আমার দাদী নতুন নতুন ফেসবুক চালানো শিখে তার রুমে কাউকে এলাও করেন না। আগে আমার ছোটবোন নিমি তার সাথে ঘুমাতো,কিন্তু ফোনে ফুল ব্রাইটনেস দিয়ে দাদী নাকি সারা রাত মোবাইল গুঁতায়। এজন্য নিমি অবজেকশন জানিয়েছে বলে দাদী ওকে আর শুতে নেয়না।
এদিকে হঠাৎই আমার বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে উঠে পড়ে লেগেছে সবাই। প্রথম প্রথম রাজি ছিলামনা,তবে পাত্র হেব্বি হ্যান্ডু দেখে আর না করতে পারলাম না। গতকাল আংটি পড়িয়ে তারিখ পাকা করে গেছে তারা। তবে ছেলের মনে হয় একটু ইগো বেশি।সারাক্ষণ আমি মেয়ে হয়ে ওর দিকে ড্যাবডেবিয়ে চেয়ে রইলাম,আর সে আমাকে চোখ তুলে দেখলোই না। কেবল কেঁচোর মতো মোড়ামুড়ি করছিলো। রাতে খাবার টেবিলে দাদীকে না দেখে রুমে ডাকতে গিয়ে দরজার কাছে দাড়াতেই দেখলাম দরজা চাপানো,ঘরে লাইট নেভানো আর সেখান থেকে গুনগুন কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। আমি একটু ইমোশনাল হয়ে পড়লাম। আমার বিয়ে হয়ে যাবে তাই দাদী কাঁদছে?? চোখ নাক দিয়ে সমানে পানি গড়াচ্ছে আমার। এমন সময় বুঝলাম দাদি কাঁদতে কাঁদতে কিসব যেনো বলছে।
-ওগো,এতদিন পরে তোমার দেখা পেয়ে একাকিত্ব টা ঘুচেছে যেয়োনা গো আমায় ছেড়ে। এবার আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে। আমার দাদা মারা গেছে তখন আমরা বেশ ছোটো।বুড়ি কি বলছে এসব! ঘুমের মধ্যে আওড়াচ্ছে নাতো! নাহ্ ঘুমের মানুষের কন্ঠে একটা জড়তা থাকে। তাহলে কি দাদার আত্মা এতদিন পর দাদীকে দেখা দিয়েছে?? ভাবতেই আমার হাঁটু ঠোকাঠুকি লেগে গেল। দাদীকে আর ডাকলাম না,আর আমিও খেতে গেলাম না। পরেরদিনও একই ঘটনা ঘটলো।এরপর মাঝখানে একদিন ভয়ে আমি আর ওমুখো যাইনি।
তবে নিমিকে সব বলে দিলাম।গাধীটা হেসেই উড়িয়ে দিলো।তারপর যেই হাতেনাতে প্রমান দিলাম নিমিরও হাঁটু ঠোকাঠুকি শুরু। ভয়ে আমি আর নিমি এক ঘরে ঘুমাই নাহলে দাদা যদি আমার সাথেই হাই,হ্যালো করতে চলে আসে!! দোয়া দরূদ মুখে লেগেই থাকে দুইবোনের। রাতে খেয়ে শুয়ে আছি এমন সময় টুংটাং করে মেসেজ আসলো ফোনে। ফোন হাতে নিয়ে তো আমার চোখ কপালে উঠলো! “প্লিস মিমি তুমি ফাইজকে(আমার হবু বর) বিয়ে করোনা। আমরা একে অপরকে খুব ভালোবাসি।আমি প্রেগন্যান্ট। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিওনা প্লিস” বসা থেকে ধপাস করে শুয়ে পড়লাম। ছিঃ ফাইজ এভাবে ঠকালো আমায়!নিমিও অবাক।সাথে সাথে নাম্বারটায় কল দিলাম। বন্ধ বলছে। এখনই ফোন করে বিয়ে ক্যান্সেল করবো যখন ভাবলাম,সেই মুহূর্তেই ফাইজের কল।
আমি কিছু বলার আগেই সে বলে উঠলো, “মিমি,আমার পক্ষে তোমার মতো ফ্যামিলির মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব না”। ” টুট…টুট…টুট” হুহ,চোরের মায়ের লম্বা গলা,নোংরা ছেলে কোথাকার!! সেই মুহূর্ত থেকে ফাইজকে নিয়ে আর ভাবছিনা। তবে দাদীকে নিয়ে খুব ভাবছি।কি করা যায়!! সকালে নিমি বললো ও নাকি এক ওঝাকে চেনে,”ঝান্ডু বাবা” নাম তার। ঠিক কাঁটায় কাঁটায় দুপুর বারোটায় ভূত তাড়ায় ঝান্ডু বাবা। যথারীতি আমাদের বাসায়ও বারোটার একটু আগে আসলো। বারোটায় ট্রিটমেন্ট শুরু হবে। কি অদ্ভুত সাজ!! পা পর্যন্ত কালো পাঞ্জাবি,গলায় পুঁতির মালা,হাতে কালো প্লাস্টিকের চুড়ি।পায়ে মোটা মোটা লোহার বেড়ির মতো,মাথায় লাল টিকা। তার এক হাতে ঝাঁটা আর এক হাতে একটা বাজারের ব্যাগ। ঝান্ডু বাবা এসেই তার ঝাঁটা নেড়ে নেড়ে এক জগ পানি চাইলেন।
কাঁপা হাতে একজগ পানি এনে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নিমি ধরে বেঁধে দাদীকে নিয়ে আসলো।বাড়ির অন্য সদস্যরা অবাক।নিমি প্রকাশ্যে ঘোষনা দিলো দাদীর সাথে ভূত এসেছে।এবার আর কেউ আমাদের বাঁধা দিলোনা কারণ, সবার হাঁটু ঠোকাঠুকি লেগে গেছে। নিমি দাদীকে চেপে ধরে বসে আছে। এইবার ঝান্ডু বাবা যা করলেন তা দেখে রীতিমতো ছোটাছুটি লেগে গেলো। সে ব্যাগ থেকে গোবর বের করে সেই জগের পানিতে মেশালো।ঝাঁটা দিয়ে গোবর গুলছে আর তিড়িং বিড়িং হিড়িং কি যেনো মন্ত্র পড়ছে। একটু পরে একটা বিকট চিৎকার করে বললো-
“-এই বুড়ির সাথে ভূতে দেখা দেয়।
ল,গোবর ওয়াটার খাইয়া ল।একবার গোবর ওয়াটার খাইং তো হগ্গল ভূত পলাইং” দাদী নাক সিঁটকে আঁকা বাঁকা হচ্ছে।নিমি ওয়াক ওয়াক করছে তবুও দাদীকে ধরে রেখেছে।আমি আর অন্য সবাই কিছুই বুঝছিনা,শুধু দেখে যাচ্ছি। গোবর গোলা পানিটা দাদীর মুখের কাছে নিতেই চেঁচিয়ে উঠলো –
-এই ওঝা ভন্ড। আমার সাথে কোনো ভূত টুত নেই। দাদী গড়গড় করে বলতে শুরু করলো, দাদীর সাথে আমার হবু বর ফাইজ ফেসবুকে প্রেম করতো। প্রেম বেশ মাখো মাখো হয়ে উঠেছে আর মাঝখানে আমি চলে এলাম কাবাব মে হাড্ডি হয়ে।
“ছেলেটার মুখের দিকে চেয়ে দেখেছিস? ঠিক যেনো তোর দাদার মতো দেখতে। যখন তোকে দেখতে এসেছে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারিনাই। বিস্কুটকে ফোন করে সব বলে দিলাম। কিন্তু আমি বুড়ি বলে বিস্কুট আমার ভালোবাসা অস্বীকার করলো। সেইজন্য বিস্কুটের ফোনে তোর নামে বাজে মেসেজ,আর তোর ফোনে বিস্কুটের নামে বাজে মেসেজ দিয়েছি।কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সমাজ আমাদের ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিলোনা” কথা শেষ করে দাদী আঁচলে মুখ চেপে হু হু করে কেঁদে উঠলো।
-সবই বুঝলাম,বিস্কুট টা কে দাদী?? নিমিষেই কান্না থামিয়ে মুখে রস এনে একটা লজ্জা লজ্জা মুখ করে দাদী বললো- ফাইজ ডার্লিং আমাকে আদর করে চা ডাকতো আর আমি ডাকতাম বিস্কুট”। অবশেষে চা বিস্কুট?? ভাভা যায় এগ্লা!!