একটি প্রেমের গল্প

একটি প্রেমের গল্প

বিয়ের পর মুহূর্ত থেকেই হাজব্যান্ড’টার পাশে কোনো সুন্দরী অসুন্দরী কোনো মেয়েকেই সহ্য হচ্ছেনা। সবাইকে সতীন সতীন মনে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে,পিশাচী হয়ে তাদের রক্ত চুষে খাই,স্যরি পান করি। আর দুনিয়ার আত্মীয়া অনাত্মীয়া সবাই শ্বশুরঘর ভর্তি। তা ঘরেই ভর্তি থাকো না, আমাদের রুমে কেনো? সবাই আবার, অযথা হেসে হেসে ইচ্ছে করেই ওর গায়ে ঢলে ঢলে পড়ছে যেন। কিরে শয়তানিরা,তোদের কি চোখ নাই, দেখছিস না ,চান্দের চেয়েও সুন্দরী বউ বিছানায় গোলাপ ফুল হয়ে ফুটে বসে আছে!?

তোদের কি আর সময় আছে, এসব রঙ ঢঙ করার? বিয়ের আগে যা করেছো, করেছো আর কি! এখন আর এসব চলবেনা! কিন্তু কিচ্ছু বলা হয়ে উঠেনা। কে বানিয়েছে এমন নিয়ম,বউ মানেই মুখ নিচু করে চুপচাপ সঙ সেজে বসে থাকতে হবে!? যত্তোসব পঁচা নিয়ম! ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে ঘোমটা ফেলে মাথাটা দুই পাশে কয়েকবার হেলে দুলে নেড়ে ঘাড়টাকে একটু আরাম দিই। কিন্তু তাদের মরার রঙঢঙ যে শেষ হবার নামই নেই! কিছুক্ষণ পরপর,হিহিহি, হহাহা করে ভাবি ভাবি বলেও কিসব বলে আমাকে,একটু হাসিহাসি মুখ করি শুধু,জবাব দিতে মন চায় না।

মুখ খুললেই বলতে ইচ্ছে হবে, ভাগ, পিশাচীমূর্তির দল,আরাম করে শুতে দে,আর কতো জ্বালিয়ে রক্ত খাবি? দূর হও। হায়রে,তাদের ভাইয়ু,ভাইয়্যা,ভাইটি,চান্দু বলা শেষই হয়না। অনেক অনেকক্ষণ পর,তারা রুম থেকে প্রস্থান করে,সাথে তাকে পটিয়ে পাটিয়ে হাজার সাতেক টাকাও নিয়ে যায়। তা চান্দু সাহেব, টাকা দিবেনই যখন, আরো আগে দিয়ে বিদায় করবেননা? অতো সোহাগ নেয়ার কি দরকার ছিলো! তাদের সোহাগ ভালো লাগে? যাও তাদের পেছন পেছন যাও,দরজা আটকাও কেনো? এসব বলতে পারলে শান্তি লাগতো। কিন্তু চান্দু বাবারে তাও বলা হয়না। ওরা যেতেই আমি ঘোমটা ফেলে ঘাড় কাত করি।

-কি হলো! ঠিক আছো?

আমার জন্য উনার দরদ এখন উতলিয়ে পড়ছে। ইচ্ছে করছে বলি,এতো উতলায়ো না,ঢেকচি থেকে দুধ উপুড় হয়ে পড়ে যাবে।

-কিছু না,মাথা ধরেছে।
-প্যারাসিটেমল দেবো?
-না,লাগবেনা।
-স্যরি!
-স্যরি কেনো?
-অনেকক্ষণ ওদের যন্ত্রণা সইতে হলো তোমাকে। হায় আল্লাহ, গাধাটা বুঝেছে তো! চান্দু দেখি, তাও বুঝে।

– না না ঠিক আছে। ভদ্রতা করে বলি।
-আমার আত্মীয় সংখ্যা বেশি,এতো এতো কাজিন। দেখো খুব জ্বালাবে তোমাকে।
-আমিও জ্বালাবো। মুখ ফসকে বেড়িয়ে যায়।
-কি!?
-বলছি,কিছু হবেনা,আমি সহ্য করে নেবো। ফিসফিসিয়ে মুখের ভেতর বলি,যেমন আজ করলাম আর কি।
-হুম,এতোক্ষণও তো সহ্য করতে হলো। ব্যাটা দেখি মনের কথা সব বুঝে ফেলে!
-তুমি চাইলে ড্রেস চেইঞ্জ করে নিতে পারো,আর কতক্ষণ এতো ভারি জামা পরে থাকবে? আহারে আমার মনের সব কথায় বলে দেখি!
-হুম।

আমি বাপের বাড়ি থেকে আনা একটা সুতির ত্রিপিস পরে আসি বাথরুম গিয়ে। সাথে মুখ হাতও ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নিই।
ব্যাটা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে,যেন বউ বদল হয়েছে!

-কিছু বলবেন?
-তোমাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে।
-হুম,ভুত থেকে মানুষ হলাম,তাই।
-হাহাহা ভালো বলেছো। এখন ঘরের মেয়ে লাগছে।
-আর আগে কেমন লেগেছিলো?
-অচেনা অপরিচিত কেউ।
-আমি তো অচেনায়।

কিন্তু মাথার উপর এতো বড় খোঁপা কেমন বেখাপ্পা লাগছে!! ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে চিরুনি হাতে অসহায়ভাবে বসে আছি। কি করবো,একা খুলা সম্ভব নয়। চুলে অনেক জটলা করেছে পার্লার মহিলা।

-আমি কি হেল্প করতে পারি?
-পারবেন?
-চেষ্টা করে দেখতে পারি।
-প্লিজ, তবে করুন।

সে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে আস্তে আস্তে ব্যথা না পাই মতো একটা একটা করে জটলা খুলতে লাগলো। আরামে আর ক্লান্তিতে আমার চোখ জুড়ে ঘুম আসতে লাগলো। বেচারা সাহায্য করবে বলে ফেঁসে গেছে। নিশ্চয় হাত ব্যথা করছে তার! মায়া হচ্ছে এখন তার জন্য।

-বাকিটা থাক নাহয়। আমি বলি।
-না না,আরো বেশি জট বেধে যাবে নইলে। আর একটু ধৈর্য ধরো।

হায় আল্লাহ, কয় কি! ধৈর্য তো সেই ধরছে,আমার তো আরামে ঘুম এসে যাচ্ছে! পরিশেষে, তিনি অতি ধৈর্য পরীক্ষায়,আমা হইতে একশো তে, একশো দশ নাম্বার পাইয়া উত্তির্ণ হইলেন।

-অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি একা কখনোই খুলতে পারতামনা।

উনি প্রতুত্তরে সুন্দর করে হাসলেন। বাহ,উনার হাসি তো খুব সুন্দর! চুল আছড়ে দেয়ায় আবার উনার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি নাতো!? নাকি তার সুন্দর হাসির প্রেমে? প্রেম এতো সহজ!? প্রায় অপরিচিত একজন এর প্রতি বিয়ের প্রথম রাতেই প্রেম,তা কি সম্ভব!? বিছানায় গেলাম। তিনিও আসলেন।

-ঘুম পাচ্ছে তোমার?
-হুম,কিছুটা।
-আপনার পাচ্ছেনা?
-হুম
-এমনভাবে হুম বললেন,মনে হয় পাচ্ছেনা।
-তোমার ঘুম পাচ্ছে, ঘুমিয়ে পড়ো।
-আসলে তেমন করে পাচ্ছেনা।

আমার তার কি পরিকল্পনা, তাই জানার আগ্রহ। ঘুমও পালিয়ে যাচ্ছে। নতুন একজন মানুষ, তার উপর পুরুষ, হোক না সে বর। তবুও ঘুম কি ছাই শতভাগ আসবে?

-তাহলে চলো,
-কোথায়?
-আমার ময়না,টিয়া’র সাথে পরিচয় করে দেবো। আজ সারাদিন তাদের সাথে দেখা করার সুযোগ হয়নি,সময় পাইনি। কেমন আছে কি জানি!

ব্যাটা বলে কি! ওরা কারা? এক পিশাচীনির দল গেলো তো,আরেক দল এসে হাজির! সব সতীনরে আমি আজই শেষ করবো অনিচ্ছাসত্ত্বেও জানতে চাইলাম,

-ওরা কারা?
-আমার পোষা পাখি,কবুতরও আছে,চলো দেখবে।

আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ইতিমধ্যে সবাই শুয়ে পড়েছে। আমরা তবুও খুব সন্তর্পণে আস্তে আস্তে ছাদের ছোট্ট ঘরে গেলাম। তাকে দেখে সব পাখি কিচিরমিচির করে উঠলো। আর সাথে আমাকে দেখে কি একটু বেজার হলো!? না, মনে হয়। পাখিদের মনে মানুষের মতো অতো হিংসে নেয়। এদিকে, আমার উনি তাদের যত্ন করে খেতে দিলো, সবাইকে স্যরি বললো। আমি কি তার পাখি প্রেম দেখে দ্বিতীয় বারের মতো প্রেমে পড়ছি নাতো!? ওখান থেকে চলে আসার সময় তাকে বললাম,

-একটা কথা বলি,রাগ করবেন নাতো?
-আগে শুনি..
-আপনার পাখির প্রতি ভালোবাসা দেখে ভালো লাগছে।
-থ্যাংকস, এতে রাগ করবো কেনো?
-কিন্তু ওদের বন্দি করে রেখেছেন,তা দেখে খারাপ লাগছে।
-ওরা তো পোষা।
-পোষা হলে ,টিয়া আর ময়না গুলো খাঁচা থেকে বের করে ফেলুন। ওরা মুক্ত হয়ে খেলুক, থাকুক।
আপনাকে ভালোবাসলে এমনিতেই থাকবে।

-সত্যি ছেড়ে দিতে বলছো!যদি চলে যায়?
-গেলে যাবে,তাদের যেমন ভালো লাগে।ওদের পাখা আছে,মুক্ত হয়ে আকাশে উড়ে বেড়াক। শুধু শুধু বন্দি করে ওদের কষ্ট দিচ্ছেন।
-ওরা আমাকে ভালোবাসে।
-তাহলে তো ভালোইই,সারাদিন ঘুরে ফিরে আপনার কাছেই আসবে,কবুতরের মতো।
-চলো।
-কোথায়?
-ছেড়ে দেবো। সে সত্যিই ছেড়ে দেয়,পাখিগুলো অবাক হয়ে খাঁচায় বসে পাখা ঝাপটায়,উড়তে ভুলে যায়।
-এভাবেই থাকুক।ওদের যখন ইচ্ছে হবে,উড়বে।

-আমরা কি আরো কিছুক্ষণ ছাদে থাকতে পারি?আমি জানতে চাই।
-অবশ্যই পারি। কিন্তু তোমার কি ঘুম পাচ্ছে না?
-না, চলুন আজ না ঘুমাই।
-কি করবে?
-প্রেম করবো বুদ্ধুরাম। পাখিদের প্রতি এতো ভালোবাসা, কই নতুন এই সুন্দরী বউয়ের হাতও তো একটু ধরতে চাইলেনা…!
-ধরবো হাত?
-অবশ্যই ধরবে।

ওরা হাত ধরাধরি করে ছাদে হেঁটে হেঁটে রাজ্যের কথা বলে। এখন পিশাচীনিদের দল নয়,মেয়েটিই স্বামীর গায়ে, কাঁধে ঢলেঢলে পড়ে। বাসর রাতে তারা ছাদে হেঁটে হেঁটে প্রেম করে!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত