ভালোবাসা, তাও সেই ভালোবাসার মানুষকে না জানিয়ে,মনের মাঝে আগলে রেখে, বাড়তে দেওয়া,এই বেপারটা কতটা কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে একসময়,তা যারা এই পরিস্থিতিতে কখনো পরেন নি তারা হয়ত বুঝবেন না।
অপূর্বাকে ভালোবাসতাম খুব।অবশ্য ভালোবাসতাম বললে ভুল হবে,এখনো তাকে ভালোবাসি।তার সাথে কাটানো দিন গুলো এখনও মনে পড়ে।যা ভুলার নয়।
অপূর্বার সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়াটাও অন্যরকম ছিল,সাধারণ ভাবে পরিচয় হওয়া নয়,বলতে গেলে কাকতালীয় ভাবে পরিচয়।
ঘটনাটি ছিল,আমি কাজ শেষে বাড়ী যাচ্ছিলাম বিকেলের শেষের দিকে।হঠাৎ দেখি মানুষের জটলা।আগ্রহ নিয়ে যেয়ে দেখি,রিক্সা একটি ওলটে পরে আছে,আর তার পাশে চোখে গাঢ় কাজল দেওয়া এক মেয়ে বসা,কান্নার কারণে চোখের কাজল লেপ্টে গিয়ে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে।আমি শুধু কিছুক্ষণ তার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।পাশের একজনের আওয়াজে হুশ ফিরল।পাশের একজন থেকে জিগ্যেস করলাম,কি হয়েছে এইখানে,জানতে পারলাম এক্সিডেন্ট।কিন্তু মেয়েটি নাকি কারও কথার কোন জবাব দিচ্ছে না।আমি মেয়েটির সামনা সামনি গিয়ে বল্লাম,ওঠুন।মেয়েটি মাথা তুলে আমার দিকে তাকাল,আর কোন রিয়েক্ট না করেই ওঠে দাড়াল।তখন আশেপাশের মানুষ হাত তালি দিয়ে ওঠল।
অনেকে বল্ল” ওঠছে,ওঠছে।ভাই তো জাদু জানে।”
আমি তাদের কথায় কান না দিয়ে রিক্সা ঠিক করলাম,রিক্সাওয়ালাও পরিস্থিতি দেখে কই যাব জিগ্যেস করল না।অপূর্বাকে নিয়ে রিক্সায়য় ওঠলাম।তারপর তার থেকে বাসার ঠিকানা জেনে পৌছে দিলাম।পৌছে দেওয়ার পর ধন্যবাদ পাব ভেবেছিলাম।কিন্তু কপালে ছিল না।
কিন্তু এই ধন্যবাদ ঐদিন না পাওয়ার কারণেই হয়ত অপূর্বাকে পেয়েছিলাম আবার।
প্রথম দেখা হওয়ার কিছুদিন পর,একদিন বাসায় যাচ্ছিলাম সেই রাস্তাটি দিয়ে,এই যে ভদ্রমানুষ করে ডাক দিল একজন,আমি ডাকার ধরণ শুনে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে দেখি,সেই কাজল কালো চোখের মেয়েটি,মানে আমার অপূর্বা ,আজ তার চোখে এক অন্যরকম আনন্দ দেখলাম।যা দেখে সারাদিনের ক্লান্তি যেন নিমিষেই হারিয়ে গেল।আমি জাস্ট তার দিকে তাকিয়ে অন্য মনস্ক টাইপের হয়ে গেলাম।তার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গলো।আসলে যাকে ভালো লাগে তার সব কিছুই ভালো লাগে,অপূর্বা যখন কথা বলছিল আমি তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলাম।এত সহজে আমি পটে যাব ভাবিই নি, .
অপূর্বা বলতে লাগল”আপনাকে ঐদিন ধন্যবাদটি দেওয়া হয়নি।আপনার জন্য এই রাস্তায় এসে অপেক্ষা করেছি অনেক।কিন্তু পাইনি।আজ পেলাম।ধন্যবাদ অনেক।”
আমার তখন কি হয়েছিল জানি না,আমি জাস্ট এইটুকু বলতে পারলাম”এ্যা?”.
আমার তখনের অবস্থাটি এমনই ছিল। সে আামর কথার ধরণ দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠল।যেন ছোট বাচ্চা চকলেট পেয়ে খুশিতে হাসছে।
আমি মুগ্ধ নয়নে দেখছিলাম আর মনে মনে কবিতা তৈরী হচ্ছিল,
“তোমার হাসিতে আজ আমি জর্জরিত,
তোমার হাসিতে আমি বিস্মিত,
কেন জানি না হাসিটি আজ লাগছে বড়ই আপন,
আজ ভালোবাসায় শিক্ত এই মন”
কবিতাটি বানানোর পর মনে হল,এ আমার কি হল।কি শুরু করলাম আমি।কবিতা কেমনে বানালাম! যেই আমি কখনও বানিয়ে বাংলা রচনা লিখতে পারিনি,সেই আমি কিনা,কবিতা বানাচ্ছি।তাও হঠাৎ করেই।আমি নিজের আচরণে নিজেই অবাক।আমি যেন এখন নিজের কাছেই অচেনা।
ঐদিন অপূর্বা,টেকনিক করে,ফেইসবুক আইডি আর মোবাইল নাম্বার নিয়ে নিল।তার নাকি এইভাবে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে মন ভরেনি।তাই আবার দেখা করার কথা দিয়ে বিদেয় নিল।আর আমি হাটা শুরু করেছি ঠিকই,কিন্তু আমিতে আমি ছিলাম না। তার হাসি,কথা বলার ধরণ,কথা বলতে বলতে হঠাৎ হঠাৎ চোখ ছোট করে তাকানে।এইসবই চোখে ভাসছিল।
“আমি যেন আজ নেই আমিতে
হারিয়ে গিয়েছি সেই তোমাতে,
আজ আমি খুশি হারিয়ে যাওয়া তোমাতে,
কবে জানি পাব তোমাই আমাতে।
বুঝুন কি অবস্থা ছিল আমার।আমি যেন রাতা রাতি কবি হয়ে গিয়েছিলাম।নিজের কবিতায় নিজেই মুগ্ধ।নিজের হাত দিয়ে নিজের পিঠে সাবাসি দিতাম।হা হা হা।
এইভাবেই অপূর্বা fb তে নক দিল একদিন।
মেসেজে অনেক কথা হত। একদিন অপূর্বা মেসেজ দিয়ে বল্ল”তার বাকি ধন্যবাদ কিভাবে দিবে”।
আমি তার কথা বুঝতে পারিনি।তাই এর মানে জিগ্যেস করলাম।
সে বল্ল”আপনি যেমন আমার সাহায্য করেছিলেন আমিও করতে চাই।”
আমি তার মেসেজটি পড়ে হেসেছিলাম।কি অদ্ভুত টাইপের মেয়ে।আমি তাকে মজা করে বল্লাম”আমাদের মেসে ভালো খাবার রান্না হয় না,যদি পারেন বিরিয়ানি রান্না করে একদিন খাওয়ান।বিরিয়ানি খাই নি অনেক দিন হল।”
সে মেসেজটি দেখে কোন রিপ্লাই দিল না।আমি ভাবলাম হয়ত একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।তাকে সরি বলে মেসেজও দিলাম।কিন্তু সিন করলো না। অফলাইন হয়ে গেল।এরপর কয়েকদিন তার কোন দেখা নেয়।অনলাইনেও আসে না,আমি প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষা করতাম।
একদিন হঠাৎ তার মেসেজ। এক পার্কের ঠিকানা দিল।দেখা করতে বল্ল।আমি তো খুবই ঘাবডিয়ে গেলাম।কোন বকা দিবে নাকি,ঐদিনের মেসেজের জন্য।এর পরের দিন ভালভাবে বকা খাওয়ার জন্য মেন্টাল্লি প্রিপেয়ারড হয়ে গেলাম দেখা করার জন্য।
ঐদিন অপূর্বাকে দেখে আবার নতুন করে প্রেমে পরলাম।নীল শাড়ীতে তাকে নীল পরীর মত লাগছিল।যেন ডানা থাকলেই উড়াল দিত।আমি সাহস করে তার পাশে গিয়ে নিজের উপস্থিতি জানানোর জন্য হালকা কাশলাম।
সে আমার দিকে রাগি চোখে তাকাল।আমি সাথে সাথে মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়া শুরু করে দিলাম।এতগুলো মানুষের সামনে যদি বকে তাহলে তো আামর প্রেস্টিজ শেষ।
সে বসা থেকে ওঠল, আমার সামনে এসে ডান হাতটি সামনে বাড়িয়ে দিল।হাতে দেখি ব্যান্ডেজ করা।আমি তো দেখে অবাক।কি হল তার হাতে।জিগ্যেস করলাম তাকে,”কেমনে ব্যাথা পেল”।
তাকে প্রশ্নটা করাই সে তার কাজল কালো চোখ দুটি আরও ছোট করে রাগি রাগি ভাব নিয়ে বলল”কেমনে মানে?আপনার জন্যই আজ আমার এই অবস্থা।”
আমি তো কথাটি শুনে পুরাই টাসকিত।কি বলে মেয়েটি।দেখা করলাম মাত্র, এইটা কখন করলাম।নাকি আমার মত চেহারার কেউ এমন করেছে,হয়ত চিন্তে ভুল করেছে সে।তাই আমি কনফিডেন্ট নিয়ে বললাম”ঐটা আমি ছিলাম না।অন্য কেউ ছিল।”
কথাটি বলার পর অপূর্বা অবাক চোখে তাকাল।জিগ্যেস করল”কিসে ছিলেন না।কি আজাইরা কথা বলছেন।”
আমি বললাম “ঐ যে তোমাকে আঘাত দিল।ঐটা আমি ছিলাম না।”
আমার কথাটি শেষ হতেই। অপূর্বা হেসে উঠল।হাসতে হাসতে বল্ল”আপনি কি আসলেই এত বোকা নাকি বোকার অভিনয় করছেন?আমাকে কেন কেউ মারতে যাবে।আপনি বলেছিলেন না,আপনার বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে।তাই তো এই কয়েকদিন কষ্ট করে বিরিয়ানি রান্না করা শিখে, রান্না করতে গিয়ে হাত পুরে ফেলছি।”
আমি অপূর্বার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।আমার জন্য এত কষ্ট কেন করল ভাবছিলাম তখন অপূর্বার ডাকে ভাবনাই ছেদ পরল।অপূর্বা বলতে লাগল”এই ধরেন আপনার খাবার।আপনি কি এইখানে খাবেন?”
আমি হেসে বল্লাম পাগল নাকি?পার্কে কেউ খাই নাকি।আমি বাসায় গিয়ে খাব।
সে আচ্ছা বলে মুচকি হাসতে লাগল।ঐদিন অনেক কথা বল্লাম,তার সাথে,তার পছন্দের সব কিছু জানলাম।আমার অপূর্বাকে খুব সাধারণ মেয়েই লাগল।যে কিনা অবুঝ শিশুর মত।যা মন বলে তাই করবে।আর হাসি খুশি থাকার অপ্রাণ চেষ্টা করে।
এরপর আমাদের মোবাইলে কথা হত, দেখাও করতাম।একজন আরেকজনের কেয়ার করা,খোজ খবর নেওয়া। সবই হত।কিন্তুু সরাসরি ভালোবাসি কখনো বলা হয়নি আমার অপূর্বাকে।মনে করেছিলাম হয়ত ও বুঝে,
একবার জিগ্যেস করেছিলাম অপূর্বা কাছ থেকে,”ভালোবাসা মানে কি বুঝ?”
সে বলেছিল”ভালোবাসা মানে হয়ত একজন আরেক জনের খেয়াল রাখা।আমি অবশ্য জানি না।কিন্তু জানেন, ভালোবাসা কি তা খুব জানতে ইচ্ছে করে”
আমি বলেছিলাম”ভালোবাসা মানে শুধু খেয়াল রাখা নয়,ভালোবাসা মানে হল দুটি হ্রদয়ের টান। মন এর দুটি অক্ষরের ম আর ন যখন একজন আরেকজনের সাথে ভাগাভাগি হয়ে যাবে,যখন দুজন একত্র থাকলে ম আর ন এর একাকিত্বতা দূর হবে তখনই তাকেই বলে ভালোবাসা বা প্রেম।”
অপূর্বা কিছুক্ষণ চুপ থেকে হালকা নিচু স্বরে বলেছিল”আপনার কথা শুনে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।ভালোবাসা কি আসলেই এমন।”
আমি সেদিন তার দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি হেসেছিলাম।কেন জানি সেদিন বলতে ইচ্ছে করছিল,তোমার ভালোবাসার মানুষ হবার ইচ্ছে আছে খুব।কিন্তুু বলতে পারিনি।এসব কথা এইভাবে বলা মানায় না।
তাই সেদিন তার মনে ভালোবাসার বীজ হয়ত অজান্তেই বপন করে দিয়েছিলাম।
তার সাথে মেসেন্জারে কথা হত বেশিরভাগ সময়।আমি কেন জানি না,তার মেসেজ এর রিপ্লাই এর জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। এমনকি হাস্যকর বেপারটি হল,বিকেল বেলা যখন ঘুম আসত মোবাইলে নেট অন রেখে ভাইব্রেট অবস্থাই বালিশের নিচে রাখতাম,যেন মেসেজ দিলেই বুঝতে পারি।
একদিন খুব জ্বর হল,অনলাইনে ডুকতে পারিনি।মোবাইল বন্ধ ছিল চার্জ না দেওয়ার কারণে।আমার অপূর্বার খুব চিন্তা হয়েছিল হয়ত। আমি মোবাইল অন করতেই তার অনেক মেসেজ। কি হয়েছে আমার,রাগ করেছি কিনা।
আমি শুধু তার মেসেজে আমার প্রতি তার টান অনুভব করেছিলাম।আর মুচকি হেসে মনে মনে বলেছিলাম পাগলি।
আমার জ্বর হয়েছে বলার পর হঠাৎ খুব রাগ আমার ওপর।আমি নাকি নিজের খেয়াল রাখতে পারি না। আমার নাকি বিয়ে করে ফেলা উচিত।যেন আমার খেয়াল আমার বউ রাখতে পারে।সেদিন ও খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, তুমি বউ হয়ে এসে খেয়াল নাও। কিন্তু পারিনি বলতে।এমন কথা কি আর হুট করে বলা যায়।
একদিন অনেক সাহস নিয়ে বলেছিলাম আমার প্রতি কি তার টান আছে কিনা।সে বলেছিল,” হয়ত আছে।”
তার এই হয়ত এর মানেটা বুঝে উঠতে পারিনি।
আমি ভেবেছিলাম হয়ত মানে,টান আছে।অপূর্বা লজ্জায় বলতে পারছে না। একদিন হঠাৎ অপূর্বা বলল,তার নাকি প্রেম করার ইচ্ছা থাকলেও ভয় করে।প্রেমে নাকি ঝামেলা অনেক।তার বান্ধবিরা নাকি বেশিরভাগ সময় ঝগরা করে।কিন্তুু ঝগরা শেষে তাদের ভালোবাসাটাও চোখে পরে তার।
আমি বলেছিলাম,”ভালোবাসা মানেই হল সুখ,দুঃখ,হাসি,অভিমান,”
অপূর্বা বলেছিল,তাও সে নাকি কখনও প্রেম করবে না বিয়ের আগে।ভালোবাসা সব বিয়ের পর।
তার এই কথাটা কেন জানি খুবই ভালোলেগেছিল।
আমি তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন বুনতে থাকি।
আমি অপূর্বাকে প্রায় রাগিয়ে দিতাম।কেন জানি তার রাগ যখন অভিমানে পাল্টে যেত,তখন তাকে মানিয়ে নিতে এক ধরণের ভালোলাগা কাজ করত।তার যখন অভিমান কমে যেত,সে বলত”মন ভরেছে আপনার আমাকে জোলাই”
আমি মনে মনে হাসতাম তার এই মেসেজ পড়ে।তখন সামনা সামনি তার অভিমান ভেঙ্গে যাওয়া মুখটা খুবই দেখতে ইচ্ছে হত।এভাবে কিছু সময় যাওয়ার পর,
হঠাৎ একসময় তার মেসেজ দেওয়া কমে যেতে লাগল।মেসেজ সিন করে রিপ্লাই দিত দেরিতে।ফোনেও কথা হত না।ব্যাস্ত থাকত।আর এইদিকে আমি তার অপেক্ষাই থাকতাম।সে হঠাৎ ই ভালোবাসা নিয়ে স্ট্যাটাস শেয়ার করা শুরু করল। আমি জিগ্যেস করতাম কাকে মনে নিয়ে এসব শেয়ার কর। অপূর্বা বলত,”কেউনা এমনি”.আমি ভাবতাম হয়ত আমাকে ভেবে।
ভালোবাসার বীজটি তে যেই ফুলটি ফুটেছে তা আমারই জন্য।ভলোবাসবে না বলা মেয়েটিও এখন ভালোবাসা জানতে শিখেছে।
কিন্ত কে জানত তার ফুলটি অন্য কোন এক ফেসবুকে নিউ এডড হওয়া ভাইয়ার জন্য।
আমার একদিন সন্দেহ হওয়াতে জিগ্যেস করলাম সে কি ভাইয়াটাকে পছন্দ করে কিনা।সে মেসেজ সিন করে রিপ্লাই দেয়নি।আমি আবার জিগ্যেস করাতে আমাকে বলল”এসব চিন্তা বাদ দিন।প্রেমে আমি বিশ্বাস করি না।আর প্রেম করব ও না।” আমার হঠাৎ নিজের ওপর খুব রাগ হল।কেন আামার অপূর্বাকে সন্দেহ করলাম।কষ্ট দিলাম।
এরপর আরও বেশ কিছুদিন কেটে গেল।তার পোস্টে ভাইয়াটার সুন্দর সুন্দর কমেন্ট।আর তার হাসি আর লাভ রিয়েক্ট দেওয়া রিপ্লাই।
আবার একদিন জিগ্যেস করলাম, হঠাৎ আমাকে ইগনোর কেন করছ? তুমি কি সত্যিই ভাইয়াটাকে ভালোবাসো না?
তার রিপ্লেইটা এখনও মনে পরলে খুব কষ্ট লাগে।সেদিন তার কথায় বুঝেছিলাম,তার ভালোবাসার ফুলটি সে ভাইয়াটিকে দিয়ে দিয়েছে।তাকে সে ভালোবাসে।
বিশ্বাস করেন মেসেজটি পড়ে খুব কেঁদেছিলাম। বুকের মাঝে যেন কেউ ছুরি দিয়ে অনবরত আঘাত করছিল।
নিজেকে সামলিয়ে জিগ্যেস করেছিলাম,”তুৃমি তো বলেছিলে প্রেম করবে না বিয়ের আগে।”
অপূর্বার জবাব ছিল”ঐরকম সবাই ই বলে”
আমি আর কিছু বলিনি।খুব রাগ হল তার ওপর, ইচ্ছে করছিল তাকে চিৎকার করে বলি,অপূর্বা তুমি কি বুঝনা তোমাকে কতটা ভালোবাসি আমি।এতদিনেও কি বুঝতে পারলে না। ভালোবাসা তো বুঝা যায়।অনুভব করা যায়।
কিন্তু এসব কিছুই বলতে পারিনি।শুধু বলেছিলাম “ভালো থেক।তোমাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণ হোক,তোমার ভালোবাসার ফুলটি যেন তোমার ভালোবাসার মানুষটি যত্ন করে রাখতে পারে এই দোয়ায় করি।”
আজও তাকে মন থেকে মুছতে পারিনি।ভালোবাসার ফুলটি হয়তা বা আমি পাইনি।কিন্তুু ফুলের বীজটি আমিই বপন করেছিলাম,যার কারণে আজ আমার অপূর্বা ভালোবাসার ফুলটি তার প্রিয় মানুষকে দিতে পেরেছে।জেনেছে ভালোবাসার টান।ভালোবাসার অভিমান ভরা মুখটি দেখার সৌভাগ্য এখন তার ভালোবাসার মানুষের।
এই ঘটনার পর প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল,
এখন বর্ষাকাল।যার কারণে আজ খুব বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টির দিকে চেয়েছিলাম।হাতে চায়ের কাপ। উপভোগ করছিলাম এই বৃষ্টি।ইচ্ছে ছিল অপূর্বা আর আমি পাশাপাশি এইভাবে বৃষ্টি দেখতে দেখতে চা খাব আর গল্প করব।কিন্তু তা তো আর হবার নয়।সে তো আজ অন্য কারো।এসব ভাবতে ভাবতে একসময় বৃষ্টি পড়া থেমে গেল।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আমার মোবাইলে অপূর্বার নাম্বার থেকে মেসেজ,সেই চিরচেনা নাম্বার থেকে।যার জন্য অপেক্ষা করতাম সবসময়।আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।অপূর্ব আমাকে আজও মনে রেখেছে।মেসেজটি ওপেন করে দেখি,মেসেজটিতে লেখা আছে,ও নাকি এখন হসপিটালে, একবার দেখা করতে চাই।মেসেজটি পাওয়ার পর আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম।কি করব,কি রিপ্লাই দিব কিছুই মাথাই আসছে না।আমার মাথায় শুধু ঘুরছে আমার অপূর্বার কি হল।আসলে কি জানেন,তার জন্য আমার ভালোবাসা বিন্দু মাত্র কমেনি।সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো কমে না।আমি জাস্ট কোন ভাবে তাকে দেখার জন্য ছোটে গেলাম।
গিয়ে দেখলাম আমার অপূর্বা হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে।খুব শুকিয়ে গিয়েছে সে।কিন্তু তার চোখ এখনো সেই আগের মতই সুন্দর,শুধু কাজল দেওয়া নেই।সে আমার দিকে উৎসুক চোখে তাকাল।হাতের ইশারাই কাছে ডাকল।যেমনি ছোট্ট বাচ্চা ডাকে হাতের ইশারায় ঠিক তেমনি। আমি তার বেডের পাশের চেয়ারটাই গিয়ে বসলাম।সে আরও কাছে ডাকল আমি আরও পাশে টেনে বসলাম।সে আজ প্রথম আমাকে তুমি করে সম্বোধন করে জিগ্যেস করল আমি কেমন আছি।আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলাম ভালো।সে বলল”আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল।জানি আমার ওপর অনেক রাগ তোমার।এইটাও জানি আমার প্রতি এখনও তোমার ভালো…” এতটুকু বলে সে চুপ হয়ে গেল।আমি মুখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে মুখ অন্যদিকে ফিরে কাদছে।আমি কিছু বললাম না। চুপ করে রইলাম। সে আবার নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বলতে লাগল”আসলে জানো,আমি না,ভালোবাসাটা কি তা কখনই বুঝে উঠতে পারিনি।তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ হওয়ার পর ওনার সাথে আমার রিলেশন শুধু ২মাস কন্টিনিও হয়েছে।কেন জানি না,তোমার কথা খুব মনে পরত।যার কারণে ওনার সাথে রিলেশন কন্টিনিও করতে পারিনি।তুমি বেলেছিলে না, ভালোবাসা তখনই হয় যখন মন এর ম আর ন একত্র হয়। আমার মন এর একটি অক্ষর তোমার কাছেই ছিল।যা আমি পরে বুঝতে পেরেছি।কিন্তু তোমাকে মেসেজ দেওয়ার সাহসটি করে ওঠতে পারিনি।আমি তো জানতাম আমি কত বড় অপরাধী।আজ কয়েকদিন পর আমার অপারেশন।ব্রেইন টিউমারের।জানি না অপারেশনের পর বঁাচব নাকি না।তাই আজ সাহস করে তোমাকে মেসেজ দিয়েছি।জানতাম তুমি আসবে।আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ।”এই বলে সে আমার হাতটি ধরে কঁাদতে লাগল।আমি কোন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম।কি বলব, কি বলার আছে আমার।আমি কি তাকে বলব আমি তোমার ওপর কখনো রাগ করিনি।তোমার ওপর আমার কোন ক্ষোভ নেই। কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না। হাত ধরা অবস্থায় ওঠে দাড়ালাম।আমার কি পরিমাণ কান্না আসছে প্রকাশ করতে পারব না।কিন্তু আমি অপূর্বার সামনে কাঁদতে চাই না।আমি কোন রকমে বল্লাম”আমার যেতে হবে।”সে কান্না করা অবস্থায় বলল,” ঠিক আছে।শুধু একটা কথায় বলব আমার ভালোবাসার ফুলটি তোমার কাছেই ছিল, তোমাকেই নিজের অজান্তে দিয়েছিলাম।এতদিন যেইভাবে আগলে রেখেছিলে,তেমনি আগলে রেখ।” আমি দরজা দিয়ে বের হতে গিয়ে তার দিকে ফিরে তাকালাম।তার সেই চোখে আজ ভালোবাসা অশ্রু।আমি তার কাছে ফিরে গিয়ে তার কপালে চুমু খেলাম। চোখের পানি মুছে দিয়ে বের হয়ে আসলাম হসপিটাল থেকে। খুব কান্না আসছে আমার।বুকে যেন অনেক বড় পাথর দিয়ে কেউ চাপা দিয়েছে, এমন অস্থির লাগছে।কিন্তু রাস্তায় ছেলেদের চোখে অশ্রু মানায় না।এই পরিস্থিতে কান্নার জন্য বৃষ্টির প্রয়োজন।যেন চোখের পানি আর বৃষ্টির পানির কারণে বুঝা না যায়।চারপাশ খুব বাতাস হচ্ছে বৃষ্টি নামবে আাবার।আমি শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে আাছি,বৃষ্টির অপেক্ষায়।আর মনে মনে গুন গুন করে একটি গান বাজছে শুধু:
“কষ্টগুলো শিকড় ছড়িয়ে
ঐ ভয়ানক একা চাদটার সাথে,
স্বপ্নের আলোতে,
যাব বলে,
যখন চোখ ভিজে যায় রাতে।”