নির্বিলাশা

নির্বিলাশা

আজও কি ফিরিয়ে দিবে,( রায়হান) দেখি কি করে আমার শোভাকাঙ্ক্ষিনী, ভালোই তো লাগে তার রাগের মাঝে লুকিয়ে থাকা তোতলানো কথাগুলো শুনতে। তুই শুধু তোতলানো কথাগুলোই দেখলি আর গত ছয় মাস ধরে যে তোকে রেগে রেগে কথা শুনিয়ে আসছে,,,, না ভাই আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এবার এর শেষ দেখেই ছাড়ব,,,( নাফিস)

চিন্তা করিস না তোরা। শুরু যখন আমি করেছি শেষও আমিই করব। এখন আমি ওকে পাত্তা দিচ্ছি তো তাই ওর ভাললাগছে না। কিন্তু এমনও একটা দিন আসবে যা দিন অনু আমার পিছনে ঘুরবে আর আমি ওকে পাত্তা দিবনা। হিহিহিহিহিহিহিহিহিহিহি,,,,,, ( রায়হান আর নাফিস একসাথে) ভাই স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর।( নাফিস) আরে সমস্যা নাই,, স্বপ্ন দেখা তো পাপ না, যতো খুশি দেখতে দে।( রায়হান) চুপ কর শালারা। কথাই আমার উপকার করবি তা না বরং আমাকে নিয়ে ঠাট্টাতামাসা করতেছিস তোরা।

ভাই, ভাই, ভাই, দেখ কে আসতিছে, ( নাফিস) তাকিয়ে দেখি অনু তার বন্ধী পুজার সাথে হাত নাড়িয়ে কথা বলতে বলতে আসছে। ভাই আজকে যে করাই হোক না ক্যানো, বলতে তো কে হবেই। (রায়হান) তারপর,,,, এইযে কলাবেনি অনু,, মশা মারতে মারতে কোথায় যাচ্ছেন?? কলাবেনি আর মশা, এসবের মানে কি? আর শোনেন, আমার সাথে যদি ভালভাবে কথা বলতে পারেন তাহলে বলেন কিন্তু কোনো আজেবাজে কথা বলবেন না, কারণ আমি অন্য মেয়েদের মতো না যে এরকম কথার দ্বারা আমি পটে যাব, আর এতো পিছু নেয়ার কি আছে,, ( অনু)

এতো তাড়াতাড়ি আর এতো রেগে আগে কখনওই অনু আমকে কথা শোনাইনি, আমি অবাক হয়ে অনুর চোখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি,, হঠাৎ করে অনুর বান্ধবী বলে ওঠে, এই যে মি. গাল বন্ধ করেন তা না হলে মশা কিন্তু এবার আপনার গালে ঢুকবে ,, তার কথাটি শোনার পর গাল বন্ধ করে দুপাশে তাকিয়ে দেখি শালা দুটো হাওয়া , আবার একটু আগে আমারে জ্ঞানের স্রতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল,,,, নিজে নিজে এসব বিড়বিড় করতে করতে, যেই অনুর দিকে তাকাই দেখি এক গাল ভরা হাশি দিয়ে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়,

এসব কি হচ্ছে আমার সাথে, একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে করলেই যেন নিজেকে এক ভিনগ্রহ থেকে আগতো এক বোকা এলিয়েন মনে হচ্ছে,,,,,,, যা ভেবেছিলাম হলো তার ঠিক উল্টোটা,,,,, কোথায় ভেবেছিলাম যে মনের শহরে জমে থাকা অনুভূতিগুলো তার সামনে উপস্থাপন করব, ভেবেছিলাম তার চোখে চোখ রেখে ভালবাসার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করব, ভেবেছিলাম, তার পাচমেশালি কথার ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলবো,,,,,, কিন্তু আমার ইচ্ছা, আসক্তি, আবেগ, ভাললাগা, অনুভূতি, এগুলো অব্যাক্তই রয়ে গেল।

তারপর কি করব কিছুই মাথায় আসছিল না, মনে হচ্ছে যেন নিজের বুদ্ধিও আমার সাথে শত্রুতা করছে ,, কি আর করব বাস্তবতার সাথে লড়াই করে তো আর আমি পারব না, তাই কোনা বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ঘটে যাওয়া অতিতকে যুক্তিগত দিক দিয়ে মেনে নিতে হচ্ছে,,, এই রহস্যের খেলাই একদিন আমিই জিতবো,,, এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসি,,

কাজ খুজে না পেয়ে বেলকনিতে বসে বসে বই পড়তে থাকি,, বই পড়লে মানুষের মন ভাল থাকে কিন্তু ওই মুহুর্তে বইয়ের প্রতিটা লাইনে প্রতিটা ধ্বনিতে প্রতিটা অক্ষরের মাঝে যেন অনুর কথার প্রতিটা প্রতিধ্বনি লুকিয়ে আছে,, যেটার প্রতিই মনোযোগ দিতে যাচ্ছি ঠিকই, মায়ার ওই আকাবাকা পথ ধরে অনুর বলা কথা গুলোতে গিয়ে মিলিত হচ্ছে,, অনেকটা চুম্বকীয় শক্তির সাথে সম্পর্কিত পরমানুর মধ্যে থাকা অনুর আন্তঃআনবিক বলের প্রভাবে ঘটে যাওয়া এক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া। যা মনের মাঝে ভালোবাসা নামক ক্ষত সৃষ্টি করে গেছে অনুর জন্য।

জানি না আমার এই ভালবাসাটা কবে পূর্ণতা পাবে, আমি কিভাবে আমার মনে জন্ম নেওয়া ভালবাসাটা অনুকে জানাতে পারব, ক্যান জানিনা অনুর সামনে দাড়ালেই আমার মনে জমে থাকা প্রতিটা লাইন ঘুলিয়ে ফেলি,,,,,,, (অনুভুতিতে ফেরার পর), আমি আর পারছি না এভাবে জিবনের অন্তরালে বাকহীন কন্ঠনিসৃত ব্যাকুলতাকে আটকে রাখতে, পারছি না আর দূর থেকে ভালবাস্তে,,,,,, অনু ক্যান আমারে এতো এভয়েড করছে ,,আমি কিছু বলার আগেই আমারে তার রাগীনি দৃষ্টি আর বকুনি কথা দ্বারা চুপ করিয়ে দিচ্ছে,,,, সে আমকে দূরেও সরিয়ে দিচ্ছে না আবার কাছেও টেনে নিচ্ছে না,,,, কিন্তু ক্যান? কি চাচ্ছে সে???? আমি কি তাকে ছেড়ে চলে যাই? নাকি তার পিছনে আর না ঘুরি,,,,

আমার কথাগুলো যেন অনিশ্চিয়তায় আটকে পড়া এক অভিমানী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে আছে, , না পারছি তাকে বলতে না পারছি চেপে রাখতে,,,, ( রাতে না ঘুমিয়ে অনেক অনেক চিন্তার পর নতুন একটা দিন) যখন আমি সকালের আধোআলো ছায়ার মনমূগ্ধকর পরিবেশ আবেষ্ঠিত রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি, হটাৎ মনে হলো কোনো এক মেয়ে অভি বলে ডাক দিলো, কণ্ঠস্বর অনেকটা অনুর ন্যায় ছিল। আমি একটু মৃদু হেসে ফেললাম কারণ যে অনু আমারে দেখলে দশ হাত পিছিয়ে যায় সে নাকি আমাক্র ডাক দিবে? হাহাহা,,,,,,,

আর কিছু না ভেবেই দু কদম যাওয়ার পর আবার সেই শ্রুতিমধুর ডাক,, নিজেকে সামলাতে না পেড়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি অবাস্তব ঘটনাটি,,,, আমি পিছনে তাকাতেই অনু আমাকে হাতের ইশারা করে, এমনভাবে করে যেন আমাকে তার অনেক প্রয়োজন, আমি চোখের ভুল মনেকরে চোখদুটি মুছে তাকিয়ে দেখি একই ঘটনা,, আমিতো সোজা মাটি থেকে আকাশে পড়েছি,, না মানে আকাশ থেকে মাটিতে পড়েছি,, বাধ্যতামূলক আমকে আনুর কাছে যাইতে হলো,, তারপর অনুর দিকে মোটামোটা চোখ করে গাল হা করে তাকিয়ে আছি,,, আর ভাবছি এটা সুযোগ,,

অনু: আরে মশাই গাল বন্ধ করেন তা না হোলে মাছি ঢুকে জাবেনে। মাছির সাথে আরও কিছু ঢুকলে ভাল হইতো,,

অনু:আরও কিছু মানে???

মাছির সাথে সাথে যদি কারোর মনের এক ফোটাও ভাললাগা ঢুকতো তাহলে সেই ভাললাগাটাকে সরাসরি হৃদয়ে নিয়ে যেতাম আর কখনওই সেটাকে বের হতে দিতাম না।

অনু:তাই? আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার মনের ভাললাগাটাকে চুরি করে নিয়েছে। ও তা পুলিশের কাছে না গিয়ে এখানে এসেছেন ক্যান,, আমি কিন্তু চোর টোর ধরতে পারি না,,

অনু: আমি যদি পুলিশের কাছে যায় তাহলে কিন্তু অপরাধের দাইটা আপনার ওপরেই এসে পড়বে। যদি এরকম হয় তাইলে তো চুরি করা আমার পেশা হয়ে যাবে,,,

অনু:ফাজিল একটা আমি কিছু বলার আগেই,,,

অনু: অভি শোনেন,

হইতো আমি আপনাকে অনেক কষ্ট অনেক কথা শুনিয়েছি, কিন্তু কি জানেন আমার আপনাকে অনেক আগে থেকেই ভাললাগতো, কিন্তু বর্তমান ছেলেদেরকে না জেনে না বুঝেই ভালবাসি কথাটি বলা বোকামির কাজ হতো, তাই আপনাকে ভালভাবে জানা এবং বোঝার চেস্টা করছিলাম,,,, এবং আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাই,,,

(এ কথাগুলো বলার পরই),,, অনু অনেক বাজেভাবে কাশতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে ,,,,,, আমি কিছু বোঝার চেষ্টা না করেই তাকে হস্পিটালে এডমিট করলাম এবং তার বাড়ির লোকদেরকে খবর দিলাম,,,, অনুর সাথে এরুপ হবার কারণ বল্লো তার মা,,, আসলে ছোট বেলাই কোনো এক খেলার ছলে অনু আলপিন খেয়ে ফেলে যা অনুর গলাতে এবং আলজ্বিহব্বাতে এক প্রকার গর্ত সৃষ্টি করে যার কারনে সে কথা বলতে গেলে একটু তুতলিয়ে ফেলে,,,,, কিছুক্ষণ পর ডাক্তার জানান যে অনু আর কথা বলতে পারবে না,, সে তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

তারপর আমি অনুর কাছে জেতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে,,,, আরে পাগ্লি,,, আপনি কি বলেন তো,,, আপনি যদি দেখতেও না পেতেন তাহলেও আপনি আমার, যদি হাটতে চলতে নাও পেতেন তাও আপনি সুধু আমারই হতেন। আজ থেকে আপনি আমার মাধ্যমে বলবেন,,, I love you forever,,,, অনু কিছু বলতে পারছে না কিন্তু আমি ওর প্রতিটা নড়াচড়ার ভাষা বুঝতে পারছি,,,,, তার চোখ দিয়ে ভালবাসার সাক্ষী হইয়ে পতিত হচ্ছে মায়ভরা অশ্রুজল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত