অফিসে যে শান্তি মতন কাজ করব সেটাও পারছিনা। তার একমাত্র কারণ আমার বউ। বউ ফোনে একের পর এক মিসকল দিয়েই চলছে। মিস কলের জালায় কাজের বারোটা বেঁজে গেছে। আবার আমি কল ব্যাক করলে কল ধরেই কেঁটে দিচ্ছে। আবারো কাজে মনোযোগ দিলাম কিন্তু পারলামনা। বউ মিস কল দিচ্ছে। শেষ বারের মতন কল করলাম। বউ রিসিভ করেই বলল….
–কি সমস্যা কি? এভাবে জ্বালাচ্ছো কেনো?
-মানে?
–দেখো ভণিতা করবানা তুমি যে কাজ ফাঁকি দিচ্ছ সেটা আমি জানি।
-আজবতো, তুমিইতো উল্টা মিসকল দিয়ে আমার কাজের বারোটা বাঁজিয়ে দিচ্ছ।
–কিইইইই! আমি তোমার কাজে ডিস্টার্ব করি? কাজের বারোটা বাঁজাই?
-তা নয়তো কি? এভাবে মিসকল দিচ্ছযে?
–বিরিয়ানি রান্না করেছি, ভাবছিলাম তোমাকে বারবার মিসকল দিয়ে জ্বালাবো পরে বিরিয়ানির কথা বলব। কিন্তু তোমাকে বিরিয়ানি দিবনা। ওকে বায়….
-আরে আরে শোনো, তুমি আমার কাজে ডিস্টার্ব করবে কেন? আমি নিজেই বসে আছি।
–সরি বিরিয়ানি হবেনা।
-বউ এমন করেনা।
–রাখি টাটা…
আমার কোন কথা না শুনেই বউ কল কেঁটে দিলো। এদিকে বউয়ের মুখে বিরিয়ানির কথা শুনে বুকে ধুকপুকানি শুরু হলো। মস্তিষ্ক চিৎকার করে জানান দিচ্ছে…’রুবেল দৌঁড়াও, দৌঁড়াও রুবেল। বিরিয়ানি একদম কুপোকাত করে খেয়ে ফেলো। প্রয়োজনে হাঁড়ি চেটে খাও।’ কিসের অফিস কিসের কাজ। বসকে পাতলা পায়খানার কথা বলে অফিস থেকে ছুটি নিলাম। তারপর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম বিরিয়ানি খাওয়ার আশায়। বাসায় এসে জান্নাতকে ডাক দিলাম। কিন্তু কোন সারা শব্দ নেই। আর একটা ডাক দিতেই রুমে মেয়ে হাজির, বললাম…..
-মা টুম্পা তোমার আম্মু কই?
–আম্মু গোসল করতে গেছে…
বলেই মেয়েটি চলে গেলো। আমার আর তর সহ্য হচ্ছেনা। হঠাৎ মাথায় শয়তানি চাপলো। জান্নাত তো নেই তারমানে পেট পুরে বিরিয়ানি খাওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ দৌঁড়ে রান্নাঘরে গেলাম। কিন্তু বিরিয়ানি পেলামনা। হাঁড়ির ঢাকনা খুললাম, উহু বিরিয়ানির কোন অবকাশ নেই। বাসায় বিরিয়ানি রান্না হলেতো ঘ্রাণ বের হবে তাও হচ্ছেনা, কাহিনী কি!? ড্রয়ারে দেখলাম তাও নেই, ফ্রিজে দেখলাম তাও নাই। অনেক খোঁজাখুজির পরও যখন বিরিয়ানি পেলামনা তখন নিজেকে পিউর এতিম মনে হলো। সোফায় বসে রইলাম। আমাকে অসময় রুমে দেখে জান্নাত অবাক হলো, মুচকি হেসে বলল….
–এই সময় তুমি?
-হঠাৎ তোমায় দেখতে ইচ্ছে করলো তাই।
–আহা কি ঢং সত্যি সত্যি বলো কি জন্য এসেছো? তোমার না অফিসে কাজ?
-ছুটি নিয়েছি।
–কেনো?
-তুমিইতো বললা বাসায় বিরিয়ানি রান্না করেছো তাই বসকে বলে ছুটি নিয়ে এসেছি। জান্নাত আমার কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো। মাথার ভেজা চুল মুছতে মুছতে বলল…
–বসকে কি বলেছো? শুনি….
-সেটা তোমার না শুনলেও চলবে। আপাতত বিরিয়ানি দাও….
–আগে বলো।
-আরে বলছি পাতলা পায়খানা, বসও ছুটি দিয়ে দিলো।
আমার কথা শুনে জান্নাত ভ্রু-কুঁচকে তাকালো। তারপর হো হো করে হেসে দিলো। মনে হচ্ছে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে। আজব এতে হাসার কি হলো! বুজলাম না। জান্নাতকে হাসতে দেখে পাশের রুম থেকে মেয়ে এলো। বাপ মেয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি জান্নাতের দিকে। আমি বললাম…..
–এতে হাসির কি আছে?
-এটা প্রাংক ছিলো।
–মানে?
-আসলে বিরিয়ানি রান্না করিনি, তোমাকে বাসায় আনার জন্য বিরিয়ানির কথা বলেছি। হি হি হি….
বলেই জান্নাত আবারো হাসতে থাকলো। মুহূর্তেইই বড় ধরণের একটা ধাক্কা খেলাম। অবশেষে জান্নাত আমাকে ইমোশনালি আঘাত করলো। সাথে সাথে ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। নাহ ঘরের আপন বউ এমন করবে ভাবতে পারছিনা। আমার মুখের অবস্থা দেখে জান্নাত হাসতে হাসতে বলল….
–ওলে আমাল গুলুমুলু তুতুটা, রাগ করেবা বাবু হি হি…
মনে মনে বললাম তর তুতুর মায়রে তালোই। এত বড় ধোকা দিলি খাচ্চুন্নি। আমিও এর প্রতিশোধ নিব। বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম জান্নাত বলল….
–কই যাও…
-ডিপ্রেশন কমাতে।
–হাহা যাও।
আমি আর দেরি করলাম না। সরাসরি হোটেলে ঢুকলাম। তারপর বিরিয়ানি অর্ডার করলাম। জান্নাতকে ইমুতে ভিডিও কল দিয়ে বললাম….
–বাবোহ, বিরিয়ানি খাবা?
-এই তুমি কই?
–এইযে দেখো বিরিয়ানি খাচ্ছি খাবা? ঢেলে দেই? আমার কথা শুনে জান্নাত রেগেমেগে আগুন হয়ে গেলো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল….
-তুমি হোটেলে বিরিয়ানি খাচ্ছো?
–তো কি করব?
-হারামি, কুত্তা, ইতর, তোর পেট খারাপ হবে।
–আহা কি টেশ বিরিয়ানি। বউ হা করো খাইয়ে দেই….
-বিলাই, তুই খা বিরিয়ানি। তোকে আজ কি যে করব।
–কিচ্ছু করতে হবেনা সোনা, আমাকে বিরিয়ানি খাইয়ে দিও।
-টুটটুট….
গালাগালি দিয়ে বউ ফোন কেঁটে দিলো। মনে মনে বললাম এখন কেমন লাগে মনু। আমাকে প্রাংক দেখাও হু। জান্নাতকে আরো রাগানোর জন্য বিরিয়ানি সহ সেলফি উঠে ফেসবুকে পোস্ট করলাম। সাথে জান্নাতকে ট্যাগ দিয়ে ক্যাপশন দিলাম ‘এই বিরিয়ানি স্বাদ বউয়ের হাতের বিরিয়ানিকেও হার মানায়।’ আমার পোস্টে জান্নাত এংরি রিয়েক্ট দিলো সাথে কমেন্টে রাগির ইমুজিও দিলো। মেসেজে কিছু বলতে যাব দেখি মেসেজ ব্লক। যাক ঔষধ জায়গা মতন লেগেছে। আরাম আয়েশ করে ৫ প্লেট বিরিয়ানি খেলাম। রাতে বাসায় ফিরতেই দেখি বউ দরজা বন্ধ করে রেখেছে। কলিংবেল চাপলাম কোন সারাশব্দ নেই। ৫/৬ বার কলিংবেল চাপার পরেও কোন প্রতিক্রিয়া পেলামনা। জান্নাতকে ফোন দিলাম রিং হওয়ার পর কেঁটে দিচ্ছে। বুঝলাম আজকে কপালে শনির বাপ আছে। এভাবে প্রায় ১৭ বারের মাথায় বউ ফোন রিসিভ করল, বলল….
–কি সমস্যা কাকে চাই?
-বউ আমি, প্লিজ দরজা খোলো।
–সরি আপনাকে চিনতে পারছিনা।
-দেখো মজা নিওনা, দরজা খোলো।
–আজবতো আপনি কে?
-সরি বউ দরজা খোলো।
–আহা নিজেই তো ভিডিও কলে ঠিকই মজা নিলা। আবার ফেসবুকে আমায় ট্যাগ করে পোস্ট করা হচ্ছে না? ভালোইতো, এখন আবার সরি।
-ও বউ দরজা খোলো, বাইরে মশা।
–সরি দরজা আজকে বন্ধ। আর মশা কামড়ালে দেখো দরজার পাশে কয়েল রাখা আছে সেটা ধরিয়ে বসে থাকো।
-কিইইইই? আমি বাইরে বসে থাকবো?
–একদম রাগ দেখাবানা, বায় বাবু।
তারপর বউ ফোন কেঁটে দিলো। কিএক্টাবস্থা, এদিকেও মশাও কাঁমড়াচ্ছে। দরজার পাশে কয়েল দেখে বুঝলাম বউয়ের একটু হলেও মানবতা আছে। কয়েল যেহেতু রেখেছে আজকে আর বাসায় ঢোকা হবেনা। মেয়েটাকে বেশিই পঁচিয়েছি। উপায়ন্তর না পেয়ে দরজায় হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলাম। মোবাইল বের করে গান জুরে দিলাম ‘যদি থাকিবে নসিবে, আপনাআপনি খুলিবে। জোর করেতো দরজা খোলা যায়না ও বন্ধুরে এ যে কেমন যন্ত্রণা।’ চোখ বন্ধ করে গান শুনছি। প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। তারপর আস্তে আস্তে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম জান্নাত ড্রেসিংটেবিলে সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছে। আমার পাশে ছোট একটা চিরকুট রাখা। চিরকুট খুলে দেখলাম সেখানে সুন্দর করে
লেখাঃ ‘হোটেলের বিরিয়ানি আমার বিরিয়ানিকেও হার মানায় তাইনা? হুম ঠিকাছে, তুমিও কষ্ট দিছো আমি দিছি হিসাব বরাবর। আর ঘুম থেকে ওঠো তোমার খবর আছে।’ চিরকুট পড়ে বেক্কল হয়ে গেলাম। চিরকুট টা যেভাবে ছিলো সেভাবে রেখে দিলাম। নাহ আজকে আর ওঠা যাবেনা। আস্তে করে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভং ধরে শুয়ে রইলাম।