ভালোবাসি তোমাকে

ভালোবাসি তোমাকে

সকাল থেকে তোড় জোড় চলছে,, সবার মধ্যেই চাঞ্চল্য কাজ করছে । আজ আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে । আমি শুয়ে আছি, ভালো লাগছে না কিছুই । জানি আজ এতো আনন্দ, আমাকে বিদায় করার ইচ্ছায় ভাটা পরবে ।

এরকম স্বপ্ন চাঞ্চল্য একদিন আমার মধ্যেও ছিলো… সেই দিনটা! হলুদ রং টা কটকটে খ্যাত হলেও ওর জন্য আমি হলুদ শাড়ি পড়েছিলাম মনে হচ্ছিলো এইতো স্বপ্নের একটা জীবন পেতে যাচ্ছি হঠাৎই সব দুঃস্বপ্নের অংশ হয়ে গেলো! “আপু ওঠ!! গোসল করে রেডি হ! এই শাড়িটা তোকে পরতে বলেছে আম্মু” আমি শাড়িটা নিলাম, ছোট বোনটারও দেখি মারাত্মক আনন্দ! আমি ক্লান্ত পায়ে গেলাম ফ্রেশ হতে, শাড়ি পরলাম । নীল রংটায় আমাকে খারাপ লাগছে না! ভালোই তো! আম্মু এই প্রথম আমাকে সাজালো । আয়নায় দেখে নিজেই মুগ্ধ হলাম! হালকা সাজ কিন্তু ভালো লাগছে । আজ কতো বছর যে হলো নিজেকে এভাবে দেখি না! বেল বাজছে,,,তারা বোধ হয় এসেছে ।

আমি বসে আছি সঙ্গের মতো,,, কি জানি! হয়তো তাদের ভালো লেগেছে! ছেলে আমার সামনেই বসা । মুখ ভালো করে দেখি নি । দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে না। আমাকে ভিতরে যেতে বলা হলো চলে গেলাম । বিকেলের দিকে গেলো তারা তারা হ্যা বলেছে, ছেলে নাকি আমাকে চেনে অনেক আগে থেকেই । ছোট বোনটা বললো, “জানিস আপু দুলাভাই তোর নাম্বার নিলো, তোকে চেনে আগে থেকেই, পরিবার থেকেও রাজি, তোকে শুধু দেখে গেলো! তুই রাজি হলেই বিয়ে পাকা” আমি শুনে গেলাম তিতলিকে বললাম যেনো আমি ঘুমিয়ে গেলে আমাকে না ডাকা হয়, ঘুমিয়ে যাওয়ার ভান করলাম । ভান করতে করতে সত্যিই ঘুমিয়ে গেলাম । কেউ ডাকলো না । হঠাৎ ঘুম ভাংলো একটা ফোনে । অপরিচিত নাম্বার । ফোন ধরলাম, অপরিচিত কন্ঠ বলে উঠলো, “আপনি কি নিশি?”

“জি! কে বলছেন প্লিজ?”
“আমি অয়ন”
“অয়ন?”
“আপনার কি বিয়েতে মত আছে?”
“আপনি নাকি আমাকে চিনতেন?”
“জি”
“কে আপনি?”
“আপনার শুভাকাঙ্খী, বলতে পারেন আপনাকে ভালোবাসি!”

“কতোটুকু চেনেন আমাকে?”
“বেশ খানিকটাই চিনি”
“সবটা চেনেন না । আমি খুবই খারাপ মেয়ে”
“খারাপ বলতে?”
“আমি সতী না, আমার একটা পাস্ট আছে ।”
“থাক সেসব কথা নিশি”
“থাকবে কেনো! কাকে বিয়ে করবেন জানতে হবে না? তবে একটা অনুরোধ করবো রাখবেন?”
“কি অনুরোধ?”
“আপনি সবটা জানলে বিয়েটা করতে চাইবেন না আমি জানি তবে দয়া করে পরিবারের কাউকে বিষয়টা জানাবেন না! কেউই জানে না ।”

“আমি জানি, আপনাকে কিছু বলতে হবে না”
“আপনাকে জানতেই হবে, আমি সারাজীবন লুকিয়ে বাঁচতে পারছি না! আমি একজনকে ভালোবাসতাম, বুঝি নি, অন্যায় করেছি । শাস্তিও পাচ্ছি ।”
“জানি”
“কি জানেন?”
“আপনি তাকে ভালোবাসতেন, বিয়েও করেছিলেন হয়তো ।”
“আপনি এটা কিভাবে জানেন?”
“ওই যে বললাম চিনতাম আগে থেকেই!”
“তাও আপনি আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন!”

“কেনো! ভুল কি করলাম! আপনি যেমন ওকে ভালোবাসতেন, আমিও আপনাকে ভালোবাসতাম ।। আপনার ভালোবাসাটা কতো পরিষ্কার ছিলো আমি দেখেছি । আর তা ছাড়া আপনি যে বলছেন আপনি সতী নন, খারাপ মেয়ে কেনো বলছেন!” “কারণ “আপনি তো তাকে বিয়ে করেছিলেন, স্বামী হিসেবে মেনেছিলেন, তার ফ্রডের দায়ভার তো আপনার না, আপনি সতীত্বও হারান নি নিশা! আপনি ভালোবেসে বিশ্বাস করেছিলেন । আর এমনও না যে বিয়ে ছাড়াই মেলামেশা করেছেন ।” আমি কাদছি,, সত্যিই আমি ওকে বিয়ে করেছিলাম,ও আমাকে বলেছিলো চাকরিটা কনফার্ম হলেই আমাকে নিয়ে যাবে আমিও বিশ্বাস করেছিলাম! চার বছর ধরে ভালোবেসেছিলাম ওকে! বুঝি নি ও এভাবে ছেড়ে যাবে! কান্না থামাতে পারলাম না আবার যেনো চোখের সামনে আজ নতুন করে ঘটে যাচ্ছে! কান্নার শব্দ হয়তো উনি পেয়েছেন!

“কাদবেন না নিশি,,, আপনি খারাপ হলে বিষয়টা আপনি যাকে বিয়ে করছেন তার থেকে লুকানোর চেষ্টা করতেন । করতেন না?” “আপনি সত্যিই আমাকে মেনে নেবেন? মানতে পারবেন!” “নিশি ভালোবাসি তোমাকে । আমি সত্যিই ভালোবাসি, তোমাকে আমি সুখী দেখতে চেয়েছি সেই প্রথমদিন থেকে, ছায়ার মতো তোমার পাশে থেকেছিলাম, কিন্তু তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসতে বলে কখনো তোমার সামনে আসি নি, একটা বার সব ভুলে নতুন করে সাজাতে পারবে না? আমি তোমাকে তোমার অতীত নিয়ে কিছুই বলবো না । আমি তোমার অবস্থাটা বুঝি, তোমাকে সম্মান করি আমি আর কিছুই শুনতে পাচ্ছি না,,মনে হচ্ছে কথাগুলো দূর থেকে আসছে । ছোট বোন আসলো, “আরে আপু! ঘুম ভাংলো তোর!” “হু” ও পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো ,”এই আপু তোর কি বিয়েতে মত আছে?” আমি মাথা নিচু করে বসে থাকলাম । ক্লান্ত কন্ঠে বললাম

“মত আছে । সে সবই জানে । এটা আমার সৌভাগ্য, যে আমার মতো মেয়েকে কেউ গ্রহণ করবে ।”
“তোর মতো মেয়ে মানে! আর কিই বা জানে!?”
“আমার মতো মানে আমার মতো । তুই যা বাবা মাকে বল আমরা রাজি ।”
“আচ্ছা,”
“আর শোন আম্মুকে আসতে বলিস”
“okkkk”

আম্মু এসে আমার পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বললো, “ছেলেটা তো ভালোই , তোর ভালোই হবে রে মা”
এতোগুলো বছরের মধ্যে আমি মাকে জড়িয়ে ধরি নি এভাবে, নিজেকে খুব ছোট লাগতো তাই সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু আজ মা কে জড়িয়ে ধরেছি, আজ এই প্রথম এতো জোড়ে কাদছি অনেক বছর আগের একটা ভুল শুধরানো যাবে না জানি, তবে আজ সব জেনে যে আমাকে তার পরিবারের অংশ বানাতে চায় তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ থাকবো । আচ্ছা ও কি পারতো না আমার সাথে সংসার করতে! তাহলে এতো গুলো বছরে কি আমাকে এতো অপমান, নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা জন্মাতো! আমি তো আজও ওকে ভুলতে পারি নি! পারবোও না! ভালো থাকুক ওর সংসার নিয়ে ।

“কি রে মা! কি এতো ভাবছিস!? এতো কান্নাকাটি কেনো! কি হয়েছে! আমাকে বল!” “জীবনটা অদ্ভুত মা! খুবই অদ্ভুত”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত