ভালবাসা

ভালবাসা

এলার্মের কাঁপুনি তে ঘুমটা ভেঙে গেল আবিরের।ধড়ফড় করে উঠেই এলার্ম বন্ধ করে দিলো।আবিরের পাশেই এখনো বেভোরে ঘুমাচ্ছে জুথি।আবির আস্তে আস্তে ডাক দিলো জুথিকে।

–“জুথি এই জুথি! আবিরের ডাকে জুথি কম্বলের ভিতর থেকেই আড়মোড়া দিয়ে বলে উঠলো,
–“উম! কি হয়েছে?
–“ফজরের নামাজ পড়বে না,উঠো তাড়াতাড়ি। ”
–“উম!উঠছি! ”

উঠছি শুনে আবির উঠে রান্নাঘরে চলে গেল।গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে চায়ের পানি উঠিয়ে দিলো।এবার আবার এসে দেখে জুথি এখনো উঠেনি ঘুম দিয়ে।এবার একটু জোরেই ডাক দিলো,

–“জুথি!জুথি! নামাজের সময় পার হয়ে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি উঠো”
–“উম একটু ওজুর পানি এনে দাওনা বাথরুম থেকে।”

এই শুনে আবির নিঃশব্দে গাল চেপে হাসি দিয়ে বাথরুম থেকে আধা বালতি পানি আর মগ এনে খাটের পাশে রাখলো।

–“এই নাও এনেছি, এবার ওজু করে নাও”

আবির বালতিটি বিছানার পাশে রেখে নিজে চলে গেলো ওজু করতে।জুথি আস্তে আস্তে উঠে ওজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।আবিরও ওজু সেরে এসে জুথির পাশেই জায়নামাজ পেড়ে নামাজ পড়তে লাগলো। এদিকে জুথি নামাজ শেষ করে আবার কম্বলটা জড়িয়ে শুয়ে পড়লো বিছানাই।আবির নামাজ সেরে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের পানি নামিয়ে টোস্টারে পাউরুটি দিয়ে দিলো টোস্ট বানানোর জন্যে।এবার চা বানিয়ে দুকাপ চা ট্রেতে সাজিয়ে রাখলো। ততক্ষনে টোস্ট বানানো হয়ে গিয়েছে।এবার টোস্ট গুলি ও জেলির কৌটাটা ট্রেতে সাজিয়ে, ট্রেটি নিয়ে জুথির বিছানার পাশের টেবিলে রেখে জুথিকে ডাক দিলো।

–“জুথি ওঠো নাস্তা রেডি হয়ে গিয়েছে”
–“হুম..এত তাড়াতাড়ি নাস্তা রেডি! বাহ এত আমাল জলিল!
–“হয়েছে এবার খেয়ে উদ্ধার করেন আমাকে!আমার অফিস আছে।”

এই বলে আবির টোস্টে জেলি মাখিয়ে খাওয়া শুরু করে দিল। জুথি উঠে বসে কিছুক্ষণ আবিরের খাওয়া দেখলো এবং তারপর আল্লাদে গলাই বললো,

–“আবির”
–“হুম”
–“খাওয়ে দাও না!'”

আবির একটি মৃদু হাসি দিয়ে একটি টোস্টে জেলি মাখিয়ে জুথির মুখের সামনে ধরতে লাগলো আর জুথি খেতে লাগলো। জুথির খাওয়া শেষ হলে আবির নিজের নাস্তা খেয়ে ছাদে চলে গেলো হাটতে এবং ফুল গাছ গুলিকে পানি দিতে। প্রায় ত্রিশ মিনিট হেটে ঘরে ফিরে এলো গোসল করতে।এসে দেখে জুথি রাইস কুকারে চাল রাখছে।এবার আবির ভুরু কুঁচকে বললো,

–“তোমাকে না বলেছি এসব এই তিনমাস করো না।আমার কথা ভাল লাগেনা তাইনা!”
জুথি আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আরে এটুকুতে কিছু হবে না বাবু!” এই শুনে আবির জুথির হাত থেকে হ্যাচকা টান দিয়ে রাইস কুকারটা নিয়ে জুথিকে ধরে সোফাতে বসিয়ে দিলো এবং জুথির সামনে হাটু গেড়ে বসে জুথির পেটে হাত রেখে বললো,
–“এই ৭ মাস এভাবে তোমাকে সব কাজ থেকে বিরত রেখেছি,

শুধু আমার এই বাচ্চাটার জন্যে,রান্না পারতাম না,শিখে নিয়েছি, যাতে তোমার এখন কিছু করা না লাগে,তবুও তুমি আমার কথা শুনো না! এর পরে করলে ভাল হবে না কিন্তু জুথি” জুথি বুঝতে পারলো আবির রেগে গিয়েছে।তাই জুথি আলতো করে আবির এর মাথা ধরে কপালে চুমু একে দিয়ে বললো,

–“আচ্ছা আর হবে না”

আবির অফিসের জন্যে রেডি হতে লাগলো।জুথি ৭ মাসের প্রেগন্যান্ট।এটাই তাদের প্রথম সন্তান তাই তারা দুজনই খুবি সাবধানি। আবির আর জুথির সংসার জীবনের প্রায় দুটি বছর হতে চললো।অনেক উত্তান পতনের ভিতর দিয়ে তাদের ছয় বছরের প্রেমের পর বিয়ে হয়।জুথি বাবা মার একমাত্র মেয়ে। জুথির বাবা মা প্রথমে আবিরকে মেনে নিচ্ছিলো না।এটাই স্বাভাবিক। কারন পৃথিবীর সকল বাবা-মা মনে করে তার মেয়ের সাথে যে ছেলে প্রেম করে সেই ছেলে বাদে দুনিয়ার সকল ছেলেই ভাল ও ভদ্র।

এদিকে জুথি আবিরকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না এটা সাফ জানিয়ে দেয়।তাছাড়া ছেলে হিসাবেও আবির অনেক ভাল ছিল।তিন ভাই এর মধ্যে আবির মেঝো। আবিররা পুর্বপূরুষ থেকেই অনেক শিক্ষিত তবে চাকুরী জীবনে সততার দরুন আবিরের বাবা অঢেল সম্পত্তি বানাতে পারেননি। এদিকে আবির বিসিএস ক্যাডার। তার নিয়োগ হয়েছে সচিবালয়ে। সেও তার বাবার মতই সৎ ও সত্যবাদী। অনেকেই ধারনা করে থাকে যে প্রেমের বিয়েতে সংসার জীবনে নানা সমস্যা, ঝগড়াঝাঁটি হয় কিন্তু এটা ভুল প্রমান করে আবিররা খুবি ভালভাবে সংসার করছে।আসলে এই ব্যাপারটা মানুষের মন মানুষিকতার উপর নির্ভর করে।প্রেমের বিয়ে বা এরেঞ্জ ম্যারেজ মানেই যে সুখের সংসার এটা কুসংস্কার ছাড়া কিছুনা। বেলা ১ টাই আবির জুথিকে ফোন করলো।

–“হ্যালো জুথি”
–“হুম বলো”
–“আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি,এখুনি বাসার সামনে পৌছাবে, তুমি নীল শাড়িটা পরে চলে এসো,আজ বাইরে লাঞ্চ করবো।” জুথি একটি হাসি দিয়ে বললো,
–“আচ্ছা”

জুথি আবিরের কব্জি শক্ত করে ধরে আছে।লিফটে উঠলে জুথির কেমন যেন ভয় ভয় লাগে তবে যখন এই কব্জিটা ওর হাতের মুঠোতে থাকে তখন তার সকল ভয় কেটে যায়। লাঞ্চ সেরে এখন ওরা গাড়ির কাছে যাচ্ছে।

–“আচ্ছা জুথি আমরা কত দিন হল সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখিনা?” জুথি একটু ভেবে বললো,
–“বাবু পেটে আসার কয়েক মাস আগে গিয়েছিলাম, এর ভিতর আর যাওয়া হয়নি, কিন্তু কেন?” আবির দুটা টিকিট বের করে জুথির হাতে দিয়ে বললো,
–“আজ ‘আয়নাবাজী’ দেখতে যাবো, চলো।”
–“কি ব্যাপার আজ একটার পর একটা সারপ্রাইজ দিচ্ছো কেন আবির?” আবির জুথির ডান হাতটা আলতো করে ধরে বললো,

–“আজকে অনেক স্পেশাল একটা দিন!আজকে আমাদের পরিচয় এর ৩০০০ তম দিন” জুথি হতভম্ব হয়ে বললো,
–“O my god! তুমি এটা হিসেব করে রেখেছো?”
–“হুম রেখেছি কারন আমি যখন তোমাকে প্রথম দেখি সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই অপ্সরাকে যদি আমার অর্ধাঙ্গিনী বানাতে পারি তবে আমাদের দেখা হওয়ার প্রতি হাজার দিন পরপর তোমাকে নিত্যনতুন সারপ্রাইজ দিয়ে যাবো।তাই আজকের এই সারপ্রাইজ।

জুথি অবাক নয়নে আবিরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবিরের বুকের বাম পাশে মাথা গুজিয়ে রাখলো আর মনে মনে ভাবতে লাগলো যে এত দিনের প্রেমের পরে বিয়ে করারো কত দিন হয়ে গেলো। তবুও মানুষটার ভালবাসা একটুও একঘেয়ে হল না।প্রতিনিয়তই আবির নিত্য নতুন ভাবে একেকটি দৃষ্টান্ত দিয়ে ভালবাসার একঘেয়েমিটা দূর করে দিচ্ছে। প্রার্থনা করি এভাবেই একঘেয়েমি থেকে দূরে থাক তাদের ভালবাসা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত