স্বামীর ভালোবাসা

স্বামীর ভালোবাসা

মাঝ রাতে বউয়ের কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় পূর্ণচরণের।

-কিগো বউ কান্দো কেন??
-কানবোনা?? তুমি আমারে মারলে কেন??
-তুমি খালি বিয়ের কতা কও কেন??

১৯৭৭ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বিয়ে হয় পূর্ণচরণ ও সুচিত্রা দম্পতির।বিয়ের দুইবছরের মাথায় এদের কোল আলো করে আসে এক কন্যা। খুশির ফোয়ারা ছোটে এনাদের হৃদয়ে। কি সুন্দর মেয়ে।ঠিক যেন দুগ্গা প্রতিমা।কাজে যাবার আগে পূর্ণচরণ বারবার দেখে যান তার প্রতিমার মুখখানি। কখনও আবার কাজের মাঝে ফাক গলিয়ে এসে দেখে যান কলিজার টুকরাকে।সুচিত্রাদেবী মনে মনে হাসেন।কিন্তু বাইরে কৃত্রিম রাগ দেখাতে ভোলেননা।

-তোমার যত ঢং।কাজ কামাই দিয়ে আসলি বেতন পাবা??
-কি কচ্ছির বউ।সাতজনমের পূণ্যের গুণে এইরাম মাইয়ে পাইছি।তা তুই যতই রাগ করিস এই মাসে প্রতিমার জন্যি মল (নূপুর) বানাতি দেব।

-তুমি কি কচ্চো।মাইয়ের বয়সতো তিন মাসও হলোনা।আহনে মল বানাবা কেন??

-শোন বউ আমার মা হাটতি শিখলি ওরে মল পরায় দেব।

-ন্যাও। আর ঢং করেনা।যাও কাজে যাও।

বউয়ের ধমকে স্বামী কাজে যান খুশি মনে।আজকে মজুরিটা পেলেই সোজা যাবেন স্বর্ণকারের কাছে।একজোড়া নূপুর বানাতে হবেযে। সাত পাঁচ ভাবছে আর কাজ করছে প্রাণখোলা উদ্যমে পূর্ণচরণ। এমন সময় বাড়ির থেকে ছুটতে ছুটতে আসে পূর্ণচরণের ভাইপো উৎপল।

-কিরে উৎপল হাপাচ্ছির ক্যান??

-কাকু কাকু প্রতিমা বমি করতেছে।
– কসকি? ব্যস্ত হয়ে বাড়ি চল।

তখন ডাক্তারের এতটা প্রচলন ছিলনা।তাছাড়া তখনকার মানুষ ফকির কবিরাজকেই প্রাধান্য দিতেন বেশী।পূর্ণচরণ দেরী না করে কালাচাঁন ফকিরকে ডেকে আনেন।কালাচাঁন ফকির ঝাড়ফুঁক করে দেন।জল পড়ে দেন।তবু সব বিফল করে দিয়ে পরপার পাড়ি জমায় প্রতিমা।মাত্র তিনমাসেই সোনার প্রতিমা বিসর্জন হয়ে যায়। আঁধারে ঢেকে যায় আবারো এই দম্পতির জীবন।সাধ্যের মধ্যে সব ধরনের চেষ্টা চালান এনারা।ফলাফল শূণ্য। এরপর অনেক চেষ্টা করেও সুচিত্রাদেবী তাঁর স্বামীকে বিয়ে করাতে পারেননি।স্বামীর এক কথা। বউয়ের বাচ্চা হচ্ছেনা এতে বউয়ের দোষ কোথায়?? সন্তান বিধাতার আশীর্বাদ এখানে মানুষের কোন হাত নেই।

মানুষ যদি মানুষের স্রষ্টা হত তবে পৃথিবীটা এত সুন্দর থাকতোনা।স্বামীস্ত্রীর বাঁধন জন্মজন্মান্তরের।সাত জনমেও এ বাঁধন ছিন্ন হবার নয়।আজ যদি পূর্ণচরণ সন্তান জন্মদানে অক্ষম হত তবে সুচিত্রাদেবী তাকে কি ছেড়ে যেত??
পূর্ণচরণের মতে স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসাটাও উপরওয়ালার দান।বিধি স্বয়ং কার সাথে কার জোড়া হবে তা নির্ণয় করেন।হৃদয় একটা জমি এখানে তুমি যেমন ভালোবাসার আবাদ চাইবে তেমনই হবে।পূর্ণচরণ তাই নিখাদ ভালোবাসার ফসল বুনে চলেছেন তার স্ত্রী সুচিত্রাদেবীকে নিয়ে। কয়েক বছর আগেও যখন সুচিত্রাদেবী পূর্ণচরণকে বিয়ের জন্য চাপ দেন।পূর্ণচরণ বড়ই ব্যথা পান।

-দ্যাখ বউ।তোরে আমি বালোবাসি। মা না হওয়ার কষ্ট তুই মানতি পারলি আমিও বাবা না হওয়ার কষ্ট সয়ে নেব।

-অত কতা শুনতি চাইনে। তুমি আবার বিয়ে করো।সেই বউয়ের বাচ্চা হলি আমারে মা কয়ে ডাকপে।

– না বউ। এর চেয়ে তুই আমারে বিষ খাতি ক।

-শোনো তুমি যদি বিয়েতে রাজি না হও তালি আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

-আর তুই যদি একবারও আমার বিয়ের কতা কস তালি আমি কলাম গলায় দড়ি দেব।সেই থেকে এতবছরেও কেউ আর বিয়ের কথা তোলেননি। শাশুড়িমা জীবদ্দশায় ছেলেকে পইপই করে বলে গেছেন যেন তার বউমার অযত্ন না হয়। শশুরমশাই সুচিত্রাদেবীর স্বামীকে বলেছেন ঘর থেকে লক্ষী তাড়িয়ে যেন অলক্ষ্মী আনা না হয়। সময় অনেক গড়িয়েছে।দুজনের জীবন রবির তেজ ফিকে হয়ে এসেছে।আজ ৩৮ বছর পর স্বামীকে আবার বিয়ের কথা বলতেই তিনি ক্ষেপে যান।সুচিত্রাদেবীর গায়ে হাত তোলেন।

-বউ এই বুড়ো বয়সে এসে আবার কি কস তুই??আবার বিয়ে করবো??দ্যাখ বউ তোরে আমি বড্ড বালোবাসি। সারাজীবন আমি তোর সাথে থাকতি চাই। তোর গায়ে আগে হাত তুলিছি?? বউ তোরে হারানের ভয়ে আমার মাথা ঠিক ছিলোনা।বড্ড বালোবাসি তোরে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত