পাগলীর ভালবাসা

পাগলীর ভালবাসা

কি রে তুই নাকি টিউশনি শুরু করেছিস ! স্টুডেন্ট নাকি একটা মেয়ে !! বল ঘটনা কি সত্যি ??’ সাবিদ ক্যাম্পাসে ঢুকতেই একদম শার্টের কলার টেনে ধরে ঝাড়ি মেরে বলে উঠলো নিম্মু। মেয়েটার চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে ! সাবিদের এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে একটা ছেলের টিউশনি করাটা যেন মস্ত বড় কোনো অপরাধ !! ‘আরে কি করছিস তুই ! কলার টা ছাড় প্লিজ, গলা আটকে গেলো তো !! এ্যাঁ এ্যাঁ ‘তাইলে বল তুই ছাত্রী টিউশনি নিছিস ক্যান??

তোরে না ১০০ বার বলছি, ভুলেও কোনো মেয়েরে পড়াতে পারবি না !! ‘আরে দোস্ত বলিস না, বাড়িওয়ালী আন্টি তার মেয়েটাকে পড়ানোর জন্য এমন ভাবে জেঁকে ধরলো ! মুখের উপর আর না করতে পারিনি’ ‘চুপ একদম ন্যাকামি করবি না ! বল মেয়েটা কিসে পড়ে ?? দেখতে কেমন ??’ ‘আরে বাচ্চা একটা মেয়ে ! ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে মাত্র। দেখতে মোটামুটি সুন্দর তবে তোর চেয়ে বেশী না’ ‘ওই কি বললি তুই ! ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে ?? ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের মেয়ে বাচ্চা হয় ?? শিখাস আমারে ?? তুই এই টিউশনি ছেড়ে দিবি ব্যাস !!’ ‘আচ্ছা তুই এত সিরিয়াস হচ্ছিস কেন বলতো ? আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি ঘরের জামাই ??’

‘হুহ তোর মত আবুল মার্কা ছেলেকে বয়ফ্রেন্ড বানাবো আমি !! হাউ ফানি! ওই মেয়েটার জন্য একটু আফসোস হচ্ছে। মেয়েটা যদি ভুল করে তোর প্রেমে পড়ে যায়, তাইলে মেয়েটার লাইফ টা ই একদম শেষ !! তেসপাতা হয়ে যাবে’ ‘অন্য মেয়েকে নিয়ে তোর এত ভাবতে হবে না। আগের নিজের চিন্তা কর। তোর পাল্লায় যে ছেলে পড়বে সে তো একদম শুকনা তেসপাতা হয়ে যাবে !!’ নিম্মু আর কোনো কথা বলে না। হনহন করে করে উঠে চলে যায় সাবিদের সামনে থেকে। সাবিদ পিছন থেকে বার বার ডেকেও নিম্মু কে ফেরাতে পারে না। সাবিদ অসহায়ের মত তাকিয়ে তাকিয়ে নিম্মু চলে যাওয়া দেখতে থাকে। আচ্ছা মেয়েটা এত বেশী বদরাগী ক্যান ! সব কিছুই তো ঠিক আছে, রাগ টা একটু কম হলে কি এমন ক্ষতি হতো !!

আজ বাসায় ফিরে কেন জানি কোনো কিছুতে মন বসাতে পারে না নিম্মু। চোখ বন্ধ করলেই সে দেখতে পায় সাবিদ টিউশনি তে গিয়ে পড়ার টেবিলে ওই ছাত্রী টার সাথে খিলখিল করে হাসছে, অংক বুঝতে বুঝতে মেয়েটা একদম সাবিদের কাছে চলে আসছে, মেয়েটা কেমন ট্যাপ ট্যাপ করে সাবিদের দিকে তাকিয়ে আছে, কখনো বা লিখতে গিয়ে দুজনের হাতের স্পর্শ লেগে যাচ্ছে !! নাহ আর কল্পনা করতে পারে না নিম্মু ! ঠাস করে হাতের গ্লাস টা আছড়ে ফেলে মেঝেতে। মুহুর্তেই চুড়মাড় হয়ে যাওয়া কাঁচের টুকরো গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় পুরো মেঝেতে। অনেক সহ্য করেছে সে, আর নাহ ! কিছু একটা করতেই হবে। কি পেয়েছে কি ও!! সব কিছু মুখেই বলতে হবে !! এত দিন এক সাথে চলার পরেও গাঁধা টা কেন বুঝবে না যে নিম্মু ওকে ভালোবাসে !!

পরদিন সকাল হতে না হতেই সাবিদের মেসে এসে হাজির হয় নিম্মু ! এত সকালে নিজের মেসে নিম্মু কে দেখে সাবিদ যেন আঁকাশ থেকে পড়ে ‘আরে নিম্মু তুই এত সকালে আমার মেসে !!’ চুপ কুত্তা, বেশী কথা বলবি না ! তোর সেই বাড়িওয়ালার মেয়েকে ডাক, আমি ওর সাথে কথা বলবো !!’ ‘আরে কি হয়েছে বলবি তো ! প্লিজ বল কি হয়েছে তোর ??’ ‘কিচ্ছু জিজ্ঞেস করতে পারবি না, যা বলছি তাই কর’ নিম্মু তুই কি পাগল হয়েছিস !!! কি শুরু করেছিস এসব !! আর একটা শব্দ করতে পারবি না, একদম চুপ !! নিম্মু এবার আর স্থির থাকতে পারে না।

সাবিদ কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে ‘ওই বাঁনর তুই বুঝিস না ক্যান আমি তোকে কত্ত ভালোবাসি !! ভার্সিটি তে প্রথম যেদিন তোর সাথে আমার পরিচয় হয় সেদিন থেকেই তোকে সবার কাছ থেকে আগলিয়ে রেখেছি আমি। তোকে কোনো মেয়ের সংস্পর্শে যেতে দেইনি। এত কিছুর পরও তুই কেন বুঝিস না। আর আজ তুই অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে ব্যাস্ত !! তুই ওই বাড়ীওয়ালীর মেয়েকে একটু ডাক, আমি জাস্ট দু মিনিট কথা বলেই চলে যাবো। প্লিজ আমার এই শেষ অনুরোধ টুকু রাখ সাবিদ কিছুই বলতে পারছে না। স্তব্ধ হয়ে নিম্মু কে জড়িয়ে ধরে। ঠিক ওই মুহুর্তেই উপর তলা থেকে ৮-৯ বছরের ছোট্ট একটি মেয়ের আগমন- সাবিদ ভাইয়া..সাবিদ ভাইয়া,, একটু পর আমরা দাদুবাড়ী যাবো, আসবো তিন দিন পর।

এই তিন দিন আমাকে ছুটি দিন। হিহি কি মজা কি মজা সাবিদ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়। দু হাতে নিম্মুর চোখের পানি টুকু মুছে দিয়ে মাথা টা বুক থেকে সরিয়ে নিয়ে বলে, ‘এই পাগলী নে, কথা বল রাখির সাথে। রাখি এই বাড়ীওয়ালীর মেয়ে। ক্লাস থ্রী তে পড়ে, আমার ছাত্রী’ নিম্মু ক্ষনিকের জন্য নির্বাক হয়ে যায়। চোখ বেয়ে আবার ও অশ্রু এসে যায় ! উহু দুঃখের অশ্রু নয়, স্বস্তির অশ্রু। কথা বলতে গলা আটকে আসে নিম্মুর- ‘শয়তান, তুই না বলছিলি মেয়েটা ‘হেহে মিথ্যা বলছি’ ‘হারামী মিথ্যা বললি ক্যান? ‘ ‘এই মিথ্যে টুকু না বললে বুঝতাম কিভাবে এত টা ভালোবাসিস’ ‘আর কোনো দিন মিথ্যা বলবি??’

‘নাহ ! হাহা, খ্যাঁক খ্যাঁক’ ‘একদম হাসবি না, হাসলে তোকে শিয়ালের মত লাগে’ ‘আর রাগলে তোকে পেঁচীর মত লাগে’ ‘কোনো দিন ছেড়ে যাবি না তো !’ সাবিদ এবার আর হাসতে পারে না, এমন মমতা আর ভালোবাসাময় অভিমান নিয়ে কেউ যখন প্রশ্ন করে, সেই প্রশ্নের প্রতিউত্তরে হাসি আসে না, হাসতে ইচ্ছে হয় না। শুধু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভরে কাঁদতে ইচ্ছে হয়, মন প্রাণ উজার করে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়..,,,,,

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত