স্ত্রী

স্ত্রী

আমার বউকে সামনে রেখে ই আমি আমার প্রেমিকার সাথে কথা বলছি। জানি না সে বুঝতে পারছে কিনা নাকি বুঝেও নিরব আছে। সে ধোয়া কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখছে। এমন না যে ও সুন্দরি নয় সে যথেষ্ট সুন্দরী। কিন্তু আমার প্রবলেম হল সে পড়ালেখা জানে না। আমি সবসময় ই চাইতাম কেউ একজন আমার মত করে আমাকে বুঝবে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমি দেখেছি তার সাথে আমার মত মিলে না। নতুন চাকরি পাওয়ার পর পর ই মায়ের অসুস্থতা আর জোরজবরদস্তি তে আমাদের পাশেরর গ্রামের একটা মেয়েকে বিয়ে করি। ঐ সময় নিজের পছন্দের কেউ ছিল না আমার।

চাকরি সূত্রে আমাদের এখন ঢাকায় থাকতে হয় মা ও আমাদের সাথে। ঢাকার জীবন যাত্রার অভ্যস্ত আমি আমার এরকম একটা গ্রামের মেয়েকে ভালো লাগে না। একটু সাজগুজ ফ্যাশনঅ্যাবল সুন্দরী কথায় কথায় ইংলিশ ওয়ার্ড বলা মেয়ে গুলো কে ই আমার ভালো লাগে। প্রেমে পরে যাই এক পরিচিত পাশের অফিসের সুন্দরী মেয়ের। তার কথা বার্তা, হাসি, সৌন্দর্য আমি চোখ ভরে দেখতাম। আমার গুছানো লাইফ স্টাইল নাকি ওর মানে তানিয়ার ভালো লাগার কারণ। সেখান থেকে ই আমাদের সম্পর্ক। আমার পোশাক পরিচ্ছেদ, প্রয়োজনীয় সবকিছুর নিখুঁত খেয়াল রাখার জন্য এমনকি আমার বসের কাছেও পছন্দের পাত্র ছিলাম আমি। আমার জুতো থেকে শুরু করে টাই, অফিসের ব্যাগের জিনিষপত্রে কখনো এদিক সেদিক হয়নি।

স্ত্রীকে খাওয়া পরানোর দায়িত্ব তে ই আমি সীমাবদ্ধ। ওর ভালো মন্দের খবর সুস্থ অসুস্থতারর খবর জানার প্রয়োজন বোধ করতাম না। আমি সময় কাটাতাম তানিয়া কে নিয়ে। হঠাৎ একদিন অফিস টাইমে রাইমার কল বাসা থেকে। রাইমা তো এভাবে কোনোদিন অফিস টাইমে কল দেয়নি। একটু বিজি থাকায় বিরক্তি ভাব নিয়ে কল পিক করলাম। বললাম, জানো না অফিস টাইম বিজি থাকি। কল দিচ্ছ কেন? আসলে, মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেছেন। আমি মা’কে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। পারলে চলে আসুন। এটা বলে ই সে কল টা কেটে দিল। কিরকম একটা খারাপ লাগল। হয়ত এভাবে বলা উচিত হয়নি বলে। বস কে বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে হসপিটালে ছুটলাম। মা স্টোক করেছেন। হসপিটালো বেশ কয়দিন থাকতে হবে।

রাইমা মায়ের পাশে আঠার মত লেগে আছে। একটুও এদিক সেদিক নড়ছে না। আমাকে দেখেও তেমন কোনো কথা বলেনি। দরকারি মেডিসিন ইনজেকশন কিনে দিয়ে ফ্রেস হওয়ার জন্য বাসায় ফিরলাম। আজ তিন দিন মা হাসপাতালে সাথে রাইমা আছে। আমি অফিস থেকে সময় করে যাওয়াআসা করছি। পরদিন অফিসে কোনো একটা ফাইল মিসিং এ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং কেন্সেল হয়ে যায় সাথে ক্লাইন্টের কাছেও অনেক কথা শুনতে হয় আমার জন্য। এ কাজ টা আমার উপর ছিল। বেখেয়াল আর গাফলতিতে অনেক বড় লস হয়। অন্যদিকে তানিয়া কে এসব বলতে ই ও বলে, এত কেয়ারলেস এত অগুছালো তার পছন্দ না। উল্টো আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে কথা শুনাল যখম জানল আর এরকম ভুল হলে চাকরি থাকবেনা।

বাসায় এসেও কিছু ই ভালো লাগছে না। মাকে দেখতে যাবার কথা ছিল তাও যাচ্ছি না কোথাও একটা শূণ্যতা অনুভব করছি আমার আশেপাশে। গত দু দিন মাকে দেখতে যাইনি ফোনে যোগাযোগ করেছি। কি বলব রাইমার সামনে গিয়ে এত দিনে দেয়া অবহেলা কিভাবে গুছাব। আজ হসপিটাল থেকে মাকে বাসায় নিয়ে আসলাম ডাক্তার ডিসচার্জ করে দিয়েছে। আজ সাত দিন পর মায়ের সাথে অন্য একটা মুখ দেখে যেন মনে প্রশান্তি বয়ে গেল। কিরকম একটা শূণ্যতাও কেটে গেল। পরদিন থেকে আমি আবার আমার রুপে ফিরে গেলাম। সব গুছানো!

এই গুছানো টা কার জন্য আজ তা বুঝলাম। আর কেউ নয় সে আমার স্ত্রী রাইমার জন্য। আমার পারফেক্সন আমার গুছালো জীবন সব ওর জন্যই যা এতদিন আমার নজরের বাইরে ছিল। ও তেমন পড়ালেখা জানত না ঠিক তবে তবে অফিসের কাগজপত্র কোনগুলো বের করে রাখি কি করি সব খেয়াল করত পেছন থেকে। একদিন এরকম পিছনের দাড়ানোর জন্য বকা দিয়ে ছিলাম তাকে আজ তা বুঝতে পারছি। ছোট ছোট কাজ দিয়ে পন্থা দিয়ে একটা মানুষের জীবনে কিভাবে জায়গা করে নেওয়া যায় তার জীবন্ত সাক্ষী আমি। রাইমার এই একান্ত সুক্ষ কাজগুলো তে আজ আমি তাকে অনুভব করি। অফিসের বস পরদিন রাগের মাথায় বলা কথাগুলোর জন্য কিছুটা অনুতপ্ত হলেন। আমি বললাম, ধন্যবাদ আমি বলব আপনাকে এর জন্য ই আজ সত্যিকারের প্রিয়জনকে চিনতে পেরেছি।

প্রেমিকা পারফেক্ট কাউকে চায়,, আর স্ত্রী কেউ একজনকে পারফেক্ট বানিয়ে দেয় তার রুপে গুছিয়ে দেয়। এটাই পার্থক্য এটাই সত্য। কিছু কিছু প্রয়োজনে একসময় মানুষ প্রিয়জন হয়ে উঠে মনের অজান্তে। মনের মিল টা সেখানে ই হয়ে যায়। যা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। প্রয়োজনে প্রিয়জন হয়ে উঠা।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত