প্রেমে পড়েছে

প্রেমে পড়েছে

নতুন ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম,

আমিঃ” বাবু তোমার কোন কোন সাবজেক্টে প্রব্লেম আছে??”

ছাত্রীঃ”কি? শুনতে পেলাম না। আবার একটু বলবেন?”

আমিঃ”বললাম,তোমার কোন কোন সাবজেক্টে প্রব্লেম আছে?”

ছাত্রীঃ “না না তার আগে কি বললেন?”

আমিঃ”বাবু???”

ছাত্রীঃ “এক্স্যাক্টলি।আমারে আপনার বাবু লাগে???”

আমিঃ”ক্লাস সিক্সে পড় তুমিতো বাবুই।”

ছাত্রী “আপনি জানেন আমার বয়ফ্রেন্ড আপনার থেকে বয়সে বড়। ” রুমার মুখ থেকে এই কথাটা শুনে আমার হাত থেকে চা এর কাপটা ঠাস করে নিচে পড়ে গেল। আমি শুধু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওর মা তারাতাড়ি রুমে দৌড়ে চলে এল।

আন্টিঃ”কি হয়েছে বাবা?? চা এর কাপটা পড়ল কিভাবে??”

রুমাঃ”না মা কিছু হয় নি, চা টা একটু বেশি গরম ছিলতো তাই স্যার নিতে পারে নাই।”

আমিঃ”জি আন্টি, সত্যিই আমি নিতে পারলাম না এইটা।”

আন্টিঃ”কোনটা?”

আমিঃ”চা…. চা….চা এর কাপ..”

আন্টিঃ”ওহ আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তাহলে সখিনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, ও এগুলো পরিষ্কার করে তোমাকে আরেক কাপ চা দিয়ে যাবে। কেমন?” এই বলে আন্টি বেরিয়ে গেল। আমি তখনও ঘামছি, হাত কাঁপছে। আস্তে আস্তে রুমা কে জিজ্ঞেস করলাম,

-“তাহলে তোমাকে কি বলে ডাকব? নাম ধরেই”
-“আচ্ছা স্যার আপনি যেন কোন ইয়ার এ পড়েন?”
-“সেকেন্ড ইয়ার।”
-“আচ্ছা, আর ও থার্ড ইয়ারে পড়ে,আপনার ভার্সিটিতেই। সে ক্ষেত্রে ও আপনার ভার্সিটির বড় ভাই,আর সেই হিসেবে আমি আপনার ভাবী হই।”

আমার হৃদ স্পন্দন থেমে যাবার উপক্রম। তখনই সখিনা চা নিয়ে রুমে ঢুকল।বলে রাখি সখিনা এই বাড়ির কাজের মেয়ে।আমি সখিনাকে বললাম, “আপনি এই চা টা নিয়ে যান,আমার জন্য এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসুন।আর সাথে কয়েকটুকরো আনারস হলে মন্দ হয় না।”

সখিনা-“কি কন সার এইয়া খাইলে তো নগতে ছ্যাত কইরা মইরা থাকবেন।” মনে মনে বললাম, এই টর্চার প্রতিদিন চললে দু একদিনের মধ্যে এমনিতেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

আমি-“না না মজা করছিলাম, চা ই দিয়ে যাও।”

যাইহোক, পড়াচ্ছি মেয়েটাকে দুই সপ্তাহ হল। তো এমনই এক দিন সে পড়া করে রাখেনি। স্বভাবতই আমি তাকে একটু বকাঝকা করলাম। পাকা মেয়ে যতই হোক, পড়ার সময় কোন ছাড় নেই। সেদিন ওকে বকাঝকা করে বের হয়ে আসার সময় বেশ ভাল লাগছিল।পাকনামি বন্ধ করতে পারলাম বোধয়।এইটা ভেবে বেশ ভালই লাগছিল।কিন্তু এই ভুল ধারনাটা আমার বেশিক্ষণ টিকল না। পরের দিন সকালে ভার্সিটিতে ঢোকার সাথে সাথে কয়েকজন লোক আমাকে ডেকে নিয়ে গেল তাদের সাথে।ডেকে নিয়ে গেল বললে ভুল হবে,অনেকটা জোরজুলুম করেই নিয়ে গেল।তো,গেলাম তাদের সাথে তাদের বসের কাছে।বস হল ভার্সিটির বড় ভাই, উদয় ভাই। আমি গিয়ে মিন মিন করে জিজ্ঞেস করলাম, আমিঃ”কি হয়েছে ভাইয়া? আমি কি করছি??”

উদয় ভাইঃ”তোর কখনো হাত-পা ভাঙছে আগে?” প্রশ্নটা শুনেই আমার হাত পা কাঁপা শুরু করল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলাম,

-“না ভাইয়া” সাথে সাথে উদয় ভাই চিৎকার করে উঠল,
-“ওই ভাঙ ওর হাত ভাঙ এখনি এখনি ওকে টেস্ট করাই দেই।” সাথে সাথে সবাই ডন্ডা খুঁজতে লাগল।আমারতো প্রায় কেঁদে ফেলার মত অবস্থা।

-“ভাই ভাই মাফ চাই ভাই,গরিব মানুষ ঘরে চাল নাই না না কি বলতেছি এইসব না মানে সামনে এক্সাম,হাত ভাঙলে কেমনে চলবে??? আমি কি করছি সেইটাতো বলেন।আচ্ছা ভাই যা করছি আমারে মাফ কইরা দেন ভাই মাফ কইরা দেন।হাত ভাইঙেন না প্লিজ।” উদয় ভাই হাত ইশারা করে সবাইকে থামতে বলল। সবাই থেমে গেল।তারপর রাগী রাগী চোখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল।

-“মাস্টারিগিরী কি বেশি হয়ে গেছে?? ডানা বেশি গজাইছে?? ছাইটা দিতে কিন্তু আমার দুই মিনিটও টাইম লাগব না।”
-“ভাই আমি কি করছি ভাই একবার বলেন।”
-“তুই কালকে রুমাকে কি বলছ?? ওকে নাকি খুব খারাপ খারাপ কথা বলছ??? তুই জানিস ও কে?? ও আমার গার্লফ্রেন্ড। ”

-“ওহ আচ্ছা বুঝলাম এইবার।ভাই ও কালকে ভাবি পড়া করে নাই, তাই ওনারে একটু বকা দিয়েছি।দেখেন এইভাবে পড়াশুনা না করলে ও তো ফেল করবে,তখনতো ওর বিয়ে দিয়ে দিবে।আপনারই প্রব্লেম।তাই একটু বকা দিয়েছি, সামান্য বকা।”

-“ওই তুই বেশি বুঝস?? ওর বিয়া কার সাথে হবে কখন হবে সেইটা আমি বুঝব। তুই বেশি বারাবাড়ি করবি না।আর নেক্সটটাইম যদি আবার কোনদিন শুনি যে তুই ওর সাথে জোরে কথা বলছ,বকা দিছ তোর মাস্টারি কিন্তু ঘুচিয়ে দেব সেদিনই।”

-“ওকে ভাইয়া আর হবে নাহ। আমি যাই ভাইয়া???”
-“হুম যা ফার্স্টটাইম তাই ওয়ার্ন করে ছেড়ে দিলাম।পরের বার কিন্তু আর ছেড়ে দেব না।”

আমি চুপচাপ বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে।মাথায় আমার আগুন জ্বলছে, কিন্তু কিছু করার নাই সে ভার্সিটির বড় ভাই।আর সেখানে তার নাম বেশ শুনেছি,বেশ পাওয়ার আছে তার।কি করব না করব ভাবতে ভাবতে দিন গেল।সেদিন আর পড়াতে যাই নি ওকে। পরেফ দিন বিকেলে আবার গেলাম পড়াতে। পড়ার রুমে ঢুকে দেখি রুমা একদম বাধ্য মেয়ের মত পড়ার টেবিলে বসে আছে।যাওয়ার সাথে সাথে সালাম করে হোমওয়ার্কের খাতা হাতে দিয়ে বলল, “এই নিন স্যার সব হোমওয়ার্ক হয়ে গেছে।” আমিতো অবাক এ আমি কি দেখছি এত চেইঞ্জ?? চোখতো বিশ্বাস করতে চায় না। বসলাম, কিছু অঙ্ক করতে দিলাম।বাধ্য মেয়ের মত সব অঙ্ক করে দিল। আমি না এত ভাল নিতে পারছিলাম না, তাই কৌতূহলবসত জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,

-“কি ব্যাপার রুমা এত উন্নতি????” সাথে সাথে ও চেয়ার থেকে উঠে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

-“স্যার আমি আর কখনো উদয়কে আপনার ব্যাপারে নালিশ করব না। সবসময় পড়া ঠিকভাবে করব,আপনি আমাকে যত ইচ্ছে বকুন,কিচ্ছু বলব না।বাধ্য মেয়ে হয়ে থাকব।কিন্তু নিশি আপুকে বলবেন আমাকে যেন স্কুলে আর র‍্যাগ না দেয়,আমাকে যেন আর চ্যাং-দোলা করে কাদায় না ফেলে দেয়।”

-“কেন কি হয়েছে??”
-“নিশি আপু আজকে আমাকে তার দলবল নিয়ে অনেক বকাঝকা করেছে।

আমাকে টেনে নিয়ে কাদায় ফেলে দিয়েছে।আর ওয়ার্ন করেছে আপনাকে যেন আর প্রব্লেমে না ফেলি,আর যেন বেয়াদবি না করি। তাহলে আমার সাথে রোজ এমনটাই করবে , তার বিরুদ্ধে কারুর কিছু বলার সাহস নেই।সে আমাদের স্কুলের লেডি ডন।স্যার আপনি যে নিশি আপুর বয়ফ্রেন্ড আমি জানতাম না।” আমি এবার চেয়ারে হেলান দিয়ে পা এর ওপর পা তুলে বললাম,

-“শোন, তোর মত পুচকে মেয়ের বয়ফ্রেন্ড যদি আমার ভার্সিটির সিনিয়র হতে পারে, তাহলে আমার গার্লফ্রেন্ডও তোর স্কুলের সিনিয়র হতে পারে বুঝলি???? একে বলে ডাবল ক্রোসিং। সো, এখন থেকে ভাল হইয়া যা না হলে কিন্তু নিশিকে বলে”

-” না না স্যার নিশি আপুক্র আর কিছু বলতে হবে নাহ।আমি ভাল হয়েই থাকব।উদয়কেও আর কিছু বলব নাহ,সব পড়া করব।”

-“এইত গুড গার্ল। এবার পড়তে বসে যাও লক্ষী মেয়ের মত।” আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি মনে হচ্ছে সিনেমায় যেমন হিরোরা ভিলেইনদের শেষ করে স্লো-মোশনে সানগ্লাস পড়তে সামনে এগিয়ে চলে, সেভাবেই এগিয়ে চলছি। বাসায় এসে নিশিকে একটা ফোন দিলাম।

আমিঃ”হ্যালো বেবি, তোমার ডোজটাতো সেই কাজে দিয়েছে।থ্যাংকইউ বেবি,লাভ ইউ..”

নিশিঃ”কাজে তো দেবেই। দেখতে হবে না লোকটা কে???সাধে কি ফুল বাড়ির হিরো আমার প্রেমে পড়েছে??? কোয়ালিটি আছে বস…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত