আমাকে চরিত্রবান কেউ বলবেনা,আড়ালে কেউ তা বলেওনা।
আমার বয়স তেইশ, ডিগ্রী পরীক্ষার্থী।এস এস সি তে একবার
খারাপ করেছিলাম বলে বয়সটা একটু বেশি, পড়া হিসেবে।তাছাড়া
ক্লাসেও আমার রেজাল্ট খুব একটা ভালো নয়। দেখতে শুনতে
খুব বেশি না হলেও কিন্তু হ্যান্ডসাম আছি। তবে আমার আকর্ষণ ক্ষমতা প্রচুর।
এছাড়া আমার পৈতৃক আয় উপার্জন তেমন মন্দ নয়, যার কারণে আমি যেমন ইচ্ছে চলার, খরচ করার ক্ষমতা অর্জন করেছি।
আমার নিজস্ব কোনো আয় নেই, দরকারও হয়না। হাতখরচ যা পাই তাতে বেশ বড়লোকী ভাব চালে চলতে পারি। না চলেও উপায় নেই, মেয়েদের আকর্ষণ করার জন্য এই কায়দাটা বেশ কার্যকর, আমি তাই বিশ্বাস করি। কারণ, প্রমাণ পেয়েছি।
এতো অল্প সময়ে, অল্পই তো, খুব বেশি সময় তো যায়নি
জীবনের। এরই মধ্যে বেশ ক’টা মেয়ের প্রেম ভালোবাসা,
সান্নিধ্য, স্পর্শ সবকিছু হরণ করেছি। হরণ বললাম, এই জন্য তাদের কাছ থেকে সব নেয়ার পর কিছুই ফিরিয়ে দিইনি। ওরা হাসি মুখে আমার কাছে এসেছে, কিন্তু ফিরে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।
এমন নিষ্টুরতায় আমার খারাপ লাগেনা, বরং ভালোই লাগে,আমি বেশ উপভোগ করি, নিজেকে নায়ক মনে হয়, নায়িকা কাঁদছে আমার জন্য!
আমি নিত্য নতুন ভালোবাসা পেতে ভালোবাসি। যতদিন না কেউ আমাকে ভালোবাসা না দিচ্ছে, ততোদিন তার পেছন ঘুরতে আমি
একটুও ক্লান্তি বোধ করিনা।এটা আমার নেশা হয়ে গেছে।
কিন্তু একটা মেয়ে,মেয়েটা আমার জীবনের আট বা দশ নাম্বার বা শেষ পছন্দ। মিস বাংলাদেশ বা ফটো সুন্দরী না হোক,তবুও তাকে আমি সুন্দরী, মায়াবতী বলবো। সুন্দরী,
আকর্ষণীয়া, আমার চোখে অনন্যা।
বিশেষ করে তার চোখ, ঠোঁট, কান… কানেরও যে সৌন্দর্য আছে,তা তাকে না দেখলে বুঝতাম না। মেয়েটা কানে কখনো দুল পরেনি। মনে হয় দুল পরলে তাকে মানাবেনা। তবে একদিন পরেছিলো। তখনো মনে হয়েছিলো,পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কান দু’টি ওর!
উর কোন জিনিষটা অসুন্দর বলবো? মানানসই ছোট
কপাল, নাক,ভ্রু,গাল, কোমরঅব্ধি লম্বা মেহেদিরাঙা রেশমি চুল-সবই তো সুন্দর! হাতের লম্বা আঙুল, সুন্দর চিকণ পা, পায়ের পাতা সবকিছুই যে নিঁখুত। মেয়েদের সৌন্দর্য যে আমি খুব খুঁটিয়ে দেখি!
তিনমাস ধরে মেয়েটিকে প্রতিদিন দেখছি। নতুন এসেছে
কলেজে, ডিগ্রীতে ভর্তি হয়েছে।
আমি বারবার আমার অত্যন্ত মিষ্টি, বিনয়ী কথার জালে তাকে আটকাবার চেষ্টা করছি। প্রত্যেকবার ব্যর্থ হয়েছি, মেয়েটি তার সুন্দর দুইখান পা দিয়ে ততোধিক সুন্দরভাবে হেঁটে আমার সামনে দিয়ে চলে যায়। আমি তীরবিদ্ধ পাখির মতো ছটফট হৃদয় নিয়ে অসহায় চোখে তার পেছন পানে ব্যর্থ মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখি শুধু।
দেখতাম, আমার মতো আরো অনেক মুগ্ধ দৃষ্টি ওর চলে
যাওয়া উপভোগ করছে। অনেকেই যে তাকে চায়!
তবে আমি এখনো আশা ছাড়িনি। আমি নিরাশাবাধীদের দলে নই।
মেয়েটিকে দেখার পর খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সেও আমার
মতোই! অনেক প্রেম করেছে, খুব উশৃংখল, সহজেই ধরা
দেয়। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, একবর্ণ কথার সত্যতা পেলাম
না,আফসোস!
মেয়েটি খুবই স্মার্ট, কিন্তু উগ্র নয়। সাজহীন মুখ,,সাদা ইউনিফর্ম ছাড়া, সিভিল ড্রেসে দেখিইনি তাকে। তাতে করে তাকে আরো পবিত্র মনে হয়। ওদের ক্লাসের কয়েকজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলতেও দেখলাম না, তাহলে? যা শুনলাম তা কি ভুল?
হে খোদা, তা যেন সত্যি হয়, মাত্র ক’ঘন্টা হলেও যেন সে আমাকে ধরা দেয়! প্রার্থনা করি মনে মনে।
বেশ ক’বার তাকে লাইব্রেরীতে বসে গল্পের বই পড়তে
দেখেছি। দেবো নাকি এক সেট বই কিনে!
যা মুড নিয়ে থাকে, আমার বই নেবেই বা কেনো? এখনো
পর্যন্ত তো একটা কথাও মুখ থেকে বের করতে পারলামনা।
বৃথাই এক্সকিউজ মি! বলে থুথু ঝরাচ্ছি।
ক্লাস সাসপেন্ড হয়ে গেছে, তবুও দিনের পর দিন তিন চার ঘন্টা কলেজে ঘুরঘুর করছি। তা কি তার জন্য নয়?
এ’তো নয় যে, সে ভীষণ গম্ভীর। বান্ধবীদের সাথে
তো বেশ হাসিখুশি, এমনকি লাইব্রেরিয়ান, লেকচারার সবার সাথেই মুক্তো ঝরা হাসি! শুধু আমার বেলায় এমন প্যাঁচা মুখি কেনো?
তবে কি আমার সুকীর্তি কেউ তাকে ঘটা করে জানিয়ে
দিয়েছে! হাতের কাছে ঐ শ্যালক বা শ্যালিকা সাহেবান কে যদি পাই, তবে কি যে করি…..আসুক সামনে,তখন বুঝিয়ে দেবো
বেটা খচ্চর!
মেয়েটার সাথে সাথে বেশ ক’বার গাড়িতে উঠলাম।
কোনোভাবে আগ বাড়িয়ে তার গাড়ি ভাড়াটা দিতে পারিনি।
অ মেয়ে,একবার পরিচয় হবার সুযোগ তো দাও! তা না, কোনো সুযোগ না দিয়ে, ভাড়া দিয়ে দিতো। আমি দিতে যাবো ভেবে
ভেবে, কতবার যে হাত গুটিয়ে নিয়েছি! পাছে সে যদি
সিনক্রিয়েট করে…..!
এই প্রথম আমি ভয় পাচ্ছি। এই প্রথম আমি সাবধানে এগুচ্ছি। এমন সাবধান, যেন কাঁচের জিনিষ নাড়াচাড়া করছি!
মাঝেমাঝে রাগ উঠে যায়, ইচ্ছে করে তার হাতটা ধরে বলি,
-আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না, এতো কেনো অবহেলা,
এতো কিসের অহংকার তোমার?
কিন্তু পারিনা বলতে। আমি যেন এবার সব সাহস হারিয়ে ফেলেছি, আমি যেন দিনদিন ভীতু হয়ে যাচ্ছি!
পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। শেষও হয় একসময়। অনেকদিন
দীপশিখা কে দেখিনা। মনে মনে তাকে এই নামেই আমি ডাকি।
এই একটা মেয়ের জন্য আমার জীবনটা মরুভূমি হয়ে গেছে।
এই চার পাঁচ মাসে অন্তত দুইটি মেয়ের সাথে আমার প্রেম,
ব্রেক আপ সব শেষ হতো।
আর এখন, আমি দীপশিখা ছাড়া কোনো মেয়ে চোখে
দেখিনা। দীপশিখা আমার হৃদয়ে এমনভাবে দীপ জ্বালিয়েছে,
সে এসে না নেভালে তা আর নেভানোর নয়।
দীপশিখা, সে আমার দীপশিখা!
আশ্চর্য, আমি কি তার প্রেমে পড়ে গেলাম!
কিন্তু, আমি তমাল,কারো প্রেমে পড়ার ছেলে নই। সবাই কে
আমার প্রেমে পড়ায়, সবার প্রেম নিই, দিই না, যা দিই তা অভিনয়, আমি তো প্রেমে হাবুডুবু খাবো, তেমন নই।
আমি কখনো কাউকে ভালোবাসিনি, অভিনয় করেছি মাত্র।কিন্তু, কিন্তু এবার আমি অভিনয় করছিনা। বুকে কেমন এক ব্যথা অনুভব করছি। এই ব্যথা, সত্যি দীপশিখা, তাকে অনুভব করছি। তাকে আমি
ভালোবেসে ফেলেছি, সত্যি ভালোবেসেছি।
কলেজ খুললে, দীপশিখা আবার কলেজ আসা শুরু করে। এবার কলেজ যেতে, আশেপাশে ঘুরঘুর করতে আমার সংকোচ হয়।
পরীক্ষা শেষ, টিচাররা কি ভাববেন!
আমি গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। আজ দীপশিখা’র সাথে কথা বলবোই।
ক্লান্ত দীপশিখা ধীর পায়ে গেইটের কাছে আসে।
-দীপশিখা….দীপশিখা…. শোন
কতক্ষণ ধরে ডাকছি, জবাব দিচ্ছো না কেনো?
-কই আমাকে তো ডাকেন নি! ডাকলে অবশ্যই জবাব দিতাম।
-দুঃখিত, আমি ভুলে গিয়েছিলাম, তোমার নাম দীপশিখা নয়,আমি তোমাকে ঐ নামেই ভাবি!
শোন রাত্রি!
-দেখুন, আমার বাসায় যাবার সময় হয়েছে, তাছাড়া ক্লান্ত আমি। আপনার কথা পরে শুনবো।
-না,আজই তোমাকে শুনতে হবে। গত পাঁচ মাস ধরে তোমার অপেক্ষা করছি, একবারের জন্যও তুমি ফিরে তাকাওনি।
-ঠিক আছে, বলুন।
-এখানে নয়, কোথাও বসি? ঠাণ্ডা কিছু নিই, খুব গরম পড়ছে।
-বসা যায়, তবে একটা শর্তে, বিল আমি দেবো।
-বারে, আমন্ত্রণ জানালাম আমি, আমিই তো দেবো।
-তবে আমি যাচ্ছিনা।
-ঠিক আছে বাবা, চলো। বিল তুমিই দিও।
দীপশিখা আমার ডাকে আসবে, এ আমার কল্পনাতীত ছিলো।
ও অন্য মেয়েদের চেয়ে এতো আলাদা কেনো? প্রায় সব
মেয়েই খাবার আমন্ত্রণ জানালে, কতো টালবাহানা করেছে
জোরাজুরি করার জন্য! শেষে রাজি হলেও কেউ বিল দেবার কথা বলেনি কোনোদিন।
এই প্রথম আমি শুধু ওর দিকে তাকাচ্ছি না, ওর মন বুঝার চেষ্টা করছি।
ওর প্রতিটি কথা মন দিয়ে শুনছি, সাবধানে উত্তর দিচ্ছি।
আমরা দুইজন একটা রেস্টুরেন্ট দেখে ঢুকি। দীপশিখা দুইটি জুস আর কেক অর্ডার করে।
চুপচাপ সে খেতে থাকে,আমি মাঝেমাঝে জুসে চুমুক দিই।
-দীপশিখা….!
-আপনি আবারো ভুল করছেন!
-তোমাকে যদি আমি এই নামে ডাকি, তুমি কি খুব মাইন্ড করবে?
-মাইন্ড করার কথা বলছিনা, তবে যেটা আমার নাম নয়, সেই নামে
ডাকবেন কেনো?
-আমি তো তোমাকে এই নাম দিয়েছি।
-কেনো?
আমি একটু নার্ভাস হয়ে পড়ি। এই প্রথম কি আমি ভাবছি না, কিভাবে ভালোবাসার কথা বলবো!
বলি,
-তুমি কি বুঝতে পারো না?
-না।
-কেনো না!
-কারণ, আমি বুঝতে চাই না।প্রেম ভালোবাসা সব আমার অসহ্য লাগে। আমার খাওয়া শেষ, আমি উঠছি।
দীপশিখা বেয়ারাকে ডেকে বিল দিয়ে দেয়।
-আরেকটু বসো প্লিজ! অল্প কিছুক্ষণ।
দীপশিখা.. তোমাকে কি কেউ কষ্ট দিয়েছে?
কথাটা আর্তনাদ হয়ে বেরুয় যেন আমার মুখ থেকে।
-আমাকে কেউ কষ্ট দিলো, নাকি আমি কাউকে দিয়েছি, তা জেনে তো আপনার কোনো লাভ নেই।
-আমি জানি, কেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারবেনা, তুমিই সবাইকে কষ্ট দেবে।
-তাই! দীপশিখা মিষ্টি করে হাসে।
আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। ওর হাসির একমাত্র দর্শক
যে আমি!
-হ্যাঁ, তাই। গত পাঁচটি মাস তুমি কি আমাকে কম কষ্ট দিয়েছো?
-কেউ যদি নিজে থেকে কষ্ট পেতে চায়, আমার কি করার
থাকে!
-করার থাকে কিছু…বারবার তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছি। তুমি
ভীষণ নিষ্ঠুরের মতো না শোনার, না বুঝার ভাণ করেছো।
-আমার কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করেনা।
-এই যে বলছো!
-আপনার ইচ্ছেই!
-তোমার কোনো ইচ্ছে হচ্ছে না?
-না।
-তুমি খুব কঠিন করে না বলতে পারো দীপশিখা।
-এটা আমার গুণ, দোষ তো নয়। সবাই সরাসরি না বলতে
পারেনা,হ্যাঁও বলতে পারেনা।আর সেজন্য কষ্ট পায়। যাই, অনেক
দেরী করে দিয়েছেন আমার।
দীপশিখা চলে যায়। আমি বসে বসে তার চলে যাওয়া দেখি।
আমি কি সবসময় চলে যাওয়া ওর পেছনের দিকে তাকিয়ে তৃপ্ত থাকবো! নাকি আমার দিকে মুখ করে, আমার কাছেই আসছে, এমন ঘটনা কখনো ঘটবে? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
দীপশিখা, আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি!
দীপশিখা, তোমাকে আমার চাইই চাই, সারাজীবনের জন্য চাই!
আমি কি হেরে যাবো! অবশ্য এখানে হার জিতের প্রশ্ন নয়,আমি তো যুদ্ধ করতে যাচ্ছি না, ক্লাসের পরীক্ষাও নয় এটা। এই আমার হৃদয়ের পরীক্ষা, আমাকে জিততেই হবে।
এক সপ্তাহ নিজের সাথে যুদ্ধ করেছি। আমি আর পারছিনা
দীপশিখাকে না দেখে।
আমি আবার ওর পথপানে চেয়ে থাকি।
দীপশিখা কলেজ গেইট খুলে বের হয়ে আসে।
-দাঁড়াও রাত্রি! একটু শুনে যাও।
-কেমন আছেন আপনি?
-তা তোমারই তো ভালো জানার কথা।
-দাঁড়ান দাঁড়ান! আমার জানার কথা!
-হুম।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা কথা বলছি।
-চলুন, কিছু খাই।
-তাহলে এবার আমি শর্ত দিবো
-কি, বিল দেয়ার? হেসে বলে রাত্রি।
তা হবেনা।
-কেনো? প্রথমবার তো তুমি দিয়েছো।
-তবুও, কারণ, মেয়েদের সম্পর্কে আপনাদের একটি বাজে ধারণা হলো,ছেলেদের পকেট খালি করে।ওটা অন্তত আমার
বেলায় যেন না হয়।
-ধ্যাত, এটা কোনো কথা হলো! তাছাড়া ছেলেদের পকেটই
তো খালি করবে, ওরাই তো বেশি উপার্জন করে।
-আপনি করেন?
-না, কেনো?
-আমি উপার্জন করি। আমার চারজন স্টুডেন্ট আছে। অতএব আমি খাওয়াবো।
-ঠিক আছে, চলো।
আমরা রেস্টুরেন্টে ঢুকি।
-কি খাবেন?
-যে কোনো কিছু, সমস্যা নেই।
দীপশিখা চা, সমুচা দিতে বলে।
-আমার কিন্তু ভীষণ লজ্জা করছে?
-হায় আল্লাহ, লজ্জা কেনো! কেউ কি দেখছে আপনাকে?
-তা নয়, বারবার তোমার টাকায় খাচ্ছি।
-আরেকদিন আপনি না হয়, খাইয়ে শোধ করে দেবেন।
-তবে আগামীকাল! ওহু পরশু, ১লা আগস্ট তোমার নিমন্ত্রণ আমাদের বাসায়। আসবে তো?
-না।
-সবসময় না শব্দটা ব্যবহার না করলে কি হয় না?
-আসলে বাসায় যাওয়া আমি পছন্দ করছিনা।
-ভয় পাচ্ছো! আমি খারাপ, তবে তোমার জন্য আমি কখনোই খারাপ হতে পারবোনা দীপশিখা।
-ভয় যদি পেতাম, আপনার সাথে মিশতাম না।
-তবে আমার দাওয়াত নিচ্ছো না কেনো? আমার জীবনের
বিশেষ একটা দিন তা।
-জন্মদিন!
-হুম, কিভাবে বুঝলে?
-বুঝা যায়।
-আসবে তো?
-আসবো, কিন্তু বাসা তো চিনিনা।
-আমি নিয়ে যাবো, খুব কাছেই, হেঁটে যাওয়া যায়।
আমি আমাদের বাসায় কখনো কাউকে নিয়ে যায়নি। এখানে
সেখানে কতো জায়গায় যে মেয়ে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরেছি!
বন্ধু’র বাসায়, হোস্টেলে, কতো জায়গায় যে যেতে
হয়েছে!
কিন্তু দীপশিখা কে আমি বাসায় নিয়ে যেতে চাই। দেখাতে
চাই আমার মা, ছোট বোনকে। তাদের নিশ্চয় অপছন্দ হবেনা।
ছয় সাতটি মাস আমি দীপশিখা ছাড়া আর কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাইনি।
আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছি, এই প্রথম আমি কারো
প্রেমে পড়লাম।প্রেমটা যে এমন গভীর কিছু, মানুষকে
এমনভাবে পাল্টে দেয় তা এতো মেয়ের সাথে মিশে আমি
বুঝতে পারিনি।
আগে আমি একজনের সাথে মেশা অবস্থায়
ভেবেছি, অন্যজনের কথা, কিভাবে আরেকজনকে ইম্প্রেস
করবো। সব ছিলো আমার অভিনয়!
দীপশিখা’র বেলায় এমন কখনোই হয়নি। আমি শুধু এটা চেষ্টা করছি, আমার ভালোবাসার প্রতিদানে সেও আমাকে একটু ভালোবাসুক। তবে সান্ত্বনা এইটুকু, সে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি।
পরশু আমার জন্মদিন। দীপশিখা আসবে, এত্তো ভালো লাগছে!
ইচ্ছে করছে পৃথিবী’র সব মানুষকে চিৎকার করে বলি,
-আমি দীপশিখা কে ভালোবাসি, দীপশিখা আমার, শুধুই আমার।
আমার প্রত্যেকটা জন্মদিন খুব ঘটা করে পালন করি, বন্ধু বান্ধব পার্টি!
এবারের জন্মদিনে আমার পরিবার আর শুধুই দীপশিখা।
২ আগস্ট, সকাল নয়টা। পৌনে দশটাই দীপশিখা কলেজ গেইটে থাকবে। আজ সে কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে রাখবে।
বাসা থেকে বের হতে যাবো, ছোট মামা এসে হাজির। নানী
ভীষণ অসুস্থ, আমাদের যেতে হবে!
মা ইতিমধ্যে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেনন। ভাবি আজই
আসবেন,বাপের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে। ভাইয়্যা কিছুক্ষণ আগেই অফিসে চলে গেলেন।
মা বাসার চাবি আমার হাতে দিয়ে ছোট বোন তারানা, সে এবার এইচ এস সি পরীক্ষা দিলো। তাকে নিয়ে মামাসহ কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন। যাবার সময় বলে গেলেন,কাল সকালে যেন সবাইকে নিয়ে চলে যাই।
আমার সব প্লান প্রোগ্রাম ভেস্তে গেলো। তবে নানী’র
জন্য খারাপ লাগছে, আমাকে খুব ভালোবাসেন।
মন খারাপ করে সাড়ে ন’টাই কলেজ গিয়ে দেখি, রাত্রি তখনো আসেনি।
অবশ্য সময় আছে এখনো। আমি অপেক্ষা করি।
পাঁচ মিনিট পর একটু দূরে গাড়ি থেকে হাল্কা সবুজ রঙের ত্রি পিস পরা একটি মেয়েকে নামতে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিই।
দীপশিখা ছাড়া আর কাউকে আমি দেখতে চাই না। কাছাকাছি পারফিউমের মিষ্টি সুগন্ধ নাকে আসলে ফিরে দেখি, দীপশিখা!
সবুজ ড্রেসের মেয়েটি!
আশ্চর্য সুন্দরী লাগছে তাকে আজ। এমন সাজে তো আগে
কখনো দেখিনি। আমি হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি।
লিপলাইনারে আঁকা ঠোঁট, কানে দুল,চোখের বড় বড় পাপড়িতে মাশকারা,লম্বা বেণী করা, কানের কাছে গোলাপ গোঁজা।
গোলাপ একটি সাবধানে হাতে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে
দিয়ে, মিষ্টি হেসে বলে,
-শুভ জন্মদিন!
আমি ধন্যবাদ জানাতে ভুলে যাই। বলি,
-তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে!
-ধন্যবাদ।
-অ হ্যাঁ,তোমাকেও ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।
-জানো, একটু আগেই মা তারানা কে নিয়ে ছোট মামার সাথে নানীকে দেখতে চলে গেছেন। ভাবিও এখনো আসেনি
বাপের বাড়ি থেকে।
-বাসায় কেউ নেই, বলছেন?
-হুম, তুমি তো আর যাবেনা, না?
-চলুন যাই, আপনি তো আছেন।
-যাবে!
-কেনো, কেক কিনেন নি? দাওয়াত দিলেন, খাইয়াবেন না, আজ তো আপনার পালা!
-অবশ্যই খাওয়াবো। কেক কেনাও হয়েছে।বাসায় কেউ নাই,এই ভেবে বলা।
-আমি ভয় পাইনা, আমি নিজেকে রক্ষা করতে জানি। উল্টো আপনি
আমার থেকে সাবধান থাকবেন…..
হিহি করে হেসে বলে দীপশিখা।
-মারবেন?
-হুম,প্রয়োজনে!
-ঠিক আছে, তবে প্রয়োজন পড়বেনা।
আমরা বাসার কাছে চলে আসি। দরজায় তালা দেয়া, আমি প্যান্টের পকেট থেকে চাবি দিয়ে দরজা খুলি।
আমি ওকে লিভিং রুমে বসতে বলে, আমি ভেতরের রুমে যাই।
একটু পর ওকে আসতে বলি।
রাত্রি রুমে ঢুকে ভীষণ অবাক হয়।
-খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন তো। আপনি তো দেখি
অনেক গোছানো!
-ধন্যবাদ প্রশংসার জন্য।
মাঝারি গোল টেবিলটাতে বড় একটি কেক। তার উপর লেখা,
ভালোবাসি, দীপশিখা!
চারপাশে জ্বলন্ত ২৩ টি মোমবাতি। ঘরে আর কোনো বাতি
জ্বলছেনা।
পাশে ফ্রিজ থেকে বের করে রাখা মায়ের হাতে তৈরি পায়েস, পুডিং।
রাত্রি ব্যাগ থেকে দুইটি পিচ্চি পুতুল বের করে টেবিলে
রাখে, পুতুল দু’টি হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।
-চলো, কেক কাটি?
-হুম। আগে মোমবাতি নেভাবেন না?
-আসো দু’জন মিলে নেভাই…
মোমবাতি নেভানো হয়ে গেলে, আমার রুমে ভ্যান্টিলেটার
দিয়ে আসা হালকা দিনের আলো ছাড়া, আর কোনো আলো থাকেনা।
বাইরে সকালের ফকফকে আলো আর আমার রুমে যেন
শেষ বিকেল!
হঠাৎ ঐ আলোতে দীপশিখা’র চোখে চোখ পড়ে আমার।
চোখভর্তি জল!
আমার বুকটা কেমন করে উঠে, কি হয়েছে আমার দীপশিখা’র!
আমি অস্থির হয়ে পড়ি।
-দীপশিখা কি হয়েছে তোমার! প্লিজ বলো, তুমি কাঁদছো
কেনো? আমি কি কিছু ভুল করলাম!?
-না, তমাল। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, আমি কে!
-মানে! বুঝলাম না…
-তোমার মতো আমিও কিছু স্বপ্ন দেখতে শুরু করতে
যাচ্ছিলাম… কিন্তু হঠাৎ মনে হলো, আমার স্বপ্ন দেখা মানায় না।
-কেনো মানাবেনা? অবশ্যই মানাবে। তুমি স্বপ্ন দেখবে আর
আমি তা পূরণ করবো।
-তা হয়না তমাল। আমার পরিচয় জানলে তোমার স্বপ্নও ভেঙে
খানখান হবে। তার চেয়ে এই ভালো, আমি যাই। তুমি আর কখনই আমাকে পিছু ডাকবেনা।
রাত্রি কখন যে তমালকে তুমি করে বলা শুরু করলো কেউই
খেয়াল করেনা।
-তোমার পরিচয় আমার জানার দরকার নেই, তুমি তুমিই,আর কিছু জানার দরকার নেই। না অতীত, না ভবিষ্যৎ। আমার এই তোমাকেই, এই
বর্তমানকেই দরকার। আমি তোমাকে ভালোবাসি দীপশিখা।
-আমারো তোমাকে ভালো লাগে, তোমার সান্নিধ্য ভালো
লাগে।
-তবে?
-তবে,আমি তোমাকে ভালোবাসার অধিকার রাখিনা, বিয়ে করারও নই।
-কেনো? প্লিজ বলো। আমি খারাপ ছেলে বলে পরিচিত তাই!
বিশ্বাস করো,আমি ভালো হয়ে গেছি রাত্রি। তোমাকে দেখার
পর আমি অন্য কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাইনি।
-আমি জানি।
-তবে?
-কারণ, আমি বিবাহিতা, বিধবা তমাল।
-বিধবা! কি বলছো এসব! আমি বিশ্বাস করিনা। আমার সাথে মজা করোনা প্লিজ।
-মজা আমার সাথে হয়েছে, আর এটাই সত্যি।
-আমার মাথা এলোমেলো হচ্ছে। তুমি যাই হও, আমি তবু
তোমাকে চাই। যদি বলো তোমার একটা সন্তান আছে, তবে
তাতেও কিছু যাই আসেনা। আমি তোমাকে ভালোবেসেছি,হারাতে চাই না।
-তাহলে, আমার গল্পটা শোন…
-না, শোনা লাগবেনা। তুমি অতীতে কি ছিলে বা আমি কি ছিলাম তা
টেনে আমি বর্তমান নষ্ট করতে রাজি নই।চলো, আমরা
আমাদের বর্তমান দেখি, ভবিষ্যৎ সাজাই।
-কিন্তু তমাল,আমি কষ্ট পাচ্ছি,আমার বুকে জমে থাকা কষ্টগুলো
কারো সাথে শেয়ার করতে না পেরে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি।
প্লিজ শুনে আমাকে হালকা হতে দাও।
-ঠিক আছে বলো। তবে জেনে রাখো, তাতে আমার
সিদ্ধান্তের কোনো হেরফের হবেনা,আমি তোমাকে
ভালোবাসি,বাসতেই থাকবো।
-এখন আমার বয়স কুড়ি। আড়াই বছর আগের কথা।
রাত্রি তার গল্প বলা শুরু করে আর আমি মনোযোগী শ্রোতা।
-তারপর?
-কলেজে পড়ি। ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার। খুবই ছটপটে
ছিলাম। টিচাররা খুব স্নেহ করতেন। আদর করে দুষ্টু, পাগলী, হাসি কতো নামেই যে ডাকতেন!
একসময় সিনিয়র একজন ভাইয়ের সাথে আমার খুব বন্ধুত্ব হয়, পরে তা ভালোবাসায় পরিণত হয়।
আমরা খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় রাত্রি-রবিন জুটি হয়ে যাই।যেখানে রাত্রি, সেখানেই রবিন।
আমাদের এতো ভালবাসা বাসি,বয়স দুইজনেরই কম,ও আমার চেয়ে মাত্র দু’বছরের বড় ছিলো, ক্লাসেও।
দেখতে ওকে অনেক বড় মনে হতো। লম্বায় সে ছিলো
ছয় ফুটের কাছাকাছি।
আমরা হুট করে সিদ্ধান্ত নিই, বিয়ে করবো। এতো আবেগ, মা বাবা আত্মিয় কারো কথা ভাবিনি।
ওর আর আমার কিছু বন্ধু বান্ধব, সবাই হৈ হল্লোড় করে ওর হোস্টেলে বিয়ের অনুস্টান হয়।
প্রথমে হুজুর, তারপর কাজি বিয়ে পড়ায়। মাত্র পাঁচ মাসের সম্পর্কে বিয়ে! তার একমাস পর আমার ফাইনাল পরীক্ষা।
নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিচ্ছি। খুব খুশি আমি, রবিন আর আমি স্বামি স্ত্রী, কেউ আর চাইলেও আমাদের আলাদা করতে পারবেনা!
শেষ পরীক্ষার দিন ছিলো ৫ই জুন, আমার জন্মদিন!
প্রতিটি দিন পরীক্ষা শেষে সে আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো,
এতো ভালো লাগতো!
সেদিন এসে দেখি রবিন নেই, মনটাই খারাপ হয়ে গেলো!
রবিনের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তার বন্ধু শফিক, কেমন উদ্ভ্রান্ত দেখায় তাকে!
রবিন কই ভাইয়্যা? জানতে চাই আমি।
উনি আমার হাতে শুভ জন্মদিন তোমার, গানের ক্যাসেট টা ধরিয়ে দিয়ে বলেন,
-সে এটা আমাকে রাখতে দিয়ে, তোমার জন্য ফুল আনতে
গেছে।
-আমার তো স্টুডেন্ট বাস আসার সময় হলো, ও আসবে কখন?
-ও আর আসবেনা রাত্রি!
ও সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে।
-চলে গেছে মানে!
-এক্সিডেন্ট হয়েছে, রাস্তা পার হতেই। এখন ওকে হসপিটাল
নিয়ে গেছে, পোস্টমর্টেম হবে।
আমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকি। শফিক কাঁদতে থাকে।আমার চোখে পানি নেই! বিবাহিত জীবন শুরুর আগেই আমি বিধবা! আর
আমার ভালোবাসার টুকরো করছে ডাক্তাররা…..
সেই থেকে আমি পাল্টে গেছি। কারো সাথে কথা বলা,হৈ
হল্লোড় ভালো লাগেনা, পড়া লেখাওনা। পড়ছিনা দেখে বাবা মা অনেক চেষ্টা করেছেন, বিয়ে দিতে। আমার নিষেধ সত্ত্বেও পাত্রের খোঁজ নিয়েছিলো বলে, একগাদা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মরতে চেয়েছি, সেই থেকে তারা চুপচাপ আছে।
আমি আমার বিয়ের কথা, বিধবা হবার কথা কাউকে বলিনি। ক’মাস আগে নিজের ইচ্ছেই আবার এই কলেজে ভর্তি হলাম।
-রাত্রি, আমাকে তোমার ভালো লাগেনা?
-হুম লাগে, কিন্তু তোমাকে ভালোবাসতে পারবোনা।
-কেনো?
-রবিন তবে আমার থেকে দূরে সরে যাবে। আর এসব জানার পর তুমিই বা আমাকে কিভাবে ভালোবাসবে?
-না রাত্রি, রবিন দূরে সরবেনা। সে আমাদের ভালোবাসায় বেঁচে থাকবে। তুমি কষ্ট পাচ্ছো জানলে সেও কষ্ট পাবে। আর আমি?
আমি তো ভালো ছেলে নই, তুমি একজনকে
ভালোবেসেছো। আর আমি অনেকের সাথে ভালোবাসার
অভিনয় করেছি। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, এটাই সত্যি।আরেক সত্যি, তুমি। আমি তোমাকেই ভালোবেসেছি শুধু।
তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিওনা রাত্রি।
আচ্ছা, আমাদের তো কেকই কাটা হয়নি! অনেক খিদে
লেগেছে।
আমি আর রাত্রি একসাথে ছুড়ি ধরে কেক কাটি। এই প্রথম ওর হাতের স্পর্শ পেলাম।
-হায় আল্লাহ, কথায় কথায় বারোটা বেজে গেছে। তোমাকে
দাওয়াত করে কিছুই খেতে দিলামনা।
-হুম, খুব খারাপ করেছো, এবার খেতে দাও।
সব তো দেখি মিষ্টি, আমার মিষ্টি জিনিষ ভালো লাগেনা।
-কি করবো, মা বা তারানা থাকলে ঝাল ভেজে দিতে পারতো।
-আমি তো আছি, দেখিয়ে দাও, আমি ভেজে নিচ্ছি।
রাত্রি রান্নাঘরে সমুচা ভাজছে,আমি দূরে দাঁড়িয়ে এই ঘরের হবু বউকে দেখছি।
আমি ওর পাশে যাই,
-চলো রাত্রি,আজই বিয়ে করে ফেলি!
বিয়ে করে সোজা নানার বাড়ি, নানী তার শেষ নাতি বউ দেখে
যাক।
-আগে মা বাবাকে জানাতে হবে। প্রথমবার ভুল করেছি,তাই
হয়তো আল্লাহ শাস্তি দিয়েছেন, এবার আর নয়।
-ঠিক আছে, চলো তোমাদের বাসায় যাই।
আমি রাত্রি’র হাত ধরে ঘর থেকে বের হই।।
রচনাঃ ০৮.০৯.২০০১
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই লেখাটি আরেকজন গল্পবলি সদস্য তার নামে পোস্ট করছেন দেখে আমি প্রমাণসহ গল্পবলি টিমে অভিযোগ করেছি।