রাগে অনুরাগে

রাগে অনুরাগে

পাগলী বউটাকে নিয়ে আর পারা গেল না। বাসায় ফিরে এতোটা হতভম্ব হবো সেটা ভাবিনী। পাগলীটার কান্ড দেখে আমি পুরাই স্তম্ভিত । বেশ কয়েক বার কলিং বেল বাজানোর পর দরজা না খুলায় বুঝলাম বউ আমার নিশ্চয়ই কোন বান্ধবীর বাসায় গেছে। ওর তো ঝাক খানেক বান্ধবী। একাক দিন একাক মেয়ের নাম বলে। একটা মেয়ের এতো গুলো বান্ধবী হতে পারে তা এই তারছেড়া পাগলীটাকে বিয়ে না করলে জানতেই পারতাম না। যাকে ভাল লাগে, যার সাথে মিল পড়ে তাকেই সই পাতিয়ে বসে। আর যখন যে বান্ধবীর সাথে ইচ্ছা করে তার বসায় ঘুরতে চলে যায়। আমি হলাম এই তারছেড়া অবনির হতভাগা বর। সেই জন্য একটা চাবি সব সময় আমার সাথে রাখি।

ভাবছি অবনি কি ঘুমিয়ে পড়ছে, নাকি বান্ধবীর বাসায় গেছে? ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৯ টা বাজে। চাবি দিয়ে দরজার লক খুলে ভেতরে ডুকলাম। রুমের ঢুকে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ঘরের অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে ছোটখাট একটা সাইক্লোন বয়ে গেছে ঘরের ভিতর দিয়ে! ঘরটাকে বেশ আহত আর মুমূর্ষ মনে হচ্ছে! ঘরের সব কিছু এলো মেলো। বেডে গিয়ে দেখি বেডেশিটও নেই। বেড এর পাশের বুকসেল্ফের সব বই নিচে পড়ে আছে। ফুলদানী গুলোও ফুলসহ ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ড্রেসিং টেবিল এর গ্লাস ফাটা। বুঝলাম গুন্ডি অবনিটা যাওয়ার সময় গুন্ডামী করে গেছে। আজকেই প্রথম নয় এই ঘটনা, এমন পাগলামী সে আগেও বেশ কয়েকবার করেছে। রাগ উঠলে ভাংচুর করা ওর স্বভাব। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় কিচ্ছু খুঁজে পাই না। আমার ঘড়ি, ওয়ালেট, পেন এই কটা জিনিস সামনে থাকলেও তাড়াহুড়ায় দেখতে পাই না। বিয়ের পর থেকে এইসব অবনিই ঘুছিয়ে আমার হাতে তোলে দেয় আর বেশ ভাব নিয়ে বলে,

– ” আমি না থাকলে যে তোমার কি হতো! এই সব খুঁজতে খুঁজতেই তো দুপুর গড়াত। তোমার আর অফিসে যাওয়া হতো না।” রোজ রোজ এই ঘ্যান ঘ্যান শুনতে কার ভাল লাগবে? তাই আমিও ভাব নিয়ে আজ সকালে বলেছি যে- “বউ ছাড়া আমার দিব্যি চলবে।” বুঝতে পারছি না যে, এই একটা কথা শুনে রাগ করে রাজকুমারী বাপের চলে গেলো নাকি কোন বান্ধবীর বাসায় গেলো? ওকে যখন ফোন দিতে যাবো ঠিক তখন দেখি টেবিলের উপর একটা চিরকুট ওয়েটপেপার দিয়ে চাপা দেওয়া।

চিরকুটা খুলে দেখি – এই হনুমান বউ ছাড়া তো তোমার দিব্যি চলবে তাই চলে গেলাম বাপের বাড়ি এখন আমাকে ছাড়া দিব্যি চলো তবে আমার সাথে সাথে আরো অনেক কিছু ছাড়াই চলো। খবরদার আমাকে নিতে আসবে না আর ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টাও করবে না। অবনি চিরকুট টা আগের জায়গায় রেখে দিলাম। ভেবেছিলাম ফোন করব। কিন্তু না আমি ফোন করব না। অবনিকে ছাড়া আমার দিব্যিই চলবে। থাক সে বাপের বাড়ি, আনবো না আমি।

১০ মিনিট পর.. ইস! খুব ক্ষুধা লাগছে। ক্ষুধায় পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে  কাপড় চেইঞ্জ করতে যাবো আলিমারি খুলে দেখি লুঙ্গি নাই। শুধু লুঙ্গি না, ইভেন আমার কোন কাপড়-ই নেই! তবে কি ঘরে চোর ঢুকে ছিল নাকি? সব কাপড় চোরে নিয়ে গেল! আবনি কি যাওয়ার সময় দরজা লক করে যায় নাই? চোর যদি চুরি করবেই তবে আমার কাপড়ের পাশে রাখা অবনির দামী কাপড় গুলা নিয়ে গেল না ক্যান? চোরটা কি তবে ব্যাচেলর চোর নাকি? আরে চোর ব্যাটা চুরি করছিস কর কিন্তু লুঙ্গিটা তো রাইখা যাইতে পারতি। এখন আমি কি পরবো? কাপড় ছাড়া থাকমু নাকি?  প্যান্ট পড়ে শুইলে তো ঘুমও আসবে না।

চোরের চৌদ্দগুষ্টি গালি দিয়ে উদ্ধার করতে করতে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশ রুমে ডুকলাম। ডুকে যা দেখলাম তাতে আমার চোখ কপালে উঠল। একি চোর ব্যাটা ত কিছু করে নাই সবই অবনির কান্ড। আমার সব কাপড় পানিতে ভিজাইয়া রাখছে দুটা বড় বালতি আর একটা ছোট গামলায়। রাগে দুঃখে তো মনে হচ্ছে কাপড়ের সাথে আমিও বালতিতে চুবে থাকি! ডায়নিং টেবিলে খেতে বসলাম। ডায়নিং এ গিয়ে দেখি কোনো খাবার নাই। সব বাটি ফাকা। বুঝলাম অবনি কিছুই রান্না করে নাই। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম ১০.১৫ বাজে। এখনও ডীনার হয় নি। মাথাটা ভো ভো করছে। বোধ হয় মাইগ্রেইন এট্যাক করেছে। ডাক্তার মাইগ্রেইন রোগীদের বারন করে খালি পেটে থাকতে। এটা তো অবনি ভাল করেই জানে তবে কেন রান্না করলো না? তবে কি এটা আমার শাস্তি?

ওষুধ খুঁজলাম পেলাম না। আমার ঘর মোটামোটি একটা ছোট খাটো ফার্মেসী। প্রথমিক চিকিৎসা সব ওষুধ-ই বাসায় থাকে । কাজ করতে গিয়ে অবনির কেটে ছিঁড়ে গেলে তার হাত ব্যান্ডেজ করে দেই। আমি বাসায় না থাকলে ও নিজেই করে নেয়। কিন্তু আমি বাসায় ফিরার পর সে ব্যান্ডেজ খুলে আমাকে দিয়ে আবার ব্যান্ডেজ করায়। ও বলে আমি নাকি ভাল ব্যান্ডেজ করতে পারি। আমিও একটু ডাক্তার ডাক্তার ভাব নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেই। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় তারছেড়া পাগলিটা ইচ্ছা করে হাত কেটে বসে আমার হাতের ব্যান্ডেজ করা স্বাদ পেতে।

নাহ! আর লেট করলে চলবে না এখনি বের হতে হবে না হলে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। দ্রুত পায়ে রেস্টুরেন্টের দিকে ছুটলাম। পায়ে হেটে যাচ্ছি কারণ বসা থেকে রেস্টুরেন্টটা খুব বেশি দূরে না। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১১ টা বাজে। রাস্তায় কোন যানজট নেই ; অনেকটাই ফাঁকা। চারদিকে একটা নিরব নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে। মাইগ্রেইনের রোগীদের জন্য উত্তম একটা পরিবেশ। শুধু পরিবেশ না এটাকে এক প্রকার ট্রিটমেন্টও বলা চলে। রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া সেরে মার্কেট থেকে ১ টা লুঙ্গি নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম।

লুঙ্গি পরতে যাব হঠ্যাৎ দেখি এমা  লুঙ্গি তো সেলাই করা হয় নি। এমনেতেই লুঙ্গি ঠিক মতো পরতে পারি না। প্রায় সময়-ই লুঙ্গির গিট খুলে যায়। অনেক সময় আবনির সামনেই লুঙ্গি খুলে গেছে। নিজের বউ বলে ইজ্জত খোয়া যায় নি তবে ওর হাসি থামতে ঘন্টাখানেক সময় লাগত। সেই সময়টায় নিজেকে অসহায় লাগত, আর মফিজ মনে হতো। মনে মনে নিজেই নিজেকে গালি দিতাম। আমি সত্যিই বাঙালী জাতীর কলঙ্ক। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী লুঙ্গিও পরতে জানি না। আর সেই জন্যই পাগলিটা কখনো বাসায় কাজের মেয়ে রাখতে দেই নি। কখন আবার কাজের মেয়ের সামনেই না ইজ্জত খোয়া যায়।

এই পাগলীটাকে আমি খুব ভালবাসি তবে সেটা মুখে প্রকাশ করি না, চেষ্টা করি কাজের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু পাগলিটা ভাবলো ওকে ছাড়া আমার দিব্যি চলবে। কিন্তু এটা বুঝলো না যে, ওকে ছাড়া আমার যে কিচ্ছু ভাল লাগে না। লুঙ্গিটা ভাল করে গিট দিয়ে শুয়ে পড়লাম। জানি বাসায় আর কেউ নাই বলা তো যায় না, যদি বাসা খালি পেয়ে কোনো পরী ঘুরতে আসে! তবে হয়ত অন্য আরো সাংবাদিক পরী এনে ইজ্জতের ১২ টা বাজাবে। মানুষের মধ্যে সাংবাদিক থাকতে পারলে পরীদের মধ্যেও নিশ্চয়ই আছে।

রেস্টুরেট থেকে বের হয়েই আম্মুর (অবনির মাকে আম্মু ডাকি) সাথে কথা বলেছি। উনার কথায় বুঝতে পারলাম অবনিও আমাকে ছেড়ে ভালো নেই, ছটফট করছে। পাগলীটার আমাকে ছাড়া ঘুম আসে না তবুও রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না বলে মাঝে মাঝেই হুটহাট করে চলে যায়। আম্মু (শ্বাশুড়ী মা) আমাকে একটু বেশী ভালবাসে বলে আমার হিংসুটে বউ খুব হিংসে করে। যেনো ওর মাকে আমি কেড়ে নিচ্ছি!

উফ্ মাইগ্রেইনের ব্যাথাটা বাড়ছে। বাহিরে গেছিলাম কিন্তু ওষুধ আনি নাই ইচ্ছা করে। ও যে শাস্তি দিতে চেয়েছে তা মাথা পেতে নিলাম। তাই খাব না আমি ওষুধ। হঠ্যাৎ তাকিয়ে দেখি অবনি সোফায় বসে বসে আচার খাচ্ছে । মাথার ব্যাথাটা প্রচন্ড বাড়ছে হিসাব মেলাতে পারছি না অবনি কিভাবে এখানে এলো। মনে মনে ভাবলাম হয়ত আমাকে ছাড়া থাকতে পারছে না তাই চলে এসেছে। তারছেড়া রাজকুমারী যখন যা ইচ্ছে করতেই পারে! আমি অবনির পাশে গিয়ে বসলাম। ওর চোখে চোখে রেখে জিজ্ঞাসা করলাম,

আমি – ” কি ব্যাপার এতো রাতে আচার খাচ্ছ কেনো?”

সে – “বা রে আচার খাব না কেনো? আমি যে তোমার বেবীর মা হতে চলেছি।”

আমি- “সত্যি বলছো?”

সে- “হুম”

আমি ওকে জরিয়ে ধরতে গেলাম দেখি ও হঠ্যাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল, কেউ নেই সোফায়। এটা মনের কল্পনা ছিল, বুঝলাম এই কল্পনাটা মাইগ্রেনের ব্যাথা আর ওর শূন্যতার অনুভূতি থেকেই হয়েছে। যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি ফ্লোরে পড়ে আছি। মনে মনে ভাবলাম হয়ত রাতে পরী এসে টেনে নিচে নামিয়েছে নয়ত আমি সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলাম। সকালে ঠিক টাইমেই অফিস গেলাম। মনে মনে ভাবলাম অফিস থেকে বাসায় ফিরার সময় পাগলীটাকে নিয়ে আসব। কিন্তু আনতে গিয়ে জানতে পারি রাজকুমারী আগেই বাসায় চলে এসেছে।মনে মনে খুশিই হলাম কারণ আমি আনতে গেলে সে আবার একটা ভাব নিয়ে আমাকে এক ঝাড় কথা শুনিয়ে তারপর আসতো।

রুমে ঢুকে লাইট অন করে দেখি অবনি ঘুমিয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম গত রাতের মত এইটা আবার কল্পনা নাতো? নাহ! এইবার হাতে আচার এর বাটি নাই, খালি হাত। আর আম্মুর কাছে থেকে তো জেনেই এসেছি যে, আমার বউ ফুলের টবে পানি দেয়ার জন্য ফিরে এসেছে। তাই আর সন্দেহ নেই যে এটা আমার বউ। আমার কাপড় ভিজানোর অপরাধে ওকে একটু মজা দেখাতেই হবে। তাই জোরে জোরে চিৎকার করতে শুরু করলাম। সেও লাফ দিয়ে উঠে বসলো। আমি চিৎকার থামিয়ে বিস্ময় সূচক দৃষ্টি নিয়ে অবনির কাছে গিয়ে বললাম,

-“এই আপনি কে?”

সে -“রোদ্দুর তুমি আমাকে চিনতে পারছো না? আমি তোমার অবনি।” আমি একটু ওর দিকে ঝুঁকে ওর মুখটা ভাল করে দেখে বললাম,

– “আপনি দেখতে ঠিক আমার বউয়ের মত”

সে-“মানে কি?”

আমি-“আমার বউ তো বাপের বাড়িতে তাহলে আপনি কে?”

সে-“আমি চলে এসেছি রোদ্দুর”

আমি-“আমার বউ তো চিরদিনের জন্য বাপের বাড়ি চলে গেছে। বিশ্বাস না হলে এই চিঠিটা পড়ে দেখুন”

সে-“রোদ্দুর আমি ফিরে এসেছি, আমি অবনি”

আমি-“বুঝেছি আপনি ভুত প্রেত ডাইনী টাইপের কিছু হবেন”

সে-“আজব তো! আমাকে পেত্নীর মত দেখতে লাগছে?”

আমি-“আসল রূপ তো দেখাচ্ছেন না, আমার বউয়ের রূপ ধারণ করে আছেন”

আহা কি মজা অবনি ভাবছে ওকে আমি চিনতে পারি নি। মনে মনে নিজের এক্টিং এর প্রশংসা নিজেই করলাম। আরো কিছুক্ষণ এক্টিং চালিয়ে ওকে বোকা বানাবো আজ।  অবনি খাট থেকে নেমে আমার কাছে এসে বলল -“রোদ্দুর আমাকে ছুয়ে দেখো আমি অবনি” আমি ওর কথা শুনে চিৎকার করে বললাম-“এই না খবরদার না, আমার কাছে আসবেন না। আমি ভুত দেখে খুব ভয় পাই। আর বউ ছাড়া পৃথিবীর সব নারীকেও ভয় পাই” এবার পাগলীটার খুব রাগ হলো মনে হয় তাই অনেকটা বলপূর্বক আমাকে জড়িয়ে ধরল । আমি চুপ করে আছি ; আমাকে এক্টিং আরো চালিয়ে যেতে হবে। আমি চুপচাপ আছি, ব্যাপক রকমের ভালো লাগছিল। আমাকে তার বাহু বন্ধন থেকে ছেড়ে দিতেই ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসলাম। এবার অবনি একটু ভাব নিয়ে বলল-“এখন বলো আমি কে?”

আমি-“আমার বউ”

সে-“কি করে বুঝলে?”

আমি-“তোমার শরীরের ঘ্রাণ বললো তুমি আমার বউ”

সে-“এত দেরী করে বাসায় ফিরলে কেনো?”

আমি-“কাজ ছিল।”

আমি ওয়াশ রুমে চলে গেলাম ফ্রেস হতে। ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখি অবনি বেডে গা হেলিয়ে শুয়ে আছে। আমি ওর কাছা কাছি যেতেই অবনি বলল-“তুমি গেস্ট রুমে ঘুমাবা”

আমি-“এমা কেনো?”

সে-“বউ ছাড়াই তো তোমার দিব্যি চলে তাই আমার কাছে শুবা না”

আমি-“আমি গেস্ট নই, এটা আমার বাড়ি তাই ইচ্ছে হলে তুমি ঐ রুমে যাও”

আমার কথা শুনে অবনির মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। মনে হচ্ছে এই বুঝি কেঁদে ফেলবে। কিন্তু না কাঁদলো না উল্টা রাগে ফঁস ফঁস করতে করতে গেস্ট রুমে চলে গেল। ও চলে যেতেই মুচকি হাসলাম। জানি না এই পাগলিটা যে কবে বুঝবে, ওকে যে আমি আমার সবটা দিয়ে ভালবাসি! সে যে ভালবাসার মতই একটা মেয়ে, ওকে ভাল না বেসে আমার তো আর কোনো উপায় নেই। গেস্ট রুমে গিয়ে দেখি পাগলীটা কোলবালিস জরিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। এমন ভাবে ধরেছে যে, আমার দেখে কোলবালিসের উপর হিংসা হচ্ছে। আমি কোল বালিসটা সরিয়ে ওটার স্থান দখল করে শুয়ে পড়লাম। মনে মনে বললাম, যা বালিস ব্যাটা সাইডে চাপ।

সকালে অবনির আগেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো। ওর ঘুমন্ত মুখটা পরীর মত লাগছে। আমি মুগ্ধ হয়ে অপলক দেখছি আমার বউটাকে। সে হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে আছে। এই ভাবে থাকতে বেশ লাগছে তাই আমিও স্ট্যাচু হয়ে আছি। অবনি নড়ে উঠতেই আমি ঘুমের ভান করে চোখ বন্ধ করে থাকলাম। ঘুম ভেঙে অবনি আমাকে এখানে দেখে অবাক হবে সেটা আমি শিওর। কিন্তু সে কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে উঠে যাচ্ছিল। সে বিছানা থেকে নেমে যেতেই আমি তার হাত টেনে ধরে ওকে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর কানে কানে বললাম-“বউ ছাড়া আমার দিব্যি চলবে কিন্তু এই তারছেড়া পাগলী অবনিকে ছাড়া আমার এক মিনিটও চলবে না। আর এই কথাটা আমার পাগলীটা একদমই বুঝে না।” আমার কথা শুনে অবনি স্ট্যাচু হয়ে গেল মনে হলো। আর কি যেন বিড়বিড় করছে।

আমি- ” কি বিড়বিড় করছ?

সে- “কিছু না।”

ও মনে মনে হয়ত বলছে, “এতো ভালবাসো তবে মুখে বলো না কেনো?” পাগলীটা বুঝে না, সব কথা প্রকাশ করা যায়, কিন্তু ভালবাসা টা বুঝে নিতে হয়। এটা ফীল করার বিষয় কিন্তু পাগলীটা তা বুঝে না। ওকে ছাড়া যে আমার প্রতিটা সেকেন্ডই মূল্যহীন মনে হয় সেটা আমিও তাকে বলব না।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত