ভালোবাসা

ভালোবাসা

“সুমি, অ সুমি…
ঘুমাইসনা মা। আরেকটু জেগে থাক।”
আনোয়ারা বাচ্চা মেয়েটার গায়ে হাত দিয়ে জাগিয়ে রাখতে চায়।
“না, মা ঘুম পায়…”
একরাশ ঘুম জড়ানো চোখে সুমি জবাব দেয়।
“তোর বাবা আসে নাই, দশটা বেজে গেছে কবেই! চলনা, রাস্তায় গিয়ে দেখে আসি….”

আনোয়ারা’র মন মানছেনা। মানুষটা দশটার ভেতর চলে আসে, আর এখন রাত দশটা দশ! বিটিভি তে ইংরেজি খবর চলছে, নাটক শেষ হয়েছে কতক্ষণ হলো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ির দিকে চেয়ে থাকলেও ভালো লাগবে আনু’র। সারাদিন দোকানদারি করে রাত দশটায় আসেন তিনি, আজ এতো দেরি কেনো! বারবার দেয়াল ঘড়ি দেখে সে। আবার ডাকে মেয়েকে।
“মারে উঠনা…”

একা যেতে সাহসে কুলোয় না তার, ঘুটঘুটে অন্ধকার বাইরে।
গ্রামে, রাত দশটা মানে গভীর রাত! অনেকের ঘরে তো টিভিও নেই, আটটা বাজতেই খেয়ে দেয়ে ঘুম।
আনু ঘুমন্ত মেয়ে পাঁচ বছরের সুমিকে কোলে তুলে নেয়।

অন্ধকারে সাবধানে ধীরে ধীরে পা ফেলে পথ চলে সে। ঘরে শ্বাশুড়ী অঘোরে ঘুমায়, সাথে তার আরেক মেয়েকে নিয়ে।
আনু ল্যাম্পও নেয় না, কেউ দূর থেকে খেয়াল করবে বলে। একা যেতেও কেমন সংকোচ লাগে তার, তাই মেয়েকে কাঁধে তুলে নেয়। সামান্য হাঁটলেই গাড়ি চলার রাস্তা স্পষ্ট। আনু ঝোপঝাড় দেখে আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ঘুমন্ত মেয়েটা যেন হঠাৎ ই অনেক ভারি হয়ে গেলো।

আনু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি গুনে। দুই একজন কখনো নামেও, এগিয়েও আসে তাদের এই গ্রামের দিকে। কাছে আসলে আনু চিনতে পারলে জিজ্ঞেস করে,
“ভাই, তোমার বদ্দা তো এলোনা, দেখেছ?”
“ভাবী, খুব জ্যাম চলছে, পরের গাড়িতে হয়তো আছে, চিন্তা করিয়েন না। ঘরে চলে যান ভাবী, বদ্দা এসে যাবে। মেয়েকে মশা কামড়াচ্ছে।”
জবাবে বলে পরিচিত লোকটি।
“চলে যাবো ভাই, আরেকটু দেখি। তুমি যাও।”

আনু গায়ের আঁচল দিয়ে মেয়েকে ভালোভাবে ঘুরে নেয়, মশাও অনেক। কানের কাছে ভোঁ ভোঁ করছে। আর হাতের কাছে শিকার পেয়ে ইচ্ছেমত রক্ত চুষে নিচ্ছে। তাদেরই বা দোষ কি, ক্ষুদ্র বড় সবার মধ্যেই খিদে আছে।
পা বেয়ে ক’টা পিপড়াও উঠছে। আনু এক পা দিয়ে আরেক পায়ে ঢলা দেয়। আবার চারিদিক নিস্তব্ধ। শুধু ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যায়। কখনো একটা ব্যাঙও ডেকে উঠে।

বাস আসাও কমে গেছে। আনু’র ভয় হয়, স্বামী আসেনা কেন! মেয়ে এক কাঁধ থেকে আরেক কাঁধে বদল করে নেয় সে, হাত আর কাঁধ ঝিমঝিম করছে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পাও ব্যথা করছে এবার।
অনেকক্ষণ পর বাস একটা দাঁড়ায়, ঐ তো তিনি আসছেন, হাতে কিছু একটা। নিশ্চয় পলিথিনে প্যাঁচানো পাউরুটি!

“আসলেন! এতো দেরি কেনো? “ঝোপ থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে আনু।
“তুমি এখানে!”
সামান্যই অবাক হন তিনি। দেরি দেখলে বউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, ক্ষীণ সন্দেহ যে ছিলোনা তা নয়।
“আপনার দেরি দেখে চিন্তা হচ্ছিল, তাই।”
“হুম, দাও দেখি, মেয়ে আমাকে দাও। মশা কামড়ায়নি তোমাদের!”
“হুম, মশা তো আছে। দেরি হলো কেন?”
“প্রথম বাসটা ধরতে পারিনি, আর অনেক জ্যামও।”

অন্ধকারে তারা কথা বলতে বলতে ঘরে যায়। আনু ইতিমধ্যে ২ রাকাত নফল নামাজ নিয়্যত করে ফেলেছে, স্বামী সহি সালামত আসার জন্য।

মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে স্বামীর জন্য ভাত বেড়ে দেয় সে। সব গুছিয়ে স্বামীর বিছানা বালিশ ঠিক করে দিয়ে রুম থেকে বেরুয়।
“কই যাও আবার, না শুয়ে!”
“নামাজ পড়ে আসি, যা ভয় পেয়েছিলাম আপনার দেরি দেখে।”
স্বামী হাসেন। মনে মনে বলেন,
“পাগলি একটা!”
২৮.০৬.১৭

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত