আজ আমাদের দ্বিতীয় marriage anniversary. আমি বাজার থেকে গিফট কিনে বাসায় ফিরে দেখি আমার সম্মানিত স্বামী অফিস থেকে বাসায় ফিরে এসেছে। একটা surprise দিতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু সেটা আর হলো না। দরজা খুলেই তার দুটি চোখ অটোমেটিক বড় হয়ে গেলো। হবে না-ই বা কেনো, এমন একটা গিফট এনেছি যেটা লুকিয়ে রাখার মত নয়। সে বিস্ময়কর স্বরে বললো-“মধুর মা তুমি এসব কি এনেছো?”
আমি-“কেনো এর আগে এটা হাটে বাজারে এমনকি মানুষের বাসায় দেখোনী?”
সে-“দেখেছি but তুমি এটা কেনো কিনেছো?”
আমি-“তোমার জন্য”
সে-“আমার জন্য মানে?”
আমি-“বিবাহ বার্ষিকীর গিফট এটা”
সে-“এমন গিফট আগে কেউ কখনো তার সদ্য নতুন বরকে দিয়েছে বলে তো মনে হয় না”
আমি-“কেউ দেয়নী আমি দেবো, তোমার আপত্তি আছে?”
সে-“একটু একটু আছে”
আমি-“কেনো?”
সে-“এত বড় গিফট এটা যদি নিই তাহলে তো আমি তোমাকে ভুলে যাবো মধুর মা”
আমি-“সেটাই তো আমি চাই”
সে-“মানে?”
আমি-“আমি চাই তুমি আমাকে ভালো না বেসে এই গিফটটাকে ভালোবাসো”
সে-“না এটা হবে না”
আমি-“হবে না মানে? হইয়েই ছাড়বো”
সে-“জোর করে দেবে নাকি?”
আমি-“ofcourse”
সে-“please মধুর মা, এটা করো না!”
আমি-“তুমি কথা রাখোনী এটাই তার punishment”
সে-“কোন্ কথা রাখিনী?”
আমি-“কথা ছিল বিয়ের পর তোমার বুকটা হবে আমার মাথার বালিশ, কিন্তু সেটা তো হয়-ইনী বরং তুমি আমাকে কোলবালিশ বানিয়ে ফেলেছো so আমি তোমার জন্য কোলবালিশ কিনে এনেছি”
সে-“আসলে ঘুমিয়ে গেলে আমি বেহুশ থাকি মধুর মা, তাই বলে আমার বেহুশ অবস্থার অপরাধের শাস্তি তুমি হুশ থাকা অবস্থায় দিবা এটা কিন্তু অবিচার”
আমি-“হুশ বেহুশ বুঝি না, তোমার জন্য আমি 365+ 365=730দিন ঘুমাতে পারিনী তাই শাস্তি তোমাকে দিয়েই ছাড়বো”
সে-“বাহ্ কি চমৎকার! এত বছর ধরে শুনে আসছি তুমি অংক পারো না আজ দারুণ নির্ভুল যোগ করে ফেললে!”
আমি-“জটিল অংক পারি না তাই বলে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগও যে পারি না এটা কবে বললাম?
সে-“সব কি বলতে হয় ম্যাডাম, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়”
আমি-“এত্তো কিছু বুঝে নাও আর 730 দিন আমার যে ভাল ঘুম হয়নী সেটা বুঝতে পারো না? এত্তো বাহানা করে কোনো লাভ হবে না মধুর বাবা”
সে-“জানি লাভ হবে না কিন্তু মাথার বালিশটা কার জন্য এনেছো গো?”
আমি-“ওটা আমার জন্য”
আমার কথা শুনে সে এমন একটা হাসি দিলো যেনো আমি হাস্যকর কিছু করেছি। রাগে আমার শরীরে আগুন ধরে গেলো। আমার হাব ভাব দেখে ওর হাস্যজ্জ্বল মুখটা ধপ করে বন্ধ হয়ে গেলো। তারপর সে ভয়ে ভয়ে ফিস ফিস এর চেয়ে সামান্য জোরে বললো- “জানো মধুর মা, এর আগে কখনো কাউকে দেখিনী যে, কেউ তার নিজের বিবাহ বার্ষিকীর গিফট নিজেই কিনে” কথাটা বলেই সে বাথরুমে ঢুকে গেলো, বুঝলাম সে পালালো। আমাদের বেডে একটাই বালিশ আর সেটা অর্নবের মাথার নিচে থাকে। আর আমি অর্নবের বুকে মাথা রেখে ঘুমাই। সকালে জেগে দেখি আমার মাথার নিচে কিছুই নেই। বরং আমি কোলবালিশ হয়ে আছি।
সেদিনের পর থেকে রোজ আমার আর একটা বাড়ছি কাজ যোগ হলো, সেটা হলো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্লোর থেকে কোলবালিশ কুড়ানো। বুঝিনা রোজ কোলবালিশটা কি করে মেঝেতে পড়ে যায়! কোলবালিশটা কেনার পর থেকেই রাতে আমার একদম ঘুম হয় না। অর্নব যতোবার জেগে যায় ততোবার আমার মাথা টেনে তার বুকে উপর রাখে, আর তখনই আমার ঘুম ভেঙে যায়। হে আল্লাহ্ এই পাগোলটাকে সুস্থ করে দাও!
দুই বছর আগে আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি। তার আগে আমাদের বছর খানেকের প্রেম ছিল। আমরা অন্যদের মতো খুব বেশী চ্যাটিং করতাম না তবে আমরা ফোনে প্রচুর কথা বলতাম। প্রায় সারা রাত ফোনে কথা বলতাম। সে সময়ই আমাদের বিয়ের পরের সব প্ল্যান করা হয়ে গেছিল। এমনকি ফ্যামিলী প্ল্যানিংও করা হয়ে গেছিল। কয়টা ছেলে মেয়ে নেবো সেই বিতর্কে আমি ওর কাছে হেরে গেছিলাম। শেষমেষ ওর কাছে বিতর্কে হেরে গিয়ে আমি ওর ইচ্ছেকেই মেনে নিয়েছি।
শুধু ইচ্ছে বললে ভুল হবে ওটা ছিল ওর শর্ত গুলোর মধ্যে প্রধান শর্ত। শর্তটা হলো আমি কখনো বেবী নিতে পারবো না। এত বড় একটা কঠোর শর্ত পৃথিবীর কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এই শর্তটার পেছনে তার উল্লেখ যোগ্য কারণ হলো, “আমি যদি মরে যাই”। কোনো ভাবেই তাকে কিচ্ছু বোঝাতে পারিনী। সবাই ভাবছেন তাহলে আমি মধুর মা কি করে হলাম তাই না? বিয়ের আগে থেকেই সে আমাকে মধুর মম বলতো আর আমি তাকে মধুর বাপী বলতাম। অথচ মধুই কখনো পৃথিবীতে এলো না। আমার সারা দিনের একাকীত্বের কষ্ট ভুলিয়ে রাখতে সে প্রচুর বই কিনে আনে, নতুন নতুন মুভি নাটক ইত্যাদি দেখে আমার দিন কাটে।
অর্নব মূলত খুব রাগী টাইপের কিন্তু সে কখনোই আমাকে রাগ দেখায় না। কিন্তু সে তার শর্ত গুলোর প্রতি আনেক কঠোর। আমার হিজাব ছাড়া বাহিরে যাওয়া যাবে না এটা ছিল তার দ্বিতীয় শর্ত। আমি অবশ্য কখনোই তার শর্ত গুলো ভাঙিনী।কিন্তু আমার শর্ত গুলো ধীরে ধীরে মরিচা পড়ে গেছে। আমার শর্ত গুলো হলো, সারা জীবণ তাকে আমার প্রেমিক হয়েই থাকতে হবে। তাই সে রোজ গভীর রাতে আমাকে ফোন করে, তারপর আমি পাশের রুমে চলে যাই অতঃপর আমরা ফোনে প্রেমিক প্রেমিকার মত কথা বলি আর পরের দিন কি কি বাজার লাগবে সেটাও ফোনেই সেরে ফেলি। আমরা বিয়ের পর ফোনে কি কি কথা বলি জানেন?
সে-“মধুর মা আজ তুমি গোসল করে ভালো করে চুল মোছোনী, আমি স্পষ্ট দেখেছি তোমার চুল দিয়ে বৃষ্টির মত ঝরঝর করে পানি পড়ছে, এ জন্যই তোমার সারা বছর সর্দি লেগেই থাকে”
আমি-“তুমি লুঙ্গী ঠিকঠাক পরতে পারো না, তাহলে লুঙ্গি পরো কেনো মধুর বাবা?”
সে-“তোমাকে না বলেছি যে তুমি কাপড় কাঁচবা না, আমি অফিস থেকে এসে কাঁচবো; তবুও কেঁচেছো কেনো? আমার একটা কথাও তুমি শোনো না”
আমি-“তোমাকে সকাল বেলা ডাকতে ডাকতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাই, এমন ভাল্লুক স্টাইলে তুমি ঘুমাও যে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে তোমাকে ডাকতে হয়। এত ঘুম কই পাও তুমি?”
সে-“আমার সাথে তুমিও একটু ভাল্লুক স্টাইলে ঘুমালেই তো পারো!”
আমি-“আমি যদি তোমার মত ঘুমাই তাহলে তোমার বস খুশি হয়ে বলবে অর্নব সাহেব আপনাকে আর কষ্ট করে অফিসে আসতে হবে না”
সে-“বলেছি তোমাকে ছাদে কাপড় মেলতে যাবা না কারণ পাশের ছাদে একটা লুচু বসে থাকে। ঐ লুচুর কি কোনো কাজ কর্ম নেই নাকি?”
আমি-“তো আমি কি করবো? আমি তো আর ঐ লোককে ছাদে বসে থাকতে অনুরোধ করিনী”
সে-“ঘরে সুন্দরী বউ রেখে কত টেনশনে যে অফিস করি সেটা শুধু আমিই বুঝি।”
আমি-“ওমা তাই নাকি? তো কাল থেকে অফিসে আমাকে সাথে নিয়ে যেও”
সে-“এই না না, আমার বসের চরিত্রও ঠিক নেই”
আমি-“শোনো মধুর বাবা এই সব প্যাঁচাল বাদ দিয়ে কাল কি কি কাঁচা বাজার লাগবে সেটা শোনো”
সে-“আল্লাহর সকালে ঘুম থেকে উঠে এই ভীড় ঠেলে বাজার করতে জঘন্য লাগে মধুর মা”
আমি-“তাহলে আমিই যাবো বাজার করতে”
সে-“এই না না, মেয়েদের এই সব বাজারে যেতে নেই”
আমি-“বলে ছিলে বিয়ের পর ব্রেকফাস্ট তুমি বানাবে অথচ তুমি সকালে দিব্যি ঘুমাও ”
সে-“খাবার পুড়ে যায় বলেই তো তুমি ব্রেকফাস্ট বানাতে বারণ করেছো, ভুলে গেছো মধুর মা?”
আমি-“কাল কিন্তু মুভি দেখতে সিনেমাহলে নিয়ে যেতে হবে”
সে-“I love u Janpakhi”
আমি-“I love u too Pranpakhi”
বিয়ের পর থেকেই আমরা এভাবেই ফোনে কথা বলি ঘন্টার পর ঘন্টা। সবাই নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে, বিয়ের আগে যে ধরনের কথা হতো সেগুলো বিয়ের পর চেঞ্জ হয়ে গেছে? বছরখানেক আমাদের বিবাহিত প্রেম রেলগাড়ির মতই চলছিল। আমি পাশের রুমে শুয়ে থেকে ওর সাথে ফোনে কথা বলতাম আর একটু পর পর উঁকি দিয়ে দেখতাম সে কোন্ ভঙ্গিমায় কথা বলছে, মানে বিয়ের আগে কি ধরনের ভঙ্গিমায় থাকতো সেটাই বুঝার চেষ্টা করছিলাম। এক দিন উঁকি দিতে গিয়ে ওর মাথার সাথে এত্তো জোরে ঢিপ খেয়ে ছিলাম যে দু’জনই পড়ে গেছিলাম তারপর তিন দিন মাথায় ব্যাথা হয়ে ছিল।
আমার বরটাকে যতোটা বোকা সোকা ভাবি সে আসলে ততোটা বোকা নয়। খুব কৌশলে সে আমাকে তার আয়ত্তে রাখে। অফিস যাবার সময় আমাকে ওয়াদা করায় যেনো আমি ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে না ভিজি। আমি বর্ষাকালে ওর ওয়াদা ভেঙে বৃষ্টিতে ভিজি। ওর ওয়াদা করানোর কারণ হলো প্রথমত বৃষ্টির পানিতে আমার এলার্জী আছে তাই বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার হাচিসহ সর্দি শুরু হয়ে যায়, দ্বিতীয়ত পাশের বাসার ঐ লুচু ভদ্রলোক কাজ নেই কাম নেই এদিকে দূরবিন ধরে রাখে। তবুও আমি মাঝে মাঝেই বৃষ্টিতে ভিজি।
এক দিন অফিস থেকে এসে সে দেখলো আমি সর্দি আর হাচির মেলা বসিয়েছি। রাগে ওর সিংহের মত অবস্থা দেখে আমি ঘুমের ভান করে থাকলাম। সে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখলো গায়ে জ্বরও আছে। সারা রাত সে বউ সেবা করলো। আর পরের দিন অফিস যাবার সময় সদর দরজায় তালা মেরে রেখে গেলো। পাক্কা সাত দিন সে আমাকে তালা বন্ধ করে রেখে ছিল। আমিও কম যাই না, আমি জানালা দিয়ে কাপ বাড়িয়ে বৃষ্টির জল ধরে বালতি ভরতাম তারপর গোসল করতাম। অবশেষে সেই সর্দি। এক দিন সে অসময়ে বাসায় এসে সব দেখে ফেলে ছিল। আর বুঝে ছিল যে আমাকে তালা বন্ধ করে রেখেও কোনো লাভ নেই। কি করবো অসুস্থ অবস্থায় ওর এক্সটা ভালবাসার লোভ সামলাতে পারি না তাই মাঝে মাঝে অসুখকে দাওয়াত করে আনি।
অর্নব কখনোই আমার সাথে ঝগড়া করে না। অনেক রাগী ছেলেটা আমাকে ভীষণ ভয় পায়; অবশ্য এটা একটা ভালো দিক। স্বামীরা বউকে ভয় পাবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম কিন্তু সে ঝগড়াকে নয় আমার নিরবতাকে ভয় পায়। আমি ওর সাথে ঝগড়া করি না কারণ নিরবতা দিয়ে যদি শায়েস্তা করা যায় তাহলে খামাখা চেচামেচি করার কি দরকার। মানুষটা আমার খুব খেয়াল রাখে, আমার খুব কেয়ার করে। আমি ইচ্ছাকৃত মাঝে মাঝে ওকে মিথ্যা অপবাদে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দ পাই।
মানুষটা সেই বিয়ের আগে থেকেই আমাকে হারানোর ভয়ে সব সময় আতঙ্কিত থাকতো। অবশেষে সেটা সত্যি হলো, হঠাৎ আমার পেট ব্যাথা শুরু হলো। অর্নব জানতো আমি ভাজা পোড়া পছন্দ করি তাই সেটা বন্ধ হয়ে গেলো। তবুও পেট ব্যাথা সারলো না। অবশেষে ডাক্তার বাড়ি ছুটলাম। অনেক টেস্ট করার পর শুনলাম আমার তেমন কিছুই হয়নী। ওষুধ খেয়ে পেট ব্যাথা কমে গেলেও মাঝে মাঝে খুব পেট ব্যাথা করে তবুও অর্নবকে বলি না কারণ অর্নব খুব টেনশন করে আমাকে নিয়ে। আমি অসুস্থ হবার পর থেকেই সে কেমন যেনো বদলে গেছে। সারাক্ষণ আমার খেয়াল রাখে এমন ভাবে যেনো আমি একটা বাচ্চা। আর যে মানুষটাকে বলে বলেও নামাজ পড়াতে পারিনী সে কেমন হুজুরের মত নামাজী হয়ে গেলো। অফিসের কাজে ওর মন নেই। বিয়ের প্রথম থেকেই সে আমাকে প্রচুর সময় দেয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমার এই পেট ব্যাথার রোগটা হবার পর থেকে সে আরো বেশী সময় দেয়া শুরু করেছে। আমাকে সময় মত ওষুধ খাওয়ানো যেনো তার গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি।
প্রতি সপ্তাহে ডাক্তারের কাছে চেকআপ করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম। এক দিন অবাক হয়ে ছিলাম যখন দেখলাম আমার টেস্টের রিপোর্ট গুলো সে লুকিয়ে রাখে এবং অফিসে যাবার সময় সাথে করে নিয়ে যায়। ব্যাপারটাকে বেশ সন্দেহজনক মনে হলো তাই একদিন সে বাথরুমে গেলে আমি রিপোর্ট গুলো দেখে ফেললাম। আমি রিপোর্ট দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার একটা অভারীতে সিস্ট হয়ে ব্লক হয়ে আছে আর আরেকটা অভারীতে অনেক গুলো টিউমার হয়েছে আর তার মধ্যে একটা টিউমার ক্যান্সারের আকার ধারণ করতে চলেছে। আমি অর্নবকে বুঝতে দিলাম না যে আমি সব জেনে গেছি।
আমাদের বিয়েটা দুটি পরিবারের কেউ মেনে নেয়নী। তাই কোনো আত্মীয়দের সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। একাকী বেচারা আমার টেনশনে কেমন যেনো শুখিয়ে গেছে। আমি জেনে গেছি এটা জানলে সে দিন রাত আমার সামনেই ভেউ ভেউ করে কাঁদবে, মরে যাবো এটা মেনে নিতে পারলেও ওর কাঁন্নাটা মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আমাদের দিন গুলো কেমন যেনো বদলে গেছে। অর্নব আমাকে খুশি রাখার অনেক চেষ্টা করে আর আমিও খুশি থাকার ভান করি। অর্নব অভিনয়ে খুব কাঁচা, আমার টেস্টের রিপোর্ট পাবার পর থেকেই তার এই বদলে যাওয়াটা আমি খেয়াল করে ছিলাম। ভালোই চলছে দুটো মানুষের দিন রাত অভিনয়ের কার্যক্রম। এক দিন হঠাৎ সে অফিস থেকে ফিরেই বললো-” মধুর মা তোমার একটা ছোট্ট অপারেশ করাতে হবে। ভয় পেয়ো না, আমি আছি তো সোনা!” আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সারা পৃথিবীর ভয় ওর দুটি চোখ জুড়ে আছে। অথচ সে আমাকে সাহস দিচ্ছে। মানুষটা অভিনয়টাও ঠিকঠাক করতে পারে না। আমার ভয় তো একটাই আমার কিছু হয়ে গেলে সে নিজেকে সামলে নিতে পারবে না।
এক সপ্তাহ পর অপারেশন করাতে গেলাম। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার আগে অর্নব আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। এত কাঁন্না শুরু করলো যে সারা হসপিটালের লোক জন ভীড় করে ওকে শান্তনা দিতে শুরু করলো। আমি ওকে প্রমিজ করলাম যে আমি ফিরে আসবো। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার পর নার্সকে বললাম অর্নবের দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য তার কাছে যেনো কাউকে সর্বক্ষণ রাখা হয়।
আমার অপারেশটা সাকসেসফুল হলেও আমার জ্ঞান ফিরছিল না। অনেক ব্লাড দিতে হয়ে ছিল। চার ঘন্টা পর আমার জ্ঞান আসে। এর মাঝে অনেক কিছু ঘটে গেছিল। অনর্বকে কেউ কন্ট্রোল করতে পারছিল না। সে পাগলের মত ছুটাছুটি করছিল। অর্নবের অস্থিরতায় ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন করে ওকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়ে ছিল। পরের দিন আমার ক্যাবিনে যখন অর্নব ঢুকলো তখন ওকে দেখে মনে হলো, অনেক দামী একটা হারিয়ে যাওয়া সম্পদ সে ফিরে পেয়েছে।
অবশেষে আমি সুস্থ হয়ে আমার সংসার নামক স্বর্গে ফিরলাম। আমার অভারী কেটে ফেলার কারণে আমি আর কখনোই মা হতে পারবো না। এটা একটা নারীর জন্য বিশাল একটা কষ্টের গভীর ক্ষত। অর্নব আমার সেই অক্ষমতার কষ্টটা গভীর ভাবে অনুভব করে ছিল। যে মানুষটা আমার ভেতরটা দেখতে পায় তার কাছে আমার লুকায়িত কিছু নেই। আমাদের পঞ্চম marriage anniversary তে অর্নব আমাকে বিস্ময়কর গিফট দিয়ে দিল। সে অনাথ আশ্রম থেকে একটা পাঁচ মাসের মেয়ে বেবী এনে আমাকে গিফট করলো।
একটা ছোট্ট শিশু কোলে নিয়ে এসে সে বললো-“মধুর মা তোমার মধুকে এনেছি” আমি মুগ্ধ নয়নে অর্নবের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললাম-“তোমার মত স্বামী যদি পৃথিবীর সব নারীর জীবণে থাকে তবে চিরুণী তল্লাসী করেও একটাও দুখী নারী খুঁজে পাওয়া যাবে না।” আজ নিজেই নিজেকে সেরা স্বামী প্রাপ্তির Award দিতে ইচ্ছে করছে। আমি বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে মাতৃসুখ অনুভব করলাম, যে সুখটা ছিল অর্নবের দেয়া সেরা উপহার। পৃথিবীর সেরা গিফট পেয়ে অবশেষে আমি মা হলাম, মধুর মা।