বউ আজ কি রান্না করবা? তোমার মাথা আর আমার কলিজা! সংসারে কি রান্না করার মত আর কিছু নাই না কি? ওগুলাই আছে! ও গুলাই রান্না হবে আজ। এ কেমন কথা? চুপ! একদম চুপ! ঘরে চাল নাই, বাজার নাই। একটা টাকা কামাই করার যোগ্যতা নাই। আবার বলে এ কেমন কথা! এতো কিছু আনি এগুলা যায় কই! সংসারে কি পেট গঁজাইছে না কি? আবার মুখে মুখে তর্ক করে! একদম ধরে দিবো এখন। বাজার করছে সেই কবে, আর আজ বলে এতো কিছু যায় কই। মানুষের কাছ থেকে চাল ডাল ধার করে এনে রান্না করা লাগে। এই তুই যখন আমাকে দুই বেলা খাবার দিতে পারবি না তখন বিয়ে করলি কেন আমারে? কেন বিয়ে করলি আমারে, বল?
বউ এর ব্যবহার আজকাল খারাপ হয়ে গেছে। আগে শুধু ধমক দিতো, এখন কথায় কথায় মারতে আসে। না জানি কোন দিন মেরে বসে তার ঠিক নাই। আমি কামাই রোজগার করি না তাই বলে আমার সাথে এমন ব্যবহার করা ঠিক না। হাজার হোক আমি তার স্বামী। কলমা পড়ে তাকে বিবাহ করছি। আমার প্রতি তার সম্মান ভালবাসা থাকা উচিত। এই জিনিস গুলা না থাকলে সংসার সুখের হয় না। ঘরে আর থাকা গেলো না। দেখি রমজান মিয়ার চায়ের দোকানে গিয়ে চা রুটি দিয়ে দুপুরে খাবারটা সেরে ফেলি। রিজিক এর মালিক আল্লাহ। তিনি ভাল জানেন কার পেটে কি দিবেন। রমজান মিয়া এক কাপ চা আর একটা রুটি দেও। যা খাইবা নগদ! তোমারে বাকি দেয়া যাবে না। আগের টাকাটা এখনও পাই নাই। আরে দিবো তো। একটু টানাটানির মধ্যে আছি। হাতে টাকা আসলেই দিয়া দিব। তোমার টানাটানি দেখতে দেখতে আমি নিজেই ছিঁড়া গেছি তাও তোমার কিছু হয় নাই। খাতায় কত টাকা হইছে হিসেব আছে! তোমারে আর বাকি দিব না। যা খাইবা, নগদ।
রিজিকের মালিক আজ মনে হয় আমার জন্য কোন কিছু রাখেন নাই। কামাই রোজগার করার চেষ্টা তো আর কম করলাম না। কোন দিকেই কোন গতি হয় না। বিদেশ যাবার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু অর্থের অভাবে আর যাওয়া হলো না। এদেশে থেকে শান্তি নাই। ঘরে থাকলে বউ এর অশান্তি। বাহিরে থাকলে রমজান মিয়ার। এলাকার অলিগলি দিয়ে হাঁটতেছি আর চিন্তা করছি। যে করেই হোক টাকাপয়সা কামানোর ব্যবস্থা না করলেই না। দিন দিন বউ এর মেজাজ বেশি খারাপ হয়ে যাইতেছে। কোন দিন মেরে ফেলে বলা যায় না। এক কাজ করলে কেমন হয়! ঘটনা চক্রে কোন এক দিন এক পকেটমার এর সাথে ভাল আলাপআলোচনা হইছিলো। তার ঠিকানাটাও জানা আছে। তারে নিয়া কোন কিছুর ধ্যান্দাপানির ব্যবস্থা করলে কেমন হয়! দেখি গিয়ে কিছু করা যায় কি না। রতন বাড়িতে আছও না কি? আরে বড় ভাই! আসেন আসেন আসেন! এতো দিন পর কি মনে কইরা? যাক চিন্তে পারছো তাহলে। শুনে খুশি হলাম। পকেটমার এর চোখ বড় ভাই। যারে একবার দেখি তারে সহজে ভুলিনা। তুমি প্রশংসা পাবার যোগ্যতা রাখও। তা তুমি এই সময় বাড়িতে কেন?
দুই দিন আগে পকেটমাতে গিয়া ধরা খাইছি। পাবলিক হেবি মারছিলো। শরীরটা এখনও ভালও হয় নাই, তাই বাসায় আছি। হুম, বুঝলাম। তা বড় ভাই, হঠাৎ আমার কাছে কি মনে কইরা? চিন্তার মধ্যে আছি। তোমার অবস্থা দেখে চিন্তা আরও বেরে গেলো। এভাবে মাইর খেতে খেতে কোন দিন মরে যাও তার কোনও ঠিক নাই। তাই ভাবছি টাকাপয়সা ইনকাম এর ভাল একটা রাস্তা বের করতে হবে। কোন রাস্তা কি পাইছেন? নাহ। এখনও পাই নাই। তবে পাবো। আমাকে একটা দিন সময় দাও। একটু বুঝি নিজের সাথে।
সারারাত আমার আর ঘুম আসে না। মাথার ভিতরে একটাই চিন্তা যে করেই হোক একটা বুদ্ধি বের করতেই হবে। রতন এর কাছ থেকে একটা দিন সময় চেয়ে নিছি। এর মাঝে যদি কোন উপায় না করতে পাড়ি তবে মানসম্মান আর থাকবে না। সবার কাছে মানসম্মান নষ্ট করার মানেই হলো পৃথিবীতে নিজেকে মূল্যহীন করা। না, এইটা হতে দেয়া যায় না।
মজিবর মিয়া, আজও কিন্তু টাকা নাই! সাত সকালে এক কাপ চা খেতে ইচ্ছে হলো। কি করা যায় বলতো? বসও, দিতাছি। ঘটনা কি আজ! টাকা ছাড়াই চা দিতেছো! আজ মনটা ভালও। একটু পর মাজার এ যামু তাই কারও মনে কষ্ট দিতে চাই না। খাও, এক কাপ চা’ই তো খাইবা। সিগারেট খাইবা না কি? তা দিলে মন্দ হয় না। বেশি দামি লাগবে না। একটা কম দামি সিগারেট দিলেই হবে। একাই যাচ্ছ না সাথে আর কেউ যাবে? রাস্তার মোড় এ দুই গাড়ি মানুষ আছে। আমরা সবাই এক সাথেই যামু। যাইবা না কি? নাহ, আমার কাজ আছে। তোমরা যাও।
মাজার শব্দটা শোনার পর থেকেই মাথার ভিতরটা ঘুরপাক খাচ্ছে। মাজার এর বেপারে যদিও আমার আগে থেকেই একটা বেপক ধারনা আছে। তবে এই বার ধারনাটা কাছে লাগাবো কি না তাই ভাবতেছি। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রতন এর কথা মনে পড়লো। রতন কে খোঁজা দরকার। মনে হয় বাড়িতেই পাব। রতন তোমার বাড়িতে খালি হাতে আসি, কিছু মনে কর না তো? আরে না বড় ভাই। আমার বাড়ি মানেই তো আপনা। আপনের যখন ইচ্ছা তখন আসবেন। কিছুই আনতে হইবো না। এইনা হলো ভাই এর মত কথা। ভালবাসা থাকবে অন্তরে। উপহার এর মধ্যে ভালবাসা থাকে না। যাই হোক, এইবার কাজ এর কথায় আসি। জী বলেন। টাকা কামানোর একটা রাস্তা পেয়েছি। শুধু মাথাটা খাটাতে হবে। যা করার আমিই করবো। তুমি শুধু কিছু বিশ্বস্ত লোক জোগার করবা। আর আমার সাথে থাকবা। তা না হয় করলাম। কিন্তু কাজটা কি? তার আগে আমাকে বলও কতজন লোক দিতে পারবা? তা কম করে হইলেও দশ থেকে পনেরো জন দিতে পারুম।
এতেই চলবে। এখন মন দিয়া শুনও। আমরা মাজার এর ব্যবসা করবো। আমি হবও মাজার এর বাবা। তুমি হবা আমার খুব কাছের খাদেম। তোমার লোকজনও হবে আমার খাদেম আর আমার ভক্ত। তারা আমার সেবা যত্ন করবে। কিছু বুঝলা? মনে হয় বুঝতেছি। তারপর বলেন? তুমি এমন একটা জায়গা ঠিক করবা যে অঞ্চলের মানুষ মাজারে বিশ্বাসী। আমরা ওইখানেই মাজার দিব। তা না হয় ঠিক করলাম। বুদ্ধিটা কিন্তু খারাপ না। কবে থেকে শুরু করতে চান? তুমি জায়গা ঠিক করলেই আমরা রওনা দিবো। আমাকে একটা উপকার করও। কি নাম রাখা যায় আমার বলতো? দেশে তো বাবা’র অভাব নাই। কি নাম রাখতে চান? দুই একটা নাম বলও, শুনি। এই ধরেন পাগলা বাবা, নেংটা বাবা, দড়ি বাবা, মরা বাবা, তাজা বাবা, গাঁজা বাবা, আরও অনেক বাবা আছে। আপনে কোনটা হইবেন?
নেংটা বাবা হওয়া যাবে না। আল্লাহ রসূল নেংটা পছন্দ করেন না। আর তাছাড়া বাকি নাম গুলাও অনেক পুরানো নাম। নতুন কোন একটা নাম খুঁজতে হবে, আধুনিক নাম। তাইলে কি নাম দেয়া যায়! চিন্তার বিষয়। একটু চিন্তা করতে দাও। পেয়েছি। আমার নাম হবে উড়ি বাবা। বাবা’র নামের সাথে তো তার কাজ কামের মিল থাকে। এই ধরেন যে বাবা নেংটা থাকে তার নাম নেংটা বাবা। যে বাবা পাগল তার নাম হয় পাগলা বাবা। আপনে যদি উড়ি বাবা হন তাইলে উড়বেন কেমনে? আরে রতন শুধু আকাশে উড়তে পারলেই কি উড়াল দেয়া হয়ে যায়! যায় না। আর তাছাড়া আমি তো সব সময় উড়বো না। এক বারই উড়াল দিবো তোমাদের নিয়া। হা হা হা এই বার বুঝলাম। তবে যাই কন বড় ভাই, আপনের মাথায় কিন্তু বু্দ্ধি আছে। দেন আপনার পা’টা দেন ছালাম কইরা কাজ শুরু কইরা দেই।
রতন ছেলেটা ভালও। যদিও মাথায় বুদ্ধি একটু কম। আমার অবশ্য এমন লোকই দরকার, যে বুঝবে কম কাজ করবে বেশি। আমি সহ পনেরো জন লোক জোগার হলো। কিন্তু মাথায় আরেক চিন্তা। হাতে কোন টাকা পয়সা নাই। কিছু টাকা না হইলেই না। মাজার বানানোর জন্য কিছু কাপর আর নিজের জন্য উড়ি বাবা হওয়ার পোশাক কিনতে হবে। আজ বউ এর চোখেও ঘুম নাই। আলমারিতে বউ এর কিছু অলংকার ছাড়া আমার টাকা পয়সা ব্যবস্থা করার আর কোন উপায় নাই।
অবশেষে আমরা রওনা হলাম। আমার সাথে আছে ছয় জন। আর বাকিদের রেখে আসা হইছে। যে কোন সময় ডাকা মাএই চলে আসবে। বউ এর জন্য খুব খারাপ লাগতেছে। আরও খারাপ লাগতেছে বউ এর অলংকার গুলা বিক্রি করায়। বউ এর অলংকার কখনও বিক্রি করতে হয় না। এতে সংসারে কোন দিন আয় উন্নতি হয় না। অলংকার নারী’র সৌন্দর্য, তার গুন। নারী’র সৌন্দর্য বিক্রি করে কিছু করা ঠিক না। যদিও আমার আর কোন রাস্তা ছিলো না তাই ভাবতেছি মাজরের ব্যবসা ভাল হলে সবার প্রথম বউ এর জন্য কিছু অলংকার বানায়া দিব। বেশ কয়েক দিন ধরে মাজার দিয়া বসছি। কিন্তু তেমন কোন সাড়া শব্দ নাই। লোকজন খুব একটা আসে না। পকেট এর টাকা পয়সাও প্রায় শেষ এর দিকে। রতন আর বাকি সঙ্গীরাও কেমন যেন হতাশ হয়ে যাচ্ছে। নাহ! হতাশ হওয়া যাবে না। কিছু একটা করতেই হবে। রতন এদিকে আসও। জী উড়ি বাবা?
মাজারের অবস্থা ভাল না। আমরা যাদের রেখে আসছি তাদের মধ্যে থেকে একজন কে খবর দাও। কাল দুপুরের মধ্যেই যেন এইখানে এসে পৌঁছায়। এখানে আসার আগে বাস থেকে নামার পড় জোরে জোরে হেঁটে এইখানে আসবে। খুশিতে কাঁদতে থাকবে আর চিৎকার করে বলতে থাকবে “উড়ি বাবা! উড়ি বাবা! সবই তোমার দয়া। তোমার উছিলায় আমার বউ এর বাচ্চা হইছে। ” এতে কোন লাভ হইবো কি? হবে আশা করি। মানুষ জন যখন শুনবে উড়ি বাবা’র উছিলায় তার বউ এর বাচ্চা হইছে তখন বিশেষ করে মহিলা মানুষ মাজারে আসবে। একবার মহিলা মানুষ আশা শুরু করলে বাকি সবাই এমনিতেই আসবে। মহিলা মানুষ হলো চুম্বুক এর মত। এদের যে দিকে নিবা পৃথিবী সেই দিকেই যাবে। তাইলে আমি ফোন কইরা আসতে বলি। হুম তাই করো। আর অভিনয়টা যেন ঠিক মত করে সে দিকে খেয়াল রাখতে বলবা।
আফজাল ভাল অভিনয় করছে। সারা রাস্তায় চিৎকার করে কান্নাকাটি করছে। আর মানুষজন যখন জিঙ্গেস করছে কি কারনে কাঁদতেছে তখন বলছে উড়ি বাবা’র কারনে তার বউ এর বাচ্চা হইছে। তার এই ভাল অভিনয়ের কারনে দলে দলে মহিলা মানুষ মাজারে ভির করতে শুরু করছে। তাদের দেখে নানান বয়সি মানুষও আসতেছে। রতন আর বাকি সঙ্গিরা এইবার বেশ খুশি। মানুষ যত আসবে মাজারের ব্যবসা তত ভাল হবে। মাজারে ব্যবসা ভাল মানেই আমাদের পকেট এর অবস্থা ভাল। অবশেষে উড়ি বাবা’র মাজার সুপার হিট মাজারে রুপ নিতেছে। এই বেপারে অবশ্য আমিও বেশ খুশি।
উড়ি বাবা, আপনি আমাদের এলাকায় আসছেন। আমি যে কি পরিমান খুশি হইছি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। তাহলে আমাকে খুশি কর এখন। জী উড়ি বাবা, সেই ব্যবস্থা হইতেছে। আপনাকে আর কষ্ট করে তাঁবু টেনে এই খোলা মাঠে থাকতে হবে না। আমি ইটের ভাটায় খবর দিয়া আসছি। কাল সকাল থেকেই মিস্ত্রি এসে মাজার এর কাজ শুরু করবে। শুধু আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। সামনে ইলেকশন। আমি যেনও আবারও চেয়ারম্যান হইতে পারি। হবে হবে সব হবে। তুই আবারও চেয়ারম্যান হবি। এই উড়ি বাবা’র উপর ভরসা রাখ।
চেয়ারম্যান এর কথা আর কাছের মিল আছে। দিনরাত লোকজন কাজ করতেছে। মাস খানিক এর মধ্যে মাজার নির্মাণ সম্পর্ন হয়ে গেছে। বর্তমান এ আমার মাসিক ইনকাম কয়েক লখ টাকা। ভবিষ্যৎ এ আরও বারবে এ বেপারে আমি আশাবাদী। খাওয়া দাওয়া, আরাম আয়েশ কোন কিছুর কমতি নাই এখানে। মনে হচ্ছে বাদশাহি জীবন যাপন করতেছি। রতন, এদিকে আসও। জী উড়ি বাবা? আয় রোজগার আরও বারাইতে হবে। সারাদিন বাচ্চা হয় না এমন মহিলা মানুষ আর ঝারফুঁক করে দিন পার করা যাবে না। হাতে বেশি দিন সময় নাই। যা করার তারাতারি করও। তা কি করবো একটু যদি বলতেন! যাদের কে এখনও আনা হয় নাই এখানে তাদের একজন কে খবর দাও। জরুরী ভিওিতে আসতে বলও। জী আচ্ছা।
এখানে আসার আগে তাকে বাজারের মিষ্টির দোকানে যেতে বলবা। এখান থেকে লোক পাঠায় দিবো টাকা দিয়া। দশ হাজার টাকার জিলাপি কিনবে। মাজারে আসার আগে যত মানুষ এর সাথে দেখা হবে সবাই কে বলতে বলবা উড়ি বাবা’র উছিলায় তার বড় চাকুরী হইছে। তাই সবাইকে মাজারে এসে মিষ্টি মুখ করার অনুরোধ রইল। বুঝতে পারছো? জী উড়ি বাবা, বুঝতে পারছি।
আফজাল এর মত হারুন ও বেশ ভাল অভিনয় করছে। তার কাছ থেকে ওই খবর শোনার পর থেকে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করছে। কেউ চাকরির জন্য, কেউ ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য। নানান মানুষের নানান সমস্যা। তবে সমাধান একটা, উড়ি বাবা। মাজারে আগে ছোট ছোট উপহার আসতো। দিন বারতেই উপহারের সংখ্যাও বারতেছে। ছাগল ভেড়া থেকে শুরু করে গরু মহিষও আজকাল মাজারে উপহার হিসেবে আসে। ছদকা অথবা দান শব্দটা শুনতে ভাল শোনায় না। তাই উপহার বলাটাই ভালও। উড়ি বাবা! সর্বনাশ হইয়া গেছে! কি হইছে? পুলিশ আইছে! কি? পুলিশ? জী উড়ি বাবা।
হঠাৎ কেন যেন ভয় করতে শুরু হলো। কি করা উচিত! মাথায় তো কিছুই আসতেছে না। গোলমাল লেগে যাবে না কি সব! চিন্তায় তো আর ভাল লাগতেছে না। সবে মাএ ব্যবসাটা গুছিয়ে তুলছি। এরই মাঝে যদি এমন হয় তবে কেমনটা লাগে। হাতে সময় খুব কম। কি হবে এখন! হঠাৎ পুলিশ আসলো কেনও? এখন কি আমাকে ধরে নিয়ে যাবে? পুলিশ কে বলও উড়ি বাবা এখন বিশ্রাম নিতেছেন। এখন দেখা করা যাবে না। বলা হইছে। তিনি শুনতে রাজি না। বাহিরে লম্বা লাইন। পিস্তল বাহির করে ভয় দেখাইতেছে সবাইরে। বলতেছে উড়ি বাবা’র সাথে তিনিই আগে দেখা করবেন। চিন্তার বিষয়! সাথে কয়জন আছে? একাই। তয় বাকিরা সাদা পোশাক এ আছে কি না তা জানি না। হুম, এক কাজ করও। ক্যাশ এর থেকে হাজার বিশএক টাকা নিয়া আসও। টাকা পয়সা দিয়া বিদায় করা ছাড়া কোন উপায় দেখতেছি না। জী আচ্ছা উড়ি বাবা।
মাথাটা ভনভন করতেছে। একটা সিগারেট খেতে পারলে ভাল হতো। দরবার এর ব্যবসা জমজমাট হতে শুরু করছে। এর মাঝে এখন যদি সব নষ্ট হয়ে যায় তবে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছু করার নাই। ভক্তের সংখ্যা বেরে কয়েক হাজার হওয়ায় রান্নাবান্না এখন দরবার শরীফ এই হয়। রতন আর বাকি খাদেমরা আগে হোটেল এ খাওয়া দাওয়া করতো। এখন দরবারেই খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। ডেকরেটর এর বড় বড় দশ থেকে বিশ পাতিল খাবার রান্না হয়। কোন দিন জগাখিচুড়ি, কোন দিন বিরিয়ানি আবার কোন কোন দিন ভাত মাস মাংশ।বাবুর্চির সারাদিন যায় রান্না করতেই। হওয়াটাই স্বাভাবিক। মানুষ তো আর একটা দুইটা না। উড়ি বাবা প্রথমেই বেয়াদবির জন্য মাফ চেয়ে নিচ্ছি। নিয়ম ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ফেলছি।
তোর তো জানাই আছে নিয়ম মানুষের প্রয়োজন এ করা হয়। জী উড়ি বাবা তা জানা আছে। সে জন্য ক্ষমা প্রার্থী। হুম। বল তোর কি সমস্যা? উড়ি বাবা, আমি পুলিশের এস আই। অনেক দিন ধরে কোনও প্রমোশন হয় না। আমার জন্য কিছু করেন উড়ি বাবা। হবে তোর প্রমশন হবে তবে একটা কাজ করতে হবে। পারবি বলেতো মনে হয় না। পারবো বাবা, আমি পারবো। কি করতে হবে আমাকে বলেন? আমার খাদেম তোরে পানি পড়া দিবে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খাবি। আর দরবার থেকে যাওয়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে যাবি। কেউ জিঙ্গেস করলে বলবি তোর প্রমোশন হবে সেই আনন্দে কাঁদতেছিস। পারবি? জী উড়ি বাবা, আমি পারবো।
রতন এর হাত থেকে পানি পড়া নিয়ে যাবার সময় চকচকে দশটা এক হাজার টাকার নোট গুঁজে দিলো। বলে গেলো উড়ি বাবা’কে যেন ভাল মন্দ কিছু কিনে দেয়। পুলিশ হলেও সে মানুষ ভাল। দরবারের হাজার হাজার মানুষ তার চোখের পানি দেখেছে। কাঁদতে কাঁদতে দরবার থেকে চলে গেছে আর সাথে আমার দূষচিন্তা গুলাও নিয়ে গেছে। যাক একটু নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো। আমি তো ভাবছিলাম সব মনে হয় এখানেই শেষ।
আরে আরে করেন কি করেন কি! বাবা’র সাথে কোলাকুলি করলেন কেন? আমার ভুল হয়েগেছে ভাই। উড়ি বাবা’র সান্নিধ্য পাবার বড় ইচ্ছা ছিল তাই আবেগ এ জরায়া ধরে ফেলছি। রতন এই লোকের পরিচয় কি? উড়ি বাবা ইনি হইছেন এই এলাকার মেম্বার। খামুশ! এই উড়ি বাবা’র শরীর স্পর্শ করা মানেই হলো উড়ি বাবা’র সাথে বেয়াদবি করা। ওর পাপ হইছে! ওর শাস্তি হবে। উড়ি বাবা, আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা। এই বার এর মত মাফ করে দেন উড়ি বাবা। চুপ! চপ! তুই ধ্বংশ হবি। তোর বংশ নির্বংশ হয়ে যাবে। বাবা! বাবা! আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা! আমারে অভিশাপ দিয়েন না উড়ি বাবা। আমারে অভিশাপ দিয়েন না। রতন এই পাপী’রে আমার সামনে থেকে দূর করও। দরবারের পাশের পুকুরপাড় এ নিয়ে যাবা। পুকুর এ গলা পানিতে নামিয়ে একশত বার কান ধরে উঠবস করাবা। এতে ওর পাপ ধূয়ে যাবে পানির সাথে। আসেন আমার সাথে! আসেন! খাইয়া কাম পান নাই আর উড়ি বাবা’রে জরায়া ধরছেন। আসেন!
পুকুরপাড় এ শতশত মানুষ ভির করছে। মেম্বার এর শাস্তি হচ্ছে। কান ধরে এক শত বার পানির মধ্যে ডুব দিয়ে পাপমোচন করা হইতেছে। উৎসুক জনতার দৃষ্টি মেম্বার এর দিকে। আগ্রহী লোকজন জানতে চায় মেম্বার এর অপরাধ কি? রতন বেশ ভাল ভাবেই সবাইকে জানিয়ে দিছে উড়ি বাবা’র সাথে বেয়াদবি করায় মেম্বার এর এমন শাস্তি। এলাকার ক্ষমতাবান ব্যক্তি উড়ি বাবা’র শাস্তি ভোগ করছে। এতে সাধারন জনতার ভিতরে উড়ি বাবা’র প্রতি ভয় জন্মাছে আর এরই সাথে আমার সন্মান বারতেছে। উড়ি বাবা হওয়ায় মাঝে মধ্যেই আমাকে হুমতাম করা লাগে। উচ্চ আওয়াজ করা, ধমক দেয়া, অভিশাপ দেয়া এগুলা না করলে মানুষ মনে করবে এই বাবা ভন্ড। তাই চাইলেও চুপ চাপ থাকা হয় না। উড়ি বাবা! আমার সব শেষ হয়ে গেছে উড়ি বাবা! আমার সব শেষ হয়ে গেলো। এর আবার কি হইলো! উড়ি বাবা আমার সব শেষ হইয়া গেছে। কান্নাকাটি থামা। কি হইছে তোর বল? উড়ি বাবা আমার বউ ছোট একটা বাচ্চা রেখে আর একজন এর সাথে পালিয়ে গেছে। তুই ও আমার দরবার থেকে পালিয়ে যা। দূর হ। উড়ি বাবা আপনে আমার একমাএ ভরসা বাবা। আমারে এভাবে তারাইয়া দিবেন না। কিছু একটা করেন বাবা!
লোকটার কথা শুনে বউ এর কথা মনে পরে গেলো। না জানি আমার বউ এর কি অবস্থা! আছে না কি চলে গেছে কারও সাথে সেটাও তো জানি না। কয়েক বার লোক মারফত বউ এর কাছে জিনিসপত্র আর টাকা পয়সা পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত আমার সাথে তার কোনও কথা হয় নাই। সারাদিন এতো ব্যস্ততায় দিন কাটে সংসারের খবর নেয়ার সময় হয় না। আগে বুঝতাম না, এখন বুঝি। বাবা সন্ন্যাসীদের কেনও ঘর সংসার হয় না। কি আনছিস? বুঝলাম না উড়ি বাবা! মানে আমার জন্য উপহার কি আনছিস?
আমি গরিব মানুষ বাবা। বাড়িতে তেমন কিছু নাই। একটা ছাগল ছিলো ওইটাই আনছি। আপনার খাদেম এর কাছে দেয়া আছে।আমার দিকে একটু তাকান উড়ি বাবা। কিছু একটা করেন উড়ি বাবা। হুম। কাছে আয়। জী উড়ি বাবা।আরো কাছে আয়। জী আসছি। ফু ফু ফু! যা তোর ফু দিয়া দিলাম। তোর কাজ হয়ে যাবে। তোর বউ আবার তোর কাছে চলে আসবে। উড়ি বাবা আর কিছু দিবেন না? আর কি দিব? পানিপড়া টরা আর কি! উড়ি বাবা তুই না আমি? জী আপনে। তাহলে এখন আমার সামনে থেকে যা, যাহ!
এই ভাবে দূর দূরান্তর থেকে আমার কাছে মানুষ আসে। হাজার মানুষ এর হাজারটা সমস্যা। সমাধান আমি একাই উড়ি বাবা। আমার দরবার থেকে কেউ খালি হাতে যায় না। সারাদিন ঝারফুঁক আর পানি পড়া দিয়াই লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা। আগামীকাল রতন বাড়ি যাবে। তার নিজ গ্রামে দুই বিঘা জমির বায়না করতে। আমার সাথে থেকে এদের ভাগ্য বদলে গেছে। রাতারাতি অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এই এলাকা সহ আশে পাশের দশ এলাকায় ভাল কিছু হলে নাম হয় আমার। সবার বিশ্বাস আর ধারন উড়ি বাবা’র উছিলায় এমনটা হইছে। এতে অবশ্য আমার খুব আনন্দ হয়। উড়ি বাবা’র উছিলায় কিছু হইছে আর আমার আনন্দ হবে না তা তো হতে পারে না।
রতন এদিকে আসও। জী উড়ি বাবা। দরবারে গান বাজনার ব্যবস্থা করো। সবার একটু বিনোদন এর প্রয়োজন আছে। তাছাড়া আমার নিজের মনটাও ভাল নাই। জী উড়ি বাবা, আমি এখনি করতাছি। বাজার থেকে বড় বড় মাইক আনা হইছে। দূর দূরান্ত এর মানুষজন যাতে শুনতে পায় তার জন্য মাইক গুলা যতটুকু সম্ভব গাছের উপরে বেঁধে দেয়া হইছে। উড়ি বাবা’র দরবারে গান হবে আর সেই গান সবাই শুনবে। বাবা’র গান বলে কথা। না শোনা মানেই বাবা’র সাথে বেয়াদবি করার সমান। বাদ্যযন্ত্রীরা চলে আসছে। ইতি মধ্যে গান শুরু হইয়ে গেছে। উড়ি বাবা’র গান হচ্ছে।
বাবা বাবা উড়ি বাবা
বাবা বাবা মারহাবা
বাবা’র দরবারে
আসোরে…..
গানটা আমার খুব পছন্দ হইছে।বাদ্যযন্ত্রীরাও বেশ ভাল বাজাইতে। চোখ বন্ধ করে গানের তালে তালে মাথা নাড়তেছি। আর মাঝে মাঝে হু হা করতেছি। আমার মত মানুষের নামে গান হইতেছে এইটা তো আমার পরম আনন্দের। আনন্দে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। দুই হাত দিয়ে লুঙ্গিটা ধরে নাচতে শুরু করলাম। আমার আবার লুঙ্গি খুলে যাবার অভ্যাস আছে তাই না ধরে উপায় ছিলো না। আমার নামে গান হবে আর আমি নাচবো না এইটা হতে পারে না। আমার দেখা দেখি বাকি সবাই গানের তালে তালে নাচতে শুরু করলো। রতন, আফজাল, হারুন এর যুবক বয়স। চার হাত পা ছড়ায়া সেই রকম নাচ নাচতেছে। সাথে দরবারের মহিলারাও যোগ দিছে। নারী পুরুষ একসাথে নাচানাচি করা ঠিক না। অনেক বেঠিক কাজ হলেও এখন সব কিছু মেনে নিতে হবে। সময়ের কাছে মানুষ বড় বেশি অসহায়।
আমার আর ওদের মাঝে বেশিখন থাকা হলো না। গাঁজার ধোয়ায় মাথা ঘোরানো শুরু হয়ে গেছে। পুরো দরবারে গানের তালে তালে গাঁজার ধোয়া উড়তেছে। আমি বিড়ি সিগারেট খাইলেও গাঁজা খাওয়া অভ্যাস নাই আমার। আর ধোয়ার গন্ধটাও সহ্য করতে পারি না। তাই রতন এর মোবাইলটা নিয়া বাহিরে চলে আসলাম। বউটা কথা আজ খুব মনে পরতেছে। একটু কথা না বললে শান্তি পাব না। ভালবাসা আছে কি নাই তা বুঝতে হলে মাঝে মাঝে একটু দূরে যেতে হয়। এতে বোঝা যায় ভালবাসা কতটুকু। ভালবাসা আছে না নাই। হ্যেল বউ, আছও কেমন? ভাল আছি। তুমি কেমন আছও? হুম ভাল আছি। তা কোন সমস্যা নাই তো? না কোন সমস্যা নাই। এতো দিন পর আমার খোঁজ নেয়ার সময় পাইছো? একটু ব্যস্ততার মাঝে থাকতে হয়। তাই সময় করতে পারি না।
আচ্ছা তুমি আমাকে সত্যি করে বলতো, তুমি কি এমন কাজ করতেছো যে একে বারে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেলা! যে মানুষ এক হাজার টাকা ইনকাম করতে পারে না সেই মানুষ এই মাসেই দশ থেকে বারও লখ টাকা পাঠাইছে। সোনার গহনা, ফ্রিজ, টিভি আরও কত কি। সত্যি করে বলও তোমার কাজটা কি? আছে আছে কাজ তো একটা আছেই।
তা তো বুঝতেই পারতেছি। তা না হলে আকাম এর ঢেকি বাড়ি ছাড়া নিশ্চয়ই এতে দিন থাকতো না। তবে ভাল কোন কাজ যে করতেছো না তা বুঝতেই পারতাছি। সদ ভাবে মানুষ রাতারাতি এতো টাকা ইনকাম করতে পারে না। কি হলো চুপ হয়ে আছো কেনও? না এমনি। যাই হোক। কবে আসতেছো? এখনও ঠিক বলা যাইতেছে না। তবে সময় হলেই চলে আসবো। শোনও! হুম বলো? ঠিক মত খাওয়া দাওয়া কইরো আর নিজের দিকে খেয়াল রাইখো।
নারী এমন এক সৃষ্টি যার ছুঁড়ির মত দুই দিকেই ধার। যখন টাকা পয়সা কামাই করতাম না তখন বউ এর বকা খেতে হইতো। এখন অঢেল টাকা কামাই এখনও বড় এর বকা খাই। তবে শেষ এর কথার মাঝে কোথায় যেন একটা ভালবাসার সন্ধান পেলাম। মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। বউ এর কাছে যেতে খুব মন চাইতেছে। একবার যেতে পারলে ভাল হতো। মানুষ সব উপেক্ষা করতে পারলেও ভালবাসা উপেক্ষা করার মত ক্ষমতা রাখে না।
সকাল শুরু হতেই নতুন এক ঝামেলা হয়ে গেলো। উড়ি বাবা’র পানি পড়া খেয়ে না কি সবার ডায়রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এমন গুজব এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়ায় মানুষের মাঝে কিছুটা সংশয় দেখা দিতেছে। বেপারটা মোটেও ভাল না। উড়ি বাবা’র উপর মানুষ এর আস্থা একবার হারিয়ে যাওয়া মানেই ব্যবসার বারটা বেজে যাওয়া। রতন, আফজাল, হারুন আরও কয়েক জন মিলে বৈঠক এ বসছি। কিন্তু কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। এমন একটা উপায় বের করতে হবে যাতে ডায়রিয়াও ভাল হয়ে যাবে আর উড়ি বাবা’র উপর মানুষের ভরসাও আগের থেকে বাড়বে। কিন্তু উপায়টা কি? কোন উপায় আছে কি?
আজ দুই দিন ধরে আমি বিছানায় পড়ে আছি। আমার অবস্থা প্রায় আধ মরা। দুই খাদেম এর ঘারের উপর হাত রেখে কোন মতে টয়লেট এ যাওয়া আসা করছি। শেষমেশ মনে হয় ডায়রিয়া রোগেই মারা যাবও। উড়ি বাবা’র দরবারে ডাক্তার কবিরাজ আসা নিষেধ। ডাক্তার কবিরাজ যদি সব কিছুর সমাধান দেয়, তবে উড়ি বাবা’র দরকারটা কোথায়! কিন্তু নিজের অবস্থাই তো এখন দিশেহারা। ডাক্তার ছাড়া তো কোন উপায় দেখি না। এলাকার মানুষ জনের অবস্থাও বেশ খারাপ এর দিকে। রতন। জী উড়ি বাবা? আমাকে এইখান থেকে মৃত বের করবা না জীবিত? উড়ি বাবা আমার তো মাথায় কিছুই আসতেছে না! কি দিয়া যে কি করি! তারাতারি শহরে যাও। ডাক্তার এর কাছ থেকে ওষুধ আনও। শুধু আমার জন্য না। পুরা এলাকার মানুষের জন্য আনবা। আর হ্যে, খুব সাবধানে যাবা। কেউ যেন জানতে না পারে। জী উড়ি বাবা। আমি এখনই যাইতেছে।
সব দোষ ওই বদমাইশ হারুন এর। এলাকার টিউবওয়েলটা দরবার থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় নিজের পরিশ্রম বাঁচাতে দরবারে পাশের পুকুরের পানি ব্যবহার করা হইছিলো। আর তা খেয়ে সবার এই অবস্থা। হারুন কে অবশ্য শাস্তি দেয়া হইছে। কান ধরে রোদের মধ্যে সূর্যের দিকে মুখ করে দুই ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হইছিলো। কিন্তু তাতেও আমার শান্তি হচ্ছে না। ওর ধরে কিছুখন থাপরাইতে পারলে ভাল লাগতো। রতন কে বলছি, ওরে যেন উঠতে বসতে থাপ্পরানো হয়। মেম্বার আর চেয়ারম্যান আমার পাশে বসে আছে। আমার শারীরিক অসুস্থতায় তারাও বেশ চিন্তিত। আমার উপর থেকে ধীরে ধীরে মানুষজনের আস্থা বিশ্বাস কমে যাওয়ার শুরু করছে। বেপারটা খুবই চিন্তার বিষয়। তবে তার একটা সমাধান পেয়েছি। রাজনীতি করতে হবে। আর তা না হলে এই ব্যবসা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। চেয়ারম্যান। জী উড়ি বাবা? কিছু বুঝলি? জী না বাবা! কি বুঝবো?
তোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলতেছে। উড়ি বাবা’র দোয়ায় তুই সামনে আমার চেয়ারম্যান হবি এই কারনে তোর বিরোধী দল তোর পেছনে লাগছে। খাবারের পানিতে ভেজাল মিশিয়ে আমাকে সহ সবাইকে মারার বুদ্ধি করছে। তুই আমার ভক্ত। এলাকার মানুষের কাছে আমার মানসম্মত নষ্ট করতে পারলে তোর আর চেয়ারম্যান হওয়া লাগবে না। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যে কোন মুল্যেই তোকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এইটা উড়ি বাবা’র আদেশ। উড়ি বাবা এইটা তো ভেবে দেখি নাই! ঘটনা তো সত্যি। বাবা আপনি বলেন কিভাবে এর সমাধান করবো?
তুই দশ এলাকার মানুষ নিয়ে মিছিল করবি। মিছিল শেষে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত যত রোগি আছে সবাই কে তোর নিজ দায়িত্বে দরবারে নিয়ে আসবি। আমি তাদের বিনামূল্যএ চিকিৎসা দিব। এতে করে এলাকার মাঝে আমার পরিচিত বারবে। আর তোরও সমাজসেবা করা হবে। যার ফলে মানুষ বুঝবে তুই জন দরদী, তোরে আবার মানুষ ভোট দিবে। উড়ি বাবা একটা কথা বলি? হুম বল। আপনার মাথায় এতো বুদ্ধি! দেন বাবা, আপনার পা’টা দেন একটু দেয়া নিয়া যাই।
যাক, অবশেষে জটিল সমস্যার সমাধান হইলো। চেয়ারম্যান সব কিছু ঠিকঠাক মতই করতেছে। মানুষ জনে ভরে গেছে সারা এলাকা। রতন কে বলা হইছে আজ দরবারে গন ভোজ এর আয়োজন করতে। ইতিমধ্যে দুইটা গরু জবাই করা হইছে। বিরিয়ানি খাইতে আমার ভালই লাগে। যদিও পেটের অবস্থা এখনও তেমন একটা ভাল না। তবে খাওয়া যেতে পারে। বিচানায় শুয়ে শুয়ে মিছিলের আওয়াজটা শুনতে ভালই লাগতেছে আমার। মিছিল হইতেছে আমার নাম এর উপর। ভাল না লাগার তো কোন কারন নাই। ষড়যন্ত্রকারীর রক্ষা নাই বাবা তোমার ভয় নাই বাবা তোমার ভয় নাই আমরা পথ ছাড়ি নাই রতন আর উড়ি বাবা’র ভক্ত মিলে দরবারে সামনে বসে গল্প শুরু করছে। বাবা’র ক্ষমতা সম্পর্কে রতন তাদের বিশেষ ধারনা দিতেছে। আমি কান পেতে শুনতেছি। কি বলবো বলেন উড়ি বাবা’র ক্ষমতার শেষ নাই। সারাদিন রাত কইলেও শেষ হইবো না। আইচ্ছা! উড়ি বাবা’রে তো কোন দিন উড়তে দেখলাম না!
ওই মিয়া আসতে কথা কন! উড়ি বাবা’র কানে গেলে খবর আছে। আপনা গো কি মনে হয় বাবা যখন তখন উড়াল দিব? উড়ি বাবা এক জাগায় দরবার দিলে ছয় মাসের আগে উড়ে না। ঠিক যে দিন ছয় মাস হবে সেই দিন বাবা সাধনায় বসে ধীরে ধীরে আকাশ এ উড়বে। এইবার বুঝলেন।
জানতাম এমন একটা কিছু হবে। রতন চাপাবাজি করতে করতে না জানি একটু পর আর কি কি বলে ফেলে তার নাই ঠিক। এই বেকুবটার মাথায় বুদ্ধি কম। এই বুদ্ধি নিয়া মানুষ এর পকেট মারতো কি করে সেইটা আমার ঠুকে না। নাহ! ওরে না থামাইলে বিপদ হবে একটা। রতন! এই রতন! জী উড়ি বাবা? এদিকে আসও। জী বাবা, বলেন? আজকের হিসাবের খাতা নিয়া আসও। একটু দেখা দরকার। জী বাবা, আনতেছি।
রতন কিছুটা বোকা হলেও ছেলে হিসেবে খুব ভালও আর বিশ্বস্ত। এ যুগে এমন ছেলে পাওয়া মুশকিল। একমাএ ভাগ্য ভাল হলেই এমন কাউকে পাওয়া যায়। বিশ্বস্ত লোক ছাড়া ব্যবসা হয় না। ব্যবসার মূলই হলো বিশ্বাস। উড়ি বাবা, আজকের উপহার পয়ত্রিশটা ছাগলো, একটা গরু, চল্লিশটা মুরগী, দুইশত পেকেট মোমবাতি আর হইলো থামও। মুরগী কি সব দেশি না ফার্মের? কিছু আছে ফার্মের আর বাকি গুলা দেশি। এর পর থেকে ফার্মের মুরগী নিবা না। কেউ দিতে চাইলে বলবা উড়ি বাবা ফার্মের মুরগী খায় না। জী উড়ি বাবা। রোজ যেই ভাবে বাজারে নিয়া বিক্রি করো সেই ভাবে বিক্রি করবা সব কিছু। বেশি দিন এখানে আর থাকা যাবে না। যত তারাতারি সম্ভব টাকা পয়সা কামানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
জী উড়ি বাবা তাই হবে। দরবারে লোক এর সংখ্যা আগের থেকেও অনেক গুন বেড়ে গেছে। এতো লোকের সমস্যার সমাধান দিতে দিতে নিজেরই মাঝে মাঝে সমস্যা হয়ে যায়। হাজার লোক এর হাজারটা সমস্যা আর আমি হলাম উড়ি বাবা একটা। দরবারে আরও কয়েকজন বাবা থাকলে ভাল হতো। তাহলে আমার উপর আর এতো চাপ পরতো না। মা জননী কি সমস্যা আপনার? বলতে লজ্জা লাগে।
এ কেমন কথা! উড়ি বাবা’র কাছে লজ্জার কিছু নাই। বলেন কি সমস্যা? আপনে বাবা’র বয়সি। আপনার কাছে বলতে লজ্জা হইতেই পারে। কথা সত্য। কিন্তু সমস্যা না জানলে সমাধান দিব কি করে? এই কথাটাও সত্য। তাহলে এখন বলেন কি সমস্যা? আমি এক জনরে ভালবাসি। কিন্তু সে আমারে ভালবাসে না। কোন ভাবেই তারে বস করতে পারতেছি না। হুম বুঝতে পারছি। সমস্যা জটিল। সমস্যা জটিল না হইলে কি আপনার কাছে আসতাম বলেন! তাও ঠিক। আসেন একটু কাছে আসেন। ছিঃ এগুলা কি কন! আপনি না আমার বাপে’র বয়সি। মেয়ে সমতুল্য কাউরে এমন কথা কয়! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!
নাউযুবিলা! এ তো দেখি মহা বিপদে পরলাম! শেষমেশ না চরিএ নিয়া টানা হেঁছরা লেগে যায়। এই মেয়ের যেই মুখ খোড়া, এর কপালে যেই ছেলে জুটবে তার জীবন শেষ। আর দোয়া দিলে যদি কাজে লেগে যায় তবে ওই লোক এর অভিশাপ এ আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে। নাহ! আর ভাললাগে না। এই দরবার ব্যবসা বন্ধ করে যত তারাতারি সম্ভব চলে যেতে হবে। বিয়ের পর বউ নিয়ে তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। ভাবতেছি বউ নিয়া বিদেশ ঘুরে আসবো। আমারও অবশ্য অনেক দিনের সখ বিদেশ দেখার।
মা জননী আপনার ভুল হইতেছে। আমি আপনাকে অত কাছে আসতে বলি নাই। আপনি আমার পায়ে’র কাছে এসে বসেন। বুঝায়া বলবেন তো। আমি তো কি না কি ভাবছি। হ আইছি। ফু………. ফু………. ফু! উহু এইটা কি করেন! ফু দিয়া দিলাম। ফু দিলে কি কাজ হইবো? হবে হবে। এইটা হলো উড়ি বাবা’র রোমান্টিক ফু। কাজ না হয়ে উপায় নাই। উড়ি বাবা’র এই রোমান্টিক ফু এ বহু মেয়ে মানুষ এর প্রেম ভালবাসা হইছে। আপনারও হবে। ভরসা রাখেন উড়ি বাবা’র উপর।
মানুষ আসলেই বোকা। আমরা আসলে তাদেরকেই বোকা বলি যারা সরল মনে মানুষকে বিশ্বাস করে। উড়ি বাবা’র কাছে আসে সমস্যার সমাধান করতে। কিন্তু সহজ জিনিস বোঝেনা উড়ি বাবা কেনও পৃথিবীর কারও কোন ক্ষমতা নাই সমস্যার সমাধান করার। যা কিছু হয় ওই ওপরআলার ইশারায়। কারও সমাধান হয় দূত কারও হয় দেরিতে। আবার কারো হয়ও না। যাদের সমাধান হয় তারা ঢোল পিটায় উড়ি বাবা’র উছিলায় তাদের সমস্যার সমাধান হইছে আর বাকিরা তাদের সমস্যা নিয়ে দলে দলে ছুঁটে আসে।
লোক মুখে শুনতে পারলাম এক লোক না কি দরবার থেকে বাড়িতে যাবার সময় নারিকেল গাছতলা দিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ না কি তার মাথার উপর বিশাল বড় এক নারিকেল এসে পরলো। উড়ি বাবা’র দরবার থেকে বাড়ি ফেরায় না কি তার কোন ক্ষতি হয় নাই। এ নিয়ে সারা এলাকায় বেশ হইচই। পরে হারুন কে দিয়া খবর নিয়ে জানতে পারলাম তার মাথায় আসলে নারিকেল পরে নাই। নারিকেল গাছের পাশেই ছিল গাব গাছ। তার মাতায় পরছিলো গাব, নারিকেল না। মানুষ তিল হলে তাকে তাল বানায়। ঘটনাটা এমনই। এমন দুই একটা ঘটনা রোজই হয়। এই এলাকায় আমার মত বেশ কিছু ভন্ড আছে। যারা বর্তমানে দরবার এর উছিলায় কিছু করে খাইতেছে। মাঝে মাঝে কানে আসে তারা না কি উড়ি বাবা’র নাম ভাঙ্গিয়ে বেশ কিছু মানুষ এর কাছ থেকে টাকা পয়সা নিছে। আফজাল কিছু দিন আগে নারী সংক্রান্ত জটিলতায় ভূগছে। রাত হলেই দরবারে নারী পুরুষ এর অবাধ মেলামেশা চলতেছে যেটা মোটেও আমার পছন্দ না। কিন্তু এ বেপারে কিছু বলা যাবে না। আমার কাজ টাকা পয়সা কামানো। পাপা নিবারণ করা না। কে কি করলে তা দেখে আমার কাজ নাই। আমি ব্যবসা করতে আসছি। ব্যবসা করবো, একটা সময় চলে যাবও।
দেখতে দেখতে সময় প্রায় শেষের দিকে চলে আসতেছে। ভেজালটা করছে রতন। ছয় মাস পর উড়ি বাবা উড়বে এমন বিশ্বাস এ লোকজন দিন গোনা শুরু করে দিছে। ছয় মাস শেষ হতে হাতে আছে আর মাএ তিন দিন। সময় যত বারতেছে চিন্তাও তত বারতেছে। আমি তো জীবনে কোন দিন উড়ি নাই। এখন উড়ি কি করে!
নাহ! চিন্তায় আর ঘুম আসতেছে না। দরবারে হাজার হাজার মানুষ। চাইলেও পালানোর কোন রাস্তা নাই। আবার না উড়েও কোনও উপায় নাই। মাথাটা পুরাটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কি করা যায় এখন! উড়ি বাবা উড়বে আকাশে, এমন কোন বুদ্ধি কি কারো কাছে আছে? রতন জরুরী কথা আছে। জী উড়ি বাবা, বলেন? হাতে আর দু’দিন মাএ সময় আছে। যা করার এর মাঝেই করতে হবে। কিন্তু উড়ি বাবা, আমি তো উড়ার কোনও বুদ্ধি পাইতেছি না। পালানোরও কোনও রাস্তা নাই। দরবারে হাজার হাজার মানুষ। এতো মানুষের মধ্যে কেমনে কি করবেন?
চিন্তার বিষয়। তবে উপায় একটা আছে। তুমি কাল সকাল থেকে আশেপাশের সব এলাকায় মাইকিং করবা। মাইকিং এ বলা হবে উড়ি বাবা আগামীকাল সকালে উড়বে তাই সেই আনন্দে সকল কে আজ রাতে দরবারে দাওয়াত। উড়ি বাবা উড়ার আগে সকলকে রাতের খাবার খাওয়াবেন। দাওয়াতটা ঠিক মত দিবা। কোন একটা লোক যেন বাদ না পড়ে। আর হ্যা, খাওয়া দাওয়ার বেপারটা বার বার বলবা। যাতে সবাই ভাল ভাবে শুনতে পায়। জী উড়ি বাবা তাই হবে। আফজাল আর হারুন কে বলবা সব কিছু যেন ঠিক করে রাখে। দরবারে গরু ছাগল যা থাকবে সব জবেহ দিবা। দরবারের শেষ খাবারটা না খেলেই না। জী উড়ি বাবা। বিরিয়ানি রান্না করার ব্যবস্থা করবা। মানুষজন বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করে। উড়ার আগে সবাই কে পেট ভরায়া খাওয়া রেখে যেতে চাই। জী তাই করবো উড়ি বাবা।
রতন মাইকিং করেছে। দরবারে বিকাল থেকে রান্নার আয়োজন চলতেছে। পাঁচটা গরু আট’টা ছাগল জবেহ করা হইছে। যে যার মত খাবার খাবে। কোন সমস্যা নাই। বাবুর্চিদের দোম ফেলার কোন সময় আজ নাই। হাজার হাজার মানুষ এর আগমন হইতেছে। আমরা মানুষ বিনামূল্যে দিলে আলকাতরাও খাই আর বিরিয়ানি খাবও না তা তো হতে পারে না। তাছাড়া সকাল হলেই উড়ি বাবা উড়বে সেই আনন্দে দুই প্লেট বিরিয়ানি এমনিতেই বেশি খাওয়া যেতে পারে। চেয়ারম্যান সাহেব এর আগমন ঘটলো। আজ তাকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে।
উড়ি বাব, আমি যে কি পরিমান খুশি তা বোঝাতো পারবো না। এতো খুশি কেন রে? কি যে বলেন না উড়ি বাবা! আপনি না হয় এর আগেও উড়েছেন। আমরা তো কোন দিন কাউকে উড়তে দেখি নাই। চোখের সামনে উড়ি বাবা উড়বে তাই আনন্দের সীমা নাই। হবে হবে সব হবে। এই উড়ি বাবা’র উপর ভরসা রাখ। এখন যা, বাহিরে রান্নাবান্না চলতেছে। যেএ দেখ কোন সমস্যা আছে কি না। জী উড়ি বাবা আমি বরং তাই করি।
আমার এখন খোশগল্প করার মত সময় নাই। মাথার ভিতর দুনিয়ার চিন্তা। এতো দিন ঠিকঠাক মত সব চলছে। এখন ঠিক মত উড়াল দিতে পারলেই হয়। আর না দিতে পারলে এইখানেই পাবলিক এর হাতে মার খেয়ে সারাজীবন এর জন্য পৃথিবী থেকে উড়াল দিতে হবে। দরবারের ঘরের ভিতর হাঁটাহাঁটি করতেছি। সময় যত যাচ্ছে চিন্তা তত বারতেছে। সমান্য একটা ভুল হলেই জীবন শেষ।
রতন এইটা ধরও। এই ওষুধটা খাবার এর পাতিলে ঢেলে দিবা। মনে করে প্রত্যেকটা পাতিলের মধ্যে দিবা। আর সাবধান কোন ক্রম এই যেন বাবুর্চিরা টের না পায়। জী উড়ি বাবা। রতন খুব সাবধান। কোন একটা ভুল করা যাবে না। একটা সামান্য ভুল হলে মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না। উড়ি বাবা কোন চিন্তা করবেন না। যা করার আমি সাবধানেই করবো। আর শোনও কাজটা তুমি নিজের হাতে করবা। অন্য কাউকে দিয়া করাবা না। জী নিজ হাতেই করবো। হারুন কে বলছো গাড়িটা দরবারের পেছনে রাখতে?
জী উড়ি বাবা তাও বলা হইছে। গাড়ি ড্রাইভার আমার অনেক পরিচিত। আপনে টেনশন নিয়েন না। শোনও রতন যেই খাবারটা রান্না হইতেছে এই খাবারটা আমারা কেউ খাব না। যদি কেউ জিজ্ঞেস করে কেন খাইতেছো না তবে বলবা উড়ি বাবা কাল সকলে উড়বেন তাই আমরা আজ উপাস থাকবো। উড়ি বাবা না উড়া পর্যন্ত তার খাদেমরা কোন দানাপানি মুখে দিবে না। বুঝাইতে পারছি? জী সব বুঝতে পারছি উড়ি বাবা।হুম যাও এখন সব ঠিকঠাক মত করও। আমি এ দিকটা গোছাই।
রাতের খাবার দেয়া হইছে। সবাই পেট ভরে বিরিয়ানি খাইতেছে। আমি পরিদর্শন করতেছি। কারন ভাল করে দেখা উচিত কেউ যেনও খাবার খাওয়া থেকে বাদ না পরে। হাজার হাজার মানুষ এর খাবার দাবার এর ব্যবস্থা করতে পারাটা বিশাল বেপার। সবাই বেশ খুশি। বিরিয়ানি না কি খেতে খুব ভাল হইছে। ইচ্ছে করতেছে খাইতে কিন্তু এই বিরিয়ানি খেলে আমরা আর উড়া লাগবে না।
সময় এখন মধ্যরাত। আমি আর আমার খাদেমরা ছাড়া যে যার জায়গায় ঘুমিয়ে পরছে। হাজার হাজার মানুষ ঘুমাচ্ছে। কেউ কেউ আবার খাবার এর প্লেটের পাশেই ঘুমিয়ে পরছে। ঘুমের ওষুধ এর একশন থাকতে থাকতেই উড়াল দিতে হবে। এ জায়গাটার উপর কেমন যেন একটা মায়া পড়ে গেছে। যেতে মন চাইতেছে না। এরা সহজ সরল মানুষ। আর সহজ সরল মানুষের ভালবাসা উপেক্ষা করাটা খুবই কষ্টের। কিন্তু কিছু করার নাই। উড়ি বাবা উড়বে এইটাই নিয়ম। কারন উড়ি বাবা না উড়লে তার নাম নিশ্চয়ই উড়ি বাব হতো না। নামের সাথে কাজের মিল আছে বলেই আমি উড়ি বাবা।
অবশেষে আমি সফল ভাবে আমার খাদেমদের নিয়া উড়াল দিলাম। রাতের অন্ধকারে কাক পখিও টের পেলনা। এইটা ভেবেই কষ্ট লাগতেছে উড়ি বাবা উড়ে গেলো অথচ কেউ দেখলো না। তবে মনে খুব ইচ্ছা যদি কোন দিন আল্লাহতালা সত্যিই উড়ার ক্ষমতা দেন তবে এই এলাকায় আবার আসবো। এসে সবাই কে উড়াল দেখাবো। কারন তাদের কাছে আমি ঋণী। তাদের কারনে উড়ি বাবা আজ কোটিপতি। তাদের কারনে আমার খাদেমরা আজ লক্ষপতি।
সাপ্তাখানিক গা ঢাকা দিতে হবে এখানে। রতন সহ বাকিদের বলা হইছে যে যার মত আগের রুপে ফিরে যেতে। কিছু জিনিসপত্র বেচা বাদ আছে। ওগুলা বিক্রি হলেই টাকা পয়সা ভাগাভাগি করে যে যার বাড়িতে চলে যাব। বউ এর জন্য মনটা খুব অস্থির লাগতেছে। অনেক দিন তারে দেখি না। এখন আর কষ্টের সংসারে অভাব নাই। মজিবর মিয়ার টাকাটা গিয়েই দিয়ে দিব। বেচারার অবস্থা বেশি ভাল না। ভাবতেছি তারে কিছু টাকা ধার দিব। লোকটা মাঝে মাঝে খারাপ ব্যবহার করলেও অনেক সময় অনেক উপকার করছে।
আজ রাতটাই এখানে থাকবে। ইতিমধ্যে টাকা পয়সা ভাগ করে ফেলছি। কাল সকালেই বাড়ি যাব। রতন, হারুন, আফজাল ওরা ঘুমিয়ে গেলেও আমার আর ঘুম আসতেছে না। বাড়ির মায়া অনেক শক্ত মায়া। একবার মন ছুঁটে গেলে বাড়ির দিকে তখন আর কিছুই ভাললাগে না। চোখটা বন্ধ করে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম মনে পড়ছেনা। হঠাৎ হুরমুড় আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি রতন, হারুন, আর আফজাল এর হাতে হ্যান্ডক্যাপ লাগানো। পাশেই বেশ কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। আমার আর বুঝতে কিছু বাকি রইলো না।
জেলখানায় বসে বসে চিন্তা করতেছি ভুলটা কোথায় করলাম! যে জায়গায় লুকিয়ে ছিলাম সে জায়গাটা আমি ছাড়া আর কেউ চেনে না। পুলিশ জানলো কি করে যে আমি ওই বাড়িতেই লুকিয়ে আছি! হঠাৎ মনে পড়লো বউ এর সাথে রাগ করে মাঝে মাঝেই ওখানে পরে থাকতাম। রাগ ভাঙ্গিয়ে বউ বাড়িতে নিয়ে যেত। একমাত বউই ওই বাড়ি চিনতো। তাহলে কি বউই পুলিশে খবর দিছে? কি সর্বনাশ! বউ হইয়া সে আমার এতো বড় সর্বনাশ করলো! জেলখানা থেকে ছাঁড়া পেলেই ডিভোর্স দিয়া দিবে। এমন ডাইনী বউ রেখে লাভ নাই। বউ এর জন্য আমি এতো কিছু করলাম আর বউ শেষমেশ আমারে জেলখানায় ঠুকায়া দিলো! গত ছয় মাস হাজার হাজার মানুষ কে ভরসা দিলাম। এখন আমারে কে দিবে ভরসা? মাথা ওই দিকে ঘুরায়া রাখছো কেন? আমার দিকে তাকাও!
তোমার দিকে তাকানোর কোন ইচ্ছা নাই আমার। আমি জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন। হ্যে, আমিই পুলিশ এ খবর দিয়া তোমাকে ধরায়া দিছি। mচুপ! চুপ! স্বামীরে জেলের ভাত খাওয়াইতেছো! তোমার মত বউ আমার দরকার নাই। আমি সব টাকা পয়সা, জিনিসপত্র তুমি যা যা দিছিলা সব পুলিশ এর হাতে দিয়ে দিছি। এমন কি তোমার দেয়া অলংকার, ফ্রিজ, টিভি সব কিছু। ভালও, খুব ভাল কাজ করছো। দেয়ার মত আর কিছু পাওনাই তাই আমারে শুদ্ধা পুলিশের হাতে দিয়া দিছো। হ্যে। একটু এদিকে তাকাও! নাহ। তাকাও না একটু। তোমার হাতটা একটু দাও। এইটা জেলখানা! এইটা বাসাবাড়ি না। এইখানেও হাত ধরাধরি করতে চাও! তোমার লজ্জা শরমও দেখি আগের থেকে কমে গেছে। দাওনা হাতটা! হুম দিলাম।
তুমি যখন এইবার গেলা তখন তিন চারটা মাস তোমার কোন খোঁজ খবর ছিলো না। জানতে ইচ্ছে করে নাই কি ভাবে কি খেয়ে আমি দিন পার করছি? ঘরে সেলাই মেশিনটা ছাড়া কোন কিছুই ছিলো না। মানুষের জামা কাপর সেলাই করে অনেক কষ্টে দিন গুলা পার করছি আমি। তুমি কোন দিন বলতে পারবা না আমি তোমার কাছে দু’বেলা ভাত ছাড়া অন্য কোন কিছু কখনও চাইছি। এমন কি কখনও মোটা কাপড়ও চাই নাই। শুধু একটা বিশ্বাস নিয়ে তোমার সংসারে আসছিলাম যে মানুষটা এক মুঠ খাবার যোগাড় করলে আগে আমার মুখে তুলে দিবে তারপর সে নিজে খাবে। আমি হারাম এর টাকায় খেতে চাই না। তুমি সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফেরও আমি কোন দিন জানতে চাইবো না কত টাকা কামাই করে ফিরছো। যদি কোন দিন খাবার নাও আনতে পারও আমি না খেয়েই তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাব। তাও আমার কোন কষ্ট থাকবে না। আমি শুধু এতো টুকু চাই আমার স্বামী সত ভাবে নিজে পরিশ্রম করে টাকা কামাবে। কত টাকা কামাই করলো তা আমার কাছে বড় বিষয় না। আমরা তোমার জামিন এর জন্য কোন উকিল নিবো না। তুমি দোষ করছো। আমি চাই তোমার শাস্তি হোক। আমি চাই আমার স্বামী তার দোষের শাস্তি ভোগ করে পবিত্র হয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে। আমার আর কিছু বলার নাই।
আমার বলার মত কোন কথা ছিলো না। মাথা নিচু করে বউ এর হাতে হাত রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। চোখ দু’টো দিয়ে অঝরে পানি পরতে ছিলো। খুব ইচ্ছা করতে ছিলো চিৎকার করে কিছুখন কাঁদতে। কিন্তু কেন জানি মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছিল না। বিশ্বাস করেন সত্যিই চিৎকার করে খুব জোরে কাঁদতে ইচ্ছা করতে ছিলো। বউটা যখন হাতটা ছেঁড়ে চলে যাচ্ছিলো তখন মনে হইতে ছিলো কি যেন একটা বুক এর ভিতরটা ছিঁড়ে বের হয়ে চলে যাচ্ছে।
জীবনে আজ প্রথম বুঝলাম আমার বউ আমাকে কতটা ভালবাসে। আর তার ভালবাসার দাম দিতে গিয়ে আদালতে আমি আমার সব দোষ স্বীকার করলাম। যেখানে যত টাকা পয়সা ছিল সব পুলিশের হাতে তুলে দিলাম। আমার সাড়ে তিন বছর এর জেল হইলো। আজ একেকটা দিন আমার কাছে মনে হইতেছে একেকটা বছর। কারন আমি আমার বউ কে ভালবেসে ফেলছি। আর ভালবাসায় অপেক্ষা করার সময়টা অনেক লম্বা মনে হয়। রোজ এক একটা দিন গুনে পার করতে হয়। সারারাত ঘুম আসে না। বউ এর কথা খুব মনে পড়ে আর চোখ দিয়ে পানি আসে। মাঝে মাঝে বউ দেখা করতে আসে খাবার নিয়া। আমি মুখ দিয়া কিছু বলতে পারি না। শুধু কাঁদি। বউ চলে গেলে আমি খাবার গুলা খুলে দেখি কিন্তু খেতে পারি না। এক নলা ভাত গিলতে কয়েক ঢোক পানি খেতে হয়। খেতে বসেও শান্তি পাই না। চোখ দিয়া শুধু পানিই ঝরে। না জানি কত কষ্ট করে খাবার গুলা যোগার করে আনছে। না জানি এই খাবার গুলা বউ’এর কত রক্ত পানি করা দামে কেনা। আগে এসব সব বুঝতাম না। এখন বুঝি। আর এখন বুঝি বলেই চোখ দিয়া শুধু পানি আসে।
আমার কাজ কর্মে সন্তুষ্ট হওয়ায় আমার ছয় মাস জেলহাজত কমিয়ে দেয়া হইছে। আজ জেল থেকে বের হব। মনের ভিতরে কেমন যেন একটা শান্তি পাইতেছি। জেলখানার গেট’টা মাথা নিচু করে পার হতেই কে যেন খুব শক্ত করে আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। বুঝতে পারলাম এ আমার বউ ছাড়া আর কেউ না। আজ আমিও কাঁদবো। তবে চুপ করে না। আজ আমি চিৎকার করে কেঁদে বউ কে বুঝিয়ে দিব আমিও তাকে অনেক ভালবাসি।
আমি রোজ দোকানে দোকানে ঘুরে কাপড় এর অর্ডার নেই আর বউ সে গুলা সেলাই করে দেয়। বাড়িতে গিয়েও আমি অবশ্য তাকে সেলাই কাজে সাহায্য করি। একা মানুষতো তাই সব করতে পারে না। সেলাই হয়ে গেলে কাপড় গুলা সাইকেল এর পেছনে বেঁধে দোকানে পৌঁছে দেই। ব্যবসাটা খারাপ না। তবে কিছু পুঁজি খাটাতে পারলে ভাল হতো। যহেতু টাকা পয়সা নাই তাই আসতে আসতে সব কিছু করা লাগে। আমাদের দুই জনের সংসার এখন অনেক সুখের। গরমের মধ্যে বাহির থেকে আসলে বউ শাড়ির আঁচল দিয়া কপালের ঘাম মুছে দেয়। লেবু পানির সরবত খেতে দেয়। আমার সারা দিনের কষ্ট আর কষ্ট মনে হয় না। তখন ইচ্ছে করে আবার রোদে ঘুরে কাজ করতে, ইচ্ছে করে আবার বউ এর নরম হাতটা কপালে নিতে। যদিও এখনও সংসারে অভাব আছে কিন্তু তা আর চোখে পড়ে না। করন এখন সংসারে ভালবাসা আছে। আর ভালবাসা যে সংসারে থাকে সেই সংসারে কোন কিছু না থাকার অভাব থাকে না।
আমার কিছু কথা: সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে। কথাটার সাথে কম বেশি সবাই পরিচিত। পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়ানো পুরুষ মানুষ গুলা অসীম ক্ষমতাবান হলেও এই ক্ষমতাবান পুরুষ মানুষ গুলা কোন এক নারী’র হাতের মুঠোয় বন্দী। আমার চোখে নারী’কে সৃষ্টিই করা হয়েছে এই অসীম ক্ষমতাবান পুরুষ মানুষ গুলাকে সঠিক পথে নিয়ন্ত্রণ করতে। একজন নারী চাইলেই পারে কোন এক পুরুষ কে পৃথিবীর স্বর্ন শিখরে পৌঁছে দিতে। আবার সেই নারী চাইলেই পারে কোন এক পুরুষ কে পৃথিবী থেকে নিঃচিহ্ন করে দিতে। আমি আমার প্রতিটা গল্পেই চেষ্টা করি আপনাদের ভাল কিছু শেখাতে। বরাবরের মত এই গল্পেও তাই করেছি। জানি না কতটুকু পেরেছি।
জীবনটা আমার কাছে পজেটিভ। কোন এক নেগেটিভ গল্প থেকে পজেটিভ কিছু বের করে আনার মাঝেই আমি আমার লিখার স্বার্থকতা খুঁজি। কেউ একজন আমার কাছে জানতে চেয়ে ছিল জীবনে বড় হতে হলে কিসের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি? আমি উওরে বলেছিলাম আপনি একটা বউ জোগাড় করেন। যদি সে ভাল হয় তবে আপনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। যারা এই গল্পের সব গুলা পর্ব পড়েন নাই তারা পড়ে নিবেন। আর যারা পড়েছেন তারা কমেন্ট করে জানাবেন আপনাদের মন্তব্য।
যাবার আগে একটা কথা বলে যাই। আমি ভালবাসায় বিশ্বাসী। ভালবাসা আমার চোখে সুন্দর। কে দোষ করলো আর কে করলো না আমি তাতে মাথা ঘামাই না। স্বর্গ থেকে নেমে আসা ভালবাসাকে আমি স্বর্গেই নিয়ে যাব। আপনাদের প্রতিটা মানুষ এর চোখে আমি ভালবাসাকে অনেক সুন্দর রুপে দেখতে চাই। আমি চাই আপনাদের প্রতিটা দিন কাটুক ভালবাসায়। তবেই আমি পাব আমার লিখার স্বার্থকতা।