যোতি বাড়ি যায়নি??
-মা মানে?? ও বাড়ি যাবে কিভাবে?? ও তো আপনাদের এখানেই।
-ও তো এক সপ্তাহ আগেই এখান থেকে আমাদের কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে। আমরা ভাবছি ও চলে গেছে। নাহিদ লোকটাকে ধমক দিয়ে বলল…
-ওকে আপনারা একলা ছাড়ছেন ক্যান?? ও শহরের কিছুই চিনে না।

ওর গলা শুনে একটা মহিলা আর জ্যোতির সেই ভাই আসলো। নাহিদ জ্যোতির সেই ভাইকে দেখেই গলায় চেপে ধরলো। আর বলল…

-জ্যোতি কই বল। ছেলেটা নাহিদকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বলল…
-আমি কি করে বলবো। ও আমাদের কাউকে কিছু বলেনি।
-ও তোর জন্য গেছে। নিশ্চয়ই তুই ওর উপর বদনজর দিছিলি। ভদ্রলোক ধমক দিয়ে বলল..
-মুখ সামলে কথা বলো। এটা আমার বাড়ি আর ও আমার ছেলে। বের হয়ে যাও এখনি।

নাহিদ চুপ করে চলে আসলো। রাস্তা ধরে হাটছে আর জ্যোতিকে খুঁজছে। ওর মনে হচ্ছে ও পাগল হয়ে যাবে। পুরো পৃথিবী যেন ওর পালটে গেছে। দুদিন জ্যোতিকে খোজার পর না পেয়ে নাহিদ মাষ্টার সরাসরি ধানমণ্ডি থানায় গেলো। ওর বার বার মনে হচ্ছে জ্যোতি খুব বড় সমস্যায় আছে। জ্যোতি তো নাহিদের ফোন নাম্বারটাও জানে কিন্তু কল দিচ্ছে না কেন? বার বার ফোনের স্ক্রিনে তাকালো কিন্তু কোনো কল আসেনি। থানায় গিয়ে দেখলো ওসি সাহেব কানে কি যেন দিয়ে গুঁতাগুঁতি করছে। নাহিদ লোকটার সামনে যেতেই লোকটা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল…

-চেয়ারে বসেন। আমি কানটা একটু পরিষ্কার করে নেই।

নাহিদ চেয়ারটা টেনে বসলো। লোকটা কান পরিষ্কার করে চেয়ার থেকে উঠে কই যেন গেলো। প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলো নাহিদ চেয়ারটাতে বসে আছে। লোকটা এখনো আসেনি। কই যে চলে গেলো। নাহিদ কিছুটা ভীতকন্ঠে হাবিলদারকে বলল…

-স্যার। এই যে এই চেয়ারে যিনি বসতো উনি কই চলে গেলো?? হাবিলদার নাহিদের আপাদমস্তক দেখে বলল…
-কি সমস্যা??
-স্যার আমার কাজিন কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আ. আমার এক কাজিন ধানমন্ডিতেই ওর মামার বাড়িতে আসছিলো। কিন্তু ঐখানে গিয়ে শুনলাম অনেক দিন আগেই নাকি ও বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে গেছে।

-বাড়ি কই আপনার?
-জগতপুর।
-তাইলে ঐ থানায় গিয়ে ডায়েরি করুন। সেখান থেকে নোটিশ না আসা পর্যন্ত অ্যাকশন নিতে পারবো না।

-কিন্তু এখন আবার সেখানে যেতে সময় লাগবে।আপনি প্লিজ একটু ওর মামার বাড়িতে ভাল করে খোজ নিন।

-এটা রুলস। রুলস সবার জন্যই সমান। আমরা ঐ থানার অনুমতি ছাড়া এই কেইস হাতে নিতে পারবো না।
নাহিদ মন খারাপ করে যখনি বের হতে চাইলো পিছন থেকে একজন ডাকলো। নাহিদ পেছন ফিরে দেখলো ঐ অফিসার। নাহিদ লোকটার সামনে যেতে বলল…

-কি সমস্যা আপনার?? চলে যাচ্ছেন যে?? এটা বলতেই হাবিলদার এসে বলল…

-ওনার কাজিন বাড়ি থেকে পালিয়েছে প্রেমিকের সাথে। তাকে খুজে আনতে হবে এখন আমাদের। যত্তসব।
হাবিলদারের দিকে নাহিদ মাষ্টার ক্রোধজনক চোখে তাকালো। এরকম চাহনি থেকে বুঝা যাচ্ছে নাহিদ মাষ্টার তার ছাত্রদের মতো হাবিলদারকে বেত দিয়ে মারতে ইচ্ছা করছে। তখনি অফিসার সাহেব হাবিলদারকে ধমক দিয়ে বলল..

-তুমি চুপ করো তো। আচ্ছা চলুন আপনি আমার সাথে। পুলিশের গাড়িতে বসে আছে নাহিদ। ওসি সাহেব বলল…

-ঘটনাটা কি বলুন তো।
-আমার কাজিন গ্রাম থেকে আসছে ওর মামার বাড়িতে। এখন ওই বাড়িতে যেতেই ওরা বলে যে ও নাকি অনেক আগেই সেখান থেকে চলে গেছে।আমি জানি নিশ্চয়ই ওর মামাতো ভাইয়ের কারণে ও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কথাটা বলতেই নাহিদের চোখের কোনের পানিটা শার্টের হাতা দিয়ে মুছলো। লোকটা বলল…

-বাড়ি কোথায় আপনার?
-জগতপুর।

-ওহহহ। তাহলে চিন্তা করবেন না। জগতপুরের ওসি আমার বন্ধু। আমি আজই তদন্ত শুরু করবো। এটা বলেই ওসি সাহেবের গাড়ির সামনে হঠাৎ করে একটা ট্রাক এসে থামলো। একটুর জন্য ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয়নি। ওসি সাহেব রেগে গাড়ি থেকে নেমে পরলো। নাহিদ ও নামলো। ওসি সাহেব গাড়ির ড্রাইভারের কাছে গিয়ে বলল…

-শালা। তোদের জন্যই রাস্তায় এত অ্যাক্সিডেন্ট হয়। নাম বলছি গাড়ি থেকে। নাম এখনি।

ওসি সাহেব ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলো এক লাথি। লাথি খেয়ে ড্রাইভার কানে ধরে ফেলল। নাহিদ এ দৃশ্য দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলো তার ছাত্ররাও মনে হয় বেতের ভয়ে এরকম কাচুমাচু হয়ে কানে ধরে। কেন জানি মনে হচ্ছে আর স্টুডেন্টদের পেটাবে না। এদিকে ড্রাইভারের জন্যও একরকম মায়া হচ্ছে মাষ্টারের। ড্রাইভার পকেট থেকে মুঠো করে কিছু টাকা ওসি সাহেবের দিকে এগিয়ে দিলো। ওসি সাহেব লোকটার শার্টের কলার ধরে বলতে লাগলো…

-আমাকে ঘুষ?? আমাকে?? এত মানুষের সামনে আমাকে অপমান করলি? পুলিশকে অপমান? এটা বলতে বলতে লোকটাকে টানতে টানতে গাড়ির সামনে আনলো। তারপর ড্রাইভারের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে ড্রাইভারকে ছেড়ে দিলো। নাহিদ মাষ্টার অবাক হয়ে রইলো ওনার আচরণ দেখে। নাহিদ মাষ্টারের দৃষ্টি দেখে,
ওসি সাহেব বলল…

-পুলিশরা এরকমই। বাংলা মুভি দেখেননি?? নাহিদ মাষ্টার কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। নাহিদ মাষ্টার এরকম একটা লোকের উপর ভরসা করছে।মাষ্টারের মনে হচ্ছে সব আশায় গুড়েবালি।
-আমি বলি কি নাহিদ সাহেব আপনি গ্রামেই চলে যান। মিস জ্যোতি নিজের ইচ্ছাতেই বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তাকে এত সহজে পাওয়া যাবে না মনে হচ্ছে।

-আসল কথাটা বললেই পারেন। ওসি সাহেব পান খাচ্ছিলেন। নাহিদের কথাটা শুনে পান খাওয়া বন্ধ করে বলল…
-আসল কথা কোনটা??
-টাকার কথা। যেটা ছাড়া আপনার হাত পা চললেও মাথা চলে না। ওসি সাহেব মাথা থেকে পুলিশি ক্যাপটা নামিয়ে মাথায় হাত দিলো।নাহিদের কথা শুনে হাবিলদার এসে বলল…
-ঐ মাষ্টার। বেশি কথা বলবি না। নয়ত পকেটে ইয়াবা দিয়ে চালান করে দিবো। ওসি সাহেব ক্যাপটা মাথায় পরে বলল…

-নাহিদ সাহেব আপনি তো দুদিন যাবত ঢাকাতেই আছেন। তাই না??
-হুম।
-আপনি শুক্রাবাদ আপনার এক বন্ধুর বাসায় উঠেছেন। সেটাও ঠিক। তাই না?? ওসি সাহেবের কথা শুনে নাহিদ মাষ্টার বুঝতে পারছে না পুলিশকে তো ও এত কিছু বলেনি। ওরা জানলো কিভাবে? মতলবটা কি বুঝতে পারছে না। নাহিদ মাষ্টার বলল…

-হুম।
-চলুন। আপনার বন্ধুর বাসায় যাবো।
-আমার বন্ধুর বাসায় গিয়ে কি করবেন? যেটা করা দরকার সেটা করুন।
-আমাদের অনুসন্ধানের এটাও একটা অংশ। নাহিদ আর কিছু না বলে ওসির সাথে ওসির গাড়িতে উঠে বসলো।
-উনি কে নাহিদ সাহেব? কথাটা শুনে নাহিদ বলল…
-উনি কে সেটা আমি কি করে বলবো?? আর তাছাড়া আমি এই বাসায় কাল এসেছি।
-উনি তো বলছে উনি আপনার স্ত্রী।
-আমি বিয়েই করিনি এখনো। ওসি সাহেব জ্যোতির সাথে আমার বিয়ে হবার কথা পাকাপাকি হয়ে গেছে। এই মহিলাকে আমি চিনিও না। বিয়ে তো দূরের কথা।

-ওয়েট নাহিদ সাহেব। আপনি তো বলেছিলেন জ্যোতি আপনার কাজিন হয়। বলেননি তো ওর সাথে আপনার বিয়ের কথা পাকাপোক্ত অথবা আপনার হবু বউ! কথাটা শুনে নাহিদের কপালে ঘাম জমছে। ওদিকে বোরকা পরা মহিলাটা এক কোনায় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। নাহিদ মহিলাকে ধমক দিয়ে বলল…

-কে আপনি?? কেন আমাকে সমস্যায় ফেলছেন?? আর মুখ দেখান বলছি। মহিলাকে ধমক দেওয়ায় ওসি সাহেব নাহিদ মাষ্টারকে বলল…

-উত্তেজিত হবেন না। কেন আপনি নির্দোষ সৈকতের নামে মামলা করতে চান সেটা আমি জানতে চাই না। আপনি এখনি উনাকে নিয়ে জগতপুর যাবেন। আর যদি জগতপুর না নিয়ে যান তাহলে জ্যোতি মিসিং কেইস টা আমি নিজেই আপনার নামে করবো। নাহিদ নির্বাক হয়ে আছে। ওর সাথে কি হচ্ছে এসব। একদিকে জ্যোতিকে হারিয়ে ওর মস্তিষ্ক অকেজো আর এখানে আরেক মহিলার খপ্পরে পরে গেল। ওসি সাহেব তাদেরকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে বলল…

-নাহিদ সাহেব। সৈকতের শাস্তি হবেই। তবে শুনে রাখুন আমরা সব সময় খারাপ কাজ করি না। ভাল থাকবেন। আর ভুলেও মেয়েটাকে কোনোভাবে হার্ট করার চেষ্টা করবেন না। নাহিদ কিছু না বলে ট্রেনে জানালার পাশে গিয়ে বসলো। বিপরীত পাশে মেয়েটা বসলো। নাহিদ ট্রেনের জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। ঘন কালো মেঘের মতো ঢেকে আছে আকাশটা। নাহিদের চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। বোরকা পড়ুয়া মহিলাটাও কাঁদছে। বোরকার ভিতর থেকে ছিঁচকাঁদুনে কান্নার আওয়াজ পাচ্ছে মাষ্টার। মহিলার অভিনয় দেখে নাহিদ মাষ্টার সাথে সাথে সিট থেকে উঠে গেলো। বগিতে আর কোনো মানুষজন নেই। মাষ্টার দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পিছন থেকে কাঁদতে কাঁদতে মহিলাটা বলল…

-মাষ্টার তুমি এমনে কান্দো ক্যান?? কথাটা খুব চেনা চেনা লাগছে। মাষ্টার পিছন ফিরে দেখলো জ্যোতি দাঁড়িয়ে।তার মানে জ্যোতিই বোরকা পরেছিলো। জ্যোতিকে দেখে মাষ্টার জ্যোতির মুখটা দুই হাতে ধরে বলল

-তুমি?? তুমি কই ছিলা?? তুমি জানো আমি তোমারে কতো জায়গায় খুঁজছি?? জ্যোতি উত্তর না দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। একটু পর বলল
-আমারে তুমি মাফ কইরা দেও মাষ্টার। আমি তোমার কথা না শুইনা শহরে আইছিলাম। আমারে মাফ কইরা দেও।
-কি হইছিলো তোমার? ঐ লম্পট তোমার উপর বদনজর দিছিলো তাই না?? জ্যোতি মাথা নেড়ে হ্যা সুচক উত্তর দিলো। মাষ্টার জ্যোতির চোখের পানি মুছে বলল
-আমারে পাইলা ক্যামনে? আমার বন্ধুর বাসার খোজ কেমনে পাইলা??

-একদিন মামা মামী বাসা থাইকা বাজারে যায়। আমি একলা ছিলাম বাসায়। আর ছিলো ঐ লম্পট। ওনারা আসতে রাত হইয়া গেছিলো। ও আমারে বাজে ইঙ্গিত দিলে পালাইয়া আসি সেখান থাইকা।ঢাকা শহরের রাস্তায় এত গাড়ি যে আমি পার হইতে পারতাছিলাম না। আমি ওসি সাহেবের বউয়ের গাড়ির সামনে পইরা যাই। তারপর থাইকা ওনার বাসায় ছিলাম। আসলে আমি ভয়ে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পড়তাছিলাম না।”

-ভয়ে মানে?
-আমি তো তোমার কথা শুনি নাই তাই। যদি তুমি আমারে ভুল বুঝো তাই।
-ধুর পাগলী। এরকম ভুল আর করবা না। জ্যোতি নাহিদের চোখ মুছে দিয়ে বলল…
-আইচ্ছা।
পরিশিষ্টঃ সৈকতকে কিছুদিন পর মাদকদ্রব্যের সাথে ধরা হয়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত