ছ্যাপ মারার ভালোবাসা

ছ্যাপ মারার ভালোবাসা

কিরে সাঈদ! নামাজ পড়বিনা??

-তুমি যাও মামা।আমি আসতেছি।
:তাড়াতাড়ি আয়। সময় বেশি নাই।
-হুম। অনেকদিন পর গ্রামে আসলাম। একটু মন ভরে গ্রামের বাতাস নিয়েনি।

মামা মুচকি হেসে মাসজিদে ঢুকে গেল।আর আমি দাঁড়িয়ে, গ্রামের অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করতে লাগলাম। আমাদের মাহমুদ নগর গ্রামটি খুবই ছোট্ট, সুন্দর, ও সবুজে ভরা। স্রষ্টার এক অপূর্ব সৃষ্টি। চারদিকে সবুজ-শ্যামল গাছ,দু’চোখ বিস্তৃত “ধানক্ষেত”, এর মাঝে আঁকাবাঁকা মাটির রাস্তা। যেন, কোন শিল্পীর আঁকা একটি শিল্প।পাশে ছোট্ট প্রাইমারী স্কুল।আর এর সামনেই মাসজিদ। মাসজিদে প্রবেশ করে যোহরের সুন্নতে দাঁড়িয়ে গেলাম। জানালাটা পাশে ছিলো,তাই মৃদু বাতাস আসছিলো। অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করলাম।আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাটা বেড়ে গেল,তাই নামাজে পাচ্ছিলাম, অন্যরকম এক আধ্যাত্মিক শান্তি। হঠাৎ জানালার পাশে ৬ /৭বছরের একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো। বাহিরে তাকিয়ে,কি যেন দেখার চেষ্টা করছে। আর ছটফট করতে লাগলো,মনে হলো কিসের যেন অপেক্ষা করছে।

নামাজে ধ্যান দেয়ার চেষ্টা করলাম,কিন্তু কিছুতেই পারলাম না। ছেলেটার কর্মকাণ্ড কেমন ঠেকছিলো!! কোনমতে নামাজ শেষ করে, দেখতে লাগলাম “ছেলেটা কি করে”!?!? স্কুল ছুটির ঘণ্টা বাঁজলে,ছেলেটার চেহারায় একটা আনন্দ রেখা দেখা দিলো!!আশ্চর্য লাগলো বিষয়টা। মাসজিদের পাশ ঘেঁষে ছোট মাটির পথ দিয়ে, ছেলে-মেয়ে গুলো বাড়ির পথে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর, একটি মেয়ের গায়ে “ছ্যাপ” মেরে দৌড়ে এসে একটা পিলারের পিছনে লুকিয়ে পরলো পিচ্চিটা। রাগ হলো প্রচুর! এটা দেখার জন্যে এত্ত সুন্দর নামাজটা শেষ করলাম! ছেলেটাকে ডাক দিলাম

-এই পিচ্ছি! এদিক আয়। মাসজিদে শয়তানি করতে আসোছ? একটু চমকে গিয়ে বললো;
:কেন?আমি কি করলাম?
-কি করলি মানি!? মাসজিদে আইসা বাহিরের মানুষকে ছ্যাপ মারতেছোস কেন??
:এমনেই একটু দুষ্টামি করলাম আরকি। কেন জানি,আমার মাঝে রহস্য খুঁজার ভূত চেপে বসলো।বললাম ;
-এত্তগুলা ছেলে মেয়ে থাকতে ঐ মেয়েটাকে কেন মারলি?? কিছুটা ভয় পেয়ে চুপ করে রইলো ছেলেটা। গলাটা নরম করে বললাম,

-সত্যি করে বলতো কাহিনীটা কি??
:আসলে ভাইয়া, মাইয়াটারে আমার অনেক ভালো লাগে।
-কি!!!!!ভাভাভাভাভাভাভা!!কি বললি? আবার বল!কি লাগে? শরীরের রক্ত চলাচল কয়েকগুন বেড়ে, পেশার হাই হয়ে গেল মনে হয়!! আমার প্রশ্ন শুনে আর অবস্থা দেকে, অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ;

:মাইটারে পছন্দ করি আরকি।
-ছ্যাপ মেরে কেউ ভালোবাসা প্রকাশ করে??!! খাচ্চোর।
:ঐটা আপনি বুঝবেন না ভাইয়া।
– ঐবেটা! বুঝবোনা মানি!!? তোর কি আমাকে বাবা আদম আ.এর যুগের মানুষ মনে হয়।
: আসলে,খেলার সময় কিছু হইলেই আমি ওরে ছ্যাপ মারতাম আর “ওয়” ও আমারে মারতো। এর থেইকাইতো ভালোলাগা শুরু। বড় বড় চোখ করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম;

– এটা আবার কেমন প্রেম!! এভাবেও কাউর প্রেম হয়!! আচ্ছা তুই মেয়েকে পছন্দ করিস, তাই ছ্যাপ দিলি। কিন্তু মেয়েটা কিছু বললোনা কেন?
: “ওয়” ও মনে আমারে ভালোবাসে,তাই।

এবার রক্ত চলাচল আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেল।মনে হল “হ্যার্ট-এটাক” মাসজিদের বারান্দায় এসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যেকোন মুহূর্তে আমার উপর এসে পরবে। কোনমতে নিজেকে শান্ত করে, ছেলেটার কপালের সাথে নিজের কপালকে জোড়ে একটা “ঘঁষা” দিলাম। পিচ্চিটা বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো;

:আপনার মনে হয় কোন “গার্লফ্রেন্ড” নাই।
-কি পাজী পোলারে বাবা! নাক টিপ দিলে দুধ পড়ে। তুই কি বুঝিস গার্লফ্রেন্ডের!! উঠ এখান থেকে, শয়তান পোলা! ভাগ!

আমার আকস্মিক রাগ দেখে ছেলেটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।আর মনে মনে কি জানি বলতে বলতে উঠে গেল। একরাশি হতাশা নিয়ে নামাজের অপেক্ষায় রইলাম আর ভাবলাম : ২২টি বসন্ত কেটে গেল, এখনো ছ্যাপ মারার মতও কাউকে পেলাম না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত