-অবন তোর ফোন বাজছে?
-দেখতো কে ফোন দিলো।
-বন্ধু ফোন দিয়েছে অবন, ফোন কি রিসিভ করবো নাকি রেখে দিবো।
-রিসিভ করে বল যে আমি ওয়াসরুমে।
-হ্যালো! অবন ওয়াসরুমে ৫ মিনিট পরে ফোন দেন।
-ওহহহ আচ্ছা! তুমি নিলয়, অবনের নতুন রুমমেট?
– জি আমিই নিলয় তবে আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
-আসলে আমি অবনের বাবা।
– ওওওও আঙ্কেল আপনি!!
-হ্যাঁ বাবা আমি।তুমি এমন হতাস হলে যে?
-না আসলে নাম্বারটা বন্ধু নামে সেভ করা তো তাই। -হাহাহাহাহা! আসলে হয়েছে কি বাবা, আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুর মতই।সেজন্য হয়তো বন্ধু নামেই সেভ করেছে।
-এই নিন আঙ্কেল অবন এসেছে।
– হ্যাঁ বাবা বলো, তোমার শরীরটা কেমন?
-এই তো আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালোই আছি। বাবা অবন! আগামী শুক্রবার আমার বন্ধু দিদারের বড় মেয়েকে দেখতে যাবো।তুমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আগামী পশুদিন চলে এসো।
-তুমি আর আম্মু গেলেই হবে আমাকে যেতে হবে কেন? আর তোমরা তো ভালো-মন্দ বুঝোই।তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ।
-তারপরেও তোমার আসতে হবে এটাই আমার শেষ কথা।তাছাড়া তোমরা যখন ছোট ছিলে তখনই ঠিক করে রেখেছিলাম আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরো ঘনিষ্ঠ করবো।দিদারও তোমাকে গত ১৬ বছর দেখে না।তুমি ছুটি নিয়ে চলে এসো।
-আচ্ছা ঠিক আছে আসবো। এখন রাখি অফিসে যাবার সময় হয়ে গিয়েছে।আচ্ছা রাখছি তাহলে সাবধানে যাইস।
-কিরে ছেলের বাবা হয়েছিস বলেই কি এতটা মুড নিয়ে চলিস যে ছোট বেলার বন্ধুর কথা ভুলেই গেছিস।
-আরে কি যে বলিস তোকে তো বলেছি পরের বার যখন তোর বাড়িতে আসবো তখন ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই আসবো আর আমাদেরে বউ রাণীকে ঘরে তুলে নেবার ব্যবস্থা করবো।
-তাই বলে এতদিন পর এলি আমার বাড়িতে।বন্ধুর বাড়ি কি এমনি আসা যায় না?
-বন্ধু হলে তো আসাই যায় তবে সম্পর্কটা যে এখন অন্য। আগের মত কি হুট করে আসা যায়।
-নে হয়েছে তোর সাথে কখনো কথায় পারি নি সেই ছোট বেলা থেকেই।আয় বুকে আয় দুজনের শরীরটা মিলিয়ে নেই। উনাদের দেখেই বুঝতে পেরেছি বন্ধুত্বটা কতটা গভীর ও কাছের।এরকম বন্ধু কজনেরই বা কপালে মিলে।
-দিদার এ হচ্ছে আমার ছেলে অবন তোর হবু জামাই।অবন উনি হচ্ছে আমার বন্ধু দিদার।
– মা অবন্তী নাস্তা নিয়ে আসো তোমার আঙ্কেলের জন্য।অবন্তী নামটা শুনেই ভিতরটা একটু শিহরিত হয়ে উঠলো।মিনিট পাঁচেক পর অবন্তীর আগমন হয়।তার মানে অবন্তীর সাথেই কি আমার বিয়ে হবার কথা হচ্ছে। কথা গুলো বিড়বিড় করে বলতে থাকি।
-মা অবন্তী অদ্রিকে নিয়ে আসো।
-আচ্ছা বাবা যাচ্ছি।
আমার মনটা এক নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল।নাহ এটা হতে পারে না,বাবাকে সব বলতে হবে।আমাকে দেখে চমকে গিয়েছে অবন্তী।ও হয়তো ভাবেনি এভাবে আবার দেখা হবে।মেয়েদের রং বোঝা যে বড় দায়।সবার সামনে বুঝিয়ে দিলো যে অবন্তী আমার শত জনমের অপরিচিত একজন।
-দিদার অদ্রি মামুনিকে আমারা সামনে মাসের ১তারিখে তুলে নিবো যদি তোর কোন আপত্তি না থাকে।
-আমার আপত্তি থাকবে কেন।
-তাহলে অবশেষে আমরা বন্ধু থেকে বেয়াই হতে যাচ্ছি।
-বাবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে একটু এদিকে আসো।
-কথা পরে হবে আগে এই আংটিটা পরিয়ে দাও।
-এক মিনিট বাবা এদিকে আসো।
-অবববননন বলেছি কথা পরে হবে আগে আংটিটা পরিয়ে দাও।তোমার যা বলার বাড়িতে গিয়ে বলবে।
-আব্বুর কথা ভেবে নিজের অনিচ্ছায় আংটিটা পরিয়ে দিলাম।আংটি পরানো শেষ করে এক মিনিটও থাকলাম না ওখানে।
-মামা সিগারেট দাও তো একটা।
-কি সিগারেট দিব মামা?
-বেনসন দাও বেনসননননন।
-এই নিন মামা বেনসন।তা মামা মেজাজটা গরম মনে হচ্ছে কোন সমস্যা?
-আমার মেজাজ গরম না ঠান্ডা তোমার জেনে লাভ আছে চুপচাপ দোকানদারি করো। নাহ এই বিয়ে আমার পক্ষে করা সম্ভব না।যে করে হোক বিয়েটা ভাংতেই হবে কোনভাবেই বিয়ে করা সম্ভব না।বাবাকে বিষয়টা খুলে বলতে হবে।
-অবন তুমি এভাবে বেরিয়ে এলে কেন? তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো তোমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে? তখন তো খুব বলতে তোমারা যেটা করবে সেটাই মেনে নিবো।তো এখন এত সিনক্রিয়েট হচ্ছে কেন বুঝতেছি না আমি?
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
-কি কথা আছে বলো, তবে শুনে রাখো আমি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে এসেছি।আর আমি আমার কথা থেকে নড়চড় হবো না বিয়ে অদ্রির সাথেই হবে তোমার।
-আগে আমার কথাগুলো শুনো।
-হ্যাঁ কি বলবে বলো।
-তোমাকে একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম মনে আছে সেই ভার্সিটিতে থাকতে।যে মেয়েটার জন্য আমি পাগল ছিলাম।
-হুমম বলেছিলে কিন্তু সেই মেয়ে তো গত ৫বছর ধরে তোমার সাথে কোন যোগাযোগ নেই।আর তোমাদের মাঝে তো কোন সম্পর্কও হয় নি।তুমি তাকে তোমার মনের কথা জানিয়েছো সে তোমার উত্তর না দিয়ে হারিয়ে যায় তারপর আর কোন দেখা নেই,খোজও নেই।আজ হটাৎ সেই মেয়ের কথা কেন?
-অবন্তী! সেই মেয়েটি হচ্ছে অবন্তী।আজ ৫ বছর পর ওর সাথে দেখা।
-তুমি কী বলছো এসব অবন।
-হ্যাঁ বাবা দিদার আঙ্কেলের ছোট মেয়েই সেই অবন্তী। যার জন্য আমি পাগল ছিলাম।আজ অবন্তীকে দেখার পর আমার মনে সেই পুরোনো ব্যথাটা জেগে উঠেছে।আর আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে অবন্তীকেই করবো।আমি আমার ভালোবাসার মানুষের খোজ পেয়েও হারাতে চাই না।
-এখন আর সেটা সম্ভব নয়।তোমার বিয়ে অদ্রির সাথেই হবে।সামনে মাসের ১ তারিখ তোমার আর আদ্রির বিয়ে এটাই ফাইনাল।
-না বাবা আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।
-অবন আমি আমার বন্ধুকে কথা দিয়েছি।আর আমি ওর কাছে ছোট হতে পারবো না।বিয়ে ঐ আদ্রিকেই করতে হবে কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখো।এই নিয়ে আর কোন কথা আমি শুনতে চাই না। নাহ এটা হতে পারে না।যে করে হোক এ বিয়ে ভাংতেই হবে।আমার নিজেই কথা বলতে হবে দিদার আঙ্কেলের সাথে।এভাবে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না আমার ভালোবাসাকে।আজই যাবো কথা বলতে।দূররর এই অসময়ে কে ফোন দিলো,
-হ্যাঁলো কে বলছেন?
-আমি আদ্রি! তুমি এখনই লেক পার্কে চলে আসো। তোমার সাথে কথা আছে।
-ওকে আমি আসছি ১০ মিনিটের মধ্যেই।আমারও কিছু কথা আছে তোমার সাথে। অদ্রির সাথে অবন্তীও এসেছে। যাক ভালোই হলো কথাগুলো এখানেই সেরে নেওয়া যাবে।
-শোনো অবন আমার পক্ষে এ বিয়ে করা সম্ভব নয়।যদি তোমার সাথে আমার বিয়ে হয় তাহলে ঐ দিনটাই হবে আমার জন্য শেষ দিন।কেননা আমি একজনকে ভালোবাসি।
-কথাগুলো অদ্রির মুখ থেকে শুনবো কল্পনার বাহিরে ছিলো।যাক কিছুটা সস্তির নিশ্বাস ফেলা যাবে।একটু বাজিয়ে দেখি, গ্রীন সিগন্যাল তো পেয়েই গেছি সেহেতু বাজিয়ে দেখতে সমস্যা কি।
-না এটা হয় নাকি সব কিছু তো ঠিক হয়ে আছে।তারপর আবার তোমার বাবা আমার বাবার ছোট বেলার বন্ধু।উনারা এখন মেনে নিবেন না।তারচেয়ে বরং আমাদের বিয়ে করে নেওয়াটাই ভালো।
-না অবন আমার পক্ষে সম্ভব না,তাছাড়া তুমিও তো অবন্তীকে ভালোবাসো তাহলে কেন পারবে না?
-আমি অবন্তীকে ভালোবাসি তুমি জানলে কি করে? -তোমাকে দেখার পর অবন্তী বলেছে আমাকে।আমি এত কিছু জানি না। বিয়েটা আমি করছি না কথাটা তোমাকে বলে দিলাম।আর বিয়ে যদি করতেই হয় আমি ইবনাতকেই করবো।এখন যেটা করার তুমিই করো।আর এটাই আমার শেষ কথা।
-আমাকে এসব বলে লাভ নেই। যা বলার হবু শ্বশুড় কে গিয়ে বলো।কথাটা বলার পর লক্ষ করলাম অবন্তীর চোখটা রক্তিম বর্ণের হয়ে গিয়েছে।চেয়ারটা ছেড়ে দিয়ে দূরে একটা নিরিবিলি যায়গাতে গিয়ে দাড়ায়। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না। অবন্তীও যে আমায় ভালোবাসে।থাক এবার অন্তত কিছু করতে হচ্ছে যে আমার।
-ইবনাত ভাইয়া এখন কোথায়? উনাকে একটু আসতে বলেন এখানে।
-ইবনাতকে আসতে বলেছি দুই-চার মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে।
-আর শুনুন চিন্তা করবেন না। আপনাদের বিষয়টা আমি দেখছি আর বিয়ে টাও।আমিও যে অবন্তীকে ভালোবাসি এখনও।আমি নিজে কথা বলবো আঙ্কেলের সাথে।
-এই তো ইবনাত এসে গিয়েছে।
-তাহলে আপ্নারা কথা বলুন আমি একটু অবন্তীর কাছে যাই।অনেকটা সময় ও ওখানে দাড়িয়ে আছে।
-এভাবে আড়াল করে আর কত কাঁদবে তুমি?
-ভালোবাসার মানুষকে যদি না পাই,তখন আর কাঁদবো না চলে যাবো এই পৃথীবি ছেড়ে।
-এতই যখন ভালোবাসো তবে সেদিন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে আমার থেকে? আমার ভালোবাসার জবাব না দিয়ে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি? কি হলো কথা বলছো না কেন? উত্তর দাও?
-উত্তর দেবার মত ভাষা আমার জানা নেই।তবে কিছু মানুষের ভালোবাসা অপূর্ণই থেকে যায়।আমার ভালোবাসাটা না হয় অপূর্ণই থাক।আমার ভালোবাসার অধিকার আছে কিন্তু প্রকাশ করার নয়। মুখটা আড়াল করে চলে গেল কথাগুলো শেষ করেই।বুকের কোথায় যেন কথাগুলো আঘাত করলো।হটাৎ করে বুকে পাথর চাপার মত কষ্ট অনুভব হলো। নাহ এভাবে ভালোবাসার দুটি প্রদীপ নিভে যাবে সেটা হতে পারে না। একটা ব্যবস্থা করতেই হবে আজ।আর এক মূহুর্ত দেরি নয় এখনই সব খুলে বলতে হবে দিদার সাবেবকে।দিদার সাহেবের উদ্দেশ্যে ছুটতে হবে আমায় এখনই।
-বাবা অবন তুমি এই অবেলায় কি মনে করে এলে?
-আঙ্কেল আপ্নার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো সেজন্য আসা।
-কি কথা বাবা বলো।
-আসলে আঙ্কেল আমার আর আদ্রির যদি বিয়ে হয় কেউ সুখি হবো না।
কারণ আমি একজনকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি।আর আমি আমার ভালোবাসা বিসর্জন দিতে পারবো না।এমনকি আদ্রিও একজনকে ভালোবাসে।আপনাকে ভয়ে কখনো তার ভালোবাসার কথা বলতে পারে নি।ও হয়তো আপনার দিকে তাকিয়ে বিয়ে করে নিবে কিন্তু আপনি সারাজীবন আদ্রির কাছে অপরাধী হয়ে থাকবেন।আর কোন বাবাই চান না যে তার সান্তানের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে।আর ইবনাতও খুব ভালো ছেলে।নিজের ফার্মেসি আছে,ভালো টাকা আয়ও করে।আপনি একটু ভেবে দেখুন।
-কই এসব কথা তো আমাকে আদ্রি কখনও বলেনি।
-ঐ যে আপ্নার প্রতি একটা ভয় ছিলো সে জন্য হয়তো।
-আঙ্কেল একটু ভেবে দেখুন আপনাদের বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে ৪ জন মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।আপ্নারা তো আমাদের থেকে অনেক ভালো বুঝেন।একটু ভেবে দেখুন আপনি।
-তোমার বাবা যদি মেনে না নেয়।আর আমি কি করে তোমার বাবাকেই বা এ কথা বলবো।
-বাবাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না, ওটা আমি দেখে নিবো।আমি ম্যানেজ করে নিবো শুধু আপনি বলেন একবার বাকিটা আমি দেখতেছি।
-তোমার বাবা যদি রাজি হন তাহলে আমারও কোন কথা থাকবে না।যা করার তোমারই করতে হবে।আচ্ছা আঙ্কেল আপনি চিন্তা করবেন না আমি দেখছি।
আজ অনেকটা খুশিই লাগতেছে।অবশেষে বাবাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করালাম।এখন আর কোন বাঁধা নেই আমার আর অবন্তীর মাঝে।অদ্রির বিয়েটাও হচ্ছে ১ তারিখেই তবে পাত্রটা হচ্ছে ইবনাত।অবশেষে অদ্রি ও ইবনাতের ভালোবাসার সম্পর্ক এখন নতুন সম্পর্কে রূপান্তর হচ্ছে।আরেকটা সফল ভালোবাসার প্রমাণ হয়ে থাকবে অদ্রি ও ইবনাতের দাম্পত্য জীবন।এবার আমার আর অবন্তীর পালা।আমার ভালোবাসার উত্তরটা না হয় বিয়ের পরেই জেনে নিবো অবন্তীর থেকে।তাই তো আজ যাচ্ছি আমার হবু শ্বশুড় বাড়ি অর্থাৎ দিদার সাহেবের বাড়িতে।
-আঙ্কেল আপনি যদি আপত্তি না করেন তাহলে আমি অবন্তীকে বিয়ে করতে চাই।আমি অনেক আগে থেকেই অবন্তীকে ভালোবাসি।ওর সাথে আমার ভার্সিটি লাইফেই পরিচয়।আর সেই থেকেই অবন্তীকে ভালোবাসি।আপ্নি দয়াকরে কোন আপত্তি করবেন না।আমি অবন্তীকে খুব ভালোই রাখবো।চিন্তা করবেন না যতদিন ও বেঁচে থাকবে কখনো বুঝতে দিবো না যে আমি জানি ওর ক্যান্সার। আমি ভালোবাসার মানুষটাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চাই।বাবা সবই বলেছে আমায় সব কিছু জেনেই আমি এসেছি আমার ভালোবাসাকে নিজের করে নিতে।
-না বাবা এটা হয় না,ও যে বেশিদিন বাঁচবে না।আর তুমি কেনইবা তোমার জীবনটা নষ্ট করবে।
-আমি যখন ভালোবেসেছি তখন না জেনেই ভালোবেসেছি। আর এখন জেনেও তার থেকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।আর যতদিন ও বেঁচে থাকবে ওর ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকবে।আপনি কি চান না ও বাকী সময়টুকু হাসি-খুশি তে থাকুক।আঙ্কেল কাঁদবেন না আপনাকে কান্না মানায় না, আপনি শক্ত হন।
-বাবা তুমি আমার মেয়েকে দেখো।ও হয়তো বেশিদিন নেই আমাদের মাঝে।জানো ও প্রতি রাতে ওর ডায়েরিতে তোমাকে নিয়ে লিখে।সেদিন ওর ডায়েরিটা পড়েছি।তুমি ওর খেয়াল রেখো বাবা।আমার মেয়েটাকে হাসি-মুখে রেখো যতদিন বেঁচে থাকে। আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কান্না শুরু করে দেন।দিদার সাহেবের এই কান্না যে মেয়ে হারানোর কান্না।কিছু সময়ের জন্য আমিও যে নিজেকে সামলাতে পারি নি।অশ্রুজল যেন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে ছিলো।দিদার সাহেব ঠিক করলেন এক সাথে তার দুই মেয়েকেই বিয়ে দিবেন।তাই ঠিক হলো সামনে মাসের ১ তারখেই তার দুই মেয়ের বিয়ে দিবেন।
-অবন তুমি কেন তোমার জীবনটা নষ্ট করবে? তুমি বরং অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নাও। আমি তো আর বেশিদিন বাঁচবো না।তবে হ্যাঁ আমি বেঁচে থাকতে বিয়ে করো না।খুব ভালোবাসিতো তোমায় সইতে পারবো না।
-না অবন্তী না তোমাকেই বিয়ে করবো।তোমার আমার ছোট একটা ঘর হবে যে ঘরে বসে দুজনে নানান স্বপ্ন দেখবো।তোমাকে বাকিটা জীবনে ভালোবাসার চাঁদরে মুড়ে রাখবো।তোমাকে ভালোবেসিছি এবং এখনও বাসি।খুব ইচ্ছে তোমার চুলগুলো বেনি করে দিবো,তেল দিয়ে দিবো।আমার যে তোমার চুলগুলো খুব পছন্দ।
-কিন্তু দুদিন পরে এই চুল আর থাকবে না তখন?
-যতদিন থাকবে অন্তত ততদিন তো দিতে পারবো।আর এভাবে ভালোবাসার মানুষকে হারাতে চাই না।আমার ভালোবাসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে চাই তোমায়।সুস্থ করে তুলতে চাই আমার ভালোবাসা দিয়ে।আর কত সময় নিজেকে দূরে রাখবে আমার থেকে? এবার অন্তত আমার বুকে তোমার জায়গাটা দখল করে নাও।
-ভালোবাসি যে তোমায় অবন,খুব বেশিই ভালোবাসি তোমায়। কন্ঠটা ভেজা ভেজা মনে হলো অবন্তীর।চোখের পানি মুছিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে নেই অবন্তীকে।ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে আকড়ে রাখতে মন্দ লাগে না। আজ আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। একটা বছর দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো।ভালো সময় হুট করে পেরিয়ে যায়।স্বাভাবিক ভাবেই আছে অবন্তী।
-অবন দেখো আজ কতগুলা চুল উঠেছে।
-আরে দূর এমনিতেই উঠেছে। আসো তোমার চুলে তেল ও বেনি করে দেই।
-আচ্ছা আমি তেলটা নিয়ে আসি।
বেনি করতে গেলে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে।অনেক চুল পড়ে গিয়েছে, তবুও যে রোজ মিথ্যা সান্তনা দেই অবন্তীকে।অবন্তীও যেন নিশ্চুপ হয়ে মেনে নেয় আমার কথা গুলো।এখন বেনি করার চুলই নেই অবন্তীর মাথায়।সব চুল পড়ে গিয়েছে।কোন মতে একটা বেনি করেছি।বুকটা ফেটে যায় যখন অবন্তীর চুলের বেনি করতে চাই।চাঁপা কান্নার আর্তনাত শুনতে দেই না অবন্তীকে।বাহিরের চাঁদের আলোটা আমাদের গায়ে আচড়ে পড়েছে।অবন্তী আমার বুকে মাথা রেখে তার মনের কথা গুলো বলতেছে।গল্পের ছলে বলে গেল তার অব্যক্ত কথাগুলো।প্রতিদিনই আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করি থাকুন না বেঁচে আর একটা দিন আমার ভালোবাসাটা।
ভালোই তো যাচ্ছে সময়টা, এই ভালোবাসার রোদের শহরে।আজ আমাকে খুব শক্ত করেই জড়িয়ে ধরেছে জোৎসারাতে অবন্তী এভাবেই আমাকে জড়িয়ে ধরে পার করে দেয়, আজও ব্যতিক্রম নয়। থাকুক না এভাবে জড়িয়ে একটু ভালোবাসা নিয়ে।এই ভালোবাসার টানেই তো ২৫ বছরের সম্পর্ক ছেড়ে আমার কাছে। ভালোবাসা দিয়ে রাঙিয়ে দিতে চাই পুরো শহরটা। যে শহরে কেবলই অবন্তীর আনাগোনা। প্রার্থণা তো একটাই “থাকুক না বেঁচে আর একটা দিন আমার ভালোবাসাটা”।