‘তোর ঠোঁটের নিচের তিলটা অনেক সুন্দর, মায়া করা। ইচ্ছে করে ছুয়ে দিতে।’ রাফসানের কথা শুনে মায়া ভ্রু-কুঁচকে তাকায়। পরক্ষণই মুচকি হেসে বলে….
–দোস্ত আমার কাছে একটা টাকাও নাই, বিশ্বাস কর যা ছিলো গতকাল শেষ করেছি।
-আজব আমি কি তোর কাছে টাকা চেয়েছি?
–যেভাবে পাম দিচ্ছিস তাতে যে কেউ বুঝবে তুই টাকা চাচ্ছিস। রাফসান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে….
-তুই আমায় বুঝলিনারে ছকিনা।
–কিইইইই বললি?
-কই কি বললাম?
–হারামি তুই আমাকে ছকিনা বললি কেন? আর কি! আমি তোকে বুঝিনা?
-রাগ করস কেন? মজা করে বলছি।
–তুই থাক আমি গেলাম।
-সরি যাহ আর মজা করবনা।
–হি হি, আচ্ছা বাদদে। এবার বল গতকাল যে এসাইনমেন্ট করতে দিছিলাম করেছিস?
রাফসান মায়ার কথা শুনে চুপসে যায়। মুচকি হেসে আমতাআমতা করতে থাকে। মায়া বুঝতে পারে রাফসান এসাইনমেন্ট করেনি। মায়া রাগে ফুসতে থাকে। দুই বছরে যত এসাইনমেন্ট আছে সব মায়া করত আর গতকাল মায়া রাফসানকে বলেছিলো এসাইনমেন্ট করতে। কিন্তু হাবলুটা এসাইনমেন্ট করেনি। মায়া কৃত্তিম রাগ করে। চিৎকার দিয়ে বলে….
-হারামি তুই বদমাইশ। একদিন একটু এসাইনমেন্ট করতে দিছি সেটাও পারিস না।
–মনে ছিলনারে দোস্ত।
-খবরদার দোস্ত বলবিনা। তোর সাথে কথা নাই ভাগ।
–আচ্ছা যা দুইদিনের মধ্যে করে ফেলব।
-লাগবেনা তোর করা, তুইযে কত করবি জানা আছে। দুইবছর যাবততো আমিই এসাইনমেন্ট করে দিচ্ছি।
মায়ার কথা শুনে কিছুটা লজ্জা পায় রাফসান। মাথায় হাত বুলাতে থাকে। মায়া বুঝতে পারে আর কিছু বললে পাগলটা কষ্ট পাবে। তাই আর কথা বাড়ায়না মায়া। রাফসান কষ্ট পেলে যে মায়ার খুব খারাপ লাগে। বুকে চিনচিন ব্যথা হয়। অজান্তেই চোখ বেয়ে অশ্রুজল গড়িয়ে পরে। মায়া রাগ করেই বলে….
–দে এসাইনমেন্ট গুলো আমিই করবনি।
-উহু আমি আজকেই করব।
–থাকথাক তোর আর ঢং করতে হবেনা। আমিই করব। বলেই মায়া রাফসানের ব্যাগ থেকে এসাইনমেন্ট বের করে, বলে….
-যতদিন না এসাইনমেন্ট করছি আমার সাথে কথা বলবি না।
–কিইইইই! মানে?
-কোন ফোন দিবিনা, মেসেজ দিবিনা।
–হুরর এটা কোন কথা?
-হুম এটাই কথা আর এটাই তোর শাস্তি।
–না মানিনা এটা।
-না মানলে মুড়ি খা। হি হি হি…
তারপর হাসতে হাসতে চলে যায় মায়া। রাফসান পিছন থেকে অনেকবার ডাক দেয়। কিন্তু না শোনার ভান করে নিজের গন্তব্যে পা বাড়িয়ে চলে যায় মায়া। রাফসান সে দিকে তাকিয়ে অপলক। রাত ১২ টা। মায়া এসাইনমেন্ট করছে। আর বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু রাফসানের ফোন আসার কোন নামগন্ধই নেই। মায়ার রাগ হয়। মনে মনে রাফসানকে গালি দেয় ‘হারামি এখনো ফোন করছেনা কেন? আমিতো এমনি বলেছি এসাইনমেন্ট না হওয়া পর্যন্ত কথা বলবনা। তাই বলে সত্যি সত্যি ফোন দেবেনা?’ মায়ার মন খারাপ হয়। এসাইনমেন্ট রেখে ফোনটা হাতে নেয় সে। রাফসানের নাম্বারে কল দিতে যাবে ঠিক তখন-ই ফোনটা বেঁজে ওঠে স্ক্রিনের উপর লেখা ‘আমার বান্দর।’ এই নামেই সেভ করা রাফসানে নাম্বার। নাম্বারটা দেখেই মায়ার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। পরক্ষনেই ভাবে না নরম হলে চলবে না। শক্ত হতে হবে। কলটা রিসিভ করেই মায়া বলে….
–কি সমস্যা তোর, বলেছিনা এসাইনমেন্ট না হওয়া পর্যন্ত কথা নেই।
-কি করিস?
–কুতকুত খেলি, খেলবি?
-রাগ করস কেন?
–রাখি কাজ আছে।
-কি কাজ তোর এত রাতে?
–এসাইনমেন্ট করছি তোর মতন তো আর আলসে না আমি হু…
-হুম বুঝেছি আমার সাথে কথা বলার জন্যই তাড়াতাড়ি এসাইনমেন্ট করছিস, তাইনা? হাহাহা….
–কচু হাদারাম, বায়….
বলেই ফোন কেঁটে দেয় মায়া। রাফসান আবার ফোন করে মায়া আবার কাঁটে। তারপর ছোট একটা টেক্সট আসে মায়ার ফোনে। রাফসান মেসেজ দিছে। মায়া মেসেজটা অপেন করে। সেখানে লেখা…’একটু বেলকনিতে আয়।’ মেসেজ পরে মায়া ভ্রু-কুঁচকে তাকায়। কিইই এতরাতে বেলকনিতে। ভাবে, তাহলে পাগলটা বাসার নিচে। তড়িঘড়ি করে বেলকনিতে যায় মায়া। গিয়ে দেখে সত্যি সত্যি রাফসান দাঁড়িয়ে আছে। হাতের ইশারায় নিচে নামতে বলে মায়াকে। এক প্রকার দৌঁড়ে নিচে নেমে যায় মায়া। রাফসানের সামনে গিয়ে অবাক হয়ে বলে….
-তুই এত রাতে?
–হুম তুই রাগ করে আছিস তাই তোর জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে এসেছি।
তারপর একটা আইস্ক্রিম মায়ার দিকে এগিয়ে দেয় রাফসান। মায়া হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছেনা। তবে তার ভেতরে যে কতটা ভালো লাগা কাজ করতেছে সেটা একমাত্র মায়াই ভালো জানে। মায়া মুচকি হেসে বলে….
-তুই সত্যি একটা হাদারাম। এতরাতে কেউ আইস্ক্রিম নিয়ে আসে?
–তুই যদি কথা না বলতি? তাই আইস্ক্রিম নিয়ে আসলাম। রাগ কমেছে?
রাফসানের কথায় প্রচণ্ড হাসি পায় মায়ার। পাগলটা সত্যি সত্যি ভাবছে কথা বলবেনা। অথচ পাগলটার একটা কল/টেক্সটের অপেক্ষায় ছিল মায়া সেটা সে জানেনা। কি অদ্ভুত তাইনা!? মায়া রাফসানের দিকে তাকায়, বলে….
-কখনো ওভাবে রাগ করেছি?
–না, কিন্তু…
-কিন্তু কি?
–আমার ভয় করে, যদি তুই সত্যিই কথা না বলস?
-কেন এত ভয় পাস হু?
–জানিনা, তবে তুই কথা না বললে আমার কষ্ট হয়। নিজেকে বড্ড একা লাগে। ঠিক কেমন জানি। (রাফসান)
-কেন এমন হয়?
–জানিনা, আচ্ছা তুই কি এখনো রেগে আছিস
-তোর কি মনে হয়?
–বলনা?
-উহু তোর উপর রাগ নেই, ছিলো তবে এখন নেই।
–সত্যি তো?
-হিহি সত্যি পাগল।
–একটা কথা বলি?
-একটা কেন?
–আচ্ছা বলবনা।
-বল বলছি।
–না মানে আরেকদিন বলব….
-পাখি উড়ে যাওয়ার আগেই বলিস।
–বুজলাম না। (রাফসান
-বাদ দে, বাসায় যাবিনা?
–তাড়িয়ে দিচ্ছিস?
-উহু পাগল, তাড়িয়ে কেন দিব। থাকতে ইচ্ছে করে?
–জানিনা, তবে ভালো লাগছে।
-কতটা ভালো লাগে?
–আকাশ সমান, ঠিক ঐ নীল রংটার মতন। যতই মেঘ থাকুক না কেন সেটার পিছনে নিল থাকবেই।
-অনেক রাততো।
–চলে যাবি?
-যাইনি তো, আটকিয়ে রাখার ইচ্ছে আছে?
–উহু ইচ্ছে না, স্বপ আছে। সেটা বাস্তবায়ন করতে চাই, হবে?
-হুম হবেতো, স্বপ্নটা আমায় বল শুনি।
–আরেকদিক, আমি চলিরে।
-এত তাড়া কিসের।
–তুইতো যেতে চাইলি। (রাফসান
-পরীক্ষা করলাম।
–ফলাফল কি?
-৩৩ মার্ক।
–তারমানে পাসতো করেছি?
-বুঝে নে।
–মায়া?
-হু শুনছি।
–তোর হাতটা ধরব একটু ধরতে দিবি?
-একটু ধরবি?
–উহু অনেক্ষণ, জীবনের সূর্য অস্ত যাওয়া আগ পর্যন্ত।
-খুব ইচ্ছে?
–হুম, তোর চোখে রোজ কাঁজল একে দিব। নিজ হাতে খোঁপায় বেলি ফুলের মালা গেথে দিব। কানে দুল পরিয়ে দিব। হুটহাট কাছে গিয়ে তোর তিলটা ছুয়ে দিব। (রাফসান
-ইসসস খুব শখ না?
–তোর শখ নাই?
–আছেতো, অনেক শখ।
-বল শুনি।
–উহু…
-বল?
-যাহ বলবনা, হি হি হি…
লজ্জা পায় মায়া। কি করবে বুঝতে না পেরে হাসতে হাসতে এক দৌঁড়ে বাসায় চলে যায় মায়া। রাফসান সেদিকে তাকিয়ে থাকে। একটু পর মায়া বেলকনিতে দাঁড়ায়। রাফসান তাকিয়ে থাকে সেদিকে। এই মাঝরাত দুটো মানুষের মনে কি চলছে এটা তারা নিজেরাও জানেনা। মায়া মেসেজ দেয় রাফসানকে ‘ইচ্ছে করে তোর সাথে শীতের সকালে হাতে হাত রেখে শিশির ভেজা ঘাসেরর উপর হাঁটতে। তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে। ইচ্ছে করে আগলে রাখতে ইসসসরে আর বলবনা, কি লজ্জা কি লজ্জা।’
রাফসান মেসেজ পড়ে হাসে। বেলকনিতে থাকা মায়ার দিকে তাকাতেই মায়া এক দৌঁড়ে রুমে চলে যায়। মেয়েটা লজ্জা পেয়েছে। ভাবতেই রাফসানের মনের ভিতটা অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেয়ে যায়। মায়া বিছানার বালিশে মুখ লুকিয়ে আছে। তার বেশ লজ্জা লাগছে। রাফসানে ইচ্ছে করছে মায়ার লজ্জামিশ্রিত মুখটা দেখতে। সেই ঠোটের নিচের তিলটাকে একটু ছুয়ে দিকে। মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে রাফসান। এই বুঝি মেয়েটা আসছে…….