তুর্যের স্কুল থেকে ফোন পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলাম অফিস থেকে।ছেলেটার কি হয়েছে এ চিন্তায় অস্থির লাগছে।তুর্য আমার ছেলে হ্যাঁ সে আমাদের ভালোবাসার সম্বল।রেনু আর আমার সম্বল।রেনুর পরম যত্নে আগলে রাখা সম্পদ আজ আমি আগলে রাখছি।রেনু যদি কখনো আমার কাছে জানতে চায় তুর্যকে কেমন রেখেছি তখন আমি বুক ফুলিয়ে বলবো তুমি যতটা আগলে রাখতে ততটা আগলে রেখেছি।
তুর্যের টিচার যা বললো তা শুনে আমি অবাক।তুর্য স্কুলে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। তার রচনার বিষয় ছিলো “প্রিয় মানুষ” তুর্যর টিচার আমাকে তার রচনার খাতাটা দেখালো।আমি আমার তুর্যের হাতে লিখা রচনাটা পড়ছি।তুর্য শুধু প্রিয় মানুষ নিয়ে লিখেনি সে তার অপ্রিয় মানুষ নিয়েও লিখেছে।আমি সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছি।তুর্য তার অপ্রিয় মানুষ বানিয়েছে তার জন্মদাত্রি মা-কে।আমার হাত অবশ হয়ে যাচ্ছে।আমার চোখ ঝাপসা।কি করে আমার রেনু তার সন্তানের অপ্রিয় মানুষ হতে পারে!!!!কি করে আমি তুর্যের প্রিয় পাত্র হতে পারি!!!! সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার।।।
রেনু আমাকে ভালোবাসতো।আমাদে র সম্পর্কটা খুব সুন্দর ছিলো।আর পাঁচটা স্বাভাবিক সম্পর্ক যেমন হয় তেমনই ছিলো।সম্পর্কের সাত বছরের মাথায় রেনু বিভিন্ন বন্ধু বান্ধব বানিয়ে পেলে।তার একটা ছেলের সাথে খুব ভালো বন্ন্ধুত্ব হয়ে যায়।এসব নিয়ে আমাদের ঝগড়া হতো।আমি সবসময় তাকে এসব নিয়ে বকতামম।ব্রেকআপ করে ফেলেছিলাম।কিন্তু রেনুর জীবনে আমি অনেক দামি ছিলাম তাই সে আমার হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো।আমি তাকে শর্ত দিয়েদিলাম আমাকে ভালোবাসো তার প্রমাণ দিতে হবে।রেনু জানতে চাইলো কি আমি তার কাছে শারীরিক সম্পর্কের দাবি করলাম।রেনু চুপ করে গেলো।বেশ কিছুদিন যোগাযোগ করলোনা।কিন্তু আমি জানি সে আমাকে ছাড়া অচল।তাই সে আমার প্রস্তাব মেনে নিলো।
অবশেষে আমার চাওয়া পূরণ হলো।আমি ওভার প্রটেক্টিব হয়ে তার সাথে মিশলাম।রেনু তারপর থেকে কেমন যেনো চুপ হয়ে গেলো।রেনু আর আগের মতো চণ্ঞলতা করতোনা।এটা-সেটা দাবি করতোনা। হঠাৎই রেনু বদলে গেলো।আমিও নানা ভাবে তাকে বিরক্ত করতে থাকি রেনু কিচ্ছু বলতোনা। রেনুকে রেখে আমি আর একটা মেয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ি।ঐ মেয়ের সাথে নানান ছবি আমি সামাজিক যোগাযোগে পোস্ট করতে থাকি।রেনু এসব নিয়ে কিচ্ছু বলতোনা।সে আমাকে মাঝে মাঝে টেক্সট করতো যার কোনো উত্তর আমি দেওয়ার প্রয়োজন মনে করতামনা।
একদিন রেনু আমাকে টেক্সট করলো সে প্রেগনেন্ট।আমাকে কল দিতে থাকলো একটানা। আমি তার টেক্সটের রিপ্লে দিলামনা।কল রিসিভ করলামনা।তাকে ব্লক করে দিলাম সব কয়টা সামাজিক মাধ্যম থেকে।আমি জাননতাম সে নিজে মরবে।কিন্তু আমাকে কখনো ব্লেম করবেনা।রেনু আর কোনো ভাবে আমাকে খুজে পেলোনা।কিন্তু রেনুর আপু-ভাইয়ার সাথে আমার মাঝে মাঝে কথা হতো তারা এসব জানতোনা।এমনকি এটাও জানতোনা আমাদের প্রেম চলছিলো।তারা জানতো আমরা খুব ভালো বন্ধু।
একদিন রেনুর আপু আমাকে ফোন দিয়ে রেনুর প্রেগনেন্ট হওয়ার কথা জানালো।আমাকে শুধালো আমিতো তার খুব ভালো বন্ধু আমি জানি কিনা এটা কার বাচ্চা।বুঝতে পারলাম রেনু খুব প্রেশারে আছে।তবু সে নাম বলেনি।তখনো অনুমান করতে পারিনি সে কত কষ্টে আছে।পরামর্শ দিলাম নষ্ট করে ফেলতে।তিনি জানালো পাঁচ মাস হয়ে গেছে এখন আর নষ্ট করা যাবেনা।যদি করে রেনুকে বাঁচানু যাবেনা।তারা রেনুকে তাদের শহরের বাড়িতে নিয়ে রাখলো।আমার কেনো জেনো রেনুর এত্ত কষ্ট অনুভব হলোনা আমি দিব্যি আমার মতো দিন কাটাতে লাগলাম। দুই-তিন মাস পর রেনুর আপু আমাকে ফোন দিয়ে বললো রেনুকে হসপিটালে ভর্তি করেছে।তার অবস্থা খুব খারাপ।তিন ব্যাগ রক্ত লাগবে।আমি মাঝে মাঝে রক্ত ডোনেট করি তাই আমাকে ডাকা।আমি গেলাম।রেনুকে উকি দিয়ে দেখলাম একটু।রেনুকে দেখার পর বুঝলাম রেনু কি পরিমান যুদ্ধ করেছে এই কয় মাস।রক্ত দেওয়ার পরেও আমি হসপিটাল থেকে আসলামনা।
রেনুর মা-বাবা-ভাই বোন সবাইকে দেখে বুঝতে বাকি ছিলোনা কি ভীষন কষ্ট তারা পাচ্ছে।আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলামনা।আমার আজ হঠাৎ করে রেনুর প্রতি আগের মতো ভালোবাসা জেগে উঠেছে।রেনুকে দেখে এটুকু বুঝলাম সে বেঁচে আছে শুধু তার সন্তানের জন্য।সারা শরীর খুজে কোনো মাংস পাওয়া যাবেনা রেনুর,হাড্ডিসার রেনু।প্রসব যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেনা,সে কাতরাচ্ছে তার সন্তানের জন্ম পরিচয়ের জন্য।আমার খুব ইচ্ছে করছে রেনুর কাছে যেতে।কিন্তু তাকে ওটি থেকে আই.সি.ইউতে শিপ্ট করার কথা বলছে ডাক্তাররা।আমি ওটির বাইরে ঠাই দাড়িয়ে রইলাম।
অনেকক্ষন পর নার্স এলো আমার তুর্যকে নিয়ে।কিন্তু রেনুর পরিবারের কেউ তুর্যকে ছুয়েও দেখলোনা।সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলো।রেনুর মা নার্সকে বললো তারা বাচ্চা নিবেনা।তারা তাদের মেয়েকে নিবে।নার্স কিছুনা বলে বাচ্চাটা নিয়ে চলে যাচ্ছিলো।আমি নার্সের কাছ থেকে ছো মেরে তুর্যকে কেড়ে নিলাম। রেনু কেমন আছে জানতে চাইলাম।নার্স যা বললো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা। ডা. যখন রেনুর ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনের কথা জানালো রেনুকে।বললো দুজন থেকে একজনকে বাঁচাতে তখন রেনু বাচ্চাটাকে বাঁচাতে বললো।সে এও বলেছিলো তার কন্ডিশনের কথা তার পরিবারকে জেনো না জানানু হয়।তাই ডাক্তাররা রেনুর কথা রাখলো।আর রেনু বলে দিয়েছে এটা সে সেচ্চায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার পুরা পৃথিবীটা মহুত্বে শূন্য হয়ে গেলো।।।
রেনু যখন প্রেগন্যান্সির কথা বলে আমাকে টেক্সট করেছিলো তখন সে লিখেছিলো।””আমি বাঁচতে চায় আমাকে বাঁচাও””তোমার পথে বাঁধা হবোনা শুধু আমাকে রক্ষা করো।আর সে রেনু আজ নিজেকে বলি দিলো।রেনু মৃত্যুর সময় বলেগেছে বাচ্চাটা যাতে তার নিঃসন্তান বোনকে দিয়ে দেওয়া হয়।কিন্তু তার বোন আমার তুর্যের মা হতে পারবেনা স্পষ্ট বলে দেয়। আমি তখন কাউকে না জানিয়ে তুর্যকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এলাম শুধু হাসপাতাল নয়,আমি আমার চিরচিনা শহর থেকেও দুরে পালালাম তুর্যকে নিয়ে। সেই থেকে আমি আর তুর্য একা একসাথে।।।।
না এই হয়না।রেনুর মতো মাকে তুর্য ঘেন্না করতে পারেনা।যাকে পৃথিবীর মুখ দেখাতে রেনু পৃথিবী ছাড়লো সে রেনুকে ঘেন্না করতে পারেনা।আমি তুর্যকে সব বলবো।তার বাবা কতটা খারাপ তা তাকে জানতে হবে।হোক সে ছোট।সব তাকে বলবো।সব দোষ আমার কারো কোনো হক নাই আমার রেনুকে ঘেন্না করার।আমি চাই আমার রেনু তার সন্তানের মাঝে ভালোবাসা নিয়ে বিকশিত হোক। রেনু কোনো পাপ করেনি।সত্যিকারের ভালোবাসে এটা পরীক্ষা দিতে গিয়ে সে মিথ্যে পৃথিবীর কাছে চরম ভাবে হেরেছে।রেনু বাঁচবে আমার ভালোবাসায়,তুর্যের মাঝে।।।