মিতুদের বাড়ি ভর্তি মানুষ। সবার মাঝে একটা আতংক কাজ করতেছে। সবার ধারনা মিতু সাব্বিরের জন্য ঘরের দরজা লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
.
মিতু আমার চাচাত বোন। রাতের খাবার শেষে মিতু দরজা বন্ধ করেছে। চাচীর মনে কিছু একটা নিয়ে খটকা লাগছিল।
কারন মিতু এত সন্ধা রাতে দরজা লাগিয়ে ঘুমানোর কথা না। সেজন্যই ডেকেছিল মিতুকে। কিন্তু কোন সাড়া শব্দ মিলেনি।
তারপর চাচা ডাকলেন। তবুও মিতু সে ডাকে কোন সাড়া দেয়নি। এবার সন্দেহের জাল জটলা পাকাতে শুরু করল।
মিতু উল্টাপাল্টা কিছু করে বসেনিতো? চাচা আব্বুকে ডেকে নিলেন। মিতু আমার আব্বুকে যেমন ভয় পায় তেমন খুব মান্য করে।
আমি বাবার পেছন পেছন মিতুদের বাড়ি গেলাম। আব্বু নরম গলায় ডাকলেন, “মা মিতু, দরজাটা একটু খুলো।
দেখোনা তোমার বাবা মা চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে। তোমার বাবা মা কান্না করতেছে, দরজা খুল মা।”
না, এবারও মিতুর কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা। বাবা এবার গলার স্বর একটু কঠিন করলেন। “মিতু, দরজা খুলবি না আমরা ভেঙ্গে ফেলব?”
এই ঘর ঐ ঘর করতে করতে বাড়ি ভর্তি মানুষ জমে গেল। সিদ্ধান্ত হচ্ছে দরজা ভেঙ্গে ফেলবে। কিন্তু দরজার কাঠ লোহার মত শক্ত।
মনে হয়না সহজে ভাঙ্গা যাবে। সিটকিনি ভিতর থেকে কিভাবে ভাঙ্গা যায় সে পরিকল্পনা চলতেছে।
.
মিতু সাব্বিরকে অনেক পছন্দ করে। এটা এলাকার ছোট বড় অনেকে জানে। চাচা চাচীর কানেও এই খবর যাবে এটাই স্বাভাবিক।
মিতুকে চাচা চাচী অনেকবার বুঝিয়েছে। “তুই একটা মেয়ে মানুষ। একটা ছেলের জন্য এমন করলে মানুষ ভাল বলবেনা।
তোকেওতো বিয়ে শাদি দিতে হবে। আর যদি এমনই করিস তাহলে তোর লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে তোকে বিয়ে দিয়ে দেব।”
কে শুনে কার কথা? কারন ততদিনে অনেকেই বিষয়টা জেনে গেছে।
.
সাব্বির আমাদের একই এলাকার ছেলে। তার বাবা পৌরসভার কর বিভাগের কর্মকর্তা। সাব্বির সুদর্শনও বটে।
আমাদের একই এলাকার আরো দুই মেয়ে সাব্বিরের প্রেমে পড়েছে এটাও এলাকার সবার জানা। মিতুর সিরিয়াল তিন নাম্বারে।
সাব্বিরের কোন দোষ নেই। সে কোন মেয়ের সাথে মিশেওনা কাউকে পাত্তাও দেয়না।
তবুও যদি মেয়েরা তার জন্য দিওয়ানা হয় সেটা তার দোষ হবার কথা নয়।
.
মিতু প্রথম প্রথম সাব্বিরদের বাড়ি যেত বিভিন্ন অজুহাতে। সাব্বিরের ছোট বোনের কাছে গিয়ে বলত অমুক স্যার কি যেন পড়া দিছে?
কখনো বই আনতে যেত। তো একজনের বাড়িতে একজন গেলেতো আর কেউ বলেনা যে তুমি আমাদের বাড়ি এসোনা।
আসলে মিতুর উদ্দেশ্য ছিল সাব্বিরকে একনজর দেখা।
মিতু আমার সমবয়সী। আমার কাছে সবকিছুই বলত। কখনো দুষ্টুমি করে বলতাম, “সাব্বিরের জন্য অনেক মেয়েই দিওয়ানা।
তুই বরং আমার সাথে প্রেম কর।”
বলত, “মনে ধরেছে সাব্বিরকে, তোর সাথে প্রেম করব কোন দুঃখে?”
সাব্বিরকে মিতু চিঠিও দিয়েছিল। সাব্বিরের ছোটবোনের সাথে দেখা করতে গিয়ে সাব্বিরের বইয়ের ভিতর চিঠি রেখে আসছে।
শেষে ধরা পড়েছে সাব্বিরের বোনের কাছে। সাব্বিরের বোন তো মিতুর হাতের লিখা চিনে।
সে নিয়ে মিতুর সাথে বেশ কিছুদিন সাব্বিরের বোন কথাও বলেনি। এমনকি সাব্বিরের বোন বিষয়টা আরো দুই তিন মেয়ের কাছে বিষয়টা জানিয়েছে।
মেয়েদের পেটের ভিতর কথা হজম হয়না। আর তাই এলাকায় ঘটনা ছড়াতেও বেশী সময় লাগেনি।
চাচা চাচীও ভাবতেছে মিতুকে বিয়ে দিয়ে দিবে ভাল ছেলে খুঁজে পেলে। নয়তো ঘটনা দিন দিন বৃহৎ আঁকার ধারন করবে।
.
আগামীকাল সাব্বিরের বিয়ে, আজ গায়ে হলুদ। সাব্বিরদের বাড়িতে স্পিকারে উচ্চ সাউন্ডে ডিজে গান বাজতেছে।
এলাকার ছোট ছেলে মেয়েরা নেচে গেয়ে আনন্দ করতেছে। আর মিতু এদিকে দরজা লাগিয়ে কোন অঘটনের জন্ম দিচ্ছে কে জানে?
.
ভাঙ্গার জন্য দরজায় খুন্তি দিয়ে আঘাত করতেই মিতু দরজা খুলে যেন আকাশ থেকে পড়ল। “কি করছেন আপনারা? দরজা ভাঙ্গছেন কেন?”
আমরা সবাই আরো বেশী অবাক হয়েছি। চাচী মিতুকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে কেঁদে বলতেছেন, “কি করছিলি মা তুই এতক্ষন?
তুই দরজা খুলিসনি কেন?”
মিতু কোন কথা বলছেনা। মনে হচ্ছে সে কিছু শুনতেই পায়নি। চাচা একটু রাগ দেখাচ্ছেন। “আমার মান সম্মান আর কত ডুবাবি?
তুই না হয়ে আমার একটা ছেলে হলে আজ এমন করতনা।”
আব্বু কিছু না বলে সেখান থেকে আমাদের বাড়ি চলে এলেন। আমি চাচাকে শান্ত হতে বললাম। লোকজন দুয়েক কথা বলে বলে যার যার বাড়ি যাচ্ছে।
একটা লজ্জাকর পরিস্থিতী। আমি মিতুর খাটে বসলাম। চাচী রুমের মেঝেতে বসে পড়লেন। আমি মিতুকে প্রশ্ন করতেছি,
-কেন এমন করলি মিতু?
মিতু কোন কথা বলছেনা। এবার আমারও খুব রাগ হচ্ছে। একটু রেগে গিয়ে আবার বললাম,
-কি ব্যাপার কথা বলছিস না কেন?
মিতু দুই হাতে দুই কান থেকে তুলার দলা বের করে আনল। এবার বলতে লাগল,
-বল এবার কি বলবি? এতক্ষন কিছু শুনিনি।
এবার রাগে আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা।
-তার মানে তুই এতক্ষন কানে তুলা দিয়ে ছিলি??
-হ্যাঁ, সাব্বিরের বিয়ে। এমনিতেই মনটা খারাপ তার উপর এই ডিজে গানগুলো গায়ে আগুল দিচ্ছিল। তাই কানে তুলা দিয়ে গল্পের বই পড়ছিলাম।
কে ডাকছে আমি জানিনা। কিন্তু হঠাৎ দরজার এমন কাঁপুনি দেখে ভয় পেয়ে দরজা খুলে আম্মুকে ডাকতে চেয়েছিলাম।
তুই বল শ্রাবণ, আমি কি ভুল করেছি? আমারতো কষ্ট হচ্ছিল, তাইনা? সেজন্যইতো একটু নীরব থাকতে চেয়েছিলাম।
– না, তুই ভুল করিসনি। খুব ভাল কাজ করেছিস।
বলে মিতুর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
.
আমাদের বাড়ি আসার পথে দেখি আব্বু আর চাচা দাড়িয়ে মিতুর বিয়ের কথা বলতেছে। কিন্তু শ্রাবণ নামটা বলে কি যেন বলছিল।
আমাকে দেখে কথা থেমে গেছে। আব্বু শুধু বলল, “বাইরে থাকিসনা, শুয়ে পড়।”
মিতুর বিয়ের কথা বলার সময় আমার নাম বলবে কেন? নাকি বলতে চেয়েছে শ্রাবণের মত কোন ছেলে পেলে মিতুকে বিয়ে দিবে?
কি সব ভাবতেছি আমি। আর যাই হোক আমার সাথে মিতুর বিয়ের কথা না বললেই হল। মিতুকে ভয় পাই। পাগলি টাইপ মেয়ে,
কখন কি করে বসে কে জানে?
সাব্বিরদের বাড়ি থেকে গান ভেসে আসতেছে, …………