আকাশের উদ্দেশ্য যে ভালো নয়, সেটা তার গতিবিধি দেখলেই বোঝা যায় স্পষ্ট। পাইপ বেয়ে চুপচাপ ছাদে উঠে এলো। নীলার শাড়ির আঁচল ধরে মৃদু টান দিতেই কার যেন কাশির শব্দে প্রান কেঁপে উঠলো। ধরা খেলে জামিন নেই আর। দরজার ওপাশ দিয়ে কেউ চলে গেল। যাক বাঁচা গেল। নীলার শাড়ি ধরে টেনে শাড়িটা খুলে হাতে নিয়ে আসলো। লজ্জা’ও করছে খুব, তবুও নিরুপায়!
( এই যে, আপনাকেই বলছি, পুরোটা না পড়েই কতকিছু ভেবে ফেললেন, লজ্জা হওয়া উচিত। আমি বলছি নীলার শাড়ি, নীলার পরনে তা বলিনি, ছাদে দড়ির সাথে ক্লিপ মেরে শুকোতে দেয়া হয়েছে, আকাশ সেখান থেকেই টেনে খুলে হাতে নিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে এরকম এডভান্স ভাবতে যাবেননা বলে দিলাম।) আর লজ্জা পাবার কারণ হলো, পৃথিবীতে এতকিছু থাকতে জীবন বাজি রেখে পাইপ বেয়ে শাড়ি চুরি করতে আসা।’
এই শাড়ির মাঝে লুকিয়ে আছে আকাশের জীবন মরণের প্রশ্ন, বলতে গেলে সৃজনশীল প্রশ্ন, একটা প্রশ্নের অনেক ডালপালা। নীলা প্রথমবার আকাশের মনের ঘরে নক করতেই আকাশের মনটা লক হয়ে গিয়েছিল নীলার মনে, তারপর সামান্য কথাবার্তা ফোনে ফোনে, তারপর আকাশ কল্পনায় নীলাকে নিয়ে প্রেমের বৃন্দাবনে। এই একতরফা প্রেমের এমন ঝাল, প্রতিজ্ঞা করেছে নীলাকে না পেলে চিরকুমার থাকবে চিরকাল। ঘটনার শুরু. প্রেমহীন জীবন আর নুনহীন পান্তা একই রকম, পানসে। তবুও আশা ছাড়েনি আকাশ, কেউ হয়তো তার আশার বাসা বাইন্ধা দেবে চান্দের জোছনা দিয়া, এই ভেবে।
সেদিন আইয়ুব বাচ্চুর “ আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার উপরে পড়েছে ” গানটা শুনতে শুনতে হতাশ মনে হেটে যাচ্ছিল আকাশ। হঠাৎ আকাশের পিঠের উপর ধুম করে কিছু একটা পড়তেই আকাশ “ মা গো ” বলে গোঙ্গানি দিলো। শাকসবজির ছোকলা, পচা পটল, টমেটো, মাছের আঁইশ, মুরগির নাড়িভুঁড়ি ভর্তি একটা পলিথিন পড়ে আছে আকাশের পায়ের কাছে। আকাশ পলিথিনটা কিক মেরে দূরে সরিয়ে মনে মনে বলল, ‘ আকাশ থেকে তো ঠাডা’ও পরে, আমার বেলায় ময়লা ভরতি পলিথিন, আমার তো কপাল না ঢেউটিন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পা বাড়াতেই মৃদু একটা মিষ্টি শব্দ আকাশের কানের পর্দায় আঘাত হানলো।
কোকিল কণ্ঠে কেউ যেন বলছে “ স্যরি ভাইয়া।” সামনে পেছনে, ডানে বামে তাকিয়ে কাউকে না দেখে উপরের দিকে তাকাতেই আকাশের ভিরমি খাবার অবস্থা। অনেক কষ্টে ফাস্ট মোশনে ছুটে চলা ইমোশন স্লো মোশনে নামিয়ে এনে স্থির রইলো আকাশ। তিনতলার ব্যালকনিতে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটি কি সাধারণ কোনো মেয়ে, নাকি আসমানের পরি! মেয়েটি পুনরায় বলল, ‘ ভাইয়া, অনিচ্ছাকৃতভাবে হাত থেকে ছুটে পলিথিনটা পড়ে গেছে, স্যরি ভাইয়া।’ এই প্রথমবার আকাশের মনে হলো, পৃথিবীর সমস্ত মেয়েদের ভাই হতে কোন আপত্তি না থাকলেও, কিছুতেই এই মেয়ের ভাই হতে চায়না সে। অন্য কিছু হতে চায়।
ভাইয়া শব্দটা অতি মধুর, কিন্তু এই মেয়ের মুখে শুনতে বেদনা বিধুর! এর মুখে প্রিয় ডাক পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর মনে হবে মনে হয়। আকাশ বলল, ‘ ঠিক আছে, সমস্যা নেই, আমি প্রিয়। মেয়েটি উত্তরে বললো, ‘ধন্যবাদ প্রিয় ভাইয়া।’ মেয়েটির মুখের “ প্রিয় ভাইয়া ” শব্দটা আকাশের কলিজায় বন্যা সিডরের মতই আঘাত করে সবকিছু তছনছ করে দিলো। নিজেকে কন্ট্রোল করে আকাশ বলল, ‘ ভাইয়া নয়, শুধু প্রিয়।’ মেয়েটি উত্তরে বললো, ‘ ওকে প্রিয়, স্যরি।’
মেয়েটির মুখে “ প্রিয় ” শব্দটা শুনে অন্যরকম এক এক উত্তেজনায় শরীর কাঁপতে লাগলো আকাশের, এই মূহুর্তে আকাশের মনে হচ্ছে, শুধু তার কেন, তার চোদ্দগুষ্টির কারো ক্ষমতা নাই এরকম উত্তেজনায় নিজেকে কন্ট্রোলে রাখার। হালকার উপর ঝাপসা করে একটা ভিরমি খেয়ে পড়ে গেল আকাশ। মেয়েটি দৌড়ে নিচে নেমে এসে পানি ছিটিয়ে আকাশের জ্ঞান ফেরালো। সেখান থেকেই আকাশ আর নীলার পরিচয়।
যা-ই হোক, দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে প্রেম চলার পরে সেদিন নীলা মুখের উপর ব্রেকাপ বলে চলে গেল। এই কমাসে নীলার পেছনে সবকিছু খুইয়ে সর্বশান্ত আকাশ, তাতেও দুঃখ নাই, যদি নীলাকে পাই, এই ভেবে। তাই চুরি করে নীলার শাড়ির আঁচল কেটে নিয়ে যেতে এসেছে নিলাকে তাবিজ করে বশে আনবে ভেবে।
হঠাৎ নিচে অনেক লোকের শোরগোল শুনে আকাশ দৌড়ে নিচে নেমে এসে দেখলো, নীলাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভীষণ চমকে যায় আকাশ, এর মানে কী? একজনের কাছে জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘ মেয়েটি ময়লা ভরতি পলিথিন ফেলে বহু যুবককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করেছে তাই।’ আকাশের প্রেম পূর্ণতা পেল না, কারণ বুঝতেই পারেনি কী ছিল নীলার মনে, প্রেম নাকি ছলনা।